Recent post

সোমবার, ২৩ মার্চ, ২০১৫

ল্যাপটপকে সুস্থ রাখার ১০ টি ঘরোয়া উপায়

 দৈনন্দিন জীবনে কম্পিউটার এখন অতি প্রয়োজনীয় একটি বস্তু। কয়েক বছর আগেও ডেস্কটপ কম্পিউটারের চাহিদা ছিল প্রচুর। কিন্তু গত কয়েক বছরে ডেস্কটপের জায়গা দখল করে নিয়েছে ল্যাপটপ। ব্যক্তিগত কাজে কম্পিউটার ব্যবহারের জন্য সকলেরই প্রথম পছন্দ এখন ল্যাপটপ। এই পছন্দের প্রথম কারণটি হচ্ছে এর বহনযোগ্যতা এবং দ্বিতীয় কারণটি হচ্ছে এর ব্যাটারি ব্যাকআপ।

আপনি অনেক ঘুরে ফিরে, খোঁজ খবর নিয়ে, ব্র্যান্ড পছন্দ করে একটি ল্যাপটপ কিনলেন। কিন্তু সচেতনতা ও যত্নের অভাবে আপনার পছন্দের ল্যাপটপটি যদি রোগ বাঁধিয়ে হয়ে পড়ে অসুস্থ? আসুন জেনে নিই সাধের ল্যাপটপের রোগ প্রতিরোধ এবং সুস্থ রাখার জন্য কী কী করতে পারেন আপনি। মেনে চলুন কিছু সহজ নিয়ম আর শখের ল্যাপটপকে রাখুন চির নতুন।

১. স্ক্রিন প্রটেক্টর
প্রথমে ‘স্ক্রিন প্রটেক্টর’ ও ‘কি-বোর্ড প্রটেক্টর’ এই দুটি জিনিস অবশ্যই কিনে নিন। ‘স্ক্রিন প্রটেক্টর’ হচ্ছে আমরা টাচ স্ক্রিন মোবাইল ফোনে যে স্ক্রিন প্রটেক্টর ব্যবহার করি, সেই একই জিনিস। এটি ব্যবহারে আপনার ল্যাপটপের স্ক্রিনে কোনো দাগ লাগবে না, যদি কোনো দাগ বা ছোটখাটো আঘাত লাগে সেটি লাগবে প্রটেক্টরের ওপর। আপনার মূল স্ক্রিন থাকবে দাগমুক্ত। এটির দাম পড়বে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা।

২. কিবোর্ড প্রটেক্টর
‘কি-বোর্ড প্রটেক্টর’ হচ্ছে স্বচ্ছ রবারের একটি পর্দার মতো। এটি ব্যবহারে আপনার ল্যাপটপের কি-বোর্ড থাকবে নিরাপদ ও ধুলোমুক্ত। প্রায়ই আমাদের ল্যাপটপের কি-বোর্ড ধূলায় আক্রান্ত হয় এবং পরিষ্কার করতে সমস্যা হয়। আর এটি ব্যবহারের আরেকটি সুবিধা আছে। ধরুন আপনি ল্যাপটপে কাজ করছেন এবং চা-কফি খাচ্ছেন। বেখায়ালি হবার কারণে গ্লাসটি বা কাপটি উল্টে পড়লো আপনার ল্যাপটপের কি-বোর্ডের ওপর। ব্যাস, হলো তো ঝামেলা! ‘কি-বোর্ড প্রটেক্টর’ ব্যবহার করলে এই সমস্যাটি হবে না। কারণ এটি ব্যবহার করলে কি-বোর্ডে জল, চা, কফি কিছুই ঢুকতে পারবে না।

৩. কুলিং ফ্যান
ল্যাপটপে অনেক ছোট পরিসরে কম্পিউটারের প্রয়োজনীয় মাদারবোবোর্ড, প্রসেসর, র্যাম, হার্ডডিস্ক এবং অন্যান্য সবকিছুই থাকে। সে কারণে কাজ করতে করতে ল্যাপটপ কিছুটা গরম হবে এটাই স্বাভাবিক। এটির সমাধান হচ্ছে কুলিং ফ্যান। কুলিং ফ্যানের ওপর ল্যাপটপ রেখে ব্যবহার করলে ল্যাপটপ গরমও কম হবে এবং ল্যাপটপের ব্যাটারি লাইফও বাড়বে।

৪. ভেন্টিলেটর পরিষ্কার
ল্যাপটপের ব্যাকসাইডে এবং পাশে বাতাস চলাচলের জন্য যে ভেন্টিলেটরগুলো থাকে, সেগুলো সবসময় পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করুন। এতে করে আপনার ল্যাপটপের ভেতরের কুলিং ফ্যান ধূলামুক্ত থাকবে এবং সঠিকভাবে কাজ করতে পারবে।

৫. বিছানা বা বালিশের উপরে ব্যবহার করবেন না
বিছানা বা বালিশের ওপর রেখে কখনো ল্যাপটপ ব্যবহার করবেন না। এটি করলে ল্যাপটপের চেম্বারে খুব দ্রুত গরম বাতাস তৈরি হয় এবং তা ভেন্টিলেটর দিয়ে বের হতে পারে না। প্রতিনিয়ত এমনটি ঘটতে থাকলে যেকোনো দিন আপনার ল্যাপটপ কোমায় চলে যেতে পারে। তবে ভালো মানের কুলিং ফ্যান ব্যবহার করলে আপনি বিছানায় বসেও ল্যাপটপ ব্যবহার করতে পারবেন।

৬. বিদ্যুৎ সংযোগে সতর্কতা অবলম্বন
ল্যাপটপে বিদ্যুতের সংযোগ দেবার সময় সতর্কতা অবলম্বন করুন। বৈদ্যুতিক বোর্ডের সুইচ অন থাকা অবস্থায় ল্যাপটপের প্লাগ ঢোকাবেন না এবং হঠাৎ করে অ্যাডাপ্টারের তারটি খুলেও ফেলবেন না। এতে করে ল্যাপটপের পাওয়ার কানেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হবার সম্ভাবনা থাকে।

৭. চার্জ নিঃশেষ করুন
সব সময় বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে ল্যাপটপ ব্যবহার করবেন না। সপ্তাহে অন্তত দু’বার আপনার ল্যাপটপের ব্যাটারির চার্জ শেষ করুন। হঠাৎ বিদ্যুৎ বিভ্রাটে অথবা বাইরে ব্যবহার করলে ল্যাপটপের চার্জ হয়তো ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ শেষ হয়। কিন্তু চার্জ নিঃশেষ না হলে ব্যাটারির সবগুলো ‘সেল’ ব্যবহার হয় না। সবগুলো ‘সেল’ ব্যবহার না হলে ব্যাটারি তার সম্পূর্ণ কার্যক্ষমতা প্রদর্শন করতে পারে না।

৮. সফটওয়্যার ইনস্টল
আপনার ল্যাপটপে হয়তো এমন অনেক সফটওয়্যার ইনস্টল করা আছে যেগুলো আপনি কখনও ব্যবহারই করেন নি। এমন সফটওয়্যারগুলো আনইনস্টল করে দিন এবং অপ্রয়োজনীয় কোনও সফটওয়্যার ইনস্টল করবেন না। এতে করে আপনার ল্যাপটপের অপারেটিং সিস্টেমের ওপর চাপ কম পড়বে এবং গতি কিছুটা বাড়বে। প্রয়োজনে কোনও ক্লিনার চালিয়ে রান করে নিন।

৯. অ্যান্টিভাইরাস
আপনি যদি ইন্টারনেট ব্যবহার করেন তাহলে অবশ্যই লাইসেন্সড অ্যান্টি-ভাইরাস ব্যবহার করুন। তাহলে আপনার ল্যাপটপ ভাইরাসের হাত থেকে মুক্ত থাকবে। ইন্টারনেটে যেসব ফ্রি অ্যান্টি-ভাইরাস পাওয়া যায় সেগুলো ভাইরাস রুখতে ক্ষেত্রে আংশিক কাজ করে, পুরোপুরি নয়।

১০. স্ক্রিনের রেজোলিউশন
আপনি যখন ল্যাপটপ ব্যাটারিতে চালাবেন তখন স্ক্রিনের রেজোলিউশন যথাসম্ভব কমিয়ে রাখুন। এতেও আপনার ব্যাটারি লাইফ বৃদ্ধি পাবে। অর্থাৎ ব্যাটারিতে চলার সময় কম রেজোলিউশনে ল্যাপটপ ব্যবহার করলে ব্যাপআপ টাইম বেশি পাবেন।

এই নিয়মগুলো মেনে চলুন এবং আপনার ল্যাপটপকে রাখুন সুস্থ।

বৃহস্পতিবার, ১৯ মার্চ, ২০১৫

Write Bangla text by your phone

           এখন অনেকর হাতে আধুনিক সুবিধার মুঠোফোন, যেগুলো স্মার্টফোন নামে পরিচিত। মুঠোফোনের ব্যবহার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এতে মাতৃভাষা বাংলার ব্যবহারও বেড়েছে। এখন ইন্টারনেটে বাংলা যেমন লেখা যায় সহজেই, তেমনি স্মার্টফোনেও বাংলা লেখা ও পড়া দুটিই চলছে। ইচ্ছে হলে স্মার্টফোন থেকেই সম্পূর্ণ বাংলায় ফেসবুক, টুইটার কিংবা অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বার্তা, হালনাগাদ তথ্য দেওয়া যায়। বিভিন্ন অপারেটিং সিস্টেমে কাজটি এখন সম্ভব।
অ্যান্ড্রয়েড
 স্মার্টফোনের জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম অ্যান্ড্রয়েডচালিত প্রায় সব ধরনের যন্ত্রেই বাংলা লেখা যায়। বিশেষ করে নতুন স্মার্টফোনগুলোতে বাংলা ভাষা যন্ত্রের মধ্যে (বিল্ট-ইন) থাকায় লেখার সময় শুধু কি-বোর্ডটি বাংলায় পরিবর্তন করে নিলেই হয়। তবে সব স্মার্টফোনে এ সুবিধাটি নেই। হতাশ হওয়ার কারণও নেই অবশ্য। স্মার্টফোনে বাংলা লেখার জন্য জনপ্রিয় নানা ধরনের কি-বোর্ড অ্যাপ রয়েছে।
 গুগল প্লে স্টোর থেকে বিনা মূল্যেই এসব কি-বোর্ড নামিয়ে ব্যবহার করা যায় যেকোনো অ্যান্ড্রয়েড ফোনে। এর মধ্যে একটি জনপ্রিয় কি-বোর্ড ‘রিদ্মিক’ (http://goo.gl/OWvLVo)। বিজ্ঞাপনমুক্ত এ কি-বোর্ডে রয়েছে ফোনেটিক, ইউনিজয়, ন্যাশনাল লে-আউটে বাংলা লেখার সুবিধা। বাংলা কিংবা ইংরেজি যেকোনো ভাষাতেই এটি ব্যবহার করা যায়। কি-বোর্ডটি নামিয়ে সেটিংস থেকে ‘রিদ্মিক’ নির্বাচন করে দিলেই এক কি-বোর্ডেই একাধিক লে-আউট ব্যবহার করে বাংলা লেখা যাবে।
 আরেকটি কি-বোর্ড হচ্ছে মায়াবী (http://goo.gl/mkfSZh)। অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনে ফোনেটিক লে-আউটে বাংলা লেখা যায়। এ কি-বোর্ড দিয়ে বাংলা কিংবা ইংরেজি দুই ভাষাতেই স্মার্টফোন ব্যবহার করা যায়।
 শুধু কম্পিউটারেই নয় এবং স্মার্টফোনেও বাংলা লেখা যাবে বিজয় সফটওয়্যার ব্যবহার করে। আনন্দ কম্পিউটার্সের প্রধান নির্বাহী মোস্তাফা জব্বার বললেন, ‘আমরা খুবই আনন্দিত যে বিজয় লে-আউটে যেভাবে কম্পিউটারে লেখা হয়, সে একই ব্যবস্থায় স্মার্টফোনেও লেখা যাবে। এ নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আমাদের কিছুটা দেরি হয়েছে, তবে ব্যবহারকারীরা এখন চাইলে (http://bijoyekushe.net) ঠিকানা থেকে বিজয় কি-বোর্ড নামিয়ে স্মার্টফোনে ব্যবহার করতে পারবেন।’
আইওএস
 অ্যাপলের অপারেটিং সিস্টেম আইওএস ৮ সংস্করণে বাংলা যুক্ত হয়েছে। এতে চাইলে বাংলা ভাষা নির্বাচন করেই বাংলা লেখা যায়। অর্থাৎ ইংরেজি ছাড়াও এবারই প্রথম বাংলা ব্যবহার এবং বাংলা কি-বোর্ড যুক্ত হয়েছে আইওএসে। ফলে আইফোন ও আইপ্যাডে সহজেই বাংলা পাওয়া যাবে।
 অ্যাপল স্টোর থেকে ‘রিদ্মিক’ (http://bit.ly/1DtHwMg) কি-বোর্ড নামিয়ে নিয়েও ব্যবহার করা যাবে।
 আইওএস ৮ সংস্করণের আগে অ্যাপল তৃতীয় পক্ষের কোনো ভাষা সমর্থন করত না। ফলে আগের আইওএস সংস্করণগুলোতে বাংলা লিখতে চাইলে অভ্রপ্যাড ব্যবহার করা যায়। আই অভ্রwww.omicronlab.com/iavro.html) নামিয়ে বাংলা লিখে আইওএস ৮ সংস্করণের আগের সংস্করণগুলোতেও বাংলা লেখা যাবে।
উইন্ডোজ
 চন্দ্রবিন্দু (http://bit.ly/1kZuLCs) বাংলা ভাষাভাষীদের জন্য বাংলা লেখার অ্যাপ। উইন্ডোজ ফোনে ফোনেটিক লে-আউট অথবা ফিক্সড লে-আউট ব্যবহার করে বাংলা লেখা যায়।
 ব্যবহার করার আগে ফোনেটিক লে-আউটের অভিজ্ঞতা না থাকলে এ অ্যাপ থেকেই লেখার পদ্ধতি পাওয়া যাবে। এ ছাড়া ফিক্সড লে-আউটের টেমপ্লেট দেখা যাবে ফিক্সড লে-আউট প্যাটার্ন তালিকায়।
ফায়ারফক্স
 ফায়ারফক্স অপারেটিং সিস্টেমচালিত স্মার্টফোনে বিল্ট-ইন রয়েছে দুটি বাংলা কি-বোর্ড লে-আউট। অপারেটিং সিস্টেমের সঙ্গেই বাংলা দুটি কি-বোর্ড যুক্ত থাকার ফলে এ ফোনে নির্ধারিত কি-বোর্ড নির্বাচন করে বাংলা লেখা যায়।

শুক্রবার, ১৩ মার্চ, ২০১৫

যেভাবে বাড়াবেন ক্রোম ব্রাউজারের গতি..............

গুগল ক্রোম ব্রাউজারের গতি কম হলে হোমপেজ এরকম ঝাপসা দেখায়গুগল ক্রোম ব্রাউজারের গতি কম হলে হোমপেজ এরকম ঝাপসা দেখায়আপনার কম্পিউটারে গুগল ক্রোম কি খুব ধীরে কাজ করছে? গুগল ক্রোম ব্রাউজার ব্যবহারকারীরা খুব সহজেই ব্রাউজারের গতি বাড়িয়ে নিতে পারেন। প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট সিনেটের প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের দেওয়া এই পরামর্শ মানলে খুব সহজেই বাড়িয়ে নিতে পারবেন আপনার ব্রাউজারের গতি।
ক্রোম মেনু ও সেটিংসপ্রথম ধাপ: গুগল ক্রোমের মেনু বাটনে ক্লিক করুন। ব্রাউজারের ডান কোনায় ক্রস বাটনের নিচে এটি পাবেন। এখান থেকে সেটিংসে যান।
দ্বিতীয় ধাপ: স্ক্রল করে নিচের দিকে এসে শো অ্যাডভান্সড সেটিংসে ক্লিক করুন এবং স্ক্রল করে নিচের দিকে নামুন। এখানে আপনি সিস্টেম নামে একটি সেকশন পাবেন।
তৃতীয় ধাপ: ‘ইউজ হার্ডওয়্যার অ্যাকসেলেরেশন হোয়েন অ্যাভেইলেবল’-এর পাশে থাকা টিক চিহ্নটি উঠিয়ে দিন।
ক্রোমে হার্ডওয়্যার অ্যাকসেলেরেশন বন্ধ করে দেওয়াচতুর্থ ধাপ: ক্রোম ব্রাউজারটি পুরোপুরি বন্ধ করে আবার নতুন করে চালু করুন।
এই প্রক্রিয়ায় উইন্ডোজ কিংবা অন্য অপারেটিং সিস্টেমে ক্রোম ব্রাউজারের গতিতে ইতিবাচক ফল পেয়েছেন বলে অনেকেই সিনেটের প্রতিবেদনে মন্তব্য করেছেন। প্রযুক্তিবিষয়ক পরামর্শক রিক ব্রোডা বিষয়টি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন এবং ইতিবাচক ফল পাওয়ার দাবি করেছেন।

বৃহস্পতিবার, ১২ মার্চ, ২০১৫

কম্পিউটার বন্ধে দেরি হচ্ছে?

         কাজ শেষে কম্পিউটার বন্ধ (শাট ডাউন) করছেন কিন্তু বন্ধ হতে বেশি সময় নিচ্ছে। সাধারণত কম্পিউটার দ্রুতই বন্ধ হয়ে থাকে। কখনো দেখা যায় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় লাগছে কম্পিউটার বন্ধ হতে। কম্পিউটারের র্যা মে ডেটা মাত্রাতিরিক্ত হয়ে (ওভারফ্লো) পেজ ফাইলে নতুন ডেটা তৈরি করে এবং সেটি হার্ডডিস্ক ড্রাইভে অবস্থান নেয়। ফলে শাট ডাউন হতে সময় বেশি নেয়। যদি এটা শাট ডাউন হওয়ার আগেই পরিষ্কার করে নেওয়া যায় তাহলে কম্পিউটার বন্ধ হবে স্বাভাবিক সময়ের মধ্যেই।
শাট ডাউনের গতি দ্রুত করতে স্টার্ট মেনু Run চালু করুন। এখানে regedit.exe লিখে এন্টার করুন। এবার HKEY_LOCAL_MACHINE থেকে SYSTEM-এ গিয়ে CurrentControlSet-এ যান। এখানে Control থেকে Session Manager-এ ক্লিক করে Memory Management খুলুন। ডান পাশের তালিকা থেকে ClearPageFileAtShutdown-এ দুই ক্লিক করে খুলুন। এখানে Value Data ঘরে যদি ১ থাকে তাহলে সেটিকে মুছে ০ (শূন্য) লিখে ওকে করুন। যদি ০ থাকে তাহলে শুধু ওকে করে বের হয়ে আসুন। জেনে রাখা ভালো, পেজ ফাইল কম্পিউটারের নিরাপত্তার ব্যাপারগুলো প্রদর্শন করে। তাই বুঝে-শুনে কাজ করতে হয়। এ ক্ষেত্রে অন্য কোনো কাজ না করে সি-ক্লিনার সফটওয়্যার দিয়ে রেজিস্ট্রি এডিটর ক্লিন করে নিলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

আউটসোর্সিং কী করবেন, কী করবেন না..................



তথ্যপ্রযুক্তির আউটসোর্সিংয়ে এখন যুক্ত উল্লেখযোগ্য অনেক মুক্ত পেশাজীবী। সফলতা পেতে ফ্রিল্যান্সারদের কী করা উচিত আর কী করা উচিত নয়, তা জেনে নেওয়া যাক।


পরিচিতি বাড়াতে হবে

অনলাইন বাজারে (মার্কেটপ্লেস) প্রতিদিন নতুন কাজ আসছে। সেগুলোতে আবেদন করে কাজ পাওয়া যায়। পাশাপাশি আপনার নেটওয়ার্ক বাড়াতে হবে, পরিচিতি বাড়াতে হবে। একজন গ্রাহককে ভালো কাজ ও ভালো ব্যবহারের মাধ্যমে সন্তুষ্ট করতে পারলে তিনি তাঁর পরিচিতদের কাছে আপনার কাজের প্রশংসা করবেন, যা ভবিষ্যতে আরও কাজ পেতে সাহায্য করবে। গ্রাহক বা ক্লায়েন্টদের মাঝে মাঝে জিজ্ঞাসা করতে পারেন, তাঁদের কাছে নতুন কোনো কাজ আছে কি না কিংবা তিনি এমন কাউকে চেনেন কিনা যাঁর কাছে আপনার জন্য কাজ থাকতে পারে।

বিনা মূল্যে কাজ নয়

ফ্রিল্যান্সারদের জন্য এটা ‘মরণফাঁদ’। নিজের পাশাপাশি অন্য কর্মীদের পেশার ক্ষতি করছেন আপনি, যা কখনো করা যাবে না। মেধা খুবই মূল্যবান, সৃজনশীল শিল্পীদের কাছে তো বটেই। এটা মনে রাখতে হবে, কাজটি গ্রাহক নিজে করতে পারবেন না বলেই আপনাকে তাঁর প্রয়োজন। আপনার সময় এবং কাজ দুটোই মূল্যবান, এ বোধ যাঁদের নেই তাঁদের কাজ কখনো করতে যাবেন না।


সংগঠিত হতে হবে

আপনার নিজের বা প্রতিষ্ঠানের নামে প্যাড তৈরি করে নিন। যদি ক্লায়েন্ট ঠিক সময়ে মূল্য পরিশোধ না করেন, তাহলে চালানপত্র পাঠিয়ে দিয়ে মনে করিয়ে দিন। লজ্জা বা ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। কোনো নতুন কাজ শুরুর আগে গ্রাহককে সেই কাজের পূর্ণ বিবরণ ও কোনো নির্দিষ্ট মূল্যের মধ্যে আপনি ঠিক কী কী ও কতটুকু কাজ করবেন, তা জানিয়ে দিন। আপনার করা সৃজনশীল কোনো কাজ গ্রাহকের পছন্দ না-ও হতে পারে। স্বাভাবিকভাবেই তিনি সংশোধন চাইবেন। কাজ শুরুর আগে জানিয়ে দিতে হবে যে নির্দিষ্ট মূল্যের ভেতরে আপনি ঠিক কতবার কাজটি সংশোধন বা পরিবর্তন করে দেবেন। এর পরও কোনো পরিবর্তন চাইলে সে ক্ষেত্রে আপনার প্রতি ঘণ্টার কাজের জন্য নির্দিষ্ট অতিরিক্ত মূল্য নির্ধারণ করে দিন। গ্রাহক যেমন আপনার কাজ এবং অভিজ্ঞতা যাচাই করে দেখবেন, আপনিও তাঁর ব্যাপারে কিছুটা খোঁজ নিয়ে দেখুন। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে কাজ শুরু করে দিতে পারেন। মনে কোনো সন্দেহ থাকলে অবস্থা বুঝে কিছু টাকা অগ্রিম চাইতে পারেন।

সব কাজ করতে যাবেন না

দক্ষ হয়ে উঠলে সাধারণত কাজের অভাব হয় না। তাই বলে কি আপনি সব কাজ একসঙ্গে করতে পারবেন? ফ্রিল্যান্সাররা সাধারণত কাজের সুযোগ পেলে না বলতে চান না। কিন্তু এমন কাজে হাত দিলেন, যা ঠিক সময়ে ঠিকভাবে শেষ করতে পারবেন না, এতে আপনার সুনাম নষ্ট হবে। তবে কোন কাজটি করবেন কোনটি ছেড়ে দেবেন, তা ভেবেচিন্তে ঠিক করতে হবে। অর্থের পরিমাণ অবশ্যই খুব গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু শুধু তা দেখেই কোনো কাজ শুরু করে দেওয়া উচিত নয়। ভেবে দেখতে হবে কাজটি করতে কত সময় লাগতে পারে, সে সময় আমার হাতে আছে কি না, যে পরিমাণ অর্থ পাওয়া যাবে তা সেই সময়ের জন্য উপযুক্ত কিনা, অন্য কোনো শর্ত জুড়ে দিয়েছে কি না, ইত্যাদি। যদি কোনো কাজই উপযুক্ত মনে না হয়? কী করবেন? ভালো একটা বই নিয়ে পড়তে শুরু করুন, আনন্দও পাবেন, জ্ঞানও বাড়বে! কাজের জন্য ঘন ঘন আবেদন করুন ‘ঘরে বসে আয়’ কথাটা শুনে অনেকে ভেবে বসবেন না আয় বোধ হয় দরজায় এসে কড়া নাড়বে! নির্দিষ্ট কাজের দক্ষতা থাকতে হবে, নেটওয়ার্কিং বাড়াতে হবে, পেশাদারিত্বের পরিচয় দিতে হবে, সবই ঠিক আছে। এর পরও আপনাকে কাজের জন্য আবেদন করে যেতে হবে। একের পর এক, বারবার। বর্তমানে ফ্রিল্যান্স কাজের অনেক ওয়েবসাইট আছে, সেগুলোতে পর্যাপ্ত কাজও আছে। দরকার শুধু খুঁজে বের করা। এখানে কিছু নিয়ম মেনে চলতে পারেন। যেমন, আরএসএস ফিড তৈরি করতে পারেন, যেখানে আপনার জন্য উপযুক্ত কাজগুলো সংক্ষিপ্ত আকারে জমা হতে থাকবে। গুগল অ্যালার্ট (www.google.com/alerts) এ ক্ষেত্রে ভালো ফল দিতে পারে।


নিজের ওপর অসন্তুষ্ট হবেন না

সৃজনশীল মানুষদের ‘সমস্যা’ হলো তাঁরা নিজের মনের মতো করে সবকিছু তৈরি করেন, কিছুটা আবেগি হয়ে থাকেন। নিজের মেধা, চিন্তাশক্তি, সৃজনশীলতা তাঁর কাজের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলেন। কিন্তু এটা তো জরুরি না যে সবাই আপনার কাজ পছন্দ করবে। কিছু খারাপ মন্তব্য, কিছু সমালোচনা আসতেই পারে। মন খারাপ করা যাবে না, কিংবা গ্রাহককে গালিও দেওয়া যাবে না। এতে গ্রাহকের পাশাপাশি নিজের কাছেও আপনি ছোট হয়ে যাবেন। বরং তাঁদের মন্তব্য মেনে নিয়ে আরও ভালো কাজ করে নিজের যোগ্যতা প্রমাণের চেষ্টা করুন, যা আপনার মর্যাদা আরও বাড়িয়ে তুলবে। সবার কাছে, নিজের কাছেও।


কাজে আন্তরিক হতে হবে

কাজে অবশ্যই পেশাদারির পরিচয় থাকতে হবে। কিন্তু নিজের ব্যক্তিসত্তা ভুলে গেলে চলবে না। সব সময় ক্লায়েন্টের হ্যাঁ–র সঙ্গে হ্যাঁ না মিলিয়ে নিজের বক্তব্য সুন্দরভাবে তুেল করতে হবে। কারণ, গ্রাহক নিজে কাজটি পারেন না বলেই একজন বিশেষজ্ঞকে ওই কাজে নিয়োগ দিতে চান। নিজের ওপর বিশ্বাস থাকতে হবে।


Prothom Alo article.

আউটসোর্সিং বারবার করা ভুলগুলো.................

মানুষ কেন মুক্ত পেশাজীবী বা ফ্রি​ল্যান্সার হয়ে ওঠেন? অনেক উত্তর থাকতে পারে। তবে আন্তর্জাতিক ফ্রিল্যান্সারস অ্যাকাডেমির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই পেশা স্বাধীন, নিজের ইচ্ছেমতো কাজ করা যায়, ওপর থেকে চাপ দেওয়ার মতো কেউ নেই বলেই মানুষ ফ্রিল্যান্সিং বেছে নিচ্ছে। দ্বিমত পোষণ করার কোনো কারণ নেই, তবে কথাগুলো শুনতে যত সহজ মনে হোক, তত সহজ কিন্তু না। নিজের লক্ষ্য স্থির রাখতে হবে, নিজের সৃজনশীলতার পূর্ণ বিকাশ ঘটাতে হবে, সবচেয়ে বড় কথা—সফল হতে হলে প্রচুর পরিশ্রম করতে হবে। তবে ফ্রিল্যান্সিং পেশায় মানুষ বেশ কিছু ভুল করে, যা এড়িয়ে যেতে পারলে নিজের কাজটা অনেক সহজ ও উপভোগ্য মনে হতে পারে। এখানে তেমনি কিছু বারবার করা ভুলের কথা বলা হলো।
কম কাজ করা
স্বাধীন পেশা, মাথার ওপর ছড়ি ঘোরানোর কেউ নেই—খুবই ভালো কথা। কিন্তু এতে অনেক দায়িত্ব আপনার কাঁধে চলে আসে। কী কী সেবা দিচ্ছেন, সম্ভাব্য গ্রাহকদের কাছে তা প্রচার করা, নিজের দক্ষতা বাড়ানো, কাজ ও আয়ের হিসাব রাখা এবং সে অনুযায়ী নতুন কাজ খুঁজে বের করা—মোট কথা নিজেকে উদ্যোক্তা ভাবতে হবে, প্রচুর কাজ করতে হবে। অনেক ফ্রিল্যান্সার এই ভুলটা করে বসেন যে, সুযোগ পায়ে হেঁটে আমার ঘরে চলে আসবে।
যেকোনো কাজ শুরু করা
নিজের দক্ষতা অনুসারে যে কাজটি আপনার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সে কাজটি করার চেষ্টা করুন। কাজটি কেমন তা যেমন জানতে হবে, কাজটি যিনি করিয়ে নেবেন তাঁর সম্পর্কেও খোঁজখবর করে জেনে নিতে হবে। মোটকথা যেকোনো কাজ পেলেই শুরু করা যাবে না, রীতিমতো গবেষণা করে তবেই নতুন কাজে হাত দিতে হবে।
সর্বনিম্ন মূল্য নির্ধারণ করা
এই কাজটা নতুন ফ্রিল্যান্সাররা বেশি করে থাকেন। কাজ পাওয়ার জন্য এত মরিয়া হলে তো চলবে না। মনে রাখবেন এটা আপনার আয়ের একটা উৎস। তা ছাড়া কম মূল্য নির্ধারণ আপনার কাজের মান সম্পর্কে ক্লায়েন্টের মনে বিরূপ ধারণা তৈরি করতে পারে।
নিরাশ হয়ে পড়েন অনেকে
অন্যান্য কাজের মতো ফ্রিল্যান্সিং পেশায় বছরের পর বছর ধরে নিজেকে, নিজের দক্ষতার উন্নয়ন করে যেতে হয়। সফলতার জন্য অনেক কাজ করতে হয়। শুরুর দিকে অনেক বাধাবিপত্তি আসে, অনেক সময় এসব ছেড়ে নতুন কিছু করতে ইচ্ছা করে। এত সহজে হার মানা যাবে না।
জীবনের অন্যান্য দিক ভুলে যাওয়া
                 বাংলাদেশ ও পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে সময়ের এত পার্থক্য যে এখানে রাত তো ওখানে দিন। তার ওপর নিয়মিত আয় আসতে থাকলে অনেকে কাজে এত মগ্ন হয়ে পড়েন যে পরিবার-প্রিয়জনদের কথা ভুলে যান। এটা কখনোই করবেন না। নিজের জীবন, সে জীবনের সঙ্গে জড়িত মুখগুলোর গুরুত্ব আপনার কাছে সবচেয়ে বেশি হওয়া উচিত।
কাজের পর যোগাযোগ না করা
অনলাইন কাজের বাজারগুলোতে কাজ তো আছেই, তবে আগে কাজ করেছেন এমন কোনো গ্রাহকের কাজ করা বেশি ভালো। কারণ আপনি তাঁর সম্পর্কে জানেন। তাই কাজ শেষ হয়ে গেলেও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করবেন না। মাঝে মাঝে মনে করিয়ে দিতে পারেন। যদি তাঁর কাছে কাজ না থাকে তো আপনার সঙ্গে যোগাযোগের সম্ভাব্য সব রাস্তা তাঁকে জানিয়ে রাখুন।
সুসংগঠিত না হওয়া
চাকরির ক্ষেত্রে আপনাকে আপনার নিজের উন্নতির জন্যও প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেওয়ার লোক পাবেন। ফ্রিল্যান্সিং পেশায় নিজের অভিভাবক কিন্তু নিজেই। নিজেকে সুসংগঠিত করতে হবে। গ্রাহক কাজটি যেভাবে করতে বলবে সেভাবেই করতে হবে, পাশাপাশি আপনার মাথায় যদি আরও ভালো কিছু থাকে তো পরামর্শ দিতে ভুলবেন না।
যোগাযোগ না রাখা
কোনো কাজ শুরুর আগে কাজটি সম্পর্কে পুরোপুরি জেনে নিতে হবে। কোনো বিভ্রান্তি থাকলে চলবে না। কাজ শুরুর পরও গ্রাহক বা ক্লায়েন্টের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন, কাজটি ঠিকভাবে করছেন কি না....

বুধবার, ১১ মার্চ, ২০১৫

মানবিক গুনাবলি ভুলতে বসেছে মানুষ...............!

            পৃথিবীটা যদি শুধু ধণাঢ্যদের আবাসভূমি হত তবে নিশ্চিত করে বলা যায়, ধরণীটা এত সুন্দরভাবে সাজানো থাকত না । ধণীরা অর্থের বিনিময়ে নিজেদেরকে পরিপাটি করিয়ে রাখতে পারে কিন্তু নিজেদের ক্ষমতায় পরিপাটি হওয়ার ক্ষমতা তাদের নাই; অন্তত বর্তমান বিশ্বের ধণীদের জীবন-যাপন দেখে এমনটাই অনুমেয় । বৃত্তশালীদের সকাল থেকে শুরু করে ঘুমুতে যাওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত এমনকি ঘুমের সময়টাতেও সেবক-সেবিকার সাহায্য লাগে । ধণের মাপকাঠিতে ধণাঢ্যদেরও আবার রকমফের আছে । উচ্চ বৃত্তের, মধ্য বৃত্তের আবার কেউ উচ্চ-মধ্য বৃত্তেরসহ আরও কত কি। স্রষ্টাও তার সৃষ্টিতে এমন বৈচিত্র্য দিয়েছেন যাতে মানুষের দ্বারাই মানুষ পরিপূর্ণতা অর্জন করতে পারে। তবে পার্থক্য শুধু এটুকুই, মাত্র ৫ থেকে ১০ শতাংশ মানুষের জন্য পৃথিবীর অবশিষ্ট জনগোষ্ঠী দিনরাত পরিশ্রম করে চলছে। কেননা জন্মগতভাবেই এমনভাবে সম্পদের বন্টন নির্ধারণ করা হয়েছে যার গন্ডী ছাপিয়ে নবযাত্রার সূচনা করা আদৌ সম্ভব নয় ।
রাজা, জমিদার কিংবা বৃত্তশালীদের বংশধরেরা উত্তরাধিকারী সূত্রেই পদবী ও বিত্তের মালিক হচ্ছে অন্যদিকে প্রজাদের সন্তান জন্ম নিয়েই তাদের উর্ধ্ববংশের প্রভূদের সেবা যত্ন করার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে শুরু করে । পরিবার, সমাজ কিংবা রাষ্ট্র কাঠামোকে যুগ-যুগান্তর ধরে এমনভাবে সাজানো হয়েছে যার কারণে পূর্ব-শৃঙ্খলা থেকে বের হওয়ার পথ মোটেও প্রশস্থ নয় । তারপরেও যে কিছু ব্যতিক্রম পৃথিবীবাসী প্রত্যক্ষ করেনি তা নয় । কেউ পরিশ্রমের ফল স্বরূপ অলৌকিক সৌভাগ্যবশত কিংবা বাহু-শক্তি চর্চায় বীরের পরিচয় স্থাপন করে বৃত্তশালীদের কাতারে দাঁড়ায় কিন্তু তার সংখ্যা অতি সামান্য। স্রষ্টার সৃষ্টি রহস্যতেই যেহেতু কেউ আমীর আর কেউ ফকিরের সম্পর্কে যুক্ত কাজেই এখানে যুক্তি-তর্ক খুব বেশি সূফল দিতে ব্যর্থ । তবুও মানব ইতিহাসের প্রারম্ভ থেকে স্রষ্টা মানুষের মধ্যে এমন কতগুলো মানদন্ড নির্ধারণ করে দিয়েছে যার ফলে ধণ-দৌলতের অসীম পার্থক্য থাকার পরেও মানুষে মানুষে কোন বিভেদ কিংবা মর‌্যাদাগত পার্থক্য থাকার কথা নয় । যেখানে সঠিক ধর্মের স্পর্শ লাগেনি সেখানের জন্য ভিন্ন কথা । তবে যারা ধর্মকে ঐশ্বরিক বিধান বলে অস্বীকার করেছে তারাও মানুষের সম্মান ও সম-মর‌্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করেছে । তবে আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, যারা মানুষের সম-মর্যাদার স্লোগান তুলে বিশ্বের দরবারে সাড়া ফেলেছিল সেই তাদের পক্ষ থেকেই এ বিধান লঙ্ঘিত হয়েছে সবেচেয়ে বেশি । তাদের স্বার্থের কাছে কোন নীতিবাক্য জয়ী হতে পারেনি । স্বীকৃতভাবে শুধু হিন্দু ধর্মে মানুষের স্পষ্ট স্তর বিন্যাস রয়েছে (ব্রাক্ষ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র) এবং তাদের মধ্যে তা মান্য করার মানসিকতা থাকলেও বর্তমানে সকল ধর্মের মানুষ মানুষেরকে অর্থের মাপকাঠিতে বিবেচেনা করে মানুষকে সামাজিকভাবে বিভিন্ন স্তরের মর‌্যাদায় অধিষ্ঠিত করছে । বৃত্তশালীদের সীমানায় যেমন অর্থহীনের প্রবেশ নিষেধ তেমনি অর্থহীনদেরকে বৃত্তশালীরা মানুষ বলে বিবেচনা করার মানসিকতাও দিন দিন ত্যাগ করছে । আনুষ্ঠানিকভাবে পৃথিবীতে হয়ত দাস প্রথা পূণরায় ফিরে আসার সম্ভাবনা কখনও দেখা যাবে না কিন্তু বর্তমানে কিছু কিছু ক্ষেত্রে দাস প্রথার সমতুল্য কিংবা আরও জঘন্য কিছু ঘৃণ্য প্রথার অনু্প্রবেশ আবারও ঘটতে যাচ্ছে বলে পূর্ব লক্ষণ স্পষ্ট হতে শুরু করেছে । মানুষ যদিও দিন দিন সভ্যতার নাগাল পেতে ছুঁটছে তবুও বর্বরতা থেকে খুব বেশি পরিবর্তন হয়েছে বলে দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না ।
গত শতাব্দীতে সাম্য ও দ্রোহের কবি কাজী নজরুল ইসলাম মানুষের মধ্যে সৃষ্ট কৃত্রিম বিভেদ দেখে যেভাবে ঘোষণা করেছিলেন, ‘দেখিনু সেদিন রেলে, কুলি ব’লে এক বাবু সা’ব তারে ঠেলে দিল নিচে ফেলে ! চোখ ফেটে এল জল, এমনি ক’রে জগৎ জুড়িয়া মার খাবে কি দুর্বল’ ? তখনকার কবির অভিব্যক্তির সাথে বর্তমান বাস্তবতায় খুব বেশি পার্থক্য হয়েছে বলে স্বাক্ষী দেয়ার সৎ সাহস ধরাবাসী আজও সঞ্চয় করতে পারছে বলে বিশ্বাস নয় । দিনে দিনে মানুষের মধ্যে সম্পদের পার্থক্য যেমন বেড়েছে তেমনি বাড়ছে মর‌্যাদাগত দূরত্ব । যে দূরত্ব হয়ত কোনদিনই আর কমানো যাবে না । কারণ মানুষের মানবিক গুনাবলী ধীরে ধীরে ক্ষয়ে যাচ্ছে এবং এরা যেন যান্ত্রিক যন্ত্রে পরিণত হচ্ছে । সর্বব্যাপী এখন কেবল ধণ আহরণ ও সঞ্চয়ের প্রতিযোগিতা । যার ধণ আছে সে সমাজ ও রাষ্ট্রে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মর‌্যাদা পাচ্ছে । এক্ষেত্রে ধণবানের পেশা কিংবা নীতি-নৈতিকতা কোন বাধার সৃষ্টি করছে না । তাইতো কিছুটা বাস্তববাদীরা সাহস করেই উচ্চারণ করেছে, টাকাই দ্বীতিয় ঈশ্বর । সবার একটাই লক্ষ্য টাকা চাই, অঢেল টাকা । কিন্তু যারা জন্মগতভাবে কোটিপতি এবং যারা নিঃস্ব-এ দু’য়ের মধ্যে কি প্রতিযোগীতা চলে ? প্রতিযোগীতার নামে যা হয় তা অসম তবুও প্রতিযোগীতা হওয়া মন্দ নয় কিন্তু সমাজ ও রাষ্ট্র ধণী-দরিদ্র্যের মধ্যে এমনকতগুলো বৈষম্যের সৃষ্টি করে রেখেছে যার কারণে, ধণী আরও ধণের অধিকারী এবং গরীব আরও নিঃস্ব হবে ।

সম্মান ব্যক্তির নয় বরং পোশাকের-ফার্সী ভাষার বিখ্যাত কবি শেখ সাদী রচিত বিখ্যাত এ গল্পটি হয়ত আমরা সকলেই জানি । বর্তমানের বাস্তবতাও গল্পের ব্যতিক্রম নয় । ইসলাম ধর্মে মানুষের মধ্যে সাম্য ও ভ্রাত্বের কথা দৃঢ়ভাবে ঘোষিত হয়েছে । ইসলামের প্রাথমিক যুগে মানুষে মানুষে সাম্যতা ও ভ্রাত্বের নজিড় স্থাপিত হয়েছিল । ইসলামের সে বৈশিষ্ট্য দেখে দলে দলে মানুষ ইসলামের ছায়া তলে আশ্রয় নিয়েছিল । ভালো কাজ/নিয়ম নীতি পৃথিবীতে দীর্ঘস্থায়ী থাকে না । মানবতার মুক্তির দুত হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) প্রচারিত ইসলামের বয়স মাত্র কয়েকশ’ বছর পার হতে না হতেই ইবলিশ চরিত্রের মানুষ রূপী কিছু মুসলিম নামের মুখোশধারী ইসলামের অধিকাংশ মহৎ শিক্ষাকে স্বীয় হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য বদলে দেয়ার গভীর ষড়যন্ত্র করে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে সফলতাও পায় । আবারও রাজার দ্বারা প্রজার, মানুষরূপী প্রভূ দ্বারা সেবকের অধিকার লঙ্ঘিত হতে শুরু করে । তবে কিছু মানুষ প্রতি যুগেই ইসলামের পূর্ণ শিক্ষা নিয়ে ইসলামের হারানো আদর্শে ফিরে যেতে চেষ্টা করেছে বটে কিন্তু পূর্ণভাবে সফলতা পায়নি । গভীর ষড়যন্ত্র এবং স্বার্থপরদের অশুভ তৎপরতায় ইসলামের পূর্ণ আদর্শ বাস্তবায়ণ না হওয়ায় এখানেও মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে । তবুও অন্যান্য দিকের তুলনায় ইসলামে এখনও মানুষে মানুষে কিছুটা হলেও সাম্যতা আছে । আর কোথাও না হোক অন্তত নামাযের সাড়িতে দাঁড়ানোর সময় কে আমীর আর কে ফকির তার পার্থক্য থাকে না । ইসলামের এ মহান শিক্ষা মানুষের হৃদয়ে খুব বেশি সময় স্থায়ী হতে না দেয়ার জন্য একটি মহল ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে । মানুষের মনে জাগ্রত পশুত্ব ধর্মীয় মূল্যবোধ ও বিবেককে ঘুম পড়িয়ে রাখতে সদা জাগ্রত ।

যখন মানুষ মানুষকে অর্থের মানদন্ডে সম্মান দেখায় তখন প্রকৃত মানুষের খুব কষ্ট হয় । কিছু কিছু ক্ষেত্রে যার অর্থ আছে তার কাছে গিয়ে সম্বলহীনকে মাথানত করতে বাধ্য করা হয় এবং যিনি অর্থহীন তাকে সামান্য সম্মানটুকুও প্রদান করা হয় না । সম্বলহীনের সাথে সম্পদশালীর আচার-ব্যবহার দেখলে যেন মনে হয় চতুষ্পদ পশুর সাথে তার রাখাল আচরণ করছে । অর্থ হলেই মানুষ ভূলে যায় তার সব দায়িত্ব ও মানবতাবোধ । তখন আর গরীব ও অসহায় মানুষদেরকে মানুষ বলেই মূল্যায়িত করা হয়না অথচ এই অসহায় ও গরীব মানুষগুলো না থাকলে সঠিক ও ‍সুন্দরভাবে এক মূহুর্ত পার করার কি কোন সাধ্য ছিল ? দেশের পরিছন্নকর্মীরা যদি মাত্র দু’দিন তাদের দায়িত্ব পালন না করে তাহলে কি রাস্তায় বের হওয়ার সাধ্য থাকবে ? বৃত্তশালীরা ঘুম থেকে জাগার আগেই যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে দিনকে মানুষের জন্য স্বাভাবিক ও সুন্দরভাবে চলার জন্য সাবলীল করে দেয় সেই তাদের কথা কতটুকু ভেবেছি ? তাদের সাথে কি নিছক ভদ্রতাটুকুও দেখানো হয় ? মেথর, কুলি, মজুর, ঠেলাওয়ালা, রিকসাওয়ালা, তাঁতী, কামার, কুমোর, জেলে, মুচি, নাপিত, ধোঁপা, মিস্ত্রী, গৃহ-পরিচারিক, ড্রাইভার, হেলপার কিংবা সমজাতীয় পেশাজীবিদের সম্মান দিয়ে কতটুকু কথা বলা হয় ? সামাজিকভাবে এদের সম্মান কতটুকু ? কোন স্বার্থে কিংবা কার স্বার্থে এদের জন্য সমাজে সংকীর্ণ সীমানা নির্ধারণ করা হল ? বর্বর যুগে দাস-দাসীদের সাথে যেরূপ আচরণ করা হত তার চেয়ে খুব ভালো আচরণ কি এই সভ্য যুগে এদের সাথে করা হচ্ছে ? মানুষের সবচেয়ে বড় পরিচয় তারা সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। যোগ্যতা ও পেশাগত কারণে ক্ষণিকের জন্য কিছুটা পার্থক্য মেনে নেয়া যেতে পারে কিন্তু সে পার্থক্যকে স্থায়ী রূপ দেয়ার মানসিকতা নিশ্চয়ই ঘৃণিত বলেই বিবেচ্য হওয়া উচিত ।

প্রাচীন যুগের মহামতি দার্শনিক প্লেটো তার কল্পিত কল্যান রাষ্ট্রে সকল মানুষকে সম-মর‌্যাদা প্রদানের পরিকল্পনা করেছিলেন কিন্তু তখন তা বাস্তবায়ণ সম্ভব হয়নি । আজও হয়ত তা সম্ভব হবে না কিন্তু যতটুকু দরকার ততটুকু পরিবর্তন তো আনয়ণ করা যেতেই পারে । সে পরিবর্তন আমাদেরকেই আনতে হবে । এজন্য দরকার মানবিক গুনাবলির বিকাশের জন্য ছোটখাট বিপ্লবের । যে বিল্পব ঘুমন্ত বিবেককে জাগ্রত করার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে সাম্য-ভ্রাতৃত্ব পূণঃপ্রতিষ্ঠা করতে পারে । যেখানে রাজা-প্রজায় কোন ভেদাভেদ থাকবে না । সবার প্রথম পরিচয় হবে মানুষ তারপর দরকার হলে অন্যকিছু । শুধু সচেতনতার ও মানবিক আচরনের চর্চার মাধ্যমে এ পরিবর্তন আনা সম্ভব । ব্যক্তি প্রচেষ্টাতেই বিপ্লবের নব-দিগন্তের উম্মোচন হওয়া বাঞ্চনীয় । কবির মত আমরাও যেন বলতে পারি, ‘আসিতেছে শুভ দিন, দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা শুধিতে হইবে ঋণ’ ।
(collected)

Popular Posts