শিশুর স্বাস্থ্য সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করে মা-বাবার উপর।
কিন্তু শিশুকে ভালভাবে খাওয়ানো বেশিরভাগ মায়ের কাছে একটা সমস্যা।
কারন খিদে পেলে শিশুরা বলতে পারে না। খাওয়াটা তার জন্য যথেষ্ট হয়েছে কিনা, তার তৃপ্তি হল কিনা সেটা শিশু সরাসরি বোঝাতে পারেনা।
তাই অনেক সময় বিশেষ করে নতুন মায়েদের জন্য শিশুকে ভালভাবে খাওয়ানো একটা সমস্যা। আমাদের দেশের মায়েদের এ বিষয়ে শিক্ষা দেবার কোন বিধিবদ্ধ নিয়ম নেই। শুধু মা-দাদিদের অভিজ্ঞতালব্ধ পরামর্শ একমাত্র সম্বল।
অথচ তাদের পরামর্শ অনেক ক্ষেত্রেই কুসংস্কার ও অবৈজ্ঞানিক ধ্যানধারণায় পরিপূর্ণ।
সেইজন্য অনেক সময় এসব পরামর্শে উপকারের চেয়ে ক্ষতিই হয় বেশি।
উল্লেখ্য যে নানাবিধ অশিক্ষা, কুশিক্ষা ও কুসংস্কার আমদের দেশে শিশু মৃত্যুর উচ্চহার ও শিশুদের ব্যাপক অপুষ্টির প্রধানতম কারন।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে অনেক শিশুকে মায়ের প্রথম দুধ কোলস্ট্রাম দেয়া হয় না।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে অনেক শিশুকে মায়ের প্রথম দুধ কোলস্ট্রাম দেয়া হয় না।
এটা একটা কুসংস্কার ও অজ্ঞতা।
অথচ মায়ের প্রথম দুধ (যাকে স্থানীয় ভাষায় বলা হয় শালদুধ) শিশুদের জন্য অত্যান্ত প্রয়োজনীয়। এতে রয়েছে নানাধরনের মারাত্মক রোগ প্রতিরোধক উপাদান।
জন্ম থেকে ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শিশুর জন্য মায়ের দুধই যথেষ্ট।
এ বয়সে শিশুর যে পরিমাণ পুষ্টির প্রয়োজন মায়ের দুধে তা সব রয়েছে।
শিশুর বয়স ছয় মাসের বেশি হলে তার পুষ্টি চাহিদা বেড়ে যায়।
তখন শুধু মায়ের দুধে পুষ্টি চাহিদা মেটেনা। তাই মায়ের দুধের সাথে পরিপূরক বা আলগা খাবার দেয়ার প্রয়োজন হয়।
শিশুকে পরিপূরক খাবার ভালভাবে খাওয়াতে হলে, শিশুকে বোঝা প্রয়োজন।
শিশুর মনমানসিকতা, দৈহিক ক্ষমতা, পাকস্থলীর আকার, শিশুর পছন্দ-অপছন্দ ইত্যাদি সম্বন্ধে জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কারন এসবের সাথে শিশুর খাওয়াদাওয়া সম্পর্ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
যেকোনো শিশুকে খাওয়ানের পূর্বে আদর করে উৎফুল্ল করে তুলতে হবে।
খাবারটা শিশুর সামনে তৈরি করলে অনেক সময় খাবার প্রতি শিশুর আগ্রহ বাড়ে।
খাবার তৈরি হতে হতে থাকলে শিশু মানসিকভাবে খাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে ও ধীরে ধীরে খাওয়ার জন্য এগিয়ে আসে।
খাওয়ার সময় শিশুর সাথে অনবরত কথা বলতে হবে।
বিভিন্ন ধরনের আদর সূচক কথা শিশুকে খাওয়ার দিকে মনযোগী করে।
শিশুকে খাওয়ানোর সময় মায়েদের খেয়াল করতে হবে শিশুর পাকস্থলীর আকারের প্রতি, যেন জোর করে শিশুকে অতিরিক্ত না খাওয়ানো হয়।
অতিরিক্ত খাওয়ালে পুরো খাবারটাই বমি করে ফেলে দিবে। তাই পরিমাণ ঠিক রেখে শিশুকে বারবার খাওয়াতে হবে।
এছাড়া নিম্নে পরিপূরক খাবারের কয়েকটা গুনাগুণ আলোচনা করা হল-
১. শিশুর পরিপূরক খাবার হওয়া উচিত সুষম। অর্থাৎ শিশুর চাহিদা অনুসারে আমিষ, খাদ্যশক্তি, ভিটামিন, মিনারেল যথেষ্ট পরিমাণে খাওয়া উচিত।
২. পরিপূরক খাবার হতে হবে পুষ্টি ঘন। কারন শিশুর পাকস্থলী থাকে ছোট। তাই স্বল্প পরিমাণে খাবার যেন শিশুর পুষ্টি চাহিদা মেটে সেদিকে নজর রাখতে হবে।
৩. শিশুর পরিপূরক খাবার হওয়া উচিত নরম। শক্ত ও শুকনো খাবার শিশুরা খেতে পারে না।
৪. শিশুর খাবার হওয়া উচিত যেকোনো ধরনের মসলা-বিহীন এবং একটু মিষ্টিস্বাদযুক্ত।
৫. সবসময় শিশুর পরিপূরক খাওয়া উচিত তাজা। একবেলার রান্না খাবার অন্য বেলা খাওয়ানো উচিত না। বাসি খাবার খেলে শিশুর পেটের অসুখ হতে পারে।
“১৯৭৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট জাতিসংঘে্র শিশু তহবিলের সহযোগিতায় বাংলাদেশের বিভিন্ন বয়সের শিশুদের জন্য কয়েকটি পরিপূরক খাবারের ফরমুলা তৈরি করেন।
নিম্নে সেসব খাদ্যের বর্ণনা দেয়া হলঃ
১। ৬ থেকে ১২ মাস বয়সী শিশুদেরকে মায়ের দুধের সাথে পরিপূরক খাবার হিসাবে খাওয়াতে হবেঃ
নরম ভাতঃ ৩/৪ ছটাক চাউলের
রুটি দুধে ভিজিয়েঃ টেবিল চামচে প্রায় ২১/২ চামচ
ভাত নরম করে খিচুড়িঃ ২ চায়ের চামচ
আলু চটকিয়েঃ ছোট একটা
শাকপাতা ও অন্যান্য সবজি ভাতের সাথেঃ ১ ছটাক
কলা/ছোট একটা ডিম(সামর্থ্য থাকলে): ১ টা
২। ১-৩ বছর বয়সের বাচ্চাদের খাদ্য তালিকাঃ
ভাত, পিঠা, মুড়ি, চিড়াঃ ১৩/৪ ছটাক চাউলের
রুটি, বিস্কিটঃ ১ ছটাক আটার
ডালঃ (মাঝে মাঝে ডাল ও চালের খিচুড়ি, হাতের ১ থেকে ১১/২ মুষ্টি) নিরামিষ বা ভাজি (সাক,আলু, মিষ্টি কুমড়া, গাজর, তেল ইত্যাদি) ১ ছটাক শাঁক, ১/২ ছটাক সবজি, ১ ছটাক আলু, গাজর, ২ চা চামচ তেল
মাছ মাংসের তরকারিঃ ১/৪ ছটাক সবজি, ৩/৪ ছটাক মুলা, ১/২ ছটাক মাছ বা মাংস,
২ চা চামচ দুধ-ভাত, পায়েসঃ ২ ছটাক
দুধ, দুধ-রুটি, সুজি রান্নাঃ ১/২ ছটাক চিনি বা গুড়
যে কোন ফলঃ একটা
৩। ৪-৬ বছর বয়সের বাচ্চাদের খাদ্য তালিকাঃ
ভাত, পিঠা, সুজি, মুড়ি, চিড়াঃ ২১/২ ছটাক চাউলের রুটি,
বিস্কিট, সুজিঃ ১ ছটাক গমের
ডালঃ ৩/৪ ছটাক (মাঝে মাঝে ডাল ও চালের খিচুড়ি)
নিরামিষ বা ভাজিঃ ১ ছটাক শাঁক, ৩/৪ ছটাক সবজি, ১ ছটাক আলু, গাজর;২ চা চামচ তেল
মাছ মাংসের তরকারিঃ ১/২ ছটাক সবজি, ১ ছটাক আলু, ১/২ ছটাক মাছ বা মাংস,
২ চা চামচ দুধ-ভাত, পায়েসঃ ২ ছটাক
দুধ, দুধ-রুটি, সুজি রান্নাঃ ১/২ ছটাক চিনি বা গুড়
যে কোন ফলঃ একটা
৪। ৭-৯ বছর বয়সের ছেলেমেয়েদের দৈনিক খাদ্য তালিকাঃ-
৫। ১০-১৮ বছর বয়সের ছেলেমেয়েদের দৈনিক খাদ্য তালিকাঃ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন