তালাক হয়ে গেলেও পরস্পরের ওপর কিছু বিষয়ে অধিকার থেকে যায়

স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিয়েবিচ্ছেদ বা তালাক হয়ে গেলেও পরস্পরের ওপর কিছু বিষয়ে অধিকার থেকে যায়। আইনি সম্পর্ক বিদ্যমান না থাকলেও আইনগত কিছু অধিকার বা প্রাপ্য দাবি করতে পারে। 
শুধু তা-ই নয় এ প্রাপ্য আদায়ে আইনি ব্যবস্থাও গ্রহণ করা যায়। 
জানা যাক সেই অধিকারগুলো সম্পর্কে।

দেনমোহর

দেনমোহর স্বামীর কাছ থেকে স্ত্রীর একটি বিশেষ অধিকার। মুসলিম বিয়েতে বিয়ের পর অবশ্যই স্ত্রীকে উপযুক্ত দেনমোহর দিতে হবে। তালাক বা বিচ্ছেদের পর স্ত্রীর দেনমোহর বকেয়া থাকলে তা স্ত্রীকে বুঝিয়ে দিতে হবে। অনেক সময় বলা হয় স্ত্রী যদি স্বামীকে আগে তালাক দেন, স্ত্রীকে দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করতে হবে না। এটি একদম ভুল ধারণা। স্বামী বা স্ত্রী যিনিই তালাক দিন না কেন, দেনমোহরের টাকা অবশ্যই স্ত্রীকে দিতে হবে। পারিবারিক আদালতে স্ত্রী মামলা করে দেনমোহর আদায় করতে পারেন। অবশ্যই তালাক কার্যকর হওয়ার তিন বছরের মধ্যে মামলা করতে হবে।

ভরণপোষণ

মুসলিম আইনে তালাকের নোটিশ পাওয়ার পর বা তালাকের নোটিশ প্রদানের পর স্ত্রী ইদ্দতকালীন ভরণপোষণ পাবেন। অর্থাৎ, তালাক কার্যকর হওয়ার পর স্ত্রী মাত্র তিন মাসের জন্য ভরণপোষণ পাবেন। ইদ্দতকাল শেষ হওয়ার পর আর ভরণপোষণ পাবেন না। স্ত্রী গর্ভবতী থাকলে সন্তান প্রসব না হওয়া পর্যন্ত যেহেতু তালাক কার্যকর হয় না, তাই সন্তান প্রসব হওয়া পর্যন্ত তাঁকে ভরণপোষণ দিতে হবে। যদি বিয়ে বিদ্যমান থাকা অবস্থায় স্বামী স্ত্রীকে কোনো ভরণপোষণ না দিয়ে থাকেন, তাহলে এই বকেয়া ভরণপোষণ চেয়ে পারিবারিক আদালতের আশ্রয় নেওয়া যাবে।

সন্তানকে কাছে রাখা ও ভরণপোষণ

মুসলিম আইন অনুযায়ী, বাবা অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানের আইনগত অভিভাবক, আর মা হচ্ছেন সন্তানের তত্ত্বাবধায়ক। যদি বাবা-মায়ের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়ে যায় তাহলে মা তাঁর সন্তানের তত্ত্বাবধান করার ক্ষমতা হারাবেন না। ছেলের ক্ষেত্রে সাত বছর বয়স পর্যন্ত এবং মেয়েসন্তানের বয়ঃসন্ধি বয়স পর্যন্ত নিজের কাছে রাখার অধিকার আছে মায়ের। সন্তানের ভালোর জন্য যদি সন্তানকে মায়ের তত্ত্বাবধানে রাখার আরও প্রয়োজন হয়, সে ক্ষেত্রে এ বয়সসীমার পরও মা সন্তানকে নিজের কাছে রাখতে পারবেন। এ জন্য ক্ষেত্রবিশেষে আদালতের অনুমতির প্রয়োজন হতে পারে। মা যদি দ্বিতীয় বিয়ে করেন তাহলে সন্তানকে নিজের হেফাজতে রাখার ক্ষমতা হারাতে হতে পারে।

বিচ্ছেদের পর সন্তানেরা কার কাছে থাকবে, এ নিয়ে বিরোধ দেখা দিলে পারিবারিক আদালতে আশ্রয় নেওয়া যাবে। পারিবারিক আদালত তখন আইন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেবেন সন্তানেরা কার কাছে থাকবে। আইনের পাশাপাশি আদালতের ক্ষমতা রয়েছে সন্তানের কল্যাণের দিকটি বিবেচনা করা। সন্তান যার কাছেই থাকুক না কেন, সন্তানকে দেখার অধিকার থেকে কেউ কাউকে বঞ্চিত করতে পারবেন না। বিচ্ছেদের পর সন্তান বাবা কিংবা মা যার কছেই থাকুক না কেন, তাদের ভরণপোষণের দায়িত্ব সম্পূর্ণ বাবার। সন্তানকে দেখার অনুমতির জন্য এবং ভরণপোষণ চেয়ে পারিবারিক আদালতে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।


লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

সিঙ্গাপুরে ওয়ার্ক পারমিটধারীদের জন্য নতুন নিয়ম: চাকরির মেয়াদ সীমা বাতিল, সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৬৩ বছর
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস
সিঙ্গাপুরে ট্রেইনিং রেকর্ড এবং সার্টিফিকেট চেক করার বিস্তারিত গাইড
some common interview questions and answers for a Safety Coordinator position in Singapore
Bangla date add in your website HTML tips.
Safe work procedure for ferrying workers by lorry in singapore
ধর্ষণবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল তিন বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষার্থীদের আল্টিমেটাম
Understanding the New Demerit Point System for Construction and Manufacturing Sectors
সিঙ্গাপুরে নতুন আইন: ১ জুলাই ২০২৫ থেকে ফুটপাথে বাইসাইকেল ও PMD চালানো নিষিদ্ধ, লঙ্ঘনে জরিমানা ও জেল
বসে থাকলেই কোমরে ব্যথা হওয়ার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে
Loading posts...