আর্জেন্টিনার মেসির জীবনের শেষ ম্যাচ আজ

সকালে সাংবাদিকদের চমকে দিয়ে হঠাৎ করেই সংবাদ সম্মেলনে দেখা দিয়েছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। সন্ধ্যায় লিওনেল মেসিও কি আসবেন? মুখে মুখে এ আলোচনা। যদিও কাতারের সময় কাল বিকেল সাড়ে চারটায় এই লেখা শুরু করার সময়ও নিশ্চিত কোনো খবর নেই। ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক ও কোচের আসাটা মোটামুটি নিয়মের মধ্যেই পড়ে। তবে অধিনায়কের আসাটা বাধ্যতামূলক কি না, এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেল না।


লিওনেল মেসি আসবেন কি আসবেন না, এ ব্যাপারে অনিশ্চয়তা ছিল (শেষ পর্যন্ত অবশ্য এসেছেন)। তবে একটা ব্যাপারে সবাইকে নিশ্চিত দেখলাম। মেসি যদি আসেনও, সেই সংবাদ সম্মেলন সুশীল কথাবার্তাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে। মাঠে যতই বিধ্বংসীরূপে দেখা দেন না কেন, মাঠের বাইরে রোনালদোর মতো বিস্ফোরক কিছু বলার স্বভাব তাঁর কখনোই ছিল না। জীবনের শেষ বিশ্বকাপ শুরুর আগে তো আরও বলবেন না।

প্রচারের আলো তাঁকে সব সময়ই খুঁজে ফিরলেও লিওনেল মেসি সারা জীবনই যেন একটু আড়াল খুঁজে এসেছেন। এই বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মানুষ চেনে, এমন চার-পাঁচটি নামের তালিকা করতে গেলেও তাঁর নামটা আসবে। কিন্তু এত বছর পাদপ্রদীপের আলোয় থাকার পরও তাতে যেন মেসির একটু অস্বস্তিই লাগে। সুযোগ পেলেই তাই নিভৃতি খোঁজেন। কাল বিকেলে আর্জেন্টিনার প্র্যাকটিস সেশনটাকেও তার আরেকটা প্রমাণ বলে ধরা যায়!

সৌদি আরবের বিপক্ষে এই বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার প্রথম ম্যাচ আজ, যা শুরু হবে কাতারের সময় বেলা একটায়। গত দুই দিন সন্ধ্যার পর একটু শীত-শীত লাগলেও দুপুরের রোদ এখনো গা পুড়িয়ে দেয়। সেই রোদে পুড়ে খেলতে হবে বলেই হয়তো আর্জেন্টিনার ম্যাচ-পূর্ব অনুশীলনটা শুরু হলো দুপুরে। তবে অকারণ শক্তিক্ষয় করতে না চেয়ে পরদিনের ম্যাচ শুরুর সময়ে নয়, মোটামুটি শেষের সময়ে। বিকেল তিনটায়।

এই বিশ্বকাপে কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘাঁটি গেড়েছে আর্জেন্টিনা। থাকা-খাওয়ায় পাঁচ তারকা হোটেলের সুযোগ-সুবিধাই মিলছে। বাড়তি পাওয়া যাচ্ছে খোলামেলা পরিবেশ, পাশেই বিশাল মাঠ, হোটেলের শৃঙ্খলার বদলে নিজেদের মতো সময় কাটানোর সুযোগ।

সাংবাদিকেরা অবশ্য ১৫ মিনিটই শুধু আর্জেন্টিনার অনুশীলন দেখার সুযোগ পেলেন। তা দেখতেই এক শর বেশি সাংবাদিকের ভিড়। আর্জেন্টাইনদেরও সংখ্যাধিক্য থাকবে স্বাভাবিক, তবে অন্য দেশেরও খুব কম নয়। যাঁদের অনেকেই পেশাদারত্বের দায় ভুলে দাবি করলেন, এত দূরে ছুটে যাওয়া শুধুই চর্মচক্ষে লিওনেল মেসিকে দেখবেন বলে। মেসি চলে যাওয়ার পরও আর্জেন্টিনা দলের অনুসারী থাকবে। তবে যত দিন তিনি আছেন, তত দিন আর্জেন্টিনা মানেই মেসি।


সাংবাদিকদের ক্যামেরা, সাংবাদিকদের চোখ যে তাঁকেই খুঁজে ফিরছে, মেসির তা জানা না থাকার কোনো কারণ নেই। মেসির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বোঝাতে যে আড়াল খোঁজার কথা বলছিলাম, হতে পারে তা ঘটনাচক্রেই এখানে মিলে যাচ্ছে। তবে আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়েরা গোল হয়ে ‘‌চোর-চোর’ খেলার সময় সাংবাদিকদের ক্যামেরা আর চোখ যে বলতে গেলে একবারও মেসিকে সামনাসামনি দেখতে পেল না, সেটার কারণ তো এটা হতেই পারে। মাঠের যে পাশটা সাংবাদিকদের জন্য নির্ধারিত, মেসি যে সেদিকে পেছন ফিরে দাঁড়িয়েছেন।

প্রথমে বল নিয়ে যে যার মতো একটু খেলার পর গা গরম করার দৌড়। এরপর ওই চোর-চোর খেলা। সাংবাদিকেরা দেখার সুযোগ পেলেন ওটুকুই। নির্ধারিত ১৫ মিনিট যে ওখানেই শেষ।

খেলোয়াড়দের শরীরী ভাষা থেকে তাঁদের মানসিক অবস্থা বুঝে নেওয়ার একটা চেষ্টা থাকে সাংবাদিকদের। ওইটুকু সময় দেখে যা করতে যাওয়া একেবারেই অর্থহীন। সিরিয়াস অনুশীলন শুরুর আগে ওই হালকা মেজাজের সময়টাতেও মেসিকে একবারও হাসতে না দেখাটাকে অবশ্য চাইলে ইঙ্গিতবহ মনে করাই যায়। কেউ তো লিখে (বা বলে) দিতেই পারেন, এবার না হলে আর কোনো দিনই নয়—এই চাপ অনুভব করতে শুরু করেছেন লিওনেল মেসি।

মিনিট ১৫ দেখে এমন কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছে যাওয়া হাস্যকর। তবে এটা অনুমান করতে মেসিকে দেখারই-বা কী দরকার! ফুটবল খেলে যা কিছু জেতা সম্ভব, সবই জিতেছেন। বাকি শুধু বিশ্বকাপ। সর্বকালের সেরা নিয়ে আলোচনায় অবধারিতভাবেই তাঁর নামটা আসে। অনেকের চোখে পেলে আর ম্যারাডোনার সঙ্গে পার্থক্যও গড়ে দেয় এটাই। ওই দুজন বিশ্বকাপ জিতেছেন, মেসি জিততে পারেননি। ক্যারিয়ারের একমাত্র এই অতৃপ্তি ঘোচানোর শেষ সুযোগের চাপ বোধ না করলে বলতে হবে, মেসি রক্ত-মাংসের মানুষ নন।


২০০৬ বিশ্বকাপে তিনি দলের তরুণ এক সদস্য। যে ম্যাচে টাইব্রেকারে হেরে আর্জেন্টিনার বিদায়, সেই কোয়ার্টার ফাইনালে মাঠে নামারই সুযোগ পাননি। পরের চারটি বিশ্বকাপেই এসেছেন দলের প্রাণভোমরা হয়ে, চোখে স্বপ্ন নিয়ে। যে স্বপ্নের সবচেয়ে কাছ থেকে ফিরে আসার স্মৃতি নিশ্চয়ই অহর্নিশ পোড়ায় তাঁকে। মারাকানার ফাইনালে অতিরিক্ত সময়ের গোলে স্বপ্নভঙ্গের পর হতাশ-বিষণ্ন-ভেঙে পড়া মেসির বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার ‘গোল্ডেন বল’ নিতে যাওয়ার দৃশ্যটার মতো করুণ কিছু ফুটবল খুব বেশি দেখেনি।

বিশ্বকাপ ফাইনালে পরাজয়ের পর এর চেয়েও আবেগময় দৃশ্য অবশ্য দেখা গেছে। ১৯৯০ ফাইনালে বিতর্কিত পেনাল্টিতে হারার পর মাঠে হাপুস নয়নে কেঁদেছিলেন ডিয়েগো ম্যারাডোনা। যে ম্যারাডোনার সঙ্গে মেসির নিত্য তুলনা, সেই ম্যারাডোনার মৃত্যুর পর এটা প্রথম বিশ্বকাপ। নিয়তি কি তাহলে কোনো ইঙ্গিত দিচ্ছে?

শুধু মেসির কারণেই আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপজয়ী দেখতে চান, এই পৃথিবীতে এমন মানুষের সংখ্যা অগণ্য। মেসি তো অবশ্যই সেই স্বপ্ন নিয়ে এসেছেন, যদিও মুখে ফেবারিট হিসেবে আর্জেন্টিনার নামটা বলেনইনি। বলেছেন ব্রাজিল, ফ্রান্স আর ইংল্যান্ডের কথাই। হয়তো নিজেদের ওপর থেকে চাপ কমাতেই। কিন্তু তাতে কি আদৌ তা কমে!

প্রতিটি ম্যাচেই এই বিষম চাপ সঙ্গী করে নামবেন মেসি। ফুটবল দলীয় খেলা হতে পারে, কিন্তু এই বিশ্বকাপে এসে আর্জেন্টিনা যেন আরও বেশি করে মেসিতে বিলীন। জিতলে মেসি জিতবেন, হারলেও মেসি। আর্জেন্টিনা নিমিত্তমাত্র।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

সিঙ্গাপুরে ওয়ার্ক পারমিটধারীদের জন্য নতুন নিয়ম: চাকরির মেয়াদ সীমা বাতিল, সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৬৩ বছর
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস
সিঙ্গাপুরে ট্রেইনিং রেকর্ড এবং সার্টিফিকেট চেক করার বিস্তারিত গাইড
Bangla date add in your website HTML tips.
some common interview questions and answers for a Safety Coordinator position in Singapore
ধর্ষণবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল তিন বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষার্থীদের আল্টিমেটাম
Understanding the New Demerit Point System for Construction and Manufacturing Sectors
Safe work procedure for ferrying workers by lorry in singapore
বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য সিঙ্গাপুরে কম খরচে দাঁতের চিকিৎসা
সিঙ্গাপুর কর্মস্থলের নিরাপত্তা আইন শক্তিশালী করছে এবং নতুন আইন প্রবর্তন করছে
Loading posts...