Recent post

মঙ্গলবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

শিশুর সাথে বাবা মার করণীয় বয়স অনুযায়ী


এক মাস বয়স পর্যন্ত একটি
শিশুর পারা উচিৎঃ

গালে বা মাথায় হাত বোলালে সে দিকে মাথা ঘোরানো
উভয় হাত মুখের দিকে আনা, পরিচিত গলার আওয়াজ বা শব্দ শুনলে সেদিকে ঘোরা।
স্তন চোষা এবং হাত দিয়ে ছোঁয়া ।
পিতা-মাতা এবং যত্নকারীগণের জন্য উপদেশঃ
বাচ্চাকে এমনভাবে ধরুন যাতে চামড়ার সাথে চামড়ার সংস্পর্শ হয় এবং জন্মের এক ঘন্টার মধ্যে বুকের দুধ খাওয়ান।
বাচ্চাকে যখন খাড়া করে ধরবেন মাথায় সাপোর্ট দিন প্রায়ই বাচ্চাকে মাসাজ্‌ করুন এবং জড়াজড়ি করে আদর করুন ।
সবসময় বাচ্চাকে মৃদুভাবে ধরুন ক্লান্ত বা অশান্তি থাকলেও।
প্রায়ই বুকের দুধ খাওয়ান, অন্ততপক্ষে চারঘন্টা পরপর
যতবার সম্ভব বাচ্চার সাথে কথা বলুন, কিছু পড়ুন বা গান করুন ।
জন্মের ৬ সপ্তাহ পরে বাচ্চাকে নিয়ে স্বাস্থ্য-কর্মীর কাছে যান।
যে সব বিপদসংকেতের জন্য লক্ষ্য রাখতে হবেঃ
দুর্বল ভাবে স্তন চোষা বা চুষতে আপত্তি করা।
জোরে আওয়াজ বা উজ্বল আলোয় কোন প্রতিক্রিয়া না হওয়া।
অনেকক্ষণ ধরে কান্না
বমি ও পায়খানা, যার ফলে শরীরে জলের ভাগ কমে যেতে পারে।

৬ মাস বয়সেশিশুর যা পারা উচিৎ:

উপুর হয়ে শুলে মাথা ও বুক উপরে তোলা।
ঝুলছে এমন জিনিষ ধরার চেষ্টা।
বিভিন্ন জিনিষ ধরা এবং ঝাঁকানো।
দুদিকে ফেরা ।
সাহায্য নিয়ে বসা।
হাত ও মুখ দিয়ে সব জিনিষ যাচাই করা।
শব্দ এবং মুখের ভাব নকল করতে শুরু করা।
নিজের নাম শুনলে বা পরিচিত মুখ দেখলে প্রতিক্রিয়া হওয়া।

পিতা-মাতা এবং যত্নকারীগণের জন্য উপদেশঃ
বাচ্চাকে একটা পরিস্কার, নিরাপদ সমতলে রাখুন, যাতে মুক্তভাবে নড়াচড়া করতে পারে এবং জিনিষপত্র ধরতে পারে ।
বাচ্চাকে তুলে ধরুন এমনভাবে, যেন সে আশপাশে কী হচ্ছে দেখতে পায়।
দিনে রাত্রে, চাইলেই বুকের দুধ খাওয়ানো চালু রাখুন, তার সাথে অন্য খাবারও দিতে শুরু করুন(৬থেকে ৮ মাস বয়স পর্যন্ত দিনে দুবার, ৮ থেকে ১২ মস পর্যন্ত দিনে তিন থেকে চারবার)।
যতবার সম্ভব শিশুর সাথে কথা বলুন, পড়ুন বা গান শোনান

যে সব বিপদসংকেতের জন্য লক্ষ্য রাখতে হবেঃ
আড়ষ্টতা বা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নড়াচড়ায় অসুবিধা
অনবরত মাথানাড়া (এটা কানে সংক্রমন থেকেও হোতে পারে, চিকিৎসা না হলে বধিরতা হতে পারে)
শব্দে, পরিচিত মুখ দেখে বা স্তন দেখে কোন প্রতিক্রিয়া না হওয়া বা অল্প হওয়া।
স্তন বা অন্য খাবার ফিরিয়ে দেওয়া।

১২ মাস বয়সে শিশুর যা পারা উচিৎঃ

সাহায্য ছাড়া বসা।
হামাগুড়ি দেওয়া এবং দাড়িয়ে ওঠা।
কিছু ধরে পা বাড়ানো।
শব্দ এবং কথা নকল করার চেষ্টা করা এবং কিছু বললে বোঝা ।
খেলতে এবং হাততালি দিতে ভালবাসা।
কোন শব্দ বা ভঙ্গীর পুনরাবৃত্তি করা।
বুড়ো আঙুল এবং তর্জনী দিয়ে কোন জিনিষ তোলা।
কোন জিনিষ ধরা, যেমন কাপ, চামচ, এবং নিজে নিজে খাওয়ার চেষ্টা করা
পিতা-মাতা এবং যত্নকারীগণের জন্য উপদেশঃ
জিনিষের দিকে দেখিয়ে তার নাম বলুন, শিশুর সাথে প্রায়ই খেলুন ও কথা বলুন।
খাবার সময় সবার সাথে মেলামেশায় উৎসাহ দিন।
যদি শিশুর বিকাশ ধীরে হয় বা কোন অসামর্থ্য থাকে, যেসব সামর্থ্য আছে তাতে জোর দিন এবং বাড়তি উদ্দীপনা ও বেশী মেলামেশা করুন।
বাচ্চাকে এক জায়গায় অনেকক্ষণ ছেড়ে রাখবেন না।
দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য বাচ্চার আশপাশ যতটা সম্ভব নিরাপদ রাখুন।
বুকের দুধ খাওয়ানো চালু রাখুন এবং খেয়াল রাখুন যেন পর্যাপ্ত খাবার থাকে।
অনেক রকম বাড়ীর খাবারও যেন যথেষ্ট পরিমানে থাকে।
শিশুকে কাপ ও চামচ দিয়ে নিজে খাওয়ার পরীক্ষা করতে দিন ।
শিশুর সব টীকাকরণ এবং পরামর্শ মত সব মাইক্রোনিউট্রিয়েণ্ট বিকল্প দেওয়া নিশ্চিত করুন।

যে সব বিপদসংকেতের জন্য লক্ষ্য রাখতে হবেঃ
অন্যদের শব্দের প্রতিক্রিয়ায় শিশু শব্দ করে না।
নড়াচড়া করা বস্তুর দিকে শিশু তাকায় না।
শিশু অষহিষ্ণু এবং যত্নকারীর প্রতি প্রতিক্রিয়া নেই।
শিশুর ক্ষিদে বোধ নেই বা খাবার ফিরিয়ে দেয়।

দুই বছর বয়স পর্যন্ত
শিশুর যা পারা উচিৎঃ

হাটা, ঊঁচুতে চড়া এবং দৌড়োনো।
কোন জিনিষ বা ছবির নাম বললে সেটার দিকে দ্যাখানো (যেমন নাক, কান)।
কয়েকটা শব্দ একসাথে বলা (১৫ মাস বয়স থেকে)
সাধারণ নির্দেশ পালন করা।
একটা পেন্সিল বা রঙপেন্সিল দিলে আঁকিবুকি করা।
সাধারণ গল্প বা গানে মজা পাওয়া।
অন্যদের ব্যবহার নকল করা।
নিজে নিজে খাওয়া শুরু করা।

পিতা-মাতা এবং যত্নকারীগণের জন্য উপদেশঃ
বাচ্চার সাথে পড়ুন, গান করুন বা খেলুন।
বাচ্চাকে বিপজ্জনক জিনিষ এড়িয়ে যেতে শেখান।
বাচ্চার সাথে সাথে স্বাভাবিকভাবে কথা বলুন, বাচ্চাদের মত করে কথা বলবেন না।
বুকের দুধ খাওয়ানো চালু রাখুন এবং নিশ্চিত করুন যেন বাচ্চা যথেষ্ট খাবার পায় এবং বাড়ীর খাবারও
বাচ্চাকে খেতে উৎসাহ দিন, জোর করবেন না
সাধারণ কিছু নিয়ম এবং যুক্তিসংগত কিছু প্রত্যাশা বলে দিন।
বাচ্চার করা কাজের জন্য প্রশংসা করুন।

যে সব বিপদসংকেতের জন্য লক্ষ্য রাখতে হবেঃ
অন্যদের প্রতি প্রতিক্রিয়ার অভাব।
হাঁটার সময় ভারসাম্য ঠিক রাখতে অসুবিধা(একজন পরিশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীর কাছে যান)।
আঘাত এবং ব্যবহারের অবোধগম্য রকম পরিবর্তন(বিশেষতঃ যদি শিশু অন্যদের দ্বারা প্রতিপালিত হয়ে থাকে)
ক্ষিদের অভাব।


তিন বছরের সময় শিশুর যা পারা উচিৎঃ

সহজে হাঁটা, দৌড়োনো, চড়া, পা ছোঁড়া এবং লাফানো
সাধারণ বস্তুসমূহ ও ছবি চেনা এবং আঙুল দিয়ে চিহ্নিত করা।
দুই বা তিন শব্দ দিয়ে বাক্য রচনা করা।
নিজের নাম ও বয়স বলা।
রঙের নাম বলা।
সংখ্যা বোঝা।
খেলায় মিছিমিছি জিনিষ ব্যবহার করা।
নিজেকে খাওয়ানো।
ভালবাসা প্রকাশ করা।

পিতা-মাতা এবং যত্নকারীগণের জন্য উপদেশঃ
বাচ্চার সাথে বই পড়ুন ও দেখুন এবং ছবিগুলো নিয়ে কথা বলুন।
বাচ্চাকে গল্প বলুন এবং ছড়া ও গান শেখান।
শিশুকে তার নিজের আলাদা খাবারের প্লেট বা বাটি দিন।
শিশুকে খেতে উৎসাহ দিন, তার নিজের প্রয়োজন মত সময় নিয়ে।
শিশুকে পোষাক পরতে, হাত ধুতে এবং শৌচাগার ব্যবহার করতে সাহায্য করুন।

যে সব বিপদসংকেতের জন্য লক্ষ্য রাখতে হবেঃ
খেলাধুলায় উৎসাহের অভাব।
বারবার পড়ে যাওয়া।
ছোট ছোট জিনিষকে সামলাতে অসুবিধা।
সাধারণ কথা বুঝতে না পারা।
বেশ কয়েকটা শব্দ দিয়ে কথা বলতে অসমর্থতা।
খাবারে উৎসাহ না থাকা বা কম থাকা।

পাঁচ বছর বয়সে শিশুর যা পারা উচিৎঃ
সুসমঞ্জসভাবে চলাফেরা করতে।
সম্পূর্ণ বাক্যে কথাবলতে এবং অনেক বিভিন্ন শব্দ ব্যবহার করতে।
বিপরীত অর্থ বুঝতে(যেমন মোটা এবং পাতলা, লম্বা এবং বেটে)
অন্য শিশুদের সাথে খেলতে।
সাহায্য ছাড়াই পোষাক পড়তে।
সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দিতে।
পাঁচ থেকে দশটা জিনিষ গুনতে।
নিজের হাত ধুতে ।

পিতা-মাতা এবং যত্নকারীগণের জন্য উপদেশঃ
বাচ্চার কথা শুনুন।
বাচ্চার সাথে প্রায়ই কথাবার্তা বলুন।
যদি বাচ্চা তোতলায়, ধীরে ধীরে কথা বলতে উপদেশ দিন।
গল্প পড়ুন এবং বলুন।
বাচ্চাকে খেলতে এবং খুঁটিয়ে দেখতে উৎসাহ দিন ।

যে সব বিপদসংকেতের জন্য লক্ষ্য রাখতে হবেঃ
খেলার সময়ে বাচ্চা কেমন করে অংশ নেয় লক্ষ্য করুন।
যদি সে ভীত হয়, রাগারাগি করে বা মারামারি করে সেটা আবেগজনিত সমস্যা বা নির্যাতনের চিহ্ন হতে পারে।


কোন মন্তব্য নেই:

Popular Posts