Recent post

শুক্রবার, ২৮ জুলাই, ২০১৭

একদিনের বিশ্বের শীর্ষ ধনী

মাত্র একদিনের জন্য বিশ্বের শীর্ষ ধনী হয়েছিলেন অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস। বিল গেটসকে হারিয়ে শীর্ষ ধনী হলেও বোজেস সে জায়গা একদিনের বেশি ধরে রাখতে পারেননি। ২৭ জুলাই পুঁজিবাজারে অ্যামাজনের শেয়ারের দাম ২.৫ শতাংশ বাড়ার প্রভাবে বেজোসের মোট সম্পদমূল্য বিল গেটসকে ছাড়িয়ে যায়। কিন্তু একদিনের মাথায়ই অ্যামাজনের দরপতনের পর আগের অবস্থানে ফিরে যান বিল গেটস ও জেফ বেজোস উভয়ই।


ফোর্বস সাময়িকীর হিসাব মতে, বৃহস্পতিবার শেয়ারবাজারে অ্যামাজনের দাম বাড়ার পর বেজোসের মোট সম্পদমূল্য দাঁড়ায় ৯১ দশমিক ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বিল গেটসের চেয়ে ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার বেশি। অ্যামাজন জেফ বেজোসের ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য তবে এখনও বেজোসের যে সম্পদ, তাতে বিল গেটসের ঘাড়েই নিঃশ্বাস ফেলছেন তিনি। 
ধারণা করা হচ্ছে, বিল গেটসকে হটিয়ে তিনিই হতে যাচ্ছেন পরবর্তী শীর্ষ ধনী। 
৫৩ বছর বয়সী বেজোসের মালিকানায় রয়েছে অ্যামাজনের ১৭ শতাংশ শেয়ার। অনলাইন কেনাকাটার প্লাটফর্ম এই কোম্পানিটির বর্তমান বাজারমূল্য ৫০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। 
১৯৯৪ সালে বই বিক্রি দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন ওয়াল স্ট্রিটের চাকরি ছেড়ে আসা বেজোস। এরপর বহু বছর ধরে ধারাবাহিক আগ্রাসী ব্যবসায়ী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অ্যামাজনকে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছেন তিনি।

অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য প্রসঙ্গে বিশ্লেষকদের প্রশ্ন কারা ক্ষমতাবান দুর্নীতিবাজ



গণমাধ্যমে প্রায় প্রতিদিন ব্যাংক খাতসহ বিভিন্ন দফতর ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে ভয়াবহ দুর্নীতির খবর প্রকাশিত হচ্ছে। কিন্তু সে অনুযায়ী কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। অনেক সময় অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান কিংবা ব্যক্তির পক্ষ থেকে আত্মপক্ষ সমর্থন করে কোনো ব্যাখ্যা কিংবা বক্তব্যও দেয়া হয় না।

এ অবস্থায় দুর্নীতিবাজদের ধরতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) হটলাইন চালু খারাপ কিছু নয়, তবে মনে রাখতে হবে শুধু চুনোপুঁটিদের ধরলে হবে না। সমাজের বড় বড় রাঘববোয়ালদের শক্ত ভাবে ধরতে হবে।

বৃহস্পতিবার দুদকের হটলাইন উদ্বোধন প্রসঙ্গে কয়েকজন বিশ্লেষক এমন মন্তব্য করেন। একই সঙ্গে এ অনুষ্ঠানে দেয়া অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের আলোচিত বক্তব্যের বিশ্লেষণে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দেন।

কয়েকজন অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘যাদের হাতে ক্ষমতা তারাই দুর্নীতি করে’- শুধু এমন বক্তব্য দিয়ে দায়িত্ব শেষ করলে হবে না। ক্ষমতাবান দুর্নীতিবাজ কারা তা স্পষ্ট করে তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থাও নিতে হবে।

এ বিষয়ে শুক্রবার যুগান্তরের সঙ্গে আলাপকালে তারা আরও বলেন, ব্যাংক ও আর্থিক খাতে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়। এসব টাকার বড় অংশই বিদেশে পাচার হয়ে যায়। কিন্তু এর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না। এছাড়া সরকারি বড় বড় প্রকল্পগুলোতে বড় দুর্নীতির শঙ্কা তো অর্থমন্ত্রী কিছুদিন আগে গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়ে পরিষ্কার করেন।

দুর্নীতির খবর জানাতে বৃহস্পতিবার একটি হটলাইন উদ্বোধন করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

এ সময় তিনি তার বক্তৃতায় বলেন, দুর্নীতি আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়েছে। যাদের ক্ষমতা আছে তারাই দুর্নীতি করে। পরোক্ষভাবে আমরা সবাই দুর্নীতিতে জড়িত। মুহিত বলেন, খুব তাড়াতাড়ি এ দুর্নীতি শুধরে ফেলা সম্ভব নয়।

এ ব্যাপারে মন্তব্য জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ যুগান্তরকে বলেন- যারা ক্ষমতাবান, তারা দুর্নীতিবাজ এটা অত্যন্ত একটা সরল সমীকরণ। সবক্ষেত্রে এটি সত্য নয়। সমাজে অনেক ক্ষমতাবান লোক আছেন, এমনকি মন্ত্রী পর্যায়েও অনেক আছেন, যারা দুর্নীতি করেন না। তাই ঢালাওভাবে সবাইকে দুর্নীতিবাজ বলা ঠিক হয়নি। এতে করে বড় দুর্নীতিবাজদের প্রশ্রয় দেয়া হচ্ছে। তাছাড়া দুর্নীতি বন্ধ হোক, এটা তিনি (অর্থমন্ত্রী) নিজেও চান না। না হলে অর্থমন্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও সোনালী ও বেসিক ব্যাংকের বড় দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে তিনি কোনো পদক্ষেপ নিলেন না কেন? তিনিও তো একজন ক্ষমতাবান ব্যক্তি বা মন্ত্রী। তার মানে তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার বা দুর্নীতিবাজদের প্রতি সহনশীল। এটাও কিন্তু এক ধরনের দুর্নীতি। এ সমীকরণে তিনি নিজেও একজন দুর্নীতিবাজ হয়ে যাচ্ছেন। তাই গণহারে সবাইকে দুর্নীতিবাজ আখ্যা দেয়ার বক্তব্য সমর্থন করি না। কারণ এ সমাজে বেশিরভাগ মানুষ সৎ। কিছু মানুষ অসৎ আছে। বাস্তবতা হল, দুর্নীতির কথা বললেও দুর্নীতি প্রতিহতের কোনো অঙ্গীকার নেই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এমএ তসলিম যুগান্তরকে বলেন, এ বক্তব্যের মাধ্যমে পুরো দেশকে দুর্নীতিবাজ প্রমাণ করলেন অর্থমন্ত্রী। অথচ তিনি এখনও বহুল আলোচিত সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক কেলেঙ্কারি, বিসমিল্লাহ গ্রুপের ঋণ জালিয়াতি ও বেসিক ব্যাংকে লুটপাটকারীদের পুরোপুরি বিচারের আওতায় আনতে পারেননি। তাদের বিরুদ্ধে জোরালা কোনো বক্তব্য বা অবস্থানও নেই তার। উল্টো সবাইকে গণহারে দুর্নীতিবাজ বলছেন। এতে সুনির্দিষ্ট এবং নানাভাবে প্রমাণিত শীর্ষ দুর্নীতিবাজরা পার পেয়ে যাবে।

তার মতে, দুর্নীতি দমনে দেশে নতুন আইনের প্রয়োজন নেই। কারণ এগুলো এক ধরনের ‘আইওয়াশ’। দেশে প্রচলিত আইনের বাস্তবায়ন হয় না। পুরনো সব আইন কার্যকর করা হোক। তাহলে দুর্নীতিসহ সব অপকর্ম বন্ধ হয়ে যাবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবু আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের কিছুটা সত্যতা রয়েছে। কারণ যাদের হাতে ক্ষমতা নেই, তারা দুর্নীতি করতে পারে না। তবে প্রশ্ন হল, ক্ষমতা কাদের হাতে। এটি স্পষ্ট হলে উত্তর পাওয়াটা নিশ্চয় কঠিন হবে না।

তিনি বলেন, আসলে রক্ষকরাই ভক্ষক। তাই সরকার যদি মেরুদণ্ড শক্ত করে না দাঁড়ায় তাহলে সবই কথার কথা বলে প্রতীয়মাণ হবে। বাস্তবে কিছুই হবে না। আর তা দুর্নীতি দমনের নামে এক ধরনের তামাশা বলে বিবেচিত হবে।

তিনি বলেন, বর্তমানে আর্থিক খাতে বেশি লুটপাট হচ্ছে। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্তরা এ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত।

তিনি বলেন, সাধারণ একজন ব্যবসায়ী সরকারি ব্যাংক থেকে ঋণই পান না। কারণ সরকারি ব্যাংক থেকে ঋণ পেতে ক্ষমতার জোর লাগে।

আবু আহমেদ বলেন, রাজনৈতিক ক্ষমতার জোরে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করে না। আবার যারা এ ক্ষমতার জোরে ২ বছর আগে ঋণ পুনর্গঠন করেছেন তারা ঋণও পরিশোধ করছেন না।

তিনি আরও বলেন, পত্রিকাসহ অন্যান্য গণমাধ্যমে বড় বড় দুর্নীতির খবর প্রতিদিন প্রকাশিত হয়। এগুলো আসল দুর্নীতিবাজ। এদের ধরলে ছোট দুর্নীতিবাজরা এমনিতেই সোজা হয়ে যাবে। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন।

অপর একজন বিশ্লেষক বলেন, দুদকের বর্তমান চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের নেতৃত্বে দুর্নীতি দমনে বেশ কিছু সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এখন প্রয়োজন নিজের ইমেজ ধরে রাখতে চিহ্নিত বড় বড় দুর্নীতিবাজদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে আরও শক্ত পদক্ষেপ নেয়া।

এদিকে দুদক কমিশনার ড. নাসির উদ্দিন আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, দুর্নীতি সবই সমান। এখানে বড়-ছোট নেই। তবে দুর্নীতির কোনো ঘটনা অনুসন্ধান এবং তদন্তের জন্য কাগজপত্র ও এভিডেন্স লাগবে।

তিনি বলেন, দুদকের সিডিউলে অনেক কিছু নেই। ফলে সব বিষয়ে তদন্ত করা যায় না। এতে কিছু সমস্যা তো হয়।

তিনি বলেন, গণমাধ্যমকে আমরা অবশ্যই গুরুত্ব দেই। সে ক্ষেত্রে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন যদি সুনির্দিষ্ট এবং তথ্যভিত্তিক হয় তবে অব্যশই সেটি আমরা গ্রহণ করে থাকি।

জানতে চাইলে দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য হাফিজ উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, পত্রিকাতে প্রতিদিনই বড় দুর্নীতির খবর ছাপা হয়। এসব খবরের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ এবং সুনির্দিষ্ট তথ্য থাকে। কিন্তু দুর্নীতিবাজদের ধরা হয় না।

তিনি মনে করেন, পত্রিকার খবর ছাড়াও প্রতিদিনই নামে-বেনামে শত শত চিঠি যায় দুদকে।
 প্রশ্ন হল, সেগুলোর কতটা তদন্ত হয়।

বৃহস্পতিবার, ২৭ জুলাই, ২০১৭

জ্বর : জ্বর কেন হয়? জ্বর হলে করণীয়


জ্বর : জ্বর কেন হয়? জ্বর হলে করণীয়

জ্বর কোন রোগ নয়, জ্বর একটি সাধারণ উপসর্গ। বিভিন্ন রোগের উপসর্গ হিসেবে জ্বর হতে পারে। জ্বর হলে শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেড়ে যায়। শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা হচ্ছে ৯৮•৬ ফারেনহাইট। শরীরের তাপমাত্রা এর থেকে বেড়ে গেলে আমরা তাকে জ্বর বলতে পারি। আর দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধির মানেই হল, দেহে পাইরোজেন (Pyrogens) উৎপন্ন হয়েছে। জ্বর হলে কি করণীয় এ সম্পর্কে অনেকের মধ্যে ভুল ধারণা রয়েছে। জ্বর হলে ঠান্ডা হাওয়া আসার ভয়ে ঘরের দরজা, জানালা অনেকে বন্ধ করে রাখেন অথবা জ্বর হলেই অনেকে রোগীর গায়ে কাঁথা চাপিয়ে দেন। তারা মনে করেন, এতে করে রোগীর ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে যাবে। প্রকৃতপক্ষে এগুলোর কোনটাই জ্বর কমাতে কোন সাহায্য করে না।

সামান্য জ্বর হলেই আমরা ঘাবড়ে যাই। এমন একটি লোকও পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া যাবে না, যার একবারও জ্বর হয়নি। জ্বর কোনও রোগ নয় বরং এটি বহু অসুখের একটি উপসর্গ মাত্র। শুধু জ্বর বলে কিছু হয় না। এটা যে কোন একটি রোগের বাইরের চেহারা। স্বর্দি-কাশি হলে, ম্যালেরিয়া হলে, টাইফয়েড, টি.বি, আবার পড়ে গিয়ে হাত-পা কেটে গেলেও জ্বর হতে পারে। সবার সাথেই জ্বর আছে উপসর্গ হিসেবে।

স্বাভাবিকভাবে শরীরের তাপমাত্রা হচ্ছে ৩৬.৬সে. থেকে ৩৭.২সে. পর্যন্ত। এর থেকে (১সে. থেকে ৪সে. পর্যন্ত) বেশি হলেই আমরা জ্বর হয়েছে বলে ধরে নেই। এই জ্বর সেন্টিগ্রেড অথবা ফারেনহাইট থার্মোমিটার দিয়ে মাপা যায়।

জ্বর সাধারণত তিন প্রকারের হয়। যেমন-

কন্টিনিউড (Continued)
যখন জ্বর এর মাত্রা ২৪ ঘণ্টায় ১ সে.(১.৫ ফারেনহাইট) পর্যন্ত উঠানামা করে কিন্তু জ্বর কোন সময় স্বাভাবিক অবস্থায় আসে না, তখনই তাকে কন্টিনিউড জ্বর বলে।

রেমিটেন্ট (Remittent)
যখন জ্বর এর মাত্রা ২৪ ঘণ্টায় ২ সে.(৩ ফারেনহাইট) পর্যন্ত উঠানামা করে, তাকে রেমিটেন্ট জ্বর বলে।

ইন্টারমিটেন্ট (Intermittent)
যখন জ্বর শরীরে দৈনিক কয়েক ঘণ্টা উপস্থিত থাকে, তখন তাকে ইন্টারমিটেন্ট জ্বর বলে। এই ইন্টারমিটেন্ট জ্বর যদি প্রতিদিন আসলে, তখন তাকে কোটিডিয়ান জ্বর বলে। একদিন পর পর এলে তাকে টার্শিয়ান এবং দুই দিন পর পর এলে তাকে কোয়ার্টান জ্বর বলে। তবে এখন জ্বর নিরাময়ের ওষুধ এবং অ্যান্টিবায়োটিক ও অন্যান্য ওষুধ সেবনের ফলে এই জ্বরের শ্রেণীবিন্যাস সব সময় ঠিকমত বোঝা যায় না।

জ্বর কেন হয়?
বিভিন্ন ইনফেকশন, টিস্যু নেক্রোসিস ইত্যাদি কারণে শরীরে জ্বর তৈরিকারী পদার্থ পাইরোজেন নিঃসরণ হয়। নিঃসৃত পাইরোজেন প্রোস্টাগ্লান্ডিন নামক কেমিক্যাল মেডিয়েটর তৈরি করতে উত্তেজক হিসেবে কাজ করে। এছাড়া ব্যাকটেরিয়াল প্রডাক্ট, যেমন- ব্যাকটেরিয়াল কলাইপোপলিস্যাকারাইড শ্বেতকণিকাকে উত্তেজিত করে এন্ডোজেনাস পাইরোজেন তৈরি করে এবং এগুলো প্রোস্টাগ্লান্ডিন তৈরি করতে সাহায্য করে। ফলে আমাদের মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস নামক অংশ, যা শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে সেখানকার রক্তনালি ও এর আশপাশের কোষগুলোতে বেশি পরিমাণে প্রোস্টাগ্লান্ডিন উৎপন্ন করতে প্রভাবিত করে। এই সাইক্লিক এ এম পি হাইপোথ্যালামাস শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক এর থেকে বেশি মাত্রায় পুন-নির্ধারণ করে, যার ফলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায় এবং জ্বর অনুভুত হয়।



কি কি কারণে জ্বর হতে পারে?
যে কোনও ভাইরাসজনিত প্রদাহ যেমন সর্দি, কাশি, হুপিংকাশি, ডেঙ্গু ইত্যাদি। আবার পরজীবী ঘটিত রোগ, যেমন- ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া ইত্যাদি।
যে কোনও একুইট ইনফেকশন বিশেষ করে পুঁজ তৈরিকারক ইনফেকশন যেমন- ফোঁড়া, কার্বাংকল, ফুরাংকল।
ক্যান্সার হলে।
কলা বিনষ্টকারী বা টিস্যু নেক্রোসিস যে রোগে হয়, যেমন মায়োকর্ডিয়াল ইনফেকশন, আর্থাইটিস, বাতজ্বর বা রিউমাটিক ফিভার।
দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ বা ক্রনিক ইনফেকশন, যেমন- যক্ষ্মা হলে।
অটোইমিউন রোগ যেমন- ইমুনোলজিক্যাল রিঅ্যাকশন, এসএলই ইত্যাদি।
যে কোনও কোষ কলা অর্গানের প্রদাহজনিত রোগ যেমন মেনিনজাইটিস, একুইট গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস, একুইট অস্টিওমাইলাইটিস, একুইট হেপাটাইটিস ইত্যাদি।
মহিলা ও পুরুষের জননতন্ত্রের প্রদাহ, যেমন- প্রস্রাবে অথবা প্রস্রাবের নালিতে ইনফেকশন, মেয়েদের ক্ষেত্রে অ্যান্ডোমেট্রাইটিস, উফুরাইটিস, সার্ভিসাইটিস, সালফিনজাইটিস এবং ছেলেদের ক্ষেত্রে প্রস্টেটাইটিস, অরকাইটিস, ইপিডিডাইমাইটিস ইত্যাদি।

জ্বরের কারণ নির্ধারণের জন্য যে সকল পরীক্ষা করা হতে পারে
লক্ষণ ও উপসর্গ দেখে ডাক্তার প্রয়োজনমত রক্তের সাধারণ কিছু পরীক্ষা যেমন- টিসি, ডিসি, ই এস আর, এক্সরে চেস্ট, সিটি স্ক্যান/এমআরআই, রক্তের কিছু বিশেষ পরীক্ষা যেমন Widal, Febrile antigen, বডি ফ্লুয়িড পরীক্ষা যেমন- CSF এবং অন্যান্য বডিফ্লুয়িড, ফাইলেরিয়া, ম্যালেরিয়া, যক্ষ্মার জন্য পিসিআর, কালচার সেনসিটিভিটি, এএফবি, ক্যান্সার রোগ নির্ণয়ের জন্য এফএনএসি সাইটোলজি, লিউকেমিয়া প্যানেল, লিমফোমা ও বায়োপসি ইত্যাদি করতে দিতে পারেন।

জ্বর হলে করণীয়
জ্বর নিজে কোনো রোগ নয়, অন্য কোন রোগের লক্ষণ বা উপসর্গ। শরীরে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াসহ জীবাণুর আক্রমণ ঠেকাতে শরীরের নিজস্ব প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই জ্বর আসে। সাধারণত মানুষের শরীরের তাপমাত্রা ৯৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট। তাপমাত্রা ৯৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি থেকে ১০০ দশমিক ৮ ডিগ্রি এর মধ্যে থাকলে, সেটা মাইল্ড ফিভার বা সামান্য জ্বর হিসেবে পরিচিত। ১০৩ ডিগ্রি পর্যন্ত হলে সেটা মডারেট বা মাঝারি জ্বর এবং এর বেশি হলে সেটাকে হাই ফিভার বা উচ্চজ্বর বলে। আবার ১০৫ ডিগ্রির চেয়ে বেশি তাপমাত্রা হলে অবশই দ্রুত রোগীকে হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

জ্বরের সঙ্গে তীব্র মাথা ব্যথা, গলা ফুলে যাওয়া, ঘাড় শক্ত হয়ে আসা, আলোর দিকে তাকালে প্রচণ্ড অস্বস্তি, বিরতিহীন বমি, মেন্টাল কনফিউশন, বুকে ব্যথা, নিঃশ্বাস নিতে অসুবিধা, পেটে ব্যথা ও প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া এই লক্ষণগুলো থাকলে অবশ্যই রোগীকে দ্রুত ডাক্তারের কাছে নিতে হবে।

রোগীকে ডাক্তারের কাছে নেয়ার আগে নিচের টিপসগুলো কাজে লাগাতে পারেন।
সম্পূর্ণ শারীরিক ও মানসিকভাবে বিশ্রামে থাকতে হবে।
শরীরে কাঁথা, কম্বল ইত্যাদি দেয়া যাবে না এবং হালকা কাপড় পরতে দিতে হবে।
ঘরের তাপমাত্রা কমিয়ে রাখার চেষ্টা করুন। ঘরে এসি থাকলে তা সহনীয় তাপমাত্রায় চালিয়ে দিন আর না থাকলে রোগীকে
বাতাস করুন অথবা ফ্যানের নিচে রাখতে হবে।
জ্বর বেশি মনে হলে হালকা গরম পানিতে পরিষ্কার কাপড় ভিজিয়ে তা দিয়ে গা স্পঞ্জ করে বা মুছে দিতে হবে।
পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি ও অন্যান্য তরল খাবার খেতে দিতে হবে।
অন্য কোন ওষুধ নয়, জ্বর কম রাখতে শুধুমাত্র প্যারাসিটামল খান। মনে রাখতে হবে জ্বর ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি না হলে প্যারাসিটামলও খাওয়া যাবে বা।

শিশুর হঠাৎ জ্বর হলে
জ্বর কোনো রোগ নয় এটি রোগের একটি উপসর্গ। জ্বর সাধারণত নানা ধরনের সংক্রমণের কারনে হয়। শিশুদের সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জা, আমাশয়, হাম, বসন্ত এবং আরও জটিল কোনো সংক্রমণ যেমন- নিউমোনিয়া, ম্যালেরিয়া, মেনিনজাইটিস ইত্যাদি রোগের লক্ষণ জ্বর দিয়েই প্রকাশ পায়। তাই জ্বরকে কোনভাবেই অবহেলা করা উচিত নয়।



শিশুর জ্বর হলে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো ভালভাবে লক্ষ করুন
মেনিনজাইটিস বা মস্তিষ্কের সংক্রমণের লক্ষণ হচ্ছে ঘাড়ে শক্তভাব, সামনে-পেছনে নড়ায় সমস্যা।
নিউমোনিয়ার লক্ষণ হচ্ছে কাশি ও শ্বাসকষ্ট, ঘন ঘন শ্বাস নেওয়া, বুকের খাঁচা ভেতরে ঢুকে যাওয়া, বুকে শব্দ হওয়া ইত্যাদি।
হাম, বসন্ত বা ডেঙ্গু হলে শরীরে দানা, দাগ, ফুসকুড়ি ইত্যাদি হতে পারে। কি না, দেখে নিন। আবার ওষুধের প্রতিক্রিয়া বা মারাত্মক অ্যালার্জিতেও ত্বকে এমন দানা হতে পারে।
শিশু জ্বর সত্ত্বেও খাওয়া-দাওয়া ও আচরণ স্বাভাবিক করছে কি না, খেয়াল করতে হবে। শিশু যদি দুর্বল হয়ে পড়ে, অর্ধচেতন দেখায়, শুষ্ক বা পানিশূন্য দেখায়, খিঁচুনি হয় অথবা শ্বাসকষ্ট হয়, তবে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
সাধারণত ভাইরাসজনিত সাধারণ জ্বর কয়েক দিনের মধ্যে সেরে যায়। যদি সাত দিনের বেশি স্থায়ী হয়, তাহলে তা ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড, ডেঙ্গু হেমোরেজিক বা মারাত্মক অন্য কোন রোগের জন্য হতে পারে।
গা গরম হলেই কিন্তু জ্বর নয়। শিশুর বগলের নিচে থার্মোমিটার তিন থেকে পাঁচ মিনিট রাখার পর দেহের তাপমাত্রা যদি ৯৯ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি হয়, তবেই জ্বর আছে বলে ধরে নিতে হবে।

শিশুর হঠাৎ জ্বর হলে কি করবেন?
বড়দের ক্ষেত্রে, সাধারণ জ্বর কমানোর জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খেলেই ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু শিশুদের ক্ষেত্রে, জ্বর হলে একটু বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

সাধারণত এটিকে বয়স অনুযায়ী ভাগ করা যায়। যে বাচ্চাটা নতুন হলো তার এক রকম জ্বর, ১ মাস বয়সের বাচ্চার অন্য রকম জ্বর, ৩ থেকে ৪ বছরের বাচ্চার অন্যরকম আবার একটু বড় বাচ্চাদের ভিন্ন রকম। অল্প দিনের জ্বর হলে একে আমরা সাধারণত ভাইরাল জ্বর বলি। একটু ঠান্ডা, কাশির কারনে এমন জ্বর হতে পারে। মাকে মনে রাখতে হবে, এটা ভাইরাল জ্বর। জ্বরটা নিয়মিত বিরতিতে মেপে রাখা ভাল। দীর্ঘমেয়াদি না হলে, ভয়ের কোনো কারণ নেই এটা এমনিতেই কমে যাবে। আবার জ্বর একশ ডিগ্রীর ওপর হলে শিশুকে জ্বর কমানোর ওষুধ খাইয়ে দিতে হবে।

জ্বর, সর্দি-কাশির ক্ষেত্রে প্যারাসিটামল খাওয়ানো যেতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যে যদি শিশুর কাশি বা জ্বর না কমে এবং জ্বর চলাকালীন সময়ে যদি আপনার শিশুর বেশি বেশি বমি বা পাতলা পায়খানা হয়, খিঁচুনি হয়, শরীরে গুটি বা দানা দেখা দেয়, অনবরত কাঁদতে থাকে, তাহলে দেরি না করে অবশ্যই কোন শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া উচিত।

জ্বর হলে প্রাথমিকভাবে স্পঞ্জিং করতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে, পুরো শরীর ভেজা নরম কাপড় অথবা তোয়ালে দিয়ে একটানা কয়েকবার আলতো করে মুছে দিলেই শরীরের তাপমাত্রা বেশ কমে যায় এবং আক্রান্ত রোগী ভালো অনুভব করে। এজন্য স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি ব্যবহার করতে হবে। কোনভাবেই খুব ঠাণ্ডা পানি আবার ব্যবহার করা ঠিক হবে না। শিশুদের ক্ষেত্রে পানিতে শিশুটিকে বসিয়ে স্পঞ্জ করা যেতে পারে।

বাচ্চাকে বেশি করে পানি খাওয়াবেন। বাচ্চার প্রস্রাব হচ্ছে কি না সেটা খেয়াল করতে হবে। বাচ্চা ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করছে কি না, খেয়াল করতে হবে। কারণ, শিশুরা জ্বরের সময় ঠিকমত খেতে চায় না।

ভাইরাল জ্বরে এন্টিবায়োটিক নয়
হঠাৎই আবহাওয়ার পরিবর্তনে, টানা বৃষ্টি হলে ভাইরাল জ্বরের প্রকোপ বেড়ে যায়। আমাদের দেশের বেশিরভাগ যায়গার কন্ডিশন প্রায় একই রকম। হঠাৎ করে আবহাওয়া পরিবর্তন হলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কিছুটা কমে যায় এবং আশে পাশে অবস্থানরত কম শক্তিশালী কিছু জীবানু দিয়ে আক্রান্ত হয়ে পড়ি। সাধারণত এই জীবানু হয় ভাইরাস। একটি ব্যাপার মনে রাখতে হবে, আমরা যেই এন্টিবায়োটিক ঔষধ খাই সেটা কখনোই ভাইরাসের উপর কাজ করে না, এটা কাজ করে ব্যাকটেরিয়ার উপর, আবার একেক ধরনের এন্টিবায়োটিক ঔষধ একেক ধরনের ব্যাক্টেরিয়ার উপর কাজ করে। সেজন্য, ভাইরাল জ্বরে এন্টিবায়োটিক খাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।

ভাইরাল জ্বরের জন্য এন্টিবায়োটিক খেলে নিম্নলিখিত সমস্যাসমুহ হতে পারেঃ
শারীরিক দূর্বলতা স্বাভাবিকের চাইতে অনেক বেশি হতে পারে।
এন্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্স তৈরি করতে পারে।
সুপারএডেড ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যেতে পারে।

কখন বুঝবেন এটা ব্যাক্টেরিয়াল ইনফেকশন?
৪ থেকে ৫ দিন পরেও জ্বর কমে না আসলে অথবা শরীর কিছুটা ভালো হওয়ার পরিবর্তে আরও খারাপ হয়ে যাবে, এক ধরনের ইনফেকশন এর সাথে নতুন কোন ইনফেকশন দেখা দিলে বুঝতে হবে এটা ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন। এ ক্ষেত্রে ৭ দিনেও জ্বর কমবে না।

বুধবার, ২৬ জুলাই, ২০১৭

তালাক হয়ে গেলেও পরস্পরের ওপর কিছু বিষয়ে অধিকার থেকে যায়

স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিয়েবিচ্ছেদ বা তালাক হয়ে গেলেও পরস্পরের ওপর কিছু বিষয়ে অধিকার থেকে যায়। আইনি সম্পর্ক বিদ্যমান না থাকলেও আইনগত কিছু অধিকার বা প্রাপ্য দাবি করতে পারে। 
শুধু তা-ই নয় এ প্রাপ্য আদায়ে আইনি ব্যবস্থাও গ্রহণ করা যায়। 
জানা যাক সেই অধিকারগুলো সম্পর্কে।

দেনমোহর

দেনমোহর স্বামীর কাছ থেকে স্ত্রীর একটি বিশেষ অধিকার। মুসলিম বিয়েতে বিয়ের পর অবশ্যই স্ত্রীকে উপযুক্ত দেনমোহর দিতে হবে। তালাক বা বিচ্ছেদের পর স্ত্রীর দেনমোহর বকেয়া থাকলে তা স্ত্রীকে বুঝিয়ে দিতে হবে। অনেক সময় বলা হয় স্ত্রী যদি স্বামীকে আগে তালাক দেন, স্ত্রীকে দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করতে হবে না। এটি একদম ভুল ধারণা। স্বামী বা স্ত্রী যিনিই তালাক দিন না কেন, দেনমোহরের টাকা অবশ্যই স্ত্রীকে দিতে হবে। পারিবারিক আদালতে স্ত্রী মামলা করে দেনমোহর আদায় করতে পারেন। অবশ্যই তালাক কার্যকর হওয়ার তিন বছরের মধ্যে মামলা করতে হবে।

ভরণপোষণ

মুসলিম আইনে তালাকের নোটিশ পাওয়ার পর বা তালাকের নোটিশ প্রদানের পর স্ত্রী ইদ্দতকালীন ভরণপোষণ পাবেন। অর্থাৎ, তালাক কার্যকর হওয়ার পর স্ত্রী মাত্র তিন মাসের জন্য ভরণপোষণ পাবেন। ইদ্দতকাল শেষ হওয়ার পর আর ভরণপোষণ পাবেন না। স্ত্রী গর্ভবতী থাকলে সন্তান প্রসব না হওয়া পর্যন্ত যেহেতু তালাক কার্যকর হয় না, তাই সন্তান প্রসব হওয়া পর্যন্ত তাঁকে ভরণপোষণ দিতে হবে। যদি বিয়ে বিদ্যমান থাকা অবস্থায় স্বামী স্ত্রীকে কোনো ভরণপোষণ না দিয়ে থাকেন, তাহলে এই বকেয়া ভরণপোষণ চেয়ে পারিবারিক আদালতের আশ্রয় নেওয়া যাবে।

সন্তানকে কাছে রাখা ও ভরণপোষণ

মুসলিম আইন অনুযায়ী, বাবা অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানের আইনগত অভিভাবক, আর মা হচ্ছেন সন্তানের তত্ত্বাবধায়ক। যদি বাবা-মায়ের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়ে যায় তাহলে মা তাঁর সন্তানের তত্ত্বাবধান করার ক্ষমতা হারাবেন না। ছেলের ক্ষেত্রে সাত বছর বয়স পর্যন্ত এবং মেয়েসন্তানের বয়ঃসন্ধি বয়স পর্যন্ত নিজের কাছে রাখার অধিকার আছে মায়ের। সন্তানের ভালোর জন্য যদি সন্তানকে মায়ের তত্ত্বাবধানে রাখার আরও প্রয়োজন হয়, সে ক্ষেত্রে এ বয়সসীমার পরও মা সন্তানকে নিজের কাছে রাখতে পারবেন। এ জন্য ক্ষেত্রবিশেষে আদালতের অনুমতির প্রয়োজন হতে পারে। মা যদি দ্বিতীয় বিয়ে করেন তাহলে সন্তানকে নিজের হেফাজতে রাখার ক্ষমতা হারাতে হতে পারে।

বিচ্ছেদের পর সন্তানেরা কার কাছে থাকবে, এ নিয়ে বিরোধ দেখা দিলে পারিবারিক আদালতে আশ্রয় নেওয়া যাবে। পারিবারিক আদালত তখন আইন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেবেন সন্তানেরা কার কাছে থাকবে। আইনের পাশাপাশি আদালতের ক্ষমতা রয়েছে সন্তানের কল্যাণের দিকটি বিবেচনা করা। সন্তান যার কাছেই থাকুক না কেন, সন্তানকে দেখার অধিকার থেকে কেউ কাউকে বঞ্চিত করতে পারবেন না। বিচ্ছেদের পর সন্তান বাবা কিংবা মা যার কছেই থাকুক না কেন, তাদের ভরণপোষণের দায়িত্ব সম্পূর্ণ বাবার। সন্তানকে দেখার অনুমতির জন্য এবং ভরণপোষণ চেয়ে পারিবারিক আদালতে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।


লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট

শনিবার, ৮ জুলাই, ২০১৭

যকৃত বা লিভার বা কলিজা যত্ন নিন, মেনে চলুন ৮টি পরামর্শ

যকৃত বা লিভার বা প্রচলিত বাংলায় 'কলিজা' হচ্ছে আমাদের শরীরের একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ।
সুস্থ থাকতে চাইলে, শরীরের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের মতো এর যত্নও সমানভাবে নিতে হবে। আজকের স্বাস্থ্য ও জীবন অনুষ্ঠানে আমরা যকৃতের যত্নে চিকিত্সকদের দেওয়া ৮ পরামর্শ নিয়ে আলোচনা করবো।
আশা করা যায়, এই পরামর্শগুলো মেনে চলতে আপনার যকৃত সুস্থ থাকবে এবং আপনিও সুস্থ থাকবেন।

সম্প্রতি একটি স্বাস্থ্য বিষয়ক ওয়েবসাইটে এই ৮টি পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। 
তবে, সে আলোচনায় যাবার আগে আমি যকৃত সম্পর্কে কিছু প্রাথমিক তথ্য শ্রোতাদের সামনে তুলে ধরতে চাই। 
যকৃত বা লিভার হচ্ছে দেহের বৃহত্তম গ্রন্থি। 
এটি মেরুদণ্ডী ও অন্যান্য কিছু প্রাণীদেহে অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। 
এটি প্রাণীদেহের বিপাকে ও অন্যান্য কিছু শারীরিক কাজে প্রধান ভূমিকা পালন করে। 
গ্লাইকোজেনের সঞ্চয়, প্লাজমা প্রোটিন সংশ্লেষণ, ওষুধ বা অন্যান্য রাসায়নিকের বিষক্রিয়া দূর করা ইত্যাদি ক্ষেত্রে এর ভূমিকা অপরিহার্য। 
যকৃত মধ্যচ্ছদার নিচের অংশে অবস্থিত। 
যকৃতে পিত্ত উত্পন্ন হয়; পিত্ত একধরনের ক্ষারীয় যৌগ যা পরিপাকে সহায়তা করে, বিশেষত স্নেহজাতীয় খাদ্যের ইমালসিফিকেশনে। 
এ ছাড়া, যকৃত দেহের বিভিন্ন জৈব-রাসায়নিক প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে।
 যকৃত ২টি খন্ডে বিভক্ত।

লিভারের ওজনের পাঁচ থেকে দশ ভাগের বেশি চর্বি দিয়ে পূরণ হলে যে রোগটি হয় তাকে 'ফ্যাটি লিভার' বলে। 
পশ্চিমা বিশ্বে সাধারণত মদ্যপানের কারণে ফ্যাটি লিভার হয়ে থাকে। 
তবে বহুমূত্র ,শর্করা জাতীয় খাদ্যের আধিক্য, রক্তে চর্বির আধিক্য, উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা ইত্যাদি কারণেও ফ্যাটি লিভার হয়।
লিভারে জমা চর্বি অনেক সময় স্থানীয় প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং এ প্রদাহ থেকে কিছুসংখ্যক রোগীর লিভার সিরোসিস, এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে লিভার ক্যানসারও হতে পারে। 
প্রাথমিক অবস্থায় এই রোগের কোনো উপসর্গ থাকে না, অন্য রোগের পরীক্ষা করার সময় সাধারণত রোগটি ধরা পড়ে। 
কখনো কখনো পেটের উপরিভাগের ডানদিকে ব্যাথা, অবসন্নতা, ক্ষুধামান্দ্য ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

আপনি জানেন কি, আমাদের অস্থিসন্ধি, Tendon ও Ligamentইত্যাদির ওপর যকৃতের প্রভাব অনেক বেশি? 
দীর্ঘ সময় ধরে কম্পিউটার ও টেলিভিশনের সামনে বসে থাকলে অনেকের অস্থিসন্ধি, Tendon ও Ligament-এ স্টিফনেস দেখা দিতে পারে। এটি হয় আমাদের যকৃত ঠিকমতো কাজ না-করলে। তা ছাড়া, দীর্ঘক্ষণ একজায়গায় বসে থাকলে বা খেলাধুলা থেকে বিরত থাকলে দেখবেন আপনার মেজাজ খিটখিটে হয়ে গেছে।
 তাই একটানা অনেকক্ষণ বসে থাকবেন না। 
এটা আপনার যকৃতের স্বাস্থ্যর জন্য ভালো।

পরামর্শ দুই: অতিরিক্ত সিগারেট ও মদ্যপান থেকে বিরত থাকুন।

আমরা জানি যে, সিগারেট খাওয়া আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। চিকিত্সকরা বলেন, ধূমপানে পায়ের নখ থেকে শুরু করে মাথার চুল পর্যন্ত এমন কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নেই যা কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। তবে, ধূমপানে সবচে বেশি যে অঙ্গগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয় যকৃত সেগুলোর একটি। আর মদের উপাদান 'ইথানল' তো যকৃতের ভয়ঙ্কর শত্রু। সিগারেটের নিকোটিন ও মদের ইথানল মানবদেহে বিভিন্ন রোগ, বিশেষ করে ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে। সুতরাং, ধূমপান ও মদ্যপান থেকে বিরত থাকুন, সুস্থ থাকুন। বিশেষ করে যাদের যকৃতে সমস্যা আছে, তাদের উচিত সিগারেট ও মদ একদম ত্যাগ করা।

পরামর্শ তিন: চিকিত্সকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাবেন না।

যদি আপনার নিজে নিজে ওষুধ খাওয়ার এই বদভ্যাস থাকে তো, আজই তা ত্যাগ করুন। এ অভ্যাস আমাদের যকৃতের জন্য খুবই খারাপ। চিকিত্সকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খেলে অপ্রয়োজনীয় ও অতিরিক্ত ওষুধ খাওয়া হয়ে যেতে পারে এবং সেক্ষেত্রে সেসব ওষুধ শরীরের যকৃতের জন্য বোঝাস্বরূপ হবে। আর যকৃতের সমস্যা ভুগছেন এমন রোগীদের উচিত চিকিত্সকে তার রোগ সম্পর্কে ঠিকমতো অবহিত করা। অন্য রোগের চিকিত্সার জন্য গেলেও, যকৃতের সমস্যার জন্য তিনি কী ওষুধ খাচ্ছেন, তা চিকিত্সককে জানাতে হবে। কারণ, যকৃতের রোগীদের জন্য চিকিত্সকরা ওষুধ প্রেসক্রাইব করার সময় বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করেন।

পরামর্শ চার: তেলেভাজা খাবার বা চর্বিযুক্ত খাবার বেশি খাবেন না।

তেল হচ্ছে আমাদের নিত্যদিনের খাবারের এক অপরিহার্য উপাদান। চর্বি আমাদের শরীরের এক প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান। পরিমিত চর্বিযুক্ত খাবার আমাদের শরীরে শক্তি যোগায়। কিন্তু অতিরিক্ত তেলাভাজা খাবার বা চর্বিযুক্ত খাবার কিন্তু ভালো নয়। তেলেভাজা খাবার বা চর্বিযুক্ত খাবার অতিরিক্ত খাওয়া উচিত নয়। তেলেভাজা বা অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার আমাদের যকৃতের জন্য ভালো নয়।

মাদকদ্রব্য সেবন শরীরের জন্য মারত্মক পরিণতি বয়ে আনে এটা আমরা সবাই জানি। মাদকের প্রভাবে আমাদের শরীর স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারে না। যকৃতকে শরীরের এক 'রাসায়নিক কারখানা' বলে অভিহিত করা হয়। শরীরের বিভিন্ন পদার্থের রূপান্তর ও সংশ্লেষের কাজ যকৃতে সম্পন্ন হয়। যকৃত শরীরের বিষাক্ত পদার্থ দূর করে। আগেই বলেছি, সিগারেটের নিকোটিন ও মদের ইথানল যকৃতের মারাত্মক ক্ষতি করে। এ থেকে নিশ্চয়ই আপনারা বুঝতে পারছেন মাদরের কী ধরনের নেতিবাচক প্রভাব যকৃতের ওপর পরে।

পরামর্শ ৬: প্রক্রিয়াকরণকৃত খাদ্য খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

প্রক্রিয়াকরণকৃত বা প্রসেস্ড খাবার খেতে আপনি পছন্দ করেন কি? এসব খাবারে প্রিজারভেটিভ নামের একধরনের রাসায়নিক পদার্থ থাকে, যা আমাদের যকৃতের ক্ষতি করে। এক কথায় বলা যায়, এধরনের খাবার আমাদের শরীরের শুধু ক্ষতিই করতে পারে, লাভ নয়।

পরামর্শ ৭: মেজাজ নিয়ন্ত্রণে রাখুন।

বাংলাদেশে একটি বহুল প্রচলিত শ্লোগান আছে: রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন। আসলে রাগ মাঝে মাঝে প্রয়োজনীয় হলেও, কথায় কথায় রেগে যাওয়া বা অতিরিক্ত রেগে যাওয়া কখনোই ভালো নয়। আপনি যখন প্রচণ্ড রেগে যান বা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন, তখন আপনার শরীরের নানান সমস্যা দেখা দিতে পারে, যেমন: পেট ব্যথা, মাথা ব্যথা, বুকে ব্যথা, উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে উচ্চ শর্করা ইত্যাদি। মেয়েদের ক্ষেত্রেও দেখা দিতে পারে বিশেষ কিছু উপসর্গ। আর এসবকিছু আপনার যকৃতের জন্য ভালো নয়। তাই, নিজের মেজাজ নিয়ন্ত্রণে রাখুন, সুস্থ থাকুন।

পরামর্শ ৮: সঠিক সময়ে এবং পর্যাপ্ত সময় ধরে ঘুমান।

প্রিয় শ্রোতা, ঘুম নিয়ে আমরা আগের অনুষ্ঠানে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি। 
যথেষ্ট ঘুম না-হলে, আমাদের যকৃতে রক্তপ্রবাহ দুর্বল হয়। 
আর এভাবে চলতে থাকলে আমাদের রোগ-প্রতিরোধক শক্তিও দিন দিন কমতে থাকে। 
অতএব, আমাদের শরীরের জন্য যথেষ্ট ঘুম প্রয়োজন। 
সঠিক সময়ে, সঠিক নিয়মে পর্যাপ্ত সময় ধরেন ঘুমান এবং সুস্থ থাকুন।

অপাত্রে দয়ার পরিনাম - শেখ সাদির গল্প

আরব দেশের একদল দুর্ধর্ষ দস্যু এক গিরিপথের পাশে ঘাঁটি করে থাকত এবং সুযোগ মত পথিকদের কাফেলা আক্রমণ করে লুটতরাজ করত। 
আশেপাশের বাসিন্দারাও তাদের আক্রমণ ও অত্যাচার থেকে রেহাই পেত না। ফলে সেই গিরিপথ দিয়ে লোক চলাচল এবং বণিকদের ব্যবসা বন্ধ হবার উপক্রম হলো। 
স্থানীয় বাসিন্দারাও তাদের ভয়ে সর্বদা ভীত সন্ত্রস্থ থাকত। বাদশার সেনাবাহিনী যথেষ্ট চেষ্টা করেও তাদেরকেও দমন করতে সমর্থ হল না। 
কারণ তাদের আশ্রয়স্থল পাহাড়ের ওপরে এমন নির্ভত জংগলের মধ্যে অবস্থিত ছিল, যা খুঁজে বের করা এবং তাদেরকে গ্রেফতার করা সহজ সাধ্য ছিল না। 
অথচ প্রজাসাধারণের জানমালের নিরাপত্তার খাতিরে এই দস্যুদেরকে নির্মল করা আশু প্রয়োজন। দেশের চিন্তাশীল নেতৃবৃন্দ ভাবলেন, এভাবে এদেরকে আরো কিছু দিন প্রশ্রয় দিলে এরা আরো শক্তিশালী হবে, তখন এদের মোকাবিলা করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়বে।
উচ্চ পর্যায়ের পরামর্শ সভা বসল।
 স্থির হল, একদল অভিজ্ঞ গুপ্তচর তাদের গতিবিধি লক্ষ্য করে তাদের আড্ডা আবিষ্কার করবে। তারপর সাহসী দূরদর্শী এবং সমর কুশল একদল সৈন্য ওদের ঘাঁটির আশেপাশের জংগলে খুব সাবধানে লুকিয়ে থাকবে।
 যখন ওরা ডাকাতি শেষে ঘাঁটির ফিরবে এবং লুট করা মাল ও আস্ত্রশস্ত্র খুলে রেখে ঘুমিয়ে পড়বে , তখন তারা গুপ্তস্থান থেকে হঠাত ওদেরকে ঘিরে ফেলবে। 
যেমন কথা, তেমনি কাজ।
 যথাসময়ে দস্যুদেরকে বন্দী করে রাজদরবারে আনা হলো। বাদশা তাদের সবাইকে হত্যা করার হুকুম দিলেন।
দস্যুদের মধ্যে কচি বয়সের একটা ছেলেও ছিল। 
তার চেহারা ছিল যেমন সুন্দর, স্বাস্থ্যও ছিল তেমনি ভালো। 
দেখলে মনে হয় ভদ্র পরিবারের সন্তান। 
ছেলেটার প্রিয়দর্শন চেহারা দেখে একজন মন্ত্রীর প্রাণে স্নেহের সঞ্চার হলো, এমন সুন্দর একটা কিশোর বালককে হত্যা করতে তার মন কিছুতেই সায় দিচ্ছিল না। 
তিনি বাদশার সামনে নতজানু হয়ে করজোড়ে নিবেদন করলেনঃ জাঁহাপানা! দয়া করে যদি এ ছেলেটার প্রাণ ভিক্ষা দিতেন, তবে বান্দা চিরকৃতজ্ঞ ও বাধিত হত। হুজুরের অনুমতি পেলে আমি তাকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করতাম।
মন্ত্রীর সুপারিশে বাদশা বিরক্ত হলেন। 
তার রাজোচিত মার্জিত বুদ্ধিতে কাজটা সঙ্গত মনে হলো না। 
কারণ, বংশগত মন্দ স্বভাব সুশিক্ষায় পরিবর্তিত হয় না। তিনি মন্তব্য করলেনঃ
“নিচ বংশে জন্ম যার নিচ তার মন,
সুশিক্ষায় ভালো তা যে হয় না কখন।
অধমের শিক্ষাদান সার্থক না হয়,
গম্বুজের পরে যেমন ঢিল নাই রয়।“
এই দুষ্টু বদমায়েশদেরকে সমুলে বিনাশ করাই উত্তম।
 আগুন নিভিয়ে ফুলকি রেখে দেয়া বা সাপ মেরে তার বাচ্চা পোষা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।
মন্ত্রী মহোদয় সবকিছু শুনলেন এবং অনিচ্ছা সত্ত্বেও ভদ্রতার খাতিরে বাদশার কথা সমর্থন করলেন। বাদশার সুচিন্তিত অভিমতের ভুয়সী প্রশংসাও করলেন।
 সঙ্গে সঙে এও বললেনঃ হুজুর যা বলেছেন, তা বাস্তব সত্য। দস্যুদলে থেকে ছেলেটা বড় হলে পরিণামে দস্যু হতো।
 কিন্তু আমার মনে হয়, ছেলেটার একেবারে কচি বয়স। 
জীবন যৌবনের স্বাধ এখনও পায়নি। কোনও প্রকারের পাপের কালিমা এখনও তার স্বচ্ছ অন্তঃকরণকে মলিন করেনি।
ওদের জাতীয় নির্মম হিংস্র স্বভাবের মোহ আজো ওর কচি মনে দাগ কাটেনি। 
ফেরেশতার মত নিষ্পাপ কোমলমতি বালক। 
এখন থেকে যদি ওকে সুশিক্ষা দেয়া হয় এবং আমাদের মার্জিত ভদ্র পরিবেশে রেখে ভদ্রতা, মানবতা ও আদব-কায়দা শেখান হয়, তবে নিশ্চয় জ্ঞানী ও চরিত্রবান হবে।
 সৎ সংগে স্বভাব পরিবর্তনের সময় এখনও তার রয়েছে। হাদীস শরীফে আছেঃ প্রত্যেক শিশু প্রকৃতিগতভাবে সৎ মুসলিম হয়েই ভূমিষ্ঠ হয়। 
পরে পিতামাতা তাকে নিজ নিজ ধর্মের বিধান শিক্ষা দেয়। বাবা-মা ইহুদি হলে ইহুদি, খ্রিষ্টান হলে খ্রিষ্টান এবং অগ্নি উপাসক হলে অগ্নি উপাসক দলভুক্ত হয়।
ভাল লোকের সংশ্রবে থেকে কত মন্দলোক ভালো হয়ে যায়। আবার মন্দ লোকের সংশ্রবে থেকে কত ভালো লোকও মন্দ হয় যায়।
“নবীর পুত্র হলো কাফের মিশে সে কাফের সনে,
কুকুর সে পেল মানুষের মান সত্যের অনুগমনে।‘
মন্ত্রীমহোদয়ের যুক্তিপূর্ণ মন্তব্য শুনে সভাসদ্গণের অনেকে তার পক্ষ সমর্থন করলেন এবং তার সাথে ছেলেটার মুক্তির আবেদন জানালেন।
অগ্যতা বাদশাহ তার দন্ডাদেশ মওকুফ করে দিলেন এবং বললেনঃ আপনাদের অনুরোধে ওকে ক্ষমা করলাম বটে। 
কিন্তু কাজটা আমার বিবেচনায় সঙ্গত মনে হলো না। কারন জ্ঞানি লোকেরা বলে গেছেনঃ শত্রুকে অক্ষম মনে করে তুচ্ছ করা উচিত নয়।
 সঙ্কীর্ন পয়ঃপ্রণালী অনেক সময় বিরাট নদীতে পরিণত হতে দেখা গেছে।
মন্ত্রীমহোদয় আদর করে ছেলেটাকে বাড়ি নিয়ে এলেন এবং পরম যত্নে প্রতিপালিত করতে লাগলেন। তার সুশিক্ষার জন্য উপযুক্ত শিক্ষক নিযুক্ত করা হলো। ছেলেটা খুব মেধাবী ও হুঁশিয়ার ছিল। নিজ প্রতিভা বলে অল্প দিনের মধ্যে সে লেখাপড়ায় বেশ উন্নতি দেখাতে লাগল।
জ্ঞান-বুদ্ধি স্বভাব চরিত্র ও ভদ্র ব্যবহারে সে সবার প্রিয় পাত্র হয় উঠল।
শাহী দরবারের আদব-কায়দা ও চালচলনে সে বেশ অভ্যস্ত হলো।
একদা মন্ত্রীমহোদয় রাজদরবারে কথা প্রসঙ্গে ওই ছেলেটার গুণকীর্তন করে বললেনঃ সুশিক্ষা ওর ভেতর এমনি তাছির করেছে যে, তার পৈত্রিক অসভ্য স্বভাব একদম দূরীভূত হয়ে গেছে।
বাদশা একটু মুচকি হেসে বললেনঃ
পরিণামে শৃগাল বাচ্চা শৃগালই রয়,
যদিও সে লোকালয়ে সুশিক্ষিত হয়।
এভাবে কয়েকটা দিন গড়িয়ে গেল। 
গতিশীল দুনিয়ার চিরন্তন নিয়মে সেই বালকও যৌবনে পদার্পন করলো। 
মন্ত্রীর পালক পুত্র হিসেবে সবাই তাকে সমীহ করে চলে। তার বন্ধুবান্ধবেরও অভাব নেই।
দেশের ভেতর একদল দুষ্কৃতিকারী ছিল। 
ওই যুবক গোপনে গোপনে কবে তাদের হাতে হাত মিলিয়েছে তা কেউই টের পায়নি।
 একদিন সময় সুযোগমত সকল কৃতজ্ঞতার বন্ধন ছিন্ন করে সে তার প্রতিপালক মন্ত্রীকে ও তার উভয় পুত্রকে হত্যা করে তাদের সকল ধনসম্পদ নিয়ে দস্যু দলে ভিড়ে গেল এবং শহর ছেড়ে সেই পাহাড়ের ঘাঁটিতে গিয়ে বাবার স্থান অধিকার করে বসলো। 
এই সংবাদ শুনে বাদশা আক্ষেপ করে বললেনঃ
“নিকৃষ্ট লোহায় কভু হয়না তলোয়ার,
ইতর শেখে না কভু ভদ্র ব্যবহার।
বরষার বারি ঝরে সর্বত্র সমান,
কোথাও আগাছা জন্মে কোথা ফলে ধান।
লোনা জমি নেবে নাকো সোনার ফসল,
মেহনত যতই কর সকলই বিফল।
ভালোদের ক্ষতি করা অন্যায় যেমন,
মন্দদের হিত করা দোষের তেমন।‘
শিক্ষাঃ

 ইবলিসের ঔরষে ইবলিসই জন্ম হয়। 
সেখান থেকে ফেরেশতা বা মানুষ পয়দা হওয়ার চিন্তা করা যায় না।
 শত্রুর সন্তান চির শত্রুই হয়, তাকে দুধ কলা দিয়ে পোষা মানে শত্রুকে বলিষ্ঠ করে তোলা।
 জ্ঞানী লোকেরা কখনও আগুন নিভিয়ে ফুলকি রাখে না অথবা সাপ মেরে তার বাচ্চা পোষে না।
 পাপী লোকের সন্তানের মধ্যে এক সময় পাপের কালিমার বীভৎস রূপ ফুটে উঠবেই, তাকে সতই সাধু প্রকৃতির লোক মনে হোক না কেন। 
শুকরের বাচ্চা শুকরই হবে, যতই তাকে পোষা হোক না কেন, সুযোগ পেলে সে মলমূত্রে অবস্থান করবেই।

বৃহস্পতিবার, ৬ জুলাই, ২০১৭

সন্তান তার বাবা-মায়ের যা দেখে, তা-ই শেখে

প্রায়ই অনেককে আক্ষেপ করতে দেখা যায় যে, সচেতন অভিভাবক হয়েও সন্তানকে মনের মতো করে তৈরি করতে পারলাম না! 
আগে তাও কথা শুনত, কিন্তু এখন একেবারে বখে গেছে! 
কিন্তু সন্তানের এমন আচরণ নিয়ে চিন্তিত অভিভাবকদের অনেকেই জানেন না তাঁদের কিছু ভুলের কারণে এমন হতে পারে। 
এসব সমস্যা এড়াতে তাঁরা যা করতে পারেন, সে বিষয়ে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, সন্তান তার বাবা-মায়ের যা দেখে, তা-ই শেখে। সন্তানের সামনে নিজের ত্রুটিপূর্ণ অভ্যাস বা কাজ করা থেকে বিরত থাকুন। পরচর্চা তো করবেনই না। 
যেকোনো বিষয় নিয়ে সন্তানকে একই কথা বা উপদেশ বারবার দেওয়া হয় অনেক সময় একই কথা বারবার শুনলে শিশুদের মধ্যে ‘সত্তাহীনতার’ প্রবণতা দেখা দেয়। 
তখন নিজ থেকে কাজ করার তাড়না অনুভব করে না।

বাবা-মা হলে যা করবেন না

অতিরিক্ত নজরদারি

সন্তানের সব কাজে অত্যন্ত সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন কোনো কোনো অভিভাবক। মূলত সন্তানের জন্য অতিরিক্ত উদ্বেগ, কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিজস্ব হতাশা এবং নিয়ন্ত্রণ করার মনোভাব থেকে এ ধরনের আচরণ তাঁরা করে থাকেন। এতে শিশুর মধ্যে হীনম্মন্যতা তৈরি হতে থেকে। কয়েক বছর পর ওই শিশুর যখন পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসেবে আচরণ করার কথা, তখনো সে অন্যের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল থাকে।

অতিরিক্ত চাপ
‘তুমি কিছু করতে পারবে না’ বা ‘সবাই পারে তুমি কেন পারো না’—এই কথাগুলো কমবেশি সবাইকেই শুনতে হয়েছে। সন্তানের মনের ভেতরের জেদকে আরেকটু উসকে দিতে এমন বলা হয়। এখানেও একটা ভুল হয়ে যায়। 
কোনো বাবা-মায়েরই উচিত না নিজের সন্তানকে অন্যের সন্তানের সঙ্গে তুলনা করা। আমরা ভুলে যাই সন্তান একজন আলাদা সত্তা, সে সবার মতো হবে না।
 সন্তানকে ভালো কিছু করার তাগিদ দিতে গিয়ে তাকে উল্টো দুর্বল করে দিই এবং এটাই একসময় কাল হয়ে দাঁড়ায়। সে হতাশ হয়ে পড়ে। 
মা-বাবার আচরণ সন্তানের মধ্যে সৃষ্টি করতে পারে দূরত্ব। নিজের প্রতি বিতৃষ্ণা থেকে আশ্রয় নিতে পারে নেশাজাতীয় দ্রব্যের। 
অনেক সময় একরোখা স্বভাবেরও হয়ে ওঠে এই শিশুরা।

অতিরিক্ত পরিশ্রম

ছেলেবেলা থেকে বেশি বেশি কাজ করলে, অনেক পড়ালেখা আর খেলাধুলা করলে সন্তান ভবিষ্যতে অনেক উদ্যমী হবে—এভাবে ভাবা ঠিক নয়। সব শিশুর ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য নয়। 
অনেক সময় সন্তানদের ব্যস্ত রাখতে গিয়ে তাদের দিয়ে অতিরিক্ত পরিশ্রম করিয়ে ফেলি, কঠিন ছকে বেঁধে ফেলি সন্তানের জীবন। শৈশবে পা দেওয়া বাচ্চারা পরবর্তী সময়ে ঝিমিয়ে পড়ে, কাজের প্রতি তীব্র অনীহা এবং একগুঁয়ে স্বভাবের হয়।
 সন্তানকে বুঝে তার সক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে ঠিক করুন তার পরিশ্রমের পাল্লা।

ব্যক্তিগত অভিমত চাপিয়ে দেওয়া

ব্যক্তিগত বিশ্বাস কিংবা অভিমত থেকে অপরকে পরিচালনা করা উচিত নয়। আমরা অনেকেই জীবনে অনেক ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি, নানা ধরনের অভিজ্ঞতা হয়েছে; তাই বলে সেই অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে সেটাই ঠিক ধরে নেওয়া ঠিক না।
 যেমন, আপনি ছেলেবেলায় খুব ভোরে উঠে পড়তে বসলে আপনার পড়া খুব ভালো হতো; তাই বলে আপনার সন্তানেরও একইভাবে পড়া হবে, তা ধরে নেওয়া ঠিক নয়। 
আবার আপনি যদি খুব খুঁতখুঁতে স্বভাবের হন, কোনো কাজে অন্যকে বিশ্বাস করতে পারেন না।
 এটিও আপনার সন্তানের ওপর প্রভাব ফেলবে।
 এতে হয়তো আপনার সন্তান নিজের কাজ সম্পর্কে অসন্তুষ্ট থাকবে অথবা যেকোনো কাজ নিয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।

শনিবার, ১ জুলাই, ২০১৭

শিশু হঠাৎ ব্যথা পেলে কী করবেন

খেলতে গিয়ে, বাড়িতে বা স্কুলে শিশুরা প্রায়ই ব্যথা বা চোট পায়।
এতে তাদের ত্বকের কোনো অংশ হয়তো ছিঁড়ে যায়, কোথাও আঘাতের ফলে ত্বক লাল বা নীল হয়, কখনো আলুর মতো ফুলে ওঠে, কখনো বা থেঁতলে যায়। 
এ রকম পরিস্থিতিতে কী করবেন?

প্রথম কথা হলো, শিশুর সামনে আপনি নিজে ঘাবড়ে যাবেন না বা হইচই করবেন না। 
এতে সে আরও ভয় পেয়ে যাবে। মাথা ঠান্ডা রাখুন। 
তাকে আশ্বস্ত করুন ও আঘাতের জায়গাটি ভালো করে দেখুন।

ত্বকের ওপরের স্তর উঠে গিয়ে নিচের লাল অংশ দেখা গেলে তাকে বলে অ্যাব্রেসন।
সাধারণত কোনো কিছুর সঙ্গে জোরে ঘষা লেগে (যেমন: ফুটবল খেলতে গিয়ে পড়ে গেলে) এ রকম আঘাত লাগে।
এসব ক্ষেত্রে আঘাতের স্থানটা ধরার আগে নিজে ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিন।
তারপর আঘাতের অংশটাও হালকা সাবান-পানি দিয়ে ধুয়ে নিন যাতে ওখানে ময়লা, ধুলা, নুড়িপাথর লেগে না থাকে।
এবার আলতো করে অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম লাগিয়ে দিন।
স্পিরিট বা ডেটলজাতীয় কিছু দেবেন না।
 এতে জ্বালা করবে ও শিশু আরও ভয় পাবে।
 ক্ষত পরিষ্কার দেখালে ও রক্তপাত না হলে জায়গাটা ওভাবেই রেখে দিতে পারেন।
তবে যদি মনে করেন যে ময়লা লেগে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে, পরিষ্কার গজ বা কাপড়ের টুকরো দিয়ে ড্রেসিং করে দিতে পারেন।
দু-এক দিন পর ক্ষতটা কালো বা বাদামি আবরণ দিয়ে ঢেকে যাবে।
একে বলে ক্রাস্ট।
 এই ক্রাস্ট টেনে তোলার দরকার নেই।
এটা আবার নিজে নিজেই ঝরে যাবে ও ভেতরে নতুন ত্বক দেখা যাবে।

আঘাতের কারণে ত্বকের নিচে রক্তক্ষরণ হলে জায়গাটা লাল বা নীলচে হয়ে যায়।
একে বলে ব্রুইস।
এমনটা হলে একটা পাতলা কাপড়ে বরফ পেঁচিয়ে চেপে ধরুন।
তারপর চাপ দিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিন।
আহত স্থান বিশ্রামে রাখুন।
ব্যথা হলে প্যারাসিটামল দিন।

ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী
বিভাগীয় প্রধান, শিশুরোগ বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ

Popular Posts