অ্যাডলফ হিটলার: উত্থান, শাসন ও পতনের ইতিহাস

 


অ্যাডলফ হিটলার: উত্থান, শাসন ও পতনের ইতিহাস

অ্যাডলফ হিটলার ইতিহাসের অন্যতম বিতর্কিত ও প্রভাবশালী ব্যক্তি। তার নেতৃত্বে জার্মানি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম প্রধান শক্তি হয়ে ওঠে, কিন্তু যুদ্ধ শেষে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। হিটলারের জীবন, রাজনৈতিক দর্শন, নাৎসি পার্টির উত্থান এবং তার পতনের বিস্তারিত ইতিহাস এখানে তুলে ধরা হলো।


প্রারম্ভিক জীবন (১৮৮৯-১৯১৩)

অ্যাডলফ হিটলার জন্মগ্রহণ করেন ২০ এপ্রিল ১৮৮৯ সালে, অস্ট্রিয়ার ব্রাউনাউ আম ইন শহরে। তার বাবা অ্যালোইস হিটলার ছিলেন একজন কাস্টমস কর্মকর্তা এবং মা ক্লারা হিটলার ছিলেন গৃহিণী।

  • ছোটবেলায় হিটলার চিত্রশিল্পী হতে চেয়েছিলেন, কিন্তু ভিয়েনার একাডেমি অফ ফাইন আর্টস থেকে তিনি দু’বার ব্যর্থ হন।
  • ১৯১৩ সালে তিনি জার্মানির মিউনিখ শহরে চলে যান এবং সেখানে বসবাস শুরু করেন।



প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ (১৯১৪-১৯১৮)

হিটলার প্রথম বিশ্বযুদ্ধে (World War I) জার্মান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং পশ্চিম ফ্রন্টে লড়াই করেন।

  • তিনি দুবার Iron Cross সম্মাননা পান, যা সাহসিকতার জন্য প্রদান করা হয়।
  • ১৯১৮ সালে এক গ্যাস হামলায় তার চোখ কিছুদিনের জন্য অন্ধ হয়ে যায় এবং তখনই তিনি জানতে পারেন যে জার্মানি যুদ্ধে পরাজিত হয়েছে।

এই পরাজয়কে তিনি “পিছন থেকে ছুরিকাঘাত” (Stab-in-the-back myth) হিসেবে দেখতেন এবং বিশ্বাস করতেন যে ইহুদি, কমিউনিস্ট ও বামপন্থিরা জার্মানিকে ধ্বংস করেছে।


নাৎসি পার্টির উত্থান (১৯১৯-১৯৩৩)

১৯১৯ সালে হিটলার ন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টি (NSDAP) বা নাৎসি পার্টিতে যোগ দেন। তিনি খুব দ্রুত এর প্রধান নেতা হয়ে ওঠেন।

  • ১৯২৩ সালে হিটলার বিয়ার হল পুচ (Beer Hall Putsch) নামে এক ব্যর্থ বিদ্রোহ করেন, যার ফলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
  • কারাগারে থাকাকালীন "মাইন কাম্পফ" (Mein Kampf) নামে একটি বই লেখেন, যেখানে তার রাজনৈতিক আদর্শ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরেন।

১৯২৯ সালের মহামন্দার (Great Depression) সময় জার্মানিতে বেকারত্ব ও অর্থনৈতিক সংকট চরমে পৌঁছায়, যা নাৎসি পার্টির জনপ্রিয়তা বাড়িয়ে দেয়।

  • ১৯৩৩ সালে হিটলার জার্মানির চ্যান্সেলর নিযুক্ত হন।
  • এরপর ধাপে ধাপে সব বিরোধী দল নিষিদ্ধ করে একনায়কতন্ত্র কায়েম করেন।



নাৎসি শাসন ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ (১৯৩৩-১৯৪৫)

হিটলারের শাসনে জার্মানি দ্রুত সামরিক ও অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হয়ে ওঠে।

প্রধান নীতিগুলো ছিল:

  1. ইহুদি নিধন (Holocaust):

    • হিটলার বিশ্বাস করতেন যে ইহুদিরা জার্মানির শত্রু।
    • "ফাইনাল সলিউশন" (Final Solution) নামে একটি পরিকল্পনার মাধ্যমে ৬০ লাখের বেশি ইহুদিকে কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে হত্যা করা হয়।
  2. জীবন ব্যবস্থার সম্প্রসারণ (Lebensraum):

    • জার্মানির জন্য পূর্ব ইউরোপে জায়গা তৈরি করতে তিনি যুদ্ধ শুরু করেন।
  3. মিলিটারি শক্তি বৃদ্ধি:

    • ভার্সাই চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করে জার্মানি বিশাল সেনাবাহিনী গড়ে তোলে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরু (১৯৩৯-১৯৪৫)

  • ১৯৩৯ সালে জার্মানি পোল্যান্ড আক্রমণ করে, ফলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়।
  • এরপর ফ্রান্স, নরওয়ে, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডসসহ ইউরোপের বিশাল অংশ দখল করে।
  • ১৯৪১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নে (Operation Barbarossa) হামলা চালায়, যা পরবর্তীতে তার পতনের অন্যতম কারণ হয়।
  • ১৯৪১ সালে পার্ল হারবার হামলার পর আমেরিকাও যুদ্ধে যোগ দেয়।


হিটলারের পতন ও আত্মহত্যা (১৯৪৫)

  • ১৯৪৫ সালে সোভিয়েত সেনারা বার্লিন দখল করে ফেলে।
  • ৩০ এপ্রিল ১৯৪৫, হিটলার ও তার স্ত্রী ইভা ব্রাউন বাঙ্কারে আত্মহত্যা করেন।
  • ৮ মে ১৯৪৫ জার্মানি আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে।

উপসংহার

অ্যাডলফ হিটলার ইতিহাসের অন্যতম নিষ্ঠুর শাসক। তার নেতৃত্বে জার্মানি সাময়িকভাবে একটি বিশাল সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হলেও, তার ভুল সিদ্ধান্তের কারণে দেশটি চূড়ান্ত পরাজয়ের মুখে পড়ে।

হিটলারের রাজনৈতিক দর্শন ও কর্মকাণ্ড বিশ্বের জন্য এক ভয়ংকর শিক্ষা হয়ে আছে—একনায়কতন্ত্র ও বর্ণবাদ কিভাবে একটি জাতিকে ধ্বংস করে দিতে পারে।

এই পোস্টটি কেমন লাগলো? কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না! ইতিহাসের আরও চমকপ্রদ তথ্য জানতে আমাদের ব্লগ ফলো করুন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

কিসমিস ভেজানো পানি পান করার ১০টি চমৎকার উপকারিতা
বাংলাদেশ কারা অধিদপ্তরে নিয়োগ ২০২৫ - একাধিক পদে আবেদন করুন এখনই!
Accounts & Admin Assistant (Entry-Level)
বিদেশের ঘাম, ঘরের বেদনা
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি: দুই দেশের মধ্যে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির ঐতিহাসিক চুক্তি
Workplace Safety & Health Officer cum ECO Job
Eid Mubarak ! Eid Mubarak ! Eid Mubarak!
NFC Door Locks: How Mobile Phones Are Revolutionizing Home & Office Security
Redmi-Note-14-Pro-Plus-5G-Full-Specifications-and-Features
চুপিচুপি চলে গেলেন চাচা চিন — জানল না কেউ, খেয়াল করল না কেউ
উপদেষ্টা পরিষদের বিবৃতি
MOH, CDA সম্প্রতি সিঙ্গাপুরে কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার কিছুটা বাড়ার বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে
বিমানবন্দরে যাত্রী বিদায়-স্বাগত: ডিপারচার ও এরাইভাল পয়েন্টে নতুন নির্দেশনা
End of an Era: Old Pasir Ris Bus Interchange Bids Farewell After 36 Years
Lockout Tagout (LOTO) Safety Procedure – Complete Guide for Singapore Workplaces
How to Get Free Wi-Fi Anywhere in Singapore with Wireless@SGx: Step-by-Step Guide
পুরনো ল্যাপটপকে নতুনের মতো দ্রুত করার ১২টি কার্যকরী উপায় (২০২৫ আপডেট)
সিঙ্গাপুরে জেব্রা ক্রসিং লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা
জেনে নিন, ইসলাম যেসব কথা বলা নিষেধ করেছে – বাঁচুন গুনাহ থেকে
ফ্রিজে গোস্ত কিভাবে রাখলে ভালো থাকবে – একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন
কোরবানির আগে চুল-নখ না কাটার বিষয়ে ইসলাম কী বলে?
যৌনতা, ইসলাম ও বিজ্ঞান: স্ত্রীর যৌনি চোষা কি বৈধ ও নিরাপদ
How to register a private limited company
Customs Excise & VAT Commissionerate, Rangpur Job
জেন জি সিম অফার টেলিটক বাংলাদেশে নতুন প্রজন্মের জন্য সেরা প্যাকেজ
Clinical Nurse / Private Nursing Job Singapore
Why USB Pen Drive is Not Working on Redmi Note 13 Pro Plus – Easy Fixes!
সর্দি ও জ্বর হলে কী ওষুধ খাওয়া উচিত
মুখ বদলালেও চাঁদাবাজি থামেনি পরিবহনে, ঢাকাতেই দিনে আদায় দুই কোটির বেশি
HONOR Magic7 Pro 5G – Full Specifications and Features
Clinic Assistant job Singapore
সিঙ্গাপুরে ট্রেইনিং রেকর্ড এবং সার্টিফিকেট চেক করার সম্পূর্ণ গাইড (২০২৫ আপডেটেড)
সিঙ্গাপুরে MRT Train এর ভেতরে মূত্রত্যাগের ঘটনায় ব্যক্তি কারাদণ্ড ও জরিমানার মুখোমুখি
সিদ্ধ সিমের বিচি খেলে কি উপকার হবে?
সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য IPA অ্যাটেস্টেশন প্রক্রিয়া বাতিল – ২০২৫ সালের নতুন আপডেট
বাংলা কবিতা প্রেম পরিক্রমা
How to spell digit to in word currency in Microsoft office word
জিংক (Zinc) এর উপকারিতা, ঘাটতির লক্ষণ, উৎস ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
ইরানের প্রতিরোধে পিছু হটলো যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল – যুদ্ধবিরতির পথে মোড়
সিঙ্গাপুরে নতুন আইন: ১ জুলাই ২০২৫ থেকে ফুটপাথে বাইসাইকেল ও PMD চালানো নিষিদ্ধ, লঙ্ঘনে জরিমানা ও জেল
Best Fragrances to Attract Women: Scents That Draw Her Closer
কোন খাবার গুলো কাঁচা না খাওয়া ভালো? – বিস্তারিত গাইড
প্রবাসীর আর্তনাদ
ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের সর্বশেষ আপডেট মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত
১২ মে রাতের আকাশে ফুটে উঠবে ২০২৫ সালের ‘ফ্লাওয়ার মুন’
How to add movie online streaming in your website
মিয়ানমারে শক্তিশালী ভূমিকম্প: নিহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১৬০০
দৈনন্দিন জীবনে ইসলামে গোপন রাখার নির্দেশিত বিষয়সমূহ
আকাশছোঁয়া ছোট্ট বালক
ফিতরার হার ও প্রবাসীদের ফিতরা আদায়ের সঠিক নিয়ম
Meta Launches Llama 4: Advancing Open-Weight Multimodal AI
DMCH Job Circular 2025 – ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ
বড় পীর হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.)-এর জীবনী ও কারামত | সম্পূর্ণ তথ্যভিত্তিক বিশ্লেষণ
সুন্দর মনের অধিকারী নারীর ৮টি চিহ্ন – প্রকৃত নারীত্বের পরিচয়
এয়ারকন্ডিশন রুমে ভেন্টিলেটর ফ্যান চালু রাখার প্রয়োজন আছে কি? জানুন বিস্তারিত
সিঙ্গাপুরে অক্সিলিয়ারি পুলিশে শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইন, মিয়ানমার, চীন ও ভারতের নাগরিকদের নিয়োগ বাড়ছে।
ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গুগল ম্যাপে কেন নেই? জানুন প্রকৃত কারণ
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ঘোষণা ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
সিঙ্গাপুরে 'স্লিপ ডিভোর্স': কেন দম্পতিরা আলাদা ঘুমানোর সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন?
Eid Mubarak 31-3-2025 Singapore
এয়ার ইন্ডিয়া AI171 Boing-787 আহমেদাবাদ বিমান দুর্ঘটনা: নিহত ২৭৪, তদন্তে নতুন তথ্য ও টাটা গ্রুপের ক্ষতিপূরণ ঘোষণা
চোয়া চু কাং-এ হেরোইনসহ গ্রেপ্তার | সিঙ্গাপুর মাদকবিরোধী অভিযান ২০২৫
প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য জরুরি তথ্য: SATA PCP-র আওতায় চিকিৎসা সেবা গ্রহণে অ্যাপয়েন্টমেন্ট প্রয়োজন
শরীরে হঠাৎ মৃত্যু কেন ঘটে? Suddenly death
সিঙ্গাপুরে অভিবাসন কর্মকর্তাকে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে চীনা নাগরিকের তিন সপ্তাহের কারাদণ্ড
SCDF Rescues Two Workers After Gondola Cable Snaps at Raffles City Tower
এপ্রিল ৯-১০: বিশ্ব মঞ্চে বাংলাদেশের নবযাত্রা। প্রফেসর ইউনুস | Bangladesh Economic Boom-April Event Unites 50 Countries Investors
থান্ডার মুন ২০২৫: বাংলাদেশে কখন ও কীভাবে দেখবেন Thunder Moon
পণ্য বয়কট অভিযানে কার লাভ আর কার ক্ষতি – সাম্প্রতিক ইসরায়েলি পণ্য বয়কট ঘিরে বিশ্লেষণ
উপরের পেটের ব্যথা: কারণ, প্রতিকার ও কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত