Recent post

মঙ্গলবার, ৩০ মে, ২০১৭

জ্বরে নবজাতকের কিভাবে যত্ন নিতে হবে

সন্তানের জন্মের পর মা বাবাসহ পরিবারের সবাই নবজাতকের যত্ন ও নানারকম অপ্রত্যাশিত অসুখ বিসুখ নিয়ে সবসময় উদ্বেগে থাকেন।
অনেক প্রতীক্ষার পর মায়ের কোলে যখন তার আদরের সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়, তখন প্রতিটা মা ই চান, তার সন্তান সব দিক দিয়ে সুস্থ থাকুক এবং স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠুক। 
কিন্তু অপ্রত্যাশিভাবে এমন কিছু পরিস্থিতির মখোমুখি মা বাবাকে হতে হয় যাতে তারা দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। 
এই যেমন ধরুন শিশুর হঠাৎ জ্বর হওয়া।


জ্বর কোনো রোগ নয়। 
এটি রোগের উপসর্গ। জ্বরের অন্যতম কারণ নানা ধরনের সংক্রমণ। 
নবজাতক শিশুদের সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জা, আমাশয় থেকে শুরু করে হাম, বসন্ত এবং আরও জটিল কোনো সংক্রমণের প্রথম লক্ষণ জ্বর। 
তাই জ্বরকে অবহেলা করা ঠিক নয়। বিভিন্ন কারনে নবজাতকের জ্বর হয়ে থাকে । 
যেমন: ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের কারণে, শরীরে কোন সংক্রমন দেখা দিলে, অনেকসময় টিকা দেয়ার পরও নবজাতকের জ্বর হতে পারে।

নবজাতকের গায়ে হাত দিয়ে জ্বরের মাত্রা বোঝা কঠিন, কারণ ছোট শিশুদের মাথা ও শরীর ঢেকে রাখার কারণে এমনিতেই শরীর গরম থাকে।
 ফলে জ্বর না থাকলেও জ্বর আছে বলে ভুল হতে পারে।
 তাই শিশুর বগলের নিচে থার্মোমিটার তিন-পাঁচ মিনিট রাখার পর দেহের তাপমাত্রা যদি ৯৯ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি পাওয়া যায়, তবে জ্বর আছে বলে ধরে নিতে হবে ।

যেসব লক্ষণসমূহ দেখলে বুঝবেন শিশুর জ্বর হয়েছে:

শিশু নিস্তেজ হয়ে পড়া, ঘুমঘুম ভাব,
শরীরে খিঁচুনি দেয়া
শিশুর মাথার তালু খুব ফুলে যাওয়া
 সারাক্ষণ কান্না করতে থাকা
বমি বা পাতলা পায়খানা করা
খেতে না চাওয়া
শরীর ফ্যাকাশে হয়ে পড়া
ঘন ঘন শ্বাস নেয়া, শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা দেখা দেয়া
শরীরে দানা দানা দাগ বা গায়ে ফুসকুড়ি ওঠা
১২ ঘন্টার মধ্যে কোন প্রস্রাব না হওয়া

নবজাতকের জ্বরে করনীয় :

১. ডাক্তার দেখানো:


নবজাতক শিশুর জ্বর হলে এবং কিছু পরিচিত লক্ষণ যেমন: গায়ে হাম বা লুতি, পাতলা পায়খানা, চোখ হলুদ, প্রস্রাব না হওয়া , গলাব্যথা, খুব কাশি, শ্বাসকষ্ট, কাঁপুনি নিয়ে জ্বর আসা, ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়া ইত্যাদি বুঝতে পারলে তাকে দ্রুতই একজন শিশু বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যেতে হবে। 
ভাল শিশু ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া জ্বর কমানোর জন্য কোন ধরনের ঔষধ নবজাতক শিশুকে খাওয়ানো উচিত নয়। 
ডাক্তারের কাছে নবজাতকের জ্বরের লক্ষণগুলো গুছিয়ে বলুন। 
জ্বরে নবজাতকের কিভাবে যত্ন নিতে হবে, 
কিভাবে শুশ্রুষা করা হবে তার জন্য ডাক্তারের পরমর্শ নেয়া ভালো। 
ডাক্তারের দেয়া প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী যথাসময়ে শিশুকে পথ্য দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

২. থার্মোমিটারের সাহায্যে জ্বর মাপা:

জ্বর হলেই জ্বর মাপতে হবে।
 কয়েক ঘন্টা পর পর থার্মোমিটারের সাহায্যে জ্বর মেপে তার রিডিং লিখে রাখতে হবে। দেখতে হবে জ্বর ওঠানামা করছে কিনা। এত ডাক্তারের পক্ষে জ্বরের ধরণ বুঝতে সুবিধা হয়।
 সে মোতাবেক ডাক্তার প্রেসক্রিপশন করতে পারেন। 
প্রত্যেক ঘরেই জ্বর মাপার থার্মোমিটার থাকা উচিত। আজকাল ভাল মানের ডিজিটাল থার্মোমিটার পাওয়া যায়, যেখানে লেখা উঠে এবং যা সহজেই পড়া যায়।

৩. ঘরোয়া পরিচর্যা:

শিশুর ঘরের তাপমাত্রা আরামদায়ক রাখতে চেষ্টা করুন। 
ঘরের তাপমাত্রা ১৮ থেকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখুন। জানালা খুলে রাখুন। 
ঘরে যাতে যথেষ্ট আলো বাতাস চলাচল করতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখুন।
 প্রয়োজনে ফ্যান ছেড়ে দিন। 
অতিরিক্ত কাপড়-চোপড় ও কাঁথা বা চাদরের প্রয়োজন নেই। 
বিশেষত, মাথা ঢেকে রাখবেন না, কারণ ছোট্ট শিশুদের তাপ মাথা থেকেই বেশি নির্গত হয় । 
জ্বর ছাড়ার জন্য তাপ নির্গত হওয়াটা জরুরি।

৪. জ্বরের সময় স্পঞ্জ করার/ গা মুছে দেয়ার নিয়ম:

জ্বর খুব বেশি বেড়ে গেলে পরিষ্কার তোয়ালে, গামছা বা সুতি বড় ওড়না স্বাভাবিক/কুসুম গরম পানি দিয়ে ভিজিয়ে নিতে হবে। 
এরপরে ভেজা তোয়ালে বা কাপড় পানি চিপে/নিংড়ে নিয়ে প্রথমে শিশুর এক হাত পরে অন্য হাত, তারপর শরীর, দু’পা বিশেষ করে বগল ও কুচকি ভালো করে মুছে দিতে হবে। 
ভেজা কাপড় দিয়ে মোছার পরপরই শুকনা কাপড় দিয়ে মুছে ফেলতে হবে, যেন শরীর বেশিক্ষণ ভেজা না থাকে। 
এভাবে জ্বর না কমা পর্যন্ত বারবার সমস্ত শরীর মুছে দিতে হবে।


৫. জ্বরে নবজাতকের খাবার:

নবজাতকের জ্বর হলে মায়ের বুকের দুধ বন্ধ করা চলবে না। 
তাকে ঘন ঘন মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে যাতে শিশু দুর্বল হয়ে না পড়ে। 
স্বাভাবিক তরল খাবার, ফলের রস, স্যুপ ও প্রচুর পানি পান করান, যাতে শরীর পানিশূন্য না হয়।

৬. নবজাতকের ঘুম:

ঘুম নবজাতক শিশুর জন্য খুবই দরকার।
 জ্বর হলে শিশু ঘুমাতে চায় না সারাক্ষণ কান্না করে। 
অনেকসময় জ্বরের সাথে কাশি থাকলে শিশু একদম ঘুমাতে চায় না। 
কিন্তু এসময় শিশুর ঘুম হলে সে যেমন আরাম পায়, তেমনি মায়েরও উদ্বেগ কমে।
 তাই এ অবস্থায় শিশুকে কোলে নিয়ে একটু হাঁটুন। 
লক্ষ্য রাখুন শিশুকে একটু সোজা করে নিয়ে হাঁটতে থাকলে সে আরাম পাবে। ঘুমও হবে।

৭. সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ:

নবজাতকের জ্বর হলে তাকে পরিবারের সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখতে হয়। 
জ্বর একদম না কমলে বা বাড়তে থাকলে কিংবা শ্বাস প্রশ্বাসের কষ্ট এবং বমি বা পায়খানা বেশী হতে থাকলে অতি সত্ত্বর ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
 এসময় মায়ের সান্নিধ্য শিশুর জন্য বেশী জরুরী। 
মায়ের আশ্রয়ে নবজাতক নির্ভরতা পায়, নিজেকে নিরাপদ মনে করে।

পরিশিষ্ট:

নবজাতকের জ্বর হলে মা হিসেবে আপনি কি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন? 
জ্বর হলে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াও ঘরোয়া যত্ন কিভাবে নিতে হবে সে ব্যাপারে কি আপনার পরিস্কার কোন ধারণা নেই? ‍
জন্মের পর অধিকাংশ নবজাতকেরই জ্বর হয়ে থাকে যা স্বাভাবিক। 
মাতৃগর্ভ থেকে বের হয়ে এসে এই পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে তাকে প্রাথমিকভাবে বেশ বেগ পেতে হয়। 
তাই তার শরীরে দেখা দেয় নানা সংক্রমণ । 
অনেকসময় টিকা দেয়ার পরও শিশুর জ্বর হয়ে থাকে । 
এটি স্বাভাবিক, এতে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। 
কিন্তু কিছু জ্বর যা সংক্রমণ থেকে উদ্ভুত , সেসব ক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ, মায়ের সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ, যথাযথ ঘরোয়া ব্যবস্থা নিতে পারলে শিশুকে দ্রুত সুস্থ করে তোলা যায়। 
কাজেই, নবজাতকের জ্বর হলে নতুন মায়ের ভয় না পেয়ে তাৎক্ষণিক কিছু ব্যবস্থা নিন।
 শিশুর সুস্থতার জন্য কিছুক্ষণ পর পর বুকের দুধ খাওয়ান। 
আপনার শিশুর আগামী ভবিষ্যৎ আপনার হাতে। 
তাই শিশুর জ্বর হলে আপনার সঠিক যত্নই পারে আপনার শিশুকে সুস্থ করে তুলতে।
Life Circle Youtube Channel

কোন মন্তব্য নেই:

Popular Posts