Recent post

রবিবার, ২ এপ্রিল, ২০১৭

কণ্ঠ পরিচর্যা করুন এবং সুস্থ রাখুন সহজ উপায়ে

আমার কণ্ঠ তারে ডাকে, তখন হৃদয় কোথায় থাকে। বর্তমান সময় যোগাযোগের যুগ, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার যুগ, নিজেকে প্রাণবন্তভাবে উপস্থাপনের যুগ। নিজেকে উপস্থানের প্রধান মাধ্যম সুস্থ-সুন্দর কণ্ঠে নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ। গান, আবৃত্তি, উপস্থাপনা, বক্তব্য, ইত্যাদির গ্রহণযোগ্যতাও মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে দেয়ার জন্য কণ্ঠ প্রধান নিয়ামক।

কর্কশ কণ্ঠের কেউ ভালো কথা বললেও আমাদের শুনতে ভালো লাগে না। শুধু এ কণ্ঠের অসহযোগিতার কারণে অনেকের আগ্রহ ও চেষ্টা থাকা সত্ত্বেও সংস্কৃতির বিভিন্ন শাখায় আমরা সবাই সাফল্য পাইনা। কণ্ঠ দিয়ে মোহাবিষ্ট করুন মানুষকে, জয় করুন আপনার স্বপ্নের বিশ্বকে।

কণ্ঠ মানুষের নিত্যব্যবহার্য এবং অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। মানুষের প্রতিটি অঙ্গের অপরিহার্যতা রয়েছে। তার মধ্যে কন্ঠের বা কণ্ঠনালীর প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। যে কথা বলতে পারে না, প্রতি পদে পদে তাকে কত অসুবিধায় পড়তে হয়, তা শুধুমাত্র সেই বুঝতে পারে। আমরা যখন কণ্ঠের অসুস্থতায় ভুগি, তখন কিঞ্চিত উপলব্ধি করতে পারি মাত্র।

অথচ আমরা কণ্ঠ বা কণ্ঠস্বরের যত্ন নিয়ে তেমন সচেতন নই।সামান্য সচেতনতাই আমরা আমাদের কণ্ঠনালীর বা কণ্ঠস্বরের পরিচর্যা করতে পারি এবং সুস্থ রাখতে পারি নিত্যব্যবহার্য এ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটিকে। আসুন, এ বিষয়ে আমরা একটু জেনে নিই এবং সচেতন হই।

কণ্ঠের সমস্যার কারণসমূহ:
কণ্ঠের সাধারণ সমস্যাকে আমরা সমস্যা মনে করি না। পরবর্তীতে তা অনেক সময় জটিল অসুখে পরিণত হয়। কণ্ঠনালীর সমস্যার জন্য উপসর্গগুলো হলো- গলা ব্যথা, কণ্ঠস্বর পরিবর্তন, কাশি, কিছু গিলতে অসুবিধা, শ্বাসকষ্ঠ ইত্যাদি। যদি ঘন ঘন কণ্ঠস্বর পরিবর্তন হয় বা দীর্ঘ দিন বা দুই সপ্তাহে ভাল না হয়, তবে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া একান্ত জরুরী। বিভিন্ন কারণে কণ্ঠস্বরের পরিবর্তন হতে পারে।

কণ্ঠের প্রদাহ:
কণ্ঠস্বর পরিবর্তনের প্রধান কারণ হলো কণ্ঠনালীর ভাইরাস জনিত তীব্র প্রদাহ। শ্বাসনালীর ভাইরাস প্রদাহে কণ্ঠনালী ফুলে যায় যাতে কণ্ঠনালীর কম্পনের সমস্যা সৃষ্টি করে, ফলে স্বর পরিবর্তন হয়। আবহাওয়া পরিবর্তন, পরিবেশ দূষণের কারণেও কণ্ঠনালীর প্রদাহ হতে পারে। প্রচুর পরিমাণ পানি পান করলে এবং কণ্ঠনালীকে বিশ্রাম দিলে এই সমস্যাটি সাধারণত দূর হয়ে যায়।

কণ্ঠের অতিব্যবহার:
আমরা যখন কথা বলি, কণ্ঠনালীর সাথে আশে পাশে অবস্থিত মাংসপেশীরও সাহায্য লাগে। কণ্ঠনালীকে সঠিক ও নিয়মের বাইরে ব্যবহার করা, অতি উচ্চস্বরে অতিরিক্ত কথা বলা, দীর্ঘ মেয়াদী বা পরিবর্তিত স্বরে কথা বললে কণ্ঠনালীর প্রদাহ দেখা দিতে পারে। গলা ও শব্দযন্ত্রের মাংসপেশীর সংকোচন এবং কথা বলার সময় ঠিক ভাবে শ্বাস না নিলে শ্বাসযন্ত্রের অবসাদ হয়, কথা বলতে কষ্ট হয়। ফলশ্রুতিতে কণ্ঠস্বর পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে এবং ভোকাল কর্ডে সমস্যা দেখা দিতে পারে এমনকি রক্ত ক্ষরণও হতে পারে।

কণ্ঠ অপব্যবহার
আমরা কণ্ঠের সমস্যাকে পাত্তা দিই না। অযথাই কণ্ঠের অপব্যবহার করি। অধিক জন সমাবেশে, কোলাহল পূর্ণ পরিবেশে জোরে কথা বলা। অতিরিক্ত এবং দীর্ঘ সময় ফোনে কথা বলা। ঘাড় ও কানের মাঝে ফোন চেপে ধরে কথা বলায় ঘাড় ও শব্দযন্ত্রের মাংসপেশীতে টান লাগে। উচ্চস্বরে বা চিত্কার করে কথা বলা।

জনসমাবেশে বা বড় লেকচার গ্যালারীতে মাইক ছাড়াই জোরে কথা বলা। আমাদের দেশে গলার ক্যান্সার বা কণ্ঠনালীর ক্যান্সারের প্রকোপ অনেক বেশি। গলার স্বর পরিবর্তনের পনের দিনের মধ্যে ভালো না হলে, চিকিত্সকের পরামর্শ নেয়া দরকার।

কিভাবে কণ্ঠকে পরিচর্য করবেন এবং সুস্থ রাখবেন:

সহজলভ্য পানি কণ্ঠ পরিচর্যায় অন্যতম নিয়ামক শক্তি। পানি কণ্ঠ বা ভোকাল কর্ডকে আদ্র রাখে আর আদ্র কণ্ঠ শুষ্ক কণ্ঠ থেকে বেশি ব্যবহার করা যায়। প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে পানি পান করবেন, কমপক্ষে দুই থেকে তিন লিটার পানি পান করতে হবে।

খেলা শুরুর পূর্বে যেমন প্রস্তুতি দরকার তেমন বক্তৃতার পূর্বে ভোকাল কর্ডের একইভাবে হালকা ব্যায়াম করা উচিত। প্রস্তুতি ছাড়া কোন কাজে নামা উচিত নয়। প্র্যাক্টিস করলে ভোকাল কর্ডের কণ্ঠের মান ও উপস্থাপনা সুন্দর হয়।

কথা বলা বা গান গাওয়ার মাঝখানে দীর্গ শ্বাস- প্রশ্বাস নিলে কথা বলা, গান গাওয়াকে সুন্দর করে এবং ভোকাল কর্ডের অবসাদ হয়না।

বক্তব্য বা উপস্থপনা বা বড় সমাবেশে বক্তৃতা দেয়ার সময় মাইক্রোফোন ব্যবহার করা উত্তম।

দিনের একটা নির্দিষ্ট সময়ে কণ্ঠনালীকে বিশ্রাম দেয়া উচিত। যা কণ্ঠনালীর অবসাদ দূর করে এবং শক্তি ফিরিয়ে দেয়।

নিজের কণ্ঠকে শুনুন এবং যদি কোন রকমের উপসর্গ থাকে বা পরিবর্তন লক্ষ্য করেন তাহলে যথাযথ যত্ন নিন। এমন কিছু করবেন না যা কণ্ঠনালীর ক্ষতি হয়।

ধূমপান, এলকোহল পান, অতিরিক্ত গরম বা ঠাণ্ডা পানীয় পান করা স্বাস্থ্যের জন্য যেমন ক্ষতিকর তেমনি কণ্ঠের জন্যও পীড়াদায়ক। ধূমপান কণ্ঠনালীর ক্যান্সারের অন্যতম কারণ। এছাড়াও ধূমপান কণ্ঠনালীর প্রদাহ করে।

জোরে জোরে বা পরিবর্তিত স্বরে কথা বলা উচিত নয়। জোরে কথা বললে বা কণ্ঠনালীর অপব্যবহার করলে কণ্ঠনালীতে সুক্ষ্ম আঘাত হতে পারে।

দূর হতে কাউকে ডাকতে হলে হাত তালি বা শীষ বা হাত নেড়ে অথবা লাইটের মাধ্যমে দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায়।

বড় খেলা উপভোগ করার সময় পছন্দের দলকে সাপোর্ট করার জন্য জোরে চিত্কার না করে পতাকা উড়ান বা ব্যানার লিখেন।
মাথা উচুঁ করে ঘুমাবেন, টাইট কাপড় পরে ঘুমানো যাবে না, হালকা ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান করে ঘুমাবেন।

খাবারের সাথে সাথে ঘুমানো বা ক্যাফেইন যুক্ত খাবার গ্রহণ করা বাদ দিতে হবে।

গাড়ীতে ভ্রমণ বা ট্রেনে যাতায়তের সময় কণ্ঠনালীকে বিশ্রাম দিন।

দৈনন্দিন কর্মকান্ডে ভোকাল কর্ডে চাপ পরে এমন কাজ করা থেকে বিরত থাকবেন।

মোবাইল ফোনে কথা বলতে সাবধানতা অবলম্বন করুন। চিন্তা করুন ফোন কলটি আপনার প্রয়োজনীয় কিনা।


এভাবে ছোট্ট ছোট্ট সচেতনতা ও সতর্কতার মাধ্যমে আমরা আমাদের কণ্ঠকে পরিচর্যার মাধ্যমে সুস্থ-সুন্দর রাখতে পারি। কণ্ঠের মাধুর্যতা দিয়ে মানুষকে আকৃষ্ট ও মোহিত করতে পারি আর জয় করতে পারি স্বপ্নের বিশ্বকে। সুস্থ থাকুক আমাদের কণ্ঠ এবং সুন্দর হোক সবার কথা।

কোন মন্তব্য নেই:

Popular Posts