প্রবাসীদের জন্য প্রক্সি ভোটিং: মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে নমিনি নির্ধারণ
ঢাকা, ১০ অক্টোবর: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে প্রবাসী নাগরিকদের জন্য প্রক্সি ভোটিং চালুর সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়।
এ লক্ষ্যে একটি বিশেষ মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন চালু করা হবে, যার মাধ্যমে প্রবাসীরা নিবন্ধন করে নিজস্ব নমিনি (প্রতিনিধি) নির্ধারণ করতে পারবেন। পরবর্তীতে ওই নমিনি সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী কেন্দ্রে গিয়ে ভোট প্রদান করবেন।
অ্যাপভিত্তিক প্রক্সি ভোটিংয়ের প্রক্রিয়া
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহাদুল ইসলাম জানান, "প্রবাসী ভোটাররা অ্যাপে নিবন্ধন করে নিজেদের নমিনি নির্বাচন করবেন। নির্বাচনের দিন নমিনির জাতীয় পরিচয়পত্র ও ভোটার তথ্য যাচাই করেই ভোট দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে।"
তিনি আরও জানান, ভোটের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে বায়োমেট্রিক যাচাই ও রিয়েল-টাইম মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করা হবে। অ্যাপটির নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের সহায়তা নেওয়া হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
সোমবারের বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সঙ্গে বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুকের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তার প্রস্তাব দেওয়া হয়।
সিইসি জানান, "নির্বাচনী প্রস্তুতির বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। পর্যবেক্ষক প্রশিক্ষণ, ভোটার তালিকা হালনাগাদ এবং ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনী টাইমলাইন বাস্তবায়নের পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়েছে।"
প্রবাসী ভোটারদের অন্তর্ভুক্তি: চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা
বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী প্রবাসী নাগরিকদের ভোটাধিকার থাকলেও প্রযুক্তিগত ও লজিস্টিক জটিলতার কারণে এতদিন তা কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ডিজিটাল ভোটিং চালুর পরিকল্পনা থাকলেও সেটি বাস্তবায়িত হয়নি।
নতুন প্রক্সি ভোটিং পদ্ধতির স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা নিয়ে বিশেষজ্ঞ মহলে প্রশ্ন উঠেছে। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্তিশালী করার মাধ্যমে ভোটার প্রতারণা রোধ করা হবে।
পরবর্তী পরিকল্পনা
ইসি সূত্র জানায়, অক্টোবরের মধ্যে অ্যাপটির পরীক্ষামূলক সংস্করণ চালু এবং নভেম্বরের মধ্যে প্রবাসী ভোটার নিবন্ধন সম্পন্ন করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে এখনও প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। বিরোধী দলগুলো ডিজিটাল সিস্টেমের নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের সম্পৃক্ততার ওপর জোর দিচ্ছে।
উপসংহার
প্রবাসী প্রায় ১ কোটি বাংলাদেশির ভোটাধিকার নিশ্চিত করার এই উদ্যোগটি দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হতে পারে। তবে প্রযুক্তির সঠিক প্রয়োগ, স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ এবং রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা অর্জনই এই প্রক্সি ভোটিং পদ্ধতির সফলতা নির্ধারণ করবে।
0 মন্তব্যসমূহ