Recent post

শনিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২১

করোনার কারণে প্রায় দেড় বছর পর আজ রবিবার শুরু হতে যাচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় পাবলিক পরীক্ষা।



করোনার কারণে প্রায় দেড় বছর পর আজ রবিবার শুরু হতে যাচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় পাবলিক পরীক্ষা। দেশজুড়ে বিভিন্ন কেন্দ্রে প্রায় ২২ লাখ শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে শুরু হবে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। দেশে বেশ কয়েক বছর ধরে ফেব্রæয়ারি মাসে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হলেও করোনাভাইরাসের কারণে দেড় বছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় নয় মাস পিছিয়ে এবার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। ২০২০ সালে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর আগেই এসএসসির পরীক্ষা শেষ হয়েছিল। তাই দীর্ঘ বিরতির পর সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে পরীক্ষা আয়োজনের সব প্রস্তুতি নিয়েছে শিক্ষা প্রশাসন। প্রশ্নফাঁস এবং নকল রোধে নেয়া হয়েছে কঠোর ব্যবস্থা। নজরদারি বাড়ানো হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও।

জানা যায়, পদার্থবিজ্ঞান পরীক্ষা দিয়ে শুরু হবে এবারের এসএসসি পরীক্ষা। সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে শুধু তিনটি নৈর্বাচনিক বিষয়ের পরীক্ষা নেয়া হবে। পরীক্ষার সময় কমিয়ে আনা হয়েছে দেড় ঘণ্টায়। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নজর দিয়ে এবার বাড়তি প্রস্তুতি নিয়েছে কেন্দ্রগুলো। একই সঙ্গে শিক্ষক ও অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্টদের জন্য পরীক্ষার আগে ও চলাকালে করণীয় নিয়ে নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।


শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হিসাব বলছে, চলতি বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ২২ লাখ ২৭ হাজার ১১৩ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেবে। ৩ হাজার ৬৭৯টি কেন্দ্রে মোট ২৯ হাজার ৩৫টি স্কুল, মাদ্রাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানের এসএসসি ও সমমানের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন। ৯টি সাধারণ বোর্ড থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবেন ১৭ হাজার ৬৭৬টি স্কুলের ১৮ লাখ ৯৯৮ জন শিক্ষার্থী। আর ৯ হাজার ১১০টি মাদ্রাসার ৩ লাখ ১ হাজার ৮৮৭ জন পরীক্ষার্থী ৭১০টি কেন্দ্রে দাখিল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন। আর কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনাল পরীক্ষায় অংশ নেবে ২ হাজার ৩৪৯টি কারিগরি প্রতিষ্ঠানের ১ লাখ ২৪ হাজার ২২৮ জন শিক্ষার্থী। গতবছর এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থী ছিল ২০ লাখ ৪৭ হাজার ৭৭৯ জন। গত বছরের থেকে চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থী বেড়েছে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৩৩৪ জন। গত বছরের থেকে চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র বেড়েছে ১৬৭টি। আর প্রতিষ্ঠান বেড়েছে ১৫১টি।


শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, নকলমুক্তভাবে পরীক্ষা আয়োজন করার জন্য গত সোমবার থেকে সব কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখা নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে গেছে এ্যাডমিট কার্ড। পরীক্ষার সব ধরনের প্রস্তুতি তারা সম্পন্ন জানিয়ে রাজধানীর কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার জানিয়েছেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতি বেঞ্চে দুই জন করে বসানো হবে পরীক্ষা কেন্দ্রে। করোনাভাইরাসের কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের হাত জীবাণুমুক্ত করিয়ে এবং তাপমাত্রা মেপে স্কুলে প্রবেশ করানো হবে। কারও শরীরের তাপমাত্রা বেশি আসলে এবং করোনাভাইরাসের উপসর্গ থাকলে তাকে আলাদা রুমে পরীক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে সেজন্য আইসোলেশন রুমও প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়া কেন্দ্র এলাকায় অভিভাবকদের বাড়তি চাপও নিয়ন্ত্রণ করা হবে।


কবে কোন পরীক্ষা ॥ আজ রবিবার পদার্থবিজ্ঞান (তত্ত¡ীয়) পরীক্ষার মাধ্যমে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হয়ে শেষ হবে ২৩ নবেম্বর। ১৫ নবেম্বর সকালে বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা এবং বিকেলে হিসাববিজ্ঞান পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ১৬ নবেম্বর সকালে রসায়ন (তত্ত¡ীয়) বিষয়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ১৮ নবেম্বর সকালে শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া (তত্ত¡ীয়) অনুষ্ঠিত হবে। ২১ নবেম্বর সকালে ভূগোল ও পরিবেশ এবং বিকেলে ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ২২ নবেম্বর সকালে উচ্চতর গণিত ও জীববিজ্ঞান পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ২৩ নবেম্বর সকালে পৌরনীতি ও নাগরিকতা বিষয়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে আর বিকেলে ব্যবসায় উদ্যোগ বিষয়ের পরীক্ষা হবে।


একইভাবে দাখিলের কোরআন মাজিদ ও তাজবিদ ও পদার্থবিজ্ঞান বিষয় দিয়ে শুরু হয়ে ১৮ নবেম্বর হাদিস শরিফ বিষয়ের এবং ২১ নবেম্বর ইসলামের ইতিহাস, রসায়ন, তাজবিদ নসর ও নজম (মুজাব্বিদ গ্রæপ) এবং তাজবিদ (হিফজুল গ্রæপ) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। নির্ধারিত দিনে সকাল ১০টা থেকে ১১ টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।


ফল প্রকাশ ॥ আজ রবিবার থেকে ২৩ নবেম্বর পর্যন্ত এসএসসির লিখিত পরীক্ষা এবং ২১ নবেম্বর পর্যন্ত দাখিল ও এসএসসি ভোকেশনাল পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ২৮ নবেম্বরের মধ্যে শেষ হবে এসএসসি ও দাখিলের ব্যাবহারিক পরীক্ষা। পরীক্ষা শেষ হওয়ার ত্রিশ দিনের মধ্যে এসএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সে হিসেবে আগামী ডিসেম্বর মাসেই ২০২১ সালের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হবে।


শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ॥ এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের জন্য কয়েকটি নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে রয়েছে, পরীক্ষার্থীর সঙ্গে একজনের বেশি অভিভাবক কেন্দ্রে আসতে পারবেন না, যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে, স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে মাঠ প্রশাসনকে কঠোর নজরদারি রাখতে হবে, এছাড়া, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর থেকে ৫ সেপ্টেম্বর জারি করা গাইডলাইনের নির্দেশনা পালন করার পাশাপাশি পরীক্ষা শুরুর কমপক্ষে ত্রিশ মিনিট আগে সব পরীক্ষার্থীকে অবশ্যই পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করে আসন গ্রহণ করতে হবে। অনিবার্য কারণে কোন পরীক্ষার্থী নির্ধারিত সময়ের পর পরীক্ষা কেন্দ্রে আসলে রেজিস্ট্রারে নাম, রোল নম্বর, প্রবেশের সময় ও বিলম্বের কারণ উল্লেখ করতে হবে। বিলম্বে আসা পরীক্ষার্থীদের তালিকা প্রতিদিন কেন্দ্র সচিব সংশ্লিষ্ট বোর্ডকে জানাবে। কেন্দ্র সচিব ছাড়া পরীক্ষা কেন্দ্রে অন্য কেউ মোবাইল ফোন বা মোবাইল ফোনের সুবিধাসহ ঘড়ি, কলম বা অননুমোদিত ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করতে পারবেন না। কেন্দ্র সচিব ছবি তোলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধাবিহীন একটি সাধারণ (ফিচার) ফোন ব্যবহার করতে পারবেন। অননুমোদিত ফোন বা ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।


শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রত্যেক কেন্দ্রের জন্য একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বা ট্যাগ অফিসার নিয়োগ দিতে হবে। ট্রেজারি বা থানা বা নিরাপত্তা হেফাজত থেকে কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা তার মনোনীত উপযুক্ত প্রতিনিধি ট্যাগ অফিসারসহ প্রশ্নপত্র গ্রহণ করে পুলিশ প্রহরায় কেন্দ্রে নিয়ে যাবেন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বা ট্যাগ অফিসারের উপস্থিতি ছাড়া প্রশ্ন বের করা যাবে না বা বহন করা যাবে না। ট্রেজারি বা থানা বা নিরাপত্তা হেফাজত থেকে পরীক্ষার কেন্দ্রে বহুমুখী নির্বাচনী প্রশ্নসহ রচনামূলক বা সৃজনশীলের সকল সেট প্রশ্নই নিতে হবে। সেট কোড পরীক্ষা শুরুর ২৫ মিনিট আগে জানানো হবে। সে অনুযায়ী নির্ধারিত সেট কোডে পরীক্ষা গ্রহণ করতে হবে। কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ট্যাগ অফিসার), কেন্দ্র সচিব এবং পুলিশ কর্মকর্তার উপস্থিতি ও স্বাক্ষরে বিধি অনুযায়ী প্রশ্নপত্রের প্যাকেট খুলতে হবে। অনিবার্য কারণবশত কোন পরীক্ষা বিলম্বে শুরু করতে হলে যত মিনিট পরে পরীক্ষা শুরু হবে পরীক্ষার্থীদের সে সময় থেকে যথারীতি প্রশ্নপত্রে উল্লেখিত নির্ধারিত সময় দিতে হবে। তবে দৃষ্টিহীন, সেরিব্রাল পালসিজনিত প্রতিবন্ধকতা ও হাত না থাকা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীরা শ্রæতি লেখক সঙ্গে নিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। এ ধরনের পরীক্ষার্থীদের ও শ্রবণ প্রতিবন্ধকতায় আক্রান্ত বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পরীক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত ১০ মিনিট সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে। এছাড়া, অটিজম, ডাউন সিনড্রোম, সেরিব্রাল পালসিজনিত প্রতিবন্ধকতায় আক্রান্ত পরীক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত ২০ মিনিট সময় বাড়ানোসহ শিক্ষক অভিভাবক বা সাহায্যকারীর বিশেষ সহায়তায় পরীক্ষার সুযোগ দেয়া হয়েছে।


আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা ॥ এসএসসি এবং সমমান পরীক্ষা নির্বিঘেœ সম্পন্ন করার জন্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এরই মধ্যে পরীক্ষা চলাকালে পরীক্ষার্থী ও কেন্দ্রের কর্মী ছাড়া অন্য কাউকে পরীক্ষা কেন্দ্রের অন্তত ২০০ গজের ভেতরে প্রবেশ করতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। পরীক্ষা চলাকালীন এবং পরীক্ষা অনুষ্ঠানের আগে বা পরে পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষার্থী ও পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট কাজে নিয়োজিত ব্যক্তি ছাড়া অন্যদের প্রবেশ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ থাকবে। এ সময়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশকারী অননুমোদিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পরীক্ষা কেন্দ্রে ও প্রশ্ন পরিবহনে দায়িত্বপ্রাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবেন। প্রশ্নফাঁস রোধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাড়ানো হয়েছে নজরদারি। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রশ্নপত্র ফাঁস কিংবা পরীক্ষার্থীদের কাছে উত্তর সরবরাহে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও জেলা প্রশাসন কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁস সংক্রান্ত গুজব কিংবা এ কাজে তৎপর চক্রগুলোর কার্যক্রমের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ নজরদারি জোরদার করবে।


প্রসঙ্গত, চলতি নবেম্বর মাসের শুরুতেই কেন্দ্রগুলোকে পরীক্ষার্থীদের এ্যাডমিট কার্ড বিতরণ করেছে শিক্ষা বোর্ডগুলো। ইতোমধ্যে কেন্দ্রগুলো স্কুল ও মাদ্রাসাগুলোকে এ্যাডমিট কার্ড বিতরণ করেছে কেন্দ্রগুলো। পরীক্ষার্থীরা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান থেকে এ্যাডমিট কার্ড সংগ্রহ করে সম্পন্ন করেছে পরীক্ষার সব রকমের প্রস্তুতি।

কোন মন্তব্য নেই:

Popular Posts