Recent post

শনিবার, ২৯ এপ্রিল, ২০১৭

যেভাবে জঙ্গিবাদে জড়ান স্বামী-স্ত্রী

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড থেকে গ্রেপ্তার করা দম্পতি জহুরুল হক ওরফে জসীম ও রাজিয়া সুলতানা ওরফে আরজিনাকে জঙ্গিবাদে জড়ান সোহেল রানা।
তাঁর পরামর্শেই বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশারী গ্রামের বাড়ি ছাড়েন তাঁরা। 
সোহেলের নির্দেশে তাঁরা চলতেন।
 তাঁদের ‘আত্মঘাতী’ হতেও উদ্বুদ্ধ করেছিলেন তিনি।
 আর থাকা-খাওয়ার খরচ জোগাতেন আরেক জঙ্গি হৃদয়। 
গতকাল শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রাম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে তাঁরা এই তথ্য দেন বলে পুলিশ জানায়।
সোহেলের আসল নাম লোকমান হোসেন। গত ৩০ মার্চ মৌলভীবাজারের নাসিরপুরে পুলিশের জঙ্গিবিরোধী অভিযানে তিনি নিহত হন। এই অভিযানে মারা যায় তাঁর স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের সাত সদস্য।
 আর ১৬ মার্চ সীতাকুণ্ডে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহত হন হৃদয় (সাংগঠনিক নাম)।
তাঁর পরিচয় এখনো শনাক্ত করা যায়নি। সোহেল ও হৃদয়ের আসল নাম কী তা জঙ্গি দম্পতি জানেন না।
গত ১৫ মার্চ সীতাকুণ্ড পৌরসভার আমিরাবাদ এলাকার ‘সাধন কুটির’ নামের বাড়ির একটি ফ্ল্যাটে অভিযান চালায় পুলিশ।
 সেখান থেকে বোমা, অস্ত্র, বোমা তৈরির সরঞ্জামসহ গ্রেপ্তার করা হয় জহুরুল হক ও রাজিয়া সুলতানাকে।
 তাঁদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পৌরসভার এক কিলোমিটার দূরে প্রেমতলা এলাকায় ‘ছায়ানীড়’ নামে একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে বোমা ও বিস্ফোরক উদ্ধার করে পুলিশ।
অভিযানে আত্মঘাতী হামলায় মারা যান এক নারীসহ চার জঙ্গি (এঁদের একজন হৃদয়) এবং একটি শিশু। 
নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে জহুরুলের বোন জোবায়রা আক্তার ও তাঁর স্বামী কামাল হোসেন রয়েছেন।
চট্টগ্রাম জেলা কোর্ট পরিদর্শক স্বপন কুমার মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, কীভাবে, কার প্ররোচনায় এই দম্পতি জঙ্গিবাদে জড়িয়েছেন, সে বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন জবানবন্দিতে।
পুলিশ জানায়, গতকাল বিকেল সাড়ে চারটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত জঙ্গি দম্পতি চট্টগ্রামের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মাহমুদুল হাসানের আদালতে জবানবন্দি দেন। 
পরে রাত আটটার দিকে তাঁদের চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যায় পুলিশ। 
গ্রেপ্তারের পর মোট ৪৭ দিন তাঁরা রিমান্ডে ছিলেন। গতকালই তাঁরা প্রথমবারের মতো কারাগারে গেলেন।
আদালত সূত্র জানায়, জবানবন্দিতে জহুরুল বলেন, সোহেল রানা নামের দিনাজপুর থেকে আসা এক জঙ্গি দুই বছর আগে বান্দরবানের বাইশারীতে জায়গা কেনেন। 
বাইশারী বাজারে মো. হাছানের (গত ৭ মার্চ কুমিল্লার চান্দিনায় পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা ছুড়ে মারার সময় গ্রেপ্তার) দোকানে বসতেন সোহেল।
 সেখানেই সোহেলের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। 
বাইশারীতে পানের বরজ ও কৃষিকাজ করতেন তিনি। 
সোহেলই এক বছর আগে তাঁকে সস্ত্রীক বাইশারী থেকে চট্টগ্রামের পটিয়ায় নিয়ে আসেন। 
কিছুদিন পর ঠিকানা পাল্টানোর জন্য নগরের মইজ্জারটেকে বাসা ভাড়া করে দেন। 
এরপর তাঁরা গত ফেব্রুয়ারিতে সীতাকুণ্ড পৌরসভার সাধন কুটির নামের একটি বাড়িতে ভাড়াটে হিসেবে ওঠেন। ওই বাড়িতে সোহেল নিয়মিত আসতেন। 
খরচের টাকা দিতেন হৃদয়। যখন যে নির্দেশনা আসত, তা মেনে কাজ করতেন তিনি। কোনো বিষয়ে প্রশ্ন করা নিষেধ ছিল।
সাধন কুটিরের বাসা থেকে বোমা, বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনায় করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সীতাকুণ্ড থানার পরিদর্শক (অভিযান) মাহবুব মিল্কী গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, জবানবন্দিতে জঙ্গি দম্পতি অনেকের নাম বলেছেন। 
তদন্তের স্বার্থে নামগুলো প্রকাশ করা যাচ্ছে না। তবে তাঁদের নেতা সোহেল রানা গত মার্চ মাসে নাসিরপুরে জঙ্গি অভিযানে নিহত হয়েছেন।
এদিকে ছায়ানীড়ের বাসা থেকে বোমা, বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনায় করা দুটি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইফতেখার হাসান। 
গতকাল রাতে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, জবানবন্দিতে দেওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

কোন মন্তব্য নেই:

Popular Posts