Recent post

শনিবার, ২৫ জুন, ২০২২

বেড়েছে লবণের দাম, আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা



 ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে কোরবানির পশুর চামড়া সংরক্ষণে ব্যবহৃত অপরিশোধিত লবণের চাহিদা বেড়েছে।

বাজারে চাহিদা বাড়ায় নারায়ণগঞ্জের পাইকারি ব্যবসাকেন্দ্র নিতাইগঞ্জ লবণ বাজারে লবণের দামও বেড়েছে। সেখানে প্রতি বস্তা (৭৪ কেজি) অপরিশোধিত লবণ ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে ৭৪ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা লবণ ১ হাজার ৮০ টাকা থেকে ১ হাজার ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ এক মাস আগে তা ৯৮০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে।


বাজারের চাহিদা অনুযায়ী লবণ না থাকা, উৎপাদন খরচ, পরিবহন খরচ বৃদ্ধি ও কক্সবাজারের লবণ চাষি-ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণেও দাম বেড়েছে।

অপরিশোধিত লবণের দাম আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।


এ ছাড়া, আসন্ন ঈদুল আযহায় কোরবানির পশুর চামড়া সংরক্ষণে লবণের চাহিদা বাড়তে পারে। এই সুযোগে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী লবণের দাম বাড়াচ্ছেন।


আয়োডিনযুক্ত লবণের দামও বেড়েছে


পাইকারি বাজারে আয়োডিনযুক্ত খাওয়ার লবণের দাম বস্তা প্রতি (২৫ কেজি) ২০-৩০ টাকা বেড়েছে। ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে এসিআই ৭৫০ থেকে বেড়ে ৭৮০ টাকা হয়েছে। কনফিডেন্স ৭৩০ থেকে বেড়ে ৭৬৫ টাকা হয়েছে। মোল্লা সুপার সল্ট ৬৪০ থেকে বেড়ে ৬৬০ টাকা হয়েছে। অন্যান্য ব্রান্ডের লবণ ৪৩০ টাকা থেকে বেড়ে ৪৬০ টাকা হয়েছে।


বিসিক চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সারা বছরের লবণের চাহিদা কিন্তু চাষি, ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই নিরূপণ করা হয়। এখন যদি ব্যবসায়ীরা ভিন্ন কথা বলেন তাহলে আমাদের কী করার আছে?'


তিনি আরও বলেন, 'ঈদকে কেন্দ্র করে লবণের চাহিদার কথা ভেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে অগ্রিম লবণ আমদানির চিঠি দেওয়া হয়েছে। লবণ নিয়ে আমাদের কোনো দুশ্চিন্তা নেই। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে কেউ যদি দাম বাড়িয়ে দেয় আমার কী করার আছে? দাম বৃদ্ধির বিষয়ে আমি আর কী বলব?'


বিসিকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে কক্সবাজার জেলায় ৬১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পরিমাণ লবণ উৎপাদিত হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় অর্থবছর শেষ হওয়ার আগেই জেলায় ১৮ দশমিক ৩০ লাখ মেট্রিকটন লবণ উৎপাদিত হয়েছে।


গত এক দশকের মধ্যে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ১৮ দশমিক ২৪ লাখ মেট্রিকটন লবণ উৎপাদন হয়েছিল। গত ৫ বছরে লবণ চাষের জমি ও চাষির সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় রেকর্ড পরিমাণ লবণ উৎপাদন সম্ভব হয়েছে।


বিসিক জানায়, কক্সবাজারে বাণিজ্যিকভাবে লবণ উৎপাদন শুরু হয় ১৯৬০ সালে। বাংলাদেশে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি লবণ উৎপাদন হয় কক্সবাজার জেলায়। মোট উৎপাদনের প্রায় ৯০ শতাংশ লবণ আসে এই জেলা থেকে। চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে বাকি লবণ উৎপাদিত হয়।


ফেনীতে ২য় শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষনের পর হত্যার ঘটনায় আটক ২ জন

 ফেনী প্রতিনিধিঃ 

ফেনীর দাগনভূঁইয়া উপজেলার জায়লস্করে মিফতাহুল জান্নাত অপ্রা (৫) নামে ২য় শ্রেণির এক ছাত্রীকে পাষবিক নির্যাতনের পর ফাঁস দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। 

শনিবার (২৫ জুন) উপজেলার জায়লস্কর ইউনিয়নের দক্ষিণ নেয়াজপুর গ্রামে এ পাশবিক ঘটনাটি ঘটে। নিহত ওই শিশু স্থানীয় বক্সআলী ভূঁইয়া বাড়ির ওসমান গনির মেয়ে ও নেয়াজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২য় শ্রেণির শিক্ষার্থী।

 শিশুর পরিবারের সদস্যারা জানান, আমাদের বাড়ীর পাশেই বিদ্যালয়। সকালে বিদ্যালযে গিয়ে ক্লাসের ফাঁকে পানি খাওয়ার জন্য বেরিয়ে নিখোঁজ হয়ে যায়। 

এর পরে অনেক খোজাখুজির পর দুপুরের দিকে বিদ্যালয় সংলগ্ন কবরস্থানের ঝোঁপের ভেতর কে বা কাহারা শিশুটি ধর্ষণের পর হত্যা করে বড় একটি গাছের সঙ্গে লাশ ঝুলিয়ে রেখে পালিয়ে যায়। 

পরে তারা পুলিশে খবর দিলে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। শিশুটিকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

নিহত শিশুটির নাম অপ্রা (৬)। সে দক্ষিণ নেয়াজপুর গ্রামের ওসমান গনির মেয়ে। পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ফেনী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেছে।এ ঘটনায় সন্দেহ ভাজন দুই যুবককে জিজ্ঞাসা বাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ। 

দাগনভূঁইয়া থানার ওসি হাসান ইমাম জানান, শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে এবং এ বিষয়ে অধিকতর তদন্ত চলছে।

শনিবার, ১৮ জুন, ২০২২

এ মাসেই মালয়েশিয়ায় যাচ্ছে বাংলাদেশি শ্রমিক, বছরে যাবে ১ লাখ

 


প্রায় ৪ বছর পর চলতি মাসেই মালয়েশিয়ায় যাচ্ছে বাংলাদেশি শ্রমিক। আজ বৃহস্পতিবার (২ জুন) ঢাকায় মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রীর সঙ্গে জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক হয়।


বৈঠক শেষে এ কথা জানান প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানবিষয়ক মন্ত্রী ইমরান আহমদ। তিনি বলেন, পাঁচ বছর মেয়াদে এ চুক্তিতে বছরে দেশটিতে যাবেন এক লাখ শ্রমিক।


প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী বলেন, প্রত্যেক শ্রমিকের বেতন হবে ১ হাজার ৫০০ মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত। দেশটিতে যাওয়ার খরচ বা অভিবাসন ব্যয় ১ লাখ ৬০ হাজার টাকার কম হ‌বে। 

ইমরান আহমদ মনে করেন,মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে আর কোনও বৈঠকের হয়তো প্রয়োজন হবে না। সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী সব শর্ত মেনেই দেশটিতে জনশক্তি পাঠানো হবে। আশা করা হচ্ছে, জুনের মধ্যেই সেখানে শ্রমিক পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হবে।


তিনি জানান, সরকারের ডাটা ব্যাংক থেকে কর্মী পাঠানো হবে। এর আগে সংবাদপত্র ও টিভিতে বিজ্ঞাপন দেয়া হবে।


দক্ষিণ এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়ায় বৈধ-অবৈধ মিলে ৭ থেকে ৮ লাখ বাংলাদেশি বসবাস করেন। কাছের দেশ ও যাওয়ার খরচ কম হওয়ায় দেশের অভিবাসন প্রত্যাশীদেরও আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে দেশটি।

নানা কারণে গেল প্রায় ৪ বছর ধরে নিষেধাজ্ঞার খড়গ ঝুলছিল মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানি। শেষমেষ ২০২১ সালের ডিসেম্বরে দেশটিতে শ্রমিক পাঠানোর বিষয়ে সমঝোতা হয় বাংলাদেশের।


সে চুক্তির অংশ হিসেবে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী দাতুক সেরি এম সারাভানান ঢাকায় সফরে এসেছেন। জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক তিনি বলেন, শ্রমিক রপ্তানিতে আর কোনও বাঁধা নেই। তবে কতটি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে শ্রমিক নেয়া হবে তা জানানো হবে। 

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন জানান, চলতি জুনেই খুলছে এ বাজার।দেশটিতে শ্রমিক রপ্তানির জন্য গুটি কয়েক রিক্রুটিং এজেন্সি দায়িত্ব পাচ্ছে।


এর আগে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করেন এম সারাভানান। এসময় প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দেন, টিকাদানসহ সব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েই মালয়েশিয়ার শ্রমিক পাঠানো হবে। দেশটি প্রবাসী শ্রমিকদের নিরাপদ, নিয়মিত, সুশঙ্খল কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে সক্ষম হবে বলে আশা করেন তিনি।

শুক্রবার, ১৭ জুন, ২০২২

তালিকাভুক্ত এজেন্সির মাধ্যমে ভিসা প্রত্যাশীদের আবেদনের অনুরোধ করেছে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশন।



 প্রতারণার হাত থেকে বাঁচতে, কেবলমাত্র তালিকাভুক্ত এজেন্সির মাধ্যমে ভিসা প্রত্যাশীদের আবেদনের অনুরোধ করেছে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশন।


সোমবার (১৩ জুন) মালয়েশিয়ার ঢাকা দূতাবাসের ফেসবুক পেইজ থেকে এই তথ্য জানা গেছে।


ফেইসবুকে পেইজে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে মালয়েশিয়া হাইকমিশন জানায়, অনুগ্রহপূর্বক জানানো যাচ্ছে যে, অসংখ্য প্রতারণা মামলা এবং জাল নথিপত্রের ব্যাপক নজির পাওয়ার কারণে ই-ভিসাসহ সব ভিসা আবেদন কেবল অনুমোদিত এজেন্সির মাধ্যমে করা যাবে।

বাংলাদেশে বসবাসরত বাংলাদেশিরাও বিশ্বের অন্য কোনও স্থানের মালয়েশিয়া দূতাবাস থেকে মালয়েশিয়ান ভিসা (ই-ভিসাসহ) আবেদন করতে পারবেন না।


অনুগ্রহপূর্বক আরও জানানো যাচ্ছে যে, ই-ভিসাসহ মালয়েশিয়ান ভিসার ম্যানিপুলেশন মালয়েশিয়ার বিদ্যমান আইনের আওতায় একটি গুরুতর শাস্তিযোগ্য অপরাধ।


বৃহস্পতিবার, ১৬ জুন, ২০২২

সুইস ব্যাংকে টাকা রাখছেন কোন বাংলাদেশিরা?



সুইস ব্যাংকগুলোতে যেসব বাংলাদেশিরা অর্থ জমা রেখেছেন, বাংলাদেশ সরকার কি চাইলে তাদের পরিচয় জানতে পারবেন?


খুব সোজা উত্তর হচ্ছে না। কারণ সুইটজারল্যান্ডের সংবিধান এবং ব্যাংকিং আইন অনুযায়ী সেখানে ব্যাংক গ্রাহকদের গোপনীয়তা কঠোরভাবে রক্ষা করা হয়।


সুইস ব্যাংকার্স এসোসিয়েশনের ওয়েবসাইটে বলা হচ্ছে, গোপনীয়তার অধিকার সুইস আইন ব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ এবং ফেডারেল সংবিধান দ্বারা তা সুরক্ষিত।


তবে কোন অপরাধের ক্ষেত্রে এই সুরক্ষা কাজ করবে না। অর্থাৎ সেখানে গচ্ছিত অর্থ যদি কোন অপরাধের সঙ্গে সম্পর্কিত হয়, তাহলে সেক্ষেত্রে গ্রাহকের পরিচয় প্রকাশে কোন বাধা নেই।

সুইস ব্যাংকার্স এসোসিয়েশনের ওয়েবসাইটে বলা হয়, "অপরাধের তদন্তের ক্ষেত্রে সুইস ব্যাংকগুলো তাদের গ্রাহকদের পরিচয় প্রকাশে বাধ্য, সেই অপরাধ সুইটজারল্যান্ডেই হোক, আর অন্য কোন দেশেই হোক।"


বাংলাদেশিদের পাঁচ হাজার কোটি টাকা


সুইটজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী সেদেশের ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা রাখা অর্থের পরিমাণ প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা।


আগের বছরের তুলনায় সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের রাখা অর্থের পরিমাণ প্রায় বিশ শতাংশ বেড়েছে।


বাংলাদেশ সরকার থেকে অর্থ পাচার রোধে যথেষ্ট পদক্ষেপ না থাকার ফলেই সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থের পরিমাণ বাড়ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।


সুইস ব্যাংকগুলোতে সারাবিশ্ব থেকেই বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থ রাখা হয় বলে দুর্নাম রয়েছে।

দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, "আমাদের দেশে কোন বিদেশি এসে কিন্তু চাইলেই টাকা রাখতে পারবেন না, অনেক কাগজ লাগবে। কিন্তু অনেক তথাকথিত উন্নত দেশে বাইরের লোকজন টাকা এনে রাখতে পারেন এবং টাকাটি বৈধ কি অবৈধ সেটি প্রাইভেসির নামে প্রকাশ করা হয় না। ফলে অনেক অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ সেখানে লগ্নি করা হয় বা পাচার করা হয়"।


বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের প্রধান আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান বলেন- "ওভার ইনভয়েসিং বা আন্ডার ইনভয়েসিং এর মাধ্যমে মানি লন্ডারিং হয়। তবে এগুলো প্রতিরোধ করার জন্য আমাদের সংস্থাগুলো যথেষ্ট সজাগ রয়েছে"।


"আমাদের প্রবাসীরা যারা বিদেশে কাজ করেন তাদের অনেকেও সেখানে আয় করে সুইস ব্যাংকগুলোতে জমা রাখছেন। সব অর্থই যে দেশ থেকে গেছে এমনটা ভাবার কোন কারণ নেই" বলেন মি. হাসান।


তবে অর্থ যে শুধু সুইস ব্যাংকে পাচার হচ্ছে তা নয়। ড. ইফতেখারুজ্জামান বলছেন, বাংলাদেশ থেকে এশিয়া এবং ইউরোপের আরো অনেক দেশে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হচ্ছে। এবং এনিয়ে সরকারও কোন কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে না।


দীর্ঘদিন যাবত সুইস ব্যাংকগুলোতে বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের কী পরিমাণ অর্থ রয়েছে সেটিরও কোন তথ্য ছিল না। কিন্তু দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদ অনুযায়ী, সুইস কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত কয়েক বছর যাবত সেদেশে বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের জমাকৃত অর্থের পরিমাণ প্রকাশ করছে

সুইস কেন্দ্রীয় ব্যাংক কেবল কোন দেশের নাগরিকরা সেদেশের ব্যাংকে কি পরিমাণ অর্থ রেখেছেন সেই তথ্যটাই প্রকাশ করেছে।


কী করতে পারে বাংলাদেশ


বিশ্বব্যাপী সুইস ব্যাংকগুলো পরিচিত গ্রাহকদের ব্যাপারে তাদের কঠোর গোপনীয়তার জন্য। আর ঠিক এ কারণেই সারা দুনিয়ার বিত্তশালী আর খ্যাতিমানরা সুইস ব্যাংকে তাদের অর্থ গচ্ছিত রাখেন।


কাজেই যেসব বাংলাদেশিরা সুইস ব্যাংকে অর্থ জমা রেখেছেন, তাদের নাম-পরিচয় জানার কোন উপায় কি বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের আছে?


ট্রান্সপারেন্সী ইন্টারন্যাশনালের ড: ইফতেখারুজ্জামান বলেন, "সুইস, মালয়েশিয়ান বা সিঙ্গাপুর যেকোন ব্যাংকেরই এখন বাধ্যবাধকতা রয়েছে তথ্য দেয়ার। কেন্দ্রীয় ব্যাংক, দুর্নীতি দমন কমিশন, অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড যদি একসাথে সেসব দেশের কর্তৃপক্ষের সাথে কাজ করে তাহলে শুধু এই অর্থের বৈধতা যেমন জানা সম্ভব, তেমনি এগুলো ফিরিয়েও আনা সম্ভব"।


উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, সিঙ্গাপুর থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার প্রয়াত ছেলে আরাফাত রহমানের অর্থ ফিরিয়ে আনার কথা। তবে এর পরে দেশের বাইরে যে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে তা কাদের সেটি খুঁজে বের করা অথবা সেটি ফিরিয়ে আনার তেমন কোন উদ্যোগ দেখা যায়নি।


ড. ইফতেখারুজ্জামান মনে করেন, অর্থ পাচার দমনে যথেষ্ট পদক্ষেপ না থাকায় একদিকে যেমন অপরাধীরা সুরক্ষা পাচ্ছে, অন্যদিকে পাচারও বাড়ছে।

এক বছরের ব্যবধানেই বাংলাদেশিরা জমা করেছেন আরও ৩০০০ কোটি টাকা



সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশের নাগরিকদের জমা করা টাকার পরিমাণ এক বছরের ব্যবধানে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা বেড়েছে।


সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদনে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।


সেই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২১ সালে সুইটজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশিদের গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৭ কোটি ১১ লাখ সুইস ফ্রাঁ, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় আট হাজার দু'শ ৭৫ কোটি টাকা।


এর আগের বছর, অর্থাৎ ২০২০ সালে, এই অর্থের পরিমাণ ছিল পাঁচ হাজার তিনশ ৪৭ কোটি টাকা।


সুইস ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদনে কয়েক বছরের যে পরিসংখ্যান দেয়া হয়েছে তাতে এই বৃদ্ধি এক বছরের ব্যবধানে সর্বোচ্চ।


এই হিসেব অনুযায়ী, এক বছরেই সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা করা অর্থের পরিমাণ দু'হাজার নয়শ ২৮ কোটি টাকা বেড়েছে।


সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে অর্থপাচার নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে।


সেই পটভূমিতে পাচার হওয়া অর্থ দেশে আনার উদ্দেশ্যে আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটেও কিছু সুযোগ রাখা হয়েছে।

 সুইজার‍ল্যান্ডের আইন অনুযায়ী দেশটির ব্যাংকগুলো তাদের গ্রাহকদের তথ্য প্রকাশ করতে বাধ্য নয়। গ্রাহকের জমা করা অর্থের উৎস সম্পর্কেও সুইস কর্তৃপক্ষ জানতে চায় না।


কয়েক বছর ধরে সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে কোন্ দেশের নাগরিকরা কত অর্থ জমা রাখছে তার একটি পরিসংখ্যান দিচ্ছে, কিন্তু গ্রাহকদের তথ্য তারা গোপন রাখছে।


এই গোপনীয়তার নীতির সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন দেশের ধনী ব্যক্তিরা তাদের অর্থ সুইস ব্যাংকগুলোতে জমা রাখেন।


বাংলাদেশিদেরও জমা রাখা অর্থের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থ জমা করার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার বিষয়টিও বাংলাদেশে একটা বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে।


ভিসা আবেদনে অনেক প্রতারণা ও জালিয়াতি চলছে বলে জানিয়েছে ঢাকায় মালয়েশীয় হাইকমিশন।

ভিসা আবেদনে অনেক প্রতারণা ও জালিয়াতি চলছে বলে জানিয়েছে ঢাকায় মালয়েশীয় হাইকমিশন। 
এর পরিপ্রেক্ষিতে হাইকমিশন সতর্ক করে বলেছে, ভিসা জালিয়াতি মালয়েশিয়ার আইনে গুরুতর অপরাধ।


মালয়েশীয় হাইকমিশন গতকাল সোমবার এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ভিসা আবেদনের সঙ্গে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক প্রতারণা ও জালিয়াতিপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত জমা হচ্ছে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে মালয়েশিয়ার ই-ভিসাসহ সব ধরনের ভিসা আবেদন অবশ্যই অনুমোদিত ভিসা আবেদন এজেন্সির মাধ্যমে করতে হবে।

বাংলাদেশে বসবাসকারী বাংলাদেশিরা এ দেশের বাইরে অন্য কোনো দেশে মালয়েশীয় দূতাবাসে ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন না।
 ই-ভিসাসহ সব ধরনের ভিসা আবেদনের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য হবে।

মঙ্গলবার, ১৪ জুন, ২০২২

মালয়েশিয়ার বিভিন্নখাতে ১০ লাখের বেশি শ্রমিকের ঘাটতি রয়েছে

 মালয়েশিয়ায় বিদেশিকর্মীর ঘাটতি চরম আকার ধারণ করেছে। এতে বিপাকে পড়েছে দেশটির পামওয়েল থেকে সেমিকনডাক্টর নির্মাণ কোম্পানিগুলো। জানা গেছে, মালয়েশিয়ার বিভিন্নখাতে ১০ লাখের বেশি শ্রমিকের ঘাটতি রয়েছে। এতে দেশটির অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।


বেশ কিছু শিল্প গ্রুপ, কোম্পানি ও কূটনীতিকরা জানিয়েছেন, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে মালয়েশিয়া থেকে করোনার বিধিনিষেধ উঠিয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু দেশটির সরকারের ধীর অনুমোদনের কারণে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শ্রমিক সেখানে প্রবেশ করতে পারেনি। তাছাড়া শ্রমিকদের সুরক্ষা নিয়ে ইন্দোনেশিয়া ও বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনাও এর অন্যতম কারণ।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়া মূলত রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল। রয়েছে বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান। দেশটি কোম্পানি, পামওয়েলের বীজ বপণ ও সেবাখাতের জন্য লাখ লাখ বিদেশিকর্মীর ওপর নির্ভরশীল। বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে স্থানীয়রা এতে চাকরি করতে চান না। এমন পরিস্থিতিতে উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো ক্রেতা হারানোর আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।


ফেডারেশন অব মালয়েশিয়ান ম্যানুফ্যাকচারার্সের প্রেসিডেন্ট সোহ থিয়ান লাই বলেছেন, অর্থনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তনের পাশাপাশি বিক্রি অনেক বেড়েছে কিন্তু কিছু কোম্পানি চাহিদা অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ করতে পারছে না।


পাম তেল উৎপাদনকারী ইউনাইটেড প্ল্যান্টেশনের প্রধান নির্বাহী পরিচালক কার্ল বেক-নিলসেন বলেছেন, কর্মী সংকটে পামওয়েলের চাষের ক্ষেত্রে ব্যাপক সমস্যা তৈরি হচ্ছে।


বর্তমানে মালয়েশিয়ায় উত্পাদন, পাম গাছ রোপণ ও নির্মাণে কমপক্ষে ১২ লাখের বেশি শ্রমিকের অভাব রয়েছে। মহামারির বিধিনিষেধের নিয়ম শিথিল করার কারণে চাহিদা বাড়ায় এ অবস্থা তৈরি হয়েছে।

দেশটির উৎপাদনকারীরা জানিয়েছেন, তাদের ছয় লাখকর্মী ঘাটতি রয়েছে। নির্মাণখাতে প্রয়োজন পাঁচ লাখ ৫০ হাজার, পামশিল্পে প্রয়োজন এক লাখ ২০ হাজার, চিপ নির্মাণে ১৫ হাজার ও মেডিকেল গ্লোভমেকাররা জানিয়েছে, তাদের প্রয়োজন ১২ হাজারকর্মী।


সূত্র: রয়টার্স

বুধবার, ৮ জুন, ২০২২

আগুনের ফলে অ্যাসিড বৃষ্টির দাবি কতটা সত্যি?

 চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের আগুনে একশটির বেশি কন্টেইনার পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। এদের মধ্যে অন্তত ২৪টি কন্টেইনারে রাসায়নিক হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড ছিল বলে কর্মকর্তারা ধারণা করছেন।


ডিপোতে আর কোন রাসায়নিক ছিল কিনা, তা যাচাই-বাছাই করতে এখনো কাজ করছে দমকল সার্ভিস এবং সেনাবাহিনীর সদস্যরা।


প্রাথমিক তদন্তের পর ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানিয়েছে, হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড নামের রাসায়নিক ভর্তি একাধিক কন্টেইনারের কারণেই ব্যাপক বিস্ফোরণ ও আগুন এতো ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। ওই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৪৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।

শনিবার রাতের ওই আগুনের ঘটনার পর থেকেই সামাজিক মাধ্যমে একটি পোস্ট ছড়িয়ে পড়েছে- যেখানে দাবি করা হচ্ছে, রাসায়নিকের কারণে চট্টগ্রাম ও আশেপাশের এলাকায় অ্যাসিড বৃষ্টি হতে পারে।

রাসায়নিকের কারণে সীতাকুণ্ড, চট্টগ্রাম বা ঢাকাতেও ক্ষতিকর প্রভাব ছড়িয়ে পাড়তে বলে আশঙ্কাও প্রকাশ করা হচ্ছে ঐ পোস্টে।



মূলত ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ঐ পোস্টের বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলে এই বক্তব্যের সত্যতা জানার চেষ্টা করেছে বিবিসি বাংলা।

সামাজিক মাধ্যমে গুজব

সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে শেয়ার হওয়া একটি পোস্টে লেখা হয়েছে, ১০/১৫ দিনের মধ্যে কোন বৃষ্টি আসলে এটাতে ভিজবেন না। কারণ হাইড্রোজেন পার অক্সাইড একটি অম্লধর্মী অক্সাইড বিধায় দুষিত বাতাসের সাথে বৃষ্টির পানি মিশে অ্যাসিড বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে।


এই বার্তার নীচে পরিচয় লেখা হয়েছে, ডিএমপি পরিচালক।


এই বার্তাটি কতটা নির্ভরযোগ্য?


এই বার্তা কে বা কোন কর্তৃপক্ষ দিয়েছে, সে নিয়ে কোন পরিষ্কার তথ্য নেই। তবে নীচে লেখা রয়েছে ডিএমপি পরিচালক।


বাংলাদেশে ডিএমপি মানে ঢাকা মহানগর পুলিশ বলে বোঝানো হয়ে থাকে। 

কিন্তু ডিএমপিতে পরিচালক নামে কোন পদ নেই।

ডিএমপির মুখপাত্র ফারুক হোসেন জানিয়েছেন, এরকম কোন বার্তা তারা দেননি।

ঢাকা বা চট্টগ্রামের পুলিশ, দমকল সার্ভিস বা অন্য কোন সংস্থার তরফ থেকেও এ ধরনের কোন বার্তা দেয়া হয়নি।


এই বক্তব্যের কোন সত্যতা বা বাস্তবতাও খুঁজে পাওয়া যায়নি।


হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড কতটা বিপজ্জনক?

হাইড্রোজেন পার অক্সাইড একটি রাসায়নিক যৌগ যার সংকেত H2O2। বিশুদ্ধ অবস্থায় এটা বর্ণহীন তরল।


বিশেষজ্ঞরা হাইড্রোজেন পার অক্সাইডকে বর্ণনা করেন অক্সিডাইজিং এজেন্ট হিসেবে। সাধারণভাবে একে বলা যায় ব্লিচিং এজেন্ট।


সরাসরি হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড ব্যবহার বিপজ্জনক। তাই নিরাপত্তাজনিত কারণে সবসময় এর জলীয় দ্রবণ পরিমিত পরিমাণে ব্যবহার করা হয়।


এটি নিজে দাহ্য পদার্থ না হলেও আগুন বা দাহ্য পদার্থের আশেপাশে রাখলে বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।


টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিতে ব্লিচিং, অ্যাভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রিতে, লেদার কারখানায়, পানি পরিশোধন, বাথরুম পরিষ্কার, কাপড় ধোঁয়াসহ অনেক কাজে এই রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়।


সীতাকুণ্ডের ঘটনায় অ্যাসিড বৃষ্টির সম্ভাবনা কতটা?

যখন কোন কারণে অ্যাসিডিয় বাষ্প বাতাসে ঘুরে বেড়ায় এবং তা বৃষ্টির পানির সাথে নীচে নেমে আসে, তাতে অ্যাসিড বৃষ্টি বলা হয়ে থাকে। বিশেষ করে আগ্নেয়গিরি-প্রবণ এলাকায় এ ধরণের প্রবণতা বেশি দেখা যায়।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোঃ শামছুদ্দিন বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ''প্রথম কথা হলো, অ্যাসিড শুনতে যতটা ভয়ানক বলে শোনায়, হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড সে ধরনের মারাত্মক অ্যাসিড নয়। যদিও এটা উত্তপ্ত হলে বা আগুনের সংস্পর্শে এলে বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে। কিন্তু নির্দিষ্ট মাত্রার মধ্যে এই অ্যাসিড কিন্তু মানুষও ব্যবহার করে থাকে। ''


'' এটা খুব সহজে ডিকম্পোস্ট করে। অর্থাৎ এই রাসায়নিক ভেঙ্গে অক্সিজেন ও পানিতে রূপান্তরিত হয়। সীতাকুণ্ডে আগুনে সেখানে থাকা বেশিরভাগ হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডই পুড়ে গেছে বলে আমরা জানতে পারছি। তাহলে আর সেটা পরিবেশ বা মানুষের জন্য তেমন ক্ষতিকর হবে না,'' তিনি বলছেন।


ড. শামসুদ্দিন বলছেন, ''সীতাকুণ্ড তো উপকূলীয় এলাকা, সেখানে বাতাসের পর্যাপ্ত চলাচল আছে। ফলে কোন গ্যাস বের হলেও কিন্তু সেটা থাকতো না, বাতাসে ছড়িয়ে যায়। আর এখানে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড দ্রুতই হালকা হয়ে মিশে যায়। ফলে এ ধরনের কোন কিছু ঘটার সম্ভাবনা নেই। এটা যদি কোন নির্দিষ্ট স্থান থেকে নিয়মিতভাবে বের হতে থাকতো, তারপর সেখানে বৃষ্টি হলে একটা সম্ভাবনা থাকতো। কিন্তু এখানে তো সব শেষ হয়ে গেছে, আর বের হচ্ছে না। ''

আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ''কোন আগ্নেয়গিরি জীবন্ত হয়ে উঠলে বা ভূমি থেকে ক্রমাগত গ্যাস বের হতে থাকলে এবং সেখানে বৃষ্টি হলে অনেক সময় পানিতে অ্যাসিড পাওয়া যায়। কিন্তু বাংলাদেশে এমন কোন বিষয় কখনো আমরা দেখিনি। ''


''আমার মনে হয় না, সীতাকুণ্ডের ঘটনায় সেরকম কোন কিছু ঘটতে পারে। কারণ বৃষ্টি অনেক কিছুর ওপরে নির্ভর করে। মেঘগুলো তিন-চার কিলোমিটার উপরে থাকে। সেখানে যে বাতাস প্রবাহিত হয়, গ্যাস থাকলে তা এমনিতেই সরে যাবে। সুতরাং জমা হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই,'' বলছেন মি. রশিদ।


রাসায়নিকের বিস্ফোরণ স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ক্ষতিকর হতে পারে?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক থেকে থাকলে তার মাত্রা বা ধরণ অনুযায়ী সেখানকার পরিবেশ, পানি বা বাতাসে প্রভাব ফেলতে পারে। কিন্তু শুধুমাত্র হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড থাকলে এবং সেটির বেশিরভাগ পুড়ে গিয়ে থাকলে বেশি ঝুঁকি থাকবে না।


হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের স্ফুটনাঙ্ক পানির তুলনায় ৫০ ডিগ্রি বেশি। সে কারণে বেশি তাপমাত্রায় এটা বিপজ্জনক হতে পারে। এর উচ্চ ঘনত্ব বেশ বিপজ্জনক। এরকম রাসায়নিক যেন চোখ আর ত্বকের সংস্পর্শে না আসে সেজন্য সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।


এটি ত্বক, চোখের জন্য ক্ষতিকর। শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করলে মাথাব্যথা, নাক জ্বলা এবং বমিও হতে পারে। এছাড়া দীর্ঘসময় এই গ্যাসের ভেতরে থাকলে ফুসফুসে সমস্যা তৈরি করতে পারে।


অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোঃ শামছুদ্দিন বলছেন, ''হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড তো অতোটা অ্যাসিটিক না। বরং আমাদের জন্য বৃষ্টিপাত হয়ে যাওয়া ভালো, তাতে কোথাও কিছু টুকটাক থাকলে তা ধুয়ে যাবে। পরিবেশের জন্য সেটা বড় কোন ঝুঁকি তৈরি করবে না।''


তবে তিনি বলছেন, ''ওই ডিপোতে যদি হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডের বাইরে অন্য কোন ক্ষতিকর রাসায়নিক থেকে থাকে, সেটা সেখানকার মাটি বা পরিবেশে মিশলে কিছুটা ক্ষতির কারণ হতে পারে। সেখানকার হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড নিয়ে আর চিন্তার কিছু নাই, যা হওয়ার হয়ে গেছে। ''


বরং সেখানে যদি আরও কন্টেইনার থেকে থাকে, সেগুলো নিয়ে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন এই শিক্ষক।


তবে কোনভাবে পানি বা খাবারের সাথে মিশে পেটে গেলে যেকোনো রাসায়নিক ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে।


অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোঃ শামছুদ্দিন বলছেন, ''যেকোনো রাসায়নিক পেটে গেলেই তো ক্ষতি হয়। একটা নির্দিষ্ট মাত্রা পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য হতে পারে। তার ওপরে গেলে ক্ষতি হবে। কিন্তু মুখে না খেলে, পানিতে না খেলে তো আর ক্ষতি হবে না। তাই সেখানকার বাসিন্দাদের উচিত হবে আপাতত কিছুদিন সতর্ক থাকা। তবে কিছুদিন পর আস্তে আস্তে সেটা হালকা হয়ে যাবে।''

সোমবার, ৬ জুন, ২০২২

হাইড্রোজেন পার অক্সাইড কী, কতটা বিপজ্জনক , আগুনের মাত্রা কীভাবে বাড়ায়


চট্টগ্রামে সীতাকুণ্ডের কন্টেইনার ডিপোতে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড রাসায়নিক থাকার কারণে সেখানে এতো বড় বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে ধারণা করছেন বাংলাদেশে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা।


আগুন লাগলেই সেটা নেভানোর জন্য প্রথমেই পানির কথা মাথায় আসে। 
কিন্তু পানি দিয়েই সব আগুন নেভানো সম্ভব হয় না। 
অর্থাৎ আগুন লাগলেই পানি যে সবসময় সমাধান নয়- সীতাকুণ্ডের কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের পর এই আলোচনা আবারও সামনে এসেছে।
 যে রাসায়নিককে এই বিস্ফোরণের অন্যতম কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে সেই রাসায়নিক হাইড্রোজেন পার অক্সাইড আসলে কী?

হাইড্রোজেন পার অক্সাইড কী?

হাইড্রোজনের পার অক্সাইড একটি রাসায়নিক যৌগ যার সংকেত H2O2। বিশুদ্ধ অবস্থায় এটা বর্ণহীন তরল


বিশেষজ্ঞরা হাইড্রোজেন পার অক্সাইডকে বর্ণনা করেন অক্সিডাইজিং এজেন্ট হিসেবে। 
সাধারণভাবে একে বলা যায় ব্লিচিং এজেন্ট।

সরাসরি হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড ব্যবহার বিপজ্জনক।
তাই নিরাপত্তাজনিত কারণে সবসময় এর জলীয় দ্রবণ পরিমিত পরিমাণে ব্যবহার করা হয়।


এটি নিজে দাহ্য পদার্থ না হলেও আগুন বা দাহ্য পদার্থের আশেপাশে রাখলে বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

কোথায় ব্যবহৃত হয়?


বাংলাদেশে অনেক কোম্পানি এখন হাইড্রোজেন পার অক্সাইড উৎপাদন করে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পর্যায়ে এর ব্যবহার আছে , যেমন -

•ব্লিচিংয়ের জন্য টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি বিশেষ করে ডাইং ইন্ডাস্ট্রিতে ব্যবহার করা হয় ।

•অ্যাভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রিতে বহুল ব্যবহৃত হয় হাইড্রোজেন পার অক্সাইড

•লেদার ইন্ডাস্ট্রিতেও এর ব্যবহার হয়।

•ওয়াটার ট্রিটমেন্টে ব্যবহার করা সহ বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রির কাজে ব্যবহৃত হয়।

•এছাড়া বাথরুম পরিষ্কার, কাপড় ধোয়াসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় পণ্যেও ব্যবহৃত হয় এটি।

নানা কাজে এর ব্যবহার হলেও সঠিকভাবে সঠিক তাপমাত্রায় এটি ব্যবহার না করলে বিপজ্জনক হতে পারে।

কতটা বিপজ্জনক হাইড্রোজেন পার অক্সাইড?

হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের স্ফুটনাঙ্ক পানির তুলনায় ৫০ ডিগ্রি বেশি। সে কারণে বেশি তাপমাত্রায় এটা বিপজ্জনক হতে পারে। এর উচ্চ ঘনত্ব বেশ বিপজ্জনক।

এরকম রাসায়নিক যেন চোখ আর ত্বকের সংস্পর্শে না আসে সেজন্য সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।

•এটা ত্বকের ক্ষতি করতে পারে। ত্বকে ও চোখে জ্বালাপোড়া হতে পারে। সে কারণে চোখ বা ত্বকের সংস্পর্শে আসলে তাড়াতাড়ি পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

•শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড প্রবেশ করলে মাথাব্যথা, নাক জ্বলা বা বমিও হতে পারে। অতিরিক্ত হাইড্রোজেন পার অক্সাইড ফুসফুসেও সমস্যা তৈরি করতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন এটা শীতল, শুষ্ক, ভালোভাবে বাতাস চলাচল করে এরকম জায়গায় সংরক্ষণ করা উচিত। বিশেষ করে ফ্লেমেবল কেমিক্যাল অর্থাৎ দাহ্য পদার্থের সংস্পর্শে এটা রাখা বিপজ্জনক।

দাহ্য পদার্থ থেকে দূরে এটাকে সংরক্ষণ করা উচিত। কারণ কোন দাহ্য পদার্থের কাছে থাকলে বা আগুন লাগার জায়গায় হাইড্রোজেন পার অক্সাইড থাকলে আগুন বিপজ্জনক পর্যায়ে চলে যেতে পারে , বিস্ফোরণও ঘটতে পারে।

আগুনের মাত্রা কীভাবে বাড়ায় এটি?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পারিপার্শ্বিক অনেকগুলো অবস্থার উপর নির্ভর করে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড বিস্ফোরিত হবে কিনা।

বুয়েটের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক ড: ইজাজ হোসেন বলছেন, হাইড্রোজেন পার অক্সাইড একটা ইন্ডাস্ট্রিয়াল কেমিক্যাল। এটা খুব সাবধানে ব্যবহার করতে হয়। এটা রাখার জন্য কনটেইনার আছে আলাদা। আলাদাভাবে রাখতে হলে বিশেষ ব্যবস্থায় রাখতে হবে।

রাসায়নিক সংরক্ষণের বৈশ্বিক নিয়ম 'ম্যাটারিয়াল সেইফটি ডেটাশিট' অনুযায়ী হাইড্রোজেন পার অক্সাইড রাখতে হবে গ্লাস, স্টেইনলেস স্টিল, অ্যালুমিনিয়াম অথবা প্লাসিক কনটেইনারে। অন্য কোনো ধাতুর সংস্পর্শ পেলে এটা বিক্রিয়া করে।

ড: ইজাজ হোসেন বলছেন, হাইড্রোজেন পার অক্সাইড যেখানে রাখা আছে তার আশেপাশে কী আছে,কতদিন ধরে কীভাবে রাখা আছে -এসব অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করছে এটা কী আচরণ করবে।

তাছাড়া উচ্চ তাপে এটা বিস্ফোরক আচরণ করতে পারে। এটা দাহ্য পদার্থ না হলেও এটা অক্সিডাইজিং এজেন্ট। অর্থাৎ এটা অক্সিডাইজার হিসেবে কাজ করে।

আর অক্সিডাইজারে অক্সিজেন বা ফ্লোরিন বা ক্লোরিনের মতো পদার্থ যুক্ত থাকে যা দাহ্য পদার্থের মতো আচরণ করতে পারে। তার মানে হলো আগুন লাগলে তার আশেপাশে কোন অক্সিডাইজিং এজেন্ট থাকলে সেটা আগুনের মাত্রাকে আরো বাড়িয়ে দেয়, পর্যাপ্ত তাপ ও জ্বালানি পেলেই আগুনের তীব্রতা বাড়ে এবং এই তীব্রতায় বিস্ফোরণও ঘটতে পারে।

পানির সংস্পর্শে এলেও বিস্ফোরক আচরণ করতে পারে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড।
 এটি যেহেতু রাসায়নিক যৌগ সেই কারণে হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের কারণে কোন আগুন লাগলে সেটি পানি দিয়ে নেভানো যায় না।

এ ধরনের আগুন নেভাতে হয় অন্য কৌশলে। ফগ সিস্টেমে এ ধরনের আগুন নেভানো সম্ভব।

এছাড়া ফোম বা ড্রাই পাউডার জাতীয় অগ্নি নির্বাপন যন্ত্র দিয়ে এমন আগুন নেভাতে হয়।

বৃহস্পতিবার, ২ জুন, ২০২২

প্রবাসী আয়: বাংলাদেশে পাঠানো রেমিট্যান্সের নিরাপত্তার জন্য যে পাঁচটি কাজ করতে পারেন বিদেশে কর্মরত শ্রমিকরা

 

সতেরো বছর পর সৌদি আরব থেকে পাকাপাকিভাবে বাংলাদেশে ফিরে মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন দেখতে পান, স্বজনদের কাছে এতো বছর ধরে তিনি যে টাকাপয়সা পাঠিয়েছিলেন, তা বেহাত হয়ে গেছে।


দেশে ফিরে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার মতো টাকাপয়সাও তখন তার হাতে নেই। অবশেষে তাকে ঠাই নিতে হয়েছে ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের সেফ হোমে। তার পরিস্থিতির একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক মাধ্যমেও।


প্রবাসী বাংলাদেশীদের জীবনে এমন ঘটনা একেবারে বিরল কিছু নয়।


বাংলাদেশে বিদেশ থেকে আসা অর্থের বড় অংশটি আসে রেমিট্যান্স খাতে, অর্থাৎ প্রবাসী আয়ের মাধ্যমে - যারআবার একটি বড় পরিমান পাঠান বিদেশে কাজ করা অদক্ষ কর্মীরা। পুরো বছরে প্রবাসীরা ২ হাজার ১৭৪ কোটি মার্কিন ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ কমবেশি ১ লাখ ৮৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

কিন্তু যে প্রবাসীরা কঠোর পরিশ্রম করে অর্জিত অর্থ দেশে পাঠান, তাদের অনেকেই দেশে ফিরে স্বজনদের দ্বারা প্রতারণার শিকার হন। ওই অর্থ যাদের কাছে পাঠানো হয়, তারা নানা কারণে টাকা খরচ করে ফেলেন, আবার অনেক প্রবাসীর পাঠানো অর্থে গড়া সম্পদ শেষ পর্যন্ত অন্যদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে হয়।

ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরীফুল হাসান জানান যে প্রতি বছর ঠিক কত সংখ্যক প্রবাসী শ্রমিক দেশে পাঠানো টাকা নিয়ে প্রতারণার শিকার হন, তার সঠিক কোন পরিসংখ্যান তাদের কাছে নেই।


"তবে আমরা যারা প্রবাসীদের নিয়ে কাজ করি, বিশেষ করে বিমানবন্দরে একটি জরুরি সেবা দেই, আমরা দেখেছি যে প্রায়ই এই ধরণের ঘটনা ঘটে।

 যে মানুষদের জন্য তারা বিদেশে থেকে কষ্ট করে টাকা পাঠাচ্ছেন, তারা সেগুলো খরচ করে ফেলছে, তাদের গ্রহণ করতে চায় না,'' বিবিসি বাংলাকে জানাচ্ছিলেন তিনি।


শরীফুল হাসান আরও বলেন, ''আমাদের পর্যবেক্ষণে দেখেছি, পুরুষদের চেয়ে নারীদের ক্ষেত্রে এটা বেশি হয়। 

যে নারী এতো কষ্ট করে আয় পাঠাচ্ছেন, তার স্বামী হয়তো আরেকটা বিয়ে করে ফেলছে, অথবা সেই আয় তার নিজের নামেই নেই।"


অন্যদিকে প্রবাসী পুরুষদের বিষয়ে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে এমনটা দেখা যায় যে একজন প্রবাসী কর্মীর স্ত্রী হয়তো টাকা খরচ করে ফেলেছেন, অথবা তার বাবা-ভাই সম্পত্তি নিজেদের নামে নিবন্ধন করেছে।


প্রবাসী শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করা আরেকটি প্রতিষ্ঠান রামরুর চেয়ারপারসন তাসনীম সিদ্দিকী জানান, এমন অনেক হয়েছে যে প্রবাসীর টাকায় হয়তো পরিবারের সম্পত্তি হয়েছে, কিন্তু প্রবাসীকে দেশে ফিরে এসে তা বাবা-ভাই-বোনদের সাথে ভাগ করে নিতে হচ্ছে।


অথবা এমনও হয়েছে যে কেউ হয়তো ভাইয়ের কাছে কাছে টাকা পাঠিয়েছেন, কিন্তু ভাই নিজের নামে সম্পত্তি করেছেন। অথবা স্ত্রীর নামে অর্থ পাঠিয়েছেন, তিনি হয়তো ভাই বা অন্য কারো সঙ্গে ব্যবসা করতে গিয়ে হারিয়েছেন - বলছিলেন অধ্যাপক সিদ্দিকী।


তিনি জানান, ব্যাংকে সঙ্গে তারা একটি প্রশিক্ষণ করতে গিয়ে বেশ কিছু পরামর্শ পেয়েছেন এবং এখন সেগুলোই তারা প্রবাসীদেরকে অনুসরণ করার পরামর্শ দেন।


প্রশ্ন হলো, তাহলে কীভাবে নিজেদের অর্থ সঞ্চয় করতে পারেন প্রবাসীরা?


রামরু এবং ব্র্যাকের অভিবাসন বিষয়ক কর্মকর্তারা প্রবাসীদের এই ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি পরামর্শ দিচ্ছেন -

অন্তত দুইটি হিসাব খুলে বিদেশে যাওয়া

তাসনীম সিদ্দিকী বলেন যে তারা এখন একটি ক্যাম্পেইন চালাচ্ছেন যেখানে বলা হচ্ছে যে প্রত্যেক প্রবাসীর উচিত বিদেশে যাওয়ার আগে দুইটি ব্যাংক হিসাব খুলে যাওয়া। তার একটিতে তিনি পরিবারের ভরণপোষণের জন্য অর্থ পাঠাবেন, আরেকটিতে থাকবে তার নিজের জমানো টাকা।


তাদের পরামর্শ হলো, এজন্য তারা ব্যাংকে নানা মেয়াদী সঞ্চয়ী স্কিম খুলে যেতে পারেন, যেখানে তাদের হিসাব থেকে সরাসরি টাকা জমা হবে।


বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে এমনটা অনেক সময় দেখা যায় যে অনেক প্রবাসী কর্মী দেশে থাকা পিতা-মাতার নামে টাকা পাঠান। অনেক ক্ষেত্রে আবার অনেক সময় স্ত্রীর কাছ থেকে অভিযোগ আসে যে তাকে ঠিকভাবে খরচ দেয়া হচ্ছে না।


''এসব ক্ষেত্রে স্ত্রী ও পিতা বা পরিবারের অন্য সদস্যদের নামে আলাদা আলাদা হিসাব খুলে সেখানে টাকা পাঠানো যেতে পারে। তাহলে যেমন কোন জটিলতা থাকবে না, আবার নিজের টাকার ওপরেও তার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকবে,'' বলেন তাসনীম সিদ্দিকী।


শুরু থেকেই সঞ্চয়ের পরিকল্পনা

অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, অর্থ উপার্জনের জন্য বা চাকরি নিয়ে যখন কেউ বিদেশে যাচ্ছেন, তখন থেকেই তাকে পরিকল্পনা করতে হবে যে উপার্জিত অর্থ তিনি কীভাবে কাজে লাগাবেন।


অধ্যাপক তাসনীম সিদ্দিকী বলেন, ''আপনি যখন বিদেশে যাচ্ছেন, যে টাকা পয়সা উপার্জন করছেন, আপনি ভাববেন না যে সেটা শুধুমাত্র আপনার পরিবারের বর্তমান খাওয়া-পরার অর্থ।


''আপনি যখন দেশে ফিরে আসবেন, তখন আপনার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেও টাকা প্রয়োজন। শুরু থেকেই আপনাকে সঞ্চয়ের ব্যাপারটি ঠিক করতে হবে - কীভাবে বিনিয়োগ করবেন, কোথায় বিনিয়োগ করবেন, তা ভাবতে হবে।''

পারিবারিক বিনিয়োগ শুরু করতে পারেন

ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরীফুল হাসান বলছেন, প্রবাসীদের নিজেদের নামে বাংলাদেশে সরাসরি বিনিয়োগের সুযোগ খানিকটা সীমিত। দেখা গেছে, প্রবাসীরা বরং জমি, বাড়ি ইত্যাদির পেছনে বেশি বিনিয়োগ করেন।


"এমন কি তাদের জন্য সঞ্চয়ের স্কিমও বেশি নেই।"


তিনি পরামর্শ দেন যে প্রবাসীরা তাদের পারিবারিক স্বজন বা স্ত্রীর মাধ্যমে বাড়ি-কেন্দ্রীক খামার বা ছোটখাটো ব্যবসা করতে পারেন। যেমন মুরগির খামার, মাছের চাষ ইত্যাদি ছোটখাটো ব্যবসাও করতে পারেন।


শরীফুল হাসান বলেন, ''বিদেশে অনেক বড় বড় বিনিয়োগকারী রয়েছেন, যারা দেশেও বড় আকারে বিনিয়োগ করতে চান। তাদের জন্য সরকারিভাবে বিশেষ পরিকল্পনা নিতে হবে - অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করা যেতে পারে - যাতে তারা দেশে বিনিয়োগে আগ্রহী হন।''

জমি বা বাড়ির নিবন্ধনে নিজের নাম নিশ্চিত করা


অনেক সময় বিদেশ থেকে পাঠানো অর্থে প্রবাসীর ঘনিষ্ঠ স্বজনেরা নিজেদের নামে জমি বা বাড়ি রেজিস্ট্রি করে থাকেন। পরবর্তীতে প্রবাসীরা দেশে ফিরে মালিকানা জটিলতায় পড়েন।


এক্ষেত্রে অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন যে জমি বা বাড়ির পুরো টাকা পরিশোধের আগে অবশ্যই সেটি তার নিজের নামে হচ্ছে কি-না, সেটা নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে।


সবচেয়ে ভালো হয় যদি তিনি বাংলাদেশে থাকার সময়ই এ ধরণের সম্পত্তির হস্তান্তর নিশ্চিত করা যায়।


দেশে পাঠানো টাকার খরচের হিসাব রাখুন

অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে যে টাকা-পয়সা পাঠানো হয়, অভিবাসীদের উচিত সেই টাকা কোথায়, কীভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে, কীভাবে খরচ করা হচ্ছে, সে বিষয়ে নিয়মিতভাবে খবর রাখা।


প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেসব কাগজপত্রের ছবি দেখা এবং অনলাইনে যাচাই করে দেখা।


ফলে একজন স্বজন চাইলেও প্রবাসী অর্থ আয়কারীকে কোনরকম প্রতারণা করতে পারবে না বা ঠকাতে পারবে না।

Popular Posts