Recent post

বৃহস্পতিবার, ২১ জুলাই, ২০২২

রেলের ছাদে উঠা যাবে না









আজ বৃহস্পতিবার থেকে রেলের ছাদে যাত্রী না নেয়ার জন্য আদেশ দিয়েছে আদালত।

যেসব কর্মকর্তারা রেলে যাত্রী নেয়ার ব্যাপারে সাহায্য করবেন বা কাজে অবহেলা করবেন তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আদালত মৌখিক আদেশে জানিয়েছে।




বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক বলেন " আদালত বলেছেন, ট্টেনের ছাদে যাত্রী নেওয়া আজ থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হলো। ট্রেনের ছাদে যাত্রী নেওয়া বন্ধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে ও টিকিটের কালোবাজারি বন্ধে নেওয়া পদক্ষেপ আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে জানাতে বলা হয়েছে। ওইদিন পরবর্তী আদেশ দেবেন আদালত"।

এর আগে গতকাল বুধবার রেলওয়ের অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে আন্দোলনরত মহিউদ্দিন রনির অবস্থান কর্মসূচির বিষয়ে খোঁজ নিতে রাষ্ট্রপক্ষ এবং দুদককে বলেছিলেন হাইকোর্ট।

এরপর আজ বৃহস্পতিবার রেলওয়ে ও সহজ ডটকমের তিন কর্মকর্তা আদালতে আসেন।




ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক বলেন, হাইকোর্টকে সম্মান দেখিয়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ মহিউদ্দিন রনির স্মারকলিপিতে থাকা দাবিগুলো তদন্তে কমিটি গঠন করেছে।




কমিটিকে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

আদালত এসময় বলেন ,যারা ট্রেনের ছাদে যাত্রী বহন করে এবং দাড়িয়ে যায় তাদের ভাড়ার বেশির ভাগ সরকারি খাতে আসে না। দুর্নীতির মাধ্যমে এটা বিভিন্নজন ভাগাভাগি করে নেয়।




ঘটনার শুরু যেভাবে:

বাংলাদেশ রেলওয়ের অব্যবস্থাপনা নিয়ে ছয় দফা দাবিতে কমলাপুর রেলস্টেশনে ৭ই জুলাই থেকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন মহিউদ্দিন রনি নামে এক শিক্ষার্থী।
১৩ই জুন রেলের টিকেট কাটতে গেলে ভোগান্তিতে পড়েন তিনি।




তিনি বলেন "চারটা সিট বুকিং দিয়ে, পেমেন্ট অপশনে গিয়ে যখন আমার বিকাশ নম্বর দিই, ভেরিফিকেশন কোড আসার পর আমার টাকাটা কেটে নিয়ে যায়"।




"আমি অবাক হয়ে যাই, কী ব্যাপার আমার টাকা কেটে নিলো কোন পিন কোড ছাড়াই!"
"আমি বিকাশের কল সেন্টারে কল দিলাম এবং বললাম, যে ভাই আমি তো আমার সিট পেলাম না , টাকাটা কেন কেটে নিলেন, কোন ডকুমেন্টও তো নাই, কোন স্টেটমেন্টও তো আপনাদের কাছ থেকে পেলাম না। কি করবেন বলেন তো।"




তিনি বলেন "বিকাশ থেকে বলা হয় সহজ ডট কম তাদের সার্ভার থেকে এই টাকা কেটে নিয়েছে"।




তিনি বলেন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার সিট সার্ভারের ঝামেলার কারণে ব্লক হয়ে গেছে, দেয়া যাচ্ছে না বলে জানান।




এই ঘটনার প্রতিবাদে পারফর্মিং আর্টসের মাধ্যমে ভিন্ন রকম এক প্রতিবাদ শুরু করেন মি. রনি।
ঈদের সময়েও রেল স্টেশনে অবস্থান নেন তিনি।




ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক বলেন, আদালত স্বতপ্রনোদিত হয়ে গতকাল মি. রনির বিষয়টা জানাতে বলেন রাষ্ট্রপক্ষ এবং দুদকে। তারই প্রেক্ষিতে আজ এই আদেশ দেয়া হল।




মহিউদ্দিন রনির অভিযোগের প্রেক্ষিতে বুধবার সহজ ডট কমকে দুই লক্ষ টাকা জরিমানা করে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর।

শনিবার, ১৬ জুলাই, ২০২২

সৌদি নারীবাদীরা যেভাবে চালাচ্ছেন গোপন ইন্টারনেট রেডিও স্টেশন

সৌদি নারীবাদীরা যেভাবে চালাচ্ছেন গোপন ইন্টারনেট রেডিও স্টেশন

সৌদি আরবে নারী অধিকারের পক্ষে কথা বলার জন্য ভিন্ন এক দেশ থেকে শুরু হয়েছে এক ইন্টারনেট রেডিও।




নসাওয়া এফএম (ফেমিনিজম এফএম) নামের এই স্টেশনটিতে যখন পারিবারিক নির্যাতন নিয়ে কথা হচ্ছিল তখন ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজছিল বিষন্ন সুর।




অনুষ্ঠানের উপস্থাপিকা কথা বলছিলেন সারা নামের এক নারীকে নিয়ে। তাঁর গলা আবেগে কাঁপছিল। এক পুরুষ আত্মীয়ের হাতে খুন হয়েছিলেন সারা।




সারা ছিলেন ৩৩ বছর বয়সী এক বিশ্ববিদ্যালয় গ্রাজুয়েট। চাকরি করতেন। থাকতেন বাবা-মার সঙ্গে। বিয়ে করতে চেয়েছিলেন এক ভিনদেশিকে। তার পছন্দের পুরুষটি ছিল ইয়েমেনের নাগরিক।




"কিন্ত সারার এই স্বপ্ন কেড়ে নিল পাঁচটি বুলেট, তার ওপর গুলি চালিয়েছিল তারই ২২ বছর বয়সী ভাই। অথচ বাবা-মার সম্মতি নিয়েই সারার সঙ্গে এই ইয়েমেনি লোকটির বাগদান হয়েছিল," বলছিলেন উপস্থাপিকা আস্তার। এটি আসলে তার ছদ্মনাম, যুদ্ধ এবং প্রেমের মেসোপটমিয়ান দেবির এই নামটিকেই তিনি বেছে নিয়েছেন ছদ্মনাম হিসেবে।




আস্তার টেলিফোনে তার নারীবাদী ইন্টারনেট রেডিও স্টেশন নিয়ে কথা বলছিলেন বিবিসির আরবী বিভাগে সঙ্গে।




'সারাকে হত্যার এই ঘটনার খবর গণমাধ্যমে বেরিয়েছে। যারা তাকে চিনতেন, তারা এ নিয়ে কথাও বলেছেন," জানালের আস্তার।




হানান শাহারি নামে আরেক সৌদি নারীর কাহিনীও জানালেন তিনি। ২০১৩ সালে হানান আত্মহত্যা করেছিলেন, কারণ প্রেমিকের সঙ্গে তার বিয়েতে বাধা দিচ্ছিলেন তার ভাই এবং চাচা, তাকে মারধোরও করেছিলেন।




আস্তার বলছেন, সৌদি আরবে এরকম ঘটনা অনেক ঘটে, কিন্ত খুব কম ঘটনার কথাই জানা যায়।




নীরব সংখ্যাগরিষ্ঠ




তিন সপ্তাহ আগে নসাওয়া এফএম একটি টুইটার একাউন্ট খুলে ঘোষণা করে যে তারা একটি সাপ্তাহিক রেডিও অনুষ্ঠান প্রচার করবে। এটি হবে সৌদি আরবের নীরব সংখ্যাগরিষ্ঠদের কন্ঠস্বর।




এই রেডিও স্টেশনের জন্য স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করতে আগ্রহীদের যোগাযোগ করারও আহ্বান জানায় তারা।

গত দু সপ্তাহে রেডিও স্টেশনটি থেকে দুটি এক ঘন্টার অনুষ্ঠান প্রচারিত হয়েছে। একটি মাইক্রোফোন, একটি ল্যাপটপ, এডিটিং সফ্টওয়্যার এবং স্ট্রীমিং ওয়েবসাইট মিক্সএলআর হচ্ছে তাদের সম্বল।




রেডিও স্টেশনটির শব্দের মান মোটেই ভালো নয়, অনুষ্ঠানের মানও সেরকম কিছু নয়। পুরো ব্যাপারটাতে অপেশাদারিত্বের ছাপ স্পষ্ট।




তবে অনুষ্ঠানের উপস্থাপিকা আস্তার বলছেন, তারা শুরুতেই বিরাট সংখ্যাক শ্রোতা আকর্ষণ করতে পারবেন সেটা আশা করেন না। তবে নারী অধিকার নিয়ে তারা সচেতনতা সৃষ্টির যে চেষ্টা করছেন, তাতে ধীরে ধীরে শ্রোতার সংখ্যা বাড়বে বলে আশা করেন।




সৌদি কর্তৃপক্ষের রোষানলে পড়তে পারেন এমন আশংকায় আস্তার তার অবস্থান সম্পর্কে জানাতে রাজী হলেন না। যদিও তিনি সৌদি আরবের বাইরে থাকেন।




তাদের রেডিও স্টেশনের এই শুরুর দিনগুলোর সবকিছু তারা আর্কাইভ করে রাখছেন। যাতে ভবিষ্যতে মানুষ জানতে পারে, তাদের বাস্তব অস্তিত্ব আছে, তারা কোন অলীক মানুষ নন।




"সৌদি কর্তৃপক্ষ যে কোন সময় টুইটার নিষিদ্ধ করে দিতে পারে। তখন আমাদের সবকিছু কিন্তু হারিয়ে যাবে। সেজন্যেই আমরা রেডিও প্রোগ্রামকেই বেছে নিয়েছি। এখানে আমরা আমাদের সব চিন্তাভাবনা রেকর্ড করতে পারি, অন্য কোন প্লাটফর্ম থেকে আমরা এই অনুষ্ঠান প্রচার করতে পারি।"




জাতিসংঘের হিসেবে, গত মে মাসের মাঝামাঝি হতে অন্তত ১৭ জন মানবাধিকার কর্মী এবং নারী অধিকার কর্মীকে সৌদি সরকার আটক করেছে।এদের অনেকের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে। বিদেশি এজেন্টদের সঙ্গে 'সন্দেহজনক' যোগাযোগের অভিযোগও এর মধ্যে আছে। দোষী সাব্যস্ত হলে এই অভিযোগে তাদের বিশ বছর পর্যন্ত সাজা হতে পারে।




নসাওয়া রেডিও স্টেশনে এই মূহুর্তে দুজন উপস্থাপিকা এবং নয় জন কর্মী আছে। দুজন বাদে এদের আর সবাই সৌদি নাগরিক। এদের কেউ কেউ সৌদি আরবেই থাকেন।




যেহেতু তারা বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন টাইম জোনে থাকেন, তাই নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করা অনেক সময় বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। এছাড়াও অনেকের পড়াশোনা, চাকুরিও সামাল দিতে হয়।




আস্তার নিজেকে একজন 'অ্যাকটিভিস্ট' বলেই বর্ণনা করলেন। মিডিয়াকে ব্যবহার করে তিনি তার চিন্তাভাবনা ছড়িয়ে দিতে চান।

সমাজ, ধর্ম এবং রাজনীতি সম্পর্কে আস্তার যে চিন্তাভাবনা করেন, তা প্রচলিত চিন্তার সঙ্গে বেশ সংঘাতপূর্ণ। তার এসব ভাবনা তিনি লিখে পাঠিয়েছিলেন কয়েকটি লেবাননী পত্রিকায় প্রকাশের জন্য। কিন্তু কেউ তা ছাপতে রাজী হয়নি।




প্রাক ইসলামিক আরবের যে মাতৃতান্ত্রিক যুগে বিভিন্ন উপজাতির নেতৃত্বে ছিল নারী, সেই যুগের প্রতি তার অনুরাগের কথা জানালেন আস্তার।




"আমার বিশ্বাস মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। যদি আবার নারী ক্ষমতায় ফিরে আসে, বিশেষ করে বিচার বিভাগের মতো ক্ষমতাধর জায়গায়, এই বিশ্ব অনেক বদলে যাবে।"




ঈদ উল ফিতর বা অন্য কোন উৎসবে যখন পরিবারের সবাই মিলিত হন, তখন আস্তার তার এসব ভাবনা নিয়ে কথা বলেন। কিন্তু পরিবারের অন্য সদস্যরা তার এসব ভাবনাকে মোটেই পাত্তা দেন না। "তারা বলেন পশ্চিমা দুনিয়া তোমার মগজ ধোলাই করেছে।"




সৌদি আরবে মেয়েদের গাড়ি চালানোর ওপর থেকে বিধিনিষেধ তুলে নিয়েছেন বাদশাহ সালমান।




এখন আস্তার এবং তার বন্ধুরা আন্দোলন করছেন মেয়েদের ওপর পুরুষদের 'অভিভাবকগিরি ব্যবস্থা'র অবসান ঘটাতে।




সৌদি 'পুরুষ অভিভাবকগিরি' ব্যবস্থায় নারীর পক্ষে সব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেন পরিবারের পুরুষ সদস্যরাই। আস্তার এবং তার বন্ধুরা মনে করেন এটি একটি বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা। তারা এর অবসান চান।

বহু দেশে চরম খাদ্য সংকট তৈরি হবে

যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স এবং ভারত সহ বেশিরভাগ গম রপ্তানিকারক দেশগুলোতে ফলন এ বছর কমবে বলে আশংকা করা হচ্ছে।




একমাত্র রাশিয়ায় বাম্পার ফলন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে ঘাটতি পূরণে তা তেমন কাজে আসবে না।




গমের দাম আরো বাড়লে বিশ্বের বহু দেশে চরম খাদ্য সংকট তৈরি হবে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। বিবিসির স্টেফানি হেগার্টির রিপোর্ট

বৃহস্পতিবার, ১৪ জুলাই, ২০২২

মালয়েশিয়া নিবন্ধনের পর যেভাবে নিয়োগ হবে




বিএমইটি থেকে রবিবার প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, যেসকল কর্মীর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ইন্সটিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি অথবা অন্য কোন বৈধ কারিগরি প্রতিষ্ঠান থেকে কোন ধরনের দক্ষতার প্রশিক্ষণ রয়েছে তারা সেই প্রশিক্ষণের সনদ নিবন্ধনের সময় আপলোড করলে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন।


গত বছর ডিসেম্বরে যখন সমঝোতা স্মারক সই হয় তখন তাতেও কিছু যোগ্যতা নির্ধারণ করে দেয়া হয়।

এর মধ্যে রয়েছে নূন্যতম ইংরেজির জ্ঞান। মালয় ভাষার জ্ঞান বাড়তি যোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হবে।

কিন্তু মালয় ভাষার জ্ঞান জানা না থাকলে তাকে অযোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করা হবে না।

মূলত কৃষি, নির্মাণ, খনি, গৃহকর্ম, বাগান, পরিচ্ছন্নতা কর্মী এসব খাতে কর্মী নিতে চায় মালয়েশিয়া।

মোহাম্মদ শহিদুল আলম বলছেন, কোন খাতে কাজ করতে চান কর্মীকে নিবন্ধনে তা উল্লেখ করতে হবে।

নিবন্ধনে যে তথ্য থাকবে তা এজেন্সি ও মালয়েশিয়ার নিয়োগকর্তাও দেখতে পাবেন।

"বিভিন্ন খাতের নিয়োগকর্তা নিবন্ধিত কর্মীদের কেমন যোগ্যতা, বয়স এমনকি ছবিতে চেহারা দেখে সেই অনুযায়ী তাদের কেমন কর্মী দরকার, কত দরকার তা চেয়ে পাঠালে বিএমইটি যে ধরনের পদ চাওয়া হয়েছে, 
যোগ্য প্রার্থীদের মধ্যে থেকে তার চেয়ে হয়ত দ্বিগুণ নাম পাঠাবে হবে রিক্রুটিং এজেন্সির কাছে।


"তারা কর্মী বাছাই করে ওই কাজের জন্য যা যা করতে হয়, প্রশিক্ষণ, মেডিকেল পরীক্ষা করাবেন। 
যারা বাদ পড়বেন তাদের নাম আবার নিবন্ধিত তালিকায় ফেরত যাবে", বলছিলেন মি আলম।


একবার নিয়োগ চূড়ান্ত হয়ে গেলে ভিসার আবেদন পাঠাবে এজেন্সি।

মালয়েশিয়া থেকে নিয়োগদাতা বিমান টিকেট পাঠাবেন।
তবে বাংলাদেশ অংশের স্বাস্থ্য পরীক্ষার খরচ কর্মীকে বহন করতে হবে।


স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অনুমোদিত মেডিকেল সেন্টার যারা প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত হবেন, মালয়েশিয়া সরকার যদি সেগুলো নির্বাচন করে শুধুমাত্র তারাই মালয়েশিয়াগামী কর্মীদের মেডিকেল পরীক্ষা করতে পারবেন।

মালয়েশিয়া পৌঁছানোর পর বাংলাদেশি কর্মীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার খরচ, ইনস্যুরেন্স-সংক্রান্ত খরচ, মানসম্মত আবাসন, বিমা, চিকিৎসা ও কল্যাণ ইত্যাদি সেখানকার নিয়োগকর্তা বা কোম্পানি বহন করবে।

এক এক খাতের বেতন এক এক রকম।

মি. আলমের ভাষায়, "এই নিবন্ধন প্রক্রিয়া আসলে সিভি আপলোড করে রাখার মতো। 
যা বিএমইটি, এজেন্সি, মালয়েশিয়ায় নিয়োগদাতা কোম্পানি সবাই দেখতে পাবেন। 
কর্মী যখন একবার বুঝবেন যে কোন ধরনের দক্ষতা থাকলে অগ্রাধিকার পাওয়া যায় তখন সে নিজেই প্রশিক্ষণ নেবে। 
কয়দিন পরে ক্লিনারের কাজেও নানা মেশিন ব্যাবহারের দক্ষতা লাগবে। 
না হলে কেউ নিয়োগ পাবে না।"

বৃহস্পতিবার, ৭ জুলাই, ২০২২

কোরবানির দিন ও কোরবানির দিনের ফজিলত



কোরবানির দিন ও কোরবানির দিনের ফজিলত

(১) এ দিনের একটি নাম হল ইয়াওমুল হজ্জিল আকবর বা শ্রেষ্ঠ হজের দিন। যে দিনে হাজীগণ তাদের পশু জবেহ করে হজকে পূর্ণ করেন। হাদিসে এসেছে : ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ স. কোরবানির দিন জিজ্ঞেস করলেন এটা কোন দিন? সাহাবাগণ উত্তর দিলেন এটা ইয়াওমুন্নাহার বা কোরবানির দিন। রাসূলে কারীম (সা:) বললেন: “এটা হল ইয়াওমুল হজ্জিল আকবর বা শ্রেষ্ঠ হজের দিন।“ [১]

(২) কোরবানির দিনটি হল বছরের শ্রেষ্ঠ দিন। আব্দুল্লাহ ইবনে কুর্ত রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলে কারীম (সা:) বলেছেন: “আল্লাহর নিকট দিবস সমূহের মাঝে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ দিন হল কোরবানির দিন, তারপর পরবর্তী তিনদিন।” [২]

কোরবানির দিনের করণীয়

. ঈদের সালাত আদায় করা,

. এর জন্য সুগন্ধি ব্যবহার,

. পরিচ্ছন্নতা অর্জন,

. সুন্দর পোশাক পরিধান করা।

. তাকবীর পাঠ করা।

. কোরবানির পশু জবেহ করা ও তার গোশত আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধব ও দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করা।

.এ সকল কাজের মাধ্যমে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য অর্জন ও সন্তুষ্টি অন্বেষণের চেষ্টা করা।
 দিনটাকে শুধু খেলা-ধুলা, বিনোদন ও পাপাচারের দিনে পরিণত করা কোন ভাবেই ঠিক নয়।



(৩) কোরবানির দিনটি হল ঈদুল ফিতরের দিনের চেয়েও মর্যাদাসম্পন্ন। কেননা এ দিনটি বছরের শ্রেষ্ঠ দিন। এ দিনে সালাত ও কোরবানি একত্র হয়। যা ঈদুল ফিতরের সালাত ও সদকাতুল ফিতরের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। আল্লাহ তাআলা তার রাসূলকে কাওসার দান করেছেন। এর শুকরিয়া আদায়ে তিনি তাকে এ দিনে কোরবানি ও সালাত আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। [৩]



১. কোরবানি


পশু উৎসর্গ করা হবে এক আল্লাহর এবাদতের উদ্দেশ্যে যার কোন শরিক নেই। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন শুধু তার এবাদত করার জন্য। যেমন তিনি বলেন: “আমি জিন ও মানুষকে এ জন্য সৃষ্টি করেছি যে তারা শুধু আমার এবাদত করবে।” [৪] আল্লাহ তাআলা তার এবাদতের জন্য মানব জাতিকে সৃষ্টি করলেন।


এবাদত বলে,—যে সকল কথা ও কাজ আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ভালোবাসেন ও পছন্দ করেন; হোক সে কাজ প্রকাশ্যে বা গোপনে।[৫] আর এ এবাদতের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল তার উদ্দেশ্যে পশু জবেহ করা। এ কাজটি তিনি শুধু তার উদ্দেশ্যে করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। বলেছেন: “বল, আমার সালাত, আমার কোরবানি, আমার জীবন ও আমার মরণ জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই উদ্দেশ্যে। তার কোন শরিক নাই এবং আমি এর জন্য আদিষ্ট হয়েছি এবং আমিই প্রথম মুসলিম।” [৬]



ইবনে কাসীর রহ. বলেন : এ আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নির্দেশ দিয়েছেন যে সকল মুশরিক আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে পশু জবেহ করে তাদের যেন জানিয়ে দেয়া হয় আমরা তাদের বিরোধী। সালাত, কোরবানি শুধু তার নামেই হবে যার কোন শরিক নাই। এ কথাই আল্লাহ তাআলা সূরা কাওসারে বলেছেন: “তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় কর ও পশু কোরবানি কর।“ [৭]
অর্থাৎ তোমার সালাত ও কোরবানি তারই জন্য আদায় কর। কেননা মুশরিকরা প্রতিমার উদ্দেশে প্রার্থনা করে ও পশু জবেহ করে। আর সকল কাজে এখলাস অবলম্বন করতে হবে। এখলাসের আদর্শে অবিচল থাকতে হবে।




২. যে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে পশু উৎসর্গ বা জবেহ করবে তার ব্যাপারে কঠোর শাস্তির কথা

আবু তোফায়েল থেকে বর্ণিত তিনি বলেন : আমি আলী ইবনে আবি তালেবের কাছে উপস্থিত ছিলাম। এক ব্যক্তি তার কাছে এসে বলল :‘নবী কারীম স. গোপনে আপনাকে কি বলেছিলেন ?’ বর্ণনাকারী বলেন : আলী রা. এ কথা শুনে রেগে গেলেন এবং বললেন : ‘নবী কারীম স. মানুষের কাছে গোপন রেখে আমার কাছে একান্তে কিছু বলেননি। তবে তিনি আমাকে চারটি কথা বলেছেন। বর্ণনাকারী বলেন,এরপর লোকটি বলল : ‘হে আমিরুল মোমিনীন ! সে চারটি কথা কি ? তিনি বললেন :
  • যে ব্যক্তি তার পিতামাতাকে অভিশাপ দেয় আল্লাহ তাকে অভিশাপ দেন।

  • যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে পশু জবেহ করে আল্লাহ তার উপর লা’নত করেন।

  • ঐ ব্যক্তির উপর আল্লাহ লা’নত করেন যে ব্যক্তি কোন বেদআতীকে প্রশ্রয় দেয়।

  • যে ব্যক্তি জমির সীমানা পরিবর্তন করে আল্লাহ তাকে লা’নত করেন। [৮]



৩. এ কাজগুলো এমন, যে ব্যক্তি তা করল সে ইসলামের গণ্ডি থেকে বের হয়ে কুফরির সীমানায় প্রবেশ করল।

এ হাদিসের ব্যাখ্যায় ইমাম নবভী রহ. বলেন : আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে পশু জবেহ করার অর্থ এমন, যেমন কোন ব্যক্তি প্রতিমার নামে জবেহ করল অথবা কোন নবীর নামে জবেহ করল বা কাবার নামে জবেহ করল। এ ধরনের যত জবেহ হবে সব না-জায়েজ ও তা খাওয়া হারাম। জবেহকারী মুসলিম হোক বা অমুসলিম। যা আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে জবেহ করা হয় তা হারাম ঘোষণা করা হয়েছে: “তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত জন্তু, রক্ত, শুকর মাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে জবেহকৃত পশু আর শ্বাস রোধে মৃত জন্তু,শৃংগাঘাতে মৃত জন্তু এবং হিংস্র পশুতে খাওয়া জন্তু ; তবে যা তোমরা জবেহ করতে পেরেছ তা ব্যতীত, আর যা মূর্তি পূজার বেদীর উপর বলি দেয়া হয় তা এবং জুয়ার তীর দ্বারা ভাগ্য নির্ণয় করা, এ সব হল পাপ-কার্য…।” [৯] ইবনে কাসীর রহ. বলেছেন যা কিছু আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে জবেহ করা হয় তা যে হারাম এ ব্যাপারে মুসলিমদের ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত।




৪. যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে পশু জবেহ করে সে জাহান্নামে যাবে।

সালমান রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন : এক ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে একটি মাছির কারণে। অন্য এক ব্যক্তি জাহান্নামে প্রবেশ করবে একটি মাছির কারণে। এ কথা শুনার পর লোকেরা জিজ্ঞেস করল এটা কীভাবে হবে ? তিন বললেন : দু ব্যক্তি এক সম্প্রদায়ের কাছ দিয়ে যাচ্ছিল। সে সম্প্রদায়ের নিয়ম হল যে ব্যক্তি তাদের কাছ দিয়ে যাবে তাকে তাদের প্রতিমার উদ্দেশ্যে কিছু উৎসর্গ করতে হবে। সে সম্প্রদায়ের লোকেরা এ দুজনের একজনকে বলল : আমাদের এ প্রতিমার জন্য কিছু উৎসর্গ কর ! লোকটি উত্তর দিল আমার কাছে তো এমন কিছু নেই যা আমি এ প্রতিমার জন্য উৎসর্গ করতে পারি। তারা বলল একটি মাছি হলেও উৎসর্গ কর। সে একটি মাছি উৎসর্গ করল। তারা তাকে ছেড়ে দিল। ফলে সে জাহান্নামে যাবে।তারপর তারা দ্বিতীয় ব্যক্তিকে অনুরূপ কথা বলল। সে উত্তরে বলল আমি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য কিছু উৎসর্গ করি না। তারা তাকে হত্যা করল। ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ করল। [১০]

বর্ণিত এ হাদিস থেকে আমারা কয়েকটি শিক্ষা লাভ করতে পারি

. শিরক কত বড় মারাত্মক অপরাধ তা অনুধাবন করা যায়। যদি তা খুব সামান্য বিষয়েও হয়। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেছেন: “যে আল্লাহর সাথে শরিক করবে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত অবশ্যই নিষিদ্ধ করবেন এবং তার আবাস জাহান্নাম। জালেমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই।” [১১]

. যে লোকটি জাহান্নামে গেল সে কিন্তু উক্ত কাজ করতে ইচ্ছুক ছিল না। কিন্তু সে মুশরিকদের ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য কাজটি করেছিল।

. যে লোকটি জাহান্নামে গেল সে মুসলিম ছিল, কিন্তু সামান্য বিষয়ে শিরক করার কারণে জাহান্নামে গেল।

. তাওহীদ ও এখলাসের ফজিলত কত বেশি তা অনুধাবন করা যায়।

. যে লোকটি জান্নাতে প্রবেশ করল সে তাওহীদের জন্য নির্যাতন সহ্য করল, নিহত হল তবু শিরকের সাথে আপোশ করল না।




৫. কোরবানির অর্থ ও তার প্রচলন

কোরবানি বলা হয় আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য অর্জন ও তার এবাদতের জন্য পশু জবেহ করা। আর আল্লাহর উদ্দেশ্যে পশু জবেহ করা তিন প্রকার হতে পারে: ১. হাদী ২. কোরবানি ৩. আকীকাহ
তাই কোরবানি বলা হয় ঈদুল আজহার দিনগুলোতে নির্দিষ্ট প্রকারের গৃহপালিত পশু আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য জবেহ করা।

ইসলামি শরিয়তে এটি এবাদত হিসেবে সিদ্ধ, যা কোরআন, হাদিস ও মুসলিম উম্মাহর ঐক্যমত দ্বারা প্রমাণিত। কোরআন মজীদে যেমন এসেছে: “তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় কর ও পশু কোরবানি কর।“ [১২]
“বল, আমার সালাত, আমার কোরবানি, আমার জীবন ও আমার মরণ জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই উদ্দেশ্যে। তার কোন শরিক নাই এবং আমি এর জন্য আদিষ্ট হয়েছি এবং আমিই প্রথম মুসলিম।” [১৩]

হাদিসে এসেছে: বারা ইবনে আযিব (রা.) থেকে বর্ণিত যে রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন: “যে ঈদের সালাতের পর কোরবানির পশু জবেহ করল তার কোরবানি পরিপূর্ণ হল ও সে মুসলিমদের আদর্শ সঠিকভাবে পালন করল।” [১৪]

আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: “আল্লাহর রাসূল স. নিজ হাতে দুটি সাদা কালো বর্ণের দুম্বা কোরবানি করেছেন। তিনি বিসমিল্লাহ ও আল্লাহু আকবর বলেছেন। তিনি পা দিয়ে দুটো কাঁধের পাশ চেপে রাখেন।” [১৫] তবে বোখারিতে ‘সাদা-কালো’ শব্দের পূর্বে‘শিংওয়ালা’ কথাটি উল্লেখ আছে




৬. কোরবানির বিধান

কোরবানির হুকুম কি ? ওয়াজিব না সুন্নত ? এ বিষয়ে ইমাম ও ফকীহদের মাঝে দুটো মত রয়েছে।

প্রথম মত: কোরবানি ওয়াজিব। ইমাম আওযায়ী, ইমাম লাইস, ইমাম আবু হানীফা রহ. প্রমুখের মত এটাই। আর ইমাম মালেক ও ইমাম আহমদ রহ. থেকে একটি মত বর্ণিত আছে যে তারাও ওয়াজিব বলেছেন।

দ্বিতীয় মত: কোরবানি সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। এটা অধিকাংশ উলামাদের মত। এবং ইমাম মালেক ও শাফেয়ী রহ.-এর প্রসিদ্ধ মত। কিন্তু এ মতের প্রবক্তারা আবার বলেছেন: ‘সামর্থ্য থাকা অবস্থায় কোরবানি পরিত্যাগ করা মাকরূহ। যদি কোন জনপদের লোকেরা সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও সম্মিলিতভাবে কোরবানি পরিত্যাগ করে তবে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হবে। কেননা, কোরবানি হল ইসলামের একটি শিয়ার বা মহান নিদর্শন।’ [১৬]


যারা কোরবানি ওয়াজিব বলেন তাদের দলিল :


(এক) আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিয়েছেন: “তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় কর ও পশু কোরবানি কর।“[১৭] আর আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নির্দেশ পালন ওয়াজিব হয়ে থাকে।

(দুই) রাসূলে কারীম (সা:) বলেছেন: “যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোরবানি করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহের ধারে না আসে।” [১৮] যারা কোরবানি পরিত্যাগ করে তাদের প্রতি এ হাদিস একটি সতর্ক-বাণী। তাই কোরবানি ওয়াজিব।

(তিন) রাসূলে কারীম (সা:) বলেছেন: “হে মানব সকল ! প্রত্যেক পরিবারের দায়িত্ব হল প্রতি বছর কোরবানি দেয়া।” [১৯]

যারা কোরবানি সুন্নত বলেন তাদের দলিল :

(এক) রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন: “তোমাদের মাঝে যে কোরবানি করতে চায়, যিলহজ মাসের চাঁদ দেখার পর সে যেন কোরবানি সম্পন্ন করার আগে তার কোন চুল ও নখ না কাটে।” [২০] এ হাদিসে রাসূল (সা:)-এর ‘যে কোরবানি করতে চায়’ কথা দ্বারা বুঝে আসে এটা ওয়াজিব নয়।

(দুই) রাসূল স. তার উম্মতের মাঝে যারা কোরবানি করেনি তাদের পক্ষ থেকে কোরবানি করেছেন। তার এ কাজ দ্বারা বুঝে নেয়া যায় যে কোরবানি ওয়াজিব নয়।

শাইখ ইবনে উসাইমীন (রহ.) উভয় পক্ষের দলিল-প্রমাণ উল্লেখ করার পর বলেন: এ সকল দলিল-প্রমাণ পরস্পর বিরোধী নয় বরং একটা অন্যটার সম্পূরক। সারকথা হল যারা কোরবানিকে ওয়াজিব বলেছেন তাদের প্রমাণাদি অধিকতর শক্তিশালী। আর ইমাম ইবনে তাইমিয়ার মত এটাই।




৭. কোরবানির ফজিলত

(ক) কোরবানি দাতা নবী ইবরাহিম আ. ও মুহাম্মদ সা.-এর আদর্শ বাস্তবায়ন করে থাকেন।

(খ) পশুর রক্ত প্রবাহিত করার মাধ্যমে কোরবানি দাতা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য অর্জন করেন। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন: “আল্লাহর নিকট পৌঁছায় না তাদের গোশত এবং রক্ত, বরং পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া। এভাবে তিনি এগুলোকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন যাতে তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর এজন্য যে, তিনি তোমাদের পথ-প্রদর্শন করেছেন ; সুতরাং আপনি সুসংবাদ দিন সৎকর্মপরায়ণদেরকে।” [২১]

(গ) পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী ও অভাবীদের আনন্দ দান। আর এটা অন্য এক ধরনের আনন্দ যা কোরবানির গোশতের পরিমাণ টাকা যদি আপনি তাদের সদকা দিতেন তাতে অর্জিত হত না। কোরবানি না করে তার পরিমাণ টাকা সদকা করে দিলে কোরবানি আদায় হবে না।


৮. কোরবানির শর্তাবলি

(১)এমন পশু দ্বারা কোরবানি দিতে হবে যা শরিয়ত নির্ধারণ করে দিয়েছে। সেগুলো হল উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া,দুম্বা। এ গুলোকে কোরআনের ভাষায় বলা হয় ‘বাহীমাতুল আনআম।’ যেমন এরশাদ হয়েছে: “আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য কোরবানির নিয়ম করে দিয়েছি ; তিনি তাদেরকে জীবনোপকরণ স্বরূপ যে সকল চতুষ্পদ জন্তু দিয়েছেন,সেগুলোর উপর যেন তারা আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে।“ [২২]
হাদিসে এসেছে: “তোমরা অবশ্যই নির্দিষ্ট বয়সের পশু কোরবানি করবে। তবে তা তোমাদের জন্য দুষ্কর হলে ছয় মাসের মেষ-শাবক কোরবানি করতে পার।“ [২৩] আর আল্লাহর রাসূল সা. উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা ছাড়া অন্য কোন জন্তু কোরবানি করেননি ও কোরবানি করতে বলেননি। তাই কোরবানি শুধু এগুলো দিয়েই করতে হবে।

ইমাম মালিক (রহ.)-এর মতে কোরবানির জন্য সর্বোত্তম জন্তু হল শিংওয়ালা সাদা-কালো দুম্বা। কারণ রাসূলে কারীম (সা:) এ ধরনের দুম্বা কোরবানি করেছেন বলে বোখারি ও মুসলিমের হাদিসে এসেছে। উট ও গরু-মহিষে সাত ভাগে কোরবানি দেয়া যায়। যেমন হাদিসে এসেছে: “আমরা হুদাইবিয়াতে রাসূলুল্লাহ স.-এর সাথে ছিলাম। তখন আমরা উট ও গরু দ্বারা সাত জনের পক্ষ থেকে কোরবানি দিয়েছি।” [২৪] গুণগত দিক দিয়ে উত্তম হল কোরবানির পশু হৃষ্টপুষ্ট, অধিক গোশত সম্পন্ন, নিখুঁত, দেখতে সুন্দর হওয়া।


(২) শরিয়তের দৃষ্টিতে কোরবানির পশুর বয়সের দিকটা খেয়াল রাখা জরুরি। উট পাঁচ বছরের হতে হবে। গরু বা মহিষ দু বছরের হতে হবে। ছাগল, ভেড়া, দুম্বা হতে হবে এক বছর বয়সের।



(৩) কোরবানির পশু যাবতীয় দোষ-ত্র“টি মুক্ত হতে হবে। যেমন হাদিসে এসেছে: সাহাবি আল-বারা ইবনে আযেব (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: “রাসূলুল্লাহ (সা:) আমাদের মাঝে দাঁড়ালেন তারপর বললেন : চার ধরনের পশু, যা দিয়ে কোরবানি জায়েজ হবে না। অন্য বর্ণনায় বলা হয়েছে পরিপূর্ণ হবে না—অন্ধ ; যার অন্ধত্ব স্পষ্ট,রোগাক্রান্ত ; যার রোগ স্পষ্ট, পঙ্গু ; যার পঙ্গুত্ব স্পষ্ট এবং আহত ; যার কোন অংগ ভেংগে গেছে। নাসায়ির বর্ণনায়‘আহত’ শব্দের স্থলে ‘পাগল’ উল্লেখ আছে।“ [২৫] আবার পশুর এমন কতগুলো ত্রুটি আছে যা থাকলে কোরবানি আদায় হয় কিন্তু মাকরূহ হবে। এ সকল দোষত্র“টিযুক্ত পশু কোরবানি না করা ভাল। সে ত্র“টিগুলো হল শিং ভাংগা, কান কাটা, লেজ কাটা, ওলান কাটা,লিংগ কাটা ইত্যাদি।




(৪) যে পশুটি কোরবানি করা হবে তার উপর কোরবানি দাতার পূর্ণ মালিকানা সত্ত্ব থাকতে হবে। বন্ধকি পশু, কর্জ করা পশু বা পথে পাওয়া পশু দ্বারা কোরবানি আদায় হবে না।




৯. কোরবানির নিয়মাবলি | কোরবানির পশু কোরবানির জন্য নির্দিষ্ট করা

কোরবানির জন্য পশু পূর্বেই নির্ধারণ করতে হবে। এর জন্য নিম্নোক্ত দুটো পদ্ধতির একটি নেয়া যেতে পারে।


(ক) মুখের উচ্চারণ দ্বারা নির্দিষ্ট করা যেতে পারে। এভাবে বলা যায় যে ‘এ পশুটি আমার কোরবানির জন্য নির্দিষ্ট করা হল।’ তবে ভবিষ্যৎ বাচক শব্দ দ্বারা নির্দিষ্ট হবে না। যেমন বলা হল—‘আমি এ পশুটি কোরবানির জন্য রেখে দেব।’

(খ) কাজের মাধ্যমে নির্দিষ্ট করা যায় যেমন কোরবানির নিয়তে পশু ক্রয় করল অথবা কোরবানির নিয়তে জবেহ করল। যখন পশু কোরবানির জন্য নির্দিষ্ট করা হল তখন নিম্নোক্ত বিষয়াবলী কার্যকর হয়ে যাবে।


প্রথমত: এ পশু কোরবানি ছাড়া অন্য কোন কাজে ব্যবহার করা যাবে না, দান করা যাবে না, বিক্রি করা যাবে না। তবে কোরবানি ভালভাবে আদায় করার জন্য তার চেয়ে উত্তম পশু দ্বারা পরিবর্তন করা যাবে।

দ্বিতীয়ত: যদি পশুর মালিক ইন্তেকাল করেন তাহলে তার ওয়ারিশদের দায়িত্ব হল এ কোরবানি বাস্তবায়ন করা।

তৃতীয়ত: এ পশুর থেকে কোন ধরনের উপকার ভোগ করা যাবে না। যেমন দুধ বিক্রি করতে পারবে না, কৃষিকাজে ব্যবহার করতে পারবে না, সওয়ারি হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না, পশম বিক্রি করা যাবে না। যদি পশম আলাদা করে তাবে তা সদকা করে দিতে হবে,বা নিজের কোন কাজে ব্যবহার করতে পারবে, বিক্রি করে নয়।

চতুর্থত: কোরবানি দাতার অবহেলা বা অযতেœর কারণে যদি পশুটি দোষযুক্ত হয়ে পড়ে বা চুরি হয়ে যায় অথবা হারিয়ে যায় তাহলে তার কর্তব্য হবে অনুরূপ বা তার চেয়ে ভাল একটি পশু ক্রয় করা।

আর যদি অবহেলা বা অযতেœর কারণে দোষযুক্ত না হয়ে অন্য কারণে হয়, তাহলে দোষযুক্ত পশু কোরবানি করলে চলবে। যদি পশুটি হারিয়ে যায় অথবা চুরি হয়ে যায় আর কোরবানি দাতার উপর পূর্ব থেকেই কোরবানি ওয়াজিব হয়ে থাকে তাহলে সে কোরবানির দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি লাভ করবে। আর যদি পূর্ব থেকে ওয়াজিব ছিল না কিন্তু সে কোরবানির নিয়তে পশু কিনে ফেলেছে তাহলে চুরি হয়ে গেলে বা মরে গেলে অথবা হারিয়ে গেলে তাকে আবার পশু কিনে কোরবানি করতে হবে।




১০. কোরবানির ওয়াক্ত বা সময়


কোরবানি নির্দিষ্ট সময়ের সাথে সম্পর্কিত একটি এবাদত। এ সময়ের পূর্বে যেমন কোরবানি আদায় হবে না তেমনি পরে করলেও আদায় হবে না। অবশ্য কাজা হিসেবে আদায় করলে অন্য কথা। যারা ঈদের সালাত আদায় করবেন তাদের জন্য কোরবানির সময় শুরু হবে ঈদের সালাত আদায় করার পর থেকে। যদি ঈদের সালাত আদায়ের পূর্বে কোরবানির পশু জবেহ করা হয় তাহলে কোরবানি আদায় হবে না। যেমন হাদিসে এসেছে আল-বারা ইবনে আযেব রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: “আমি শুনেছি রাসূলুল্লাহ স. খুতবাতে বলেছেন : এ দিনটি আমরা শুরু করব সালাত দিয়ে। অত:পর সালাত থেকে ফিরে আমরা কোরবানি করব। যে এমন আমল করবে সে আমাদের আদর্শ সঠিকভাবে অনুসরণ করল। আর যে এর পূর্বে জবেহ করল সে তার পরিবারবর্গের জন্য গোশতের ব্যবস্থা করল। কোরবানির কিছু আদায় হল না।” [২৬]

সালাত শেষ হওয়ার সাথে সাথে কোরবানি পশু জবেহ না করে সালাতের খুতবা দুটি শেষ হওয়ার পর জবেহ করা ভাল। কেননা রাসূলুল্লাহ স. এ রকম করেছেন। হাদিসে এসেছে: “সাহাবি জুনদাব ইবনে সুফিয়ান আল-বাজালী রা. বলেছেন : নবী কারীম স. কোরবানির দিন সালাত আদায় করলেন অত:পর খুতবা দিলেন তারপর পশু জবেহ করলেন।” [২৭]

জুনদাব ইবনে সুফিয়ান বলেন: “আমি কোরবানির দিন নবী কারীম সা.-এর সাথে ছিলাম। তিনি বললেন, যে ব্যক্তি নামাজের পূর্বে জবেহ করেছে সে যেন আবার অন্য স্থানে জবেহ করে। আর যে জবেহ করেনি সে যেন জবেহ করে।“[২৮]

আর কোরবানির সময় শেষ হবে যিলহজ মাসের তেরো তারিখের সূর্যাস্তের সাথে সাথে। অতএব কোরবানির পশু জবেহ করার সময় হল চার দিন। যিলহজ মাসের দশ, এগারো, বার ও তেরো তারিখ। এটাই উলামায়ে কেরামের নিকট সর্বোত্তম মত হিসেবে প্রাধান্য পেয়েছে।কারণ : এক. আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন: “যাতে তারা তাদের কল্যাণময় স্থানগুলোতে উপস্থিত হতে পারে এবং তিনি তাদের চতুষ্পদ জন্তু হতে যা রিজিক হিসেবে দান করেছেন তার উপর নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করতে পারে।” [২৯]

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম বোখারি রহ. বলেন: “ইবনে আব্বাস রা. বলেছেন: ‘এ আয়াতে নির্দিষ্ট দিনগুলো বলতে বুঝায় কোরবানির দিন ও তার পরবর্তী তিন দিন।” [৩০]

অতএব এ দিনগুলো আল্লাহ তাআলা কোরবানির পশু জবেহ করার জন্য নির্ধারণ করেছেন। দুই. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন: “আইয়ামে তাশরীকের প্রতিদিন জবেহ করা যায়।” [৩১]

আইয়ামে তাশরীক বলতে কোরবানির পরবর্তী তিন দিনকে বুঝায়। কোরবানির পরবর্তী তিন দিনে সওম পালন জায়েজ নয়। এ দ্বারা বুঝে নেয়া যায় যে এ তিন দিনে কোরবানি করা যাবে। রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন : ‘আইয়ামে তাশরীক হল খাওয়া, পান করা ও আল্লাহর জিকির করার দিন।’ এ দ্বারা বুঝে নিতে পারি যে, যে দিনগুলো আল্লাহ খাওয়ার জন্য নির্ধারণ করেছেন সে দিনগুলোতে কোরবানির পশু জবেহ করা যেতে পারে। সাহাবায়ে কেরামের আমল দ্বারা প্রমাণিত হয়, কোরবানির পরবর্তী তিনদিন কোরবানির পশু জবেহ করা যায়।

ইবনুল কায়্যিম (রহ.) বলেন: “আলী ইবনে আবি তালেব রা. বলেছেন : ‘কোরবানির দিন হল ঈদুল আজহার দিন ও তার পরবর্তী তিন দিন।’ অধিকাংশ ইমাম ও আলেমদের এটাই মত। যারা বলেন, কোরবানির দিন হল মোট তিন দিন; যিলহজ মাসের দশ, এগারো ও বার তারিখ। এবং বার তারিখের পর জবেহ করলে কোরবানি হবে না, তাদের কথার সমর্থনে কোন প্রমাণ নেই ও মুসলিমদের ঐক্যমত (ইজমা) প্রতিষ্ঠিত হয়নি।” [৩২]


১১. মৃত ব্যক্তির পক্ষে কোরবানি


মূলত কোরবানির প্রচলন জীবিত ব্যক্তিদের জন্য। যেমন আমরা দেখি রাসূলুল্লাহ স. ও তার সাহাবাগণ নিজেদের পক্ষে কোরবানি করেছেন। অনেকের ধারণা কোরবানি শুধু মৃত ব্যক্তিদের জন্য করা হবে। এ ধারণা মোটেই ঠিক নয়। তবে মৃত ব্যক্তিদের জন্য কোরবানি করা জায়েজ ও একটি সওয়াবের কাজ। কোরবানি একটি সদকা। আর মৃত ব্যক্তির নামে যেমন সদকা করা যায় তেমনি তার নামে কোরবানিও দেয়া যায়। যেমন মৃত ব্যক্তির জন্য সদকার বিষয়ে হাদিসে এসেছেঃ


আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত: “এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সা.-এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করল—হে রাসূল ! আমার মা হঠাৎ ইন্তেকাল করেছেন।কোন অসিয়ত করে যেতে পারেননি। আমার মনে হয় তিনি কোন কথা বলতে পারলে অসিয়ত করে যেতেন। আমি যদি এখন তার পক্ষ থেকে সদকা করি তাতে কি তার সওয়াব হবে ? তিনি উত্তর দিলেন : হ্যাঁ।” [৩৩]


মৃত ব্যক্তির জন্য এ ধরনের সদকা ও কল্যাণমূলক কাজের যেমন যথেষ্ট প্রয়োজন ও তেমনি তাঁর জন্য উপকারী। এমনিভাবে একাধিক মৃত ব্যক্তির জন্য সওয়াব প্রেরণের উদ্দেশ্যে একটি কোরবানি করা জায়েজ আছে। অবশ্য যদি কোন কারণে মৃত ব্যক্তির জন্য কোরবানি ওয়াজিব হয়ে থাকে তাহলে তার জন্য পূর্ণ একটি কোরবানি করতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় ব্যক্তি নিজেকে বাদ দিয়ে মৃত ব্যক্তির জন্য কোরবানি করেন। এটা মোটেই ঠিক নয়। ভাল কাজ নিজেকে দিয়ে শুরু করতে হয় তারপর অন্যান্য জীবিত ও মৃত ব্যক্তির জন্য করা যেতে পারে। যেমন হাদিসে এসেছেঃ আয়েশা রা. ও আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত যে: “রাসূলুল্লাহ (সা:) যখন কোরবানি দিতে ইচ্ছা করলেন তখন দুটো দুম্বা ক্রয় করলেন। যা ছিল বড়, হৃষ্টপুষ্ট, শিংওয়ালা, সাদা-কালো বর্ণের এবং খাসি। একটি তিনি তার ঐ সকল উম্মতের জন্য কোরবানি করলেন ; যারা আল্লাহর একত্ববাদ ও তার রাসূলের রিসালাতের সাক্ষ্য দিয়েছে, অন্যটি তার নিজের ও পরিবার বর্গের জন্য কোরবানি করেছেন।” [৩৪]

মৃত ব্যক্তি যদি তার সম্পদ থেকে কোরবানি করার অসিয়ত করে যান তবে তার জন্য কোরবানি করা ওয়াজিব হয়ে যাবে।




১২. অংশীদারির ভিত্তিতে কোরবানি করা

যাকে ‘ভাগে কোরবানি দেয়া’ বলা হয়। ভেড়া, দুম্বা, ছাগল দ্বারা এক ব্যক্তি একটা কোরবানি করতে পারবেন। আর উট, গরু, মহিষ দ্বারা সাত জনের নামে সাতটি কোরবানি করা যাবে। ইতিপূর্বে জাবের রা. কর্তৃক বর্ণিত হাদিস দ্বারা এটা প্রমাণিত হয়েছে।


অংশীদারি ভিত্তিতে কোরবানি করার দুটি পদ্ধতি হতে পারে:


(এক) সওয়াবের ক্ষেত্রে অংশীদার হওয়া। যেমন কয়েক জন মুসলিম মিলে একটি বকরি ক্রয় করল। অত:পর একজনকে ঐ বকরির মালিক বানিয়ে দিল। বকরির মালিক বকরিটি কোরবানি করল। যে কজন মিলে বকরি খরিদ করেছিল সকলে সওয়াবের অংশীদার হল।

(দুই) মালিকানার অংশীদারির ভিত্তিতে কোরবানি। দু জন বা ততোধিক ব্যক্তি একটি বকরি কিনে সকলেই মালিকানার অংশীদার হিসেবে কোরবানি করল। এ অবস্থায় কোরবানি শুদ্ধ হবে না। অবশ্য উট, গরু ও মহিষের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি জায়েজ আছে।




মনে রাখতে হবে কোরবানি হল একটি এবাদত ও আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য লাভের উপায়। তাই তা আদায় করতে হবে সময়,সংখ্যা ও পদ্ধতিগত দিক দিয়ে শরিয়ত অনুমোদিত নিয়মাবলি অনুসরণ করে। কোরবানির উদ্দেশ্য শুধু গোশত খাওয়া নয়, শুধু মানুষের উপকার করা নয় বা শুধু সদকা (দান) নয়। কোরবানির উদ্দেশ্য হল আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের একটি মহান নিদর্শন তার রাসূলের নির্দেশিত পদ্ধতিতে আদায় করা। তাই, আমরা দেখলাম কীভাবে রাসূলুল্লাহ সা. গোশতের বকরি ও কোরবানির বকরির মাঝে পার্থক্য নির্দেশ করলেন। তিনি বললেন যা সালাতের পূর্বে জবেহ হল তা বকরির গোশত আর যা সালাতের পরে জবেহ হল তা কোরবানির গোশত।




১৩. কোরবানি দাতা যে সকল কাজ থেকে দূরে থাকবেন

হাদিসে এসেছে: উম্মে সালামাহ রা. থেকে বর্ণিত যে রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন: “তোমাদের মাঝে যে কোরবানি করার ইচ্ছে করে সে যেন যিলহজ মাসের চাঁদ দেখার পর থেকে চুল ও নখ কাটা থেকে বিরত থাকে। ইমাম মুসলিম হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। তার অন্য একটি বর্ণনায় আছে—‘সে যেন চুল ও চামড়া থেকে কোন কিছু স্পর্শ না করে। অন্য বর্ণনায় আছে ‘কোরবানির পশু জবেহ করার পূর্ব পর্যন্ত এ অবস্থায় থাকবে।“ [৩৫]


কোরবানি দাতা চুল ও নখ না কাটার নির্দেশে কি হিকমত রয়েছে এ বিষয়ে উলামায়ে কেরাম অনেক কথা বলেছেন। অনেকে বলেছেন : কোরবানি দাতা হজ করার জন্য যারা এহরাম অবস্থায় রয়েছেন তাদের আমলে যেন শরিক হতে পারেন, তাদের সাথে একাত্মতা বজায় রাখতে পারেন।

ইবনুল কায়্যিম (রহ.) বলেছেন: “কোরবানি দাতা চুল ও নখ বড় করে তা যেন পশু কোরবানি করার সাথে সাথে নিজের কিছু অংশ আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কোরবানি (ত্যাগ) করায় অভ্যস্ত হতে পারেন এজন্য এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে।“[৩৬] যদি কেউ যিলহজ মাসের প্রথম দিকে কোরবানি করার ইচ্ছা না করে বরং কয়েকদিন অতিবাহিত হওয়ার পর কোরবানির নিয়ত করল সে কি করবে? সে নিয়ত করার পর থেকে কোরবানির পশু জবেহ পর্যন্ত চুল ও নখ কাটা থেকে বিরত থাকবে।



১৪. কোরবানির পশু জবেহ করার নিয়মাবলি

কোরবানি দাতা নিজের কোরবানির পশু নিজেই জবেহ করবেন, যদি তিনি ভালভাবে জবেহ করতে পারেন। কেননা রাসূলুল্লাহ সা. নিজে জবেহ করেছেন। আর জবেহ করা আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জনের একটি মাধ্যম। তাই প্রত্যেকের নিজের কোরবানি নিজে জবেহ করার চেষ্টা করা উচিত।

ইমাম বোখারি (রহ.) বলেছেন: “সাহাবি আবু মুসা আশআরী রা. নিজের মেয়েদের নির্দেশ দিয়েছেন তারা যেন নিজ হাতে নিজেদের কোরবানির পশু জবেহ করেন।“ [৩৭] তার এ নির্দেশ দ্বারা প্রমাণিত হয় মেয়েরা কোরবানির পশু জবেহ করতে পারেন। তবে কোরবানি পশু জবেহ করার দায়িত্ব অন্যকে অর্পণ করা জায়েজ আছে। কেননা সহিহ মুসলিমের হাদিসে এসেছে-“রাসূলুল্লাহ সা. তেষট্টিটি কোরবানির পশু নিজ হাতে জবেহ করে বাকিগুলো জবেহ করার দায়িত্ব আলী রা.-কে অর্পণ করেছেন।” [৩৮]

জবেহ করার সময় যে সকল বিষয় লক্ষণীয়

(১) যা জবেহ করা হবে তার সাথে সুন্দর আচরণ করতে হবে, তাকে আরাম দিতে হবে। যাতে সে কষ্ট না পায় সে দিকে লক্ষ রাখতে হবে। হাদিসে এসেছে ,সাহাবি শাদ্দাদ ইবনে আউস রা. থেকে বর্ণিত যে নবী কারীম (সা:) বলেছেন: “আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সকল বিষয়ে সকলের সাথে সুন্দর ও কল্যাণকর আচরণের নির্দেশ দিয়েছেন। অতএব তোমরা যখন হত্যা করবে তখন সুন্দরভাবে করবে আর যখন জবেহ করবে তখনও তা সুন্দরভাবে করবে। তোমাদের একজন যেন ছুরি ধারালো করে নেয় এবং যা জবেহ করা হবে তাকে যেন প্রশান্তি দেয়।” [৩৯]

(২) যদি উট জবেহ করতে হয় তবে তা নহর করবে। নহর হল উটটি তিন পায়ের উপর দাঁড়িয়ে থাকবে আর সম্মুখের বাম পা বাধা থাকবে। তার বুকে ছুরি চালানো হবে। কেননা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন: “সুতরাং সারিবদ্ধভাবে দণ্ডায়মান অবস্থায় তাদের উপর তোমরা আল্লাহর নাম উচ্চারণ কর।” [৪০]

ইবনে আব্বাস রা. বলেন: “এর অর্থ হল তিন পায়ে দাঁড়িয়ে থাকবে আর সামনের বাম পা বাধা থাকবে।” [৪১]


উট ছাড়া অন্য জন্তু হলে তা তার বাম কাতে শোয়াবে। ডান হাত দিয়ে ছুরি চালাবে। বাম হাতে জন্তুর মাথা ধরে রাখবে।মোস্তাহাব হল জবেহকারী তার পা জন্তুটির ঘারে রাখবে। যেমন ইতিপূর্বে আনাস রা. বর্ণিত বোখারির হাদিসে আলোচনা করা হয়েছে।

(৩) জবেহ করার সময় বিসমিল্লাহ বলতে হবে।কারণ আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন : “যার উপর আল্লাহর নাম (বিসমিল্লাহ) উচ্চারণ করা হয়েছে তা থেকে তোমরা আহার কর।“ [৪২] জবেহ করার সময় তাকবীর বলা মোস্তাহাব। যেমন হাদিসে এসেছে: জাবের রা. থেকে বর্ণিত: “একটি দুম্বা আনা হল। রাসূলুল্লাহ স. নিজ হাতে জবেহ করলেন এবং বললেন ‘বিসমিল্লাহ ওয়া আল্লাহু আকবর, হে আল্লাহ ! এটা আমার পক্ষ থেকে। এবং আমার উম্মতের মাঝে যারা কোরবানি করতে পারেনি তাদের পক্ষ থেকে।” [৪৩]

অন্য হাদিসে এসেছে: “রাসূলুল্লাহ (সা:) দুটি শিংওয়ালা ভেড়া জবেহ করলেন, তখন বিসমিল্লাহ ও আল্লাহু আকবার বললেন।” [৪৪] জবেহ করার সময় বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবর পাঠের পর—(হে আল্লাহ এটা তোমার তরফ থেকে, তোমারই জন্য) বলা যেতে পারে। যার পক্ষ থেকে কোরবানি করা হচ্ছে তার নাম উল্লেখ করে দোয়া করা জায়েজ আছে। এ ভাবে বলা—‘হে আল্লাহ তুমি অমুকের পক্ষ থেকে কবুল করে নাও।’ যেমন হাদিসে এসেছে আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) কোরবানির দুম্বা জবেহ করার সময় বললেন: “আল্লাহ নামে, হে আল্লাহ ! আপনি মোহাম্মদ ও তার পরিবার-পরিজন এবং তার উম্মতের পক্ষ থেকে কবুল করে নিন।” [৪৫]

কোরবানির গোশত কারা খেতে পারবেন

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন: “অত:পর তোমরা উহা হতে আহার কর এবং দু:স্থ, অভাবগ্রস্থকে আহার করাও।” [৪৬] রাসূলুল্লাহ (সা:) কোরবানির গোশত সম্পর্কে বলেছেন: “তোমরা নিজেরা খাও ও অন্যকে আহার করাও এবং সংরক্ষণ কর।” [৪৭]


‘আহার করাও’ বাক্য দ্বারা অভাবগ্রস্থকে দান করা ও ধনীদের উপহার হিসেবে দেয়াকে বুঝায়। কতটুকু নিজেরা খাবে, কতটুকু দান করবে আর কতটুকু উপহার হিসেবে প্রদান করবে এর পরিমাণ সম্পর্কে কোরআনের আয়াত ও হাদিসে কিছু বলা হয়নি। তাই উলামায়ে কেরাম বলেছেন : কোরবানির গোশত তিন ভাগ করে একভাগ নিজেরা খাওয়া, এক ভাগ দরিদ্রদের দান করা ও এক ভাগ উপহার হিসেবে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও প্রতিবেশীদের দান করা মোস্তাহাব।


কোরবানির গোশত যতদিন ইচ্ছা ততদিন সংরক্ষণ করে খাওয়া যাবে। ‘কোরবানির গোশত তিন দিনের বেশি সংরক্ষণ করা যাবে না’—বলে যে হাদিস রয়েছে তার হুকুম রহিত হয়ে গেছে। তাই যতদিন ইচ্ছা ততদিন সংরক্ষণ করে রাখা যায়। তবে ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ. এ বিষয়ে একটা সুন্দর ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন : সংরক্ষণ নিষেধ হওয়ার কারণ হল দুর্ভিক্ষ।দুর্ভিক্ষের সময় তিন দিনের বেশি কোরবানির গোশত সংরক্ষণ করা জায়েজ হবে না। তখন ‘সংরক্ষণ নিষেধ’ সম্পর্কিত হাদিস অনুযায়ী আমল করতে হবে। আর যদি দুর্ভিক্ষ না থাকে তবে যতদিন ইচ্ছা কোরবানি দাতা কোরবানির গোশত সংরক্ষণ করে খেতে পারেন। তখন‘সংরক্ষণ নিষেধ রহিত হওয়া’ সম্পর্কিত হাদিস অনুযায়ী আমল করা হবে।

কোরবানির পশুর গোশত, চামড়া, চর্বি বা অন্য কোন কিছু বিক্রি করা জায়েজ নয়। কসাই বা অন্য কাউকে পারিশ্রমিক হিসেবে কোরবানির গোশত দেয়া জায়েজ নয়। হাদিসে এসেছে: “তার প্রস্তুত করণে তার থেকে কিছু দেয়া হবে না।“ [৪৮]

তবে দান বা উপহার হিসেবে কসাইকে কিছু দিলে তা না-জায়েজ হবে না।




১৫. আইয়ামুত-তাশরীক ও তার করণীয়

আইয়ামুত-তাশরীক বলা হয় কোরবানির পরবর্তী তিন দিনকে। অর্থাৎ যিলহজ মাসের এগারো, বারো ও তেরো তারিখকে আইয়ামুত-তাশরীক বলা হয়। তাশরীক শব্দের অর্থ শুকানো। মানুষ এ দিনগুলোতে গোশত শুকাতে দিয়ে থাকে বলে এ দিনগুলোর নাম‘আইয়ামুত-তাশরীক’ বা ‘গোশত শুকানোর দিন’ নামে নামকরণ করা হয়েছে। আইয়ামুত তাশরীক এর ফজিলত এ দিনগুলোর ফজিলত সম্পর্কে যে সকল বিষয় এসেছে তা নীচে আলোচনা করা হল:
(১) এ দিনগুলো এবাদত-বন্দেগি, আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের জিকির ও তার শুকরিয়া আদায়ের দিন। আল্লাহ তাআলা বলেন: “তোমরা নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহকে স্মরণ করবে।” [৪৯]

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম বোখারি (রহ:) বলেন: “ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন—‘নির্দিষ্ট দিনগুলো বলতে আইয়ামুত-তাশরীককে বুঝানো হয়েছে।” [৫০]

ইমাম কুরতুবী (রহ:) বলেন: “ইবনে আব্বাসের এ ব্যাখ্যা গ্রহণে কারো কোন দ্বি-মত নেই।” [৫১] আর মূলত এ দিনগুলো হজের মওসুমে মিনাতে অবস্থানের দিন। কেননা হাদিসে এসেছে: “মিনায় অবস্থানের দিন হল তিন দিন। যদি কেউ তাড়াতাড়ি করে দু দিনে চলে আসে তবে তার কোন পাপ নেই। আর যদি কেউ বিলম্ব করে তবে তারও কোন পাপ নেই।” [৫২]

হাদিসে এসেছে: “নাবীশা হাজালী থেকে বর্ণিত যে রাসূলে কারীম স. বলেছেন : ‘আইয়ামুত-তাশরীক হল খাওয়া-দাওয়া ও আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের জিকিরের দিন।“ [৫৩]

ইমাম ইবনে রজব (রহ:) এ হাদিসের ব্যাখ্যায় চমৎকার কথা বলেছেন। তিনি বলেন: ‘আইয়ামুত-তাশরীক এমন কতগুলো দিন যাতে ঈমানদারদের দেহের নেয়ামত ও স্বাচ্ছন্দ্য এবং মনের নেয়ামত তথা স্বাচ্ছন্দ্য একত্র করা হয়েছে। খাওয়া- দাওয়া হল দেহের খোরাক আর আল্লাহর জিকির ও শুকরিয়া হল হৃদয়ের খোরাক। আর এভাবেই নেয়ামতের পূর্ণতা লাভ করল এ দিনসমূহে।’ [৫৪]

(২) আইয়ামুত-তাশরীকের দিনগুলো ঈদের দিন হিসেবে গণ্য। যেমন হাদিসে এসেছে: “সাহাবি উকবাহ ইবনে আমের রা. থেকে বর্ণিত যে রাসূলে কারীম স. বলেছেন: আরাফাহ দিবস, কোরবানির দিন ও মিনার দিন সমূহ (কোরবানি পরবর্তী তিন দিন) আমাদের ইসলাম অনুসারীদের ঈদের দিন।“ [৫৫]

(৩) এ দিনসমূহ যিলহজ মাসের প্রথম দশকের সাথে লাগানো। যে দশক খুবই ফজিলতপূর্ণ। তাই এ কারণেও এর যথেষ্ট মর্যাদা রয়েছে।

(৪) এ দিনগুলোতে হজের কতিপয় আমল সম্পাদন করা হয়ে থাকে। এ কারণেও এ দিনগুলো ফজিলতের অধিকারী। আইয়ামুত তাশরীকে করণীয়। এ দিনসমূহ যেমনি এবাদত-বন্দেগি, জিকির-আযকারের দিন তেমনি আনন্দ-ফুর্তি করার দিন। যেমন রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন: “আইয়ামুত-তাশরীক হল খাওয়া-দাওয়া ও আল্লাহর জিকিরের দিন।” [৫৬]

এ দিনগুলোতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দেয়া নেয়ামত নিয়ে আমোদ-ফুর্তি করার মাধ্যমে তার শুকরিয়া ও জিকির আদায় করা।



জিকির আদায়ের কয়েকটি পদ্ধতি হাদিসে এসেছে।

(১) সালাতের পর তাকবীর পাঠ করা। এবং সালাত ছাড়াও সর্বদা তাকবীর পাঠ করা। এ তাকবীর আদায়ের মাধ্যমে আমরা প্রমাণ দিতে পারি যে এ দিনগুলো আল্লাহর জিকিরের দিন। আর এ জিকিরের নির্দেশ যেমন হাজীদের জন্য তেমনই যারা হজ পালনরত নন তাদের জন্যও।

(২) কোরবানি ও হজের পশু জবেহ করার সময় আল্লাহ তাআলার নাম ও তাকবীর উচ্চারণ করা।

(৩) খাওয়া-দাওয়ার শুরু ও শেষে আল্লাহ তাআলার জিকির করা। আর এটা তো সর্বদা করার নির্দেশ রয়েছে তথাপি এ দিনগুলোতে এর গুরুত্ব বেশি দেয়া। এমনিভাবে সকল কাজ ও সকাল-সন্ধ্যার জিকিরগুলোর প্রতি যতবান হওয়া।

(৪) হজ পালন অবস্থায় কঙ্কর নিক্ষেপের সময় আল্লাহ তাআলার তাকবীর পাঠ করা।

(৫) এ গুলো ছাড়াও যে কোন সময় ও যে কোন অবস্থায় আল্লাহর জিকির করা

মঙ্গলবার, ৫ জুলাই, ২০২২

কবে লোডশেডিং কমবে?

কবে লোডশেডিং কমবে?
সরকার এই পরিস্থিতির জন্য ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধিকে দায়ী করছে। তবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত নিয়ে কাজ করেন সাংবাদিক অরুণ কর্মকার।


তিনি মনে করেন, দেশের অভ্যন্তরীণ গ্যাস অনুসন্ধান এবং উৎপাদনে ব্যর্থতার কারণে তা আমদানি নির্ভর হয়ে পড়ায় এমন পরিস্থিতি হয়েছে।


মি: কর্মকার বলেন, যুদ্ধ পরিস্থিতি বা যে কোন কারণে যে কোন সময় জ্বালানির বিশ্ববাজার অস্থির হতে পারে।

"যেহেতু তেল আমাদের নেই। ফলে তা আমদানি করতে হবে। কিন্তু আমাদের গ্যাস ও কয়লা সম্পদের অনুসন্ধান, উত্তোলন বাড়াতে সরকারের উদ্যোগের ঘাটতি ছিল।




"সেকারণে আমরা গ্যাসের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি এবং এখন এই সমস্যা তৈরি হয়েছে" বলেন অরুণ কর্মকার।

অভ্যন্তরীণ গ্যাস উৎপাদন বাড়ানোর ক্ষেত্রে ব্যর্থতার অভিযোগ মানতে রাজি নন প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

তিনি দাবি করেন, গত চার বছরে এক হাজার ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন বেড়েছে।


তবে এখন বিশ্ববাজারে দাম চড়া হওয়ায় গ্যাস কেনা বন্ধ করায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়ে লোডশেডিং করতে হচ্ছে, এই অবস্থার সহসাই উন্নতি সম্ভব কিনা-এমন প্রশ্নে মি: হামিদ কোন নিশ্চয়তা দিতে পারেননি।


"গ্যাস কেনাটা বিশ্ব পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে। গ্যাসের দাম কমলে হয়তো গ্যাস আমদানি করতে পারবো" বলেন নসরুল হামিদ।




একই সাথে তিনি বলেন, "সরকার যদি এখন গ্যাস আমদানি করত, তাহলে আমরা করবো।

"আর তা না হলে মধ্যপ্রাচ্য থেকে চুক্তির ভিত্তিতে যে গ্যাস পাওয়া যায়, তার সাথে আভ্যন্তরীণ গ্যাস দিয়ে এভাবেই চলবে" মন্তব্য করেন মি: হামিদ।


তার কথায় এটা পরিষ্কার, বিশ্ববাজারে গ্যাসের দাম কমার অপেক্ষায় থাকবে সরকার এবং এমুহূর্তে বিকল্প উপায় নেই।
সরকার যখন সারা দেশে শত ভাগ বিদ্যুতের আওতায় আনার কথা বলছে, তখন আবার লোডশেডিং গ্রাহকদের অতীতের খারাপ পরিস্থিতিকেই মনে করিয়ে দিচ্ছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।

কোনো লোডশেডিং হচ্ছে বাংলাদেশে, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ?



বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে গ্যাসের দাম কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক খোলাবাজার বা স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনা হচ্ছে না।
সেজন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন কমানো হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
"গ্যাসের দাম প্রচুর বেড়ে গেছে। সরকার যে পরিমাণ ভর্তুকি দিচ্ছে, সেটা দিয়েও কাভার করা যাচ্ছে না" বলেন নসরুল হামিদ।

তিনি জ্বালানির বিশ্ববাজার পরিস্থিতি নিয়ে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেন, "গ্যাসের দাম এখন আন্তর্জাতিক স্পট মার্কেটে প্রতি ঘনফুট ৩৬ ডলার হয়েছে।




"যেহেতু এই পরিমাণ টাকা দিয়ে আমি গ্যাস আনতে পারছি না, সেজন্য আমাকে এই ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে" বলেন প্রতিমন্ত্রী মি: হামিদ।

গ্যাস-ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর ১০ হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা রয়েছে। এই কেন্দ্রগুলোতে এখন অর্ধেকেরও কম বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে।
এছাড়া কর্মকর্তারা বলছেন, জ্বালানি তেলের দামও বিশ্ববাজারে অনেক বেশি হওয়ায় পেট্রলিয়াম করপোরেশনকে দিনে একশো কোটি টাকার বেশি লোকসান দিতে হচ্ছে। সেজন্য তেল-চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোও পুরো দমে চালানো হচ্ছে না।



গ্যাস সংকটের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত



বাংলাদেশে এখন বিদ্যুৎ সরবরাহ দেশব্যাপী বড় মাত্রায় কমিয়ে দেয়া হয়েছে। সরকার বলছে, গ্যাস সংকটের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় বিদ্যুতের লোডশেডিং করতে হচ্ছে।




গ্যাস সংকটের কারণে বিশ্ববাজারে দাম চড়া হওয়ায় খোলাবাজার বা স্পট মার্কেট থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজি কেনা বন্ধ রাখার বিষয়কে তুলে ধরা হচ্ছে।
দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে কয়েকদিন ধরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে।
তবে কবে নাগাদ পরিস্থিতির উন্নত হতে পারে - সে ব্যাপারে কোন নিশ্চয়তা দিতে পারেননি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

শুক্রবার, ১ জুলাই, ২০২২

প্রাকৃতিক উপায়ে সাপ তাড়ানোর উপায়



সাপের প্রজাতি:
বাংলাদেশে প্রায় ৯০ প্রজাতির সাপ আছে। তবে সব প্রজাতিই বিষাক্ত নয়। মাত্র ২৭ টি প্রজাতি বিষধর বলে জানা যায়।
 যেহেতু সব সাপই বিষাক্ত নয় তাই কামড়ালে ভীত হওয়া যাবে না। 
ডাক্তারদের মতে প্রাথমিক পর্যায়ে বিষ ছড়ানো বন্ধ করে দ্রুত চিকিৎসা কেন্দ্রে নিতে পারলে বিষাক্ত সাপের কামড় থেকেও রোগীকে বাঁচানো যায়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতি বছর ৮৩ হাজার লোক সাপের দংশনের শিকার হন।যার মাঝে ১১ হাজার লোকের প্রাণহানি ঘটে।



সাপ কামড়ালে করণীয়


চলুন জানা যাক প্রাথমিক ব্যবস্থাগুলো:

• সাপে কামড়ানো রোগীকে সাপ থেকে দূরে সরিয়ে নিবেন এবং তাকে সাহস দিবেন।

• সাপটি দেখতে পেলে তা কোন প্রজাতির তা চিনতে চেষ্টা করতে পারেন।

• আক্রান্ত স্থানটি সাবান দিয়ে পরিষ্কার করবেন না। গোবর লাগাবেন না।

• কামড়ের স্থানে বা কাছে কোন গহনা পড়া থাকলে তা খুলে ফেলুন।

• জুতা পড়া থাকলে তা খুলে দিবেন। কাপড় ঢিলেঢালাভাবে পড়ান।

• কামড়ের স্থান থেকে কিছুটা উপর বেঁধে দিন। গজ বা দঁড়ি না থাকলে গাছের বাকল, কাগজ, ব্যাগের ফিতা ইত্যাদি দিয়েই বাঁধন দিন। এরপর দ্রুত নিকটস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিন। বাঁধন খুবই শক্ত করা যাবে না।

• রোগীকে বা আক্রান্ত অঙ্গটিকে বেশি নাড়াচাড়া করবেন না।

• রোগীকে হাঁটতে দিবেন না। কারণ এতে মাংসপেশীর সংকোচন-প্রসারণের মাধ্যমে দ্রুত বিষ ছড়িয়ে পড়তে পারে।

• রোগীকে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এসপিরিন বা কোন ব্যথানাশক ঔষধ দিবেন না।

• মুখ দিয়ে বিষ টেনে তোলার চেষ্টা করবেন না। এটা সিনেমায় দেখানো একটি ভ্রান্ত ধারণা মাত্র। এতে স্নায়ু ও রক্তনালীসমূহের ক্ষতি হতে পারে। তাছাড়া মুখে থাকা জীবাণুর সংক্রমন ঘটতে পারে।



সাপ তাড়ানোর ঘরোয়া উপায়:


বিশেষ কিছু ঘরোয়া ও বৈজ্ঞানিক উপায় অবলম্বন করলে সাপ ও কীটপতঙ্গ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় সহজেই। কিন্তু এই প্রতিরোধ প্রসঙ্গে অনেকেরই ধারণা খুব কম। তাই দেখে নিন, এই বর্ষায় পোকামাকড় ও সাপখোপের হাত থেকে বাঁচতে কি করবেন।

১. বর্ষা তো বটেই, বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার রাখুন সারা বছরই। তাতে বর্ষায় পরিশ্রমও কমবে, আর সারা বছর সুস্থ থাকবে বাড়ির পরিবেশ। বর্ষা এলে বাড়ির চারপাশে ছড়িয়ে দিন কার্বলিক অ্যাসিড । কাচের বোতলে অ্যাসিড রেখে বিভিন্ন জায়গায় রেখে দিন। দেখবেন, তা যেন শিশুদের নাগালের বাইরে থাকে। সাপ থাকলে তা অ্যাসিডের গন্ধে পালিয়ে যাবে।



২. আশপাশের আবর্জনা নিয়মিত পরিষ্কার করুন। বাড়ির বাগানেও আগাছা জমতে দেবেন না। এমনিতেই এখন মশা ও কীটনাশক দূরীকরণে সরকারি কাজে বাধা দিলে জরিমানার কথাও ভাবছে বিভিন্ন পুরসভা।



৩. বাড়ির চারপাশে কোনও ডোবা বা অপরিষ্কার জলাশয় থাকলে তার বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিন। সরকারি স্তরে তা জানিয়ে সেই জলাশয় পরিষ্কার বা সংরক্ষণের ব্যবস্থা করুন। বাড়ির চারপাশে জল জমতে দেবেন না একেবারেই।



৪. কার্বলিক অ্যাসিডের সঙ্গে বাড়ির চারপাশে ডিডিটি, মশা মারার তেল ও ব্লিচিং পাউডার ছড়ান নিয়ম মেনে। পুরকর্মী ছাড়া নিজেও এই দায়িত্ব নিতেই পারেন সহজে।




৫. বাড়িতে ইঁদুর বা ব্যাঙের হাজিরা থাকলে, সাপ বেশি আসে। তা তাড়ানোর ব্যবস্থা করুন আগে। চেষ্টা করুন, খুব ক্ষতি না করলে যে কোনও প্রাণীকেই না মেরে, স্রেফ তাড়াতে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাতেও তা প্রয়োজন। সব চেয়ে ভাল, যদি এ সবের প্রবেশ আটকাতে পারেন। তার জন্য প্রতি দিন কাজ শেষে রান্নাঘর, বাথরুম ও বাড়ির অন্যান্য ঘরের নর্দমার মুখ আটকে রাখুন। বেশিরভাগ সময়ে এ সব দিয়েই ঢোকে ব্যাঙ-ইঁদুর।

৬. ঘরে যাতে সাপ ঢুকতে না পারে, সে জন্য খেয়াল রাখুন বাড়ির কোথাও কোনও ফাঁকফোকর থেকে যাচ্ছে কি না। সে সব আগে বন্ধ করুন। এ ছাড়া বাড়ির চারপাশে সালফার পাউডার ছড়ান। এর গন্ধেও সাপ বাড়ির ভিতরে ঢুকতে পারবে না।



৭. বাড়ির চারপাশে ব্লিচিং পাউডার ছড়িয়ে রাখুন। তাতে ঘরে পোকামাকড়-সাপখোপের উপদ্রব থেকে মুক্তি পাবেন।




৮.বাড়ির আশপাশে গাছপাল্লা বড় হতে দেবেন না। নয়তো সাপের উপদ্রব বাড়তে পারে।




৯. সাপ তাড়াতে বাড়ির চারপাশে সালফার পাউডার ছড়িয়ে রাখুন। এর গন্ধে সাপ বাড়ির ভিতরে ঢুকতে পারবে না।




সম্পূর্ণ ভাবে দুর করতে চিটাগাং পেস্ট কন্ট্রোল-এ যোগাযোগ করতে পারেন। এতকিছু করেও যদি সফল না হন অথবা আপনার সময় না থাকে তবে যোগাযোগ করতে পারেন চিটাগাং পেস্ট কন্ট্রোল এর সাথে অথবা ০১৬৩৪৯০২২৩৫ নম্বরে।




পরিশেষে বাসার আঙ্গিনা পরিস্কার রাখুন যার কোন বিকল্প নেই।

Popular Posts