বড় পীর হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.)-এর জীবনী ও কারামত | সম্পূর্ণ তথ্যভিত্তিক বিশ্লেষণ

 


বড় পীর হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.)-এর জীবনী

পরিচিতি

ইসলামের ইতিহাসে অগণিত আলেম, আউলিয়া ও সুফি সাধক জন্ম নিয়েছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম এবং শ্রেষ্ঠ সাধকদের একজন হলেন হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.)। তিনি "গাউসুল আজম", "মহাপীর", "বড় পীর", ইত্যাদি উপাধিতে পরিচিত। তাঁর পবিত্র জীবন, আধ্যাত্মিক প্রজ্ঞা, শিক্ষা ও মানবতার প্রতি ভালোবাসা বিশ্বব্যাপী মুসলিম সমাজে অমর হয়ে আছে।


জন্ম ও বংশ পরিচয়

হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.) ৪৭০ হিজরি সালের ১লা রমজান (১০৭৭ খ্রিস্টাব্দ) ইরাকের জিলান (বর্তমানে ইরানের গিলান প্রদেশ) নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আবু সালেহ মুসা এবং মাতার নাম উম্মুল খাইর ফাতিমা। তিনি পিতামাতার উভয় দিক থেকেই হযরত ইমাম হাসান (রাঃ) ও হযরত ইমাম হোসাইন (রাঃ)-এর বংশধর ছিলেন। অর্থাৎ তিনি ছিলেন হাসানি ও হোসাইনি সৈয়্যদ।


শিক্ষাজীবন

হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.) অল্প বয়সেই ধর্মীয় জ্ঞানে অভিজ্ঞতা লাভ করেন। মাত্র ১৮ বছর বয়সে তিনি জ্ঞানার্জনের জন্য বাগদাদ শহরে চলে যান। সেখানে তিনি হাদীস, তাফসীর, ফিকহ, তাসাউফ এবং অন্যান্য ইসলামী জ্ঞান লাভ করেন। তিনি বাগদাদের বিখ্যাত মাদরাসাগুলোতে ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর ফিকহ শিখেন এবং হাদীস বিষয়ে গভীর জ্ঞান অর্জন করেন।


তাসাউফ ও আধ্যাত্মিকতা

তিনি তাসাউফের পথে পরিচালিত হন এবং কঠোর সাধনার মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি অর্জন করেন। দীর্ঘদিন নির্জনে সাধনা, রোজা, ইবাদত ও আল্লাহর জিকিরে জীবন অতিবাহিত করে তিনি আধ্যাত্মিকতার সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছান। তিনি ইসলামের অন্তর্নিহিত সৌন্দর্য ও মানবিকতা তুলে ধরতে সমর্থ হন।

তাঁর বিখ্যাত উক্তি:
"কখনো মানুষের দান-দক্ষিণার দিকে চেয়ে থেকো না। বরং আল্লাহর কাছে চাও।"


দরস ও তাবলিগ কার্যক্রম

হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.) পরবর্তীতে বাগদাদে একটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন, যেখানে তিনি ফিকহ, হাদীস ও তাসাউফ শিক্ষা দিতেন। তাঁর ভাষণ ছিল অত্যন্ত প্রভাবশালী এবং হৃদয়স্পর্শী। তার বয়ানে অসংখ্য মানুষ ইসলামের সঠিক পথে ফিরে আসে। একসময় তাঁর মজলিসে হাজার হাজার ছাত্র ও সাধারণ মানুষ উপনীত হতো।


অলৌকিক ঘটনা (কারামত)

হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.)-এর জীবনে অনেক অলৌকিক ঘটনা বা কারামত রয়েছে, যেগুলো তাঁর আধ্যাত্মিক উচ্চতা প্রমাণ করে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য:

  • দূর-দূরান্তে উপস্থিত থাকা লোকজনের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া।

  • মৃতকে জীবিত করা।

  • কঠিন রোগ থেকে মানুষকে আরোগ্য করা।

  • দরগাহে কোনো খাবার না থাকলেও আল্লাহর রহমতে অতিথিদের খাদ্য জোগানো।


মৃত্যুবরণ

হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.) ৫৬১ হিজরি সালের ১১ই রবিউস সানি (১১৬৬ খ্রিস্টাব্দ) ইন্তেকাল করেন। তিনি বাগদাদের "বাব আল-দারাজ" এলাকায় চিরনিদ্রায় শায়িত। তাঁর মৃত্যু দিবস "গিয়ারহি শরীফ" নামে পরিচিত এবং বিশ্বব্যাপী তাঁর মুরিদ ও ভক্তরা এ দিন বিশেষভাবে পালন করে থাকেন।


অবদান ও প্রভাব

  • তিনি ক্বদরিয়া তরিকার প্রতিষ্ঠাতা, যা এখনো বিশ্বের বহু দেশে অনুসরণ করা হয়।

  • তাঁর শিক্ষা ও নির্দেশনা মুসলিম সমাজে ইসলামের মৌলিক শিক্ষা ও আত্মশুদ্ধির পথ দেখিয়েছে।

  • তিনি উম্মতের জন্য সর্বদা দোয়া করতেন এবং গাউসুল আজম নামে পরিচিত হন — অর্থাৎ বিপদে-আপদে সাহায্যকারী।


বিখ্যাত গ্রন্থসমূহ

তিনি অসংখ্য বই রচনা করেছেন, যেগুলো আজও ইসলামী শিক্ষার জন্য প্রাসঙ্গিক। তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থসমূহের মধ্যে রয়েছে:

  1. আল-গুনইয়াতুত তালিবীন

  2. ফুতূহুল গায়ব (অদৃশ্য জগতের জ্ঞান)

  3. জিলা-উল-খাতির

  4. সিররুল আসরার

  5. মক্তুবাতে গাউসুল আজম (চিঠিপত্রের সংকলন)


উপসংহার

হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.) ছিলেন একাধারে একজন আলেম, মুজাদ্দিদ, সুফি, সমাজ সংস্কারক এবং আধ্যাত্মিক নেতা। তাঁর জীবন থেকে শিক্ষা নেওয়ার মতো অনেক দিক রয়েছে – ধৈর্য, ইখলাস, আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা, জ্ঞান অর্জনের প্রতি আগ্রহ, এবং মানুষকে ভালোবাসা। আজকের মুসলিম সমাজ যদি তাঁর আদর্শকে অনুসরণ করে, তবে আত্মিক উন্নয়ন ও সমাজ সংস্কার উভয়ই সম্ভব।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

সিঙ্গাপুরে ওয়ার্ক পারমিটধারীদের জন্য নতুন নিয়ম: চাকরির মেয়াদ সীমা বাতিল, সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৬৩ বছর
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস
সিঙ্গাপুরে ট্রেইনিং রেকর্ড এবং সার্টিফিকেট চেক করার বিস্তারিত গাইড
some common interview questions and answers for a Safety Coordinator position in Singapore
Bangla date add in your website HTML tips.
সিঙ্গাপুরে নতুন আইন: ১ জুলাই ২০২৫ থেকে ফুটপাথে বাইসাইকেল ও PMD চালানো নিষিদ্ধ, লঙ্ঘনে জরিমানা ও জেল
Safe work procedure for ferrying workers by lorry in singapore
ধর্ষণবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল তিন বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষার্থীদের আল্টিমেটাম
Understanding the New Demerit Point System for Construction and Manufacturing Sectors
প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য জরুরি তথ্য: SATA PCP-র আওতায় চিকিৎসা সেবা গ্রহণে অ্যাপয়েন্টমেন্ট প্রয়োজন
Loading posts...