জিংক (Zinc) হলো একটি অতি প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থ যা আমাদের শরীরের নানা কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মানবদেহে শত শত এনজাইমের কার্যক্রমে জিংক সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো, কোষের গঠন ও বৃদ্ধি, ক্ষত নিরাময়, হরমোন নিয়ন্ত্রণ, এবং স্বাদ ও গন্ধ বোঝার ক্ষমতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
জিংকের উপকারিতা
-
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: জিংক আমাদের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে, যাতে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের বিরুদ্ধে দেহ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে।
-
ঘা ও ক্ষত দ্রুত সারায়: যেকোনো কাটাছেঁড়া বা ক্ষত দ্রুত সারানোর জন্য জিংক অত্যন্ত কার্যকরী।
-
চুল ও ত্বকের যত্নে: জিংক ত্বকের কোষ গঠনে সহায়তা করে এবং চুল পড়া প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।
-
শিশুর বৃদ্ধি: শিশুদের সঠিক বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশে জিংক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
-
হরমোন নিয়ন্ত্রণ: ইনসুলিন ও অন্যান্য হরমোন নিয়ন্ত্রণে জিংক সহায়ক।
জিংকের ঘাটতির লক্ষণসমূহ
- রোগে বারবার আক্রান্ত হওয়া
- ক্ষত সারতে সময় লাগা
- স্বাদ ও গন্ধ কমে যাওয়া
- চুল পড়া
- ত্বকের শুষ্কতা ও ব্রণ
- মনোযোগে ঘাটতি বা স্মৃতিভ্রষ্টতা
- শিশুদের বৃদ্ধি ধীর হয়ে যাওয়া
কী কী খাবারে জিংক পাওয়া যায়?
জিংকের ঘাটতি পূরণে নিচের খাবারগুলো নিয়মিত খেতে পারেন:
- গরুর মাংস ও খাসির মাংস
- ডিমের কুসুম
- দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার (দই, পনির)
- বাদাম (কাজু, আখরোট)
- বীজ জাতীয় খাবার (তিল, সূর্যমুখীর বীজ, কুমড়ার বীজ)
- চিংড়ি ও অন্যান্য সামুদ্রিক মাছ
- মুসুর ডাল, ছোলা, মটর
- সম্পূর্ণ শস্য (ব্রাউন রাইস, ওটস, গম)
অতিরিক্ত জিংকের অপকারিতা
যদিও জিংক উপকারী, অতিরিক্ত গ্রহণ করলে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে:
- বমি ভাব বা বমি
- পেট ব্যথা ও ডায়রিয়া
- তামার শোষণ কমে যাওয়া
- ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়ে পড়া
- দীর্ঘমেয়াদে প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে (অতিরিক্ত মাত্রায় সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করলে)
পরিমাণমতো গ্রহণই নিরাপদ
প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের প্রতিদিনের জিংক চাহিদা প্রায় ১১ মি.গ্রা. এবং নারীদের জন্য ৮ মি.গ্রা। খাবার থেকেই এই চাহিদা পূরণ করা উচিত। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সাপ্লিমেন্ট নেওয়া যেতে পারে।
উপসংহার:
জিংক একটি ছোট উপাদান হলেও, এর ভূমিকা আমাদের দেহের সুস্থতায় অনেক বড়। তাই সুষম খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলে নিয়মিত জিংকযুক্ত খাবার গ্রহণ করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে ও স্বাস্থ্য ভাল থাকে। অতিরিক্ত গ্রহণ না করে পরিমিত পরিমাণেই এটি গ্রহণ করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
0 মন্তব্যসমূহ