আগুনের ফলে অ্যাসিড বৃষ্টির দাবি কতটা সত্যি?

 চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের আগুনে একশটির বেশি কন্টেইনার পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। এদের মধ্যে অন্তত ২৪টি কন্টেইনারে রাসায়নিক হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড ছিল বলে কর্মকর্তারা ধারণা করছেন।


ডিপোতে আর কোন রাসায়নিক ছিল কিনা, তা যাচাই-বাছাই করতে এখনো কাজ করছে দমকল সার্ভিস এবং সেনাবাহিনীর সদস্যরা।


প্রাথমিক তদন্তের পর ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানিয়েছে, হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড নামের রাসায়নিক ভর্তি একাধিক কন্টেইনারের কারণেই ব্যাপক বিস্ফোরণ ও আগুন এতো ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। ওই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৪৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।

শনিবার রাতের ওই আগুনের ঘটনার পর থেকেই সামাজিক মাধ্যমে একটি পোস্ট ছড়িয়ে পড়েছে- যেখানে দাবি করা হচ্ছে, রাসায়নিকের কারণে চট্টগ্রাম ও আশেপাশের এলাকায় অ্যাসিড বৃষ্টি হতে পারে।

রাসায়নিকের কারণে সীতাকুণ্ড, চট্টগ্রাম বা ঢাকাতেও ক্ষতিকর প্রভাব ছড়িয়ে পাড়তে বলে আশঙ্কাও প্রকাশ করা হচ্ছে ঐ পোস্টে।



মূলত ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ঐ পোস্টের বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলে এই বক্তব্যের সত্যতা জানার চেষ্টা করেছে বিবিসি বাংলা।

সামাজিক মাধ্যমে গুজব

সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে শেয়ার হওয়া একটি পোস্টে লেখা হয়েছে, ১০/১৫ দিনের মধ্যে কোন বৃষ্টি আসলে এটাতে ভিজবেন না। কারণ হাইড্রোজেন পার অক্সাইড একটি অম্লধর্মী অক্সাইড বিধায় দুষিত বাতাসের সাথে বৃষ্টির পানি মিশে অ্যাসিড বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে।


এই বার্তার নীচে পরিচয় লেখা হয়েছে, ডিএমপি পরিচালক।


এই বার্তাটি কতটা নির্ভরযোগ্য?


এই বার্তা কে বা কোন কর্তৃপক্ষ দিয়েছে, সে নিয়ে কোন পরিষ্কার তথ্য নেই। তবে নীচে লেখা রয়েছে ডিএমপি পরিচালক।


বাংলাদেশে ডিএমপি মানে ঢাকা মহানগর পুলিশ বলে বোঝানো হয়ে থাকে। 

কিন্তু ডিএমপিতে পরিচালক নামে কোন পদ নেই।

ডিএমপির মুখপাত্র ফারুক হোসেন জানিয়েছেন, এরকম কোন বার্তা তারা দেননি।

ঢাকা বা চট্টগ্রামের পুলিশ, দমকল সার্ভিস বা অন্য কোন সংস্থার তরফ থেকেও এ ধরনের কোন বার্তা দেয়া হয়নি।


এই বক্তব্যের কোন সত্যতা বা বাস্তবতাও খুঁজে পাওয়া যায়নি।


হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড কতটা বিপজ্জনক?

হাইড্রোজেন পার অক্সাইড একটি রাসায়নিক যৌগ যার সংকেত H2O2। বিশুদ্ধ অবস্থায় এটা বর্ণহীন তরল।


বিশেষজ্ঞরা হাইড্রোজেন পার অক্সাইডকে বর্ণনা করেন অক্সিডাইজিং এজেন্ট হিসেবে। সাধারণভাবে একে বলা যায় ব্লিচিং এজেন্ট।


সরাসরি হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড ব্যবহার বিপজ্জনক। তাই নিরাপত্তাজনিত কারণে সবসময় এর জলীয় দ্রবণ পরিমিত পরিমাণে ব্যবহার করা হয়।


এটি নিজে দাহ্য পদার্থ না হলেও আগুন বা দাহ্য পদার্থের আশেপাশে রাখলে বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।


টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিতে ব্লিচিং, অ্যাভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রিতে, লেদার কারখানায়, পানি পরিশোধন, বাথরুম পরিষ্কার, কাপড় ধোঁয়াসহ অনেক কাজে এই রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়।


সীতাকুণ্ডের ঘটনায় অ্যাসিড বৃষ্টির সম্ভাবনা কতটা?

যখন কোন কারণে অ্যাসিডিয় বাষ্প বাতাসে ঘুরে বেড়ায় এবং তা বৃষ্টির পানির সাথে নীচে নেমে আসে, তাতে অ্যাসিড বৃষ্টি বলা হয়ে থাকে। বিশেষ করে আগ্নেয়গিরি-প্রবণ এলাকায় এ ধরণের প্রবণতা বেশি দেখা যায়।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোঃ শামছুদ্দিন বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ''প্রথম কথা হলো, অ্যাসিড শুনতে যতটা ভয়ানক বলে শোনায়, হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড সে ধরনের মারাত্মক অ্যাসিড নয়। যদিও এটা উত্তপ্ত হলে বা আগুনের সংস্পর্শে এলে বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে। কিন্তু নির্দিষ্ট মাত্রার মধ্যে এই অ্যাসিড কিন্তু মানুষও ব্যবহার করে থাকে। ''


'' এটা খুব সহজে ডিকম্পোস্ট করে। অর্থাৎ এই রাসায়নিক ভেঙ্গে অক্সিজেন ও পানিতে রূপান্তরিত হয়। সীতাকুণ্ডে আগুনে সেখানে থাকা বেশিরভাগ হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডই পুড়ে গেছে বলে আমরা জানতে পারছি। তাহলে আর সেটা পরিবেশ বা মানুষের জন্য তেমন ক্ষতিকর হবে না,'' তিনি বলছেন।


ড. শামসুদ্দিন বলছেন, ''সীতাকুণ্ড তো উপকূলীয় এলাকা, সেখানে বাতাসের পর্যাপ্ত চলাচল আছে। ফলে কোন গ্যাস বের হলেও কিন্তু সেটা থাকতো না, বাতাসে ছড়িয়ে যায়। আর এখানে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড দ্রুতই হালকা হয়ে মিশে যায়। ফলে এ ধরনের কোন কিছু ঘটার সম্ভাবনা নেই। এটা যদি কোন নির্দিষ্ট স্থান থেকে নিয়মিতভাবে বের হতে থাকতো, তারপর সেখানে বৃষ্টি হলে একটা সম্ভাবনা থাকতো। কিন্তু এখানে তো সব শেষ হয়ে গেছে, আর বের হচ্ছে না। ''

আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ''কোন আগ্নেয়গিরি জীবন্ত হয়ে উঠলে বা ভূমি থেকে ক্রমাগত গ্যাস বের হতে থাকলে এবং সেখানে বৃষ্টি হলে অনেক সময় পানিতে অ্যাসিড পাওয়া যায়। কিন্তু বাংলাদেশে এমন কোন বিষয় কখনো আমরা দেখিনি। ''


''আমার মনে হয় না, সীতাকুণ্ডের ঘটনায় সেরকম কোন কিছু ঘটতে পারে। কারণ বৃষ্টি অনেক কিছুর ওপরে নির্ভর করে। মেঘগুলো তিন-চার কিলোমিটার উপরে থাকে। সেখানে যে বাতাস প্রবাহিত হয়, গ্যাস থাকলে তা এমনিতেই সরে যাবে। সুতরাং জমা হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই,'' বলছেন মি. রশিদ।


রাসায়নিকের বিস্ফোরণ স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ক্ষতিকর হতে পারে?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক থেকে থাকলে তার মাত্রা বা ধরণ অনুযায়ী সেখানকার পরিবেশ, পানি বা বাতাসে প্রভাব ফেলতে পারে। কিন্তু শুধুমাত্র হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড থাকলে এবং সেটির বেশিরভাগ পুড়ে গিয়ে থাকলে বেশি ঝুঁকি থাকবে না।


হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের স্ফুটনাঙ্ক পানির তুলনায় ৫০ ডিগ্রি বেশি। সে কারণে বেশি তাপমাত্রায় এটা বিপজ্জনক হতে পারে। এর উচ্চ ঘনত্ব বেশ বিপজ্জনক। এরকম রাসায়নিক যেন চোখ আর ত্বকের সংস্পর্শে না আসে সেজন্য সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।


এটি ত্বক, চোখের জন্য ক্ষতিকর। শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করলে মাথাব্যথা, নাক জ্বলা এবং বমিও হতে পারে। এছাড়া দীর্ঘসময় এই গ্যাসের ভেতরে থাকলে ফুসফুসে সমস্যা তৈরি করতে পারে।


অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোঃ শামছুদ্দিন বলছেন, ''হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড তো অতোটা অ্যাসিটিক না। বরং আমাদের জন্য বৃষ্টিপাত হয়ে যাওয়া ভালো, তাতে কোথাও কিছু টুকটাক থাকলে তা ধুয়ে যাবে। পরিবেশের জন্য সেটা বড় কোন ঝুঁকি তৈরি করবে না।''


তবে তিনি বলছেন, ''ওই ডিপোতে যদি হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডের বাইরে অন্য কোন ক্ষতিকর রাসায়নিক থেকে থাকে, সেটা সেখানকার মাটি বা পরিবেশে মিশলে কিছুটা ক্ষতির কারণ হতে পারে। সেখানকার হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড নিয়ে আর চিন্তার কিছু নাই, যা হওয়ার হয়ে গেছে। ''


বরং সেখানে যদি আরও কন্টেইনার থেকে থাকে, সেগুলো নিয়ে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন এই শিক্ষক।


তবে কোনভাবে পানি বা খাবারের সাথে মিশে পেটে গেলে যেকোনো রাসায়নিক ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে।


অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোঃ শামছুদ্দিন বলছেন, ''যেকোনো রাসায়নিক পেটে গেলেই তো ক্ষতি হয়। একটা নির্দিষ্ট মাত্রা পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য হতে পারে। তার ওপরে গেলে ক্ষতি হবে। কিন্তু মুখে না খেলে, পানিতে না খেলে তো আর ক্ষতি হবে না। তাই সেখানকার বাসিন্দাদের উচিত হবে আপাতত কিছুদিন সতর্ক থাকা। তবে কিছুদিন পর আস্তে আস্তে সেটা হালকা হয়ে যাবে।''

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

সিঙ্গাপুরে ওয়ার্ক পারমিটধারীদের জন্য নতুন নিয়ম: চাকরির মেয়াদ সীমা বাতিল, সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৬৩ বছর
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস
সিঙ্গাপুরে ট্রেইনিং রেকর্ড এবং সার্টিফিকেট চেক করার বিস্তারিত গাইড
some common interview questions and answers for a Safety Coordinator position in Singapore
Bangla date add in your website HTML tips.
Safe work procedure for ferrying workers by lorry in singapore
ধর্ষণবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল তিন বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষার্থীদের আল্টিমেটাম
Understanding the New Demerit Point System for Construction and Manufacturing Sectors
সিঙ্গাপুরে নতুন আইন: ১ জুলাই ২০২৫ থেকে ফুটপাথে বাইসাইকেল ও PMD চালানো নিষিদ্ধ, লঙ্ঘনে জরিমানা ও জেল
বসে থাকলেই কোমরে ব্যথা হওয়ার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে
Loading posts...