Recent post

মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০১৯

কৌতুক

আগের মতো ভালোবাসো না কেন?

স্ত্রী: ওগো, তুমি বিয়ের আগে অনেক ভালোবাসতে আমায়।
স্বামী: হ্যাঁ, বাসতাম।
স্ত্রী: তাহলে বিয়ের পর আমাকে আর আগের মতো ভালোবাসো না কেন?
স্বামী: আমি তো আগেই বলেছি, বিবাহিত নারীদের প্রতি আমার কোনো আগ্রহ নেই।

--------------------------------------------------------------------------------------------------------

এক মেয়ে তার ছেলে ফ্রেন্ড কে বলছে-

মেয়ে: তোরা সব ছেলে একই রকম!

ছেলে: কেন, কী হয়েছে?

মেয়ে: ওই দেখ না, যতগুলো ছেলের সাথে প্রেম করি সবাই আমাকে সন্দেহ করে!

------------------------------------------------------------------------------------------------------------

ছেলেপক্ষ গেছে মেয়ে পক্ষের বাড়িতে। কথাবার্তার এক পর্যায়ে ছেলে-মেয়েকে একান্তে কথা বলার সুযোগ দেয়া হলো-
মেয়ে: তো, কী সিদ্ধান্ত নিলেন?
ছেলে: সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে আমার একটা ইচ্ছা আছে।
মেয়ে: কী ইচ্ছা?
ছেলে: আপনার সঙ্গে একবার বৃষ্টিতে ভিজবো।
মেয়ে: উফফ! আপনি কী রোমান্টিক।
ছেলে: ইয়ে, আসলে ব্যাপার সেটা না। ব্যাপার হলো, আপনি যে পরিমাণ মেকআপ করেছেন, বৃষ্টিতে না ভিজলে আপনার আসল চেহারা দেখা যাবে না।

----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

এক মেয়ে চাকরির ইন্টারভিউ দিতে একটি অফিসে গেলো-
ম্যানেজার: আপনার ওজন ৪২ কেজি। আমরা ৪০ কেজির উপরে কাউকে চাকরি দেই না। আপনার চাকরি হবে না।
মেয়ে: আচ্ছা, আমি কাল আবার আসবো।

পরদিন সকালে মেয়েটা আবার ওই অফিসে এলো-
ম্যানেজার: একী আজ আবার এসেছেন? বলেছি না আপনার চাকরি হবে না!
মেয়ে: আজ ওজনটা আরেকবার মাপুন না!
ম্যানেজার: ঠিক আছে। মেশিনের ওপর দাঁড়ান দেখি।
মেয়ে: জ্বি, দাঁড়ালাম।
ম্যানেজার: একি আজ আপনার ওজন ২ কেজি কম। আজব ব্যাপার!
মেয়ে: ইয়ে মানে স্যার, আজ আমি মেকআপ করিনি তো তাই।

---------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

উকিল সাক্ষীকে জেরা করছে-
উকিল: আপনি বিয়ে করেছেন?
সাক্ষী: জ্বী হুজুর, করেছি?
উকিল: কাকে?
সাক্ষী: একটি মেয়েকে।
উকিল: যত্তসব, তাও আবার বলতে হয়। কখনো কাউকে একটা ছেলেকে বিয়ে করতে দেখেছেন?
সাক্ষী: জ্বী হুজুর, দেখেছি। আমার বোন করেছে।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

দুই ব্যবসায়ী গল্প করছে-
: আচ্ছা ভাই, সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে কি কোনো কাজ হয়?
:মাঝে-মাঝে হয় বৈকি। গত মাসে বিজ্ঞাপন দিলাম আমার দোকানে একজন নাইটগার্ড চাই। সেই রাত্রেই দোকানে চুরি হলো!

মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১৯

ইসলামী শরীয়তের বিধানে শবে বারাআত কি?


ইসলামী শরীয়তের বিধানে শবে বারাআত কি?
(পর্ব-2)
“শব” শব্দটা ফার্সি। যার অর্থ হল-রাত। আর বারাআত এটি আরবী শব্দ। মূলত হল- ﺑﺮﺍﺀﺕ যার অর্থ হল “মুক্তি” তথা জাহান্নাম থেকে মুক্তির রাত হল শবে বারাআত। বরাত বলাটা নিতান্ত ভুল। কারণ শবে বরাত ( ﺑﺮﺍﺕ) মানে হল বিয়ের রাত। সুতরাং আমরা বলব-শবে বারাআত( ﺷﺐ ﺑﺮﺍﺀﺕ )
শবে বারাআতকে হাদিসের পরিভাষায় বলা হয়েছে “লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান”( ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ ) তথা শাবানের অর্ধ মাসের রাত। কেউ কেউ “শবে বরাআত” নামে হাদিসে শব্দ না থাকায় এ রাতকে অস্বিকার করার মত বোকামী সূলভ যুক্তি দিয়ে থাকেন। তাদেরকে আমি বলি-আমরা পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়া আবশ্যক বলি কুরআন হাদিসে বর্ণিত নির্দেশের কারণে। কিন্তু কুরআন -হাদিসের কোথাও কি নামাযের কথা আছে? নামায শব্দটা কুরআন হাদিসের মাঝে খুঁজতে যাওয়া যেমন বোকামী তেমন শবে বারাআত শব্দটা কুরআন- হাদিসে খুঁজতে যাওয়াও তেমন বোকামী। আমরা যাকে নামায বলি সেই অর্থবোধক কুরআন হাদিসের উদৃত শব্দ “সালাত”ই হল নামায। তেমনি আমরা যাকে “শবে বারাআত” বলি তথা শাবানের পনের তারিখের রাত এই অর্থবোধক শব্দ হাদিসে পাওয়া গেলে তা’ই হবে শবে বারাআত। আর এই অর্থবোধক হাদিসে বর্ণিত শব্দ হল “লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান”। সুতরাং তাই হল শবে বারাআত।
হাদিসের আলোকে শবে বারাআতঃ
পবিত্র কোরআনে শবে বারাআতের কোন উল্লেখ নাই। কুরআনে কেবল “লাইলাতুল কদর” তথা “শবে কদর” এর কথা উল্লেখ আছে। পবিত্র কোরআনে পঁচিশ নাম্বার পাড়ার সূরায়ে দুখানের ২ ও ৩ নং আয়াতে বর্ণিত মোবারক রজনী দ্বারা লাইলাতুল কদর তথা শবে কদর ও শবে বারাআত উদ্দেশ্য এটাই বিশুদ্ধ বলেছেন গ্রহণযোগ্য কতেক মুফাসসিরীনে কেরাম। যার পক্ষে যুক্তিও শক্তিশালী। বিস্তারিত জানতে দেখুন-
১. আদ দুররুল মানসুর-৭/৪০১-৪০৭
২. তাফসীরে কাশশাফ-৪/২৭২
৩. তাফসীরে ইবনে কাসীর-৭/২৪৬
৪. তাফসীরে বাগাভী-৭/২২৭-২২৮
তাছাড়া পাঁচটি বিখ্যাত তাফছির দেখুন- যে গুলোতে সূরা দোখানের 3 নং আয়াতের ব্যাখ্যায়" লাইলাতুল মোবারাকা" দ্বারা শবে কদর ও শবে বারাআত উদ্দেশ্য কেননা যদিও পবিত্র কোরআন নায়িল হয়েছে শবে কদরে কিন্তু বরকত নিহিত রয়েছে উভয় রজনীতে৷
পবিত্র আল কোরআনের আলোকে লাইলাতুল বারাআত বা শবে বারাআতের ফযিলতঃ
মহান আল্লাহ তাআলা সূরা দোখানের 3 নং আয়াতে এরশাদ করেনঃ
ﺇِﻧَّﺎ ﺃَﻧﺰَﻟْﻨَﺎﻩُ ﻓِﻲ ﻟَﻴْﻠَﺔٍ ﻣُّﺒَﺎﺭَﻛَﺔٍ ﺇِﻧَّﺎ ﻛُﻨَّﺎ ﻣُﻨﺬِﺭِﻳﻦَ
আমি একে নাযিল করেছি। এক বরকতময় রাতে, নিশ্চয় আমি সতর্ককারী।
ইংরেজী অনুবাদঃ
We sent it down during a Blessed Night: for We (ever) wish to warn (against Evil).
উর্দু অনুবাদঃ
ﮨﻢ ﻧﮯ ﺍﺳﮑﻮ ﺍﺗﺎﺭﺍ ﺍﯾﮏ ﺑﺮﮐﺖ ﮐﯽ ﺭﺍﺕ ﻣﯿﮟ ﮨﻢ ﮨﯿﮟ ﮐﮩﮧ ﺳﻨﺎﻧﮯ ﻭﺍﻟﮯ .
ফার্সি অনুবাদَ
( ﺩﺧﺎﻥ - 3 ‏)
ﺑﻪ ﺭﺍﺳﺘﯽ ﻣﺎ ﺁﻥ ﺭﺍ ﺩﺭ ﺷﺒﯽ ﭘﺮﺑﺮﮐﺖ ﻧﺎﺯﻝ ﮐﺮﺩﯾﻢ؛ ﺯﯾﺮﺍ ﮐﻪ ﻫﻤﻮﺍﺭﻩ ﺑﯿﻢ ﺩﻫﻨﺪﻩ ﺑﻮﺩﻩ ﺍﯾﻢ؛
সূরা দোখানের 3 নং আয়াতের বিশ্লেষণে লাইলাতুল মোবারাকাহ বা বরকতময় রজনী বলতে শবে কদর ও শবে বারাআত উভয় রাতকে বুঝানো হয়েছে৷যদি ও শবে কদরের রাত্রে পবিত্র কোরআন মাজিদ নাযিল হয়েছিল৷মোবারাকাহ বা বরকত উভয় রজনীতে নিহিত আছে৷ শবে কদর হচ্ছে বরকত ও ভাগ্য রজনী আর শবে বারাআত হচ্ছে মাগফিরাত ও বরকতের রজনী যা নিম্নের বিখ্যাত পাঁচটি তাফছিরের কিতাব দ্বারা প্রমানিতঃ
একঃ
গাউছে পাক,আউলিয়াকুল শিরোমণী,বড় পীর হযরত আব্দুল কাদির জিলানী রহ.প্রণিত"তাফছিরে জিলানীতে"পবিত্র কোরআনের
সূরা কদরের 3 নং আয়াতের
ব্যাখ্যায় লাইলাতুল মোবারাকাহ বা বরকতের রজনী বলতে পবিত্র শবে কদর ও শবে বারাআতকে বুঝানো হয়েছে৷যার আরাবী এবারত গুলো নিম্নে উপস্থাপন করা হলোঃ
{ ﺇِﻧَّﺂ } ﻣﻦ ﻣﻘﺎﻡ ﻋﻈﻴﻢ ﺟﻮﺩﻧﺎ { ﺃَﻧﺰَﻟْﻨَﺎﻩُ } ﺃﻱ : ﺍﺑﺘﺪﺃﻧﺎ ﺇﻧﺰﺍﻟﻪ ﺇﻟﻴﻚ ﺗﺄﻳﻴﺪﺍً ﻷﻣﺮﻙ ﻭﺗﻌﻈﻴﻤﺎً ﻟﺸﺄﻧﻚ { ﻓِﻲ ﻟَﻴْﻠَﺔٍ ﻣُّﺒَﺎﺭَﻛَﺔٍ } ﻛﺜﻴﺮﺓ ﺍﻟﺨﻴﺮ ﻭﺍﻟﺒﺮﻛﺔ، ﻫﻲ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻘﺪﺭ ﺃﻭ ﺍﻟﺒﺮﺍﺀﺓ، ﻭﺇﻧﻤﺎ ﺃﻧﺰﻟﻨﺎﻩ ﻣﺸﺘﻤﻼً ﻋﻠﻰ ﺍﻷﺣﻜﺎﻡ ﻭﺍﻟﻤﻮﺍﻋﻆ ﻭﺍﻟﻌﺒﺮ ﻭﺍﻷﻣﺜﺎﻝ ﻭﺍﻟﻘﺼﺺ ﻭﺍﻟﺘﻮﺍﺭﻳﺦ ﻭﺍﻟﺮﻣﻮﺯ ﻭﺍﻹﺷﺎﺭﺍﺕ ﺍﻟﻤﻨﺒﻬﺔ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﻌﺎﺭﻑ ﻭﺍﻟﺤﻘﺎﺋﻖ { ﺇِﻧَّﺎ ﻛُﻨَّﺎ ﻣُﻨﺬِﺭِﻳﻦَ } ‏[ ﺍﻟﺪﺧﺎﻥ 3 : ‏] ﻣﺨﻮﻓﻴﻦ ﺑﺈﻧﺰﺍﻝ ﻣﺎ ﻓﻴﻪ ﻣﻦ ﺍﻷﻭﺍﻣﺮ ﻭﺍﻟﻨﻮﺍﻫﻲ ﺍﻟﻮﻋﻴﺪﺍﺕ ﺍﻟﻬﺎﺋﻠﺔ ﻋﻠﻰ ﻣﻦ ﺍﻧﺼﺮﻑ ﻋﻦ ﺟﺎﺩﺓ ﺍﻟﻌﺪﺍﻟﺔ ﺍﻹﻟﻬﻴﺔ ﻭﺍﻧﺤﺮﻑ ﻋﻦ ﺍﻟﻄﺮﻳﻖ ﺍﻟﻤﺴﺘﺒﻴﻦ .
দুইঃ
তাফছিরে বাগভীতে সূরা দোখানের 3 নং আয়াতের ব্যাখ্যায় এভাবে বলা হয়েছেঃ
( ﺇِﻧَّﺎ ﺃَﻧﺰَﻟْﻨَﺎﻩُ ﻓِﻲ ﻟَﻴْﻠَﺔٍ ﻣُّﺒَﺎﺭَﻛَﺔٍ ۚ ﺇِﻧَّﺎ ﻛُﻨَّﺎ ﻣُﻨﺬِﺭِﻳﻦَ ‏)
ﺍﻟﺪﺧﺎﻥ ‏( 3 ‏)
‏( ﺇﻧﺎ ﺃﻧﺰﻟﻨﺎﻩ ﻓﻲ ﻟﻴﻠﺔ ﻣﺒﺎﺭﻛﺔ ‏) ﻗﺎﻝ ﻗﺘﺎﺩﺓ ﻭﺍﺑﻦ ﺯﻳﺪ : ﻫﻲ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻘﺪﺭ ﺃﻧﺰﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﻘﺮﺁﻥ ﻓﻲ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻘﺪﺭ ﻣﻦ ﺃﻡ ﺍﻟﻜﺘﺎﺏ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﺴﻤﺎﺀ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ ، ﺛﻢ ﻧﺰﻝ ﺑﻪ ﺟﺒﺮﻳﻞ ﻋﻦ ﺍﻟﻨﺒﻲ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﻧﺠﻮﻣﺎ ﻓﻲ ﻋﺸﺮﻳﻦ ﺳﻨﺔ . ﻭﻗﺎﻝ ﺁﺧﺮﻭﻥ : ﻫﻲ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ .
ﺃﺧﺒﺮﻧﺎ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻮﺍﺣﺪ ﺍﻟﻤﻠﻴﺤﻲ ، ﺃﺧﺒﺮﻧﺎ ﺃﺑﻮ ﻣﻨﺼﻮﺭ ﺍﻟﺴﻤﻌﺎﻧﻲ ، ﺣﺪﺛﻨﺎ ﺃﺑﻮ ﺟﻌﻔﺮ ﺍﻟﺮﻳﺎﻧﻲ ، ﺣﺪﺛﻨﺎ ﺣﻤﻴﺪ ﺑﻦ ﺯﻧﺠﻮﻳﻪ ، ﺣﺪﺛﻨﺎ ﺍﻷﺻﺒﻎ ﺑﻦ ﺍﻟﻔﺮﺝ ، ﺃﺧﺒﺮﻧﻲ ﺍﺑﻦ ﻭﻫﺐ ، ﺃﺧﺒﺮﻧﻲ ﻋﻤﺮﻭ ﺑﻦ ﺍﻟﺤﺎﺭﺙ ﺃﻥ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻤﻠﻚ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻤﻠﻚ ﺣﺪﺛﻪ ﺃﻥ ﺍﺑﻦ ﺃﺑﻲ ﺫﺋﺐ ﻭﺍﺳﻤﻪ ﻣﺼﻌﺐ ﺣﺪﺛﻪ ﻋﻦ ﺍﻟﻘﺎﺳﻢ ﺑﻦ ﻣﺤﻤﺪ ﻋﻦ ﺃﺑﻴﻪ ﺃﻭ ﻋﻤﻪ ﻋﻦ ﺟﺪﻩ ﻋﻦ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﻗﺎﻝ : " ﻳﻨﺰﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺟﻞ ﺛﻨﺎﺅﻩ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﺴﻤﺎﺀ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ ﻓﻴﻐﻔﺮ ﻟﻜﻞ ﻧﻔﺲ ﺇﻻ ﺇﻧﺴﺎﻧﺎ ﻓﻲ ﻗﻠﺒﻪ ﺷﺤﻨﺎﺀ ﺃﻭ ﻣﺸﺮﻛﺎ ﺑﺎﻟﻠﻪ " ‏( ﺇﻧﺎ ﻛﻨﺎ ﻣﻨﺬﺭﻳﻦ ) .
তিনঃ
তাফছিরে তাবারীতে সূরা দোখানের 3 নং আয়াতের বিশ্লেষনে এভাবে বলা হয়েছেঃ
3- ﺇﻧﺎ ﺃﻧﺰﻟﻨﺎﻩ ﻓﻲ ﻟﻴﻠﺔ ﻣﺒﺎﺭﻛﺔ ﺇﻧﺎ ﻛﻨﺎ ﻣﻨﺬﺭﻳﻦ
ﻭﻗﻮﻟﻪ : { ﺇﻧﺎ ﺃﻧﺰﻟﻨﺎﻩ ﻓﻲ ﻟﻴﻠﺔ ﻣﺒﺎﺭﻛﺔ } ﺃﻗﺴﻢ ﺟﻞ ﺛﻨﺎﺅﻩ ﺑﻬﺬﺍ ﺍﻟﻜﺘﺎﺏ، ﺃﻧﻪ ﺃﻧﺰﻟﻪ ﻓﻲ ﻟﻴﻠﺔ ﻣﺒﺎﺭﻛﺔ . ﻭﺍﺧﺘﻠﻒ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺘﺄﻭﻳﻞ ﻓﻲ ﺗﻠﻚ ﺍﻟﻠﻴﻠﺔ، ﺃﻱ ﻟﻴﻠﺔ ﻣﻦ ﻟﻴﺎﻟﻲ ﺍﻟﺴﻨﺔ ﻫﻲ؟ ﻓﻘﺎﻝ ﺑﻌﻀﻬﻢ : ﻫﻲ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻘﺪﺭ . ﺫﻛﺮ ﻣﻦ ﻗﺎﻝ ﺫﻟﻚ :23998- ﺣﺪﺛﻨﺎ ﺑﺸﺮ، ﻗﺎﻝ : ﺛﻨﺎ ﻳﺰﻳﺪ، ﻗﺎﻝ : ﺛﻨﺎ ﺳﻌﻴﺪ، ﻋﻦ ﻗﺘﺎﺩﺓ { ﺇﻧﺎ ﺃﻧﺰﻟﻨﺎﻩ ﻓﻲ ﻟﻴﻠﺔ ﻣﺒﺎﺭﻛﺔ } ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻘﺪﺭ، ﻭﻧﺰﻟﺖ ﺻﺤﻒ ﺇﺑﺮﺍﻫﻴﻢ ﻓﻲ ﺃﻭﻝ ﻟﻴﻠﺔ ﻣﻦ ﺭﻣﻀﺎﻥ، ﻭﻧﺰﻟﺖ ﺍﻟﺘﻮﺭﺍﺓ ﻟﺴﺖ ﻟﻴﺎﻝ ﻣﻀﺖ ﻣﻦ ﺭﻣﻀﺎﻥ، ﻭﻧﺰﻝ ﺍﻟﺰﺑﻮﺭ ﻟﺴﺖ ﻋﺸﺮﺓ ﻣﻀﺖ ﻣﻦ ﺭﻣﻀﺎﻥ، ﻭﻧﺰﻝ ﺍﻹﻧﺠﻴﻞ ﻟﺜﻤﺎﻥ ﻋﺸﺮﺓ ﻣﻀﺖ ﻣﻦ ﺭﻣﻀﺎﻥ، ﻭﻧﺰﻝ ﺍﻟﻔﺮﻗﺎﻥ ﻷﺭﺑﻊ ﻭﻋﺸﺮﻳﻦ ﻣﻀﺖ ﻣﻦ ﺭﻣﻀﺎﻥ .- ﺣﺪﺛﻨﺎ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻷﻋﻠﻰ، ﻗﺎﻝ : ﺛﻨﺎ ﺍﺑﻦ ﺛﻮﺭ، ﻋﻦ ﻣﻌﻤﺮ، ﻋﻦ ﻗﺘﺎﺩﺓ، ﻓﻲ ﻗﻮﻟﻪ : { ﻓﻲ ﻟﻴﻠﺔ ﻣﺒﺎﺭﻛﺔ } ﻗﺎﻝ : ﻫﻲ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻘﺪﺭ .23999- ﺣﺪﺛﻨﻲ ﻳﻮﻧﺲ، ﻗﺎﻝ : ﺃﺧﺒﺮﻧﺎ ﺍﺑﻦ ﻭﻫﺐ، ﻗﺎﻝ : ﻗﺎﻝ ﺍﺑﻦ ﺯﻳﺪ، ﻓﻲ ﻗﻮﻟﻪ ﻋﺰ ﻭﺟﻞ : { ﺇﻧﺎ ﺃﻧﺰﻟﻨﺎﻩ ﻓﻲ ﻟﻴﻠﺔ ﻣﺒﺎﺭﻛﺔ ﺇﻧﺎ ﻛﻨﺎ ﻣﻨﺬﺭﻳﻦ } ﻗﺎﻝ : ﺗﻠﻚ ﺍﻟﻠﻴﻠﺔ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻘﺪﺭ، ﺃﻧﺰﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﻘﺮﺁﻥ ﻣﻦ ﺃﻡ ﺍﻟﻜﺘﺎﺏ ﻓﻲ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻘﺪﺭ، ﺛﻢ ﺃﻧﺰﻟﻪ ﻋﻠﻰ ﺍﻷﻧﺒﻴﺎﺀ ﻓﻲ ﺍﻟﻠﻴﺎﻟﻲ ﻭﺍﻷﻳﺎﻡ، ﻭﻓﻲ ﻏﻴﺮ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻘﺪﺭ . ﻭﻗﺎﻝ ﺁﺧﺮﻭﻥ : ﺑﻞ ﻫﻲ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ . ﻭﺍﻟﺼﻮﺍﺏ ﻣﻦ ﺍﻟﻘﻮﻝ ﻓﻲ ﺫﻟﻚ ﻗﻮﻝ ﻣﻦ ﻗﺎﻝ : ﻋﻨﻲ ﺑﻬﺎ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻘﺪﺭ، ﻷﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﺟﻞ ﺛﻨﺎﺅﻩ ﺃﺧﺒﺮ ﺃﻥ ﺫﻟﻚ ﻛﺬﻟﻚ ﻟﻘﻮﻟﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ : { ﺇﻧﺎ ﻛﻨﺎ ﻣﻨﺬﺭﻳﻦ } ﺧﻠﻘﻨﺎ ﺑﻬﺬﺍ ﺍﻟﻜﺘﺎﺏ ﺍﻟﺬﻱ ﺃﻧﺰﻟﻨﺎﻩ ﻓﻲ ﺍﻟﻠﻴﻠﺔ ﺍﻟﻤﺒﺎﺭﻛﺔ ﻋﻘﻮﺑﺘﻨﺎ ﺃﻥ ﺗﺤﻞ ﺑﻤﻦ ﻛﻔﺮ ﻣﻨﻬﻢ، ﻓﻠﻢ ﻳﻨﺐ ﺇﻟﻰ ﺗﻮﺣﻴﺪﻧﺎ، ﻭﺇﻓﺮﺍﺩ ﺍﻷﻟﻮﻫﺔ ﻟﻨﺎ .
চারঃ
তাফছিরে কুরতবী শরীফে সূরা দোখানের 3 নং আয়াতের ব্যাখ্যায় এভাবে বলা হয়েছেঃ
ﺇِﻧَّﺎ ﺃَﻧﺰَﻟْﻨَﺎﻩُ ﻓِﻲ ﻟَﻴْﻠَﺔٍ ﻣُّﺒَﺎﺭَﻛَﺔٍ ﺇِﻧَّﺎ ﻛُﻨَّﺎ ﻣُﻨﺬِﺭِﻳﻦَ
ﺇﻥ ﺟﻌﻠﺖ ‏« ﺣﻢ ‏» ﺟﻮﺍﺏ ﺍﻟﻘﺴﻢ ﺗﻢ ﺍﻟﻜﻼﻡ ﻋﻨﺪ ﻗﻮﻟﻪ : ‏« ﺍﻟﻤﺒﻴﻦ ‏» ﺛﻢ ﺗﺒﺘﺪﺉ ‏« ﺇﻧﺎ ﺃﻧﺰﻟﻨﺎﻩ ‏» . ﻭﺇﻥ ﺟﻌﻠﺖ ‏« ﺇﻧﺎ ﻛﻨﺎ ﻣﻨﺬﺭﻳﻦ ‏» ﺟﻮﺍﺏ ﺍﻟﻘﺴﻢ ﺍﻟﺬﻱ ﻫﻮ ‏« ﺍﻟﻜﺘﺎﺏ ‏» ﻭﻗﻔﺖ ﻋﻠﻰ ‏« ﻣﻨﺬﺭﻳﻦ ‏» ﻭﺍﺑﺘﺪﺃﺕ ‏« ﻓﻴﻬﺎ ﻳﻔﺮﻕ ﻛﻞ ﺃﻣﺮ ﺣﻜﻴﻢ ‏» . ﻭﻗﻴﻞ : ﺍﻟﺠﻮﺍﺏ ‏« ﺇﻧﺎ ﺃﻧﺰﻟﻨﺎﻩ ‏» ، ﻭﺃﻧﻜﺮﻩ ﺑﻌﺾ ﺍﻟﻨﺤﻮﻳﻴﻦ ﻣﻦ ﺣﻴﺚ ﻛﺎﻥ ﺻﻔﺔ ﻟﻠﻤﻘﺴﻢ ﺑﻪ، ﻭﻻ ﺗﻜﻮﻥ ﺻﻔﺔ ﺍﻟﻤﻘﺴﻢ ﺑﻪ ﺟﻮﺍﺑﺎ ﻟﻠﻘﺴﻢ، ﻭﺍﻟﻬﺎﺀ ﻓﻲ ‏« ﺃﻧﺰﻟﻨﺎﻩ ‏» ﻟﻠﻘﺮﺁﻥ . ﻭﻣﻦ ﻗﺎﻝ : ﺃﻗﺴﻢ ﺑﺴﺎﺋﺮ ﺍﻟﻜﺘﺐ ﻓﻘﻮﻟﻪ : ‏« ﺇﻧﺎ ﺃﻧﺰﻟﻨﺎﻩ ‏» ﻛﻨﻰ ﺑﻪ ﻋﻦ ﻏﻴﺮ ﺍﻟﻘﺮﺁﻥ، ﻋﻠﻰ ﻣﺎ ﺗﻘﺪﻡ ﺑﻴﺎﻧﻪ ﻓﻲ ﺃﻭﻝ ‏« ﺍﻟﺰﺧﺮﻑ ‏» ﻭﺍﻟﻠﻴﻠﺔ ﺍﻟﻤﺒﺎﺭﻛﺔ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻘﺪﺭ . ﻭﻳﻘﺎﻝ : ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ، ﻭﻟﻬﺎ ﺃﺭﺑﻌﺔ ﺃﺳﻤﺎﺀ ﺍﻟﻠﻴﻠﺔ ﺍﻟﻤﺒﺎﺭﻛﺔ، ﻭﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﺒﺮﺍﺀﺓ، ﻭﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﺼﻚ، ﻭﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻘﺪﺭ . ﻭﻭﺻﻔﻬﺎ ﺑﺎﻟﺒﺮﻛﺔ ﻟﻤﺎ ﻳﻨﺰﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻴﻬﺎ ﻋﻠﻰ ﻋﺒﺎﺩﻩ ﻣﻦ ﺍﻟﺒﺮﻛﺎﺕ ﻭﺍﻟﺨﻴﺮﺍﺕ ﻭﺍﻟﺜﻮﺍﺏ . ﻭﺭﻭﻯ ﻗﺘﺎﺩﺓ ﻋﻦ ﻭﺍﺛﻠﺔ ﺃﻥ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ : ‏« ﺃﻧﺰﻟﺖ ﺻﺤﻒ ﺇﺑﺮﺍﻫﻴﻢ ﻓﻲ ﺃﻭﻝ ﻟﻴﻠﺔ ﻣﻦ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻭﺃﻧﺰﻟﺖ ﺍﻟﺘﻮﺭﺍﺓ ﻟﺴﺖ ﻣﻀﻴﻦ ﻣﻦ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻭﺃﻧﺰﻟﺖ ﺍﻟﺰﺑﻮﺭ ﻻﺛﻨﺘﻲ ﻋﺸﺮﺓ ﻣﻦ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻭﺃﻧﺰﻝ ﺍﻹﻧﺠﻴﻞ ﻟﺜﻤﺎﻥ ﻋﺸﺮﺓ ﺧﻠﺖ ﻣﻦ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻭﺃﻧﺰﻝ ﺍﻟﻘﺮﺁﻥ ﻷﺭﺑﻊ ﻭﻋﺸﺮﻳﻦ ﻣﻀﺖ ﻣﻦ ﺭﻣﻀﺎﻥ ‏» . ﺛﻢ ﻗﻴﻞ : ﺃﻧﺰﻝ ﺍﻟﻘﺮﺁﻥ ﻛﻠﻪ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﺴﻤﺎﺀ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ ﻓﻲ ﻫﺬﻩ ﺍﻟﻠﻴﻠﺔ . ﺛﻢ ﺃﻧﺰﻝ ﻧﺠﻤﺎ ﻧﺠﻤﺎ ﻓﻲ ﺳﺎﺋﺮ ﺍﻷﻳﺎﻡ ﻋﻠﻰ ﺣﺴﺐ ﺍﺗﻔﺎﻕ ﺍﻷﺳﺒﺎﺏ . ﻭﻗﻴﻞ : ﻛﺎﻥ ﻳﻨﺰﻝ ﻓﻲ ﻛﻞ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻘﺪﺭ ﻣﺎ ﻳﻨﺰﻝ ﻓﻲ ﺳﺎﺋﺮ ﺍﻟﺴﻨﺔ . ﻭﻗﻴﻞ : ﻛﺎﻥ ﺍﺑﺘﺪﺍﺀ ﺍﻹﻧﺰﺍﻝ ﻓﻲ ﻫﺬﻩ ﺍﻟﻠﻴﻠﺔ . ﻭﻗﺎﻝ ﻋﻜﺮﻣﺔ : ﺍﻟﻠﻴﻠﺔ ﺍﻟﻤﺒﺎﺭﻛﺔ ﻫﺎ ﻫﻨﺎ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ . ﻭﺍﻷﻭﻝ ﺃﺻﺢ ﻟﻘﻮﻟﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ : ‏« ﺇﻧﺎ ﺃﻧﺰﻟﻨﺎﻩ ﻓﻲ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻘﺪﺭ ‏» ‏« ﺍﻟﻘﺪﺭ 1 : ‏» . ﻗﺎﻝ ﻗﺘﺎﺩﺓ ﻭﺍﺑﻦ ﺯﻳﺪ : ﺃﻧﺰﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﻘﺮﺁﻥ ﻛﻠﻪ ﻓﻲ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻘﺪﺭ ﻣﻦ ﺃﻡ ﺍﻟﻜﺘﺎﺏ ﺇﻟﻰ ﺑﻴﺖ ﺍﻟﻌﺰﺓ ﻓﻲ ﺳﻤﺎﺀ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ، ﺛﻢ ﺃﻧﺰﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻰ ﻧﺒﻴﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﻲ ﺍﻟﻠﻴﺎﻟﻲ ﻭﺍﻷﻳﺎﻡ ﻓﻲ ﺛﻼﺙ ﻭﻋﺸﺮﻳﻦ ﺳﻨﺔ . ﻭﻫﺬﺍ ﺍﻟﻤﻌﻨﻰ ﻗﺪ ﻣﻀﻰ ﻓﻲ ‏« ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ ‏» ﻋﻨﺪ ﻗﻮﻟﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ : ‏« ﺷﻬﺮ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﺍﻟﺬﻱ ﺃﻧﺰﻝ ﻓﻴﻪ ﺍﻟﻘﺮﺁﻥ ‏» ‏« ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ 185 : ‏» ، ﻭﻳﺄﺗﻲ ﺁﻧﻔﺎ ﺇﻥ ﺷﺎﺀ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ .
পাঁচঃ
জগত বিখ্যাত তাফছির তাফছিরে জালালাইন শরীফে সূরা দোখানের 3 নং আয়াতের ব্যাখ্যায়-লাইলাতুল মোবারাকাহ বলতে শবে কদর ও শবে বারাআতকে বুঝানো হয়েছে যা নিম্নরুপঃ
{3} ﺇِﻧَّﺎ ﺃَﻧْﺰَﻟْﻨَﺎﻩُ ﻓِﻲ ﻟَﻴْﻠَﺔٍ ﻣُﺒَﺎﺭَﻛَﺔٍ ﺇِﻧَّﺎ ﻛُﻨَّﺎ ﻣُﻨْﺬِﺭِﻳﻦَ
" ﺇﻧَّﺎ ﺃَﻧْﺰَﻟْﻨَﺎﻩُ ﻓِﻲ ﻟَﻴْﻠَﺔ ﻣُﺒَﺎﺭَﻛَﺔ " ﻫِﻲَ ﻟَﻴْﻠَﺔ ﺍﻟْﻘَﺪْﺭ ﺃَﻭْ ﻟَﻴْﻠَﺔ ﺍﻟﻨِّﺼْﻒ ﻣِﻦْ ﺷَﻌْﺒَﺎﻥ ﻧَﺰَﻝَ ﻓِﻴﻬَﺎ ﻣِﻦْ ﺃُﻡّ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏ ﻣِﻦْ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﺀ ﺍﻟﺴَّﺎﺑِﻌَﺔ ﺇﻟَﻰ ﺳَﻤَﺎﺀ ﺍﻟﺪُّﻧْﻴَﺎ " ﺇﻧَّﺎ ﻛُﻨَّﺎ ﻣُﻨْﺬِﺭِﻳﻦَ " ﻣُﺨَﻮِّﻓِﻴﻦَ ﺑِﻪِ .
অতএব উল্লেখিত ইসলামী শরীয়তের দলিল- আদিল্লাহ দ্বারা প্রমানিত যে, লাইলাতুল বারাআত বা পবিত্র শবে বারাআতের ফযিলত ইসলামী শরীয়ত সম্মত রীতি-নীতির সহিহ আমলের মাধ্যমে স্বীকৃত৷যে বা যারা বলে শবে বারাআতের অস্তিত্ব কোরআন- হাদীছের কিতাবে নেই তদগতিতে আমি বলব যে, ওদের মত জাহিল বা মূর্খ ও দুনিয়াতে নেই৷মূর্খরাই না জেনে না বুঝে ফতোয়া দিয়ে সমাজে ফিতনা- ফাসাদ সৃষ্টি করে৷মহান আল্লাহর সৃষ্ট দুনিয়াতে এমন মায়ের সন্তান আছ যে,উপরে উল্লেখিত পবিত্র কোরআনের বিশ্লেষণ সমূহ অস্বীকার করতে পারবে? চ্যালেঞ্জ! চ্যালেঞ্জ কখনো উল্লেখিত দলিল- আদিল্লাহ অস্বীকার করতে পারবেনা৷আসুন! আমরা ইমানদার মুসলমান হিসেবে পবিত্র শবে বারাআত পালন করি ও লা- মাজহাবী আহলে হদস ও আহলে খবিছদেরকে দেশ এবং সমাজ হতে বর্জন করি৷
ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺇِﺳْﻤَﺎﻋِﻴﻞُ ﺑْﻦُ ﺃَﺑِﻲ ﺃُﻭَﻳْﺲٍ، ﻗَﺎﻝَ ﺣَﺪَّﺛَﻨِﻲ ﻣَﺎﻟِﻚٌ، ﻋَﻦْ ﻫِﺸَﺎﻡِ ﺑْﻦِ ﻋُﺮْﻭَﺓَ، ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻴﻪِ، ﻋَﻦْ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺑْﻦِ ﻋَﻤْﺮِﻭ ﺑْﻦِ ﺍﻟْﻌَﺎﺹِ، ﻗَﺎﻝَ ﺳَﻤِﻌْﺖُ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳَﻘُﻮﻝُ " ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻻَ ﻳَﻘْﺒِﺾُ ﺍﻟْﻌِﻠْﻢَ ﺍﻧْﺘِﺰَﺍﻋًﺎ، ﻳَﻨْﺘَﺰِﻋُﻪُ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻌِﺒَﺎﺩِ، ﻭَﻟَﻜِﻦْ ﻳَﻘْﺒِﺾُ ﺍﻟْﻌِﻠْﻢَ ﺑِﻘَﺒْﺾِ ﺍﻟْﻌُﻠَﻤَﺎﺀِ، ﺣَﺘَّﻰ ﺇِﺫَﺍ ﻟَﻢْ ﻳُﺒْﻖِ ﻋَﺎﻟِﻤًﺎ، ﺍﺗَّﺨَﺬَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﺭُﺀُﻭﺳًﺎ ﺟُﻬَّﺎﻻً ﻓَﺴُﺌِﻠُﻮﺍ، ﻓَﺄَﻓْﺘَﻮْﺍ ﺑِﻐَﻴْﺮِ ﻋِﻠْﻢٍ، ﻓَﻀَﻠُّﻮﺍ ﻭَﺃَﺿَﻠُّﻮﺍ "
ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟْﻔِﺮَﺑْﺮِﻱُّ ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻋَﺒَّﺎﺱٌ ﻗَﺎﻝَ ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻗُﺘَﻴْﺒَﺔُ ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺟَﺮِﻳﺮٌ ﻋَﻦْ ﻫِﺸَﺎﻡٍ ﻧَﺤْﻮَﻩُ .
This Hadith is Narrated by Hazrat Abdullah bin Amr bin Al-As (bless be upon him) I heard Allah's Messenger (Peace be upon him) saying, "Allah does not take away the knowledge, by taking it away from (the hearts of) the people, but takes it away by the death of the religious learned men till when none of the (religious learned men) remains, people will take as their leaders ignorant persons who when consulted will give their verdict without knowledge. So they will go astray and will lead the people astray."
Sahih Bukhari
(Knowledge)
Reference : Sahih al-Bukhari 100
In-book reference : Book 3, Hadith 42
বিভিন্ন হাদিসে শবে বারাআতের বর্ণনা এসেছে। নিম্নে একটি হাদিস উদ্ধৃত করে এ ব্যাপারে কথিত আহলে হাদিসদের ইমাম শায়েখ নাসীরুদ্দীন আলবানী এর বিখ্যাত গ্রন্থ “আস সিলসিলাতুস সাহিহাহ আল মুজাল্লাদাতুল কামিলাহ” গ্রন্থে ৩ নং খন্ডে ১১৪৪ নং অধ্যায়ে ২১৮ নাম্বার পৃষ্ঠায় শবে বরাআত সম্পর্কে হাদিস এনে যে দীর্ঘ আলোচনা করেছেন তার বাংলা অনুবাদ তুলে ধরা হল-
হাদিস-“মধ্য শাবানের রাতে আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদের নিকট আবির্ভূত হন, তারপর সকল সৃষ্টিকে মাফ করে দেন মুশরিক ও ঝগড়াকারী ছাড়া।
আলবানী তার সিলসিলাতুস সাহিহাহর ৩ নং খন্ডের ১৩৫ নং পৃষ্ঠায় বলেন। “এই হাদিসটি সহীহ” এটি সাহাবাদের এক জামাত বর্ণনা করেছেন বিভিন্ন সূত্রে যার একটি অন্যটিকে শক্তিশালী করেছে। তাদের মাঝে রয়েছেন # মুয়াজ বিন জাবাল রাঃ # আবু সা’লাবা রাঃ # আব্দুল্লাহ বিন আমর রাঃ # আবু মুসা আশয়ারী রাঃ # আবু হুরায়রা রাঃ # আবু বকর সিদ্দীক রাঃ # আউফ বিন মালিক রাঃ # আয়েশা রাঃ প্রমুখ সাহাবাগণ।
উপরে বর্ণিত সবক’টি বর্ণনাকারীর হাদিস তিনি তার কিতাবে আনার মাধ্যমে সুদীর্ঘ আলোচনার পর শেষে তিনি বলেন-
ﻭ ﺟﻤﻠﺔ ﺍﻟﻘﻮﻝ ﺃﻥ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﺑﻤﺠﻤﻮﻉ ﻫﺬﻩ ﺍﻟﻄﺮﻕ ﺻﺤﻴﺢ ﺑﻼ ﺭﻳﺐ ﻭ ﺍﻟﺼﺤﺔ ﺗﺜﺒﺖ ﺑﺄﻗﻞ ﻣﻨﻬﺎ
ﻋﺪﺩﺍ ﻣﺎ ﺩﺍﻣﺖ ﺳﺎﻟﻤﺔ ﻣﻦ ﺍﻟﻀﻌﻒ ﺍﻟﺸﺪﻳﺪ ﻛﻤﺎ ﻫﻮ ﺍﻟﺸﺄﻥ ﻓﻲ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ، ﻓﻤﺎ ﻧﻘﻠﻪ
ﺍﻟﺸﻴﺦ ﺍﻟﻘﺎﺳﻤﻲ ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻓﻲ ” ﺇﺻﻼﺡ ﺍﻟﻤﺴﺎﺟﺪ ” ‏( ﺹ 107 ‏) ﻋﻦ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺘﻌﺪﻳﻞ
ﻭ ﺍﻟﺘﺠﺮﻳﺢ ﺃﻧﻪ ﻟﻴﺲ ﻓﻲ ﻓﻀﻞ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﺣﺪﻳﺚ ﺻﺤﻴﺢ ، ﻓﻠﻴﺲ ﻣﻤﺎ ﻳﻨﺒﻐﻲ
ﺍﻻﻋﺘﻤﺎﺩ ﻋﻠﻴﻪ ، ﻭ ﻟﺌﻦ ﻛﺎﻥ ﺃﺣﺪ ﻣﻨﻬﻢ ﺃﻃﻠﻖ ﻣﺜﻞ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﻘﻮﻝ ﻓﺈﻧﻤﺎ ﺃﻭﺗﻲ ﻣﻦ ﻗﺒﻞ
ﺍﻟﺘﺴﺮﻉ ﻭ ﻋﺪﻡ ﻭﺳﻊ ﺍﻟﺠﻬﺪ ﻟﺘﺘﺒﻊ ﺍﻟﻄﺮﻕ ﻋﻠﻰ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﻨﺤﻮ ﺍﻟﺬﻱ ﺑﻴﻦ ﻳﺪﻳﻚ . ﻭ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻫﻮ ﺍﻟﻤﻮﻓﻖ .
অর্থাৎ সারকথা হল এই যে, নিশ্চয় এই হাদিসটি এই সকল সূত্র পরম্পরা দ্বারা সহীহ, এতে কোন সন্দেহ নেই। আর সহীহ হওয়া এর থেকে কম সংখ্যক বর্ণনার দ্বারাও প্রমাণিত হয়ে যায়, যতক্ষণ না মারাত্মক কোন দুর্বলতা থেকে বেঁচে যায়, যেমন এই হাদিসটি হয়েছে। আর যা বর্ণিত শায়েখ কাসেমী থেকে তার প্রণিত “ইসলাহুল মাসাজিদ” গ্রন্থের ১০৭ নং পৃষ্ঠায় জারাহ তা’দীল ইমামদের থেকে যে, “শাবানের অর্ধ মাসের রাতের কোন ফযীলত সম্পর্কে কোন হাদিস নেই মর্মে” সেই বক্তব্যের উপর নির্ভর করা যাবেনা। আর যদি কেউ তা মেনে নেয় সে হবে ঝাঁপিয়ে পড়া(ঘারতেড়া) স্বভাবের, আর তার ব্যাখ্যা- বিশ্লেষণ ও গবেষণা-উদ্ভাবনের কোন যোগ্যতাই নেই তাই আমি মনে করি৷এক মাত্র ঘৃনিত জাহিল এবং মুনাফিকরাই পবিত্র শবে বারাআতের ফযিলত মূলক সহিহ হাদীছ সমূহ অস্বীকার করে থাকে৷আর শবে বারাআতের মহিমাময় পবিত্র রাতকে এনকার করণেওয়ালা কাগা মৌলভীরাই আমাদের দেশ ও সমাজে আহলে হাদীছ,আহলে হদস বা আহলে খবিছ নামে পরিচিত৷আহলে হাদীছের প্রখ্যাত গুরুজী
আল্লামা শায়েখ আলবানী এর বিশ্লেষণ থেকে একথা নির্ধিদ্ধায় আমরা বলতে পারি যে,সহিহ হাদিস দ্বারা শবে বারাআত প্রমাণিত।
খাদেমুল ইফতাঃ
মুফতি শাইখ এস এম নুরুল ইসলাম নকশবন্দী- মুজাদ্দেদী,সদর সিলেট৷
Dated in 17/04/2019 on Wednesday.

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০১৯

রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম হাজির নাজির কী না???

হাজের-নাজের শব্দদ্বয় বিশ্লেষণ নিয়ে সারা বিশ্বের 90% আলেম-ওলামা জাহিল বা মূর্খঃ

রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম হাজির নাজির কী না???

ﻳﺎ ﺍﻳﻬﺎ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﺍﻧﺎ ﺍﺭﺳﻠﻨﻚ ﺷﺎﻫﺪﺍ ﻭﻣﺒﺸﺮﺍ ﻭﻧﺬﻳﺮﺍ ﻭﺩﺍﻋﻴﺎ ﺍﻟﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﺎﺫﻧﻪ ﻭﺳﺮﺍﺟﺎ ﻣﻨﻴﺮﺍ .
অনুবাদ: হে গায়েবের সংবাদদাতা নবী! নিঃসন্দেহে আমি আপনাকে! প্রেরণ করেছি হাজির নাজির (উপস্থিত’পর্যবেক্ষণকারী ) করে, সুসংবাদদাতা এবং সতর্ককারীরূপে এবং আল্লাহর প্রতি তাঁর নির্দেশে আহ্বানকারী আর আলোকোজ্জ্বলকারী সূর্যরূপে।
(সূরায়ে আহযাব- আয়াত- ৪৫)

উক্ত আয়াতে কারীমায় আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর হাবীব মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পাঁচটি সুন্দর গুণাবলী উল্লেখ করেছেন। যথা-
(১) ﺷﺎﻫﺪ (শাহিদ) তথা- হাজির ও নাজির এবং সাক্ষী।
(২) ﻣﺒﺸﺮ (মুবাশ্বির) মু’মিনগণকে বেহেশতের সুসংবাদদাতা।
(৩) ﻧﺬﻳﺮ (নাযীর) কাফেরদেরকে দোযখের ভীতিপ্রদর্শনকারী।
(৪) ﺩﺍﻋﻴﺎ ﺍﻟﻰ ﺍﻟﻠﻪ (দা’য়িয়ান ইলাল্লাহ) আল্লাহপাকের অনুমতিক্রমে তাঁর দিকে আহ্বানকারী।
(৫) ﺳﺮﺍﺟﺎ ﻣﻨﻴﺮﺍ (সিরাজাম মুনীরা) হেদায়তের উজ্জ্বল সূর্যরূপে।

অত্র আয়াতে রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পাঁচটি গুণাবলীর মধ্যে একটি অন্যতম গুণ হল শাহিদ।
এর বিস্তারিত বিশ্লেষণ নিম্নে প্রদত্ত হল।
ﺷﺎﻫﺪ শব্দের ব্যাখ্যা
কোরআন মজিদের শব্দব্যাখ্যা লেখক সর্বজনমান্য বুজুর্গ আল্লামা ইস্পাহানী রাদিয়াল্লাহু আনহু তদীয় ‘আল মুফরাদাত ফি গারিবীল কোরআন’ নামক কিতাবের ২৬৭ পৃষ্ঠায় ﺷﺎﻫﺪ (শাহিদ) শব্দের অর্থ লিখেছেন নিম্নোক্তভাবে-
ﺷﻬﺪ : ﺍﻟﺸﻬﻮﺩ ﻭﺍﻟﺸﻬﺎﺩﺓ ﺍﻟﺤﻀﻮﺭ ﻣﻊ ﺍﻟﻤﺸﺎﻫﺪﺓ ﺍﻣﺎ ﺑﺎ ﻟﺒﺼﺮ ﺍﻭ ﺑﺎﺍﻟﺒﺼﻴﺮﺓ
অর্থাৎ ﺷﻬﻮﺩ (শুহুদ) ও ﺷﻬﺎﺩﺓ (শাহাদাত) এর অর্থ হচ্ছে ঘটনাস্থলে প্রত্যভাবে দেখার সাথে হাজির বা উপস্থিত থাকা। এ দেখা চর্ম চক্ষু দ্বারাও হতে পারে বা অন্তর চোখ দ্বারাও হতে পারে।
অনুরূপভাবে হানাফী মাযহাবের নির্ভরযোগ্য ফেকাহগ্রন্থ ‘বাহরুর রায়েক’ নামক কিতাবের ৭ম খণ্ড ৫৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে-
ﺍﻥ ﺍﻟﺸﻬﺎﺩﺓ ﺍﺳﻢ ﻣﻦ ﺍﻟﻤﺸﺎﻫﺪﺓ ﻭﻫﻰ ﺍﻻﻃﻼﻉ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺸﺊ ﻋﻴﺎﻧﺎ ﻓﺸﺘﺮﻁ ﻓﻰ ﺍﻻﺩﺍﺀ ﻣﺎ ﻳﻨﺒﺊ ﻋﻦ ﺍﻟﻤﺸﺎﻫﺪﺓ -
অর্থাৎ ‘শাহাদত’ শব্দটি ‘মুশাহাদাহ’ হতে গঠিত। আর মুশাহাদা হল, কোন বস্তুকে চাক্ষুস দেখে এ বিষয়ে অবগতি অর্জন করা ।
এজন্য সাক্ষ্য প্রদানে স্ব-চোখে দর্শন করা যুক্ত করা হয়েছে।
আলমনজিদ নামক অভিধানের ৪০৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে-
ﻭﺍﻟﺸﻬﻴﺪ ﺍﻟﺬﻯ ﻻﻳﻐﻴﺐ ﺷﺊ ﻣﻦ ﻋﻠﻤﻪ ﺍﻟﺸﺎﻫﺪ ﺍﻟﺬﻯ ﻳﺨﺒﺮ ﺑﻤﺎ ﺷﻬﺪﻩ
অর্থাৎ ﺍﻟﺸﻬﻴﺪ (শাহীদ) ঐ ব্যক্তিকে বলা হয় যার ইলিম বা জ্ঞান থেকে কোন কিছুই গায়েব বা অজানা থাকে না এবং ﺍﻟﺸﺎﻫﺪ (শাহিদ) ঐ ব্যক্তিকে বলা হয় যিনি চাক্ষুস দেখে সংবাদ প্রদান করে থাকেন।
অনুরূপ বাংলা একাডেমী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত ‘আরবি-বাংলা’ অভিধান ১৪৯৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে- ﺷﺎﻫﺪ (শাহিদ) পরিদর্শন করিয়াছে। ﻳﺸﺎﻫﺪ দেখিয়াছে।
এভাবে ‘লুগাতে সূরাহ’ ১৩৫ পৃষ্ঠা, মিসবাহুল মুনীর ১ম জিলদের ১৪০ পৃষ্ঠা। আল কামুসূল মুহিত, ৩৭২ পৃষ্ঠা, মিসবাহুল লোগাত, ৪৫০ পৃষ্ঠা, ফিরোজুল লুগাত ৬৭ পৃষ্ঠা, মিফতাহুল লুগাত ৩৯৮ পৃষ্ঠা ও লুগাতে কেশওয়ারী ৪১০ পৃষ্ঠা, ‘শাহীদ’ শব্দের অর্থ হাজির ও নাজির লেখা রয়েছে।
ﺍﻧﺎ ﺍﺭﺳﻠﻨﻚ ﺷﺎﻫﺪﺍ উক্ত আয়াতে কারীমার তাফসির বা ব্যাখ্যায় তাফসিরে আবুস সউদ ৪র্থ খণ্ড ১০৭/১০৮ পৃষ্ঠা, তাফসিরে রুহুল মায়ানী ২২ পারা ৪৫ পৃষ্ঠা, ও তাফসিরে জুমাল ৩য় খণ্ড ৪৪৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে-
( ﺍﻧﺎ ﺍﺭﺳﻠﻨﻚ ﺷﺎﻫﺪﺍ ‏) ﻋﻠﻰ ﻣﻦ ﺑﻌﺜﺖ ﺍﻟﻴﻬﻢ ﺗﺮﺍﻗﺐ ﺍﺣﻮﺍﻟﻬﻢ ﻭﺗﺸﺎﻫﺪ ﺍﻋﻤﺎﻟﻬﻢ ﻭﺗﺘﺤﻤﻞ ﻣﻨﻬﻢ ﺍﻟﺸﻬﺎﺩﺓ ﺑﻤﺎ ﺻﺪﺭ ﻋﻨﻬﻢ ﻣﻦ ﺍﻟﺘﺼﺪﻳﻖ ﻭﺍﻟﺘﻜﺬﻳﺐ ﻭﺳﺎﺋﺮ ﻣﺎﻫﻢ ﻋﻠﻴﻪ ﻣﻦ ﺍﻟﻬﺪﻯ ﻭﺍﻟﻀﻼﻝ ﻭﺗﺆﺩﻳﻬﺎ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻘﻴﺎﻣﺔ ﺍﺩﺍﺀ ﻣﻘﺒﻮﻻ ﻓﻴﻤﺎﻟﻬﻢ ﻭﻣﺎﻋﻠﻴﻬﻢ -
অর্থাৎ যাদের প্রতি আপনাকে প্রেরণ করা হয়েছে, তাদের সকলের জন্য আমি আপনাকে ‘শাহিদ’ তথা হাজির ও নাজির করে পাঠিয়েছি। আপনি তাদের অবস্থাদি পর্যবেক্ষণ করতে থাকবেন, তাদের আমলসমূহ ও প্রত্য করবেন এবং তাদের প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষ্য বহন করবেন, এভাবে যে, তাদের মধ্যে কারা সত্যবাদী ঈমানের উপর অটল আছে, কারা ঈমান হারা হয়ে মিথ্যার মধ্যে রয়েছে, কারা সঠিক হেদায়তের উপর বিদ্যমান এবং কারা গোমরাহীর মধ্যে নিমজ্জিত রয়েছে? কিয়ামতের দিনে আপনার এ সকল সাক্ষী ঈমানদারদের পক্ষে এবং কাফেরদের বিপক্ষে আল্লাহর দরবারে মকবুল হবে।
উপরে বর্ণিত তাফসিরে আবুস সউদ, তাফসিরে রুহুল মায়ানী ও তাফসিরে জুমালের এবারত দ্বারা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হল যে, হুজুর পুরনুর হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হচ্ছেন প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী তথা হাজির ও নাজির।
রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রত্যদর্শী সাক্ষী তথা হাজির ও নাজির সংক্রান্ত বিষয়কে জোড়দার করার জন্য প্রখ্যাত তাফসিরকারক আল্লামা সৈয়দ মাহমুদ আলুছী বাগদাদী রাদিয়াল্লাহু আনহু তদীয় ‘রুহুল মায়ানী’ নামক তাফসির গ্রন্থে মাওলানা জালালউদ্দিন রুমী রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক রচিত নিম্নলিখিত কবিতাটি সংকলন করেছেন-
ﻗﺎﻝ ﻣﻮﻻﻧﺎ ﺟﻼﻝ ﺍﻟﺪﻳﻦ ﺍﻟﺮﻭﻣﻰ ﻗﺪﺱ ﺳﺮﻩ ﺍﻟﻌﺰﻳﺰ ﻓﻰ ﻣﺜﻨﻮﻯ :
ﺩﺭ ﻧﻈﺮ ﺑﻮﺩﺵ ﻣﻘﺎﻣﺎﺕ ﺍﻟﻌﺒﺎﺩ
ﺯﺍﻥ ﺳﺒﺐ ﻧﺎ ﻣﺶ ﺧﺪﺍ ﺷﺎﮨﺪ ﻧﮩﺎﺩ
অর্থাৎ মাওলানা জালালউদ্দিন রুমী রাদিয়াল্লাহু আনহু মসনবী শরীফে বলেন, মাকামাতুল এবাদ তথা বান্দাগণ যেখানে অবস্থান করে, সেখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নজর বা দৃষ্টি রয়েছে। এজন্যই আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর বাণীতে তাঁর হাবিবের নাম মোবারক ‘শাহিদ’ বলে নামকরণ করেছেন।
 (তাফসিরে রুহুল মায়ানী ৮ম খণ্ড ৪৫ পৃষ্ঠা ২২ নং পারা)

উপরোক্ত আলোচনা থেকে দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে গেল যে, আল্লাহর হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ প্রদত্ত মতাবলে হাজির ও নাজির।
উল্লেখ্য যে, ইসলামী পরিভাষায়,যিনি খোদাপ্রদত্ত কুদরতী শক্তির অধিকারী হয়ে একই স্থানে অবস্থান করতঃ সমগ্র জগতকে হাতের তালুর ন্যায় প্রত্যক্ষ করেন, নিকট ও দূরবর্তী আওয়াজ সমভাবে শুনেন, যেখানে ইচ্ছা মতা প্রয়োগ করেন- তাকেই ও হাজির নাজির বলে। (জা আল হক্ব)
সহীহ বোখারীশরীফের ব্যাখ্যাকার আল্লামা ইমাম কাসতালানী রাদিয়াল্লাহু আনহু ‘মাওয়াহিবে লাদুনিয়া’ নামক কিতাবের ২য় জিলদের ১৯২ পৃষ্ঠায় ‘তিবরানীশরীফ’ থেকে একখানা হাদীসশরীফ রেওয়ায়েত করেছেন-
ﺍﺧﺮﺝ ﺍﻟﻄﺒﺮﺍﻧﻰ ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﻤﺮ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺍﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻗﺪ ﺭﻓﻊ ﻟﻰ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ ﻓﺎﻧﺎ ﺍﻧﻈﺮ ﺍﻟﻴﻬﺎ ﻭﺍﻟﻰ ﻣﺎ ﻫﻮ ﻛﺎﺋﻦ ﻓﻴﻬﺎ ﺍﻟﻰ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻘﻴﺎﻣﺔ ﻛﺎﻧﻤﺎ ﺍﻧﻈﺮ ﺍﻟﻰ ﻛﻔﻰ ﻫﺬﻩ -
অর্থাৎ ‘হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা’য়ালা আমার জন্য সারা বিশ্বজগতকে উঠিয়ে রাখছেন, (জাহির করেছেন) সুতরাং আমি সারা বিশ্বজগতকে দেখছি এবং কিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু এ জগতে হবে দেখতে থাকব। যেমন হাতের তালুকে দেখছি। আল্লামা জারকানী রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর লিখিত ‘জারকানীশরীফ’ নামক কিতাবের ৭ম জিলদের ২০৫ পৃষ্ঠায় উক্ত হাদীসশরীফের ব্যাখ্যায় লিখেছেন-
ﺍﻯ ﺍﻇﻬﺮ ﻭﻛﺸﻒ ﻟﻰ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ ﺑﺤﻴﺚ ﺑﺠﻤﻴﻊ ﻣﺎ ﻓﻴﻬﺎ ﻓﺎﻧﺎ ﺍﻧﻈﺮ ﺍﻟﻴﻬﺎ
‏( ﺍﻟﺦ ‏) ﺍﺷﺎﺭﺓ ﻋﻠﻰ ﺍﻧﻪ ﻧﻈﺮ ﺣﻘﻴﻘﻰ ﺩﻓﻊ ﺍﻧﻪ ﺍﺭﻳﺪ ﺑﺎﻟﻨﻈﺮ ﺍﻟﻌﻠﻢ ﻭﻻﻳﺮﺍﺩ ﺍﻧﻪ ﺍﺧﺒﺎﺭ ﻋﻦ ﻣﺸﺎﻫﺪﺓ -
ভাবার্থঃআল্লাহপাক আমার সামনে সারা দুনিয়াকে উঠিয়ে রাখছেন অর্থাৎ সারা দুনিয়াকে আমার জন্য জাহির ও কশ্ফ করে খুলে দিয়েছেন এভাবে যে, আমার আয়াত্বাদীনে সারা দুনিয়ার বস্তুকে করে দিয়েছেন। সুতরাং আমি সারা বিশ্বজগতকে দেখছি এবং কিয়ামত পর্যন্ত দেখতে থাকব।(আল্লামা জারকানী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন) রাসূলে মকবুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খোদাপ্রদত্ত মতা বলে নিজ চোখ মোবারক দ্বারা হাকিকী নজরে দেখছেন, এখানে নজরে ইলিমও মুরাদ লওয়া যাবে না এবং তা দেখার সংবাদও মুরাদ লওয়া হবে না।
(এ মর্মে আরো হাদীসশরীফ রয়েছে)।
এই দীর্ঘ আলোচনা দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হল যে, সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন, তাবে তাবেঈন, মুহাদ্দিসীন, মুফাসসিরীন এমনকি সমস্ত আউলিয়া কেরামের আকিদা হল আল্লাহর হাবীব হাজির ও নাজির।
শায়খুল মুহাদ্দিসীন আল্লামা শেখ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী রাদিয়াল্লাহু আনহু তদীয় "তাহসিলুল বারাকাত" উর্দু তরজমা ‘তাকমীলুল হাসানাত’ কিতাবে সহীহ হাদীসের আলোকে দীর্ঘ আলোচনা করে বলেন-
ﺍﻧﺤﻀﺮﺕ ﺻﻠﯽ ﺍﻟﻠﮧ ﻋﻠﯿﮧ ﻭﺳﻠﻢ ﮐﯽ ﺫﺍﺕ ﺑﺎﺑﺮﮐﺎﺕ ﺍﭘﻨﯽ ﺣﻘﯿﻘﺖ ﮐﮯ ﺍﻋﺘﺒﺎﺭﺳﮯ ﺳﺎﺭﮮ ﻣﻮﺟﻮﺩﺍﺕ ﺍﻭﺭ ﮐﺎﺋﻨﺎﺕ ﻣﯿﮟ ﺣﺎﺿﺮ ﻭﺷﺎﮨﺪ ﻣﻮﺟﻮﺩ ﻭ ﻧﺎﻇﺮ ﮨﮯ -
অর্থাৎ ‘হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জাতে বাবরকাত তাঁর হাকিকতের দৃষ্টিতে সমস্ত সৃষ্টিজগতে হাজির ও শাহিদ, মওজুদ ও নাজির রয়েছেন।’
অনুরূপ শেখ আব্দুল হক মোহাদ্দিসে দেহলভী রাদিয়াল্লাহু আনহু তদীয় "আখবারুল আখইয়ার" নামক কিতাবে লিখিত হাশিয়া বা পাদটীকায় উল্লেখ করেন-
ﻭﺑﭽﻨﺪﯾﮟ ﺍﺧﺘﻼﻑ ﻭﮐﺜﺮﺕ ﻣﺬﺍﮨﺐ ﮐﮧ ﺩﺭ ﻋﻠﻤﺎﺀ ﺍﻣﺖ ﺍﺳﺖ ﯾﮏ ﮐﺲ ﺭﺍﺩﺭﯾﮟ ﻣﺴﺌﻠﮧ ﺧﻼﻑ ﻧﯿﺴﺖ ﮐﮧ ﺍﻧﺤﻀﺮﺕ ﺻﻠﯽ ﺍﻟﻠﮧ ﻋﻠﯿﮧ ﻭﺳﻠﻢ ﺑﺤﻘﯿﻘﺖ ﺣﯿﺎﺕ ﺑﮯ ﺷﺎﺋﺒﮧ ﻣﺠﺎﺯﻭﺗﻮﮨﻢ ﺗﺎﻭﯾﻞ ﻭﺍﺋﻢ ﻭﺑﺎﻗﯿﺴﺖ ﻭﺑﺮﺍﻋﻤﺎﻝ ﺍﻣﺖ ﺣﺎﺿﺮ ﻭﻧﺎﻇﺮﺍﺳﺖ
অর্থাৎ উম্মতে মুহাম্মদীর ওলামাদের মধ্যে এই মতপার্থক্য মাজহাবের আধিক্য সত্ত্বেও এই মাসআলায় কারো দ্বিমত নেই যে,হযরত সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রূপকের অবকাশ ও কুটিল ব্যাখ্যার ধারণা ব্যতিরেকে প্রকৃত জীবনে জীবিত, স্থায়ী ও বিরাজমান এবং উম্মতের আমলসমূহের প্রতি হাজির ও নাজির। (জিকরে জামিল দ্র:)
মাদারিজুন নবুয়ত কিতাবের ৭৮৬/৭৮৭ পৃষ্ঠায় শেখ আব্দুল হক মোহাদ্দিসে দেহলভী রাদিয়াল্লাহু আনহু আরও বলেন-
ﺫﮐﺮ ﮐﻦ ﺍﻭﺭ ﺍﻭ ﺩﺭﻭﺩ ﺑﻔﺮﺳﺖ ﺑﺮﻭﮮ ﺻﻠﯽ ﺍﻟﻠﮧ ﻋﻠﯿﮧ ﻭﺳﻠﻢ ﻭﺑﺎﺵ ﺩﺭ ﺣﺎﻝ ﺫﮐﺮ ﮔﻮ ﯾﺎﺣﺎﺿﺮﺳﺖ ﭘﯿﺶ ﺗﻮﺩﺭ ﺣﺎﻟﺖ ﺣﯿﺎﺕ ﻭﻣﯽ ﺑﯿﻨﯽ ﺗﻮ ﺍﻭﺭ ﺍﻣﺘﺎﺩﺏ ﺑﺎﺟﻼﻝ ﻭﺗﻌﻈﯿﻢ ﻭﮨﻤﺖ ﻭﺣﯿﺎﺀ ﺑﺪﺍﻧﮑﮧ ﻭﮮ ﺻﻠﯽ ﺍﻟﻠﮧ ﻋﻠﯿﮧ ﻭﺳﻠﻢ ﻣﯿﮟ ﺑﯿﻨﺪ ﻭﻣﯿﮟ ﺷﻨﻮﺩ ﮐﻼﻡ ﺗﺮﺍ -
অর্থাৎ হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে স্মরণ করুন, তাঁর প্রতি দরূদশরীফ পেশ করুন। আল্লাহর হাবীবের জিকির করার সময় এমনভাবে অবস্থান করুন, তিনি আপনার সামনে জীবিতাবস্থায় হাজির আছেন,আর আপনি যেন তাঁকে দেখছেন।
আদব, মর্যাদা ও শ্রদ্ধা অক্ষুন্ন রেখে ভীত ও লজ্জিত থাকুন এবং এ ধারণা পোষণ করবেন যে, হুজুর পুরনুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাতে দেখেন। আপনার কথাবার্তা শুনেন।’
নবম শতকের মুজাদ্দিদ আল্লামা ইমাম জালালউদ্দিন সুয়ুতী রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর লিখিত ‘আল হাবী লিল ফাতাওয়া’ নামক কিতাবের ২য় জিলদের ১৫৩ পৃষ্ঠা, "আম্বাউল আযকিয়া ফি হায়াতিল আম্বিয়া"অধ্যায়ে উল্লেখ করেন-
ﺍﻟﻨﻈﺮ ﻓﻰ ﺍﻋﻤﺎﻝ ﺍﻣﺘﻪ ﻭﺍﻻﺳﺘﻐﻔﺎﺭﻟﻬﻢ ﻣﻦ ﺍﻟﺴﻴﺌﺎﺕ ﻭﺍﻟﺪﻋﺎﺀ ﺑﻜﺸﻒ ﺍﻟﺒﻼﺀ ﻋﻨﻬﻢ ﻭﺍﻟﺘﺮﺩﺩ ﻓﻰ ﺍﻗﻄﺎﺭ ﺍﻻﺭﺽ ﻟﺤﻠﻮﻝ ﺍﻟﺒﺮﻛﺔ ﻓﻴﻬﺎ ﻭﺣﻀﻮﺭ ﺟﻨﺎﺯﺓ ﻣﻦ ﻣﺎﺕ ﻣﻦ ﺻﺎﻟﺢ ﺍﻣﺘﻪ ﻓﺎﻥ ﻫﺬﻩ ﺍﻻﻣﻮﺭ ﻣﻦ ﺟﻤﻠﺔ ﺍﺷﻐﺎﻟﻪ ﻓﻰ ﺍﻟﺒﺮﺯﺥ ﻛﻤﺎ ﻭﺭﺩﺕ ﺑﺬﻟﻚ ﺍﻻﺣﺎﺩﻳﺚ ﻭﺍﻻﺛﺎﺭ -
অর্থাৎ হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ দুনিয়াতে পাঁচটি কাজ রয়েছে।
১। উম্মতের আমলের প্রতি নজর বা দৃষ্টি মোবারক রয়েছে।অর্থাৎ আল্লাহর হাবীব উম্মতের আমলসমূহ দেখছেন।
২। উম্মতের জন্য আল্লাহর হাবীব ইস্তেগফার করেন অর্থাৎ আল্লাহর হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তা’য়ালার দরবারে উম্মতের গুনাহ মাফের জন্য সুপারিশ করছেন।
৩। উম্মত যেন গোনাহের কারণে বালা মুসিবতে পতিত না হয় সেজন্য আল্লাহর হাবীব আল্লাহপাকের শাহানশাহী দরবারে দোয়া করছেন।
৪। আল্লাহর হাবীব পৃথিবীর সর্বত্র পরিভ্রমণ করে সর্বত্র (শহর-বন্দর, গ্রাম-গঞ্জ, এলাকা, আতরাফ সব জায়গায় নিজ হাত মোবারক দ্বারা খায়র ও বরকত প্রদান করে থাকেন।
৫। নিজ উম্মতের নেকবান্দার ওফাত হলে আল্লাহর হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জানাযাতে অংশগ্রহণ করে আল্লাহপাকের শাহানশাহী দরবারে এ জানাযাকে কবুল ও মঞ্জুর করিয়ে নিন।
এগুলোই হচ্ছে আমলে বরযখে অর্থাৎ রওজা মোবারকে অবস্থান করে আল্লাহর হাবীব এ সকল কাজ সম্পন্ন করে থাকেন। হাদীস ও আসার থেকে এ সব কাজের পূর্ণ সমর্থন বিদ্যমান রয়েছে।’
জনৈক বিভ্রান্তকারীর স্বরূপ উম্মোচন
নবীগঞ্জ এলাকার জনৈক নজদী ওহাবীপন্থী লেখক, তাঁর ‘গায়েবের জ্ঞান ও রূহের অবস্থান’ নামক পুস্তকের ১৬ পৃষ্ঠায় ‘তাফসিরে রুহুল মায়ানী’ নামক কিতাবের একটি এবারত উল্লেখ করে এ বারতের মর্মকে বিকৃত করে রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খোদাপ্রদত্ত ‘হাজির ও নাজির’ গুণকে অস্বীকার করার হীন চেষ্টা করেছেন। নিম্নে তার পেশকৃত ‘রুহুল মায়ানী’ কিতাবের এবারত ও তার সঠিক মর্ম উপস্থাপন করা হল এবং পাশাপাশি তার ভ্রান্ত ধারণার স্বরূপও উন্মোচন করা গেল।
আল্লামা সৈয়দ মাহমুদ আলুছি রাদিয়াল্লাহু আনহু তদীয় ‘তাফসিরে রুহুল মায়ানী’ ২২ পারা ৮ম খণ্ড ৪৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন-
ﻭﺍﻣﺎ ﺯﻋﻢ ﺍﻥ ﺍﻟﺘﺤﻤﻞ ﻋﻠﻰ ﻣﻦ ﺑﻌﺪﻩ ﺍﻟﻰ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻘﻴﺎﻣﺔ ﻟﻤﺎ ﺍﻧﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺣﻰ ﺑﺮﻭﺣﻪ ﻭﺟﺴﺪﻩ ﻳﺴﻴﺮ ﺣﻴﺚ ﺷﺎﺀ ﻓﻰ ﺍﻗﻄﺎﺭ ﺍﻻﺭﺽ ﻭﺍﻟﻤﻠﻜﻮﺕ ﻓﻤﺒﻨﻰ ﻣﺎ ﻋﻠﻤﺖ ﺣﺎﻟﻪ ﻭﻟﻌﻞ ﻓﻰ ﻫﺬﻳﻦ ﺍﻟﺨﺒﺮﻳﻦ ﻣﺎﻳﺎﺑﺎﻩ ﻛﻤﺎ ﻻﻳﺨﻔﻰ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﺘﺪﺑﺮ -
অর্থাৎ এ এবারতের বিকৃত অর্থ ‘গায়েবের জ্ঞান ও রূহের অবস্থান’ নামক পুস্তকে নিম্নরূপ লেখা হয়েছে অর্থ ‘কিন্তু একটি ভিত্তিহীন কথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকালের পর হতে কিয়ামত পর্যন্ত তিনি তাঁর পবিত্র রূহ ও দেহের সাথে জীবিত এবং দুনিয়া ও আল্লাহর মালাকুতের সর্বত্র বিচরণ করে থাকেন। এই কল্পনা ধারণার ভিত্তি উপরোল্লিখিত অবস্থাসমূহের উপরই প্রতিষ্ঠিত, যা আপনি (পাঠক) অবগত হয়েছেন।
তবে আশা করা যাচ্ছে যে, উপরোক্ত রেওয়ায়েত তা অগ্রাহ্য করছে। জ্ঞানী ও বিচক্ষণ ব্যক্তিদের নিকট তা কখনও অপ্রকাশ্য নয়।’
তার এ বিকৃত অর্থকে প্রমাণ করার জন্য আল্লামা রাগেব ইস্পাহানী "মুফরাদাত"গ্রন্
থের আংশিক এবারত উপস্থাপন করে তার ভ্রান্ত দাবিকে জোরদার করার অপচেষ্টা করেছে।
"মুফরাদাত"গ্রন্থের এবারত নিম্নরূপ-
ﺯﻋﻢ : ﺍﻟﺰﻋﻢ ﺣﻜﺎﻳﺔ ﻗﻮﻝ ﻳﻜﻮﻥ ﻣﻈﻨﺔ ﻟﻠﻜﺬﺏ ﻭﻟﻬﺬﺍ ﺟﺎﺀ ﻓﻰ ﺍﻟﻘﺮﺍﻥ ﻓﻰ ﻛﻞ ﻣﻮﺿﻊ ﺫﻡ ﺍﻟﻘﺎﺋﻠﻮﻥ ﺑﻪ ﻧﺤﻮ ‏( ﺯﻋﻢ ﺍﻟﺬﻳﻦ ﻛﻔﺮﻭﺍ )
অর্থাৎ ﺯﻋﻢ (যায়াম) এমন কাল্পনিক কাহিনী বা ধ্যান ধারণা যার কোন বাস্তবতা নেই, এমন অর্থ প্রদান করার নিমিত্তে কোরআনশরীফের বিভিন্ন স্থানে ﺯﻋﻢ (যায়াম) শব্দ এসেছে।
যেমন- ﺯﻋﻢ ﺍﻟﺬﻳﻦ ﻛﻔﺮﻭﺍ ﺍﻻﻳﺔ (কাফেরগণ মিথ্যা ধারণা করে)।
আল্লামা রাগেব ইস্পাহানীর তদীয় ‘আল মুফরাদাত’ গ্রন্থে ﺯﻋﻢ (যায়াম) শব্দের যে বিশ্লেষণ করেছেন তা পবিত্র কোরআনে বর্ণিত ﺯﻋﻢ শব্দসম্পর্কিত। যে কোন আরবি এবারতে বর্ণিত ﺯﻋﻢ শব্দের সাথে এর সম্পর্ক নেই। আল্লামা আলুছী রাদিয়াল্লাহু আনহু এর ‘তাফসিরে রুহুল মায়ানী’ তে বর্ণিত ﺯﻋﻢ (যায়াম) শব্দ ও কোরআনের আয়াতে বর্ণিত ﺯﻋﻢ শব্দের এক অর্থ হতে পারে না। নজদীপন্থী লেখক আল্লামা আলুছী রাদিয়াল্লাহু আনহু এর লিখিত ﺯﻋﻢ শব্দ ও আল্লামা ইস্পাহানীর কোরআনের শব্দের বিশ্লেষণে ﺯﻋﻢ (যায়াম) শব্দের অর্থকে একাকার করে দিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে।
যদি আল্লামা আলুছী রাদিয়াল্লাহু আনহু এর উক্তি ﺯﻋﻢ (যায়াম) শব্দ দ্বারা বাতিল আকিদা বুঝানোর উদ্দেশ্য হতো, তাহলে তদীয় "তাফসিরে রহুল মায়ানী" কিতাবে "খাতামুন্নাবীঈন" আয়াতের ব্যাখ্যায় নিম্নলিখিত বর্ণনা দিতেন না। ‘খাতামুন্নাবীঈন’ আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা আলূছী রাদিয়াল্লাহু আনহুর বর্ণনা নিম্নে প্রদত্ত হল-
ﻭﺍﺳﺘﺤﺴﻨﻪ ﺍﻟﺠﻼﻝ ﺍﻟﺴﻴﻮﻃﻰ ﻭﻗﺎﻝ : ﺑﻌﺪ ﻧﻘﻞ ﺍﺣﺎﺩﻳﺚ ﻭﺍﺛﺎﺭ ﻣﺎﻧﺼﺢ ﻓﺤﺼﻞ ﻣﻦ ﻣﺠﻤﻮﻉ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﻜﻼﻡ ﺍﻟﻨﻘﻮﻝ ﻭﺍﻻﺣﺎﺩﻳﺚ ﺍﻥ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺣﻰ ﺑﺠﺴﺪﻩ ﻭﺭﻭﺣﻪ ﻭﺍﻧﻪ ﻳﺘﺼﺮﻑ ﻭﻳﺴﻴﺮ ﺣﻴﺚ ﺷﺎﺀ ﻓﻰ ﺍﻗﻄﺎﺭ ﺍﻻﺭﺽ ﻭﻓﻰ ﺍﻟﻤﻠﻜﻮﺕ ﻭﻫﻮ ﺑﻬﻴﺌﺘﻪ ﺍﻟﺘﻰ ﻛﺎﻥ ﻋﻠﻴﻬﺎ ﻗﺒﻞ ﻭﻓﺎﺗﻪ ﻟﻢ ﻳﺘﺒﺪﻝ ﻣﻨﻪ ﺷﺊ ﻭﺍﻧﻪ ﻣﻐﻴﺐ ﻋﻦ ﺍﻻﺑﺼﺎﺭ ﻛﻤﺎ ﻏﻴﺒﺖ ﺍﻟﻤﻼﺋﻜﺔ ﻣﻊ ﻛﻮﻧﻬﻢ ﺍﺣﻴﺎﺀ ﺑﺎﺟﺴﺎﺩﻫﻢ ﻓﺎﺫﺍ ﺍﺭﺍﺩ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﺭﻓﻊ ﺍﻟﺤﺠﺎﺏ ﻋﻤﻦ ﺍﺭﺍﺩ ﺍﻛﺮﺍﻣﻪ ﺑﺮﺅﻳﺘﻪ ﺭﺍﻩ ﻋﻠﻰ ﻫﻴﺌﺘﻪ ﺍﻟﺘﻰ ﻫﻮ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻭﺍﻟﺴﻼﻡ ﻋﻠﻴﻬﺎ ﻻﻣﺎﻧﻊ ﻣﻦ ﺫﻟﻚ ﻭﻻﺩﺍﻋﻰ ﺍﻟﻰ ﺍﻟﺘﺨﺼﻴﺺ ﺑﺮﺅﻳﺔ ﺍﻟﻤﺜﺎﻝ ﻭﺫﻫﺐ ﻭﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﺍﻟﻰ ﻧﺤﻮ ﻫﺬﺍ ﻓﻰ ﺳﺎﺋﺮ ﺍﻻﻧﺒﻴﺎﺀ ﻋﻠﻴﻬﻢ ﺍﻟﺴﻼﻡ ﻓﻘﺎﻝ ﺍﻧﻬﻢ ﺍﺣﻴﺎﺀ ﺭﺩﺕ ﺍﻟﻴﻬﻢ ﺍﺭﻭﺍﺣﻬﻢ ﺑﻌﺪ ﻣﺎ ﻗﺒﻀﻮﺍ ﻭﺍﺫﻥ ﻟﻬﻢ ﻓﻰ ﺍﻟﺨﺮﻭﺝ ﻣﻦ ﻗﺒﻮﺭﻫﻢ ﻭﺍﻟﺘﺼﺮﻑ ﻓﻰ ﺍﻟﻤﻠﻜﻮﺕ ﺍﻟﻌﻠﻮﻯ ﻭﺍﻟﺴﻔﻠﻰ -
অর্থাৎ নবম শতকের মুজাদ্দিদ আল্লামা জালালউদ্দিন সুয়ূতী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি অনেক হাদীস এবং আসার দলিলরূপে সংকলন করে অতি সুন্দরভাবে বর্ণনা দিয়েছেন। যার সারমর্ম হল এই যে, নিশ্চয় নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বশরীরে ও স্বপ্রাণে জীবিত রয়েছেন। তিনি যেখানে ইচ্ছা ভ্রমণ করেন, পৃথিবীর ও ফেরেশতা জগতের প্রতিটি কোণায় কোণায় ক্ষমতা প্রয়োগ করেন। তিনি হুবহু সেরূপই রয়েছেন, যেরূপ ওফাতশরীফের পূর্বে ছিলেন।
এতে কোন পরিবর্তন হয়নি। তবে আমাদের দৃষ্টি থেকে অদৃশ্য করে দেওয়া হয়েছে।
যেমন- ফেরেশতাগণ জীবিত হওয়া সত্বেও আমাদের দৃষ্টি থেকে তাদেরকে অদৃশ্য করে দেয়া হয়েছে। যখন আল্লাহ তা’য়ালা কাউকে নবীজীর দিদার বা দর্শন দ্বারা সম্মানিত করতে চান, তখন তার থেকে পর্দা তুলে নেন এবং সে তাঁকে (নবীজীকে) ঐ রূপেই দর্শন করেন যেরূপ তিনি রয়েছেন। এ বিষয়ে কোন প্রতিবন্ধকতা নেই এবং সুরতে মিসাল (সদৃশ্য আকৃতি) দর্শন দ্বারা বিশেষিত করার ও কোন প্রয়োজন নেই।
আল্লামা ইমাম জালালউদ্দিন সুয়ূতী রাদিয়াল্লাহু আনহু সকল আম্বিয়ায়ে কেরাম সম্বন্ধে এ মত পোষণ করেন।
তারপর তিনি বলেন- সমস্ত নবীগণ স্বশরীরে জীবিত রয়েছেন। নবীগণের ওফাতশরীফের পর (দেহ মোবারক হতে রূহ মোবারক পৃথক হওয়ার পর) তাঁদের রূহ মোবারককে পূণরায় (অল্পণের মধ্যে) তাঁদের দেহ মোবারকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। (পূর্বে যেরূপ ছিলেন স্বশরীরে জিন্দা,এখনও আছেন স্বশরীরে জিন্দা) সকল নবীগণকে তাঁদের রওজাশরীফ হতে স্বশরীরে বের হওয়ার অনুমতি প্রদান করা হয়েছে। আসমান ও জমিনের সর্বত্র পরিভ্রমণ করার মতাও প্রদান করা হয়েছে। (তাফসিরে রুহুল মায়ানী ৮ম খণ্ড ৩৬ পৃষ্ঠা ও আল হাবী লিল ফাতাওয়া ২য় জিলদ ২৬৬ পৃষ্ঠা দ্র.)
উক্ত এবারত দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হল যে, রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে ইমাম জালালউদ্দিন সুয়ুতী রাদিয়াল্লাহু আনহু এর আকিদা হচ্ছে, আল্লাহর হাবীব স্ব-শরীরে জীবিত,তিনি যেখানে ইচ্ছা ভ্রমণ করেন, পৃথিবী ও ফেরেশতাজগতের প্রতিটি কোণায় কোণায় তসররূফ বা মতা প্রয়োগ করেন এবং হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুবহু সেরূপই রয়েছেন, যেরূপ ওফাতশরীফের পূর্বে ছিলেন।
এতে কোন পরিবর্তন সাধিত হয়নি।
আল্লামা আলুছী রাদিয়াল্লাহু আনহু আকিদাসংক্রান্ত উপরোক্ত বর্ণনাকে-ﻭﺍﺳﺘﺤﺲﻧﻪ ﺍﻟﺠﻼﻝ ﺍﻟﺴﻴﻮﻃﻰ (সুয়ূতী রাদিয়াল্লাহু অতি চমৎকার বর্ণনা দিয়েছেন) বলে ইমাম সুয়ুতীর আকিদার সাথে পূর্ণ সমর্থন ও একাত্মতা ঘোষণা করেছেন।
এতে এ কথাও প্রমাণিত হল পূর্বে তাঁর বর্ণিত ﺯﻋﻢ (যায়াম) শব্দ দ্বারা আল্লামা আলুছী রাদিয়াল্লাহু আনহু বাতিল বা ভিত্তিহীন আকিদা মুরাদ নেননি।
উল্লেখ্য যে, আল্লাহর হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেখার জন্য বা পর্যবেক্ষণ করার জন্য কোথায়ও যাওয়ার প্রয়োজন নেই বরং একই স্থানে অবস্থান করেই সারা দুনিয়াতে হাজির ও নাজির রয়েছেন।
এ ক্ষমতা আল্লাহপাক তাঁর হাবীবকে দান করেছেন। ভ্রমণ করা আল্লাহর হাবীবের বিশেষ বৈশিষ্ট্য।
সুধী পাঠকবৃন্দ! আমরা এতক্ষণ যা কিছু আলোচনা করেছি, তাহল আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আল্লাহ প্রদত্ত বিশেষ গুণ ﺷﺎﻫﺪ (শাহিদ) তথা হাজির ও নাজির বা প্রত্যদর্শী সাক্ষী সম্পর্কে। একদিকে আল্লাহর হাবীবের গুণ যেমন ﺷﺎﻫﺪ (শাহিদ) অপরদিকে আরেকটি গুণ হচ্ছে ﺷﻬﻴﺪ (শাহীদ)।
আল্লাহপাক নিজেই এরশাদ করেছেন-
ﻭﻛﺬﻟﻚ ﺟﻌﻠﻨﺎﻛﻢ ﺍﻣﺔ ﻭﺳﻄﺎﻟﺘﻜﻮﻧﻮﺍ ﺷﻬﺪﺍﺀ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻭﻳﻜﻮﻥ ﺍﻟﺮﺳﻮﻝ ﻋﻠﻴﻜﻢ ﺷﻬﻴﺪﺍ -
অর্থ: এভাবে আমি তোমাদেরকে এক মধ্যপন্থী (শ্রেষ্ঠ) উম্মতরুপে প্রতিষ্ঠিত করেছি, যাতে তোমরা মানবজাতির জন্য সাক্ষী হও এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হবে তোমাদের জন্য (সাফায়ী) সাী বা রক। (সূরা বাকারা)
উক্ত আয়াতে কারীমায় মু’মিন উম্মতগণকে ﺷﻬﺪﺍﺀ (শুহাদা) এবং রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ﺷﻬﻴﺪ (শাহীদ) গুণে গুণান্বিত করা হয়েছে।
প্রকাশ থাকে যে, কিয়ামতের দিবসে অন্যান্য নবীগণের বেঈমান উম্মতেরা আল্লাহ তা’য়ালার সুমহান দরবারে আরজ করবে যে, হে আল্লাহ আপনার কোন পয়গাম্বর আমাদের কাছেই আসেননি এবং কেহ আপনার হুকুম আহকামও আমাদের নিকট পৌঁছায়নি। তখন এ সকল নবীগণ আরজ করবেন, হে আল্লাহ এরা মিথ্যাবাদী।
আমরা আপনার সমস্ত বিধান তাদেরকে শুনিয়েছি, জানিয়েছি।এতদ্বসত্বেও তারা ঈমান গ্রহণ করেনি। নবীগণকে হুকুম করা হবে, আপনারা আপনাদের দাবির স্বপে সাী আনয়ন করুন। নবীগণ আলাইহিমুস সালাম তখন হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মতগণকেই নিজেদের সাক্ষী হিসেবে পেশ করবেন।
আর উম্মতে মোহাম্মদীগণ তখন সাক্ষী প্রদান করে বলবেন, আল্লাহ আপনার এ সকল নবীগণ আপন দাবিতে সত্য।
বরং এ সকল কাফিররাই মিথ্যাবাদী। বাস্তবিকই নবীগণ দাওয়াত পৌঁছিয়েছেন। এ কথার উপর কাফিররা অভিযোগ এনে বলবে, তোমরাতো আমাদের সময়ে ছিলে না।
 হাজার হাজার বছর পর সৃষ্টি হয়ে না দেখে না শোনে কিভাবে সাক্ষী দিচ্ছ।
ঈমানদার উম্মতে মোহাম্মদীরা আরজ করবেন, আমরা আমাদের নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকেই শুনেছি, যিনি আল্লাহ প্রদত্ত মতা বলে সকল অবস্থা দেখেছেন, এমতাবস্থায় উম্মতে মোহাম্মদীর দাবির সত্যতা প্রমাণের জন্য আল্লাহর হাবীব তাশরিফ আনবেন এবং বলবেন, হে আল্লাহ নিশ্চয়ই আমি তাদেরকে বলেছি যে, অতীত নবীগণ স্ব-স্ব কউমের নিকট দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছিয়েছেন।
হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ সাীর ভিত্তিতে নবীগণের পে আহকামূল হাকিমীন রায় প্রদান করবেন। কেন না আল্লাহর হাবীব পূর্বাপর সমস্ত ঘটনাবলী দেখেছেন, নতুবা প্রথমেতো শোনা সাক্ষী উম্মতগণই দিয়েছিল,এখন প্রয়োজন হয়েছিল এমন সাক্ষী যিনি সব কিছু অবলোকন করেছেন।
প্রখ্যাত মুফাসসির আল্লামা ইসমাইল হাক্বী বরসয়ী রাদিয়াল্লাহু আনহু (যার ওফাত ১১৩৭ হিজরি) তদীয় "তাফসিরে রুহুল বয়ান" নামক কিতাবের ১ম খণ্ড ২৪৮ পৃষ্ঠায় উপরোক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেন-
ﻫﺬﺍ ﻣﺒﻨﻰ ﻋﻠﻰ ﺗﻀﻤﻴﻦ ﺍﻟﺸﻬﻴﺪ ﻣﻌﻨﻰ ﺍﻟﺮﻗﻴﺐ ﻭﺍﻟﻤﻄﻠﻊ ﻓﻌﺪﻯ ﺗﻌﺪﻳﺘﻪ ﻭﺍﻟﻮﺟﻪ ﺍﻋﺘﺒﺎﺭ ﺗﻀﻤﻴﻦ ﺍﻟﺸﻬﻴﺪ ﺍﻻﺷﺮﺓ ﺍﻟﻰ ﺍﻥ ﺍﻟﺘﻌﺪﻳﻞ ﻭﺍﻟﺘﺰﻛﻴﺔ ﺍﻧﻤﺎ ﻳﻜﻮﻥ ﻋﻦ ﺧﺒﺮﺓ ﻭﻣﺮﺍﻗﺒﺔ ﺑﺤﺎﻝ ﺍﻟﺸﺎﻫﺪ … ﻭﻣﻌﻨﻰ ﺷﻬﺎﺩﺓ ﺍﻟﺮﺳﻮﻝ ﻋﻠﻴﻬﻢ ﺍﻃﻼﻋﻪ ﻋﻠﻰ ﺭﺗﺒﺔ ﻛﻞ ﻣﺘﺪﻳﻦ ﺑﺪﻳﻨﻪ ﻭﺣﻘﻴﻘﺘﻪ ﺍﻟﺘﻰ ﻫﻮ ﻋﻠﻴﻬﺎ ﻣﻦ ﺩﻳﻨﻪ ﻭﺣﺠﺎﺑﻪ ﺍﻟﺬﻯ ﻫﻮﺑﻪ ﻣﺤﺠﻮﺏ ﻋﻦ ﻛﻤﺎﻝ ﺩﻳﻨﻪ ﻓﻬﻮ ﻳﻌﺮﻑ ﺫﻧﻮﺑﻬﻢ ﻭﺣﻘﻴﻘﺔ ﺍﻳﻤﺎﻧﻬﻢ ﻭﺍﻋﻤﺎﻟﻬﻢ ﻭﺣﺴﻨﺎﺗﻬﻢ ﻭﺳﻴﺎﺗﻬﻢ ﻭﺍﺧﻼﺻﻬﻢ ﻭﻧﻔﺎﻗﻬﻢ ﻭﻏﻴﺮ ﺫﻟﻚ ﺑﻨﻮﺭ ﺍﻟﺤﻖ ﻭﺍﻣﺘﻪ ﻳﻌﺮﻓﻮﻥ ﺫﻟﻚ ﻣﻦ ﺳﺎﺋﺮ ﺍﻻﻣﻢ ﺑﻨﻮﺭﻩ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻭﺍﻟﺴﻼﻡ - ﻣﻠﺨﺼﺎ
অর্থাৎ এটা এ কারণেই যে, আয়াতে উল্লেখিত ﺷﻬﻴﺪ (শাহীদ) শব্দটি পর্যবেণকারী ও অবগত হওয়া কথাটিরও অন্তর্ভুক্ত করে এবং এ অর্থ দ্বারা একথারই ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে,কোন ব্যক্তির ভাল ও মন্দের সাক্ষী উক্ত ব্যক্তির যাবতীয় অবস্থা সম্পর্কে সম্যকরূপে ওয়াকিফহাল হন।
… হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (কিয়ামতের দিন মুসলমানদের) সাক্ষী দেওয়ার অর্থ এই যে, তিনি (আল্লাহর হাবীব) প্রত্যেক ধর্মপরায়ণ ব্যক্তির ধর্মীয় অবস্থা সম্পর্কে অবগত। তার ঈমানের হাকিকত কী এবং তাঁর দ্বীনের উন্নতির পথে অন্তরায় কী, সব কিছুই তিনি জানেন।’
সুতরাং হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের (উম্মতের) পাপরাশি ও ঈমানের স্তরসমূহ ভাল-মন্দ আমল বা কার্যাবলী এবং কার নিয়ত শুদ্ধ কে মুনাফিক খোদাপ্রদত্ত নূরের সাহায্যে অবগত আছেন এবং আল্লাহর হাবীবের উম্মতরাও তাঁর নূরের সাহায্যে ঐ সমস্ত বিষয়াদী সম্পর্কে অবগত হতে পারেন।
অনুরূপ উপমহাদেশের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস শামসুল উলামা আল্লামা শাহ আব্দুল আজিজ মোহাদ্দিসে দেহলভী রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর স্বরচিত ‘তাফসিরে আজিজী’ নামক কিতাবে ﻭﻳﻜﻮﻥ ﺍﻟﺮﺳﻮﻝ ﻋﻠﻴﻜﻢ ﺷﻬﻴﺪﺍ আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেছেন-
ﯾﻌﻨﯽ ﻭﺑﺎﺷﺪ ﺭﺳﻮﻝ ﺷﻤﺎﺑﺮﺷﻤﺎ ﮔﻮﺍﮦ ﺯﯾﺮ ﺍﮐﮧ ﻣﻄﻠﻊ ﺍﺳﺖ ﺑﮧ ﻧﻮﺭ ﻧﺒﻮﺕ ﺑﮧ ﺭﺗﺒﮧ ﮨﺮﻣﺘﺪﯾﻦ ﺑﺪﯾﻦ ﺧﻮﺩﮐﮧ ﮐﺮﺍﻡ ﺩﺭﺟﮧ ﺍﺯﺩﯾﻦ ﻣﻦ ﺭﺳﯿﺪﮦ ﻭﺣﻘﯿﻘﺖ ﺍﯾﻤﺎﻥ ﺍﻭﭼﯿﺴﺖ ﻭﺣﺠﺎﺑﯽ ﮐﮧ ﺑﺪﺍﻥ ﺍﺯﺗﺮﻗﯽ ﻣﺤﺠﻮﺏ ﻣﺎﺋﺪﮦ ﺍﺳﺖ ﮐﺪﺍﻡ ﺍﺳﺖ ﭘﺲ ﺍﻭﻣﯿﺸﻨﺎﺳﺪ ﮔﻨﺎﮨﺎﻥ ﺷﻤﺎﺭﺍ ﺩﺭﺟﺎﺕ ﺍﯾﻤﺎﻥ ﺷﻤﺎﺭﺍ ﻭﺍﻋﻤﺎﻝ ﻧﯿﮏ ﻭﺑﺪﺷﻤﺎﺭﺍ ﻭﺍﺧﻼﺹ ﻭﻧﻔﺎﻕ ﺷﻤﺎﺭﺍ ﻭﻟﮭﺬﺍ ﺷﮩﺎﺩﺕ ﺍﻭﺩﺭ ﺩﻧﯿﺎ ﺑﺤﮑﻢ ﺷﺮﻉ ﺩﺭ ﺣﻖ ﺍﻣﺖ ﻣﻘﺒﻮﻝ ﻭﻭﺍﺟﺐ ﺍﻟﻌﻤﻞ ﺍﺳﺖ -
অর্থাৎ ‘রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদের সাক্ষী হবেন, এজন্য যে তিনি স্বীয় নবুয়তের আলোকে প্রত্যেক দ্বীনদার বা ধর্মপরায়ণ ব্যক্তির ধর্মের অবস্থা সম্পর্কে অবগত আছেন। কোন ব্যক্তি ধর্মের কোন স্তরে পৌঁছেছেন, তার, ঈমানের হাকিকত কী এবং পারলৌকিক উন্নতির সাথে অন্তরায় কী সব কিছুই তিনি জানেন।
সুতরাং হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদের পাপরাশি, তোমাদের ঈমানের স্তর, তোমাদের নেক ও বদ, ভাল-মন্দ কার্যাবলী এবং তোমাদের এখলাস বা বিশুদ্ধ নিয়ত ও তোমাদের নেফাক বা কপটতা সম্পর্কে অবগত আছেন। এজন্যইতো পৃথিবীতে উম্মতের পক্ষে বা বিপক্ষে তাঁর সাক্ষ্য শরিয়তের বিধান মতে মকবুল বা গ্রহণীয় এবং অবশ্যই পালনীয়।
উপরে উল্লেখিত দু’খানা প্রামাণ্য তাফসিরের এবারত দ্বারা প্রতীয়মান হল যে, রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পূর্বাপর সমস্ত উম্মতের সার্বিক অবস্থা এবং তাদের কর্ম তৎপরতা সম্পর্কে অবগত রয়েছেন।
রাব্বুল আলামীনের মহান দরবারে তিনি দু’টি সাী প্রদান করবেন।
প্রথমতঃরাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মতগণ পূর্ববর্তী নবীগণের পক্ষে যে সাক্ষ্য প্রদান করছেন, তা সঠিক।
দ্বিতীয় নবীগণ তাঁদের স্ব-স্ব দায়িত্ব সঠিকভাবে আদায় করেছেন কিন্তু তাদের বেঈমান উম্মতরা তাদের দাওয়াত গ্রহণ করেনি বরং প্রত্যাখ্যান করেছে।
উল্লেখ যে, রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পূর্বাপর উম্মতগণের সমস্ত ঘটনাবলী প্রত্য করেছেন, এজন্য তাঁর সাক্ষ্য হবে চূড়ান্ত সাক্ষ্য।
কেন না রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পূর্ববর্তী সকল আম্বিয়ায়ে কেরামের সমস্ত ঘটনাবলীর সময়ে রূহানীভাবে হাজির ও নাজির ছিলেন। এ সম্পর্কে আল্লামা আরেফ বিল্লাহ শেখ আহমদ সাভী মালেকী রাদিয়াল্লাহু আনহু তদীয় "তাফসিরে সাভী" নামক কিতাবের ৩য় খণ্ড ২১৯ পৃষ্ঠায় ﻭﻣﺎﻛﻨﺖ ﺑﺠﺎﻧﺐ ﺍﻟﻄﻮﺭ আয়াতের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেন-
ﻭﻫﺬﺍ ﺑﺎﻟﻨﻈﺮ ﺍﻟﻰ ﺍﻟﻌﺎﻟﻢ ﺍﻟﺠﺴﻤﺎﻧﻰ ﻻﻗﺎﻣﺔ ﺍﻟﺤﺠﺔ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺨﺼﻢ ﻭﺍﻣﺎ ﺑﺎﻟﻨﻈﺮ ﺍﻟﻰ ﺍﻟﻌﺎﻟﻢ ﺍﻟﺮﻭﺣﺎﻧﻰ ﻓﻬﻮ ﺣﺎﺿﺮ ﺭﺳﺎﻟﺔ ﻛﻞ ﺭﺳﻮﻝ ﻭﻣﺎﻭﻗﻊ ﻟﻪ ﻣﻦ ﻟﺪﻥ ﺍﺩﻡ ﺍﻟﻰ ﺍﻥ ﻇﻬﺮ ﺑﺠﺴﻤﻪ ﺍﻟﺸﺮﻳﻒ -
অর্থাৎ এখানে বলা হয়েছে যে, আপনি (আল্লাহর হাবীব) হযরত মুসা আলাইহিস সালামের সে ঘটনাস্থলে ছিলেন না, তা শারীরিক দৃষ্টিকোণ থেকে বলা হয়েছে। অর্থাৎ সেখানে স্ব-শরীরে হাজির ছিলেন না, বরং রূহানীভাবে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক রাসূলের রিসালত এমনকি হযরত আদম আলাইহিস সালামের আদি সৃষ্টি থেকে শুরু করে রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বশরীরে দুনিয়াতে আবির্ভূত হওয়ার সময় পর্যন্ত তিনি অনুষ্ঠিত সমস্ত বিষয়ে রূহানীতে হাজির ছিলেন।
অনুরূপ আল্লামা ইসমাইল হাক্বী বরসয়ী রাদিয়াল্লাহু আনহু তদীয় ‘তাফসিরে রুহুল বয়ান’ নামক কিতাবের ৯ম খণ্ড ১৮ পৃষ্ঠায় সূরা ফাত্হ এর ﺍﻧﺎ ﺍﺭﺳﻠﻨﻚ ﺷﺎﻫﺪﺍ আয়াতের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেন-
ﻭﻟﺬﺍ ﺍﺭﺳﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﺷﺎﻫﺪﺍ ﻓﺎﻧﻪ ﻟﻤﺎ ﻛﺎﻥ ﺍﻭﻝ ﻣﺨﻠﻮﻕ ﺧﻠﻘﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﻛﺎﻥ ﺷﺎﻫﺪﺍ ﺑﻮﺣﺪﺍﻧﻴﺔ ﺍﻟﺤﻖ ﻭﺭﺑﻮﺑﻴﺘﻪ ﻭﺷﺎﻫﺪﺍ ﺑﻤﺎ ﺍﺧﺮﺝ ﻣﻦ ﺍﻟﻌﺪﻡ ﺍﻟﻰ ﺍﻟﻮﺟﻮﺩ ﻣﻦ ﺍﻻﺭﻭﺍﺡ ﻭﺍﻟﻨﻔﻮﺱ ﻭﺍﻻﺟﺮﺍﻡ ﻭﺍﻻﺭﻛﺎﻥ ﻭﺍﻻﺟﺴﺎﻡ ﻭﺍﻻﺟﺴﺎﺩ ﻭﺍﻟﻤﻌﺎﺩﻥ ﻭﺍﻟﻨﺒﺎﺕ ﻭﺍﻟﺤﻴﻮﺍﻥ ﻭﺍﻟﻤﻠﻚ ﻭﺍﻟﺠﻦ ﻭﺍﻟﺸﻴﻄﺎﻥ ﻭﺍﻻﻧﺴﺎﻥ ﻭﻏﻴﺮ ﺫﻟﻚ ﻟﺌﻼ ﻳﺸﺪ ﻋﻨﻪ ﻣﺎ ﻳﻤﻜﻦ ﻟﻠﻤﺨﻠﻮﻕ ﻭﺍﺳﺮﺍﺭ ﺍﻓﻌﺎﻟﻪ -
ﻭﻋﺠﺎﺋﺐ ﺻﻨﻌﻪ ﻭﻏﺮﺍﺋﺐ ﻗﺪﺭﺗﻪ ﺑﺤﻴﺚ ﻻﻳﺸﺎﺭﻛﻪ ﻓﻴﻪ ﻏﻴﺮﻩ ﻭﻟﻬﺬﺍ ﻗﺎﻝ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺴﻼﻡ ﻋﻠﻤﺖ ﻣﺎﻛﺎﻥ ﻭﻣﺎ ﺳﻴﻜﻮﻥ ﻻﻧﻪ ﺷﺎﻫﺪ ﺍﻟﻜﻞ -
অর্থাৎ এজন্য আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর হাবীবকে ﺷﺎﻫﺪ (শাহীদ) তথা প্রত্য সাী বা হাজির ও নাজির গুণে গুণান্বিত করে প্রেরণ করেছেন।
কেন না তিনি আল্লাহর সর্বপ্রথম সৃষ্টি। তাঁকে আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর ওয়াহদানিয়াত বা একত্বের ও রবুবিয়ত বা প্রভুত্বের প্রত্যদর্শী সাক্ষী বানিয়ে নিয়ে সৃষ্টি করেছেন। তিনি খোদাপ্রদত্ত ক্ষমতা বলে অবলোকন করেছেন ঐ সকল বস্তু, যেগুলো অস্তিত্বহীন থেকে অস্তিত্বে এসেছে।
যেমন- মানবাত্মা, জীবাত্মা,পাপী, পুণ্যবান, শারীরিক কাঠামো, দেহ, খানিজ পদার্থ, বৃক্ষরাজি, পশু-পাখি, ফেরেশতা, জিন, শয়তান, মানবজাতি ইত্যাদি সবগুলো অবলোকন করেছেন। যেন আল্লাহ তা’য়ালার যেসব গুপ্তভেদ ও বিস্ময়কর ব্যাপারগুলো, যেগুলোর রহস্য উম্মোচন করা অন্য কোন সৃষ্টির পে সম্ভবপর নয় তা হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে রহস্যাবৃত ও অপ্রকাশ্য থাকার কোন অবকাশ থাকে না।
 অর্থাৎ তিনি সব কিছুই দেখেছেন।
এজন্যই আল্লাহর হাবীব এরশাদ করেছেন ﻋﻠﻤﺖ ﻣﺎ ﻛﺎﻥ ﻭﻣﺎ ﺳﻴﻜﻮﻥ অর্থাৎ যা কিছু হয়েছে এবং যা কিছু হবে, সব কিছু সম্পর্কে আমি অবগত হয়েছি।
কেননা তিনি হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সব কিছু অবলোকনকারী।
অর্থাৎ হাজির ও নাজির। মোদ্দাকথা হল এই যে, আল্লাহর হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আল্লাহ প্রদত্ত অসংখ্য অগণিত গুণাবলী রয়েছে তন্মধ্যে দু’টি গুণবাচক নাম মোবারক যথাক্রমে ﺷﺎﻫﺪ (শাহিদ) প্রত্যদর্শী সাক্ষী বা হাজির ও নাজির এবং আরেকটি গুণ হচ্ছে ﺷﻬﻴﺪ (শাহীদ) রক্ষণাবেণকারী যাকে আল্লাহ ‘মা কানা ওমা ইয়াকুনু’ এর ইলিম দান করেছেন, এবং সব কিছু অবলোকন করার ক্ষমতা দান করে অবলোকন করিয়েছেন। তবু আল্লাহ তাঁর ঈমানদার উম্মতগণকে ﺷﻬﺪﺍ (শুহাদা) বা একিনী সাী প্রদান করার মতা দান করেছেন।
এ প্রসঙ্গে জানা আবশ্যক যে, মহান আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা’য়ালারও একটি গুণবাচক নাম রয়েছে ﺷﻬﻴﺪ (শাহীদ)। দেখুন আল্লাহ ﺷﻬﻴﺪ (শাহীদ), নবী ﺷﻬﻴﺪ (শাহীদ) এবং উম্মতগণও ﺷﻬﻴﺪ (শাহীদ) এর বহুবচন ﺷﻬﺪﺍﺀ (শুহাদা), তাই বলে কি সবগুলোর ভাবার্থ এক হবে? কষ্মিনকালেও নয়।
১। আল্লাহ তা’য়ালা ﺷﻬﻴﺪ (শাহীদ) এর অর্থ হচ্ছে আল্লাহ তা’য়ালা সব কিছু নিজস্ব মতা বলে দেখেন, শুনেন, এতে ইন্দ্রিয় বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কোন প্রয়োজন হয় না। যেহেতু আল্লাহ হচ্ছেন নিরাকার ও সমদ বা কোন কিছুর মুখাপেী নন। আল্লাহ ওয়াজিবুল ওয়াজুদ, মমকিনুল ওয়াজুদ নন। তিনি সব সময় ছিলেন ও সব সময় থাকবেন। যার আরম্ভও নেই শেষও নেই। যিনি নিজস্ব মতায় মতাবান।
২। আল্লাহ ﺷﻬﻴﺪ (শাহীদ) অর্থ হচ্ছে, আল্লাহর ইলিম ও কুদরত সর্বত্র বিরাজমান। যেমন কালামেপাকে এরশাদ হচ্ছে ﻭﻫﻮ ﺑﻜﻞ ﺷﺊ ﺷﻬﻴﺪ অপর আয়াতে এরশাদ হচ্ছে ﺑﻜﻞ ﺷﺊ ﻣﺤﻴﻂ মুফাসসিরীনে কেরামগণ এ আয়াতের তাফসির করেছেন ﻋﻠﻤﺎ ﻭ ﻗﺪﺭﺓ (ইলমান ওয়া কুদরাতান) অর্থাৎ আল্লাহপাকের ইলিম ও কুদরত সব কিছুকে পরিবেষ্টন করে রেখেছে। এ হল আল্লাহর ﺷﻬﻴﺪ (শাহীদ) গুণের ভাবার্থ। এ পর্যায়ে আল্লাহ তা’য়ালাকে মজাজী বা রূপক অর্থে হাজির ও নাজির বলা যেতে পারে। হাকিকী অর্থে নয়। যেমন শাহ ওলি উল্লাহ মোহাদ্দিসে দেহলভী রাদিয়াল্লাহু আনহু ‘আল কাউলুল জামিল’ কিতাবে লিখেছেন-
ﺍﻟﻠﻪ ﺣﺎﺿﺮﻯ ﺍﻟﻠﻪ ﻧﺎﻇﺮﻯ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﻌﻰ .
আল্লাহ হাজির আল্লাহ নাজির আল্লাহ আমার সঙ্গে রয়েছেন।
আল্লাহ দেখতে চোখের প্রয়োজন নেই, শুনতে কানের প্রয়োজন নেই ইত্যাদি কোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের প্রয়োজন নেই। তা হল আল্লাহ তা’য়ালার মহান শান।
১। কেননা আল্লাহ তা’য়ালা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আকার, আকৃতি থেকে পুত:পবিত্র।
২। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহপাক এমন মু’জিযাপূর্ণ চোখ মোবারক দান করেছেন যার সাহায্যে তিনি একই স্থানে অবস্থান করে ডানে-বামে, সামনে-পিছনে, আলোতে-অন্ধকারে, ঘুমন্ত, জাগ্রত, ওফাতশরীফের পূর্বাপর সর্বাবস্থায় সারা দুনিয়ার সব কিছু দেখছেন এবং কিয়ামত পর্যন্ত দেখতে থাকবেন। এমনকি খোদাপ্রদত্ত মতা বলে একই মূহুর্তে আসমান-জমিনের সর্বত্র সর্বজায়গায় পরিভ্রমণ করে মতা প্রয়োগ করে থাকেন। এজন্যই রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শাহাদত বা স্যা হচ্ছে প্রত্যদর্শী হিসেবে। এটাই হল আল্লাহর হাবীবের ﺷﺎﻫﺪ (শাহিদ) গুণের ভাবার্থ।
এমনিভাবে পূর্বেকার আম্বিয়ায়ে কেরামের সমস্ত ঘটনাবলীতে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রূহানীতে হাজির ছিলেন এবং সব ঘটনাবলী নবুয়তের আলো দ্বারা অবলোকন করেছেন। এজন্যই পূর্বেকার আম্বিয়ায়ে কেরামের পক্ষে স্বীয় ঈমানদার উম্মতের সাফায়ী সাক্ষী প্রদান করবেন। এক কথায়, বিগত, আগত, সমস্ত ঘটনার ক্ষেত্রে রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হচ্ছেন প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী। সেজন্য কালামেপাকে নূরনবী খাতামুন্নাবীয়ীন মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ﺷﺎﻫﺪ (শাহিদ) ও ﺷﻬﻴﺪ (শাহীদ) উভয় গুণে গুণান্বিত করেছেন।
এখানে পরিস্কারএকটি বিষয় লক্ষ্যণীয়-
ﻭﻓﻴﻪ ﺗﻨﺒﻴﻪ ﻧﺒﻴﻪ ﺍﻧﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺣﺎﺿﺮ ﻭﻧﺎﻇﺮ ﻓﻰ ﺫﻟﻚ ﺍﻟﻌﺮﺽ ﺍﻻﻛﺒﺮ -
অর্থাৎ হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশাল হাশরের ময়দানে হাজির ও নাজির থাকবেন।দেখুন আল্লামা মুল্লা আলী ক্বারী রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক লিখিত "মিরকাত শরহে মিশকাত’"৫ম জিলদের ২৪৫ পৃষ্ঠা ও মিশকাতশরীফ ৪৮৫ পৃষ্ঠা হাশিয়া নং ৬ দ্র.।
৩। হাশরের ময়দানে পূর্বেকার নবীগণের বেঈমান উম্মতগণ তাদের নিকট দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছাননি বলে আল্লাহর দরবারে অভিযোগ উত্থাপন করলে, আল্লাহ তা’য়ালা নবীগণকে তাদের দাওয়াত পৌঁছানোর দাবির পক্ষে সাক্ষী পেশ করতে আদেশ করলে নবীগণ উম্মতে মুহাম্মদীকে সাক্ষী হিসেবে পেশ করবেন।
উম্মতে মোহাম্মদীগণ সম্মানিত নবীগণের পক্ষে সঠিকভাবে দাওয়াত পৌঁছানোর সাক্ষ্য প্রদান করলে,আপত্তি উত্থাপন হবে, তোমাদেরকে এ বিষয়েকে শিক্ষা দিয়েছেন।উত্তরে উম্মতে মোহাম্মদীগণ বলবেন আমাদের নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে এ সংবাদ দিয়েছেন এবং আমরা তা একিন বা বিশ্বাস করে সাক্ষ্য প্রদান করলাম যে, পূর্বেকার নবীগণ উম্মতের নিকট দ্বীনের দাওয়াত সঠিকভাবে পেীঁছিয়ে দিয়েছেন। (ফতহুলবারি শরহে বোখারী)।
উম্মতের এ সাক্ষী প্রত্যদর্শী সাক্ষী নয় বরং শোনা একিনী সাক্ষী। এ হল উম্মতে মুহাম্মদীর শাহীদ বা ﺷﻬﺪﺍ (শুহাদা) হওয়ার ভাবার্থ।
প্রসঙ্গক্রমে এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, এমন কতগুলো সিফত বা গুণ রয়েছে, যা শব্দগতভাবে আল্লাহর শানে প্রযোজ্য, তেমনি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শানেও প্রযোজ্য। কিন্তু অর্থগত দিক দিয়ে তুলনাবিহীন পার্থক্য রয়েছে। যেমন ﻛﺮﻳﻢ (কারীম) নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার একখানা সিফত বা গুণ, তেমনি ﻛﺮﻳﻢ (কারীম) আল্লাহ তা’য়ালারও সিফত বা গুণ রয়েছে। যেমন বলা হয় ﺍﻟﻠﻪ ﻛﺮﻳﻢ (আল্লাহু কারীমুন) ﺭﺳﻮﻝ ﻛﺮﻳﻢ (রাসূলুন কারীমুন)। কিন্তু উভয় ﻛﺮﻳﻢ (কারীম) শব্দদ্বয় এ অর্থগত দিক দিয়ে কষ্মিনকালেও এক হতে পারে না। ﻛﺮﻳﻢ (কারীম) এর শাব্দিক অর্থ বকশিস করনেওয়ালা বা দাতা, যিনি দান করে থাকেন।
ﻛﺮﻳﻢ (কারীম) যখন আল্লাহর সিফত বা গুণ হিসেবে প্রযোজ্য হবে, তখন তার অর্থ হবে, মহান আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর অসীম, অফুরন্ত ধন-ভাণ্ডার হতে অনাদিকাল হতে অনন্তকাল পর্যন্ত সবকিছু পর্যাপ্ত পরিমাণে সৃষ্টির চাহিদানুযায়ী বকশিস বা প্রদান করে থাকেন।
অপরদিকে রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তা’য়ালার দানকৃত নিয়ামতসমূহকে বন্টন করে থাকেন। যেমন হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই এরশাদ করেছেন- ﺍﻧﻤﺎ ﺍﻧﺎ ﻗﺎﺳﻢ ﻭﺍﻟﻠﻪ ﻳﻌﻄﻰ অর্থাৎ নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’য়ালা দাতা এবং আমি (রাসূল) বণ্টনকারী। এখানে আল্লাহ তা’য়ালা ﻛﺮﻳﻢ (কারীম) হাকিকী বা প্রকৃত অর্থে এবং রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ﻛﺮﻳﻢ (কারীম) মজাজী বা রূপক অর্থে।
তদ্রুপ ﺣﺎﺿﺮ ﻭ ﻧﺎﺿﺮ (হাজির ও নাজির) শব্দদ্বয় আল্লাহ তা’য়ালার শানে প্রয়োগ হলে মজাজী বা রূপক অর্থে ধরে নিতে হবে। কেন না ‘হাজির ও নাজির’ এর প্রকৃত অর্থ চোখ দ্বারা দেখা, দেহ নিয়ে উপস্থিত থাকা। অথচ আল্লাহ দেহ ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থেকে মুক্ত ও পবিত্র। সুতরাং আল্লাহর ক্ষেত্রে হাজির ও নাজির শব্দদ্বয়ের হাকিকী বা প্রকৃত অর্থ নেওয়া মুতায়াজ্জর বা অসম্ভব।
কিন্তু রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শানে ﺣﺎﺿﺮ ﻭ ﻧﺎﺿﺮ (হাজির ও নাজির) শব্দদ্বয় হাকিকী বা প্রকৃত অর্থেই প্রয়োগ হবে।
খোলাসা বয়ান নিম্নরূপ-
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনকে হাকিকী বা প্রকৃত অর্থে হাজির ও নাজির বলা যাবে না। কেন না হাজির ও নাজির হওয়ার জন্য দেহ ও চোখের প্রয়োজন যা পূর্বেই দলিলভিত্তিক আলোচনা করা হয়েছে।
কালামেপাকে আল্লাহ তা’য়ালা নিজেই এরশাদ করেছেন- ﻟﻴﺲ ﻛﻤﺜﻠﻪ ﺷﺊ অর্থাৎ আল্লাহপাক কোন বস্তুর মিসাল বা তুল্য নন।
হুজ্জাতুল ইসলাম আল্লামা ইমাম গাজ্জালী রাদিয়াল্লাহু আনহু ‘এহইয়ায়ে উলুমিদ্দিন’ নামক কিতাবের ১ম জিলদের ৫৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন-
ﻭﺍﻧﻪ ﻟﻴﺲ ﺑﺠﺴﻢ ﻣﺼﻮﺭ ﻭﻻﺟﻮﻫﺮ ﻣﺤﺪﻭﺩ ﻣﻔﺪﺭ ﻭﺍﻧﻪ ﻻﻳﻤﺎﺛﻞ ﺍﻻﺟﺴﺎﻡ ﻻﻓﻰ ﺍﻟﺘﻘﺪﻳﺮ ﻭﻻﻓﻰ ﻗﺒﻮﻝ ﺍﻻﻧﻘﺴﺎﻡ ﻭﺍﻧﻪ ﻟﻴﺲ ﺑﺠﻮﻫﺮ ﻭﻻﺗﺤﻠﻪ ﺍﻟﺠﻮﻫﺮ ﻭﻻﻳﻌﺮﺽ ﻭﻻﺗﺤﻠﻪ ﺍﻻﻋﺮﺍﺽ ﺑﻞ ﻻﻳﻤﺎﺛﻞ ﻣﻮﺟﻮﺩﺍ ﻭﻻﻳﻤﺎﺛﻠﻪ ﻣﻮﺟﻮﺩ ﻟﻴﺲ ﻛﻤﺜﻠﻪ ﺷﺊ ﻭﻻﻫﻮ ﻣﺜﻞ ﺷﺊ ﻭﺍﻧﻪ ﻻﻳﺤﺪﻩ ﺍﻟﻤﻘﺪﺍﺭ ﻭﻻﺗﺤﻮﻳﻪ ﺍﻻﻗﻄﺎﺭ ﻭﻻﺗﺤﻴﻂ ﺑﻪ ﺍﻟﺠﻬﺎﺕ ﻭﻻﺗﻜﺸﻔﻪ ﺍﻻﺭﺿﻮﻥ ﻭﻻﺍﻟﺴﻤﻮﺍﺕ ﻭﺍﻧﻪ ﻣﺴﺘﻮ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻌﺮﺵ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻮﺟﻪ ﺍﻟﺬﻯ ﻗﺎﻟﻪ ﺍﻟﺦ -
অর্থাৎ আল্লাহ অশরীরি, নিরাকার,পরিমাণশূন্য, সাদৃশ্যহীন,তকদী
রহীন, অবিভাজ্য,অণু-পরমাণুশূন্য, তাঁর দৈর্ঘ্য বা প্রস্থ নেই,কোন জিনিস দ্বারা তাঁর দৃষ্টান্ত দেওয়া যায় না,তিনি কোন জিনিসের তুল্য নন।তাঁর ন্যায় আর কিছুই নেই।তিনি কোন জিনিসের ন্যায় নন।তিনি পরিমাণের ভিতর সীমাবদ্ধ নন,কোন স্থানের ভিতর তিনি নিবদ্ধ নন,কোন দিক তাঁকে বেষ্টন করতে পারে না। আসমান ও জমিন তাঁকে লুকিয়ে রাখতে পারে না।
তিনি পরিশ্রম, বিশ্রাম,স্থিতি, স্থান পরিবর্তন হতে মুক্ত।’
উপরে দলিলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হল যে, আল্লাহ তা’য়ালা নিরাকার,অশরীরি, সেহেতু আল্লাহর সিফত বা গুণ হাকিকী বা প্রকৃত অর্থে হাজির ও নাজির হতে পারে না। কেন না হাকিকী অর্থে নাজির হতে হলে যেমন চোখের প্রয়োজন তেমনি হাকিকী অর্থে হাজির হতে হলে দেহের প্রয়োজন। আল্লাহ এ থেকে পূত:পবিত্র তাই আল্লাহ মজাজী বা রূপক অর্থে হাজির ও নাজির। হাকিকী অর্থে নয়।
অপরদিকে আল্লাহর হাবীব আল্লাহর সৃষ্টি, তাঁর যেমন শরীর মোবারক রয়েছে তেমনি চোখ মোবারকও রয়েছে। আল্লাহর প্রদত্ত মু’জিযাপূর্ণ চোখ মোবারক দ্বারা সারা দুনিয়া দেখেন, সর্বকালে খোদাপ্রদত্ত নবুয়তের দ্বারা সব কিছু অবলোকনকারী, তাই আল্লাহর হাবিবের খোদাপ্রদত্ত শক্তিতে হাজির ও নাজির গুণই হচ্ছে হাকিকী বা প্রকৃত অর্থে।
আল্লামা ইমাম গাজ্জালী রাদিয়াল্লাহু আনহু ‘এহইয়ায়ে উলুমুদ্দিন’ নামক কিতাবের ১ম জিলদের ৫৪ পৃষ্ঠায় লিখেছেন-
অর্থাৎ আল্লাহপাক চোখ ব্যতীত দেখেন, কান ব্যতীত শুনেন, দিল ব্যতীত জ্ঞান রাখেন, হাত ব্যতিত ধরেন, যন্ত্র ব্যতিত সৃষ্টি করেন। তাঁর গুণ সৃষ্টির গুণের তুল্য নয়। সেরূপ তাঁর অস্তিত্ব, সৃষ্টির অস্তিত্বের তুল্য নন।’
উল্লেখ্য যে, আল্লাহ তা’য়ালা ‘মুহিত’ (সর্বত্র বিরাজমান) স্বশরীরে নয় বরং ইলিম ও কুদরত সর্বত্র হাজির রয়েছে। এ হিসেবে আল্লাহপাককে মজাজী বা রূপক অর্থে হাজির ও নাজির বলা হয়ে থাকে এবং হাকিকী বা প্রকৃত অর্থে আল্লাহর হাবীব হাজির ও নাজির।
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! ‘আল কাউলুল জামিল’ নামক কিতাবে বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস শাহ ওলিউল্লাহ মোহাদ্দিসে দেহলভী রাদিয়াল্লাহু আনহু জিকির ও মোরাকাবার পদ্ধতি বয়ান করতে গিয়ে কী চমৎকার বর্ণনা দিয়েছেন-
ﻓﻴﺘﻠﻔﻆ ﺍﻟﺴﺎﻟﻚ ﺍﻟﻠﻪ ﺣﺎﺿﺮﻯ ﺍﻟﻠﻪ ﻧﺎﻇﺮﻯ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﻌﻰ ﺍﻭ ﻳﺘﺨﻴﻞ ﻓﻰ ﺍﻟﺠﻨﺎﻥ ﺛﻢ ﻳﺘﺼﺮﻑ ﺣﻀﻮﺭﻩ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻭﻧﻈﺮﻩ ﻣﻌﻴﻨﻪ ﺗﺼﻮﺭﺍ ﺟﻴﺪﺍ ﻣﺴﺘﻘﻴﻤﺎ ﻣﻊ ﺗﻨﺰﻳﻬﻪ ﻋﻦ ﺍﻟﺠﻬﺔ ﻭﺍﻟﻤﻜﺎﻥ ﺣﺘﻰ ﻳﺴﺘﻐﺮﻕ ﻓﻰ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﺘﺼﻮﺭ -
অর্থাৎ যারা বায়আতে রাসূলের মাধ্যমে তরিকতে দাখিল হয়েছেন,এ ধরণের সালেক ব্যক্তির মুখে উচ্চারণ করে বলবে, আল্লাহু হাজিরী (আল্লাহর ইলিম ও কুদরত আমার নিকট হাজির) আল্লাহু নাজিরী (আল্লাহ আমাকে নিজস্ব মতা বলে চোখ ব্যতিরেকে দেখছেন) আল্লাহু মায়ী (আল্লাহর কুদরত ও রহমত আমার সঙ্গে রয়েছে) অথবা উচ্চারণ ব্যতীত শুধুমাত্র এ ধরণের খেয়াল রাখতে হবে। তারপর একাগ্রচিত্তে এ খেয়াল রাখতে হবে যে, আল্লাহ হাজির ও আল্লাহ নাজির এবং আল্লাহতায়ালা আমার সঙ্গে আছেন। (সাথে সাথে শাহ ওলি উল্লাহ মোহাদ্দিসে দেহলভী রাদিয়াল্লাহু আনহু লিখেন)-
ﻣﻊ ﺗﻨﺰﻳﻬﺔ ﻋﻦ ﺍﻟﺠﻬﺔ ﻭﺍﻟﻤﻜﺎﻥ
ﺣﺘﻰ ﻳﺴﺘﻐﺮﻕ ﻓﻰ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﺘﺼﻮﺭ
ভাবার্থ: ‘সালিক যখন আল্লাহু হাজিরী, আল্লাহু নাজিরী, আল্লাহু মায়ী এ জিকির করতে থাকবে, তখন সাথে সাথে এ আকিদা অবশ্যই রাখতে হবে যে, আল্লাহ তা’য়ালা দিক, স্থান অর্থাৎ আল্লাহ তা’য়ালা উত্তর, দণি, পূর্ব, পশ্চিম, উপর, নীচ, মাকান বা স্থান কাল ইত্যাদি থেকে পূতঃপবিত্র এ ধারণা অন্তরে বদ্ধমূল রাখতে হবে।
এ আলোচনা দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হল যে, আল্লাহ তা’য়ালাকে হাজির ও নাজির বলা যাবে কিন্তু আল্লাহ তা’য়ালা যেহেতু অশরীরি নিরাকার ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থেকে মুক্ত বিধায় আল্লাহ তা’য়ালা সশরীরে হাজির এবং চোখ দ্বারা নাজির বলা যাবে না। বরং আল্লাহ তা’য়ালার ইলিম ও কুদরত সর্বত্র হাজির ও নাজির রয়েছে এবং নিজ কুদরতে আল্লাহ তা’য়ালা চোখ ব্যতীত দেখছেন ঈমান রাখতে হবে।
পান্তরে আল্লাহর হাবীব খোদাপ্রদত্ত মতা বলে মু’জিযাপূর্ণ চোখ মোবারক দ্বারা দেখছেন, সৃষ্টির প্রথম থেকে নবুয়তের নূর দ্বারা দেখছেন এবং একই স্থানে অবস্থান করে সারা দুনিয়ায় মতা প্রয়োগ করছেন। এ হিসেবে আল্লাহর হাবীব সর্বকালের প্রত্যদর্শী সাক্ষী বা হাজির ও নাজির। আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর হাবীবকে এ মহান গুণে গুণান্বিত করেছেন। তা হল ঈমানী আকিদা।
ওহাবী দেওবন্দীদের অপব্যাখ্যার খণ্ডন
ওহাবী দেওবন্দীপন্থী লেখক নুরুল ইসলাম ওলিপুরী তার লিখিত "সুন্নি নামের অন্তরালে"পুস্তিকায় কোরআন সুন্নাহর দ্বারা প্রমাণিত সমস্ত মুফাসসিরীন, মুহাদ্দিসীন ও আউলিয়ায়ে কেরাম কর্তৃক স্বীকৃত, আল্লাহর হাবীবের একখানা মহান গুণ খোদাপ্রদত্ত ক্ষমতা বলে তিনি হাজির ও নাজির। এ মহান গুণকে কোরআনপাকে আল্লাহর হাবীবের শানে নাজিলকৃত ﺷﺎﻫﺪ (শাহিদ) শব্দের সঠিক অর্থকে বিকৃত করে এবং হাদীসশরীফের মর্মার্থকে অপব্যাখ্যা করে নিজের মনগড়া মতকে প্রাধান্য দিয়ে শিরিক সাব্যস্ত করে নিজে গোমরাহ ও পথভ্রষ্ট হয়েছে এবং সরলমনা মুসলমানগণকে পথভ্রষ্ট করার পায়তারা চালাচ্ছে।
কিন্তু সে তার পুস্তিকায় আল্লাহর হাবীব হাজির ও নাজির নন মর্মে একখানা আয়াতও উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়নি। ভবিষ্যতে সক্ষম হবে না নিশ্চিত। তবে সে বোখারীশরীফের একখানা হাদীসের এবারতের মর্মকে বিকৃত করে তার ভ্রান্ত দাবির পক্ষে নবীর সাক্ষীকে উম্মতের সাক্ষীর সাথে একাকার করে নবী যে, প্রত্যর্দর্শী সাক্ষী তা সুকৌশলে এড়িয়ে মুসলিম সমাজে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে বেড়াচ্ছে।
অপরদিকে তার বক্তব্য "তাফসিরে কুরতুবী" নামক কিতাবের উদ্ধৃতি দিয়ে আর একখানা মুরসাল হাদীসের প্রসঙ্গ টেনে উম্মতে মুহাম্মদীর গুণাবলী ﺷﻬﺪﺍﺀ (শুহাদা) পূর্বেকার নবীগণের পক্ষে একিনী সাক্ষ্যকে নূরনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ﺷﻬﻴﺪ (শাহীদ) প্রত্যদর্শী সাক্ষী হওয়ার সাথে সমতুল্য করার চেষ্টা করেছে, যা একজন সাধারণ ঈমানদারের কাছেও স্পষ্ট।
তার এ বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে গেল যে, তিনি হাদীসশাস্ত্রে একেবারেই অজ্ঞ। কারণ মুরসাল হাদীস দ্বারা আকিদার ব্যাপারে তো দলিলরূপে গণ্য হওয়া দূরের কথা বরং আমলের ব্যাপারেও দলিল হতে পারে না।
আল্লামা শেখ আব্দুল হক মোহাদ্দিসে দেহলভী রাদিয়াল্লাহু আনহু মিশকাতশরীফের মুকাদ্দমায় মুরসাল হাদীস সম্পর্কে উল্লেখ করেন-
ﺣﻜﻢ ﺍﻟﻤﺮﺳﻞ ﺍﻟﺘﻮﻗﻒ ﻋﻨﺪ ﺟﻤﻬﻮﺭ ﺍﻟﻌﻠﻤﺎﺀ ﻻﻧﻪ ﻻﻳﺪﺭﻯ ﺍﻥ ﺍﻟﺴﺎﻗﻂ ﺛﻘﺔ ﺍﻭﻻ ﻻﻥ ﺍﻟﺘﺎﺑﻌﻰ ﻗﺪ ﺭﻭﻯ ﻋﻦ ﺍﻟﺘﺎﺑﻌﻰ ﻭﻓﻰ ﺍﻟﺘﺎﺑﻌﻴﻦ ﺛﻘﺎﺕ ﻭﻏﻴﺮ ﺛﻘﺎﺕ -
অর্থাৎ জমহুর উলামাদের মতে ‘হাদীসে মুরসাল’ এর হুকুম হল ﺗﻮﻗﻒ (তাওয়াক্কুফ) তথা আমল থেকে বিরত থাকা।
তদুপরি এ মুরসাল হাদীসখানা কোরআনশরীফের আয়াতের মর্ম ও অন্যান্য সহীহ হাদীসের ভাবার্থের সাথে সাংঘর্ষিক এ ক্ষেত্রেএ মুরসাল হাদীস আকিদাসংক্রান্ত ব্যাপারে হুজ্জত বা দলিল হতে পারে না।
শাহীদ শব্দের ভাবার্থকে রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও উম্মতে মুহাম্মদীর ক্ষেত্রে যে ভিন্নভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে যা ইতোপূর্বে আমরা দলিলভিত্তিক সবিস্তার আলোচনা করেছি।
একটি সুক্ষ রহস্য সূরা বাকারার আয়াতে কারীমা-
ﻟﺘﻜﻮﻧﻮﺍ ﺷﻬﺪﺍﺀ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻭﻳﻜﻮﻥ ﺍﻟﺮﺳﻮﻝ ﻋﻠﻴﻜﻢ ﺷﻬﻴﺪﺍ .
অর্থাৎ উম্মতে মুহাম্মদীগণ পূর্বেকার নবীগণ তাঁদের স্ব-স্ব উম্মতের নিকট দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছানোর সাক্ষী এবং আমাদের নবী হবেন, উম্মতের মুহাম্মদীর আদালত বা ন্যায়পরায়ণতার সাক্ষী।
এই আয়াতে কারীমার মধ্যে দু’টি জুমলা বা বাক্য রয়েছে- ﻟﺘﻜﻮﻧﻮﺍ ﺷﻬﺪﺍﺀ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻨﺎﺱ হচ্ছে প্রথম বাক্য, ﻭﻳﻜﻮﻥ ﺍﻟﺮﺳﻮﻝ ﻋﻠﻴﻜﻢ ﺷﻬﻴﺪﺍ হচ্ছে দ্বিতীয় জুমলা বা বাক্য। উভয় জুমলা বা বাক্যের মধ্যে ﻭ (ওয়াউ) রয়েছে, যাকে আরবিতে বলা হয় হরফে আত্ফ (অব্যয়)। হরফে আতফের পূর্বের বাক্যকে বলা হয় ﻣﻌﻄﻮﻑ ﻋﻠﻴﻪ (মা’তুফ আলাইহি) এবং পরের বাক্যকে বলা হয় ﻣﻌﻄﻮﻑ (মা’তুফ)। আরবি গ্রামারের কায়দানুযায়ী উভয় মা’তুফ ও মা’তুফ আলাইহি একজাত হতে পারে না। এ হল ‘আতফুন জুমলা আলাল জুমলা’ অর্থাৎ প্রথম বাক্যের যে ভাবার্থ হবে দ্বিতীয় বাক্যে তার ব্যতিক্রম হবে। তাই বর্ণিত আয়াতে মা’তুফ ও মা’তুফ আলাইহির বাক্যাংশে শাহীদ ও শুহাদা শব্দের পাশাপাশি অবস্থানের কারণে অর্থাৎ উভয় শব্দ মা’তুফ ও মা’তুফ আলাইহি হওয়ায় তা ভিন্নার্থক হওয়া অবশ্যই জরুরি। এ ক্ষেত্রে উম্মতে মোহাম্মদীকে শুহাদা (যা শাহীদ শব্দের বহুবচন) ও রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শাহীদ বলা হয়েছে যা আরবি গ্রামারের নিয়মানুযায়ী একটি অন্যটি থেকে আলাদা অর্থ প্রদান করবে।
আয়াতে বর্ণিত উম্মতে মোহাম্মদীকে শুহাদা বলা হয়েছে, একিনী বা শ্রুত সাক্ষী হিসেবে। আর হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শাহীদ বলা হয়েছে আইনী বা প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী হিসেবে।
এজন্য তাফসিরে রুহুল বয়ান প্রণেতা আল্লামা ইসমাইল হাক্বী বরুসয়ী রাদিয়াল্লাহু আনহু ও তাফসিরে আজিজী শরীফের প্রণেতা শাহ আব্দুল আজিজ মোহাদ্দিসে দেহলভী রাদিয়াল্লাহু আনহুর ভাবার্থই তাঁদের স্ব-স্ব তাফসির গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।ইতোপূর্বে অত্র পুস্তকে মুফাসসিরীনে কেরামের তাফসিরের মূল এবারতসহ উল্লেখ করা হয়েছে। হয়ত আরবি গ্রামারের এ সূত্র সম্পর্কে ওলিপুরী সাহেব অনভিজ্ঞ নতুবা ইচ্ছাকৃতভাবে তিনি কোরআনের সঠিক ভাবার্থকে বিকৃত করেছেন। আর কোরআনের বিকৃত অর্থ করা প্রসঙ্গে আল্লাহর হাবীব এরশাদ করেছেন-
ﻣﻦ ﻗﺎﻝ ﻓﻰ ﺍﻟﻘﺮﺍﻥ ﺑﺮﺃﻳﻪ ﻓﻠﻴﺘﺒﻮﺍﺀ ﻣﻘﻌﺪﻩ ﻣﻦ ﺍﻟﻨﺎﺭ ﻭﻓﻰ ﺭﻭﺍﻳﺔ ﻣﻦ ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻘﺮﺍﻥ ﺑﻐﻴﺮ ﻋﻠﻢ ﻓﻠﻴﺘﺒﻮﺍﺀ ﻣﻘﻌﺪﻩ ﻣﻦ ﺍﻟﻨﺎﺭ ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻯ )
অর্থাৎ যে ব্যক্তি নিজের মনগড়া মতে
কোরআনের তাফসির করবে সে যেন জাহান্নামে নিজের স্থান করে নেয়।’
পাকিস্তান নিবাসী ওহাবী দেওবন্দীপন্থী লেখক মৌলভী সরফরাজ খাঁন সবদর ‘রাহে সুন্নাত’ তাবরিদুর নাওয়াজির, এজালাতুল রাইব ইত্যাদি পুস্তক লিখেছে।
এতে কোরআন সুন্নাহর অর্থ বিকৃত করে দুনিয়ার সমস্ত মুহাদ্দিসীন,মুফাসসিরীন, আউলিয়ায়ে কেরাম, মাজহাবের ইমামগণ, সাহাবায়ে কেরাম, তরিকতের মাশায়েখানে এজাম, এক কথায় দুনিয়ার সমস্ত মুসলমানদের আকিদার পরিপন্থী ভ্রান্ত মতবাদগুলিকে মনগড়া যুক্তি দিয়ে বর্ণনা করেছে এবং উক্ত পুস্তকগুলিকে অনুসরণ ও অনুকরণ করে বর্তমানে কিছু বাঙালী লেখক আল্লাহর হাবীবের প্রকৃত শান বিরোধী বক্তব্য স্ব-স্ব পুস্তকে ও বক্তৃতায় উল্লেখ করেছে।
এতে সরলপ্রাণ ঈমানদারের ঈমান রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
তাই এ সমস্ত বিভ্রান্তিমূলক লেখনির কু-প্রভাব থেকে ঈমানদার মু’মিনদের সচেতন করতে সবিস্তার লিখতে বাধ্য হয়েছি৷
খাদিমুল ইফতাঃ
মুফতি শাইখ মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম নকশবন্দী-মুজাদ্দেদী,
সদরসিলেট৷
তারিখঃ 19/04/2019ইং

মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জুমার নামাজ পড়ার বিধান কি???

মহিলাদের জুমার নামাজ পড়ার বিধান কি???

বর্তমানে ফেতনার যুগে মহিলারা মসজিদে গিয়ে সব ধরণের নামাজ পড়া মাকরুহে তাহরিমী।
তবে যদি মার্কেটে বা বাইরে কোথাও যাওয়ার পথে ওয়াক্ত চলে যাবার আশংকায় মসজিদে নামাজ পড়া হয় তাহলে সমস্যা নেই।
তবে এক্ষেত্রে মহিলাদের আলাদা ব্যবস্থা আছে কিনা দেখতে হবে?
মোট কথা নোংরামী পরিবেশ সৃষ্টি করে মহিলাদের মসজিদে যাওয়া যাবেনা।
এমনিভাবে কারণবশতঃ বাইরে গেলেই জুমার নামাজে মহিলারাও উপস্থিত হতে পারবে।
এক্ষেত্রে যদি খুতবা শুনতে পারে তাহলে পুরুষদের সাথেই দুই রাকআত পড়লে হবে।
আর খুতবা মিস হয়ে গেলে ফরজ চার রাকাতই আদায় করতে হবে। ফতোয়ায়ে উসমানী ও আলমগীরি।
মহিলাদের জন্য ঈদগাহে বা মসজিদে গিয়ে জামাতে নামায পড়া মাকরূহ।
তবে সেখানে গিয়ে সুন্দর পরিবেশে কেউ নামায পড়লে তা আদায় হয়ে যাবে।
এতে ঈদগাহ বা মসজিদে নারীদেরকে নামাজ আদায়ের জন্য বাধ্য করা যাবেনা৷
নারীদের আসল স্থান হল তাদের বসবাসের ঘর।
নারীদের মসজিদে এসে নামায পড়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পছন্দ করতেন না।
তবে যেহেতু রাসূল সাঃ সবার নবী।
আর রাসূল সাঃ এর কাছে ওহী নাজিল হতো।
তাই নারীরা রাসূল সাঃ এর জমানায় ওহীর বানী শুনার জন্য মসজিদে আসতো।
এটি ছিল শুধুই প্রয়োজনের তাগিতে।
যে প্রয়োজন রাসূল সাঃ ইন্তেকালের দ্বারা বন্ধ হয়ে গেছে।
প্রয়োজনীয় দ্বীন শিখা প্রতিটি নর-নারীর জন্য আবশ্যক।
রাসূল সাঃ ছিলেন সেই দ্বীনের বাহক। তাই রাসূল সাঃ এর সময়ে যেহেতু সময়ে সময়ে দ্বীনের বিধান অবতীর্ণ হতো, তাই পুরুষ সাহাবীদের সাথে মহিলা সাহাবীরাও রাসূল সাঃ এর দরবারে এসে সেই দ্বীন শিখতে চেষ্টা করতেন।
সেখানে পুরুষ নারী এক সাথে হওয়ার কারনে কোন ফিতনার আশংকা ছিল না।
কিন্তু বর্তমানে সেই আশংকা ভয়াবহ রূপ পরিগ্রহ করেছে। তাই ফুক্বাহায়ে কেরাম নারীদের ঈদগাহে ও মসজিদে গিয়ে নামায পড়তে নিষেধ করেন।
এটা না জায়েজ নয়, তবে মাকরূহ।
সেই সাথে ইসলামের মূল স্পিরিটের বিপরীত পদ্ধতি। কারণ ইসলামের মূল থিউরী হল নারীরা থাকবে বাড়িকে সৌন্দর্য মন্ডিত করে। রাস্তাঘাটে অবাধে বিচরণ এটা তাদের কাজ নয়।
নিম্নের হাদীসগুলো দেখুন-
ﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﺳﻮﻳﺪ ﺍﻷﻧﺼﺎﺭﻱ ﻋﻦ ﻋﻤﺘﻪ ﺍﻣﺮﺃﺓ ﺃﺑﻲ ﺣﻤﻴﺪ ﺍﻟﺴﺎﻋﺪﻱ : ﺃﻧﻬﺎ ﺟﺎﺀﺕ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻓﻘﺎﻟﺖ : ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﺇﻧﻲ ﺃﺣﺐ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻣﻌﻚ ﻓﻘﺎﻝ : ﻗﺪ ﻋﻠﻤﺖ ﺃﻧﻚ ﺗﺤﺒﻴﻦ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻣﻌﻲ ﻭ ﺻﻼﺗﻚ ﻓﻲ ﺑﻴﺘﻚ ﺧﻴﺮ ﻣﻦ ﺻﻼﺗﻚ ﻓﻲ ﺣﺠﺮﺗﻚ ﻭ ﺻﻼﺗﻚ ﻓﻲ ﺣﺠﺮﺗﻚ ﺧﻴﺮ ﻣﻦ ﺻﻼﺗﻚ ﻓﻲ ﺩﺍﺭﻙ ﻭ ﺻﻼﺗﻚ ﻓﻲ ﺩﺍﺭﻙ ﺧﻴﺮ ﻣﻦ ﺻﻼﺗﻚ ﻓﻲ ﻣﺴﺠﺪ ﻗﻮﻣﻚ ﻭ ﺻﻼﺗﻚ ﻓﻲ ﻣﺴﺠﺪ ﻗﻮﻣﻚ ﺧﻴﺮ ﻣﻦ ﺻﻼﺗﻚ ﻓﻲ ﻣﺴﺠﺪﻱ ﻓﺄﻣﺮﺕ ﻓﺒﻨﻲ ﻟﻬﺎ ﻣﺴﺠﺪ ﻓﻲ ﺃﻗﺼﻰ ﺷﻲﺀ ﻣﻦ ﺑﻴﺘﻬﺎ ﻭ ﺃﻇﻠﻤﻪ ﻓﻜﺎﻧﺖ ﺗﺼﻠﻲ ﻓﻴﻪ ﺣﺘﻰ ﻟﻘﻴﺖ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﺰ ﻭ ﺟﻞ
আব্দুল্লাহ বিন সুয়াইদ আল আনসারী রাঃ তার চাচা থেকে বর্ণনা করেন যে, আবু হুমাইদ আস সায়িদী এর স্ত্রী রাসূল সাঃ এর কাছে এসে বললেন হে আল্লাহর রাসূল! নিশ্চয় আমি আপনার সাথে নামায পড়তে পছন্দ করি।
তখন নবীজী সাঃ বললেন-আমি জেনেছি যে, তুমি আমার সাথে নামায পড়তে পছন্দ কর।
অথচ তোমার একান্ত রুমে নামায পড়া উত্তম তোমার জন্য তোমার বসবাসের গৃহে নামায পড়ার চেয়ে।
আর তোমার বসবাসের গৃহে নামায পড়া উত্তম তোমার বাড়িতে নামায পড়ার চেয়ে।
আর তোমার বাড়িতে নামায পড়া উত্তম তোমার এলাকার মসজিদে নামায পড়ার চেয়ে।
আর তোমার এলাকার মসজিদে নামায পড়া উত্তম আমার মসজিদে [মসজিদে নববীতে] নামায পড়ার চেয়ে।
তারপর তিনি আদেশ দিলেন তার গৃহের কোণে একটি রুম বানাতে।
আর সেটিকে অন্ধকারচ্ছন্ন করে ফেললেন।
তারপর সেখানেই তিনি নামায পড়তেন মৃত্যু পর্যন্ত।
সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-১৬৮৯,
ইলাউস সুনান-৩/২৬

এ হাদীস কি প্রমাণ করছে? মহিলারা মসজিদে না গিয়ে বাড়িতে নামায পড়বে এ নির্দেশ কার?
যদি রাসূল সাঃ নারীদের মসজিদে আসাকে অপছন্দ করে থাকেন, তাহলে সেখানে আমি কে যে, তাদের মসজিদে আসা/ঈদগাহে আসা পছন্দ করবো?
প্রসঙ্গক্রমে আরেকটি হাদীস দেখিঃ
ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻋﻤﺮﻭ ﺍﻟﺸﻴﺒﺎﻧﻲ ﺃﻧﻪ ﺭﺃﻯ ﺑﻦ ﻣﺴﻌﻮﺩ ﻳﺨﺮﺝ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ ﻣﻦ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﻭﻳﻘﻮﻝ ﺃﺧﺮﺟﻦ ﺇﻟﻰ ﺑﻴﻮﺗﻜﻦ ﺧﻴﺮ ﻟﻜﻦ
হযরত আবু আমর বিন শায়বানী থেকে বর্ণিত। তিনি দেখেছেন-হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাঃ মহিলাদের মসজিদে থেকে বের করে দিতেন। আর বলতেন যে, মসজিদের চেয়ে তোমাদের জন্য ঘরই উত্তম।
মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং-৫২০১,
মুসান্নাফে ইবনুল জি’দ, হাদীস নং-৪২৯
সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-৫৪৪১
আল মুজামুল কাবীর, হাদীস নং-৯৪৭৫।

ভাল করে খেয়াল করুন। আব্দুল্লাহ বিন মাসঈদ রাঃ অপছন্দ করেন, আমরাও তা অপছন্দ করি।
যে বঞ্চনা রাসূল সাঃ এর প্রিয় সাহাবীর আমল। সেটি আমাদের গলার মালা।
যদিও সেটি সাহাবা বিদ্বেষীদের অপছন্দ হয়ে থাকে।
ﻋَﻦْ ﻋَﻤْﺮَﺓَ ﺑِﻨْﺖِ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﻦِ ﺃَﻧَّﻬَﺎ ﺃَﺧْﺒَﺮَﺗْﻪُ ﺃَﻥَّ ﻋَﺎﺋِﺸَﺔَ ﺯَﻭْﺝَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻰِّ -ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﻗَﺎﻟَﺖْ ﻟَﻮْ ﺃَﺩْﺭَﻙَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ – ﻣَﺎ ﺃَﺣْﺪَﺙَ ﺍﻟﻨِّﺴَﺎﺀُ ﻟَﻤَﻨَﻌَﻬُﻦَّ ﺍﻟْﻤَﺴْﺠِﺪَ ﻛَﻤَﺎ ﻣُﻨِﻌَﻪُ ﻧِﺴَﺎﺀُ ﺑَﻨِﻰ ﺇِﺳْﺮَﺍﺋِﻴﻞَ . ﻗَﺎﻝَ ﻳَﺤْﻴَﻰ ﻓَﻘُﻠْﺖُ ﻟِﻌَﻤْﺮَﺓَ ﺃَﻣُﻨِﻌَﻪُ ﻧِﺴَﺎﺀُ ﺑَﻨِﻰ ﺇِﺳْﺮَﺍﺋِﻴﻞَ ﻗَﺎﻟَﺖْ ﻧَﻌَﻢْ .
হযরত আমরাতা বিনতে আবদির রহমান বলেন-রাসূল সাঃ এর সহধর্মীনী হযরত আয়শা রাঃ বলেছেন-যদি রাসূলুল্লাহ সাঃ মহিলাদের এখনকার অবস্থা জানতেন, তারা কি করে?
তাহলে তাদের মসজিদে আসতে নিষেধ করতেন যেভাবে বনী ইসরাঈলের মহিলাদের নিষেধ করা হয়েছে।
ইয়াহইয়া বলেন-আমি আমরাতাকে বললাম-বনী ইসরাঈলের মহিলাদের কি মসজিদে আসতে নিষেধ করা হয়েছে?
 তিনি বললেন-হ্যাঁ।
সহিহ মুসলিম -১/১৮৩, হাদীস নং-১০২৭
সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৫৬৯
মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২৫৯৮২
মুসনাদুর রাবী, হাদীস নং-২৫৯
সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-৫৪০

এবার ভেবে দেখুন-রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর তিরোধানের পর মুসলিম নারীরা এমন কি ধরণের পোশাক পড়তেন?
 যার কারনে আম্মাজান হযরত আয়শা রাঃ একথা বলেছেন?
আর বর্তমান নারীদের পোশাকের দৃশ্য দেখলে আম্মাজান আয়শা রাঃ কী বলতেন?
উপরোক্ত হাদীসসমূহের আলোকে একথা পরিস্কার যে, মহিলাদের ঈদগাহে ও মসজিদে আসা মাকরূহ।
বর্তমানে আহলে হাদীছ ওরফে আহলে খবিছরা ইহুদী- খ্রীষ্ঠানের দেওয়া অর্থের বিনিময়ে সুন্দর- সুন্দর মসজিদ নির্মাণ করে তা রুপুসি নারী উপভোগের কেন্দ্রস্থল বানিয়ে ফেলছে৷
আমরা সকল সুন্নী মুসলিম জনতা এদের ঐ অপকর্মের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে৷
ওদের নির্মিত তাকওয়া মসজিদ নামের অন্তরালে রয়েছে তাকানা নারী উপভোগ আশ্রম৷
আমরা এ ধরণের মানবীয় শয়তানদের হাত হতে বাঁচার জন্য মহান আল্লাহ পাকের নিকট পানাহ চাই৷আমিন ছুম্মা আমিন!
ﻭﺍﻟﻠﻪ ﺍﻋﻠﻢ ﺑﺎﻟﺼﻮﺍﺏ
খাদিমুল ইফতাঃ
{মুফতি শাইখ মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম
 নকশবন্দী-মুজাদ্দেদী,সদরসিলেট}
তারিখঃ19/04/2019ইং

শনিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০১৯

স্বামীকে মারধরের পর স্ত্রীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ

টাঙ্গাইলে স্বামীকে মারধর করে এক গৃহবধূকে তুলে নিয়ে কয়েক দফায় ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। টাঙ্গাইল নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গত শুক্রবার রাতে ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় ওই নারীর স্বামী গতকাল শনিবার টাঙ্গাইল সদর থানায় মামলা করেছেন। পুলিশ জড়িত অভিযোগে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন টাঙ্গাইল সদরের কোদালিয়া এলাকার ইউসুফ রানা (২৫), মো. রবিন (২৫), তানজীরুল ইসলাম (২২), আটতলা মোড় এলাকার মো. মফিজ (২১), ইব্রাহিম (২০) ও দেওলা গ্রামের জাহিদুল ইসলাম (২১)। এ ঘটনায় হাসান সিকদার (২২) ও উজ্জ্বল (২৫) নামের দুজনকে খুঁজছে পুলিশ।
পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ধর্ষণের শিকার ওই গৃহবধূকে নিয়ে তাঁর স্বামী শ্বশুরবাড়ি থেকে শুক্রবার রাতে কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে টাঙ্গাইল নতুন বাসস্ট্যান্ডে গাড়ির অপেক্ষায় ছিলেন তাঁরা। এ সময় গ্রেপ্তারকৃত ছয়জনসহ আটজন গিয়ে ওই দম্পতিকে ভয়ভীতি দেখাতে শুরু করেন। দুর্বৃত্তরা প্রথমে গৃহবধূর স্বামীকে পাম্পের পেছনে নিয়ে মারধর করে তাঁর কাছে থাকা মুঠোফোন ও টাকা ছিনিয়ে নেয়। স্বামীকে মারতে দেখে স্ত্রী এগিয়ে গেলে তাঁকে জোরপূর্বক পাম্পের পেছনে নির্জন জায়গায় নিয়ে ইউসুফ ধর্ষণ করেন। সেখান থেকে ভয় দেখিয়ে মোটরসাইকেলে করে গৃহবধূকে শহরের ডিসি লেকের পাশে নিয়ে রবিন ও ইউসুফ আবার ধর্ষণ করেন। এ সময় গৃহবধূর স্বামীকে রবিন ও ইউসুফের অন্য সহযোগীরা পাম্পের কাছেই আটকে রাখেন। পরে গৃহবধূর স্বামীকে পাম্প থেকে জোরপূর্বক মোটরসাইকেলে উঠিয়ে নতুন বাসস্ট্যান্ডের অদূরে দেওলা নার্সারির সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে যায় দুর্বৃত্তরা। সেখান থেকে ওই গৃহবধূকে সাবালিয়া এলাকার চোরজানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে নিয়ে আবারও ধর্ষণ করা হয়।

এদিকে স্ত্রীকে খুঁজে না পেয়ে গৃহবধূর স্বামী দেওলা নার্সারির পাশে টাঙ্গাইলের ২৫০ শয্যার হাসপাতাল গেট এলাকায় টহলরত পুলিশকে বিষয়টি জানান। পুলিশ অভিযান চালিয়ে ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বারান্দা থেকে গৃহবধূকে উদ্ধার ও রবিনকে গ্রেপ্তার করে। পরে রবিনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে বাকি পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

টাঙ্গাইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সায়েদুর রহমান বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁদের প্রত্যেককে ১০ দিন করে রিমান্ডের আবেদন করে গতকাল টাঙ্গাইলের আদালতে পাঠানো হয়েছে। টাঙ্গাইল ২৫০ শয্যার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গৃহবধূর ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্য দুজনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
Prothom Alo

সোমবার, ৮ এপ্রিল, ২০১৯

রক্তশূন্যতা কীভাবে বুঝবেন, চিকিৎসা কী?


রক্তশূন্যতা কীভাবে বুঝবেন

রক্তের প্রধান দুটি উপাদান হলো রক্তকোষ ও রক্তরস।
 লোহিত রক্তকণিকায় থাকে হিমোগ্লোবিন নামের রঞ্জক পদার্থ, যা দেহের বিভিন্ন কোষে অক্সিজেন সরবরাহ করে। তাই হিমোগ্লোবিন কমে গেলে সারা শরীরে দেখা দেয় বিরূপ প্রতিক্রিয়া। 
আর রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার নাম হলো অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা।

কেন হয় অ্যানিমিয়া?

নানা কারণে রক্তশূন্যতা হতে পারে। 
রক্তে হিমোগ্লোবিন তৈরির কাঁচামাল আয়রন কমে গেলে আয়রন ঘাটতিজনিত রক্তশূন্যতা হতে পারে। এ ছাড়া ভিটামিন বি ও ফলিক অ্যাসিডের ঘাটতি, দীর্ঘমেয়াদি রোগ (যেমন কিডনি বিকল), দীর্ঘমেয়াদি সংক্রমণ (যেমন যক্ষ্মা), ক্যানসার, থাইরয়েডের সমস্যা, অস্থিমজ্জায় সমস্যা, সময়ের আগে রক্তকণিকা ভেঙে যাওয়া, রক্তক্ষরণ ইত্যাদি হতে পারে রক্তশূন্যতার কারণ। 
তবে সব ধরনের কারণের মধ্যে আয়রন ঘাটতিজনিত রক্তশূন্যতা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। পুরুষদের তুলনায় নারীদের মধ্যে এর হার বেশি। 
এতে বিরূপ প্রভাব পড়ে শিশুর ওপর, মাতৃমৃত্যুর হারও যায় বেড়ে।

কেন আয়রনের ঘাটতি?

প্রধান কারণ অপুষ্টি। 
খাদ্যে পর্যাপ্ত আয়রন না থাকলে বিশেষ করে অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের আয়রনের ঘাটতি হয়। 
আরেকটি কারণ নারীদের অতিরিক্ত মাসিকে রক্তক্ষরণ। 
অন্য কোনো কারণে দীর্ঘমেয়াদি রক্তক্ষরণ থাকতে পারে, যেমন পেপটিক আলসার, কৃমি, পাইলস, অন্ত্রে বা পাকস্থলীতে ক্যানসার, দীর্ঘদিন ব্যথানাশক সেবন ইত্যাদি।

কীভাবে বুঝবেন?

চোখ-মুখ ফ্যাকাশে মনে হওয়া, দুর্বলতা, ক্লান্তি, অবসাদ, মাথা ঘোরা, মাথাব্যথা, চোখে ঝাপসা দেখা, মুখে-ঠোঁটে ঘা ইত্যাদি রক্তশূন্যতার সাধারণ লক্ষণ।
 রক্তশূন্যতার মাত্রা তীব্র হলে শ্বাসকষ্ট, বুকে চাপ লাগা এমনকি হার্ট ফেইলিউরও হতে পারে। রক্তশূন্যতা সন্দেহ করা হলে রক্তের একটি কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট করা জরুরি। 
এটি দেখে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ও লোহিত কণিকার পরিমাণ, আকার, রঞ্জক পদার্থের ঘনত্ব ও মান সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক আরবিসি ইনডেক্স দেখে রক্তশূন্যতার কারণ অনুমান করতে পারেন। তবে প্রকৃত কারণ শনাক্ত করার জন্য পরে অন্যান্য পরীক্ষারও প্রয়োজন হয়।

চিকিৎসা কী?

রক্তশূন্যতা হলে আয়রন বড়ি কিনে খেলেই হলো—এ ধারণা ঠিক নয়। 
রক্তশূন্যতার চিকিৎসার মূল বিষয় কারণটি খুঁজে বের করা। 
যেমন পেপটিক আলসার, পাইলস বা ক্যানসার শনাক্ত করা বা কেন মাসিকে বেশি রক্তক্ষরণ হচ্ছে, তা খোঁজা। 
রোগীকে আয়রনের ঘাটতি পূরণে মুখে বড়ি দেওয়া হবে, না শিরাপথে আয়রন দেওয়া হবে, তা রোগীর অবস্থা বিবেচনা করে চিকিৎসক সিদ্ধান্ত নেন।

প্রশ্ন-উত্তর

প্রশ্ন: মাসিক অনিয়মিত, শুরু হতেও বিলম্ব হয়। 
আবার একবার শুরু হলে একটানা এক-দুই মাস পর্যন্ত চলতে থাকে। সমাধান দিলে উপকৃত হব।


উত্তর: নানা কারণে মাসিকের সমস্যা হতে পারে। থাইরয়েড ও অন্যান্য হরমোনের সমস্যা, জরায়ু বা ডিম্বাশয়ে কোনো টিউমার, ফাইব্রয়েড বা সিস্ট থাকতে পারে। আপনি একজন গাইনি বিশেষজ্ঞর পরামর্শে হরমোন পরীক্ষা ও আলট্রাসনোগ্রাম করে নিশ্চিত হয়ে নিন।

ডা. শামিমা ইয়াসমিন, স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ

© স্বত্ব প্রথম আলো

সোহেলকে হারিয়ে তাঁর মা হালিমা আক্তার আহাজারি

ফায়ারম্যান সোহেল রানা ছিলেন পুরো পরিবারের ভরসা।
তাঁর মৃত্যুতে পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
একই সঙ্গে পরিবার পড়েছে অনিশ্চয়তায়।

বনানীর এফ আর টাওয়ারে আগুন নেভাতে গিয়ে গুরুতর আহত হন ফায়ারম্যান সোহেল।
 সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাংলাদেশ সময় রোববার দিবাগত রাতে সোহেল মারা যান।

সোহেলের বাড়ি কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার চৌগাংগা ইউনিয়নের কেরালা গ্রামে।
আজ সোমবার সকাল ছয়টার দিকে পরিবারের সদস্যরা সোহেলের মৃত্যুর খবর জানতে পারেন। সোহেলের মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকেই পরিবারে চলছে মাতম।

সকাল ১০টার দিকে মুঠোফোনে কথা হয় সোহেলের চাচাতো ভাই শহিদুল ইসলামের সঙ্গে।
 শহিদুল যখন ফোনে কথা বলছিলেন, তখন এক নারীর আহাজারি করে কান্না করার শব্দ শোনা যাচ্ছিল।
তিনি বলছিলেন, ‘আমার সোহেল কই গেলি? তোরে কই পামু? আমার কী হইবো রে? '

শহিদুল জানালেন, সোহেলকে হারিয়ে তাঁর মা হালিমা আক্তার আহাজারি করছেন।

সোহেলের বাবা নুরুল ইসলাম (৬৫) পেশায় কৃষক।
বয়সের ভারে তিনি এখন আর কৃষিকাজ করতে পারেন না।

নুরুলের চার ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে সোহেল দ্বিতীয়।
মেয়ে বড়। তাঁর বিয়ে হয়ে গেছে।

উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর ২০১৪ সালের শেষের দিকে ফায়ার সার্ভিসে যোগ দেন সোহেল।
তাঁর রোজগারেই চলে আসছিল পুরো পরিবার।
ছোট তিন ভাই রুবেল হোসেন, উজ্জ্বল হোসেন ও দেলোয়ার হোসেনের পড়া-লেখার খরচও জোগাতেন সোহেল।
তাঁর মৃত্যুতে পুরো পরিবার অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে বলে জানান শহিদুল।

ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সিঙ্গাপুরে সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে সোহেলের মরদেহ দেশে ফেরত আনা হবে।

ঢাকার কুর্মিটোলা ফায়ার স্টেশনে ফায়ারম্যান হিসেবে কর্মরত ছিলেন সোহেল।
গত ২৮ মার্চ এফ আর টাওয়ারে ভয়াবহ আগুন লাগে।
ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকাজে যোগ দেন সোহেল।

ফায়ার সার্ভিসের উঁচু ল্যাডারে (মই) উঠে এফ আর টাওয়ারের আগুন নেভানো ও আটকে পড়া ব্যক্তিদের উদ্ধারকাজ করছিলেন সোহেল।
একপর্যায়ে তাঁর শরীরে লাগানো নিরাপত্তা হুকটি মইয়ের সঙ্গে আটকে যায়।
তিনি মই থেকে পিছলে পড়ে বিপজ্জনকভাবে ঝুলছিলেন।
সেখানে আঘাতে তাঁর একটি পা ভেঙে যায়।
পরে তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
দেশে তিনি সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন। সোহেলের অবস্থা অপরিবর্তিত থাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য গত শুক্রবার তাঁকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়েছিল।

এফ আর টাওয়ারে আগুনের ঘটনায় সোহেলসহ ২৭ জনের মৃত্যু হলো।
এ ঘটনায় অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হন।
(প্রথম আলো)

Popular Posts