Recent post

শনিবার, ১১ মে, ২০১৯

তারাবীহ ২০ রাকাত প্রমানিত

২০ রাকাত তারাবীহ সকলের আমলের মাধ্যমে অনুসৃত হওয়ার প্রমাণ
যা সরাসরি মহান সাহাবায়ে কেরাম আজমাঈনের ইজমাহ বা ঐক্যমত দ্বারা প্রমানিতঃ

এক নং দলিলঃ
ইমাম ইবনু আব্দিল বার রহ. (মৃত : ৪৬৩) বলেন,
ﻭَﻫُﻮَ - ﻋِﺸْﺮُﻭﻥَ ﺭَﻛْﻌَﺔ - ﺍﻟﺼَّﺤِﻴﺢُ ﻋَﻦْ ﺃُﺑَﻲِّ ﺑْﻦِ ﻛَﻌْﺐٍ ﻣِﻦْ ﻏَﻴْﺮِ ﺧِﻠَﺎﻑٍ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺼَّﺤَﺎﺑَﺔِ .
অর্থ: এটাই সহীহ যে, হযরত উবাই ইবনে কা‘ব ২০ রাকাত তারাবীহ পড়িয়েছেন। আর তাতে কোন সাহাবী দ্বিমত করেননি। [আল ইসতিযকার ৫/১৫৭]
ﻗَﺎﻝَ ﺍﺑْﻦُ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟْﺒَﺮِّ ﻭَﻫُﻮَ ﻗَﻮْﻝُ ﺟُﻤْﻬُﻮﺭِ ﺍﻟْﻌُﻠَﻤَﺎﺀِ ﻭَﻫُﻮَ ﺍﻟِﺎﺧْﺘِﻴَﺎﺭُ ﻋِﻨْﺪَﻧَﺎ
অর্থ:তিনি আরো বলেন, এটিই (২০ রাকাত তারাবীহ) অধিকাংশ উলামায়ে কেরামের মত এবং আমাদের নিকট এটিই পছন্দনীয়। [তারহুত তাছরীব ৩/৯৭]
দুই নং দলিলঃ
ইমাম তিরমিযী রহ. (মৃত : ২৬৯) বলেন,
ﻭَﺃَﻛْﺜَﺮُ ﺃَﻫْﻞِ ﺍﻟﻌِﻠْﻢِ ﻋَﻠَﻰ ﻣَﺎ ﺭُﻭِﻱَ ﻋَﻦْ ﻋُﻤَﺮَ، ﻭَﻋَﻠِﻲٍّ، ﻭَﻏَﻴْﺮِﻫِﻤَﺎ ﻣِﻦْ ﺃَﺻْﺤَﺎﺏِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻋِﺸْﺮِﻳﻦَ ﺭَﻛْﻌَﺔً، ﻭَﻫُﻮَ ﻗَﻮْﻝُ ﺍﻟﺜَّﻮْﺭِﻱِّ، ﻭَﺍﺑْﻦِ ﺍﻟﻤُﺒَﺎﺭَﻙِ، ﻭَﺍﻟﺸَّﺎﻓِﻌِﻲِّ ﻭﻗَﺎﻝَ ﺍﻟﺸَّﺎﻓِﻌِﻲُّ < : ﻭَﻫَﻜَﺬَﺍ ﺃَﺩْﺭَﻛْﺖُ ﺑِﺒَﻠَﺪِﻧَﺎ ﺑِﻤَﻜَّﺔَ ﻳُﺼَﻠُّﻮﻥَ ﻋِﺸْﺮِﻳﻦَ ﺭَﻛْﻌَﺔً
অর্থ: সংখ্যাগরিষ্ঠ উলামায়ে কেরামের মত সেটাই যা বর্ণিত আছে হযরত উমর, হযরত আলী রা. ও অন্যান্য সাহাবায়ে কেরাম থেকে। অর্থাৎ ২০ রাকাত। এটিই ইমাম সুফয়ান সাওরী, ইবনুল মুবারক ও শাফেয়ী রহ. এর মত। ইমাম শাফেয়ী বলেন, আমাদের শহর মক্কা মুর্কারামায় আমি এমনটিই পেয়েছি যে, তারা ২০ রাকাত তারাবীহ পড়তেন। [জামে তিরমিযী ৩/১৬০]
তিন নং দলিলঃ
ইবনে রুশদ মালেকী রহ. (মৃত : ৫৯৫) বলেন,
ﺍﺧْﺘَﺎﺭَ ﻣَﺎﻟِﻚٌ ﻓِﻲ ﺃَﺣَﺪِ ﻗَﻮْﻟَﻴْﻪِ، ﻭَﺃَﺑُﻮ ﺣَﻨِﻴﻔَﺔَ، ﻭَﺍﻟﺸَّﺎﻓِﻌِﻲُّ، ﻭَﺃَﺣْﻤَﺪُ، ﻭَﺩﺍﻭﺩ : ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻡَ ﺑِﻌِﺸْﺮِﻳﻦَ ﺭَﻛْﻌَﺔً ﺳِﻮَﻯ ﺍﻟْﻮِﺗْﺮِ
অর্থ: ইমাম মালেক রহ. এর এক বক্তব্য অনুযায়ী এবং ইমাম আবু হানীফা, ইমাম শাফিয়ী, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল ও ইমাম দাঊদ এর বক্তব্য হচ্ছে বিতর ছাড়া তারাবীহ ২০ রাকাত। [বিদায়াতুল মুজতাহিদ : ১/২১৯]
চার নং দলিলঃ
ওয়ালী উদ্দিন ইরাকী রহ. (মৃত : ৮২৬) বলেন,
ﻭَﺑِﻬَﺬَﺍ ﺃَﺧَﺬَ ﺃَﺑُﻮ ﺣَﻨِﻴﻔَﺔَ ﻭَﺍﻟﺜَّﻮْﺭِﻱُّ ﻭَﺍﻟﺸَّﺎﻓِﻌِﻲُّ ﻭَﺃَﺣْﻤَﺪُ ﻭَﺍﻟْﺠُﻤْﻬُﻮﺭُ ﻭَﺭَﻭَﺍﻩُ ﺍﺑْﻦُ ﺃَﺑِﻲ ﺷَﻴْﺒَﺔَ ﻓِﻲ ﻣُﺼَﻨَّﻔِﻪِ ﻋَﻦْ ﻋُﻤَﺮَ ﻭَﻋَﻠِﻲٍّ ﻭَﺃُﺑَﻲٍّ ﻭَﺷُﺘَﻴْﺮِ ﺑْﻦِ ﺷَﻜَﻞٍ ﻭَﺍﺑْﻦِ ﺃَﺑِﻲ ﻣُﻠَﻴْﻜَﺔَ ﻭَﺍﻟْﺤَﺎﺭِﺙِ ﺍﻟْﻬَﻤْﺪَﺍﻧِﻲُّ ﻭَﺃَﺑِﻲ ﺍﻟْﺒَﺨْﺘَﺮِﻱِّ
অর্থ: ২০ রাকাত তারাবীর মতই গ্রহণ করেছেন ইমাম আবু হানীফা, ইমাম সাওরী, ইমাম শাফেয়ী, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল এবং অধিকাংশ উলামা। ইমাম ইবনে আবি শাইবা রহ. ‘আল মুসান্নাফ’ গ্রন্থে এ মতই বর্ণনা করেছেন হযরত উমর, হযরত আলী, হযরত উবাই ইবনে কা‘ব, শুতাইর ইবনে শাকাল, ইবনে আবী মুলাইকা, হারেস আল হামদানী ও আবুল বাখতারী থেকে। [তরহুত তাসরীব ৩/৯৭]
পাঁচ নং দলিলঃ
ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ. (মৃত : ৭২৮) বলেন,
ﺇِﻧَّﻪُ ﻗَﺪْ ﺛَﺒَﺖَ ﺃَﻥَّ ﺃﺑﻲ ﺑْﻦَ ﻛَﻌْﺐٍ ﻛَﺎﻥَ ﻳَﻘُﻮﻡُ ﺑِﺎﻟﻨَّﺎﺱِ ﻋِﺸْﺮِﻳﻦَ ﺭَﻛْﻌَﺔً ﻓِﻲ ﻗِﻴَﺎﻡِ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﻭَﻳُﻮﺗِﺮُ ﺑِﺜَﻠَﺎﺙِ . ﻓَﺮَﺃَﻯ ﻛَﺜِﻴﺮٌ ﻣِﻦْ ﺍﻟْﻌُﻠَﻤَﺎﺀِ ﺃَﻥَّ ﺫَﻟِﻚَ ﻫُﻮَ ﺍﻟﺴُّﻨَّﺔُ؛ ﻟِﺄَﻧَّﻪُ ﺃَﻗَﺎﻣَﻪُ ﺑَﻴْﻦ ﺍﻟْﻤُﻬَﺎﺟِﺮِﻳﻦَ ﻭَﺍﻟْﺄَﻧْﺼَﺎﺭِ ﻭَﻟَﻢْ ﻳُﻨْﻜِﺮْﻩُ ﻣُﻨْﻜِﺮٌ
অর্থ: নিশ্চয় এ কথা প্রমাণিত আছে যে, হযরত উবাই ইবনে কা‘ব রা. লোকদের (সাহাবা ও তাবিয়ীদের) নিয়ে রমজান মাসে ২০ রাকাত তারাবীহ ও ৩ রাকাত বিতর পড়তেন। এ জন্যই সংখ্যাগরিষ্ঠ উলামায়ে কেরামের মত হচ্ছে এটিই সুন্নত। কারণ, তিনি এ নামাজ পড়িয়েছেন আনসার ও মুহাজির সাহাবীদেরকে নিয়ে, তাদের কেউ এর উপর কোন আপত্তি উত্থাপন করেননি।[মজমূউ ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া ২৩/১১২]
ছয় নং দলিলঃ
ওহাবী মতবাদের প্রবর্তকের ছেলে আব্দুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওয়াহ্হাব (মৃত : ১২৪২) বলেন,
ﻭﻋﻤﺮ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻟﻤﺎ ﺟﻤﻊ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻋﻠﻰ ﺃﺑﻲ ﺑﻦ ﻛﻌﺐ ﻛﺎﻧﺖ ﺻﻼﺗﻬﻢ ﻋﺸﺮﻳﻦ ﺭﻛﻌﺔ
অর্থ: উমর রা. যে তারাবীহ নামাজে উবাই ইবনে কা‘ব রা. এর পিছনে সকলকে একত্রিত করেছিলেন তা ছিল ২০ রাকাত। [মাজমুআতুর রাসাইল ওয়াল মাসাইলিন নাজদিয়্যাহ ১/৯৫]
সাত নং দলিলঃ
আল্লামা ইবনে হাজার মক্কী র. তার ‘আলমিনহাজ’ গ্রন্থে লিখেছেন,
ﺛﻢ ﺍﻟﺘﺮﺍﻭﻳﺢ ﻭﻫﻲ ﻋﺸﺮﻭﻥ ﺭﻛﻌﺔ ﻓﻲ ﻛﻞ ﻟﻴﻠﺔ ﻣﻦ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻭﺗﻌﻴﻴﻦ ﻛﻮﻧﻬﺎ ﻋﺸﺮﻳﻦ ﺟﺎﺀ ﻓﻲ ﺣﺪﻳﺚ ﺿﻌﻴﻒ ﻟﻜﻦ ﺃﺟﻤﻊ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺼﺤﺎﺑﺔ ﺭﺽ
অর্থাৎ তারাবী রমযানের প্রত্যেক রাতেই বিশ রাকাত করে। বিশ রাকাতের নির্ণয়ণ একটি দুর্বল হাদীসে আসলেও সাহাবীগণ এর উপর সকলে একমত হয়েছিলেন। ( আল মিনহাজ পৃ ২৪০)
আইম্মায়ে হাদীস থেকে এ ধরণের আরো অনেক বক্তব্য রয়েছে, যা থেকে এ কথা পরিষ্কার হয়ে যায় যে, ১১ রাকাত থেকে বেশি তারাবীহ গোটা উম্মাতের আমলের মাধ্যমে অনুসৃত। আমাদের আলোচ্য ইয়াযীদ ইবনে খুসাইফার হাদীসটি গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট ছিল। অধিকন্তু এর সনদও সহীহ। যা আমরা সামনে বিস্তারিত জবাবের মাধ্যমে পাঠকবৃন্দের নিকট তুলে ধরছি। যা ই হোক,আমাদের হানাফী মাজহাবের প্রবর্তক ইমাম হযরত আবূ হানীফা র. এর চমৎকার বিশ্লেষণ দ্বারা প্রমানিত যে, তারাবীহ নামাজ 20 রাকআত,এতে কোন সন্দেহ নেই৷আর এ 20 রাকআত নামাজই মহান সাহাবায়ে কেরামের ইজমাহ বা ঐক্যমত দ্বারা প্রমানিত৷
ﺭﻭﻯ ﺃﺳﺪ ﺑﻦ ﻋﻤﺮﻭ ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻳﻮﺳﻒ ﻗﺎﻝ : ﺳﺄﻟﺖ ﺃﺑﺎ ﺣﻨﻴﻔﺔ ﻋﻦ ﺍﻟﺘﺮﺍﻭﻳﺢ ﻭﻣﺎ ﻓﻌﻠﻪ ﻋﻤﺮ ﻓﻘﺎﻝ : ﺍﻟﺘﺮﺍﻭﻳﺢ ﺳﻨﺔ ﻣﺆﻛﺪﺓ ﻭﻟﻢ ﻳﺘﺨﺮﺻﻪ ﻋﻤﺮ ﻣﻦ ﺗﻠﻘﺎﺀ ﻧﻔﺴﺔ ﻭﻟﻢ ﻳﻜﻦ ﻓﻴﻪ ﻣﺒﺘﺪﻋﺎ ﻭﻟﻢ ﻳﺄﻣﺮ ﺑﻪ ﺇﻻ ﻋﻦ ﺃﺻﻞ ﻟﺪﻳﻪ ﻭﻋﻬﺪ ﻣﻦ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻭﻟﻘﺪ ﺳﻦ ﻋﻤﺮ ﻫﺬﺍ ﻭﺟﻤﻊ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻋﻠﻰ ﺃﺑﻲ ﺑﻦ ﻛﻌﺐ ﻓﺼﻼﻫﺎ ﺟﻤﺎﻋﺔ ﻭﺍﻟﺼﺤﺎﺑﺔ ﻣﺘﻮﺍﻓﺮﻭﻥ، ﻣﻨﻬﻢ ﻋﺜﻤﺎﻥ ﻭﻋﻠﻲ ﻭﺍﺑﻦ ﻣﺴﻌﻮﺩ ﻭﺍﻟﻌﺒﺎﺱ ﻭﺍﺑﻨﻪ ﻭﻃﻠﺤﺔ ﻭﺍﻟﺰﺑﻴﺮ ﻭﻣﻌﺎﺫ ﻭﺃﺑﻲ ﻭﻏﻴﺮﻫﻢ ﻣﻦ ﺍﻟﻤﻬﺎﺟﺮﻳﻦ ﻭﺍﻷﻧﺼﺎﺭ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻢ ﺃﺟﻤﻌﻴﻦ ﻭﻣﺎ ﺭﺩ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺍﺣﺪ ﻣﻨﻬﻢ ﺑﻞ ﺳﺎﻋﺪﻭﻩ ﻭﻭﺍﻓﻘﻮﻩ ﻭﺃﻣﺮﻭﺍ ﺑﺬﻟﻚ .
অর্থাৎ আসাদ ইবনে আমর র. ইমাম আবূ ইউসুফ র. থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন, আমি ইমাম আবূ হানীফা র.কে তারাবীহ ও এ ব্যপারে হযরত উমর রা.এর কর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, তারাবী সুন্নতে মুয়াক্কাদা। হযরত উমর রা. অনুমান করে নিজের পক্ষ থেকে এটা নির্ধারণ করেননি। এ ক্ষেত্রে তিনি নতুন কিছু উদ্ভাবন করেননি। তিনি তাঁর নিকট বিদ্যমান ও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রাপ্ত কোন নির্দেশনার ভিত্তিতেই এই আদেশ প্রদান করেছেন।তাছাড়া হযরত উমর রা. যখন এই নিয়ম চালু করলেন এবং হযরত উবাই ইবনে কা’ব রা. এর ইমামতিতে লোকদেরকে একত্রিত করলেন, আর উবাই রা.জামাতের সাথে এই নামায আদায় করলেন, তখন বিপুল সংখ্যক সাহাবী বিদ্যমান ছিলেন। তাঁদের মধ্যে হযরত উসমান,আলী,ইবনে মাসউদ,আব্বাস, ইবনে আব্বাস, তালহা,যুবায়র, মুআয ও উবাই রাদিয়ল্লাহু আনহুম প্রমুখ মুহাজির ও আনসার সাহাবীগণ ছিলেন। তাঁদের কেউই তাঁর উপর আপত্তি করেননি। বরং সকলেই তাঁকে সমর্থন করেছেন, তাঁর সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন এবং অন্যদেরও এরই আদেশ দিয়েছেন। (আল ইখতিয়ার লি তালীল মুখতার,১/৭০)
ইসলামী শরীয়তের বিধানে তারাবীহ নামাজ 20 রাকআত কিন্তু আট রাকআতের দাবী পরিপূর্ণ ভ্রান্তঃ
আট নং দলিলঃ
নবম শতকের মুজাদ্দিদ ইমাম জালাল উদ্দিন সুয়ুতি আলাইহির রহমত ﺍﻟﻤﺼﺎﺑﻴﺢ ﻓﻰ ﺻﻼﺓ ﺍﻟﺘﺮﺍﻭﻳﺢ ‘মাসাবিহ কিতাবের তারাবীহ অধ্যায়ে’ ইমাম বায়হাকী এর বর্ণিত ২০ বিশ রাকআত তারাবীহসংক্রান্ত হাদিস যে সহীহ শুদ্ধ এ সম্বন্ধে আলোকপাত করে সুয়ুতি বলেন-
ﻭﻓﻰ ﺳﻨﻦ ﺍﻟﺒﻴﻬﻘﻰ ﻭﻏﻴﺮﻩ ﺑﺎﺳﻨﺎﺩ ﺻﺤﺒﺢ ﻋَﻦِ ﺍﻟﺴَّﺎﺋِﺐِ ﺑْﻦِ ﻳَﺰِﻳﺪَ ﻗَﺎﻝَ : " ﻛَﺎﻧُﻮﺍ ﻳَﻘُﻮﻣُﻮﻥَ ﻋَﻠَﻰ ﻋَﻬْﺪِ ﻋُﻤَﺮَ ﺑْﻦِ ﺍﻟْﺨَﻄَّﺎﺏِ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﻓِﻲ ﺷَﻬْﺮِ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﺑِﻌِﺸْﺮِﻳﻦَ ﺭَﻛْﻌَﺔً
ভাবার্থ: ইমাম বায়হাকী ও অন্যান্য মুহাদ্দিসীনে কেরামগণ সহীহ শুদ্ধ সনদে সাঈব ইবনে ইয়াজিদ সাহাবী থেকে বর্ণনা করেছেন। হযরত ওমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু আনহু এর খেলাফতকালে সাহাবায়ে কেরামগণ ২০ বিশ রাকআত তারাবীহ নামায পড়তেন।
ইমাম জালালউদ্দিন সুয়ুতি আলাইহির রহমত ‘মাসাবিহ’ এর মধ্যে আরো উল্লেখ করেন-
ﻭَﻗَﺎﻝَ ﺍﻟﺴﺒﻜﻲ ﻓِﻲ ﺷَﺮْﺡِ ﺍﻟْﻤِﻨْﻬَﺎﺝِ : ﺍﻋْﻠَﻢْ ﺃَﻧَّﻪُ ﻟَﻢْ ﻳُﻨْﻘَﻞْ ﻛَﻢْ ﺻَﻠَّﻰ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺗِﻠْﻚَ ﺍﻟﻠَّﻴَﺎﻟِﻲَ، ﻫَﻞْ ﻫُﻮَ ﻋِﺸْﺮُﻭﻥَ ﺃَﻭْ ﺃَﻗَﻞُّ، ﻗَﺎﻝَ : ﻭَﻣَﺬْﻫَﺒُﻨَﺎ ﺃَﻥَّ ﺍﻟﺘَّﺮَﺍﻭِﻳﺢَ ﻋِﺸْﺮُﻭﻥَ ﺭَﻛْﻌَﺔً ; ﻟِﻤَﺎ ﺭَﻭَﻯ ﺍﻟْﺒَﻴْﻬَﻘِﻲُّ ﻭَﻏَﻴْﺮُﻩُ ﺑِﺎﻟْﺈِﺳْﻨَﺎﺩِ ﺍﻟﺼَّﺤِﻴﺢِ ﻋَﻦِ ﺍﻟﺴَّﺎﺋِﺐِ ﺑْﻦِ ﻳَﺰِﻳﺪَ ﺍﻟﺼَّﺤَﺎﺑِﻲِّ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﻗَﺎﻝَ : ﻛُﻨَّﺎ ﻧَﻘُﻮﻡُ ﻋَﻠَﻰ ﻋَﻬْﺪِ ﻋﻤﺮ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﺑِﻌِﺸْﺮِﻳﻦَ ﺭَﻛْﻌَﺔً ﻭَﺍﻟْﻮَﺗْﺮِ، ﻫَﻜَﺬَﺍ ﺫَﻛَﺮَﻩُ ﺍﻟْﻤُﺼَﻨِّﻒُ ﻭَﺍﺳْﺘَﺪَﻝَّ ﺑِﻪِ، ﻭَﺭَﺃَﻳْﺖُ ﺇِﺳْﻨَﺎﺩَﻩُ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺒَﻴْﻬَﻘِﻲِّ .
পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে, ইমাম সুবুকি আলাইহির রহমত ‘শরহুল মিনহাজ’ নামক কিতাবে উল্লেখ করেছেন, হাবিবে খোদা কত রাকআত তারাবীহ নামায আদায় করেছেন, তার কোন নির্দিষ্ট সংখ্যা সহীহ হাদিস দ্বারা উল্লেখ নেই।
ইমাম সুবুকি রহ. বলেন- আমাদের মাযহাব হলো ২০ বিশ রাকআত তারাবীহ নামায। দলিল হিসেবে ইমাম বায়হাকী আলাইহির রহমতের ‘সুনানে কুবরা’ বায়হাকী এর বর্ণিত হাদিসখানা দলিলরূপে উপস্থাপন করে বলেন- সাঈব ইবনে ইয়াজিদ সাহাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসখানা সহীহ।
রাবী বলেন- আমরা সাহাবায়ে কেরামগণ হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর খেলাফতের সময় ২০ বিশ রাকআত তারাবীহ নামায আদায় করতাম।’
উল্লেখ্য যে, উপরোক্ত হাদিসকে ইমাম বায়হাকী, ইমাম জালালউদ্দিন সুয়ুতি, ইমাম নিমভী হানাফি, ইমাম সুবুকি, ইমাম নববী গং সহ সকল মুহাদ্দিসীনে কেরামগণ সহীহ বা বিশুদ্ধ বলে আখ্যায়িত করেছেন যে, হযরত ওমর, হযরত উসমান ও হযরত আলী রেদওয়ানুল্লাহি আলাইহিম আজমাঈন এর যামানায় ২০ বিশ রাকআত তারাবীহ নামায সাহাবায়ে কেরামগণ আদায় করতেন।
নয় নং দলিলঃ
ঈমাম ইবনে হাজর আসকালানীর অভিমতঃ
হাফিজুল হাদিস ইবনে হজর আসকালানী আলাইহির রহমত ‘ফতহুল বারি শরহে বুখারী’ নামক কিতাবের পঞ্চম জিলদের ৪০৫ পৃষ্ঠায় তারাবীহ অধ্যায়ে ইয়াজিদ ইবনু খুসাইফা থেকে বর্ণিত হাদিসসমূহ মোট চারখানা হাদিস দলিলস্বরূপ উল্লেখ করে, তারাবীহ নামায যে, ২০ বিশ রাকআত, হযরত ওমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু আনহু এর খেলাফতকাল থেকে এ পর্যন্ত চলে আসছে উপস্থাপন করেন-
ﻭَﺭَﻭَﺍﻩُ ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟﺮَّﺯَّﺍﻕِ ﻣِﻦْ ﻭَﺟْﻪٍ ﺁﺧَﺮَ ﻋَﻦْ ﻣُﺤَﻤَّﺪِ ﺑْﻦِ ﻳُﻮﺳُﻒَ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺇِﺣْﺪَﻯ ﻭَﻋِﺸْﺮِﻳﻦَ
১. হাফিজুল হাদিস আব্দুর রাজ্জাক মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ থেকে বর্ণনা করেছেন, ২১ একুশ রাকআত (তন্মধ্যে ২০ বিশ রাকআত তারাবীহ ও ১ রাকআত বিতির)
ﻭَﺭَﻭَﻯ ﻣَﺎﻟِﻚٌ ﻣِﻦْ ﻃَﺮِﻳﻖِ ﻳَﺰِﻳﺪَ ﺑْﻦِ ﺧُﺼَﻴْﻔَﺔَ ﻋَﻦِ ﺍﻟﺴَّﺎﺋِﺐِ ﺑْﻦِ ﻳَﺰِﻳﺪَ ﻋِﺸْﺮِﻳﻦَ ﺭَﻛْﻌَﺔً ﻭَﻫَﺬَﺍ ﻣَﺤْﻤُﻮﻝٌ ﻋَﻠَﻰ ﻏَﻴْﺮِ ﺍﻟْﻮِﺗْﺮِ
২. ইমাম মালিক ইয়াজিদ ইবনে খুসাইফা সূত্রে সাঈব ইবনে ইয়াজিদ থেকে বিতির ছাড়া বর্ণনা করেন, ২০ বিশ রাকআত তারাবীহ নামায সাহাবায়ে কেরাম আদায় করেছেন।
ﻭَﻋَﻦْ ﻳَﺰِﻳﺪَ ﺑْﻦِ ﺭُﻭﻣَﺎﻥَ ﻗَﺎﻝَ ﻛَﺎﻥَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﻳَﻘُﻮﻣُﻮﻥَ ﻓِﻲ ﺯَﻣَﺎﻥِ ﻋُﻤَﺮَ ﺑِﺜَﻠَﺎﺙٍ ﻭَﻋِﺸْﺮِﻳﻦَ
৩. ইমাম মালিক ইয়াজিদ ইবনে রোমান থেকে ৩ রাকআত বিতির সহ ২৩ তেইশ রাকআত তারাবীহ নামায সাহাবায়ে কেরামগণ হযরত ওমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু আনহু এর যামানায় আদায় করেছেন বলে বর্ণনা করেছেন।
উল্লেখ্য যে, ইয়াজিদ ইবনে রোমান যেহেতু ছেকা রাবী তাই এ হাদিস ﻣﺮﺳﻞ ‘মুরসাল হওয়া সত্ত্বেও দলিলরূপে গণ্য করেছেন ইমাম ইবনে হজর আসকালানী আলাইহির রহমত।
ﻭَﺭَﻭَﻯ ﻣُﺤَﻤَّﺪُ ﺑْﻦُ ﻧَﺼْﺮٍ ﻣِﻦْ ﻃَﺮِﻳﻖِ ﻋَﻄَﺎﺀٍ ﻗَﺎﻝَ ﺃَﺩْﺭَﻛْﺘُﻬُﻢْ ﻓِﻲ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﻳُﺼَﻠُّﻮﻥَ ﻋِﺸْﺮِﻳﻦَ ﺭَﻛْﻌَﺔً ﻭَﺛَﻠَﺎﺙَ ﺭَﻛَﻌَﺎﺕِ ﺍﻟْﻮِﺗْﺮَ
৪. অপরদিকে মুহাম্মদ ইবনে নসর আতা সূত্রে হাদিস বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন- আমি পেয়েছি সাহাবায়ে কেরামগণ রমযান মাসে ২০ বিশ রাকআত তারাবীহ ও ৩ তিন রাকআত বিতির নামায আদায় করতেন।’
এ বর্ণনাটিকেও আসকালানী তারাবীহ নামায যে ২০ বিশ রাকআত দলিলরূপে গণ্য করেছেন।
ইমাম আসকালানী আলাইহির রহমত উপরে বর্ণিত চারখানা হাদিসের সনদের মধ্য হতে কোন একজন বর্ণনাকারীকেও মুনকার বলে আখ্যায়িত করেননি।
উপরোল্লেখিত চারখানা হাদিস ব্যতীত আরো তিনটি বর্ণনা উল্লেখ করেছেন-
এক. ১১ এগারো রাকআত
দুই. ১১ এগারো থেকে বেশি রাকআত
তিন. ১৩ তেরো রাকআত।
সর্বমোট সাতখানা হাদিস বর্ণনা করে তিনি সবকটি বর্ণনাগুলিকে সহীহ-শুদ্ধ সাব্যস্ত করে সর্বশেষে তিনি সব হাদিসগুলোকে তাতবীক বা সমন্বয় করেছেন এভাবে -
ﻭَﺍﻟْﺠَﻤْﻊُ ﺑَﻴْﻦَ ﻫَﺬِﻩِ ﺍﻟﺮِّﻭَﺍﻳَﺎﺕِ ﻣُﻤْﻜِﻦٌ ﺑِﺎﺧْﺘِﻠَﺎﻑِ ﺍﻟْﺄَﺣْﻮَﺍﻝِ ﻭَﻳُﺤْﺘَﻤَﻞُ ﺃَﻥَّ ﺫَﻟِﻚَ ﺍﻟِﺎﺧْﺘِﻠَﺎﻑَ ﺑِﺤَﺴَﺐِ ﺗَﻄْﻮِﻳﻞِ ﺍﻟْﻘِﺮَﺍﺀَﺓِ ﻭَﺗَﺨْﻔِﻴﻔِﻬَﺎ ﻓَﺤَﻴْﺚُ ﻳُﻄِﻴﻞُ ﺍﻟْﻘِﺮَﺍﺀَﺓَ ﺗَﻘِﻞُّ ﺍﻟﺮَّﻛَﻌَﺎﺕُ ﻭَﺑِﺎﻟْﻌَﻜْﺲِ ﻭَﺑِﺬَﻟِﻚَ ﺟَﺰَﻡَ ﺍﻟﺪَّﺍﻭُﺩِﻱُّ ﻭَﻏَﻴْﺮُﻩُ
ভাবার্থ: হাফিজুল হাদিস আল্লামা ইবনে হজর আসকালানী আলাইহির রহমত বলেন- এ সকল বর্ণনাগুলির মতানৈক্যের নিরসন বা সমাধান এভাবে হতে পারে। ১. ভিন্ন ভিন্ন অবস্থার প্রেক্ষিতে মতানৈক্যের সূচনা হয়েছে। ২. যে নামাযে লম্বা কিরআত পাঠ করা হতো, রাকআত কম হতো। ৩. আবার যে নামাযে কিরআত খাটো করা হতো, রাকআত বেশি হতো, ইমাম দাউদী ও অন্যান্য মুহাদ্দিসীনে কেরামগণ এভাবে রাকআত মতানৈক্যের নিরসন বা সমাধান ভাবার্থ: হাফিজুল হাদিস আল্লামা ইবনে হজর আসকালানী আলাইহির রহমত বলেন- এ সকল বর্ণনাগুলির মতানৈক্যের নিরসন বা সমাধান এভাবে হতে পারে। ১. ভিন্ন ভিন্ন অবস্থার প্রেক্ষিতে মতানৈক্যের সূচনা হয়েছে। ২. যে নামাযে লম্বা কিরআত পাঠ করা হতো, রাকআত কম হতো। ৩. আবার যে নামাযে কিরআত খাটো করা হতো, রাকআত বেশি হতো, ইমাম দাউদী ও অন্যান্য মুহাদ্দিসীনে কেরামগণ এভাবে রাকআত মতানৈক্যের নিরসন বা সমাধান দিয়েছেন।
ইমাম আসকালানী আলাইহির রহমত আরো বলেছেন- এগারো রাকআত, এগারো রাকআত থেকে বেশি, তেরো রাকআত ও একুশ রাকআত। সবগুলো রেওয়ায়েত বা বর্ণনাগুলোকে সহীহ-শুদ্ধ স্বীকার করে, এভাবে এর তাতবীক বা সমাধান দিয়েছেন। এগারো রাকআত ও তেরো রাকআত হলো তাহাজ্জুদ এর নামায। একুশ রাকআত এর মধ্যে বিশ রাকআত তারাবীহ এক রাকআত বিতির।
উল্লেখ্য যে, ২০ বিশ রাকআত তারাবীহ নামাযের উপর সকল সাহাবায়ে কেরামগণের ঐকমত্য বা ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
ﻟَﻜِﻦْ ﺃَﺟْﻤَﻊَ ﺍﻟﺼَّﺤَﺎﺑَﺔُ ﻋَﻠَﻰ ﺃَﻥَّ ﺍﻟﺘَّﺮَﺍﻭِﻳﺢَ ﻋِﺸْﺮُﻭﻥَ ﺭَﻛْﻌَﺔً
ﻣﺮﻗﺎﺓ ﺷﺮﺡ ﻣﺸﻜﻮﺓ : ﺟﻠﺪ 3 ﺹ 346: ﻣﻼ ﻋﻠﻰ ﻗﺎﺭﻯ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺮﺣﻤﺔ
ﻭَﻓِﻲ ﺍﺗِّﻔَﺎﻕِ ﺍﻟﺼَّﺤَﺎﺑَﺔِ - ﺭِﺿْﻮَﺍﻥُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ - ﻋَﻠَﻰ ﺗَﻘْﺪِﻳﺮِ ﺍﻟﺘَّﺮَﺍﻭِﻳﺢِ ﺑِﻌِﺸْﺮِﻳﻦَ ﺭَﻛْﻌَﺔً
ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﻤﺒﺴﻮﻁ ﺍﻟﺸﻤﺲ ﺍﻟﺪﻳﻦ ﺍﻟﺴﺮﺧﺴﻰ ﺟﺰﺀ ﺍﻻﻭﻝ ﺹ 156 -
দশ নং দলিলঃ
ঈমাম নববীর অভিমত
ﺍﻟﻤﺠﻤﻮﻉ ﺷﺮﺡ ﺍﻟﻤﻬﺬﺏ
(আলমাজমু শরহুল মুহাজ্জাব)
নামক কিতাবের পঞ্চম জিলদের ৪৬ পৃষ্ঠায় ইমাম নববী (বেলাদত ৬২১ হিজরি, ওফাত ৬৭৬ হিজরি) উল্লেখ করেন-
ﻭَﺍﺣْﺘَﺞَّ ﺃَﺻْﺤَﺎﺑُﻨَﺎ ﺑِﻤَﺎ ﺭَﻭَﺍﻩُ ﺍﻟْﺒَﻴْﻬَﻘِﻲُّ ﻭَﻏَﻴْﺮُﻩُ ﺑِﺎﻟْﺈِﺳْﻨَﺎﺩِ ﺍﻟﺼَّﺤِﻴﺢِ ﻋَﻦْ ﺍﻟﺴَّﺎﺋِﺐِ ﺑْﻦِ ﻳَﺰِﻳﺪَ ﺍﻟﺼَّﺤَﺎﺑِﻲِّ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﻗَﺎﻝَ " ﻛَﺎﻧُﻮﺍ ﻳَﻘُﻮﻣُﻮﻥَ ﻋَﻠَﻰ ﻋَﻬْﺪِ ﻋُﻤَﺮَ ﺑْﻦِ ﺍﻟْﺨَﻄَّﺎﺏِ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﻓِﻲ ﺷَﻬْﺮِ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﺑِﻌِﺸْﺮِﻳﻦَ ﺭﻛﻌﺔ
ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟْﺒَﻴْﻬَﻘِﻲُّ ﻳُﺠْﻤَﻊُ ﺑَﻴْﻦَ ﺍﻟﺮِّﻭَﺍﻳَﺘَﻴْﻦِ ﺑِﺄَﻧَّﻬُﻢْ ﻛَﺎﻧُﻮﺍ ﻳَﻘُﻮﻣُﻮﻥَ ﺑِﻌِﺸْﺮِﻳﻦَ ﺭَﻛْﻌَﺔً ﻭَﻳُﻮﺗِﺮُﻭﻥَ ﺑِﺜَﻠَﺎﺙٍ ﻭَﺭَﻭَﻯ ﺍﻟْﺒَﻴْﻬَﻘِﻲُّ ﻋَﻦْ ﻋَﻠِﻲٍّ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﺃَﻳْﻀًﺎ ﻗِﻴَﺎﻡَ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﺑِﻌِﺸْﺮِﻳﻦَ ﺭَﻛْﻌَﺔً
ভাবার্থ: ইমাম নববী আলাইহি রহমত বলেন- আমাদের আসহাব ইমামগণ হাফিজুল হাদিস ইমাম বায়হাকী ও অন্যান্য মুহাদ্দিসীনে কেরামগণ কর্তৃক সহীহ সনদে হযরত সাঈব ইবনে ইয়াজিদ সাহাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসের মাধ্যমে দলিল গ্রহণ করে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। (সাহাবায়ে কেরামগণের ভাষ্য)
আমরা সাহাবায়ে কেরামগণ ওমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু আনহু রাদিয়াল্লাহু আনহু এর খেলাফতকালে ২০ বিশ রাকআত তারাবীহ নামায পড়তাম।
ইমাম বায়হাকী বলেন- উভয় বর্ণনা দ্বারাই ২০ বিশ রাকআত তারাবীহ ও ৩ তিন রাকআত বিতির সাব্যস্থ হয়ে গেল। ইমাম নববী বলেন- ইমাম বায়হাকী হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু
থেকেও ২০ বিশ রাকআত তারাবীহসংক্রান্ত হাদিস বর্ণনা করেছেন।
মুদ্দাকথা হলো ইমাম বায়হাকী হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে ২০ বিশ রাকআত তারাবীহসংক্রান্ত দুইখানা হাদিস বর্ণনা করেছেন ভিন্ন সনদে।’
ইমাম নববী উক্ত কিতাবের ৪৫ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ করেন-
( ﻓَﺮْﻉٌ ‏) ﻓِﻲ ﻣَﺬَﺍﻫِﺐِ ﺍﻟْﻌُﻠَﻤَﺎﺀِ ﻓِﻲ ﻋَﺪَﺩِ ﺭَﻛَﻌَﺎﺕِ ﺍﻟﺘَّﺮَﺍﻭِﻳﺢِ ﻣَﺬْﻫَﺒُﻨَﺎ ﺃَﻧَّﻬَﺎ ﻋِﺸْﺮُﻭﻥَ ﺭَﻛْﻌَﺔً ﺑِﻌَﺸْﺮِ ﺗَﺴْﻠِﻴﻤَﺎﺕٍ ﻏَﻴْﺮَ ﺍﻟْﻮِﺗْﺮِ ﻭَﺫَﻟِﻚَ ﺧَﻤْﺲُ ﺗَﺮْﻭِﻳﺤَﺎﺕٍ ﻭَﺍﻟﺘَّﺮْﻭِﻳﺤَﺔُ ﺃَﺭْﺑَﻊُ ﺭَﻛَﻌَﺎﺕٍ ﺑِﺘَﺴْﻠِﻴﻤَﺘَﻲْﻥِ ﻫَﺬَﺍ ﻣَﺬْﻫَﺒُﻨَﺎ ﻭَﺑِﻪِ ﻗَﺎﻝَ ﺃَﺑُﻮ ﺣَﻨِﻴﻔَﺔَ ﻭَﺃَﺻْﺤَﺎﺑُﻪُ ﻭَﺃَﺣْﻤَﺪُ ﻭَﺩَﺍﻭُﺩ ﻭَﻏَﻴْﺮُﻫُﻢْ ﻭَﻧَﻘَﻠَﻪُ ﺍﻟْﻘَﺎﺿِﻲ ﻋِﻴَﺎﺽٌ ﻋَﻦْ ﺟُﻤْﻬُﻮﺭِ ﺍﻟْﻌُﻠَﻤَﺎﺀِ
ﺣﺎﺷﻴﻪ - ﻭَﺍﻟﺼَّﺤِﻴْﺢُ ﻗَﻮْﻝُ ﺍﻟْﻌَﺎﻣَّﺔِ ﻟِﻤَﺎ ﺭُﻭِﻯَ ﺍَﻥَّ ﻋُﻤَﺮَ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﺟَﻤَﻊَ ﺍَﺻْﺤَﺎﺏَ ﺭَﺳُﻮْﻝِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓِﻰْ ﺷَﻬْﺮِ ﺭَﻣْﻀَﺎﻥَ ﻋَﻠَﻰ ﺍُﺑَﻰْ ﺑِﻦْ ﻛَﻌْﺐٍ ﻓَﺼَﻠَّﻰ ﺑِﻬِﻢْ ﻓِﻰ ﻛُﻞِّ ﻟَﻴْﻠَﺔٍ ﻋِﺸْﺮِﻳْﻦَ ﺭَﻛْﻌَﺔً ﻭَﻟَﻢْ ﻳَﻨْﻜُﺮْ ﺍَﺣَﺪٌ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻓَﻴَﻜُﻮُﻥ ﺍِﺟْﻤَﺎﻋًﺎ ﻣِﻨْﻬُﻢْ ﻋَﻠَﻰ ﺫَﻟِﻚَ -
ভাবার্থ: ইমাম নববী বলেন- আমাদের মাযহাব হলো বিতির ব্যতীত দশ সালামের মাধ্যমে ২০ বিশ রাকআত তারাবীহ নামায। দশ সালামে পাঁচ তারাবীহ হয়। এক তারবিহাত হলো দুই সালামে চার রাকাত। এটাই হলো আমাদের মাযহাব। এর উপরই প্রতিষ্ঠিত ছিলেন ইমাম আবু হানিফা এবং তাঁর অনুসারি আসহাবগণ। ইমাম আহমদ ও দাউদসহ অন্যান্য উলামায়ে কেরামগণও এর উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন।
এগার নং দলিলঃ
আল্লামা কাজী আয়াজের অভিমত:
মুহাদ্দিসে আ’জম কাযী আয়াজ আলাইহির রহমত জমহুর উলামায়ে কেরামগণ থেকে এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
উক্ত শারহুল মুহাজ্জাব কিতাবের পার্শ্বটীকায় আরো উল্লেখ রয়েছে-
ﻭَﺍﻟﺼَّﺤِﻴْﺢُ ﻗَﻮْﻝُ ﺍﻟْﻌَﺎﻣَّﺔِ ﻟِﻤَﺎ ﺭُﻭِﻯَ ﺍَﻥَّ ﻋُﻤَﺮَ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﺟَﻤَﻊَ ﺍَﺻْﺤَﺎﺏَ ﺭَﺳُﻮْﻝِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓِﻰْ ﺷَﻬْﺮِ ﺭَﻣْﻀَﺎﻥَ ﻋَﻠَﻰ ﺍُﺑَﻰْ ﺑِﻦْ ﻛَﻌْﺐٍ ﻓَﺼَﻠَّﻰ ﺑِﻬِﻢْ ﻓِﻰ ﻛُﻞِّ ﻟَﻴْﻠَﺔٍ ﻋِﺸْﺮِﻳْﻦَ ﺭَﻛْﻌَﺔً ﻭَﻟَﻢْ ﻳَﻨْﻜُﺮْ ﺍَﺣَﺪٌ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻓَﻴَﻜُﻮُﻥ ﺍِﺟْﻤَﺎﻋًﺎ ﻣِﻨْﻬُﻢْ ﻋَﻠَﻰ ﺫَﻟِﻚَ -
ভাবার্থ- সকল উলামায়ে কেরামগণের অভিমতই সহীহ বা বিশুদ্ধ। যেহেতু হযরত ওমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু আনহু রমযান মাসে উবাই ইবনে কা’ব এর নেতৃত্বে সাহাবায়ে কেরামগণকে একত্রিত করালেন। উবাই ইবনে কা’ব সাহাবায়ে কেরামগণকে নিয়ে রমযানশরীফের প্রতিটি রাতে ২০ বিশ রাকআত তারাবীহ জামায়াতের সাথে আদায় করলেন। অথচ কেউই এই ইজমা বা ঐকমত্যকে অস্বীকার ভাবার্থ- সকল উলামায়ে কেরামগণের অভিমতই সহীহ বা বিশুদ্ধ। যেহেতু হযরত ওমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু আনহু রমযান মাসে উবাই ইবনে কা’ব এর নেতৃত্বে সাহাবায়ে কেরামগণকে একত্রিত করালেন। উবাই ইবনে কা’ব সাহাবায়ে কেরামগণকে নিয়ে রমযানশরীফের প্রতিটি রাতে ২০ বিশ রাকআত তারাবীহ জামায়াতের সাথে আদায় করলেন। অথচ কেউই এই ইজমা বা ঐকমত্যকে অস্বীকার করেন নি।
বার নং দলিলঃ
হাফিজুল হাদীছ আল্লামা শেখ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলবীর অভিমতঃ
পাকভারত ও বাংলা উপমহাদেশে যিনি কুরআন ও হাদিসের শিক্ষা সর্বপ্রথম নিয়মিতভাবে চালু করে ছিলেন, তিনি হচ্ছেন, একাদশ শতাব্দীর দশম মুজাদ্দিদ শায়খুল মুহাক্কিবক শেখ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী আলাইহির রহমত (বেলাদত ৯৫৮ হিজরি ওফাত ১০৫২ হিজরি) ‘মা সাবাতা মিনাস সুন্নাহ’ নামক কিতাবের ﺷﻬﺮ ﺭﻣﻀﺎﻥ ‘শাহরে রমযান’ অধ্যায়ে উল্লেখ করেন-
ﻋﻠﻢ ﺍﻧﻪ ﻗﺪ ﺍﺧﺘﻠﻒ ﺍﻟﻌﻠﻤﺎﺀ ﻓﻰ ﺍﻟﺘﺮﺍﻭﻳﺢ ﻫﻞ ﺗﺴﻤﻰ ﺳﻨﺔ ... ﻭﻗﺎﻝ ﺑﻌﻀﻬﻢ ﺗﺴﻤﻰ ﺳﻨﺔ ﻭﻫﻮ ﺍﻻﺻﺢ ﻭﻫﻰ ﺳﻨﺔ ﻣﺆﻛﺪﺓ ﻟﻠﺮﺟﺎﻝ ﻭﺍﻟﻨﺴﺎﺀ ﺗﻮﺍﺭﺛﻬﺎ ﺍﻟﺨﻠﻒ ﻋﻦ ﺍﻟﺴﻠﻒ -
ভাবার্থ: তারাবীহ নামায সম্পর্কে উলামায়ে কেরামদের মধ্যে মতভেদ থাকলেও সহিহ শুদ্ধ অভিমত হলো- তারাবীহ নামায সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ পুরুষ মহিলা সকলের জন্য। এ অভিমত সলফে সালেহীন থেকে চলে আসছে।
তিনি উক্ত কিতাবে আরো উল্লেখ করেন-
ﺍﻟﻔﺼﻞ ﺍﻻﻭﻝ ﻓﻰ ﻋﺪﺩ ﺭﻛﻌﺎﺗﻬﺎ -
ﻓﻌﻨﺪﻧﺎ ﻋﺸﺮﻭﻥ ﺭﻛﻌﺔ ﻟﻤﺎ ﺭﻭﻯ ﺍﻟﺒﻴﻬﻘﻰ ﺑﺎﺳﻨﺎﺩ ﺻﺤﻴﺢ ﺍﻧﻬﻢ ﻛﺎﻧﻮﺍ ﻳﻘﻮﻣﻮﻥ ﻋﻠﻰ ﻋﻬﺪ ﻋﻤﺮ ﺑﻌﺸﺮﻳﻦ ﺭﻛﻌﺔ ﻭﻓﻰ ﻋﻬﺪ ﻋﺜﻤﺎﻥ ﻭﻋﻠﻰ ﻣﺜﻠﻪ -
ভাবার্থ: শায়খুল মুহাক্কিকীন শেখ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী আলাইহির রহমত বলেন- হাফিজুল হাদিস ইমাম বায়হাকি আলাইহির রহমতের সহীহ বর্ণনার আলোকে আমরা মুহাদ্দিসীনে কেরামদের অভিমত হলো- তারাবীহ নামায ২০ বিশ রাকআত। কেননা সাহাবায়ে কেরামগণ হযরত ওমর ফারুক, হযরত উসমান, হযরত আলী রেদওয়ানুল্লাহি আলাইহিম আজমাঈনের যামানায় রমযান মাসে ২০ বিশ রাকআত তারাবীহ নামায আদায় করতেন।
তিনি (শেখ আব্দুল হক দেহলভী) আরো বলেন- আল্লাহর রাসূল বিশ রাকাত তারাবীহ নামায আদায় করেছেন বলে কোন সহীহ হাদিস নেই। কিন্তু সাহাবায়ে কেরামগণ ২০ বিশ রাকআত তারাবীহ আদায় করে আসছেন, হযরত ওমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু আনহু এর খেলাফতকালের শেষপ্রান্ত থেকে, তাঁরই নির্দেশে সকল সাহাবায়ে কেরামদের ঐকমত্যে সহীহ বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত আছে। এ পুস্তকের প্রথমাংশে দলিলসহ প্রমাণ করা হয়েছে।
অপরদিকে হাবিবে খোদা কত রাকআত তারাবীহ নামায আদায় করেছেন, এর সঠিক সংখ্যার কোন সহীহ বর্ণনা নেই। হাফিজুল হাদিস ইমাম সুবুকিসহ সকল মুহাদ্দিসীনগণ এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। অর্ধান্ধ ব্যক্তিবর্গ কিছু দেখে আবার অনেক কিছুই দেখতে পারে না।
হেদায়ার গ্রন্থাকারের অভিমত
তের নং দলিলঃ
শায়খুল ইসলাম বুরহানউদ্দিন আলী ইবনে আবু বকর আলাইহির রহমত ﺍﻟﻬﺪﺍﻳﺔ ‘আল হিদায়া’ নামক কিতাবের
ﻳﺴﺘﺤﺐ ﺃﻥ ﻳﺠﺘﻤﻊ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻓﻲ ﺷﻬﺮ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﺑﻌﺪ ﺍﻟﻌﺸﺎﺀ ﻓﻴﺼﻠﻲ ﺑﻬﻢ ﺇﻣﺎﻣﻬﻢ ﺧﻤﺲ ﺗﺮﻭﻳﺤﺎﺕ ﻛﻞ ﺗﺮﻭﻳﺤﺔ ﺑﺘﺴﻠﻴﻤﺘﻴﻦ ﻭﻳﺠﻠﺲ ﺑﻴﻦ ﻛﻞ ﺗﺮﻭﻳﺤﺘﻴﻦ ﻣﻘﺪﺍﺭ ﺗﺮﻭﻳﺤﺔ ﺛﻢ ﻳﻮﺗﺮ ﺑﻬﻢ " ﺫﻛﺮ ﻟﻔﻆ ﺍﻻﺳﺘﺤﺒﺎﺏ ﻭﺍﻷﺻﺢ ﺃﻧﻬﺎ ﺳﻨﺔ
ভাবার্থ: মুস্তাহাব এই যে, মুসল্লিয়ানে কেরাম রমযান মাসে এশার পরে একত্র হবে এবং ইমাম সাহেব তাদেরকে নিয়ে পাঁচ তারবিহা (অর্থাৎ চার চার রাকআত সালাত) পড়বেন। প্রতিটি তারবিহা (চার রাকাত) দুই সালামে হবে। এবং প্রতিটি তারবিহার পরে এক তারবিহা পরিমাণ বসবে। এরপর ইমাম সাহেব তাদেরকে নিয়ে বিতির পড়বেন। সহীহ-শুদ্ধ অভিমত হলো জামায়াতের সাথে তারাবীহ নামায আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা কিফায়া’
হেদায়া কিতাবের উপরোক্ত দলিলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো- তারাবিহ নামায ২০ বিশ রাকআত।
চৌদ্ধ নং দলিলঃ
আল্লামা বদরুদ্দীন আইনীর অভিমত
সহীহ বুখারীশরীফের ভাষ্যকার ইমাম আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী আলাইহির রহমত ওফাত ৮৫৫ হিজরি তদীয়
ﻋﻤﺪﺓ ﺍﻟﻘﺎﺭﻯ ﺷﺮﺡ ﺻﺤﻴﺢ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻯ ‘উমদাতুল ক্বারী শরহে সহীহীল বুখারী’ নামক কিতাবের ষষ্ট জিলদের ১২৭ পৃষ্ঠায় তারাবীহ অধ্যায়ে, তারাবীহ সংক্রান্ত হাদিসসমূহ পর্যালোচনা করে চুড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হয়ে উল্লেখ করেন-
ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟْﺄَﻋْﻤَﺶ : ﻛَﺎﻥَ ﻳُﺼَﻠِّﻲ ﻋﺸْﺮﻳﻦ ﺭَﻛْﻌَﺔ ﻭﻳﻮﺗﺮ ﺑِﺜَﻠَﺎﺙ ‏) .........
ﻭَﻗَﺎﻝَ ﺍﺑْﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟْﺒﺮ : ﻭَﻫُﻮَ ﻗَﻮﻝ ﺟُﻤْﻬُﻮﺭ ﺍﻟْﻌﻠﻤَﺎﺀ، ﻭَﺑِﻪ ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟْﻜُﻮﻓِﻴُّﻮﻥَ ﻭَﺍﻟﺸَّﺎﻓِﻌِﻲّ ﻭَﺃﻛْﺜﺮ ﺍﻟْﻔُﻘَﻬَﺎﺀ، ﻭَﻫُﻮَ ﺍﻟﺼَّﺤِﻴﺢ ﻋَﻦ ﺃﺑﻲ ﺑﻦ ﻛَﻌْﺐ ﻣﻦ ﻏﻴﺮ ﺧﻼﻑ ﻣﻦ ﺍﻟﺼَّﺤَﺎﺑَﺔ .
ভাবার্থ: আ’মাশ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন- সাহাবায়ে কেরামগণ ২০ বিশ রাকআত তারাবীহ নামায ও তিন রাকআত বিতির আদায় করতেন। ... এবং ইবনে আব্দুল বর বলেন- এ হলো জমহুর উলামাগণের অভিমত। এ অভিমতের সাথে ঐকমত্য পোষণ করেছেন, কুফার আলেমগণ, শাফেয়ী মাযহাবলম্বী আলেমগণ এবং অধিকাংশ ফুকাহায়ে কেরামগণ বা ইসলামী আইন বিশারদগণ। (আল্লামা আইনী বলেন) ২০ বিশ রাকআত তারাবীহ ও তিন রাকআত বিতির নামায হলো হযরত উবাই ইবনে কা’ব থেকে বর্ণিত সহীহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। সুতরাং সাহাবায়ে কেরামগণের মধ্যে কোন এখতেলাফ বা মতানৈক্য ছাড়াই ২০ বিশ রাকআত তারাবীহ ও তিন রাকাত বিতির প্রমাণিত।
আশ শায়খ ইমাম আল্লামা বদরুদ্দিন আইনী আলাইহির রহমত (ওফাত ৮৫৫ হিজরি) তদীয় ﺍﻟﺒﻨﺎﻳﺔ ﻓﻰ ﺷﺮﺡ ﺍﻟﻬﺪﺍﻳﺔ ‘আল বেনায়া শরহে হেদায়া’ নামক কিতাবের দ্বিতীয় জিলদের ২৬০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন-
ﻭﺍﺣﺘﺞ ﺍﻷﺻﺤﺎﺏ ﻭﺍﻟﺸﺎﻓﻌﻴﺔ ﻭﺍﻟﺤﻨﺎﺑﻠﺔ ﺑﻤﺬﻫﺒﻬﻢ ﺑﻤﺎ ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﻴﻬﻘﻲ ﺑﺈﺳﻨﺎﺩ ﺻﺤﻴﺢ ﻋﻦ ﺍﻟﺴﺎﺋﺐ ﺑﻦ ﻳﺰﻳﺪ ﺍﻟﺼﺤﺎﺑﻲ ﻗﺎﻝ ﻛﺎﻧﻮﺍ ﻳﻘﻮﻣﻮﻥ ﻋﻠﻰ ﻋﻬﺪ ﻋﻤﺮ - ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻪُ - ﺑﻌﺸﺮﻳﻦ ﺭﻛﻌﺔ، ﻭﻋﻠﻰ ﻋﻬﺪ ﻋﺜﻤﺎﻥ ﻭﻋﻠﻲ - ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻬُﻤَﺎ - ﻣﺜﻞ . ﻭﻓﻲ " ﺍﻟﻤﻐﻨﻲ " ﻋﻦ ﻋﻠﻲ - ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻪُ - ﺃﻧﻪ ﺃﻣﺮ ﺭﺟﻼ ﺃﻥ ﻳﺼﻠﻲ ﺑﻬﻢ ﻓﻲ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﺑﻌﺸﺮﻳﻦ ﺭﻛﻌﺔ ﻗﺎﻝ ﻭﻫﺬﺍ ﻛﺎﻹﺟﻤﺎﻉ .
ভাবার্থ: শাফেয়ী মাযহাবলম্বী উলামায়ে কেরামগণ (তাদের মাযহাবের সিদ্ধান্ত ২০ বিশ রাকআত তারাবীহ) দলিল উপস্থাপনা করলেন, হাফিজুল হাদিস ইমাম বায়হাকী সহীহ সনদে সাঈব ইবনে ইয়াজিদ সাহাবী কর্তৃক বর্ণিত হাদিসখানা দ্বারা। সাঈব ইবনে ইয়াজিদ সাহাবি বলেন- সাহাবায়ে কেরামগণ হযরত ওমর ফারুক এর খেলাফতকালে ২০ বিশ রাকআত তারাবীহ নামায আদায় করতেন। এভাবে হযরত উসমান, হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুমার যামানায়ও সাহাবায়ে কেরামগণ ২০ বিশ রাকআত তারাবীহ নামায আদায় করতেন বলেও সহীহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত আছে। তিনি আরো বলেন- ইহা ইজমার অনুরূপ।
ইবনে কুদামার অভিমত
পনের নং দলিলঃ
হাম্বলী মাযহাবের ফকিহ বা ইসলামী আইন বিশারদ ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনে আহমদ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে কুদামা মুকাদ্দাসী তদীয় ‘আল মুগনী’ নামক কিতাবের দ্বিতীয় জিলদের ﺻﻼﺓ ﺍﻟﺘﺮﺍﻭﻳﺢ ‘সালাতুত তারাবিহ’ অধ্যায়ে ৩৯৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন-
ﻣَﺴْﺄَﻟَﺔٌ : ﻗَﺎﻝَ ‏( ﻭَﻗِﻴَﺎﻡُ ﺷَﻬْﺮِ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﻋِﺸْﺮُﻭﻥَ ﺭَﻛْﻌَﺔً ‏) . ‏( ﻳَﻌْﻨِﻲ ‏)
‏( ﺻَﻠَﺎﺓَ ﺍﻟﺘَّﺮَﺍﻭِﻳﺢِ ‏) ﻭَﻫِﻲَ ﺳُﻨَّﺔٌ ﻣُﺆَﻛَّﺪَﺓٌ، ﺍﻟﺦ
ভাবার্থ: তারাবীহ নামায ২০ বিশ রাকআত এবং ইহা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ।
উক্ত কিতাবের ৩৯৬ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ রয়েছে-
ﻭَﻟَﻨَﺎ، ﺃَﻥَّ ﻋُﻤَﺮَ، - ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻪُ - ﻟَﻤَّﺎ ﺟَﻤَﻊَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ ﻋَﻠَﻰ ﺃُﺑَﻲِّ ﺑْﻦِ ﻛَﻌْﺐٍ، ﻭَﻛَﺎﻥَ ﻳُﺼَﻠِّﻲ ﻟَﻬُﻢْ ﻋِﺸْﺮِﻳﻦَ ﺭَﻛْﻌَﺔً، ﻭَﻗَﺪْ ﺭَﻭَﻯ ﺍﻟْﺤَﺴَﻦُ ﺃَﻥَّ ﻋُﻤَﺮَ ﺟَﻤَﻊَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ ﻋَﻠَﻰ ﺃُﺑَﻲِّ ﺑْﻦِ ﻛَﻌْﺐٍ، ﻓَﻜَﺎﻥَ ﻳُﺼَﻠِّﻲ ﻟَﻬُﻢْ ﻋِﺸْﺮِﻳﻦَ ﻟَﻴْﻠَﺔً ... ﻭَﺭَﻭَﻯ ﻣَﺎﻟِﻚٌ، ﻋَﻦْ ﻳَﺰِﻳﺪَ ﺑْﻦِ ﺭُﻭﻣَﺎﻥَ، ﻗَﺎﻝَ : ﻛَﺎﻥَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﻳَﻘُﻮﻣُﻮﻥَ ﻓِﻲ ﺯَﻣَﻦِ ﻋُﻤَﺮَ ﻓِﻲ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﺑِﺜَﻠَﺎﺙٍ ﻭَﻋِﺸْﺮِﻳﻦَ ﺭَﻛْﻌَﺔً . ﻭَﻋَﻦْ ﻋَﻠِﻲٍّ، ﺃَﻧَّﻪُ ﺃَﻣَﺮَ ﺭَﺟُﻠًﺎ ﻳُﺼَﻠِّﻲ ﺑِﻬِﻢْ ﻓِﻲ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﻋِﺸْﺮِﻳﻦَ ﺭَﻛْﻌَﺔً . ﻭَﻫَﺬَﺍ ﻛَﺎﻟْﺈِﺟْﻤَﺎﻉِ
ভাবার্থ: (ইবনে কুদামা মুকাদ্দাসী বলেন) তারাবীহ নামায ২০ বিশ রাকআত আমাদের দলিল হলো- হযরত ওমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন উবাই ইবনে কা’ব এর নেতৃত্বে সাহাবায়ে কেরামগণকে একত্রিত করালেন, উবাই ইবনে কা’ব সাহাবায়ে কেরামগণকে নিয়ে ২০ বিশ রাকআত তারাবীহ নামায ভাবার্থ: (ইবনে কুদামা মুকাদ্দাসী বলেন) তারাবীহ নামায ২০ বিশ রাকআত আমাদের দলিল হলো- হযরত ওমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন উবাই ইবনে কা’ব এর নেতৃত্বে সাহাবায়ে কেরামগণকে একত্রিত করালেন, উবাই ইবনে কা’ব সাহাবায়ে কেরামগণকে নিয়ে ২০ বিশ রাকআত তারাবীহ নামায পড়ালেন।
ষোল নং দলিলঃ
হযরত ইমাম হাসান রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন- হযরত ওমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু আনহু উবাই ইবনে কা’ব এর নেতৃত্বে সাহাবায়ে কেরামগণকে একত্রিত করালেন। অতঃপর উবাই ইবনে কা’ব সাহাবায়ে কেরামগণকে নিয়ে ২০ বিশ রাকআত তারাবীহ নামায আদায় হযরত হাসান রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন- হযরত ওমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু আনহু উবাই ইবনে কা’ব এর নেতৃত্বে সাহাবায়ে কেরামগণকে একত্রিত করালেন। অতঃপর উবাই ইবনে কা’ব সাহাবায়ে কেরামগণকে নিয়ে ২০ বিশ রাকআত তারাবীহ নামায আদায় করলেন।
সতের নং দলিলঃ
ইমাম মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু ইয়াজিদ ইবনে রোমান থেকে বর্ণনা করেন- হযরত ওমর ফারুক এর যামানায় সাহাবায়ে কেরামগণ ২০ বিশ রাকআত তারাবীহ নামায পড়তেন। (এ বর্ণনা মুরসাল রাবি যেহেতু ছেকা এবং সহীহ হাদিসের পরিপন্থী নয়, তাই এ মুরসাল হাদিস দলিলরূপে গণ্য এতে কোন সন্দেহ থাকতে পারে না)
হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি (হযরত আলী) সাহাবায়ে কেরামদের মধ্য থেকে একজন সাহাবীকে রমযান মাসে ২০ বিশ রাকআত তারাবীহ নামায জামায়াতের সাথে আদায় করার নির্দেশ দিলেন। এ থেকে ২০ বিশ রাকআত তারাবীহ নামায সকল সাহাবায়ে কেরামদের ঐকমত্যে ইজমার মধ্যে পরিগণিত হয়ে গেল।’
আঠারো নং দলিলঃ
ইমাম তিরমিজির অভিমত
মুহাম্মদ ইবনে ঈসা ইবনে সাওরা ইবনে মুসা ইবনে যিহাক সালমী বুগী তিরমিজি (ইমাম তিরমিজি আলাইহি রহমত ২৭৯ হিজরিতে ইন্তিকাল করেন) তিনি ﺳﻨﻦ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻯ সুনানে তিরমিজি’ নামক কিতাবের তৃতীয় জিলদের ১০৩ পৃষ্ঠায়
ﺩﺍﺭ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﺍﻟﻘﺎﻫﺮﺓ হাদিস নম্বর ৮০৬)
ﺑﺎﺏ ﻣﺎ ﺟﺎﺀ ﻓﻰ ﻗﻴﺎﻡ ﺭﻣﻀﺎﻥ
কিয়ামে রমযান বা তারাবীহ নামাযের রাকআত সংখ্যার অধ্যায়ে উল্লেখ করেন-
ﻭﺍﺧﺘﻠﻒ ﺍﻫﻞ ﺍﻟﻌﻠﻢ ﻓﻰ ﻗﻴﺎﻡ ﺭﻣﻀﺎﻥ
(রমযানশরীফে, তারাবীহ রাকআত সংখ্যার ব্যাপারে মতানৈক্য করেছেন আহলে ইলিম বা ইলমে হাদিসের পারদর্শী ব্যক্তিগণ-
ﻓَﺮَﺃَﻯ ﺑَﻌْﻀُﻬُﻢْ : ﺃَﻥْ ﻳُﺼَﻠِّﻲَ ﺇِﺣْﺪَﻯ ﻭَﺃَﺭْﺑَﻌِﻴﻦَ ﺭَﻛْﻌَﺔً ﻣَﻊَ ﺍﻟﻮِﺗْﺮِ، ﻭَﻫُﻮَ ﻗَﻮْﻝُ ﺃَﻫْﻞِ ﺍﻟﻤَﺪِﻳﻨَﺔِ، ﻭَﺍﻟﻌَﻤَﻞُ ﻋَﻠَﻰ ﻫَﺬَﺍ ﻋِﻨْﺪَﻫُﻢْ ﺑِﺎﻟﻤَﺪِﻳﻨَﺔِ ،
(ইমাম তিরমিজি বলেন) বিজ্ঞ উলামায়ে কেরামদের মধ্য থেকে কিছুসংখ্যাক উলামায়ে কেরামদের অভিমত হলো, বিতিরসহ ৪১ একচল্লিশ রাকআত তারাবীহ নামায আদায় করার আমল এ অভিমত হলো মদীনাবাসীদের। (এ হলো হযরত ওমর ফারুক এর খেলাফতে অধিষ্টিত হওয়ার পূর্বের কথা) এরপর ইমাম তিরমিজি আরো উল্লেখ করেন-
ﻭَﺃَﻛْﺜَﺮُ ﺃَﻫْﻞِ ﺍﻟﻌِﻠْﻢِ ﻋَﻠَﻰ ﻣَﺎ ﺭُﻭِﻱَ ﻋَﻦْ ﻋُﻤَﺮَ، ﻭَﻋَﻠِﻲٍّ، ﻭَﻏَﻴْﺮِﻫِﻤَﺎ ﻣِﻦْ ﺃَﺻْﺤَﺎﺏِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻋِﺸْﺮِﻳﻦَ ﺭَﻛْﻌَﺔً، ﻭَﻫُﻮَ ﻗَﻮْﻝُ ﺍﻟﺜَّﻮْﺭِﻱِّ، ﻭَﺍﺑْﻦِ ﺍﻟﻤُﺒَﺎﺭَﻙِ، ﻭَﺍﻟﺸَّﺎﻓِﻌِﻲِّ
অধিকাংশ আহলে ইলিম অর্থাৎ অভিজ্ঞ উলামায়ে কেরামগণের অভিমত হলো- হযরত ওমর, হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুম ও অন্যান্য সাহাবায়ে কেরাম থেকে সহীহ সনদসূত্রে বর্ণিত রয়েছে, তারাবীহ নামায হচ্ছে ২০ বিশ রাকআত।
এ হলো হযরত ছাওরী, হযরত ইবনে মোবারক ও ইমাম শাফেয়ী আলাইহির রহমত সকল উলামাগণের অভিমত। (হযরত ওমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু আনহু খেলাফতের মসনদে অধিষ্ঠিত হওয়ার পরের কথা, হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর নির্দেশে সাহাবায়ে কেরামগণের ঐকমত্যে জামায়াতের সাথে নিয়মিতভাবে ২০ বিশ রাকআত তারাবীহ প্রচলন হয়ে চলতে থাকে, তখনকার কথা)
উপরোক্ত দলিলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো, সিহাহ সিত্তাহ কিতাবের মধ্যে অন্যতম হাদিসের কিতাব ﺳﻨﻦ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻯ সুনানে তিরমিজি’ এর মধ্যেও ২০ রাকআত তারাবীহ নামাযের উল্লেখ রয়েছে। এতদভিন্ন অন্যান্য হাদিসের কিতাবেও সহীহ সনদে এর ভুরি ভুরি প্রমাণ রয়েছে, যা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।
উনিশ নং দলিলঃ
আব্দুল হাই লাখনবী সাহেবের অভিমত
আল্লামা আবুল হাসানাত আব্দুল হাই লাখনবী সাহেব (বেলাদত ১২৬৪ হিজরি) ‘হাশিয়ায়ে শরহে বেকায়া উমদাতুর রেয়ায়া’ নামক কিতাবের প্রথম জিলদের ১৫৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন-
ﻧَﻌَﻢْ ﺛَﺒَﺖَ ﺍِﻫْﺘِﻤَﺎﻡِ ﺍﻟﺼَّﺤَﺎﺑَﺔِ ﻋَﻠَﻰ ﻋِﺸْﺮِﻳْﻦَ ﻓِﻰ ﻋَﻬْﺪِ ﻋُﻤَﺮَ ﻭَﻋُﺜْﻤَﺎِﻥ ﻭَﻋَﻠَﻰ ﺭِﺿْﻮَﺍﻥِ ﺍﻟﻠﻪِ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﺍَﺟْﻤَﻌِﻴْﻦَ ﻓَﻤِﻦْ ﺑَﻌْﺪِﻫِﻢْ ﺍَﺧْﺮَﺟَﻪُ ﻣَﺎِﻟﻚٍ ﻭَﺍِﺑْﻦِ ﺳَﻌْﺪٍ ﻭَﺍﻟْﺒَﻴْﻬَﻘِﻰ ﻭﻏَﻴْﺮِﻫِﻢْ ﻭَﻣَﺎ ﻭﺍﻇﺒﺖ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟْﺨُﻠَﻔَﺎﺀُ ﻓِﻌْﻼً ﺍَﻭْ ﺗَﺸْﺮِﻳْﻌًﺎ ﺍَﻳْﻀًﺎ ﺳُﻨَّﺔٌ ﻟِﺤَﺪِﻳْﺚٍ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﺑِﺴُﻨَّﺘِﻰ ﻭَﺳُﻨَّﺔِ ﺍﻟْﺨُﻠَﻔَﺎﺀِ ﺍﻟﺮَّﺍﺷِﺪِﻳْﻦ ﺍﺧﺮﺟﻪ ﺍﺑﻮ ﺩﺍﺅﺩ ﻭﻏﻴﺮﻩ -
ভাবার্থ: হযরত ওমর ফারুক, হযরত উসমানগণী জিননুরাইন ও হযরত আলী কাররামাহুল্লাহ ওয়াজহাহু রেদওয়ানুল্লাহি আলাইহিম আজমাঈন, এ তিন স্বর্ণযুগে সাহাবায়ে কেরামগণের ঐক্যমতে ২০ বিশ রাকআত তারাবীহ নামায এর প্রচলন অনুষ্ঠিত হয়। অতঃপর সাহাবায়ে কেরাম হতে তাবেঈন ও তাবয়ে তাবেঈন হয়ে আজ পর্যন্ত এ পদ্ধতি অর্থাৎ ২০ বিশ রাকআত তারাবীহ নামাযের প্রচলন চলে আসছে। ইমাম মালেক, ইমাম সা’দ ও ইমাম বায়হাকীসহ মুহাদ্দিসীনগণ আল্লাহর হাবিবের ঐ হাদিসের প্রেক্ষাপটে ২০ বিশ রাকআত তারাবীহ নামায সুন্নত হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। হাদিসখানা হলো হাবিবে খোদার নূরানী ফরমান-
ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﺑِﺴُﻨَّﺘِﻰ ﻭَﺳُﻨَّﺔِ ﺍﻟْﺨُﻠَﻔَﺎﺀِ ﺍﻟﺮَّﺍﺷِﺪِﻳْﻦ
আমার সুন্নাত ও আমার খোলাফায়ে রাশেদীনদের সুন্নত তোমরা আঁকড়িয়ে ধর। (আবু দাউদশরীফ)
আল্লামা আব্দুল হাই লাখনভী সাহেব তদীয় ﻣﺠﻤﻮﻋﻪ ﻓﺘﺎﻭﻯ ‘মজমুয়ায়ে ফাতাওয়া’ নামক কিতাবের তৃতীয় জিলদের ৫৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন-
ﺳﻮﺍﻝ - ﺣﻨﻔﯿﮧ ﺑﺴﺖ ﺭﮐﻌﺖ ﺗﺮﺍﻭﯾﺢ ﺳﻮﺍﮰ ﻭﺗﺮﻣﯿﺨﻮﺍﻧﻨﺪ ﻭﺩﺭ ﺣﺪﯾﺚ ﺻﺤﯿﺢ ﺍﺯ ﻋﺎﺋﺸﮧ ﺻﺪﯾﻘﮧ ﺭﺿﯽ ﺍﻟﻠﮧ ﻋﻨﮩﺎ ﻭﺍﺭﺷﺪﮦ ﻣﺎ ﻛﺎﻥ ﻳﺰﻳﺪ ﻓﻰ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻭﻻ ﻓﻰ ﻏﻴﺮﻩ ﻋﻠﻰ ﺍﺣﺪﻯ ﻋﺸﺮﺓ ﺭﻛﻌﺔ ﭘﺲ ﺳﻨﺪ ﺑﺴﺖ ﺭﮐﻌﺖ ﭼﯿﺴﺖ؟
ভাবার্থ: প্রশ্ন: হানাফী মাযহাব অনুযায়ী বিতির ছাড়া তারাবীহ নামায কত রাকআত?
হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে সহীহ সনদ সূত্রে হাদিস বর্ণিত আছে-
ﻣَﺎ ﻛَﺎﻥَ ﻳَﺰِﻳﺪُ ﻓِﻲ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﻭَﻻَ ﻓِﻲ ﻏَﻴْﺮِﻩِ ﻋَﻠَﻰ ﺇِﺣْﺪَﻯ ﻋَﺸْﺮَﺓَ ﺭَﻛْﻌَﺔً
হযরত আয়েশা সিদ্দিকা বলেন- হাবিবে খোদা রমযান ও রমযান ছাড়া অন্যান্য মাসে শুধুমাত্র ১১ এগারো রাকআত সালাত আদায় করতেন এর বেশি নয়।
ﺟﻮﺍﺏ - ﺭﻭﺍﻳﺖ ﻋﺎﺋﺸۃ ﺻﺪﯾﻘﮧ ﺭﺿﯽ ﺍﻟﻠﮧ ﻋﻨﮩﺎ ﻣﺤﻤﻮﻝ ﺑﺮﻧﻤﺎﺯ ﺗﮩﺠﺪﺳﺖ ﮐﮧ ﺩﺭ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻭﻏﯿﺮ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﯾﮑﺴﺎﻥ ﺑﻮﺩ ﻭﻏﺎﻟﺒﺎ ﺑﻌﺪ ﻭﺯﯾﺎﺩﮦ ﺭﮐﻌﺖ ﻣﻊ ﺍﻟﻮﺗﺮ ﻣﯿﺮﺳﯿﺪ ۔۔۔
ﻭﻧﻤﺎﺯ ﺗﺮﺍﻭﯾﺢ ﺭﺍﺩﺭ ﻋﺮﻑ ﺁﮞ ﻭﻗﺖ ﻗﯿﺎﻡ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻣﯿﮕﻔﺘﻨﺪ ﻭﺩﺭ ﺻﺤﺎﺡ ﺳﺘﮧ ﺑﺮﻭﺍﯾﺎﺕ ﺻﺤﯿﺤﮧ ﻣﺮﻓﻮﻋﮧ ﺍﻟﯽ ﺍﻟﻨﺒﯽ ﺻﻠﯽ ﺍﻟﻠﮧ ﻋﻠﯿﮧ ﻭﺳﻠﻢ ﺗﻌﯿﻦ ﻋﺪﺩ ﻗﯿﺎﻡ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻣﺼﺮﺡ ﻧﺸﺪﮦ ﺍﯾﻨﻘﺪﺭ ﮬﺴﺖ ﮐﮧ ﻗﺎﻟﺖ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﻛﺎﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﺠﺘﻬﺪ ﻓﻰ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﺑﺎﻥ ﻳﺠﺘﻬﺪ ﻓﻰ ﻏﻴﺮﻩ ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ ...
ﻭﺭﻭﻯ ﺍﻟﺒﻴﻬﻘﻰ ﻓﻰ ﺳﻨﻨﻪ ﺑﺎﺳﻨﺎﺩ ﺻﺤﻴﺢ ﻋﻦ ﺍﻟﺴﺎﺋﺐ ﺑﻦ ﻳﺰﻳﺪ ﻗﺎﻝ ﻛﺎﻧﻮﺍ ﻳﻘﻮﻣﻮﻥ ﻋﻠﻰ ﻋﻬﺪ ﻋﻤﺮ ﺑﻦ ﺍﻟﺨﻄﺎﺏ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻓﻰ ﺷﻬﺮ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﺑﻌﺸﺮﻳﻦ ﺭﻛﻌﺔ -
জওয়াব
হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে ১১ এগারো রাকআত এর যে বর্ণনা রয়েছে, তা হলো তাহাজ্জুদের নামায। তাহাজ্জুদ নামায রমযান ও গয়র রমযান সব মাসেই একই ধরনের আদায় করতে হয় এর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। সম্ভবত: বিতির নামাযের সংখ্যা কম বেশি হতে পারে।
অপরদিকে ‘তারাবীহ নামায’ শরিয়তের পরিভাষায় ‘কিয়ামে রমযান’ বা শুধু রমযান মাসেই আদায় করতে হয়।
হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রাদিয়াল্লাহু আনহার বর্ণনা দ্বারা পাওয়া যায় হাবিবে খোদা রমযান ও গয়র রমযান মাসে তাহাজ্জুদ নামায আদায় করেছেন। (মুসলিম শরীফ)
বিশ নং দলিলঃ
হাফিজুল হাদিস ইমাম বায়হাকী ‘সুনানে কুবরা’ নামক কিতাবে সাঈব ইবনে ইয়াজিদ সাহাবী থেকে সহীহ সনদের বর্ণনার দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত, সাঈব ইবনে ইয়াজিদ বলেন- সাহাবায়ে কেরামগণ হযরত ওমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু আনহু এর খেলাফতকালে ২০ বিশ রাকআত তারাবীহ নামায আদায় করতেন।
এ হলো আব্দুল হাই লাখনভী সাহেবের দলিলভিত্তিক বক্তব্য।
একুশ নং দলিলঃ
হাফেজে হাদীছ আল্লামা হযরত আনোয়ার শাহ্ কাশ্মেরীর অভিমতঃ
আনোয়ার শাহ কাশ্মিরী সাহেব ‘ফয়জুলবারি শরহে বুখারি’ তৃতীয় জিল্দ ১৮১ পৃষ্ঠায় ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺼﻮﻡ ‘কিতাবুস সউম’ ﻓﻀﻞ ﻣﻦ ﻗﺎﻡ ﺭﻣﻀﺎﻥ ‘ফাদ্বলু মান কামা রমযান’ কিয়ামে রমযান বা রমযানশরীফে তারাবীহ নামায আদায়ের ফজিলত অধ্যায়ে উল্লেখ করেন-
ﻭﺛَﺒَﺖَ ﻋﻦ ﻋَﻠِﻲٍّ ﺃﻧﻪ ﺃﻡَّ ﺑﺎﻟﻜﻮﻓﺔ ﻓﻲ ﺍﻟﺘﺮﺍﻭﻳﺢ . ﻭﺃﻣَّﺎ ﻋﺪﺩُ ﺭﻛﻌﺎﺕ ﺍﻟﺘﺮﺍﻭﻳﺢ، ﻓﻘﺪ ﺟﺎﺀ ﻋﻦ ﻋﻤﺮ ﻋﻠﻰ ﺃﻧﺤﺎﺀٍ، ﻭﺍﺳﺘﻘﺮَّ ﺍﻷﻣﺮ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻌﺸﺮﻳﻦ ﻣﻊ ﺛﻼﺙ ﺍﻟﻮﺗﺮ
ভাবার্থ: আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মিরী বলেন- হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে প্রমাণিত আছে, তিনি (হযরত আলী) কুফা শহরে তারাবীহ নামাযের ইমামতি করেছেন এবং হযরত ওমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে তারাবীহ নামায এর রাকআত সংখ্যা সর্ব শেষে যা নির্ধারিত হয়েছিল, তা ছিল ২০ বিশ রাকআত তারাবীহ ও ৩ তিন রাকআত বিতির নামায আদায় করেছেন।
অতএব ২০ রাকআত তারাবীহ ও ৩ রাকআত বিতির সুন্নতে সাহাবা প্রমাণিত হলো।’
উক্ত কিতাবের (ফয়জুল বারি শরহে বুখারী) তৃতীয় খ- ১৮১ পৃষ্ঠা দুইনম্বর পার্শ্বটীকা ‘হাশিয়ায়ে বদরুস সারী’ উল্লেখ রয়েছে-
ﻗﻠﺖُ : ﻗﺎﻝ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱُّ : ﺍﺧﺘﻠﻒ ﺃﻫﻞُ ﺍﻟْﻌِﻠْﻢِ ﻓِﻲ ﻗِﻴَﺎﻡِ ﺭَﻣْﻀَﺎﻥَ، ﻓَﺮَﺃﻯ ﺑَﻌْﻀُﻬُﻢْ ﺃﻥ ﻳُﺼَﻠِّﻲَ ﺇﺣﺪﻯ ﻭﺃﺭﺑَﻌِﻴْﻦَ ﺭَﻛْﻌَﺔً ﻣَﻊ ﺍﻟْﻮَﺗْﺮِ، ﻭَﻫُﻮ ﻗَﻮْﻝُ ﺃﻫْﻞِ ﺍﻟْﻤَﺪِﻳْﻨَﺔِ، ﻭَﺃﻛْﺜَﺮُ ﺃﻫْﻞِ ﺍﻟْﻌِﻠْﻢِ ﻋَﻠﻰ ﻣَﺎ ﺭُﻭِﻱ ﻋَﻦْ ﻋَﻠِﻲٍّ، ﻭَﻋُﻤَﺮَ، ﻭَﻏَﻴْﺮِﻫِﻤَﺎ ﻣِﻦْ ﺃﺻْﺤَﺎﺏِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﻋَﺸْﺮِﻳْﻦَ ﺭﻛﻌﺔً، ﻭَﻫَﻮَ ﻗَﻮْﻝُ ﺳُﻔْﻴَﺎﻥَ ﺍﻟﺜَّﻮْﺭِﻱ، ﻭَﺍَﺑْﻦُ ﺍﻟْﻤُﺒَﺎﺭَﻙِ، ﻭﺍﻟﺸَّﺎﻓِﻌﻲ؛ ﻭَﻗَﺎﻝَ ﺍﻟﺸَّﺎﻓِﻌِﻲ : ﻫﻜَﺬﺍَ ﺃﺩْﺭَﻛْﺖُ ﺑِﺒَﻠَﺪِﻧَﺎ ﺑِﻤَﻜَّﺔَ ﻳُﺼَﻠُّﻮﻥَ = ﻋِﺸْﺮِﻳْﻦَ ﺭﻛَﻌْﺔًَ، ﻭﻗَﺎﻝَ ﺃﺣْﻤَﺪُ : ﺭَﻭَﻱ ﻓِﻲ ﻫَﺬَﺍ ﺃﻟْﻮَﺍﻥٌ ﻟَﻢْ ﺗﻘﺾِ ﻓِﻴْﻪ ﺑِﺸﻲﺀٍ . ﻭَﻗَﺎﻝَ ﺇﺳْﺤَﺎﻕَ : ﺑَﻞْ ﻧَﺨْﺘَﺎﺭُ ﺇﺣْﺪَﻯ ﻭَّﺃﺭْﺑَﻌِﻴْﻦَ ﺭﻛﻌﺔً ﻋَﻠﻰ ﻣَﺎ ﺭُﻭِﻱ ﻋَﻦْ ﺃﺑﻲِّ ﺑِﻦْ ﻛﻌﺐٍ . ﺍﻫـ .
ﻭﺗﺒﻴَّﻦ ﻣﻦ ﻫﺬﺍ ﻣﺎ ﻛﺎﻥ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﻌﻤﻞُ ﻓﻲ ﺍﻟﺤﺮﻣﻴﻦ ﺍﻟﺸﺮﻳﻔﻴﻦ، ﻭﻣﺎ ﻛﺎﻥ ﻣﺬﻫﺐُ ﺍﻟﺴﻠﻒ ﺍﻟﺼﺎﻟﺤﻴﻦ . ﻓَﻠﻴُﺼَﻞ ﺍﻟﻤﺪَّﻋُﻮﻥ ﺑﺎﻟﻌﻤﻞ ﺑﺎﻟﺤﺪﻳﺚ ﺛﻤﺎﻧﻴﺔً ﺃﻭ ﺩﻭﻧﻬﺎ، ﻓﺈﻥ ﺃﻛﺜﺮَ ﺍﻟﺼﺤﺎﺑﺔ ﻟﻢ ﻳُﺼَﻠَّﻮﺍ ﺇﻟَّﺎ ﻋﺸﺮﻳﻦ ﺭﻛﻌﺔ . ﻓﻬﻢ ﺍﻟﻌُﻤﺪَﺓُ، ﻭﺑﻬﻢ ﺍﻟﻘُﺪﻭَﺓُ - ﺍﻟﺦ
ভাবার্থ আমি (হাশিয়ায়ে বদরুস সারী) বলছি, ইমাম তিরমিজি আলাইহির রহমত বর্ণনা করেন- কিয়ামে রমযান বা তারাবীহ নামাযের সংখ্যা নিয়ে মুহাদ্দিসগণের মধ্যে এখতেলাফ বা মতানৈক্য রয়েছে। কিছু সংখ্যক এর অভিমত হলো, বিতিরসহ তারাবীহ নামায একচল্লিশ রাকআত, এ হলো মদিনাবাসীদের অভিমত।
অপরদিকে হযরত আলী, হযরত ওমরসহ অধিকাংশ সাহাবায়ে কেরামগণের মতামত ও আমল হলো ২০ বিশ রাকআত তারাবীহ। সুফিয়ান সওরি, ইবনে মোবারক ও ইমাম শাফেয়ী আলাইহির রহমত এ অভিমতকে সমর্থন করেছেন৷
অতএব শুধু নবীজীর সুন্নত পালন করার নামই আহলে সুন্নত নহে বরং নবীজীর সুন্নতের সাথে খোলাফায়ে রাশিদ্বীনের সুন্নতের আমল করার নামই আহলে সুন্নত৷অর্থাৎ নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং খোলাফায়ে রাশিদ্বীনের সুন্নত মানার নামই আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআত৷যেমন প্রসঙ্গক্রমে নবীজী এরশাদ করেন, ﻋﻠﻴﻜﻢ ﺑﺴﻨﺘﻲ ﻭﺳﻨﺔ ﺍﻟﺨﻠﻔﺎﺀ ﺍﻟﺮﺍﺷﺪﻳﻦ ﺍﻟﻤﻬﺪﻳﻴﻦ . অর্থাৎ হে উম্মতগন! তোমরা আমার সুন্নত এবং আমার খোলাফায়ে রাশিদ্বীন তথা (1) হযরত আবুবকর সিদ্দিক (রাঃ),(2)হযরত ওমর বিন খাত্তাব (রাঃ),(3) হযরত ওসমান জিন্নুরাইন (রাঃ) ও (4) হযরত আলী বিন আবু তালিব (রাঃ) দেঁর সুন্নত অনুসরণ কর৷ এখানে এটাই প্রমানিত হলো যে,হাবীবে খোদা হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত ও তাঁর উল্লেখিত মহামান্য চাঁরজন সাহাবায়ে কেরামের সুন্নতের প্রতি দৃঢ় অনুসরণ এবং আমল করার নামই আহলে সুন্নত৷ সহজ কথায়, যারা নবীজীর সুন্নত ও তাঁর সাহাবীগনের সুন্নত মানে তারাই বেহেশতী দল আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের পরিপূর্ণ অনুসারী৷আর যারা নবীজীর সাহাবী মানেনা এবং তাঁদের অনুসৃত তরিকা ও আমালিয়াতের ওপর আনুগত্য প্রদর্শন করেনা ওরাই আহলে বেদআত বা জাহান্নামী দল৷আহলে সুন্নতের তরিকামতে সহিহ আমল হলো 20 রাকআত তারাবীহ নামাজ৷এটাই সকল মুসলমানের জন্য বিশুদ্ধ বিধান৷আর আট রাকআত তারাবীহ নামাজ আহলে বেদআত বা জাহান্নামী বাহাত্তর দলের মনগড়া আমল৷মহান আল্লাহ পাক আমাদেরকে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের পরিপূর্ণ অনুসরণ করার তাওফিক দান করুন৷
আমিন ছুন্মা আমিন৷
খাদিমুল ইফতাঃ
{মুফতি শাইখ এস এম নুরুল ইসলাম নকশবন্দী-মুজাদ্দেদী,সদরসিলেট}

কোন মন্তব্য নেই:

Popular Posts