"চুপিচুপি চলে গেলেন চাচা চিন — জানল না কেউ, খেয়াল করল না কেউ…"
ভূমিকা
এই গল্পটি শুধুই একজন মানুষের মৃত্যু নিয়ে নয়।
এটা আমাদের সমাজের বাস্তবতার এক ভয়ংকর চিত্র — নিঃসঙ্গতা, অবহেলা, আর মানুষের মাঝে সংযোগহীনতার প্রতিফলন।
Evenlyn Tan এর পোষ্ট থেকে তোলে ধরা হলো
চাচা চিন ছিলেন আমার পাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দা।
একদিন হঠাৎ করেই জানতে পারলাম, তিনি মারা গেছেন।
কিন্তু তারচেয়েও বেশি হৃদয়বিদারক ছিল এই সত্যটা—
তিনি একা মারা গিয়েছিলেন। কেউ জানতেও পারেনি।
চাচা চিনের শেষ সময়
কোনও আত্মীয়, বন্ধু কিংবা প্রতিবেশী খেয়াল করেনি যে উনি কোথায় গেলেন, কেমন আছেন।
উনার দরজা সবসময় বন্ধ থাকত, জানালাগুলোও সব সময় বন্ধ।
আমি ভেবেছিলাম, উনি হয়তো বাইরে থাকেন বেশি সময়, তাই কখনও ভাবিনি একবার দরজায় নক করবো।
কিন্তু যখন কয়েকদিন পর পুলিশ এসে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকে, তখন বোঝা গেল— উনি দিন দুয়েক আগেই মারা গিয়েছেন। একা। নিঃসঙ্গভাবে।
এই ঘটনা আমাকে নাড়িয়ে দিয়েছিল।
আমাদের আধুনিক জীবনের ব্যস্ততা কি এতটাই বেশি হয়ে গেছে যে আমরা পাশের ফ্ল্যাটে কে আছেন, কে কেমন আছেন, তাও জানার সময় পাই না?
একটি প্রশ্ন বারবার মনে পড়ে—
আমরাও কি একদিন এমনভাবেই নিঃসঙ্গ হয়ে যাবো?
একটি বন্ধ দরজার পেছনে?
যেখানে কেউ জানবে না, আমরা আর নেই?
এটি শুধুমাত্র একজনের কাহিনি নয়
চাচা চিনের ঘটনা অনন্য কিছু নয়। অনেক বয়স্ক মানুষ আজ সমাজে এইভাবেই নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ছেন।
নেই কেউ খোঁজ নেওয়ার, নেই কথা বলার মানুষ।
এমনকি তাদের মৃত্যুর পরেও অনেক সময় পর্যন্ত কেউ টের পায় না।
আমরা যেসব উঁচু বিল্ডিংয়ে থাকি, যেসব শহরে ব্যস্ত জীবনের ছুটে চলা —
সেইখানেই গড়ে উঠছে এক নতুন নিঃসঙ্গতার দেয়াল।
এই লেখাটি এক ধরনের আহ্বান —
সহানুভূতি নয়, সচেতনতার আহ্বান।
আমাদের আশেপাশে থাকা নিঃশব্দ, একাকী মানুষগুলোর জন্য কিছু করার অনুরোধ।
আমরা কী করতে পারি?
- পাশের বাসার বয়স্ক মানুষটির সাথে মাঝে মাঝে কথা বলুন
- কারো দরজা দিনের পর দিন বন্ধ থাকলে খোঁজ নিন
- একটু ‘হ্যালো’ বলুন, মনের খোঁজ নিন
- কোনও বয়স্ক মানুষকে দেখলে জিজ্ঞেস করুন — “কেমন আছেন চাচা/চাচী?”
একটুখানি মনোযোগ, একটুখানি আন্তরিকতা — কারও জীবন বদলে দিতে পারে।
একদিন হয়ত আমরাও চাইবো, কেউ আমাদের দিকে তাকাক, কথা বলুক, খোঁজ নিক।
চাচা চিন, আপনি চলে গেছেন।
কিন্তু আপনার এই নীরব বিদায় আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে।
আপনার বিদায় আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়— আমরা যেন অন্যদের জন্য ‘অপরিচিত’ হয়ে না যাই।
শেষ কথা
এই লেখা যদি একজন মানুষকেও অনুপ্রাণিত করে,
একজন নিঃসঙ্গ মানুষের পাশে দাঁড়াতে সাহায্য করে —
তাহলে চাচা চিনের গল্প বৃথা যাবে না।
#নিঃসঙ্গবার্ধক্য #সম্পর্কবাঁচান #বয়স্কদের_প্রতি_সচেতনতা #মানবিকসম্পর্ক #চারপাশ_দেখুন
0 মন্তব্যসমূহ