Recent post

শুক্রবার, ৩১ মার্চ, ২০১৭

‘অপারেশন ম্যাক্সিমাস’ দিনভর গুলি, বোমা বিস্ফোরণ


দিনভর গুলি ও বিস্ফোরণের পর মৌলভীবাজার শহরের বড়হাটে জঙ্গি আস্তানা ঘিরে সোয়াটের ‘অপারেশন ম্যাক্সিমাস’ স্থগিত করা হয়েছে। আলোকস্বল্পতার কারণে গতকাল সন্ধ্যায় অভিযান স্থগিত করার কথা জানান পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম। আবহাওয়া ভালো থাকলে আজ শনিবার সকালে আবার অভিযান শুরু হবে বলে জানান তিনি।
মৌলভীবাজার শহরের এই বাড়ি জঙ্গি আস্তানা বলে সন্দেহ করে ৫৩ ঘণ্টা ঘিরে রাখার পর গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে শুরু হয় ‘অপারেশন ম্যাক্সিমাস’। এরপর সেখান থেকে দিনভর গোলাগুলি আর বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। গণমাধ্যমকর্মীদের ওই বাড়ির ত্রিসীমানায় যেতে দেওয়া হচ্ছে না। ফলে সেখানে কী ঘটছে তা জানা যাচ্ছে না। তবে পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, প্রচুর বিস্ফোরকসহ বোমা তৈরিতে দক্ষ একজন ওই বাড়িতে আছে।
এর আগের দিন বৃহস্পতিবার মৌলভীবাজার শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরের নাসিরপুর গ্রামে জঙ্গি আস্তানায় ‘অপারেশন হিট ব্যাক’ শেষ হওয়ার পর ওই বাড়ি থেকে চার শিশু, দুই নারীসহ সাতজনের ছিন্নভিন্ন লাশ উদ্ধারের খবর জানায় পুলিশ।
পুলিশ জানায়, মৌলভীবাজার পৌরসভার ভেতরে বড়হাট এলাকার আবুশাহ দাখিল মাদ্রাসার গলিতে দোতলা একটি বাড়িতে ভাড়া নিয়ে আস্তানা গেড়েছে জঙ্গিরা। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে সেটি শনাক্ত করে ঘিরে রাখা হয়। বুধবার ওই আস্তানা থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছোড়া হয়। পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। একজন কর্মকর্তা বলেন, বুধবার দিনের বিভিন্ন সময় ভবনের জানালা দিয়ে উঁকিঝুঁকি দিতে দেখা যায়। তাদের দেখামাত্রই পুলিশ গুলি ছুড়ে প্রতিরোধের চেষ্টা করে, যাতে তারা পুলিশের দিকে গুলি বা বোমা ছুড়তে না পারে। তবে বুধবার রাত থেকেই ভবনটি থেকে তেমন সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছে না।


গতকাল বড়হাটের স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গতকাল দিবাগত রাত তিনটার দিকে জঙ্গি আস্তানার কাছ থেকে একটি বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে। এরপর থেমে থেমে গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। সকাল সাড়ে ছয়টা থেকে সাতটার দিকেও গুলির শব্দ শোনা যায়। গুলি ও বোমার শব্দে আশপাশের বাসাগুলোর শিশুরা প্রচণ্ড ভয়ে আছে। পুরো শহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
এলাকার বাসিন্দারা জানান, গতকাল ভোরবেলা থেকেই অভিযানের প্রস্তুতি শুরু হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় মৌলভীবাজার-সিলেট সড়ক। স্থানীয় লোকদের নিরাপদ দূরত্বে থাকতে বলা হয়। সংশ্লিষ্ট এলাকায় মাইকিং করে আবারও ১৪৪ ধারা জারির কথা ঘোষণা করা হয়। সকালবেলায় জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) শাহ জালাল নিজে উপস্থিত থেকে যানবাহন চলাচল ও ভিড় নিয়ন্ত্রণ করেন। গণমাধ্যমকর্মীদেরও জটলা পাকিয়ে থাকতে নিষেধ করা হয়। সকাল আটটার দিকে বিশেষায়িত ইউনিট সোয়াটের সদস্যরা মাদ্রাসা গলিতে ঢোকেন। ৯টা ৫২ মিনিট থেকে গুলির শব্দ শুরু হয়। সকাল ১০টা ৮ মিনিট পর্যন্ত টানা গুলি চলে। সকাল সোয়া ১০টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের কয়েকজন সদস্যকে ইলেকট্রিক করাত, রশি, দা, কুড়াল নিয়ে জঙ্গি আস্তানার দিকে যেতে দেখা যায়। অভিযান চলাকালে কখনো টানা বা কখনোবা থেমে থেমে গুলির শব্দ শোনা যায়। দফায় দফায় বিস্ফোরণের প্রচণ্ড শব্দে পুরো এলাকা কেঁপে ওঠে। পুলিশের দাবি, আস্তানার ভেতর থেকে জঙ্গিরা এ বিস্ফোরণগুলো ঘটাচ্ছে।
বেলা একটার দিকে ঘটনাস্থল থেকে পুলিশের কনস্টেবল কায়সরকে আহতাবস্থায় নিয়ে যেতে দেখা যায়। জানতে চাইলে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রওশন-উদ-জামান বলেন, বিস্ফোরণে হয়তো জানালার কাচ ভেঙে তা উড়ে এসে ওই পুলিশ সদস্যের গায়ে লেগেছে। বেলা দুইটার দিকে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মুঠোফোনের খুদে বার্তায় বলেন, পুলিশ সদস্যের গায়ে খালি কার্তুজের আঘাত লেগেছে।
গতকাল অভিযান শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পর সকালে ও সন্ধ্যায় দুই দফায় সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন মনিরুল ইসলাম। বেলা ১১টার দিকে বড়হাটে মূল সড়কের ওপর দাঁড়িয়ে মনিরুল বলেন, ‘এখানে একাধিক জঙ্গি অবস্থান নিয়েছে বলে তথ্য রয়েছে। গত বৃহস্পতিবারও তারা একটি বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে বলে আমাদের কাছে তথ্য আছে। বৃহস্পতিবার তারা গুলিও করেছে। সিলেটের জোড়া বিস্ফোরণের ঘটনার সূত্র ধরে এখানে এ বাসাটি চিহ্নিত করা হয়।’ তিনি বলেন, ‘কিছুক্ষণ আগে সোয়াটের অভিযান শুরু হয়েছে। এর নাম দেওয়া হয়েছে অপারেশন ম্যাক্সিমাস। এটি একটি জটিল অভিযান। আমাদের কাছে খবর আছে, প্রচুর পরিমাণ বিস্ফোরকসহ একজন বিস্ফোরক তৈরিতে বিশেষজ্ঞ জঙ্গি এখানে রয়েছে।’
সন্ধ্যা সাতটার দিকে দ্বিতীয় দফা ব্রিফ করেন মনিরুল। তখন তিনি বলেন, আলোকস্বল্পতার কারণে অভিযান স্থগিত করা হয়েছে। আবহাওয়া ঠিক থাকা সাপেক্ষে সকাল থেকে আবারও শুরু হবে। ওই বাড়িটিতে এখন কেউ জীবিত আছে কি না জানতে চাইলে মনিরুল বলেন, ‘আপনারা বোধ হয় এখান থেকে শুনেছেন, কিছু ব্লাস্ট (বিস্ফোরণ) হয়েছে। বেশ কয়েকটি বোম্ব ব্লাস্ট তারা ভেতর থেকে করেছে। সোয়াটের আভিযানিক দল যখনই সেখানে ঢোকার চেষ্টা করেছে, তখনই তারা ভেতর থেকে বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে। এই অভিযানটি অপেক্ষাকৃত জটিল। কেননা যে বাড়িটিতে তারা অবস্থান নিয়েছে, সেখানে অনেকগুলো কামরা রয়েছে। সে কারণেই অভিযান শেষ হতে আরেকটু সময় লাগবে। অভিযান স্থগিত করা হলেও গত কয়েক দিনের মতো বাড়িটি ঘিরে রাখবে পুলিশ।’
অভিযান স্থগিত ঘোষণা করার সোয়া এক ঘণ্টা পর বৃষ্টির মধ্যে ঘটনাস্থল থেকে আবারও গুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।
এদিকে অভিযানে অংশ নেওয়া কর্মকর্তারা বলেন, গত কয়েক দিনে বাড়িটির জানালার কাচগুলো গুলি করে ভাঙা যায়নি। গুলিতে সেগুলো ফুটো হয়ে গেলেও ভেঙে পড়ছে না। এগুলো গাড়ির কাচের মতো বা প্লাস্টিকের কাগজের প্রলেপযুক্ত।
এদিকে জঙ্গি আস্তানায় গোলাগুলির শব্দে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। সেনাবাহিনীর সাবেক মেজর জঙ্গিনেতা সৈয়দ জিয়াউল হকের বাড়ি এ জঙ্গি আস্তানা থেকে এক কিলোমিটার দক্ষিণে। এসব নিয়ে মানুষের মধ্যে নানা জল্পনা ও আতঙ্ক রয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই:

Popular Posts