Recent post

শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১৯

কিশমিশের উপকারিতা

খাবারে স্বাদ কিংবা সুন্দরের জন্যে আমরা সাধারণত কিশমিশ ব্যবহার করে থাকি।
 কিন্ত আমরা জানি না যে কিশমিশে রয়েছে নানা ধরনের ভিটামিন ও মিনারেল। 
শুধু কিশমিশ না, কিশমিশ মেশানো পানি খেলেও তার রয়েছে নানা উপকারিতা। 
কিশমিশের পানি খেলে লিভারে জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়া শুরু হয় যার দরুন শরীরের অভ্যন্তরে দ্রুত রক্ত পরিশোধন হতে থাকে। 
এক সপ্তাহ কিশমিশের পানি পান করলে পেট একদম পরিষ্কার হয়ে যাবে, 
পেটের গন্ডগোল থাকবে না সেইসঙ্গে ভরপুর শক্তি পাবেন। 
এছাড়া কিশমিশ হার্টকে ভালো রাখে এবং ক্ষতিকারক যে কোলেস্টেরল রয়েছে তা দূর করে।

রক্ত পরিষ্কার করতে কিডনির পাশাপাশি লিভারকেও ভালোভাবে কাজ করতে হবে।
তাই লিভার ও কিডনির সমস্যা হলে, ক্ষতিকারক পদার্থ শরীরে জমতে শুরু করে আমাদের অসুস্থ করে তোলে। 
তাই লিভার ও কিডনিকে সবসময় চাঙ্গা রাখতে হবে।
 কিশমিশ ভেজানো পানি সেই কাজটাই ভালোভাবে করে।
 যার দরুণ হজমশক্তিও বাড়ে। 

এবার আসুন কিশমিশের কিছু উপকারী গুন সম্পর্কে জেনে নেই।

দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে
নিয়মিত কিশমিশ খেলে বৃদ্ধ বয়সে দৃষ্টিহীন হওয়ার সম্ভবনা কমে যায়। 
পাশাপাশি কিশমিশে থাকা পলিফেনল উপাদান ক্ষতিকারক ফ্রি-রেডিকেলস ধ্বংস করে চোখকে বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করে।

রক্তশূন্যতা রোধ করে
রক্তে লৌহের পরিমাণ কম হলে অবশাদ, দুর্বলতা, হতাশায় ভুগতে পারেন, ব্যহত হতে পারে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও।
কিশমিশে প্রচুর পরিমাণে লৌহ আছে যা রক্তশূণ্যতায় ভোগা রোগির খুবই উপকারি। 
এছাড়া রক্ত ও লোহিত কণিকা তৈরি জন্য দরকার ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ও কপার, যা কিশমিশে থাকে। 
এককাপ কিশমিশ ৬মি.গ্রা. লৌহের যোগান দেয়, যা প্রতিদিনের লৌহের চাহিদার ১৭ শতাংশ পূরণ করত পারে।

ভালো রাখে মুখের স্বাস্থ্য

ক্যান্ডির মতো দাঁতে লেগে থাকেনা কিশমিশ, ফলে থাকে না ক্যাভিটি তৈরির আশঙ্কা। 
বরং কিশমিশের পাইথোনিউট্রিয়েন্ট, অলিয়ানলিক এসিড নামে পরিচিতি যা ব্যাকটেরিয়া থেকে তৈরি দাঁতের ক্যাভিটি ধ্বংস করে মুখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।

হাড় সুস্থ রাখে

আজকাল অস্টিওপোরোসিস রোগে অনেকেই ভুগে থাকেন। 
হাড়ের এই রোগ প্রতিরোধ করতে বোরন নামের খনিজ পদার্থ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। 
আর কিশমিশ বোরনের অন্যতম উৎস। 
বোরনে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম— যা হাড় গঠনের পাশাপাশি শরীরে টেসটোসটেরন এবং ইস্ট্রোজেনের মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে।

অ্যাসিডিটি স্বাভাবিক করে

অতিরিক্ত অ্যাসিডিটি বা রক্ত দুষিত হওয়াকে বলে অ্যাসিডোসিস, যা থেকে আরথ্রাইটিস, 
চামড়া রোগ, হৃদরোগ এবং ক্যান্সার হতে পারে।
 অ্যান্টাসিডস হিসেবে পরিচিতি দুটি উপাদান ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাশিয়াম শরীরের ক্ষরীয়ভাব স্বাভাবিক করে অ্যাসিডোসিসের হাত থেকে বাঁচায়। 
আর এই উপাদানগুলো কিশমিশে রয়েছ।

আঁশে পূর্ণ
কোলোরেক্টাল ক্যান্সার থেকে মুক্ত থাকার জন্য যারা খ্যাদ্যাভ্যাসে আঁশযুক্ত খাদ্য রাখতে চান তাদের জন্য কিশমিশ হতে পারে আদর্শ খাবার। 
কারণ এক টেবিল-চামচ কিশমিশ আপনাকে দিতে পারে এক গ্রাম হজম সহায়ক আঁশ।

অ্যান্টি কোলেস্টের উপাদান
কিশমিশে কোলেস্টেরলের পরিমাণ শূন্য।
 শুধু তাই নয়, এতে আছে অ্যান্টি কোলেস্টেরল উপাদান যা শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল কমায়। এছাড়া কিশমিশে থাকা দ্রবণীয় ফাইবার যকৃত থেকে খারাপ কোলেস্টেরল দূর করতে সহায়তা করে। এককাপ কিশমিশ থেকে ৪ গ্রাম দ্রবণীয় ফাইবার পাওয়া যায়।
 তাছাড়া কিশমিশে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট পলিফেনল কোলেস্টেরলকে শরীর থেকে এনজাইম শোষণ করা থেকে বিরত রাখতে সাহায্য করে।

মস্তিষ্কের খাদ্য
কিশমিশে থাকা বোরন মস্তিষ্কের খাদ্য হিসেবে কাজ করে। 
তাছাড়া বোরন মনোযোগ বৃদ্ধি, চোখের সঙ্গে হাতের সামঞ্জস্য বাড়ানো স্মৃতিশক্তি তীক্ষ্ণ করতে সাহায্য করে। 
একশ গ্রাম কিশমিশ থেকে ২.২ মি.গ্রা. বোরন পাওয়া যায়।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
বিষাক্ত পদার্থ দূর করে রক্ত শুধু পরিষ্কারই করে না, পাশাপাশি রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে কিশমিশ। 
মূলত কিশমিশে থাকা পটাসিয়াম রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। 
সাধারণত উচ্চ মাত্রার সোডিয়াম শরীরে রক্তচাপ বাড়ায়। 
কিশমিশ শরীরে সোডিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

দাঁতের জন্য উপকারি

কিশমিশে থাকা অলিয়ানলিক অ্যাসিড দাঁতের ক্ষয় আটকায়, 
দাঁতে ফুটো হওয়া ও দাঁত ভেঙে যাওয়া বন্ধ করে, 
সেই সঙ্গে দাঁতকে দেয় সব রকমের সুরক্ষা। 
মেরে ফেলে স্ত্রেপ্টোকক্কাস মিউটানস ও পরফাইরমোনাস জিঞ্জিভালিস নামের দুটি দাঁত ও মাড়ির জীবাণুকে। 
আর এর ক্যালসিয়াম দাঁতের এনামেলের ক্ষয় রোধ করে দাঁতকে করে তোলে কঠিন। 
শুনতে আশ্চর্য লাগতে পারে। কিন্তু এটা প্রমাণিত যে কিশমিশ খাওয়ার সময় দাঁতে লেগে গেলে তা আসলে দাঁতের পক্ষে ভালো। 
এতে থাকা অলিয়ানলিক অ্যাসিড যতক্ষন দাঁতের সংস্পর্শে থাকে, 
ততক্ষণ প্রত্যক্ষ ভাবে রোধ করে জীবাণুর আক্রমণ। 
আর এই কাজে সাহায্য করে সঙ্গে উপস্থিত বোরনও।

যৌন অক্ষমতা দূর করে
প্রাচীন কাল থেকেই কামোত্তেজক হিসেবে কিশমিশ সুপরিচিত। 
এতে আরজিনিন নামের একটি অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে, যা ইরেক্টাইল ডিসফাংশনে দারুণ কাজ করে। 
এছাড়াও শুক্রাণুর সচলতা বাড়িয়ে গর্ভধারণের সম্ভাবনা বাড়ায় আরজিনিন। 
সঙ্গে বাড়ায় যৌন ক্ষমতাও।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে
খাবার পর আমাদের রক্তে শর্করার পরিমাণ খুব বেড়ে যায়।
 তাই প্রাকৃতিক নিয়মে এই সময় ইনসুলিনের ক্ষরণ বেড়ে যায় এবং সঙ্গে সঙ্গে রক্তে শর্করার পরিমাণ কমতে শুরু করে। 
কিন্ত ইনসুলিন ঠিক মতো কাজ করতে না পারলে দেহে সুগারের মাত্রা বাড়তেই শুরু করে। 
আর এমনটা হলেই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। 
সুগারের এই বাড়বাড়ন্ত রোধে কিশমিশ খুবই উপকারি। 
তাই তো সুগার রোগীদের কিশমিশ খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

ক্যান্সারের সম্ভাবনা কমায়
কিশমিশের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ক্যাটেচিন্স থাকে, যা এক ধরণের পলিফেনলিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এই অ্যান্টি-অক্সিডেন্টটি শরীরের বিভিন্ন প্রত্যঙ্গ এবং রক্তে উপস্থিত ক্ষতিসাধনকারী ফ্রি-র‍্যাডিকালদের নষ্ট করে দিতে সাহায্য করে। 
এই ধরণের ফ্রি-র‍্যাডিকাল ক্যান্সারের কোষ বেড়ে উঠতে সাহায্য করে। 
তাই তো প্রতিদিনের ডায়েটে নিয়ম করে কিশমিশ রাখা খুবই প্রয়োজনীয়।

হাইপারটেনশন কমায়
বহু বছর ধরেই এটা মানা হয় যে, কিশমিশ রক্তচাপ কমায় এবং হৃদরোগের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়। সম্প্রতি একটি গবেষণায় এই বিষয়ক আরও বেশ কিছু তথ্য উঠে এসেছে। 
জানা যাচ্ছে যে, কিশমিশ খেলে হাইপারটেনশন কমে যায়। 
যদিও কিভাবে এমনটা হয়, তা এখনও পরীক্ষা দ্বারা প্রমাণিত হয়নি বা এই বিষয়ে কোনও সঠিক সিদ্ধান্তে আশা যায়নি। 
কিশমিশে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকায় এটি হাইপারটেনশন সহ হৃদরোগের সম্ভাবনা কমাতে পারে। 
এছাড়াও কিশমিশের মধ্যে উপস্থিত ফাইবার ধমনীর যত্নে দারুণ উপকারি ভূমিকা পালন করে।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
কিশমিশ কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় দারুণ কাজ দেয়।
 কারণ কিশমিশের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে এবং এই কারণেই পানির সংস্পর্শে আসার সঙ্গে সঙ্গে কিশমিশ ফুলে ওঠে। 
এই ফাইবারই খাবার হজম করিয়ে তাকে বর্জ্যের আকারে শরীরের বাইরে বেরিয়ে যেতে সাহায্য করে। তবে শুধুমাত্র কোষ্ঠকাঠিন্যে নয়, 
ডাইরিয়া বা আমাশয় রোগে আক্রান্ত রোগীদেরও সেরে উঠতে সাহায্য করে কিশমিশ।

ওজন বাড়াতে সাহায্য করে
আপনি কি খুবই রোগা?
 ওজন বাড়াতে চাইছেন? 
তাহলে নিয়ম করে কিশমিশ খান। 
কারণ কিশমিশের মধ্যে ফ্রক্টোজ এবং শর্করা রয়েছে। এককথায় ক্যালরিতে ঠাসা। 
তাই তো এই খাবারটি খেলোয়াড় এবং বডি বিল্ডারদের মেনুতে প্রতিদিন রাখার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। 
কারণ এদের প্রচুর পরিমাণে এনার্জির দরকার হয়, যা পূরণ করতে কিশমিশ সাহায্য করে। 
কিশমিশের মধ্যে নেই খারাপ কোলেস্টেরল। 
উল্টে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, অ্যামাইনো অ্যাসিড এবং মিনারেল।

অনিদ্রা
অনেকের ঠিকমত ঘুম আসে না।
 তাদের জন্য কিসমিস অনেক উপকারি। 
কারন কিশমিসের মধ্যে রয়েছে প্রচুর আয়রন যা মানুষের অনিদ্রার চিকিৎসায় বিশেষভাবে উপকারী। তাই আজ থেকে কিসমিস খাওয়া শুরু করুন, 
দেখবেন অনেক উপকার পাবেন।

যেভাবে তৈরি করবেন কিশমিশের পানি

২ কাপ পানি (৪০০ এমএল) ও ১৫০ গ্রাম কিশমিশ লাগবে। 
কি ধরনের কিশমিশ কিনছেন, সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। 
খুব চকচক করছে, এমন কিশমিশ কিনবেন না। 
তাতে কেমিক্যাল মেশানো থাকে। 
চেষ্টা করুন গাঢ় রঙের কিশমিশ কিনতে। তাও এমন কিশমিশ নিতে হবে যা খুব শক্তও না আবার একদম নরম তুলতুলেও না। 
কিশমিশগুলোকে ভালো করে কয়েক বার ধুয়ে নিন। 
এরপর একটি পাত্রে দু-কাপ পানি দিয়ে রাতভর কিশমিশ ভিজিয়ে রাখুন। 
সকালে কিশমিশ ছেকে নিয়ে সেই পানিটা হালকা গরম করে সকালে খালি পেটে খেয়ে নিন। 
৩০ থেকে ৩৫ মিনিট অন্য কিছু খাবেন না।
কিসমিসের অপকারিতা
কিসমিসে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন বিদ্যমান আছে। 
এতে এমন কোন ক্ষতিকর উপাদান নেয়, যার ফলে দেহের কোন ক্ষতি হতে পারে। 
তাই আপনারা নিশ্চিন্তে কিসমিস খেতে পারেন।

কোন মন্তব্য নেই:

Popular Posts