Recent post

শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৯

বান্দা আল্লাহর অধিক নিকটবর্তী হয়, যখন সিজদারত থাকে।

মানবসৃষ্টির অন্যতম উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর ইবাদত।
 ইবাদতের মর্মকথা হলো সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী সত্তার সামনে সর্বাধিক বিনীতভাবে নিজেকে সঁপে দেওয়া।
 আক্ষরিক অর্থে এটা সর্বতোভাবে সিজদার মাধ্যমে সম্ভব।
মানবসৃষ্টির সূচনায় আদি পিতা আদম (আ.)-কে ‘কিবলা’ বানিয়ে সিজদা করার নির্দেশ জারি করা হয়েছে।
এই নির্দেশ প্রত্যক্ষভাবে ছিল ইবলিসের প্রতি আর পরোক্ষভাবে ছিল ফেরেশতাদের প্রতি। ফেরেশতারা এই নির্দেশ পালন করে।
কিন্তু ইবলিস সিজদা করতে অস্বীকার করে।
এ ঘটনার মাধ্যমে সিজদার মাহাত্ম্য ও তাৎপর্য প্রকাশিত হয়।
 সিজদা কখনোই আদম (আ.)-এর জন্য ইবাদত ছিল না।
বরং তা ছিল মানবজাতির প্রতি অন্যদের সম্মান প্রদর্শন।
আসলে সিজদা হলো আল্লাহর প্রাপ্য এবং আল্লাহর প্রতি যাবতীয় ইবাদতের শ্রেষ্ঠাংশ।
মহান আল্লাহ মানুষকে নামাজ পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
অতঃপর সারা বিশ্বের মানুষের সিজদার প্রতীক হিসেবে কাবাগৃহকে নির্ধারণ করেছেন।
ফলে গোটা বিশ্বের মানুষ আল্লাহর আদেশে কাবাগৃহকে কিবলা হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। ঠিক তেমনি সৃষ্টির সূচনায় আদম (আ.)-কে ‘কিবলা’ বানিয়ে সিজদা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

গোটা সৃষ্টিজগৎ আল্লাহকে সিজদা করে

পৃথিবীর সব কিছুই মহান আল্লাহর জন্য সিজদা করে।
ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আল্লাহকে সিজদা করে যা কিছু আছে নভোমণ্ডলে ও ভূমণ্ডলে এবং তাদের ছায়াসমূহও (সিজদা করে) সকালে ও সন্ধ্যায়—ইচ্ছায় ও অনিচ্ছায়।’
 (সুরা : রাদ, আয়াত : ১৫)
অন্যত্র আল্লাহ আরো বলেন,
‘তুমি কি দেখো না যে আল্লাহকে সিজদা করে যা কিছু আছে নভোমণ্ডলে ও ভূমণ্ডলে, সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্ররাজি, পর্বতরাজি, বৃক্ষলতা, জীবজন্তু ও বহু মানুষ।
 আর বহু মানুষ (যারা সিজদা করতে অস্বীকার করেছে) তাদের ওপর শাস্তি অবধারিত হয়েছে। বস্তুত আল্লাহ যাকে লাঞ্ছিত করেন তাকে সম্মানদাতা কেউ নেই।
নিশ্চয়ই আল্লাহ যা চান তা-ই করেন।’
 (সুরা : হজ, আয়াত : ১৮)
শুধু নিম্নজগতে নয়, সিজদার এই নিয়ম রয়েছে ঊর্ধ্বজগতেও।
সেখানে ফেরেশতা মহান আল্লাহর উদ্দেশে সিজদা করেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা কি আল্লাহর সৃষ্ট বস্তুসমূহের প্রতি লক্ষ করে না।
তাদের ছায়া ডানে ও বাঁয়ে ঢলে পড়ে আল্লাহর প্রতি সিজদাবনত হয় বিনীতভাবে?
আসমান ও জমিনে যত প্রাণী আছে, সবই আল্লাহকে সিজদা করে এবং ফেরেশতারাও।
আর তারা অহংকার করে না।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৪৮-৪৯)

দুনিয়া ও আখিরাতে সিজদার পরীক্ষা

নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের সমস্ত জীব ও জড় বস্তু আল্লাহর ইবাদত করে বা সিজদা করে।  কিন্তু মানুষ ও জিন ছাড়া কারো হিসাব হবে না এবং পরীক্ষাও হবে না। সিজদার এই পরীক্ষা হবে দুনিয়া ও আখিরাতে। একদল দুনিয়ায় আল্লাহকে সিজদা করে। পরকালের পরীক্ষায়ও এই দল আল্লাহর পদতলে সিজদার মাধ্যমে জয়যুক্ত হবে, আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌঁছে পরম সুখে অনন্তকালের জান্নাতে বসবাস করবে। পক্ষান্তরে আরেক দল আল্লাহকে সিজদা করে না। আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণও করে না। এদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, ‘অতএব তাদের কী হলো যে তারা বিশ্বাস স্থাপন করে না এবং যখন তাদের কাছে কোরআন পাঠ করা হয়, তখন তারা সিজদা করে না।’ (সুরা : ইনশিকাক, আয়াত : ২০-২১)
আল্লাহকে অস্বীকারকারী এই দল সিজদা না করার কারণে পরকালেও আল্লাহর পরীক্ষায় সিজদা করতে পারবে না।
ফলে তারা জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।
এ বিষয়ে ইরশাদ হয়েছে, ‘স্মরণ করো, যেদিন পায়ের গোছা উন্মোচিত করা হবে এবং তাদের সিজদা করার জন্য আহ্বান করা হবে, কিন্তু তারা তা করতে সক্ষম হবে না।
তাদের দৃষ্টি অবনত থাকবে, তারা লাঞ্ছনাগ্রস্ত হবে।
অথচ যখন তারা সুস্থ ও স্বাভাবিক ছিল, তখন তাদের সিজদা করতে আহ্বান জানানো হয়েছিল। অতএব যারা এই কালামকে মিথ্যা বলে, তাদের আমার হাতে ছেড়ে দিন, আমি এমন ধীরে ধীরে তাদের ধরব যে তারা জানতে পারবে না।’
 (সুরা : কলম, আয়াত : ৪২-৪৪)
এ বিষয়ে হাদিস শরিফে এসেছে, ‘কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ মানুষের উদ্দেশে বলবেন, আমি কি তোমাদের রব?
সবাই বলবে, হ্যাঁ, আপনিই আমাদের রব। (
সে সময়) নবীরা ছাড়া আর কেউ তাঁর সঙ্গে কথা বলবে না।
আল্লাহ তাদের জিজ্ঞেস করবেন, তোমরা কি কেউ তার কোনো চিহ্ন জানো?
তারা বলবে, পায়ের নলার তাজাল্লি।
সেই সময় পায়ের নলা খুলে দেওয়া হবে।
তখন সব ঈমানদার ব্যক্তি সিজদায় পড়ে যাবে।
তবে যারা দুনিয়ায় প্রদর্শনীর জন্য আল্লাহকে সিজদা করত তারা থেকে যাবে।
তারা সে সময় সিজদা করতে চাইলে তাদের মেরুদণ্ডের হাড় শক্ত হয়ে একটি তক্তার মতো হয়ে যাবে (তাই তারা সিজদা করতে পারবে না)।’
 (বুখারি, হাদিস : ৭৪৩৯)

সিজদার মাধ্যমে স্রষ্টার সর্বাধিক কাছাকাছি

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘বান্দা আল্লাহর অধিক নিকটবর্তী হয়, যখন সিজদারত থাকে। অতএব তোমরা তখন অধিক দোয়া করতে থাকো।’
(মুসলিম, হাদিস : ৪৮২)
রাবিআহ ইবনে কব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে রাত যাপন করতাম।
একদা আমি তাঁর অজু ও ইসতেঞ্জা করার জন্য পানি আনলাম।
তখন তিনি আমাকে বললেন, তোমার কিছু চাওয়ার থাকলে চাইতে পারো।
তখন আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমি আপনার সঙ্গে জান্নাতে থাকতে চাই। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ওটা ছাড়া আর কিছু চাও কি? আমি বললাম, এটাই চাই।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তাহলে বেশি বেশি সিজদার দ্বারা তুমি এই ব্যাপারে আমাকে সাহায্য করো।’ (মুসলিম, হাদিস : ৪৮৯)
নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘আমার যেকোনো উম্মতকে কিয়ামতের দিন আমি চিনে নিতে পারব।
 সাহাবিরা জিজ্ঞেস করেন, এত মানুষের মধ্যে আপনি তাদের কিভাবে চিনবেন?
 তিনি বলেন, তোমরা যদি কোনো আস্তাবলে প্রবেশ করো যেখানে নিছক কালো ঘোড়ার মধ্যে এমন সব ঘোড়াও থাকে, যেগুলোর হাত, পা ও মুখ ধবধবে সাদা, তবে কি তোমরা উভয়ের মধ্যে পার্থক্য করতে পারবে না?
সাহাবিরা বললেন, হ্যাঁ, পারব।
তিনি বলেন, ওই দিন সিজদার কারণে আমার উম্মতের চেহারা সাদা ধবধবে হবে, আর অজুর কারণে হাত-পা উজ্জ্বল সাদা হবে।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৮৩৬)

Popular Posts