মুখ দিয়ে লালা পড়া বন্ধ করার উপায়: সম্পূর্ণ ঘরোয়া ও চিকিৎসা গাইড

 

ঘুমের সময় মুখ দিয়ে লালা পড়া বন্ধের উপায়

মুখ দিয়ে লালা পড়া বন্ধ করার উপায়: সম্পূর্ণ ঘরোয়া ও চিকিৎসা গাইড

মুখ দিয়ে লালা পড়া (ড্রোলিং বা সায়ালোরিয়া) একটি অস্বস্তিকর ও কখনো কখনো সামাজিকভাবে বিব্রতকর সমস্যা। এটি শিশুদের মধ্যে সাধারণ (বিশেষ করে দাঁত ওঠার সময়), কিন্তু বড়দের ক্ষেত্রে এটি বিভিন্ন অন্তর্নিহিত স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। চিন্তার কারণ নেই, কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটি নিয়ন্ত্রণ বা নিরাময়যোগ্য। এই বিস্তারিত গাইডে (প্রায় ১৬০০ শব্দ) আমরা মুখে লালা ঝরা বন্ধের সব ধরণের ঘরোয়া সমাধান, জীবনযাত্রার পরিবর্তন, চিকিৎসা পদ্ধতি এবং কখন ডাক্তার দেখাবেন তা নিয়ে আলোচনা করব।

১. মুখ দিয়ে লালা পড়া কেন হয়? (কারণগুলি বুঝুন)

লালা বা থুতু আমাদের লালাগ্রন্থি (Salivary Glands) থেকে নিঃসৃত হয়। স্বাভাবিক অবস্থায় আমরা গিলে ফেলার মাধ্যমে বা মুখ বন্ধ রাখার মাধ্যমে লালা নিয়ন্ত্রণ করি। নিচের যেকোনো কারণে এই ভারসাম্য নষ্ট হলে লালা পড়ে:

  • গিলতে সমস্যা (ডিসফ্যাজিয়া): স্ট্রোক, পার্কিনসন রোগ, মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস (MS), মায়াসথেনিয়া গ্র্যাভিস, ALS, ডিমেনশিয়া ইত্যাদি স্নায়বিক রোগে মুখ ও গলার পেশি দুর্বল বা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে, ফলে লালা গেলা যায় না।

  • মুখের পেশির নিয়ন্ত্রণ হারানো: মুখ হা-বন্ধ করার পেশি দুর্বল বা অবশ থাকলে (বেলস পালসি, মুখের স্নায়ুর আঘাত, কিছু সার্জারির পর)।

  • লালার অতিরিক্ত উৎপাদন (হাইপারস্যালিভেশন):

    • গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (GERD): অ্যাসিড উপরের দিকে উঠলে লালা বেশি তৈরি হয় তা নিষ্ক্রিয় করতে।

    • গর্ভাবস্থা (হরমোনের পরিবর্তনের কারণে)।

    • মুখের ঘা, সংক্রমণ (স্টোমাটাইটিস), দাঁত উঠা (শিশুদের)।

    • কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (ক্লোজাপাইন, ক্লোনাজেপাম, মরফিন ইত্যাদি)।

    • বিষক্রিয়া (পারদ, কীটনাশক)।

    • লিভার সিরোসিস, নেফ্রাইটিস।

  • নাক দিয়ে শ্বাস নিতে সমস্যা: সর্দি-কাশি, সাইনুসাইটিস, নাক বন্ধ, পলিপ, নাকের হাড় বাঁকা হলে মুখ দিয়ে শ্বাস নিতে হয়, ফলে লালা বাইরে পড়ে।

  • দাঁতের সমস্যা: দাঁতের সঠিক সারি না থাকা (ম্যালোক্লুশন), নকল দাঁত ঠিকমতো না বসা।

  • অবস্থানগত: খুব ঝুঁকে কাজ করা, বিশেষ করে ঘুমানোর সময় পাশ ফিরে বা উপুড় হয়ে শুলে লালা পড়তে পারে।

  • মানসিক কারণ: উত্তেজনা বা অতিরিক্ত খাবারের চিন্তা থেকেও সাময়িকভাবে লালা বাড়তে পারে।

২. কখন ডাক্তার দেখাবেন? (সতর্কতার লক্ষণগুলি)

নিচের লক্ষণ থাকলে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন:

  • হঠাৎ করে শুরু হওয়া তীব্র লালা পড়া (বিশেষ করে যদি কথা বলতে বা গিলতে কষ্ট হয়) – স্ট্রোকের লক্ষণ হতে পারে।

  • শ্বাস নিতে কষ্ট বা কাশি দিয়ে শ্বাস বন্ধ হওয়ার অনুভূতি।

  • জ্বর, মুখে ব্যথা বা ফোলাভাব।

  • গলায় কিছু আটকে আছে এমন অনুভূতি।

  • ওজন কমে যাওয়া বা খাবার গিলতে ক্রমাগত সমস্যা।

  • মুখ বিকৃত হওয়া বা পেশিতে দুর্বলতা।

  • ঘন ঘন বমি বা অম্বল।

  • কোন ওষুধ শুরু করার পরেই যদি লালা পড়া শুরু হয়।

  • ঘরোয়া উপায়ে কয়েক সপ্তাহ চেষ্টার পরেও উন্নতি না হলে।

৩. মুখ দিয়ে লালা পড়া বন্ধের ঘরোয়া উপায় ও জীবনযাপনের পরিবর্তন (Home Remedies & Lifestyle Modifications)

এই পদ্ধতিগুলি নিরাপদ এবং প্রথমেই চেষ্টা করা উচিত, বিশেষ করে যদি সমস্যা মাঝারি মাত্রার হয় বা নির্দিষ্ট কারণ (যেমন নাক বন্ধ) থেকে হয়:

  • অবস্থান পরিবর্তন ও সচেতনতা:

    • সোজা হয়ে বসুন/হাঁটুন: সারাদিন, বিশেষ করে খাওয়ার সময় সোজা হয়ে বসার চেষ্টা করুন। ঘাড় ও মাথা সোজা রাখুন।

    • শোয়ার ভঙ্গি: চিত হয়ে বা মাথা একটু উঁচু করে (বালিশ দিয়ে) ঘুমান। পাশ ফিরে বা উপুড় হয়ে শোয়া এড়িয়ে চলুন। টিল্টেড বালিশ ব্যবহার করতে পারেন।

    • মুখ বন্ধ রাখার অনুশীলন: সচেতনভাবে ঠোঁট বন্ধ রাখার চেষ্টা করুন, বিশেষ করে যখন কথা বলছেন না বা খাচ্ছেন না। দিনে কয়েকবার কয়েক মিনিট ধরে এই অনুশীলন করুন।

    • চিবানো ও গেলার অনুশীলন: শক্ত খাবার (যেমন গাজর, আপেল, শক্ত বিস্কুট) খান যা বেশি চিবোতে হয়। এটি মুখের পেশি শক্তিশালী করে। খালি মুখেও জোরে জোরে চিবানোর এবং গেলার ভান করুন (ডামি চিউইং)।

    • মুখের ব্যায়াম (ওরোফেসিয়াল এক্সারসাইজ): মুখের পেশির নিয়ন্ত্রণ ও শক্তি বাড়ায়। উদাহরণ:

      • মুখ ফুলিয়ে বাতাস ধরে রাখুন, তারপর ধীরে ধীরে ছাড়ুন।

      • হাসির ভান করুন, কোণ টেনে যতটা সম্ভব চওড়া করুন, কয়েক সেকেন্ড ধরে রাখুন, ছেড়ে দিন।

      • ঠোঁট গোল করে (চুম্বনের ভঙ্গিতে) কয়েক সেকেন্ড ধরে রাখুন, ছেড়ে দিন।

      • জিভ দিয়ে ঠোঁটের চারপাশে ঘুরান (ঘড়ির কাঁটার দিকে ও বিপরীতে)।

      • জিভ ঠেলে তালুর উপরের দিকে চাপ দিন ও ধরে রাখুন।

      • প্রতিটি ব্যায়াম ৫-১০ বার করে দিনে ২-৩ বার করুন।

  • খাদ্যাভ্যাস ও পানীয় নিয়ন্ত্রণ:

    • অম্লতা ও রিফ্লাক্স নিয়ন্ত্রণ: ঝাল, মসলাদার, চর্বিযুক্ত, টমেটো-ভিত্তিক, অ্যাসিডিক (লেবু, কমলা, কফি) খাবার এবং কার্বনেটেড ড্রিংকস কম খান। ছোট ছোট বেলায় বারবার খান।

    • চিনি ও স্টার্চ কমানো: অতিরিক্ত মিষ্টি ও স্টার্চযুক্ত খাবার লালা উৎপাদন বাড়াতে পারে।

    • পর্যাপ্ত পানি পান: পানিশূন্যতা হলে লালা গাঢ় হতে পারে, কিন্তু নিয়মিত পানি পান করলে লালার প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। ফ্লাস্কে পানি নিয়ে রাখুন এবং অল্প অল্প করে সারা দিন পান করুন।

    • লালা শুষ্ককারী (Astringent) খাবার: আনারস, আমলকী, লেবুর রস (অল্প, যদি GERD না থাকে), দই ইত্যাদি খাবার লালার প্রবাহ সাময়িকভাবে কমাতে সাহায্য করে।

  • ঘরোয়া প্রতিকার (সতর্কতার সাথে):

    • আমলকী (Indian Gooseberry): শুকনো আমলকীর গুঁড়ো বা টুকরো মুখে রেখে চুষতে পারেন। এর তিক্ত ও টক স্বাদ লালা শুকাতে পারে।

    • লবঙ্গ (Clove): ১-২ টি লবঙ্গ মুখে রাখুন এবং ধীরে ধীরে চুষুন। এর অ্যান্টিসেপটিক গুণাগুণ মুখের সংক্রমণও রোধ করে।

    • দারুচিনি (Cinnamon): এক গ্লাস গরম পানিতে দারুচিনি গুঁড়ো বা কয়েক টুকরো দারুচিনি ফেলে খানিকক্ষণ ফুটিয়ে, ঠাণ্ডা করে কুলকুচি করুন। দিনে ২-৩ বার।

    • আদা (Ginger): এক কাপ গরম পানিতে আদা কুচি ফেলে খানিকক্ষণ ফুটিয়ে চা বানান। দিনে ১-২ বার পান করুন। আদা চুষেও খেতে পারেন (যদি GERD না থাকে)।

    • পুদিনা পাতা (Mint): কয়েকটি তাজা পুদিনা পাতা চিবান বা পুদিনা চা পান করুন। পুদিনার মেনথল লালা নিঃসরণ কমাতে পারে।

    • ত্রিফলা: আমলকী, হরীতকী ও বহেড়ার মিশ্রণ। ত্রিফলা চূর্ণ গরম পানিতে মিশিয়ে কুলকুচি করতে পারেন।

    • এলাচ (Cardamom): ১-২ টি এলাচ চিবান বা মুখে রাখুন। এর সুগন্ধ ও স্বাদ মুখ সতেজ রাখে।

    • ঠান্ডা বা বরফের সেঁক: মুখের বিশেষ করে লালাগ্রন্থির কাছে হালকা ঠান্ডা সেঁক দিলে সাময়িকভাবে লালা উৎপাদন কমতে পারে। সরাসরি বরফ লাগাবেন না, তোয়ালে জড়িয়ে ব্যবহার করুন।

  • অন্যান্য টিপস:

    • ধূমপান ও তামাক ত্যাগ: ধূমপান লালা উৎপাদন বাড়ায় এবং গিলতে সমস্যা তৈরি করতে পারে।

    • অ্যালকোহল সীমিত করুন: অ্যালকোহল পানিশূন্যতা ও লালা নিয়ন্ত্রণে সমস্যা করে।

    • নাক পরিষ্কার রাখুন: স্যালাইন ন্যাসাল স্প্রে বা নেটি পট ব্যবহার করে নাক পরিষ্কার রাখুন যাতে মুখ দিয়ে শ্বাস না নিতে হয়।

    • ওরাল হাইজিন মেইনটেইন করুন: দিনে দুইবার ব্রাশ ও ফ্লস করুন, নিয়মিত ডেন্টাল চেকআপ করান। মুখের সংক্রমণ লালা বাড়াতে পারে।

    • ড্রোলিং কাপড়/ন্যাপকিন ব্যবহার: শিশুদের জন্য বা রাতে ঘুমানোর সময় বিশেষ ড্রোলিং কাপড় (বিবস) বা নরম ন্যাপকিন/তোয়ালে বালিশের উপর রাখুন।

    • ফেসিয়াল টিশ্যু: প্রয়োজনে হালকা করে মুখ মুছুন। ঘষে মুছবেন না।

৪. মুখ দিয়ে লালা পড়া বন্ধের চিকিৎসা পদ্ধতি (Medical Treatments)

যদি ঘরোয়া উপায়ে কাজ না হয় বা সমস্যা তীব্র হয়, চিকিৎসকের পরামর্শে নিচের চিকিৎসাগুলি বিবেচনা করা হয়:

  • কারণ অনুসারে চিকিৎসা (Treating the Underlying Cause): এটাই সর্বোত্তম পদ্ধতি।

    • GERD এর চিকিৎসা: অ্যান্টাসিড, H2 ব্লকার (Ranitidine), প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর (Omeprazole, Pantoprazole)।

    • নাক/সাইনাসের চিকিৎসা: ডিকনজেস্ট্যান্ট, ন্যাসাল স্টেরয়েড স্প্রে, অ্যালার্জির ওষুধ (অ্যান্টিহিস্টামিন), প্রয়োজনে সার্জারি (সেপ্টোপ্লাস্টি, পলিপেক্টমি)।

    • দাঁতের চিকিৎসা: অর্থোডন্টিক ট্রিটমেন্ট, ডেন্চার ঠিক করা।

    • সংক্রমণ চিকিৎসা: অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিভাইরাল।

    • ওষুধ পরিবর্তন: যদি বর্তমান ওষুধ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসাবে লালা পড়ে, তবে ডাক্তার বিকল্প ওষুধ দিতে পারেন।

    • স্নায়বিক রোগের চিকিৎসা: পার্কিনসন্স, ALS, স্ট্রোকের পরের ফিজিওথেরাপি, স্পিচ থেরাপি এবং নির্দিষ্ট ওষুধ।

  • লালা নিয়ন্ত্রণের ওষুধ (Anticholinergic Medications): এই ওষুধগুলি লালা গ্রন্থিকে শুকিয়ে দেয়।

    • গ্লাইকোপাইরোনিয়াম (Robinul): সাধারণত প্রথম পছন্দ।

    • স্কোপোলামাইন প্যাচ (Transderm Scop): ত্বকে লাগানোর প্যাচ।

    • অ্যাট্রোপিন সাবলিংগুয়াল ড্রপস: জিভের নিচে ফেলে দেওয়ার ড্রপ।

    • বেনজট্রোপাইন (Cogentin), ট্রাইহেক্সিফেনিডিল (Artane): পার্কিনসন্স রোগে ব্যবহৃত হয়, লালা কমাতেও সাহায্য করে।

    • সতর্কতা: এই ওষুধগুলির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে: মুখ শুকনো, চোখ শুকনো, কোষ্ঠকাঠিন্য, মূত্রথলিতে সমস্যা, ঝাপসা দৃষ্টি, বিভ্রান্তি (বিশেষ করে বয়স্কদের)। ডাক্তারের কঠোর তত্ত্বাবধানে নিতে হয়।

  • বোটুলিনাম টক্সিন ইনজেকশন (Botox):

    • মুখের প্রধান লালাগ্রন্থিগুলোতে (প্যারোটিড ও সাবম্যান্ডিবুলার) বোটক্স ইনজেকশন দেওয়া হয়।

    • এটি লালাগ্রন্থির স্নায়ুসংকেত ব্লক করে লালা উৎপাদন সাময়িকভাবে (৪-৬ মাস) কমিয়ে দেয়।

    • পদ্ধতিটি তুলনামূলকভাবে সহজ, মিনিমালি ইনভেসিভ এবং কার্যকর (বিশেষত স্নায়বিক রোগে)।

    • পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: ইনজেকশনের জায়গায় ব্যথা, ফোলা, মুখের পেশিতে সাময়িক দুর্বলতা, গিলতে সামান্য অসুবিধা (বিরল)।

    • অভিজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা করতে হয়।

  • বিকিরণ থেরাপি (Radiation Therapy):

    • অস্ত্রোপচারের জন্য উপযুক্ত নন এমন রোগীদের ক্ষেত্রে, লালাগ্রন্থিতে কম মাত্রার বিকিরণ (রেডিয়েশন) দিয়ে লালা উৎপাদন স্থায়ীভাবে কমিয়ে দেওয়া হয়।

    • সাধারণত শেষ অবলম্বন হিসাবে বিবেচনা করা হয়, কারণ দীর্ঘমেয়াদী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (মুখ শুষ্কতা, দাঁতের ক্ষয়, ত্বকের পরিবর্তন) হতে পারে।

  • সার্জারি (Surgery):

    • লালাগ্রন্থি ডাক্ট রিডাইরেকশন: মুখের সামনের দিক থেকে লালা নিষ্কাশনের পথ (ডাক্ট) পুনর্নির্দেশ করা হয়, যাতে লালা পেছন দিকে গলায় যায়।

    • লালাগ্রন্থি রিমুভাল: প্রধান লালাগ্রন্থিগুলোর (সাধারণত সাবম্যান্ডিবুলার, কখনো প্যারোটিডের অংশবিশেষ) অপসারণ। এটি সাধারণত তীব্র ও অন্যান্য চিকিৎসায় নিয়ন্ত্রণ না হওয়া ক্ষেত্রে করা হয়।

    • সার্জারির ঝুঁকি: মুখের স্নায়ুর ক্ষতি (ফেসিয়াল নার্ভ), মুখের দাগ, স্থায়ীভাবে মুখ শুকনো হয়ে যাওয়া (জেরোস্টোমিয়া)।

  • স্পিচ ও অকুপেশনাল থেরাপি (Speech and Occupational Therapy):

    • বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত থেরাপিস্টরা গিলতে, ঠোঁট বন্ধ রাখতে, মাথা ও শরীরের ভঙ্গিমা নিয়ন্ত্রণ করতে এবং মুখের পেশি শক্তিশালী করতে সহায়তা করেন। এগুলি অনেকক্ষেত্রেই অত্যন্ত কার্যকর, বিশেষ করে স্নায়বিক রোগে।

৫. শিশুদের ক্ষেত্রে বিশেষ বিবেচ্য

  • দাঁত ওঠা শিশুদের ক্ষেত্রে লালা পড়া স্বাভাবিক। ঠান্ডা টিদার রিং, পরিষ্কার ঠাণ্ডা কাপড় দিয়ে মাড়ি মালিশ করা, ড্রোলিং বিব ব্যবহার করা যেতে পারে।

  • যদি লালা পড়ার সাথে জ্বর, খেতে না পারা, অতিরিক্ত কান্নাকাটি, শ্বাসকষ্ট বা দুর্বলতা থাকে তবে ডাক্তার দেখান।

  • বড় শিশুদের (৩-৪ বছরের পরেও) যদি লালা পড়া অব্যাহত থাকে, তবে দাঁতের সমস্যা, নাক বন্ধ, গিলতে সমস্যা বা স্নায়বিক সমস্যা পরীক্ষা করাতে হবে।

৬. গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা ও পরামর্শ

  • স্ব-চিকিৎসা নয়: ওষুধ (বিশেষ করে অ্যান্টিকোলিনার্জিক) কখনোই নিজে নিজে শুরু করবেন না। ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

  • স্থায়ী সমাধান নয়: ঘরোয়া উপায় ও ওষুধ উপসর্গ নিয়ন্ত্রণ করে, তবে অন্তর্নিহিত কারণ ঠিক না করলে সমস্যা আবার ফিরে আসতে পারে।

  • ধৈর্য ধরুন: ঘরোয়া পদ্ধতি ও থেরাপিতে ফল পেতে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। নিয়মিত অনুশীলন জরুরি।

  • মুখ শুকনো সমস্যা (জেরোস্টোমিয়া): লালা কমাতে গিয়ে অতিরিক্ত শুকনো মুখ যেন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন। এটি দাঁতের ক্ষয়, মাড়ির রোগ ও মুখের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়। ডাক্তার মুখের আর্দ্রতা বজায় রাখার জেল বা স্প্রে দিতে পারেন।

  • মানসিক স্বাস্থ্য: দীর্ঘস্থায়ী লালা পড়া হতাশা, লজ্জা ও সামাজিক বিচ্ছিন্নতা ডেকে আনতে পারে। মানসিক স্বাস্থ্য পেশাদারের সাহায্য নেওয়া বা সাপোর্ট গ্রুপে যোগ দেওয়া উপকারী হতে পারে।

৭. প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ)

  • প্রশ্ন: ঘুমের সময় লালা পড়া কি বন্ধ করা সম্ভব?

    • উত্তর: হ্যাঁ। চিত হয়ে বা মাথা উঁচু করে ঘুমানো, ড্রোলিং প্যাড ব্যবহার করা, নাক পরিষ্কার রাখা এবং ঘুমের আগে বড় গিলে খাওয়া এড়ানো সাহায্য করতে পারে। কারণ নির্ণয়ও জরুরি।

  • প্রশ্ন: কোন ডাক্তার দেখাবো?

    • উত্তর: প্রথমে আপনার প্রাথমিক চিকিৎসক (GP) বা পারিবারিক চিকিৎসক। তিনি প্রয়োজন অনুসারে রেফার করতে পারেন: নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ (ENT), নিউরোলজিস্ট (স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ), গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট (পাকান্ত্র বিশেষজ্ঞ), ডেন্টিস্ট, স্পিচ-ল্যাঙ্গুয়েজ প্যাথলজিস্ট বা রিহ্যাবিলিটেশন মেডিসিন বিশেষজ্ঞের কাছে।

  • প্রশ্ন: বোটক্স ইনজেকশন কতদিন স্থায়ী হয়?

    • উত্তর: সাধারণত ৪ থেকে ৬ মাস। তারপর পুনরায় ইনজেকশন নিতে হতে পারে।

  • প্রশ্ন: লালা পড়া কি ক্যান্সারের লক্ষণ?

    • উত্তর: সাধারণত নয়। তবে মুখ, গলা বা খাদ্যনালীর কিছু বিরল ক্যান্সার বা টিউমার গিলতে অসুবিধা করে লালা পড়ার কারণ হতে পারে। হঠাৎ ওজন কমা, গলায় চাকা, ব্যথা, রক্ত পড়া ইত্যাদি থাকলে দ্রুত ডাক্তার দেখান।

  • প্রশ্ন: গর্ভাবস্থায় লালা পড়া বন্ধের উপায়?

    • উত্তর: এটি হরমোনজনিত এবং প্রায়শই গর্ভাবস্থার দ্বিতীয়ার্ধে নিজে থেকেই কমে যায়। ঘরোয়া উপায় (ছোট ছোট বেলায় খাওয়া, অম্লতা নিয়ন্ত্রণ, আদা/লেবুর রস, ডুমি চিউইং) সাহায্য করতে পারে। কোন ওষুধ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া নেবেন না।

৮. উপসংহার

মুখ দিয়ে লালা পড়া একটি পরিচিত সমস্যা, কিন্তু এর পেছনে গুরুতর কোনো কারণ থাকলে অবহেলা করা উচিত নয়। প্রথম ধাপ হল কারণ নির্ণয় করা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন (অবস্থান, খাদ্যাভ্যাস, মুখের ব্যায়াম) এবং নিরাপদ ঘরোয়া প্রতিকার (আমলকী, লবঙ্গ, আদা) দিয়ে সমস্যা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। যদি তা কার্যকর না হয় বা সমস্যা তীব্র হয়, তবে আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় ওষুধ, বোটক্স ইনজেকশন, থেরাপি এবং প্রয়োজনে সার্জারির মত কার্যকর বিকল্প রয়েছে। চিকিৎসকের সাথে খোলামেলা আলোচনা করে আপনার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত ও নিরাপদ সমাধান বেছে নিন। সঠিক চিকিৎসা ও যত্নে মুখ দিয়ে লালা পড়ার সমস্যা থেকে মুক্তি পেয়ে আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়া সম্ভব।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

সিঙ্গাপুরে ওয়ার্ক পারমিটধারীদের জন্য নতুন নিয়ম: চাকরির মেয়াদ সীমা বাতিল, সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৬৩ বছর
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস
সিঙ্গাপুরে ট্রেইনিং রেকর্ড এবং সার্টিফিকেট চেক করার বিস্তারিত গাইড
some common interview questions and answers for a Safety Coordinator position in Singapore
Bangla date add in your website HTML tips.
সিঙ্গাপুরে নতুন আইন: ১ জুলাই ২০২৫ থেকে ফুটপাথে বাইসাইকেল ও PMD চালানো নিষিদ্ধ, লঙ্ঘনে জরিমানা ও জেল
Safe work procedure for ferrying workers by lorry in singapore
ধর্ষণবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল তিন বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষার্থীদের আল্টিমেটাম
Understanding the New Demerit Point System for Construction and Manufacturing Sectors
প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য জরুরি তথ্য: SATA PCP-র আওতায় চিকিৎসা সেবা গ্রহণে অ্যাপয়েন্টমেন্ট প্রয়োজন
Loading posts...