আজ শুক্রবার (স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে) মিয়ানমারে ৭.৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল দেশটির উত্তর-পশ্চিমের শহর সাগাইং থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে। এটি রাজধানী নেপিডো থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।
প্রথম ভূমিকম্পের ১২ মিনিট পর আরও একটি শক্তিশালী কম্পন অনুভূত হয়, যার মাত্রা ছিল ৬.৪ রিখটার স্কেলে। বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, নেপিডোতে ভূমিকম্পের প্রভাবে বিভিন্ন রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ভবনের ছাদ থেকে আস্তরণ খসে পড়েছে।
জরুরি অবস্থা জারি
ভূমিকম্পের পর মিয়ানমারের জান্তা সরকার ছয়টি অঞ্চলে জরুরি অবস্থা জারি করেছে। কম্পনের তীব্রতা এতটাই ছিল যে চীন ও থাইল্যান্ডেও এটি অনুভূত হয়েছে।
থাইল্যান্ডে জরুরি অবস্থা
ব্যাংককে ভূমিকম্পের তীব্রতা অনুভূত হওয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে জরুরি বৈঠক ডেকে থাই সরকারও জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, ব্যাংককের বিভিন্ন ভবন থেকে আতঙ্কিত মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে আসে।
একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, ব্যাংককের একটি বহুতল ভবনের সুইমিং পুলের পানি নিচে ছিটকে পড়ছে। বিবিসির সাংবাদিকদের মতে, ভূমিকম্পের কারণে শহরের অনেক ভবন দুলতে শুরু করে, কিছু ভবনের জানালাও ভেঙে পড়েছে।
ভূমিকম্পের প্রভাব ও ইতিহাস
মিয়ানমারে ভূমিকম্পের ঘটনা তুলনামূলকভাবে বেশি ঘটে। ১৯৩০ থেকে ১৯৫৬ সালের মধ্যে দেশটিতে সাত মাত্রার ছয়টি ভূমিকম্প হয়, যার সবগুলোই সাগাইং ফল্ট লাইনের কাছে। এই ফল্ট লাইন দেশটির মাঝ বরাবর বিস্তৃত।
থাইল্যান্ড সাধারণত ভূমিকম্পপ্রবণ নয়। তবে প্রতিবেশী মিয়ানমারে ভূমিকম্প ঘটলে এর প্রভাব থাইল্যান্ডেও অনুভূত হয়। ব্যাংককের ভবনগুলো শক্তিশালী ভূমিকম্প সহ্য করার মতো গঠিত নয়, তাই বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ভবন ধসে ৪৩ জন শ্রমিক নিখোঁজ
ব্যাংককে একটি নির্মাণাধীন ৩০ তলা ভবন ধসে পড়েছে, যেখানে ৪৩ জন শ্রমিক নিখোঁজ রয়েছে। উদ্ধারকারী দল ইতোমধ্যে অনুসন্ধান শুরু করেছে।
বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের একজন প্রতিবেদক বুই থু বলেন, ভূমিকম্পের সময় তিনি বাড়িতে রান্না করছিলেন। তিনি জানান, "আমি খুব আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম। আমার অ্যাপার্টমেন্টের দেয়ালে ফাটল ধরেছে, সুইমিং পুলের পানি ছলকে পড়ছে, আর মানুষজন শুধু চিৎকার করছে।"
ভূমিকম্পের আফটারশক অনুভূত হওয়ার পর তিনি অন্যান্য বাসিন্দাদের সঙ্গে দ্রুত রাস্তায় বেরিয়ে আসেন। "আমরা চারপাশে কী ঘটছে বুঝতে চেষ্টা করছিলাম। ব্যাংককের ভবনগুলো ভূমিকম্প সহনশীল নয়, তাই বড় ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।"
মান্দালাইয়ে আতঙ্ক
ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের কাছাকাছি শহর মান্দালাইয়ের বিমানবন্দরে ধারণ করা এক ভিডিওতে দেখা গেছে, কম্পনের সময় আতঙ্কিত যাত্রীরা মাটিতে শুয়ে পড়ছেন এবং অনেকে চিৎকার করছেন দৌড়াতে নিষেধ করার জন্য।
উদ্ধারকাজ অব্যাহত
থাই কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ব্যাংককের ধসে পড়া ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়াদের উদ্ধারের জন্য উদ্ধারকারীরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
0 মন্তব্যসমূহ