Recent post

বুধবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৬

নবজাতকের যত্ন



শিশু জন্মের পর অনেক মা এবং পরিবারের সদস্যদের দেখা যায় তার যত্ন ও পরিচর্যা নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় পড়ে যেতে।
 এ সময় সঠিক যত্ন না পেলে শিশুটির বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে। আজ ২৩ মার্চ এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২০১৪তম পর্বে এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের অধ্যাপক ডা. সাঈদা আনোয়ার।

প্রশ্ন : নবজাতক বলতে আমরা কী বুঝি?

উত্তর : চার সপ্তাহের মধ্যে যে বাচ্চার বয়স সে নবজাতকের মধ্যে পড়ে।

প্রশ্ন : নবজাতকের যত্ন ও পরিচর্যা কখন থেকে শুরু হওয়া উচিত এবং কী কী ধরনের হবে?

উত্তর : এটি আসলে জন্মের সঙ্গে সঙ্গে হওয়া উচিত। তবে এর আগে থেকেই বিষয়টি অনেকটা শুরু হয়ে যায়। শিশু পেটে থাকতেই মাকে অ্যান্টিনেটাল পরামর্শ দিতে হবে, চেকআপে থাকতে হবে। তখন থেকেই আসলে বাচ্চার যত্ন শুরু হয়। এ সময়টায় মাকে শেখাতে হবে বাচ্চার জন্মের পর পর মা শিশুটিকে কী খাওয়াবেন। মা বাচ্চার জন্য কী করতে পারেন। প্রথম থেকে যেটি শিশুর পরিচর্যার জন্য দরকার, শিশুর পুষ্টির দরকার, সেটি হলো মায়ের বুকের দুধ। দুধটা যেন বাইরের না হয়। বাচ্চা হওয়ার পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এক ঘণ্টার মধ্যে আমরা দুধ খাওয়াতে বলি। মায়ের যে শালদুধ বের হয়, সেটি কোনোভাবেই ফেলে দেওয়া উচিত না। শালদুধ বাচ্চার জন্য প্রথম টিকা। যেহেতু ওখানে প্রোটিন বেশি, রোগ প্রতিরোধক্ষমতার জন্য যে বিষয়গুলো দরকার সেটিও বেশি।

প্রশ্ন : কত বয়স পর্যন্ত শুধু বুকের দুধ খাওয়ানো উচিত?


উত্তর : ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শুধু বুকের দুধ খাওয়ানো উচিত। ছয় মাস বয়সের পর থেকে বুকের দুধের পাশাপাশি বাড়তি খাবার দিতে হবে।

প্রশ্ন : অনেক ক্ষেত্রে দেখো যায় শিশু জন্মের পর মধুর মতো মিষ্টি কথার জন্য মধু বা চিনির পানি খাওয়ানো হয়, এগুলোকে কতটা যৌক্তিক বলে মনে করেন?

উত্তর : এগুলোর আসলে কোনো যুক্তি নেই। এগুলো বাচ্চার জন্য দরকার নেই। বাচ্চার জন্য দরকার হলো মায়ের দুধ। এটাই প্রকৃতগতভাবে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। তাই বুকের দুধের সঙ্গে কোনো কিছুরই তুলনা হয় না। বুকের দুধের মধ্যে পানি রয়েছে। কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, চর্বি সব রয়েছে। মিনারেলস, ভিটামিন এসবও আছে। যেখানে একটু পানিরও দরকার পড়ে না।

প্রশ্ন : ছয় মাস পর থেকে অনেকে চিন্তার মধ্যে থাকে কী খাবার দেব?


উত্তর : তখন অবশ্যই বাড়তি খাবার দিতে হবে। বাড়তি খাবার মানে ঘরের খাবার, সলিড ফুড। নইলে অপুষ্টি হয়ে যাবে।

প্রশ্ন : গরুর দুধ, টিনের দুধ খাওয়ার প্রবণতা আসলে কতটুকু ঠিক?


উত্তর : এটা একদমই ঠিক না। মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে। আর বাড়তি খাবারের কথা যেটা বলছিলাম, তখন নরম জিনিস খাওয়াতে হবে। যেমন : ফলের জুস দিতে পারে। কমলার রস দিতে পারে। কলা খাওয়াতে পারে। ডিমটা আধা সিদ্ধ করে দিতে পারে। প্রথমে ডিমের কুসুম শুরু করবে। তারপর ধীরে ধীরে সাদা অংশ খাওয়া শুরু করবে। যেহেতু প্রোটিন তাই অ্যালার্জি হতে পারে। একসাথেই সব কিছু খাওয়াবে না। ধীরে ধীরে একটার পর একটা খাওয়াবে। এরপর চাল, ডাল, তেল মিলে খিচুড়ি খেতে দিতে হবে। অনেক মায়েরা রয়েছেন, যাঁরা শিশুকে সেরেলাক খাওয়ান। সেরেলাক ডাল, সেরেলাক ভাত ইত্যাদি খাওয়ায়। জিজ্ঞেস করলে বলে, ওখানে তো সব পুষ্টি রয়েছে ম্যাডাম। সেগুলো মূলত কমার্শিয়াল খাবার। আমরা যেটা দেব ওখানে তো সেই জিনিসগুলো নেই। তাই পুষ্টিসম্পন্ন ঘরে তৈরি খাবার দিতে হবে।

প্রশ্ন : নবজাতকের যত্নের মধ্যে গোসল খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। কখন থেকে এই গোসল শুরু করতে হবে। কীভাবে গোসল করাতে হবে সেটিও সবাই পুরোপুরি জানে না। কী মনে করেন আপনি?


উত্তর : আসলে নবজাতককে গোসল করাতে হবে এট খুবই ঠিক। তবে শিশু জন্মের পরপরই যে গোসল করাতে হবে সেটিও নয়। এতদিন শিশুটি মায়ের গর্ভে ছিল, একটা উষ্ণতার ভেতর ছিল। বাইরের বাতাসের সঙ্গে সমন্বয় করতে তার একটু সময় লাগবে। তাই আমরা বলি সঙ্গে সঙ্গে গোসল না করাতে। ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা পরে গোসল করতে পারে। পানির মধ্যে স্যাভলন, ডেটল এসব জিনিস দেওয়ার দরকার নেই। কুসুম গরম পানি দিয়ে যেই ঘরে হাওয়া বাতাস নেই এ রকম জায়গায় গোসল করাতে হবে।

প্রশ্ন : শিশুটিকে যেই ঘরটিতে রাখবে, এর পরিবেশ কেমন হবে?


উত্তর : বাইরের বাতাস বেশি আসে এ রকম ঘরে শিশুটিকে না রাখাই উচিত। এক সপ্তাহ ধরে অন্তত শিশুটি ওই বাতাস সহ্য করতে পারবে না। বাচ্চাকে পাতলা কাপড় পরাতে হবে। বেশি ঘামতে দেওয়া উচিত না। কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে রাখাটা আমাদের দেশের জন্য প্রযোজ্য না। শীতপ্রধান দেশে প্রযোজ্য।

প্রশ্ন : নবজাতকের নাভি নিয়েও অনেক কুসংস্কার রয়েছে। এটি নিয়ে কী বলবেন?

উত্তর : নাভি নিজে নিজেই পড়ে যায়। নাভিকে ফেলতে হয় না। কিছু করতে হয় না। এমনিতেই শুকিয়ে যায়। তবে এখন আমরা প্রথম অবস্থায় বলি একবার একটু হেক্সিসল দেওয়ার জন্য। তারপর আর কিছু না দিলেও হয়।

কোন মন্তব্য নেই:

Popular Posts