সিঙ্কহোল দুর্ঘটনায় নারীকে বাঁচালেন এক ভারতীয় কর্মী – সাহসী উদ্ধার অভিযান সবার প্রশংসা কুড়ালো
সিঙ্গাপুর, ২৬ জুলাই – ওয়ান অ্যাম্বার কনডোমিনিয়ামের পাশে পিইউবি-র একটি নির্মাণ স্থানে কাজ করছিলেন ফোরম্যান পিচাই উদাইয়াপ্পান সুব্বাইয়া ও তাঁর সহকর্মীরা। হঠাৎ এক বিকট শব্দ শুনে তাঁরা দ্রুত দৌড়ে বেরিয়ে আসেন এবং দেখেন, তানজং কাটং রোড সাউথের মাঝখানে একটি বড় সিঙ্কহোল (ভূগর্ভে গর্ত) তৈরি হয়েছে। সেই গর্তে একটি কালো রঙের গাড়ি পড়ে গেছে।
মি. সুব্বাইয়া বিস্ময়ের সঙ্গে দেখেন, সেই গাড়ি থেকে একজন নারী বের হয়ে আসছেন।
তিনি জানান, “গাড়ির ভেতরে একজন ম্যাডাম ছিলেন। আমি ভাবলাম, কেউ তো পড়ে গেছে, আমি সাহায্য করতে চাই।”
৪৬ বছর বয়সী এই ফোরম্যান “ওহিন কনস্ট্রাকশন” নামে একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। সেখানে তাঁরা স্যুয়ারেজ প্রকল্পে নিযুক্ত ছিলেন।
তিনি সঙ্গে সঙ্গে তিন সহকর্মীকে রশি আনার নির্দেশ দেন, যাতে ওই নারীকে টেনে তোলা যায়। প্রায় তিন থেকে পাঁচ মিনিটের মধ্যেই তাঁরা সফলভাবে নারীটিকে উদ্ধার করেন।
তিনি বলেন, “আমার এক সহকর্মী গর্তে নেমে সাহায্য করতে চেয়েছিল, কিন্তু আমি বললাম, নামলে আবার উঠতে পারবে না। তাই প্রথমে রশি দাও বলেছিলাম।”
পিইউবি জানায়, ২৬ জুলাই বিকেল ৫টা ৫০ মিনিটের দিকে এই সিঙ্কহোল তৈরি হয় এবং সড়কের দুটি লেন ধসে পড়ে। এটি পিইউবি-র নির্মাণ সাইটের একেবারে পাশেই ছিল।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, আগের রাতেই সেখানে একটি পানির পাইপ ফেটে গিয়েছিল।
সিঙ্কহোল পরে পানিতে ভরে গেলেও, উদ্ধারকালে এটি শুকনো ছিল।
মি. সুব্বাইয়া বলেন, তারা কোনো কিছু না ভেবে, শুধু একজন মানুষকে বাঁচাতে চেয়েছিলেন বলেই দ্রুত কাজ করেছিলেন।
তাঁর ভাষায়, “একজন তো পড়ে গেছে, আমাদের শুধু তাকে যত দ্রুত সম্ভব উদ্ধার করাই ছিল লক্ষ্য।”
তামিলনাড়ু থেকে আগত এই সাহসী কর্মী ২২ বছর ধরে সিঙ্গাপুরে কাজ করছেন। এই প্রথমবার এমন একটি উদ্ধার অভিযানে তিনি অংশ নিলেন।
তিনি বলেন, নারীটিকে উদ্ধার করার পর তাঁরা জিজ্ঞাসা করেন, গাড়িতে আর কেউ আছে কি না। তিনি জানান, তাঁর আইসি (চাকরি পরিচয়পত্র) ও মোবাইল ভেতরে রয়ে গেছে।
তখন মি. সুব্বাইয়া তাঁকে নিজের ফোন দেন যাতে তিনি তাঁর মেয়েকে ফোন করতে পারেন।
তিনি বলেন, “আমরা একটা প্রাণ বাঁচিয়েছি... আর কিছু না, সেটাই সবচেয়ে বড় ব্যাপার।”
ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে দেখা যায় অন্যান্য কর্মীরাও দ্রুত সিঙ্কহোলের চারপাশে ব্যারিকেড বসাচ্ছেন।
পরে সিঙ্গাপুর সিভিল ডিফেন্স ফোর্স ওই নারীকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
পিইউবি তাদের ২৭ জুলাইয়ের ফেসবুক বিবৃতিতে জানায়, ওই নারী এখন হাঁটতে পারছেন এবং তাঁকে আরও কিছু চিকিৎসা পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে রাখা হয়েছে।
২৭ জুলাই সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসা মাউন্টব্যাটেন এমপি গোহ সজ কি বলেন, ওই নারী হাসপাতালে পর্যবেক্ষণে আছেন এবং পেশীতে ব্যথা অনুভব করছেন।
মানবতা, সাহসিকতা এবং তৎপরতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন মি. সুব্বাইয়া ও তাঁর সহকর্মীরা।
0 মন্তব্যসমূহ