অফিস থেকে সন্ধ্যায় বাড়িতে ফেরেন আরিফুর রহমান। কিন্তু কম্পিউটারে নানা কাজ করতে করতে ঘুমাতে প্রায়ই রাত ১টা বেজে যায়।
সকালে আবার অফিস। ঘুম থেকে উঠতে তাই মোবাইলের ঘড়িতে অ্যালার্ম দিয়ে রাখেন আরিফুর। কিন্তু সকাল ৭টায় যখন কর্কশ শব্দে অ্যালার্ম বেজে ওঠে, তখন চোখ একটু খুলে শুধু অ্যালার্ম বন্ধ করার উপায় খোঁজেন তিনি। উদ্দেশ্য আরেকটু ঘুমিয়ে নেওয়া।
আরিফুর হয়তো ভাবছেন, ভেঙে যাওয়া কাঁচা ঘুম আরেকটু হলেই হয়তো শরীরটা ঝরঝরে থাকবে। কিন্তু আদতে তা নয়। উল্টো এই অতিরিক্ত ঘুমই আপনার কাজের বারোটা বাজাবে। এর চেয়ে প্রতিদিন ঠিক সময়ে ঘুমুতে যাওয়া ও ঘুম থেকে উঠলেই তা স্বাস্থ্যের জন্য বেশি ভালো। এমন আরও কিছু কাজ আছে, যেগুলো সকালে ঘুম থেকে উঠেই করা উচিত নয়। আসুন জেনে নিই এসব কাজের কথা:
১. অন্ধকারে থাকবেন না
সকালে ঘুম থেকে উঠে অনেকে বেশ খানিকটা সময় অন্ধকারে থাকেন। তাঁরা হয়তো ভাবেন, হুট করে সূর্যের আলো চোখে পড়লে তা খারাপ হবে। কিন্তু ঘুম থেকে ওঠার পর সুয্যিমামার দেখা পাওয়াটা খুব দরকার। কারণ এটি মানুষের শরীরের প্রাকৃতিক ঘড়ির সময় নির্ধারণ করে দেয়। এতে আপনার ঘুম সঠিক সময়ে এবং হজমক্রিয়া ভালোমতো হবে। এ ছাড়া সূর্যের আলো শরীরে লাগলে ভিটামিন ডি-র অভাব পূরণ হয়।
২. তাড়াহুড়ো নয়
কেউ কেউ তাড়াহুড়ো করে ঘুম থেকে ওঠেন। দুম করে উঠে বসে আবার হাঁটাচলাও শুরু করে দেন। শোয়া থেকে উঠে বসার কারণে পায়ে রক্ত যেতে দেরি হয়। এতে করে রক্তচাপ হুট করে আশঙ্কাজনকভাবে কমে যেতে পারে। এতে কিছুক্ষণের জন্য মাথা ঘোরানো বা বিহ্বলতার ভাব হতে পারে। রক্তচাপ বেশি কমে গেলে তা মৃত্যুর কারণও হতে পারে। তাই ধীরে-সুস্থে ঘুম থেকে উঠতে হবে। এতে বড় ধরনের শারীরিক সমস্যা এড়ানো যাবে।
৩. বাদ দেবেন না কফি বা চা
ঘুম থেকে ওঠার পর কফি বা চা পানের অভ্যাস থাকে সবারই। কেউ কেউ আবার স্বাস্থ্যগত কারণে কফি বা চা বাদ দিতে চান। কিন্তু হুট করে এসব বাদ দেওয়া উচিত নয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্যাফেইনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে মানুষের শরীর। হঠাৎ করে কফি বা চা বাদ দিলে প্রচণ্ড মাথাব্যথা, জ্বর, বমির ভাব হতে পারে। এ ছাড়া মনোযোগের সমস্যাও দেখা দিতে পারে। যদি একেবারেই ছাড়তে চান, তবে ধীরে ধীরে মাত্রা কমিয়ে দেওয়া ভালো।
৪. দাঁতের কথা ভুলে যান?
ঘুম থেকে উঠে কেউ কেউ দাঁত না মেজেই প্রাত্যহিক কাজ করা শুরু করে দেন। কারও আবার ঘুম থেকে উঠেই কফি খাওয়ার অভ্যাস থাকে। কিন্তু সকালে উঠেই না মাজলে দাঁতে টারটার নামের এক ধরনের পদার্থ জমা হতে শুরু করে। এসব থেকে মুখের দুর্গন্ধ, ক্যাভিটিজ ও দাঁতের অন্যান্য রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তা ছাড়া কফি পানের পরপরই দাঁত ব্রাশ করা উচিত নয়। কারণ কফিতে থাকা অ্যাসিড দাঁতের এনামেলকে দুর্বল করে দেয়। কফি খাওয়ার পর পরই ব্রাশ করলে এনামেল নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই কফি বা লেবুর শরবত পানের অন্তত ৩০ থেকে ৬০ মিনিট পর দাঁত মাজা উচিত।
৫. ঘুম চোখেই ই-মেইল?
স্মার্ট ডিভাইস এখন আমাদের জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গে পরিণত হয়েছে। ই-মেইল দেখা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নিউজফিডে চোখ বোলানো—সব সময় এগুলো করতে করতে বেড়ে যায় মানসিক চাপ ও উদ্বেগ। এই চাপ ও উদ্বেগ আর বেড়ে যায় যদি ঘুম থেকেই দেখতে বসেন ই-মেইল। এতে করে সকাল সকালই বাড়তি চাপে পড়ে যেতে হয়। এটি থাকে সারা দিনই। তাই অন্তত সকালবেলা ঘুম থেকে ওঠার পর কয়েক ঘণ্টা ই-মেইল বা ফেসবুক না দেখাই ভালো। এতে মন প্রশান্ত থাকবে। ধীরে ধীরে কর্মব্যস্ত দিনের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে হবে।
৬. পরিকল্পনা ছাড়াই দিন শুরু?
কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই দিন শুরু করলে তা মোটেই ভালো ফল দেয় না। এতে করে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজও শেষে আর করা হয়ে ওঠে না। তাই প্রতিদিন ঘুম থেকে ওঠার পরপরই দিনের কাজের একটি তালিকা বানিয়ে ফেলুন। আর সেই অনুযায়ী এক-একটি কাজ শেষ করুন। তাহলেই দেখবেন দিন শেষে সাফল্যের হাসি ফুটেছে মুখে।
৭. না খেয়েই সকাল পার?
অফিসের তাড়াহুড়োয় অনেকে না খেয়েই বেরিয়ে পড়েন রাস্তায়। কারও আবার সকালে কম খেয়ে দুপুরে বেশি খাওয়ার অভ্যাস। কিন্তু এ দুয়ের কোনোটাই ভালো নয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা সকালে নিয়মিত স্বাস্থ্যকর নাশতা খান, তাদের শরীরে চর্বি জমে কম।
তা ছাড়া ডায়াবেটিস ও হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও কম থাকে।
কাজেই সকাল শুরু করুন একটি স্বাস্থ্যকর নাশতা দিয়ে। সারা দিন থাকুন ফুরফুরে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন