Recent post

শুক্রবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

বুঝেশুনে সন্তান মানুষ করছেন তো?

সন্তানের কাছে নানাভাবে প্রকাশ করুন আপনার স্নেহ। এটি তাকে নিরাপত্তাবোধ দেবে। মডেল: সাঁঝবাতি ও বুড়ি আলী। ছবি: অধুনা
 মডেল: সাঁঝবাতি ও বুড়ি আলী। ছবি: অধুনাশিশু

 সন্তানের কাছে নানাভাবে প্রকাশ করুন আপনার স্নেহ। এটি তাকে নিরাপত্তাবোধ দেবে।

বড় হয়ে কেমন মানুষ হবে? তার অনেকখানিই নির্ধারিত হয়ে যায় তার শৈশব ও কৈশোরেই। একটা বয়স পর্যন্ত মা-বাবা বাচ্চাকে অতিরিক্ত আহ্লাদ-আদর দেন। এরপর সন্তান যখন বয়ঃসন্ধির বয়সে পা দেয়, তখন থেকে শুরু হয় সমস্যা। মা-বাবা সন্তানের বয়সের নানা ধাপের সঙ্গে নিজেদের মানসিকতার পরিবর্তন করতে পারেন না অনেক সময়। মা-বাবার জন্য কিছু কথা—

কর্তৃত্বপরায়ণ সন্তানপালন
                 বাবা-মা সন্তানদের কঠিন নিয়ম-শৃঙ্খলে বড় করেন এবং সামান্য ত্রুটি-বিচ্যুতি হলেই শাস্তি দেন। এমন ক্ষেত্রে সন্তানেরা বড় হলে মানসিকভাবে হীনম্মন্য বা ভিতু প্রকৃতির হয়।
সন্তানের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করা
এ ক্ষেত্রে সন্তানের সঙ্গে বাবা-মায়ের মানসিক যোগাযোগ খুবই কম থাকে। শুধু সন্তানের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করা ছাড়া সময় একেবারেই দেন না। ছেলেমেয়েরা বড় হয় একা একা। কোনো রকম যত্ন ছাড়া। এ ধরনের ছেলেমেয়েরা নানাভাবেই বিপথগামী হতে পারে, মূল্যবোধের দৃঢ় ভিত্তি এদের গড়ে ওঠে না।
পারমিসিভ প্যারেন্টিং
               এ ক্ষেত্রে সন্তানের সঙ্গে বাবা-মায়ের দৃঢ় মানসিক যোগাযোগ থাকে। এ ক্ষেত্রে একধরনের সতর্ক দৃষ্টির মাধ্যমে শিশু স্বাধীনভাবে বেড়ে উঠতে পারে। এতে বাচ্চারা আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে বড় হয়।
সন্তানকে বুঝতে দিন আপনার শর্তহীন ভালোবাসা। সন্তানকে আপনার অবাধ ভালোবাসার উষ্ণতা একধরনের গভীর নিরাপত্তাবোধ দেবে। নিরাপত্তার এই বোধ তাকে পরবর্তী জীবনে সম্পর্ক স্থাপন বা চলার পথে নানা সমস্যা দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে সাহায্য করবে। নানাভাবে প্রকাশ করুন আপনার আদর, স্নেহ।
কোন আচরণে মনোযোগ দেবেন?
          মনোবিজ্ঞানের একটা নিয়ম হলো, অন্যের যে আচরণে আমরা মনোযোগ দেব, সে আচরণ আরও উৎসাহ পাবে এবং পুনরায় করবে। এই মনোযোগ সন্তানের আবদার পূরণ বা প্রশংসাসূচক কথা বলার মাধ্যমে যেমন হতে পারে, তিরস্কারের মাধ্যমেও হতে পারে। ফলে সন্তানের যে আচরণ আপনার কাছে গ্রহণযোগ্য বা কাঙ্ক্ষিত নয়, সেটা সম্পূর্ণ উপেক্ষা করুন। আপনার ক্রমাগত উপেক্ষা তার অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ কমিয়ে আনবে।
তবে আচরণ যদি অতিরিক্ত অগ্রহণযোগ্য হয় (যেমন বেয়াদবি করা, কথা একেবারেই না শোনা, ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করা) ইত্যাদির ক্ষেত্রে শাস্তির বদলে তার প্রাপ্য সুবিধা (যেমন আদর করা, যত্ন করা, কথা বলা, উপহার দেওয়া) ইত্যাদি সাময়িকভাবে কমিয়ে দিন।
কাঙ্ক্ষিত আচরণ
             সন্তান যখন কাঙ্ক্ষিত আচরণ বা ভালো কাজ করবে, সেটা যত সামান্যই হোক, সেটাতে সঙ্গে সঙ্গে মনোযোগ দিন (যেমন প্রশংসা করা, আদর বাড়িয়ে দেওয়া ইত্যাদি)। আপনার সামান্য প্রশংসা তার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেবে। ভালো আচরণগুলো আরও বেশি বেশি করার উৎসাহ পাবে।
আচরণের সামঞ্জস্য
             সন্তানের সামান্য যেকোনো বিষয়ের বাবা-মায়ের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ একই রকম থাকবে। শুধু তা-ই নয়। এমন প্রতিশ্রুতি কখনো সন্তানকে দেবেন না, যা আপনি রাখতে পারবেন না। যেকোনো অসামঞ্জস্যতায় সন্তান বিভ্রান্তির মধ্যে বড় হয়। ঠিক-বেঠিকের ধারণা তার সঠিকভাবে হয় না। নৈতিক মূল্যবোধের ভিত্তি হয় দুর্বল, যা ভবিষ্যতে নেতিবাচক প্রভাব পরিবার ও সমাজে সুদূরপ্রসারী।
কোনো কিছুতেই জবরদস্তি নয়
          ‘চাপ’ দিয়ে কোনো কিছু সাময়িকভাবে আদায় করা গেলেও সেটা মূলত দীর্ঘস্থায়ী হয় না। বরং সেটার প্রতি একধরনের বিরক্তিভাব তৈরি হয়। শিশুদের ক্ষেত্রেও এমনটা হয়। অনেক ক্ষেত্রে অতিরিক্ত জবরদস্তির জন্য ধীরে ধীরে যেমন বাচ্চাদের পড়ালেখার আগ্রহ কমে যেতে পারে, তেমনি চাপাচাপির কারণে শিশুদের খাওয়ার আনন্দও নষ্ট হয়ে যায়। শিশুকালে পড়াশোনায় ভালো ফলাফল করার চেয়ে বইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করার জন্য সুযোগ দিন।
খেলাধুলা
            যেসব খেলায় শারীরিক পরিশ্রম, সেসব খেলা শুধু শরীরের জন্যই জরুরি নয়, মানসিক বিকাশের জন্যও প্রয়োজন। খেলার মাধ্যমে একজন শিশু আরেকজন শিশুর মানসিক গঠনের সঙ্গে পরিচিত হতে পারে। বন্ধুত্ব ও সামাজিকভাবে মেলামেশার দক্ষতা তৈরি হয়। খেলার মাধ্যমে ছোটখাটো ঝগড়া-বিবাদ বা ঝামেলা সামলানো শেখে। এ অভিজ্ঞতা তার ভবিষ্যৎ জীবনের নানা সমস্যা মোকাবিলা করতেও সাহায্য করবে।
মোবাইল বা কম্পিউটার গেমে নিরুৎসাহিত করা
          মোবাইল বা কম্পিউটার গেমে একধরনের আসক্তির উপাদান থাকে। এসবে অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা শিশুকে চারপাশের সামাজিক জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন রাখে। তবে একেবারে নিরুৎসাহী না করতে চাইলে কম্পিউটার বা মোবাইল ব্যবহারে সময় বেঁধে দিন।
সমালোচনা নয়
         কঠিন তিরস্কার, সমালোচনা করা কিংবা অন্য শিশুদের সঙ্গে তুলনা করা ইত্যাদি তাদের আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেয়। বেড়ে ওঠার সময় শিশুর নিজের প্রতি ধারণা অনেকখানি তৈরি হয় বাবা-মা তাকে কীভাবে দেখছেন, তার ওপর। সুতরাং কোনো কাজ অপছন্দ হলে কঠোর সমালোচনা না করে অল্প কথায় আপনার অপছন্দ স্পষ্ট করে জানান।
ব্যর্থতা মেনে নিতে শেখান
        একটা কথা মনে রাখতে হবে, আপনার অসীম নিরাপত্তার ছায়ায় আস্তে আস্তে বড় হওয়া আদরের সন্তানটিকে বড় হওয়ার পর অবশ্যম্ভাবীভাবেই জীবনের নানা জটিল পথ পার হতে হবে। সফলতার সঙ্গে সঙ্গে নানা ব্যর্থতাও তার জীবনে আসবে। শিশুর বর্তমানের ছোটখাটো ব্যর্থতা স্বাভাবিকভাবে নিন এবং তাকে সহজভাবে মেনে নিতে শেখান। এ ছাড়া শিশুর চাহিদার সবটাই সব সময় পূরণ করার প্রয়োজন নেই। জীবনে আমরা যা চাই, যেভাবে চাই তার কিছু ঘটবে, কিছু ঘটবে না—এই সত্য, এই বোধ সে আপনার কাছ থেকেই একটু একটু করে জানবে।

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ

সহকারী অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা

স্বামী–স্ত্রীর গোপন কথা



দাম্পত্যে অতি গোপনীয়তা বিব্রতকর ও বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। মডেল: অবাক ও অর্পিতা। ছবি: সুমন ইউসুফ

             
মডেল: অবাক ও অর্পিতা। ছবি: সুমন ইউসুফ


দাম্পত্যে অতি গোপনীয়তা বিব্রতকর ও বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।


সংসারে অনেক সময় কিছু কথা স্বামী গোপন রাখেন। কিছু কথা স্ত্রীও। দীর্ঘদিনের দাম্পত্য জীবন পার হয়েও মনের গভীরের গোপন কথাটি হয়তো জানা হয় না। এই গোপনীয়তা দাম্পত্যের জন্য ভালো নাকি খারাপ?
গোপন কথাটি সব সময় রয় না গোপনে। তা নিয়েই টানাপোড়েন, সংসারে অশান্তি, বিবাদ-কলহ। কাছের সম্পর্কের মধ্যে অতি গোপনীয়তা হলো নীরব বিষ। দীর্ঘদিনের গোপন কোনো বিষয় যখন চলে আসে প্রকাশ্যে, তখন তা নানামুখী জটিলতার সৃষ্টি করে। এটা অস্বীকারের উপায় নেই, গোপনীয়তার পর্দা একদিন না একদিন সরে যাবেই—আড়াল ভেঙে বেরিয়ে আসবে সত্য।
পরিবারে কত গোপন কথা বা সম্পর্কই না থাকে! স্বামী-স্ত্রী, মা-মেয়ে-ছেলে, ভাইবোনের মধ্যেও নানা রকম গোপনীয়তার দেয়াল থাকে। এই বন্ধনগুলো ছোট হলেও এর জের চলে জীবনভর।
মানবমন বড় রহস্যময়। নারী-পুরুষ সবার জীবনেই কিছু স্মৃতি থাকে একান্ত গোপনীয়। কিছু ইচ্ছা থাকে গোপনীয়। কিছু দুঃস্বপ্ন থাকে গোপনে। ঘটে যাওয়া অতীত কাহিনি গোপন রাখেন অনেকে। এসব জানাজানি হলে প্রতিক্রিয়া কেমন হবে, সেটি ভেবে জানাতে চান না। কারও হয়তো গভীর বাল্যপ্রেমের ঘটনা আছে। বিয়ের পরও স্বামী বা স্ত্রীকে তা বলা হয় না। বছরের পর বছর সেই গুরুভার বয়ে বেড়াতে হয়। এই গোপনীয়তা বয়ে বেড়ানো বড় কষ্টের। বড় উদ্বেগের। প্রেম, পরকীয়া—সম্পর্কগুলো আদিকাল থেকেই সবাই লুকিয়ে-চুরিয়ে চালিয়ে আসছে। এসব নিয়ে ঢাক গুড়গুড় চলতেই থাকে। এটা আমাদের এবারের আলোচ্য বিষয় নয়। এ সম্পর্কের বাইরেও যে কিছু লুকোচুরির সম্পর্ক চলে, তা সবাই মানেন কি? একটু দ্বিধায় পড়ে গেলেন? কী সেই সম্পর্ক, যা অনৈতিক সম্পর্কের চেয়েও জটিল?
স্বামী-স্ত্রী দুজনে এলেন একসঙ্গে। স্বামীর আয়ে সংসার চলে। অনেক দিন তাঁরা বিদেশে ছিলেন। দুই ছেলে মেয়ে। বছর দুয়েক হলো দেশে স্থায়ী হয়েছেন। আর বিদেশে যাবেন না। স্ত্রীর কথা হলো তাঁদের এখন পর্যন্ত নিজস্ব কোনো ফ্ল্যাট নেই। বাচ্চাদের পড়ার খরচ অফিস বহন করে। নিজেদের জন্য কিছু করার তাগিদ দিচ্ছেন স্বামীকে। কিন্তু সে ব্যাপারে কোনো আগ্রহ নেই স্বামীর। ভাবখানা যেন স্ত্রী কোনো বিচিত্র আবদার করেছেন। অফিস থেকে এসে পত্রিকা পড়েন। ভাত খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। বাচ্চা বা স্ত্রীর কোনো রকম খবর নেন না। অথচ তিনি তাঁর ভগ্নিপতির ব্যবসার সব পুঁজি বিনিয়োগ থেকে শুরু করে দেশের বাড়িতে দালানকোঠা সবই বানিয়ে দিয়েছেন। এ ব্যাপারে স্ত্রীর সঙ্গে কোনো রকম আলোচনার প্রয়োজন মনে করেননি। নিজের দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে কোনো ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাও নেই। আর স্ত্রীর কথা তো বাতিলের খাতায়। সব সম্পত্তি বাবা-মায়ের নামে। যা আইনমতে সব ভাইবোন ভাগ পাবেন। তাহলে এত কষ্ট করে বিদেশে থেকে আমাদের কী লাভ হলো?
দাম্পত্যে অতি গোপনীয়তা বিব্রতকর ও বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। মডেল: অবাক ও অর্পিতা। ছবি: সুমন ইউসুফদাম্পত্যে অতি গোপনীয়তা বিব্রতকর ও বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। মডেল: অবাক ও অর্পিতা। ছবি: সুমন ইউসুফচেম্বারে স্ত্রী যখন কথাগুলো বলছিলেন, আমি স্বামীর দিকে তাকালাম। তিনি নিশ্চুপ। জানা গেল, বছরের পর বছর বিষয়গুলো তিনি স্ত্রীর কাছে গোপন রেখেছেন। সন্তানেরা ছোট ছিল। তাদের কিছু জানানোর দরকার মনে করেননি।
অবশেষে যখন জানাজানি হলো, তখন অনেক পানি গড়িয়ে গেছে। স্ত্রী যেমন সব সত্য জেনে বিষণ্ন, বিপন্ন। সন্তানেরাও বাবার ওপর আস্থাহীনতায় ভুগছে। বেচারা ভদ্রলোকও মনঃপীড়ায় ভীষণ কাতর। তাঁর আয়-উপার্জনে গড়ে তোলা সম্পদ হাতছাড়া। ব্যবসায় তাঁর ভাগ নেই। ভগ্নিপতি যখন নিজের আখের গুছিয়ে নিয়েছেন, তখন তিনি রীতিমতো মানসিক রোগী।
ফরাসি নাট্যকার জঁ র্যা কিনে (১৬৩৯-১৬৯৯) কয়েক শতক আগেই বলে গেছেন, সংসারে কোনো গোপন ঘটনাই গোপন থাকে না। সময় একদিন সবকিছুর খোলামেলা করে দেয়। তখনই বাধে হুলুস্থুল।
মার্কিন কথক, লেখক, মনোশীলনকারী আইয়ানজা ভ্যানজান্টও সতর্ক করতে বাকি রাখেননি। তাঁর ভাষায় ‘ফ্যামিলি সিক্রেটস’ যত গোপন সিন্দুকে বন্দী করে রাখবেন, কোনো লাভ নেই। একদিন তা ব্যাপক ধংসলীলা চালাবেই।
কিন্তু এসব হুঁশিয়ারি কতটাই বা মানা যায়। ঘর-সংসারে নিবেদিত নারীর বিপদ অনেক সময় দ্বিধারি তলোয়ারের মতো। কোনো কোনো নারী স্বামী ও শ্বশুরবাড়িকে না জানিয়ে বাবার বাড়ির আত্মীয়স্বজনকে গোপনে সহায়তা করে থাকেন। এমন অভিযোগ কম নয় সংসারে। কিন্তু তাতেও কি ঝামেলা কম!
স্বামীকে না জানিয়ে একজন স্ত্রী ছোট ভাইবোনদের পড়ালেখার জন্য বাবার বাড়িতে টাকা পাঠাতেন। উৎসব পার্বণের খরচ, স্কুল-কলেজের বেতন সবই তিনি গোপনে মেটাতেন। জামাই বাড়ি থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আসে—তাই শ্বশুরবাড়িতে জামাইয়ের ছিল ব্যাপক কদর। তাঁকে নানা সময় নিমন্ত্রণ করে আদর-যত্ন করা হতো। কিন্তু একদিন বড় ধরনের ধাক্কা খেলেন এই গোপন উপকারী নারী। জানা গেল, তাঁর আপন ছোট বোনের সঙ্গে স্বামীর অতি অন্তরঙ্গ সম্পর্ক। তাঁরা সবার অজান্তে বিয়েও করতে চলেছেন। নিয়ম অনুযায়ী এমনটা ঘটলে তাঁকে তালাক নিতে হবে। বাবা-মাকে জানিয়ে কোনো লাভ হচ্ছে না। তাঁরা জামাই বলতে অজ্ঞান। কিছু শুনতে তাঁরা নারাজ। গোপনীয়তার নানামুখী ঘনঘটা তাঁকে গভীর বিষণ্নতায় ঠেলে দিয়েছে।
এই গোপন গোপন খেলা বড়ই বিব্রতকর। বিপজ্জনকও বটে। এসব ঘটনা বর্তমানকে যেমন তিক্ত ও বিষময় করে তোলে, তেমনি ভবিষ্যৎকে করে তোলে অনিরাপদ। পরম্পরায় ছড়িয়ে পড়ে নীরব সংক্রমণ। সন্তানদেরও ভুগতে হয়। তারা যখন বড় হয়, ওই জটিল মনোকাঠামো থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না অনেকে।
আমার এক ভারতীয় মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বন্ধুর কথা এখানে বলা প্রাসঙ্গিক। তার কথা, সংসার তো কুরুক্ষেত্র নয়। সংসার কূটকচালি শেখার স্কুলও নয়। অথচ আমরা গোপনীয়তার ঘনঘটায় সংসারকে ঘনচক্কর বানিয়ে ফেলছি। নিজেকে ঠকাচ্ছি। সন্তান-পরিবার সবাইকে ঠকাচ্ছি। যে ঘটনা ছিল তিল পরিমাণ, তার ওপর গোপনীয়তার নানা চাদর চাপিয়ে একসময় তাকে তাল বানিয়ে ফেলছি। গোড়াতে তা সবার সঙ্গে কথা বলে হয়তো সহজেই মেটানো যেত, কিন্তু যত দেরি ততই তা দুরারোগ্য ব্যাধি হয়ে উঠছে।
আখেরে গোপন কখনোই থাকে না গোপন। মার্কিন চরিত্র পরামর্শক মাইকেল জোসেফসনের কথা বলি, গোপনীয়তা-বিদ্ধ সম্পর্ক, গোপন কথা শুধু আমাদের অসুখীই করে না। আচরণকে বিষময় করে। বোধকে বিপন্ন করে। জীবনকে শরশয্যা করে।
তাঁর মতে, অতি সহজেই এই ব্যাধি থেকে মুক্তি সম্ভব। তা হলো, গোপনীয়তার বন্দিশালা থেকে মনকে মুক্তি জবানকে মুক্তি।
যা করণীয়
*স্বামী-স্ত্রীর বন্ধন হবে পরম বিশ্বাসের। বন্ধুত্বপূর্ণ, শেয়ারিং ও কেয়ারিং টাইপের। একসঙ্গে থাকতে গেলে ঠোকাঠুকি লাগবেই। এ জন্য নিজেকে সরিয়ে নেওয়া, লুকোচুরি খেলা ঠিক নয়।
*সন্তানের দায়িত্ব বাবা-মা দুজনের। ছেলেমেয়ের সঙ্গে আচরণের সমতা রাখতে হবে। কাউকে বেশি ভালোবাসতে গিয়ে পরিবারে অন্য সদস্যদের প্রতি দূরের জনসুলভ আচরণ কাম্য নয়। স্বামী-স্ত্রী দুজনে মিলে সময় নিয়ে আলোচনা করুন সন্তানদের ভালোমন্দ, সুযোগ-সুবিধা নিয়ে।
*সবার নিজ নিজ ভাইবোন, বাবা-মায়ের প্রতি দায়িত্ব আছে। এ ক্ষেত্রে যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী করতে হবে। স্বামী-স্ত্রী দুজনের এ বিষয়ে একমত হওয়াটা জরুরি। আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজে পুরুষের আয়েই সংসার চলে। ভাবটা এমন, যেহেতু টাকাটা থাকে পুরুষের হাতে, তা দিয়ে তিনি ইচ্ছামতো সংসার চালাবেন। কারও ভালো লাগা মন্দ লাগা গুরুত্ব দেবেন না। এটা ঠিক নয়। এখন নারীর আয়-উপার্জনও যুক্ত হচ্ছে সংসারে।
*কোনো কিছুই গোপন করা ঠিক নয়। সব সদস্যকে ঘিরেই দায়-দায়িত্বের সংসার। কাউকে অবহেলা নয়। আবার অহেতুক অতি গুরুত্বও নয়। যখনই স্বাভাবিক আচরণ থেকে বিচ্যুতি, তখনই গোপনীয়তার আড়ালের বিষয়টি আসে।
*সংসারে নানা দায়িত্ব পালন করবেন নারী পুরুষ। সেটাই স্বাভাবিক। সবকিছু এমনভাবে করা উচিত, যা নিজের কাছে, সংসারের অন্য সদস্যদের জ্ঞাতসারেই হয়।



সহযোগী অধ্যাপক, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা

লম্বা চুল চাই?

ধৈর্য ধরে যত্ন নিন, তবেই পাবেন লম্বা চুল। মডেল: শ্রাবণ্য, ছবি: নকশা

                                                                                          ধৈর্য ধরে যত্ন নিন, তবেই পাবেন লম্বা চুল। মডেল: শ্রাবণ্য, ছবি: নকশাচুল লম্বা করতে চাইছেন? কিন্তু রাতারাতি তো তা বাড়বে না। ধৈর্য ধরতেই হবে, আর সেই সঙ্গে সঠিক যত্নও নিতে হবে।
চুলের আগা ফেটে গেলে তা কেটে ফেলতে হয়। কারণ, আগা ফাটা থাকলে চুল তাড়াতাড়ি বাড়ে না। আবার চুল ঝরতে থাকলেও তার বৃদ্ধি হয় না। তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চুলের যত্ন নিতে এবং পুষ্টিকর খাবার খেতে। তবেই চুল সুস্থ থাকবে, আর লম্বা হবে।
ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চর্মরোগ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক রাশেদ মোহাম্মদ খান জানালেন কী কী কারণে চুল পুষ্টিহীন হয়ে যায় এবং ঝরতে থাকে।
  • হরমোনের সমস্যা থাকলে চুল পড়তে পারে। এমন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
  • প্রোটিন ও ভিটামিন জাতীয় খাবার না খেলে চুল পুষ্টি পায় না।
  • অতিরিক্ত হারে খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করলে (ক্রাশ ডায়েট) চুল ঝরে।
  • সময়মতো ও পরিমাণমতো না ঘুমালে চুল পড়ে।
  • চুলে অতিরিক্ত মাত্রায় তাপ (হিট) দিলে আগা ফেটে যায় বা চুল ভেঙে পড়তে থাকে। ফলে চুল বাড়ে না।
  • খুব বেশি ক্লান্তিও চুল পড়ার কারণ।
রাশেদ মোহাম্মদ খান পরামর্শ দিলেন সবজি, ফল, মাছ, মাংস, ডিম, দুধ অর্থাৎ আঁশ ও প্রোটিনযুক্ত খাবার বেশি খেতে, যেন চুল পুষ্টি পায়।
একই কথা বললেন হারমনি স্পার রূপবিশেষজ্ঞ রাহিমা সুলতানা। তিনি বললেন, বাইরে ও ভেতর দুই দিক থেকেই চুলের যত্ন নিতে হয়। অর্থাৎ পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত যত্নও নিতে হবে চুলের। ডিম, দুধ, ছোট মাছ, ওমেগা–৩ যুক্ত সামুদ্রিক মাছ, আমলকী ও ভিটামিন ‘ই’ যুক্ত খাবার চুলে পুষ্টি জোগাতে সবচেয়ে উপকারী। সপ্তাহে অন্তত এক দিন তেল মালিশের পর চুলে প্যাক লাগাতে পারেন। তবে চুলের গোড়া মজবুত রাখার জন্য সপ্তাহে তিন দিন নিয়ম করে তেল মালিশ করুন। যাদের চুলে খুশকি বা মাথায় ফুসকুড়ি আছে, তাঁরা নারকেল তেলের সঙ্গে এক চিমটি কর্পূর মিশিয়ে নিতে পারেন।
রাহিমা সুলতানা বলেন, চুল সুস্থ থাকলে তবেই না তা বৃদ্ধি পাবে। আর চুল সুস্থ রাখার জন্য কিছু ঘরোয়া প্যাকের উপায়ও বলে দিলেন তিনি।
  • ডিম, টক দই, মেথি ও পাকা কলার প্রোটিন প্যাকটি চুলের জন্য বেশ ভালো।
  • টকদইয়ের সঙ্গে ত্রিফলা (আমলকী, হরীতকী, বহেরা) মিশ্রণ চুল পড়া রোধ করে।
  • আমলকীর রস চুলের জন্য ভালো। চাইলে এর সঙ্গে ঘৃতকুমারী (অ্যালোভেরা) মিশিয়ে নিতে পারেন। এতে চুল নরম হবে আবার কন্ডিশনারের কাজও করবে।
  • পেঁয়াজের রস কখনোই সরাসরি চুলে লাগাতে হয় না। পেঁয়াজের অ্যাসিড চুলের ক্ষতি করতে পারে। তাই এর সঙ্গে মেথি ও টকদই মিশিয়ে প্যাক তৈরি করতে পারেন।
  • শুষ্ক বা রুক্ষ চুলে দুধ ও মধুর প্যাক লাগাতে পারেন।
  • সপ্তাহে এক দিন যেকোনো একটি প্যাক মাথায় লাগাতে পারেন। ৩০ মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। রিঠা পানিতে ভিজিয়ে রেখে সেই পানি দিয়ে চুল ধুয়ে নিতে পারেন, শ্যাম্পুর পরিবর্তে। কন্ডিশনার হিসেবে মেথি গুঁড়া দুই থেকে তিন ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। অথবা লেবুর রস, চায়ের লিকার ও পানি একসঙ্গে মিশিয়ে কন্ডিশনার তৈরি করে নিতে পারেন।
  • https://www.youtube.com/channel/UCnP1SKT1Gj9TfgSald0ugXg

Popular Posts