Recent post

সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৯

দিলের মালিক দিলওয়ালা



শিরোনামঃ দিলওয়ালা
শিল্পীঃ আশিক
সুরকারঃ জাবেদ আহমেদ কিসলু
গীতিকারঃ রাজিব আহমেদ

দিলের মালিক দিলওয়ালা
দিল দিলি তুই দিলদার দিলি না,
আমায় ভালোবাসার মন দিলি তুই
মনের মানুষ আজো দিলি না ।।


দিলের কথা দিলি শুনে
দিলের বেতা দিলি জানে,
দিল দিওয়ানা হইলাম আমি
দিলদারের দেখা পাইলাম না,
দিল দিলি তুই দিলদার দিলি না
আমায় ভালোবাসার মন দিলি তুই
মনের মানুষ আজো দিলি না ।।

দিলের জখম হতেই থাকে
দিলের মলম দিলেই কি তাতে,
দিল আশিকানা হইলাম আমি
দিলদারের খোজ পাইলাম না,
দিল দিলি তুই দিলদার দিলি না
আমায় ভালোবাসার মন দিলি তুই
মনের মানুষ আজো দিলি না ।।

বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৯

Dure ure jaoa pakhir moto



dure...
ure jaoa pakhir moto
ami pakhi hobo ure jabo
bohu dure
veshe berano megher moto
ami megh hobo
veshe jabo
konodur desher e durer pother bristi hobo
rongdhonu hoye abr tomay dekha debo
dekho hariye jai
dur ojanay
pothe jodi dekha hoy
tumi chinbe ki amay
ami hariye jai
dur ojanay
pothe jodi dekha hoy
tmi chinbe ki amay

megher golpe amay khujhbe
kolponay debe hatchani
hariye jaoar nei j mana
sotto mitthe sob jani
megher golpe amay khujhbe
kolponay debe hatchani
hariye jaoar nei j mana
sotto mitthe sob jani
rupkothar e velay chore sopno debo
jochona chorano raat a dekha debo
dekho hariye jai
dur ojanay
pothe jodi dekha hoy
tmi chinbe ki amay?
ami hariye jai
dur ojanay
pothe jodi dekha hoy
tmi chinbe ki amay?

dure ure jaoa pakhir moto

ami pakhi hobo ure jabo...

একদিন স্বপ্নের দিন




একদিন স্বপ্নের দিন, বেদনার বর্ণ বিহীন
এ জীবনে যেন আসে এমনি স্বপ্নের দিন
সেই ভাবনায়, ভাবি মনে হয়, 
দুটি নয়নেতে ঘোর বর্ষা নামে
আসেনা ফাগুন, মনেতে আগুন,
এমন বিরহ জালায়, 
সৃতির মেলায়, কাটেনা আর দিন 
একদিন হঠাৎ হাওয়া থামিয়ে আসা যাওয়া
প্রশ্নের জাল বুনে সুরু হয় চাওয়া পাওয়া
আজ সুধু পথ চাওয়া, বিরহের গান গাওয়া
ভাবনার নদী বুকে, উজানেতে তরী বাওয়া
সুধু সে গান ভোলে অভিমান, 
চোখে অকারণ, ঘোর বর্ষা নামে 
যদি এ পথ ধরে, 
আমার এ মনের ঘরে, 
চিঠি হয়ে অগোচরে, 
আসে কেউ চুপিসারে 
চাদের ঐ আলো হয়ে, 
আস মোর ভাঙ্গা ঘরে, 
দেখা যায়, যায়না ছোঁয়া, 
যেন গান চাপা স্বরে

বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৯

সূর্যগ্রহণ শেষবার পৃথিবীর মানুষ দেখেছিল ১৭২ বছর আগে

বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) সারাবিশ্ব এমন এক সূর্যগ্রহণ দেখবে যা শেষবার পৃথিবীর মানুষ দেখেছিল ১৭২ বছর আগে। 
এ সূর্য গ্রহণের সময় সূর্যের চারপাশে থাকবে এক আগুনের বলয়।
 বিজ্ঞানীরা যাকে বলেন ‘রিং অব ফায়ার’।

তাই এ সূর্যগ্রহণ দেখার জন্য অনেকে প্রস্তুতি নিচ্ছে। কেউ কেউ বিশেষ গ্লাস কিনে রাখছে। মনে হচ্ছে যেন ঈদের সূর্য উঠবে।
অধিকাংশ সময়ই আমাদের দেশের মানুষেরা অত্যন্ত আনন্দ আর কৌতুহল নিয়ে সূর্যগ্রহন এবং চন্দ্রগ্রহন প্রত্যক্ষ করে থাকে। অথচ বিষয়টি আনন্দের নয়, ভয় ও ক্ষমাপ্রার্থনার।

সূর্য ও চন্দ্র যখন গ্রহনের সময় হয় তখন আমাদের নবীর (সা.) চেহারা ভয়ে বিবর্ণ হয়ে যেতো। তখন তিনি সাহাবীদের নিয়ে জামাতে নামাজ পড়তেন। কান্নাকাটি করতেন। আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতেন
আরবীতে সূর্যগ্রহণকে ‘কুসূফ’ বলা হয়। আর সূর্যগ্রহণের নামাজকে ‘নামাজে কুসূফ’ বলা হয়।

দশম হিজরীতে যখন পবিত্র মদীনায় সূর্যগ্রহণ হয়, রাসূল (সা.) ঘোষণা দিয়ে লোকদেরকে নামাজের জন্য সমবেত করেছিলেন। তারপর সম্ভবত তার জীবনের সর্বাধিক দীর্ঘ নামাজের জামাতের ইমামতি করেছিলেন। সেই নামাজের কিয়াম, রুকু, সিজদাহ মোটকথা, প্রত্যেকটি রুকন সাধারণ অভ্যাসের চেয়ে অনেক দীর্ঘ ছিলো।

অবিশ্বাসী বিজ্ঞানীরা প্রথমে যখন মহানবীর (সা.) এ আমল সম্পর্কে জানতে পারলো, তখন তারা এটা নিয়ে বিদ্রুপ করলো (নাউযুবিল্লাহ)। তারা বললো, এ সময় এটা করার কি যৌক্তিকতা আছে?

সূর্যগ্রহণের সময় চন্দ্রটি পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে চলে আসে বলে সূর্যগ্রহণ হয়। ব্যাস এতটুকুই! এখানে কান্নাকাটি করার কি আছে? মজার বিষয় হল,বিংশ শতাব্দীর গোড়ায় যখন এ বিষয় নিয়ে গবেষণা শুরু হলো, তখন মহানবীর (সা.) এই আমলের তাৎপর্য বেরিয়ে আসলো।

আধুনিক সৌর বিজ্ঞানীদের মতে, মঙ্গল ও বৃহস্পতি গ্রহ দু’টি কক্ষপথের মধ্যবলয়ে রয়েছে এস্টিরয়ে(Asteroid), মিটিওরিট (Meteorite) ও উল্কাপিন্ড প্রভৃতি ভাসমান পাথরের এক সুবিশাল বেল্ট, এগুলোকে এককথায় গ্রহানুপুঞ্জ বলা হয়।

গ্রহানুপুঞ্জের এইবেল্ট (Belt) আবিষ্কৃত হয় ১৮০১ সালে। এক একটা ঝুলন্ত পাথরের ব্যাস ১২০ মাইল থেকে ৪৫০ মাইল। বিজ্ঞানীরা আজ পাথরের এই ঝুলন্ত বেল্ট নিয়ে শঙ্কিত। কখন জানি এ বেল্ট থেকে কোন পাথর নিক্ষিপ্ত হয়ে পৃথিবীর বুকে আঘাত হানে, যা পৃথিবীর জন্য ধ্বংসের কারণ হয় কিনা?
গ্রহানুপুঞ্জের পাথর খন্ডগুলোর মাঝে সংঘর্ষের ফলে অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাথরখন্ড প্রতিনিয়তই পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসে। কিন্তু সেগুলো পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে এসে জ্বলে ভস্ম হয়ে যায়। কিন্তু বৃহদাকার পাথর খন্ডগুলো যদি পৃথিবীতে আঘাত করে তাহলে কি হবে?

প্রায় ৬৫ মিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীতে এমনই একটি পাথর আঘাত হেনেছিলো। এতে ডাইনোসরসহ পৃথিবীর তাবৎ উদ্ভিদ লতা গুল্ম সব ধ্বংস হয়ে গিয়েছিলো। আপনজনের (Arizon) এ যে উল্কাপিন্ড এসে পড়েছিলো তার কারণে পৃথিবীতে যে গর্ত হয়েছিলো তার গভীরতা ৬০০ ফুট এবং প্রস্থ ৩৮০০ ফুট।

বিজ্ঞানীরা বলেন, সূর্য অথবা চন্দ্রগ্রহণের সময় ঝুলন্ত পাথরগুলো পৃথিবীতে ছুটে এসে আঘাত হানার আশংকা বেশী থাকে। কারণ হচ্ছে,এসময় সূর্য,চন্দ্র ও পৃথিবী একই সমান্তরালে,একই অক্ষ বরাবর থাকে ।ফলে তিনটির মধ্যাকর্ষণ শক্তি একত্রিত হয়ে ত্রিশক্তিতে রুপান্তরিত হয়।

এমনি মুহূর্তে যদি কোন পাথর বেল্ট থেকে নিক্ষিপ্ত হয় তখন এই ত্রিশক্তির আকর্ষণের ফলে সেই পাথর প্রচন্ড শক্তিতে, প্রবল বেগে পৃথিবীর দিকে আসবে,এ প্রচন্ড শক্তি নিয়ে আসা পাথরটিকে প্রতিহত করা তখন পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাড়াবে।

ফলে পৃথিবীর একমাত্র পরিণতি হবে ধ্বংস। একজন বিবেকবান মানুষ যদি মহাশূন্যের এ তত্ব জানে, তাহলে তার শঙ্কিত হবারই কথা।

এই দৃষ্টিকোন থেকে সূর্য বা চন্দ্রগ্রহণের সময় মহানবীর (সা.) সেজদারত হওয়া এবং সৃষ্টিকূলের জন্য পানাহ চাওয়ার মধ্যে আমরা একটি নিখুঁত বাস্তবতার সম্পর্ক খুঁজে পাই। মহানবীর (সা.) এ আমলটি ছিলো যুক্তিসঙ্গত ও একান্ত বিজ্ঞানসম্মত। তাই এটিকে উৎসব না বানিয়ে আল্লাহকে ভয় করুন। সালাত আদায় করুন।

ঢাকায় সূর্যগ্রহণটি বাংলাদেশ সময় (বিএসটি) সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে শুরু হয়ে বেলা ২টা ৫ মিনিট ৩৬ সেকেন্ডে শেষ হবে। সকাল ৯টা ১মিনিট ১৬ সেকেন্ডে। ওই সময়ই সূর্য সবচেয়ে বেশি ঢাকা পড়বে চাঁদের আড়ালে এবং সূর্যকে একটি অগ্নিবলয়ের মতো দেখাবে।

তাই এ সময় সালাতে দাড়িয়ে যান। 
অন্যদেরও বলুন প্রার্থনায় নিমগ্ন হতে যাতে এর ফলে মানুষের কোন ক্ষতি কোথাও না হয়।

শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯

বাংলা রেডিও লাইভ এএম এফএম

উপভোগ করুন লাইভ রেডিও বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে।
ইন্টারনেট ডাটা কানেকশন লাগবে চ্যানেল গুলো শুনতে।



শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৯

বান্দা আল্লাহর অধিক নিকটবর্তী হয়, যখন সিজদারত থাকে।

মানবসৃষ্টির অন্যতম উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর ইবাদত।
 ইবাদতের মর্মকথা হলো সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী সত্তার সামনে সর্বাধিক বিনীতভাবে নিজেকে সঁপে দেওয়া।
 আক্ষরিক অর্থে এটা সর্বতোভাবে সিজদার মাধ্যমে সম্ভব।
মানবসৃষ্টির সূচনায় আদি পিতা আদম (আ.)-কে ‘কিবলা’ বানিয়ে সিজদা করার নির্দেশ জারি করা হয়েছে।
এই নির্দেশ প্রত্যক্ষভাবে ছিল ইবলিসের প্রতি আর পরোক্ষভাবে ছিল ফেরেশতাদের প্রতি। ফেরেশতারা এই নির্দেশ পালন করে।
কিন্তু ইবলিস সিজদা করতে অস্বীকার করে।
এ ঘটনার মাধ্যমে সিজদার মাহাত্ম্য ও তাৎপর্য প্রকাশিত হয়।
 সিজদা কখনোই আদম (আ.)-এর জন্য ইবাদত ছিল না।
বরং তা ছিল মানবজাতির প্রতি অন্যদের সম্মান প্রদর্শন।
আসলে সিজদা হলো আল্লাহর প্রাপ্য এবং আল্লাহর প্রতি যাবতীয় ইবাদতের শ্রেষ্ঠাংশ।
মহান আল্লাহ মানুষকে নামাজ পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
অতঃপর সারা বিশ্বের মানুষের সিজদার প্রতীক হিসেবে কাবাগৃহকে নির্ধারণ করেছেন।
ফলে গোটা বিশ্বের মানুষ আল্লাহর আদেশে কাবাগৃহকে কিবলা হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। ঠিক তেমনি সৃষ্টির সূচনায় আদম (আ.)-কে ‘কিবলা’ বানিয়ে সিজদা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

গোটা সৃষ্টিজগৎ আল্লাহকে সিজদা করে

পৃথিবীর সব কিছুই মহান আল্লাহর জন্য সিজদা করে।
ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আল্লাহকে সিজদা করে যা কিছু আছে নভোমণ্ডলে ও ভূমণ্ডলে এবং তাদের ছায়াসমূহও (সিজদা করে) সকালে ও সন্ধ্যায়—ইচ্ছায় ও অনিচ্ছায়।’
 (সুরা : রাদ, আয়াত : ১৫)
অন্যত্র আল্লাহ আরো বলেন,
‘তুমি কি দেখো না যে আল্লাহকে সিজদা করে যা কিছু আছে নভোমণ্ডলে ও ভূমণ্ডলে, সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্ররাজি, পর্বতরাজি, বৃক্ষলতা, জীবজন্তু ও বহু মানুষ।
 আর বহু মানুষ (যারা সিজদা করতে অস্বীকার করেছে) তাদের ওপর শাস্তি অবধারিত হয়েছে। বস্তুত আল্লাহ যাকে লাঞ্ছিত করেন তাকে সম্মানদাতা কেউ নেই।
নিশ্চয়ই আল্লাহ যা চান তা-ই করেন।’
 (সুরা : হজ, আয়াত : ১৮)
শুধু নিম্নজগতে নয়, সিজদার এই নিয়ম রয়েছে ঊর্ধ্বজগতেও।
সেখানে ফেরেশতা মহান আল্লাহর উদ্দেশে সিজদা করেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা কি আল্লাহর সৃষ্ট বস্তুসমূহের প্রতি লক্ষ করে না।
তাদের ছায়া ডানে ও বাঁয়ে ঢলে পড়ে আল্লাহর প্রতি সিজদাবনত হয় বিনীতভাবে?
আসমান ও জমিনে যত প্রাণী আছে, সবই আল্লাহকে সিজদা করে এবং ফেরেশতারাও।
আর তারা অহংকার করে না।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৪৮-৪৯)

দুনিয়া ও আখিরাতে সিজদার পরীক্ষা

নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের সমস্ত জীব ও জড় বস্তু আল্লাহর ইবাদত করে বা সিজদা করে।  কিন্তু মানুষ ও জিন ছাড়া কারো হিসাব হবে না এবং পরীক্ষাও হবে না। সিজদার এই পরীক্ষা হবে দুনিয়া ও আখিরাতে। একদল দুনিয়ায় আল্লাহকে সিজদা করে। পরকালের পরীক্ষায়ও এই দল আল্লাহর পদতলে সিজদার মাধ্যমে জয়যুক্ত হবে, আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌঁছে পরম সুখে অনন্তকালের জান্নাতে বসবাস করবে। পক্ষান্তরে আরেক দল আল্লাহকে সিজদা করে না। আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণও করে না। এদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, ‘অতএব তাদের কী হলো যে তারা বিশ্বাস স্থাপন করে না এবং যখন তাদের কাছে কোরআন পাঠ করা হয়, তখন তারা সিজদা করে না।’ (সুরা : ইনশিকাক, আয়াত : ২০-২১)
আল্লাহকে অস্বীকারকারী এই দল সিজদা না করার কারণে পরকালেও আল্লাহর পরীক্ষায় সিজদা করতে পারবে না।
ফলে তারা জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।
এ বিষয়ে ইরশাদ হয়েছে, ‘স্মরণ করো, যেদিন পায়ের গোছা উন্মোচিত করা হবে এবং তাদের সিজদা করার জন্য আহ্বান করা হবে, কিন্তু তারা তা করতে সক্ষম হবে না।
তাদের দৃষ্টি অবনত থাকবে, তারা লাঞ্ছনাগ্রস্ত হবে।
অথচ যখন তারা সুস্থ ও স্বাভাবিক ছিল, তখন তাদের সিজদা করতে আহ্বান জানানো হয়েছিল। অতএব যারা এই কালামকে মিথ্যা বলে, তাদের আমার হাতে ছেড়ে দিন, আমি এমন ধীরে ধীরে তাদের ধরব যে তারা জানতে পারবে না।’
 (সুরা : কলম, আয়াত : ৪২-৪৪)
এ বিষয়ে হাদিস শরিফে এসেছে, ‘কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ মানুষের উদ্দেশে বলবেন, আমি কি তোমাদের রব?
সবাই বলবে, হ্যাঁ, আপনিই আমাদের রব। (
সে সময়) নবীরা ছাড়া আর কেউ তাঁর সঙ্গে কথা বলবে না।
আল্লাহ তাদের জিজ্ঞেস করবেন, তোমরা কি কেউ তার কোনো চিহ্ন জানো?
তারা বলবে, পায়ের নলার তাজাল্লি।
সেই সময় পায়ের নলা খুলে দেওয়া হবে।
তখন সব ঈমানদার ব্যক্তি সিজদায় পড়ে যাবে।
তবে যারা দুনিয়ায় প্রদর্শনীর জন্য আল্লাহকে সিজদা করত তারা থেকে যাবে।
তারা সে সময় সিজদা করতে চাইলে তাদের মেরুদণ্ডের হাড় শক্ত হয়ে একটি তক্তার মতো হয়ে যাবে (তাই তারা সিজদা করতে পারবে না)।’
 (বুখারি, হাদিস : ৭৪৩৯)

সিজদার মাধ্যমে স্রষ্টার সর্বাধিক কাছাকাছি

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘বান্দা আল্লাহর অধিক নিকটবর্তী হয়, যখন সিজদারত থাকে। অতএব তোমরা তখন অধিক দোয়া করতে থাকো।’
(মুসলিম, হাদিস : ৪৮২)
রাবিআহ ইবনে কব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে রাত যাপন করতাম।
একদা আমি তাঁর অজু ও ইসতেঞ্জা করার জন্য পানি আনলাম।
তখন তিনি আমাকে বললেন, তোমার কিছু চাওয়ার থাকলে চাইতে পারো।
তখন আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমি আপনার সঙ্গে জান্নাতে থাকতে চাই। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ওটা ছাড়া আর কিছু চাও কি? আমি বললাম, এটাই চাই।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তাহলে বেশি বেশি সিজদার দ্বারা তুমি এই ব্যাপারে আমাকে সাহায্য করো।’ (মুসলিম, হাদিস : ৪৮৯)
নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘আমার যেকোনো উম্মতকে কিয়ামতের দিন আমি চিনে নিতে পারব।
 সাহাবিরা জিজ্ঞেস করেন, এত মানুষের মধ্যে আপনি তাদের কিভাবে চিনবেন?
 তিনি বলেন, তোমরা যদি কোনো আস্তাবলে প্রবেশ করো যেখানে নিছক কালো ঘোড়ার মধ্যে এমন সব ঘোড়াও থাকে, যেগুলোর হাত, পা ও মুখ ধবধবে সাদা, তবে কি তোমরা উভয়ের মধ্যে পার্থক্য করতে পারবে না?
সাহাবিরা বললেন, হ্যাঁ, পারব।
তিনি বলেন, ওই দিন সিজদার কারণে আমার উম্মতের চেহারা সাদা ধবধবে হবে, আর অজুর কারণে হাত-পা উজ্জ্বল সাদা হবে।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৮৩৬)

বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০১৯

রাসূলুল্লাহ ﷺ কে নিরক্ষর বলে সম্বোধন করা কুফুরী ও উম্মী শব্দের সঠিক ব্যাখ্যা

রাসূলুল্লাহ ﷺ কে নিরক্ষর বলে সম্বোধন করা কুফুরী ও উম্মী শব্দের সঠিক ব্যাখ্যা

১ম পর্ব


★ ১. অনেকে নিজের অজ্ঞতার কারণে রাসুলুল্লাহ ﷺ উঁনাকে নিরক্ষর বলে সম্বোধন করে নাউযুবিল্লাহ!!
এখন কথা হচ্ছে গিয়ে “নাবিয়্যুল উম্মী” মানে আমাদের প্রাণপ্রিয় নবীজীকে কি নিরক্ষর বলা হয়েছে??

★অথচ আমাদের প্রাণপ্রিয় নবীজী হুযূরপূর নূর ﷺ তিঁনি লিখতেন ও লেখার ব্যাপারে তালীমি দিতেন।
হুযূর পাক ﷺ সমস্ত ইলমের অধিকারী।
সুন্দর হস্তাক্ষরে লিখন উঁনার মু’জিযা।
তিঁনি মুয়াল্লিম হিসেবে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে আক্ষরিক জ্ঞান শিক্ষা দিতেন।




الذى علم بالقلم.
অর্থঃ- “যিঁনি (আল্লাহ্ পাক) কলম দ্বারা শিক্ষা দিয়েছেন।”

[সূরা আলাক্ব,আয়াত নং ৪]



অর্থাৎ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে স্বয়ং আল্লাহ পাক লিখার যাবতীয় ইলম্ দিয়েই সৃষ্টি করেছেন।

♠আল্লাহ পাক অন্যত্র ইরশাদ করেন
خلق الانسان علمه البيان.
অর্থঃ- তিঁনি (আল্লাহ্ পাক) ইনসানকে সৃষ্টি করেছেন এবং বয়ান শিক্ষা দিয়েছেন।”
[সূরা আর রাহমান,আয়াত নং ২,৩]




♣এখানে بيان এর তাফসীরে উল্লেখ করা হয়েছে,
ماكان وما يكون.
অর্থাৎ- যা সৃষ্টি হয়েছে এবং হবে। অর্থাৎ পূর্ব ও পরবর্তী সব ঘটনার জ্ঞান।
 [তাফসীরে মাআলিমুত তানযীল]

অর্থাৎ আয়াতের অর্থ হচ্ছে আখিরী রসূল,সাইয়্যিদুল মুরসালীন,ইমামুল মুরসালীন,
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আল্লাহ্ পাক সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁকে সমস্ত কিছুর জ্ঞান দান করেছেন।


★যেমন,আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
اتيت علم الاولين والاخرين.
অর্থঃ- আঁমাকে সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত জ্ঞান দান করা হয়েছে।


হাদীস শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে, ছাহিবে ছলাত ও সালাম, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

اعطيت جوامع الكلم.
অর্থঃ- ‘আঁমাকে (শুরু হতে শেষ পর্যন্ত) সমস্ত ইলিম প্রদান করা হয়েছে।”
[বুখারী শরীফ,মুসলিম শরীফ]

অতএব,প্রমাণিত হলো যে,হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত ইলমের অধিকারী। 
আর লিখাও হচ্ছে ইলমের একটা অংশ। 
লিখা যে ইলমের অংশ তা সূরা আলাক্ব-এর ৪নং আয়াতের علم بالقلم . ‘তিঁনি (আল্লাহ পাক) উঁনাকে কলম দ্বারা শিক্ষা দিয়েছেন’, এ আয়াত শরীফ দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত হয়। 
কারণ علم (আল্লামা) শব্দটির مصدر (মাছদার) বা ক্রিয়ামূল হচ্ছে تعليم (তা’লীম) বা শিক্ষা দেয়া। 
অতএব, স্বয়ং আল্লাহ পাক যাকে লিখার উপকরণ তথা কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন তিঁনি লিখতে জানতেন না বা লিখতে পারতেন না এ ধারণা পোষণ করা মিথ্যা তোহমত ও কুফরীর নামান্তর।




★২. হাদীস শরীফ ইরশাদ করা হয়েছে

عن معاوية انه كان يكتب بين يديه عليه السلام فقال له الق الدواة وحرف القلم واقم الباء وفرق السين وتعور الميم مع انه عليه السلام لم يكتب ولم يقرأ من كباب الاولين.
অর্থঃ- হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত।
 তিনি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সামনে (ওহী) লিখতেন,অতঃপর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে অক্ষর লিখার পদ্ধতি শিক্ষা দিয়ে ইরশাদ করেন, 
দোয়াত এভাবে রাখ,
কলম এভাবে ঘুরাও, “با” (বা) কে এভাবে সোজা করে লিখ, سين (সীন) কে পৃথক কর, আর মীম ميم (মীম) কে বাঁকা করোনা,
অথচ তিঁনি দুনিয়াবী কোন কাতিবের (লিখকের)-এর নিকট থেকে লিখা শিখেননি,আর কোন প্রাচীনকালীন কিতাব থেকেও তা পড়েননি।

*****দলিল******




*(ক.) ফতহুল বারী লি শরহে বুখারী ৭/৫০৪

*(খ.) আস শিফা বিতারীফি হুকমিল মুস্তফা ১/৩৫৮

*(গ.) কিতাবু জামিউল কুরআন ১/১৪১

*(ঘ.) তাফসীরে কুরতুবী ১৩/৩৫৩





উল্লেখ্য যে,রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর লিখার প্রয়োজন হতো না। 
কারণ মানুষ লিখে থাকে এজন্য যে, লিখে না রাখলে ভুলে যাবে।
কিন্তু রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এঁর লিখার প্রয়োজন নেই।
কারণ তিঁনি কিছুই ভুলতেন না।
তিঁনি সব কিছুই লওহে মাহফুজ থেকে দেখে নিতেন।
তাঁর মুয়াল্লিম স্বয়ং আল্লাহ পাক।
সুতরাং তাঁর লিখা-পড়ার কোন প্রয়োজন ছিল না। 
আর তিনি যদি লিখা-পড়া করতেন তাহলে বাতিলপন্থীরা সন্দেহ করতো।

যেমন,পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এঁর আবির্ভাবের পরিচয় দেয়া ছিল কয়েকটি।
যেমন, তিঁনি হবেন ‘উম্মী’ (অর্থাৎ নবীগণের মূল হবেন) এবং সুন্দর হস্তাক্ষরে লিখবেন কিন্তু পার্থিব ওস্তাদের কাছে লিখা-পড়া করবেন না।
কোন বই-পুস্তক পড়বেন না।




এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে

سَنُقْرِئُكَ فَلَا تَنسَىٰٓ

অর্থঃ আঁমি আঁপনাকে পাঠ করাতে থাকব,ফলে আঁপনি ভুলে যাবেন না বা বিস্মৃত হবেন না।
[সূরা আল আ’লা,আয়াত নং ৬]


পবিত্র কোরআনে আরও ইরশাদ হয়েছে

إِلَّا مَا شَآءَ ٱللَّهُ إِنَّهُۥ يَعْلَمُ ٱلْجَهْرَ وَمَا يَخْفَىٰ
অর্থঃ আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন তা ব্যতীত। নিশ্চয় তিঁনি জানেন প্রকাশ্য ও গোপন বিষয়।
[সূরা আল আ’লা, আয়াত নং ৭]

♠লক্ষ্য করুন: স্বয়ং আল্লাহ পাক বলেছেন সূরা আ’লার ৬ ও ৭ নং আয়াতে রাসূল (ﷺ) কে লক্ষ্য করে বলেছেন-আঁপনি ভুলে যাবেন না বা বিস্মৃত হবেন না,আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন তা ব্যতীত বা আল্লাহ যেটা চান সেটা ছাড়া।
অর্থাৎ রাসূল ﷺ যেগুলো ভুলে যান সেটা নবিজীর ইচ্ছাতে না বরং সেটা আল্লাহর ইচ্ছাতে।কোরআনের এ আয়াত দ্বারা এখানেও প্রমানিত হয় যে,নবিজ ﷺ কোন কিছু ভুলে গেলেও সেটা তিঁনার ইচ্ছাতে নয়,সেটাও আল্লাহর ইচ্ছা।আর এজন্য ঈমান রাখতে হবে এটা নবিজী ﷺ এঁর ভুল নয় বরং আল্লাহর ইচ্ছা।
অথচ: কিছু নামধারী মুনাফিক আজকে বলে বেড়ায় নবিজী ﷺ ভুল করেন বা করেছেন বা শরীআতের ক্ষেত্রেও ভুল করছেন (নাউযুবিল্লাহ!)




পবিত্র কোরআনে আরও ইরশাদ হয়েছে
مَا نَنسَخْ مِنْ ءَايَةٍ أَوْ نُنسِهَا نَأْتِ بِخَيْرٍ مِّنْهَآ أَوْ مِثْلِهَآ أَلَمْ تَعْلَمْ أَنَّ ٱللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ
অর্থঃ আঁমি কোন আয়াত রহিত করলে অথবা ভুলিয়ে দেই বা বিস্মৃত করিয়ে দিলে তদপেক্ষা উত্তম অথবা তার সমপর্যায়ের আয়াত আনয়ন করি।
তুমি কি জান না যে,আল্লাহ সব কিছুর উপর শক্তিমান?
[সূরা আল বাকারা,আয়াত নং ১০৬]




♠লক্ষ্য করুন:
এখানে আল্লাহর ভাষ্য হল আল্লাহই রহিত করেন বা ভুলিয়ে দেন।
এখানেও অকাট্যভাবে প্রমান হয় যে, রাসূল ﷺ কোন কিছু রহিত করেন না বা ভুলেও যান না।
বরং এটা আল্লাহরই ইচ্ছা।এই দুইটা বিষয় সরাসরি আল্লাহ থেকে।সুতরাং সুষ্পষ্টভাবে প্রমান হয় যে, নবিজী ভুল করেন না বা ভুলেন না।
বরং সেটা আল্লাহর তরফ থেকে।আর আমাদের কাছে সেটা ভুল মনে হলেও সেটা ভুল নয়,কারন আল্লাহর তরফ থেকেই সেটা করা হয়েছে।

সম্মানিত পাঠকগন আপনারাই বলুন আল্লাহর হাবীব যদি দুনিয়ার কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখা পড়া শিখতেন,
তাহলে তিঁনি যখন আল্লাহ পাকের দেয়া দ্বীন প্রচার করেছিলেন।
মানুষ তখন বলত সেটা তিঁনার মনগড়া মতবাদ।
তাই নয় কি? মানুষ তখন দলে দলে এভাবে ইসলামের ছায়াতলে আসতো না।
কেননা আল্লাহ পাক পবিত্র কোরআনে বলেছেন এটা এমন কিতাব যাতে ঝাররা পরিমান সন্দেহ করার মত কিছু নাই।
আর এজন্যই আল্লাহ পাক স্বয়ং নিঁজে তাঁর প্রিয় হাবিবকে শিক্ষা দিয়ে দুনিয়াতে পাঠালেন যাতে কেউ না বলতে পারে এটা মনগড়া মতবাদ।

আর যদি দুনিয়ার কেউ যদি তিঁনাকে শিক্ষা দিত তাহলে তো ঐ ব্যাক্তির মর্যাদা আলা মাকাম হত।অথচ:
আফসোস সকল মুসলমান কমবেশি সবাই এটাই মানে যে আল্লাহর সকল সৃষ্টির মাঝে তিঁনি বেমেচাল সৃষ্টি।
তাঁর সাথে অন্য কোন সৃষ্টির তুলুনা করলে ঈমানহারা হয়ে যাবে।
আর যাহার শিক্ষক স্বয়ং আল্লাহ পাক তাঁহার আবার দুনিয়ার শিক্ষক কেন লাগবে? 
কেনইবা তিঁনি নিরক্ষর হইবেন??


★মহান আল্লাহ পাক যেন আমাদের ঐ সমস্ত নামধারী ইয়াজিদের পাপাত্মা ও মালাউন থেকে সবাইকে হেফাজত করেন,যারা রাসূলের শানে এভাবে আঘাত করে তাদের থেকে।
আমিন।
আর সাথে থাকুন ইন-শা-আল্লাহ উম্মী শব্দের চুল-চেরা বিশ্লেষণ দলিল সহকারে আলোচনা করা হবে।



♦রাসূলুল্লাহ ﷺ কে নিরক্ষর বলে সম্বোধন করা কুফুরী ও উম্মী শব্দের সঠিক ব্যাখ্যা- ২য় পর্ব

★৩. পবিত্র কুরআন শরীফে ইরশাদ হয়েছে

ماكنت تتلوا من قبله من كتاب ولا تخطه بيمينك اذا الارتاب المبطلون.

অর্থঃ- “এর পূর্বে (নুবুওওয়াত প্রকাশের পূর্বে) হে হাবীব (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আঁপনি না কোন কিতাব পড়তেন এবং না নিঁজ হাতে কোন কিছু লিখতেন, যদি তা করতেন,তবে বাতিলপন্থীরা নিশ্চয়ই সন্দেহ করতো (যে এটা আল্লাহ পাক-এর বাণী নয়,আঁপনার রচিত কোন কিতাব)।”
[সূরা আনকাবুত,আআয়াত নং ৪৮]

♠এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বিখ্যাত মুফাসসির হযরত ইসমাঈল হাক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন

كان عليه السلام يعلم الخطوط ويخبر عنها
অর্থ: হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লিখতে জানতেন এবং অপরকেও জানাতেন।
[তাফসীরে রুহুল মায়ানী: ৬/৬১০]

আর তিঁনি যে লিখতে জানতেন এ প্রসঙ্গে “সহীহ বুখারী শরীফ”-এর ‘কিতাবুল ইলম্’-এর ‘বাবু কিতাবাতিল ইলমে’ অধ্যায়ে উল্লেখ করা হয়েছে


عن ابن عباس رضى الله عنه قال لما اشتد بالنبى صلى الله عليه وسلم وجعه قال ائتونى بكتاب اكتب لكم كتابا لا تضلوا بعده.

অর্থাৎ -“হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত।তিঁনি বলেন,যখন রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এঁর অসুস্থতা বৃদ্ধি পেল।তখন তিঁনি উপস্থিত সাহাবীদের বললেন,তোমরা এক টুকরা কাগজ নিয়ে এস। আঁমি তোমাদের জন্য কতিপয় উপদেশ লিখে দিব,যাতে তোমরা পরবর্তী কালে পথভ্রষ্ট হবেনা।



*****দলিল******

*(ক.);বুখারী শরীফ ৮/১৩: হাদীস ৪৪৩২

*(খ.) মুসলিম শরীফ ১৬৩৭

*(গ.) মিশকাত শরীফ ৫৯৬৬



উক্ত হাদীস শরীফ থেকে প্রমাণ হলো হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লিখতে জানতেন।
আর সে কারনেই তিঁনি খাতা কলম নিয়ে আসার জন্য বললেন, যাতে তিনি উপদেশ লিখে দিতে চেয়েছিলেন।
তিঁনি কিন্তু এটা বলেন নাই, কাগজ কলম এনে তোমরা লেখ আঁমি বলি।
বরং তিঁনি বলেছেন,তোমরা এক টুকরা কাগজ নিয়ে এস।
আঁমি তোমাদের জন্য কতিপয় উপদেশ লিখে দিব।
যার প্রমাণ বুখারী মুসলিম শরীফেই বিদ্যমান।


★৪. হযরত বারা ইবনে আযিব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত।তিনি বলেন


لما اعتمر النبى صلى الله عليه وسلم فى ذى القعدة فابى اهل مكة ان يدعوه يدخل مكة حتى فاضاهم على انيقيم بها ثلثة ثلثة ايام فلما كتبوا الكتاب كتبوا هذا ما قاضى عليه محمد رسول الله صلى الله عليه وسلم قالوا لانقر بهذا لو نعلم انك رسول الله ما منعناك شيئا ولكن انت محمد بن عبد الله فقال انا رسول الله وانا محمد بن عبد الله ثم قال لعلى امح رسول اله قال على لا والله لاامحوك ابدا فاخذ رسول الله صلى اله عليه وسلم الكتاب وليس يحسن يكتب فكتب هذا ما قاضى محمد بن عبد الله.


অর্থাৎ- নবীয়ে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যিলক্বদ মাসে ওমরাহ্ করতে গিয়েছিলেন,কিন্তু মক্কাবাসী তাঁকে মক্কা শরীফে প্রবেশ করতে দিতে রাজী ছিলনা,
যতক্ষণ না তিঁনি তাদের সাথে এ মর্মে সন্ধিসূত্রে আবদ্ধ হন যে,তিঁনি সেখানে (মক্কা শরীফে) তিনদিনের অধিক অবস্থান করবেন না।
অতঃপর যখন সন্ধিপত্র লিখার উপর ঐক্যমত হলো,তারা লিখলো ‘এতদ্বারা মুহম্মদুর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের সাথে সন্ধি করলেন।’
 অতঃপর মক্কার কাফিররা বললো,আমরা এটা মানিনা,কারণ যদি আমরা আঁপনাকে আল্লাহর রাসূল হিসেবে মেনে নিয়ে থাকি তাহলে আমরা আঁপনাকে তো কোন রকম বাঁধাও দিতাম না বরং আঁপনি হলেন,মুহম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ্। সুতরাং এটাই লিখতে হবে।”
তখন হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,আঁমি আল্লাহ পাক-এঁর রাসূল এবং আঁমিই আব্দুল্লাহর পুত্র, তারপর তিঁনি হযরত আলী (আ:) কে বললেন,“রসুলুল্লাহ” শব্দটা কেটে দাও।”




★হযরত আলী (আ:) আরজ করলেন, না,আল্লাহ পাক-এঁর কসম! আঁমার পক্ষে (আল্লাহ্ পাক প্রদত্ত্ব) আঁপনার (গুণবাচক) নাম কাটা সম্ভব নয়।
অতঃপর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উক্ত চুক্তিপত্র খানা হাতে নিলেন।তাঁর নিঁজ হাতে লিখার ইচ্ছা ছিলনা,তবুও সুন্দরভাবে লিখলেন
هذا ما قاضى محمدبن عبد الله.
“এতদ্বারা চুক্তি করলেন মুহম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)।”

*****দলিল*******
*(ক.) মুসনাদে আহমদ ১৮৬৫৮
*(খ.) সুনানে কুবরা বায়হাকী ৭/৪২, হাদীস ১৩৬৬৮
*(গ.) দালায়েলুন নবুওওয়াত ৪/৩৩৮
*(ঘ.) সুনানে দারেমী ২৫০৭
*(ঙ.) ফতহুল বারী ৭/৫০৩
*(চ.) তাফসীরে ইবনে কাছীর ৭/৩৫৯
*(ছ.) তাফসীরে বাগবী ৭/৩১৭
*(জ.) রুহুল মায়ানী ১১/৬
কুরআন শরীফে এবং হাদীছ শরীফে বর্ণিত النبى الامى. দ্বারা মুহাদ্দিছীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ এরূপ ব্যাখ্যা করেছেন যে,
রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেহেতু দুনিয়াবী কোন শিক্ষক কর্তৃক লিখা-পড়া শিখেননি সেহেতু তিনি “নাবিয়্যুল উম্মী” লক্ববে অভিহিত। যা তাঁর শ্রেষ্ঠ নবী এবং রসূল হওয়ার প্রমাণ।
কিন্তু তার পরেও তিঁনি যে লিখতেন সেটা ছিল তাঁর মু’জিযা।
যেমন, বুখারী শরীফের প্রসিদ্ধ ব্যাখ্যাকারী আল্লামা কিরমানী রহমতুল্লাহি আলাইহি লিখেছেন, “এখানে উম্মী মানে এ লিখাটা হচ্ছে তাঁর মু’জিযা।”




[বুখারী শরীফ ২য় খণ্ড]
♠উম্মি শব্দটি আরবি ‘উম্মুন’ ধাতুর সঙ্গে সম্পৃক্ত।
উম্মুন শব্দের অর্থ হচ্ছে মা বা কোনো জিনিসের মূল বা আসল।
যেমন মক্কা নগরীকে ‘উম্মুল কুরা’ অর্থাৎ দুনিয়ার সব নগরীর উৎসমূল এভাবে সূরা ফাতিহাকে ‘উম্মুল কিতাব’ বা কোরআনের মূল বলা হয়।আরবি সমৃদ্ধ একটি ভাষা।
একটি শব্দের অনেক অর্থ হয়ে থাকে।
তাই বাক্যের ভাবধারা অনুযায়ী শব্দের অর্থ করতে হয়।অন্যথায় অনুবাদ বা অর্থ বিকৃত হয়ে যায়।
উম্মি শব্দের অর্থ যেমন মূল বা আসল,তেমনি তার অর্থ নিরক্ষর,লেখাপড়াহীন,মূর্খ ইত্যাদিও হয়।কিন্তু সূরা আরাফের ১৫৭, ১৫৮ নং আয়াতে যেখানে নবী করিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কথা উল্লেখ আছে সে সব আয়াতে নিরক্ষর লেখাপড়াহীন অর্থ নেয়াটা মূর্খতারই পরিচায়ক। প্রকৃতপক্ষে যারা মূর্খ তারাই নবীজীর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শানে ব্যবৃহৃত ‘উম্মি’ শব্দটিকে নিরক্ষর, লেখাপড়াহীন এ অর্থে ব্যবহার করেন।
 অথচ উল্লিখিত আয়াতদ্বয়ে ‘উম্মি’ শব্দটি নবী করিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর একটি বিশেষ বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
 সুতরাং নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শানে ব্যবহৃত উম্মি শব্দটির অর্থ গ্রহণ করার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।




এবার জানানোর চেষ্টা করব পবিত্র কোরআনে উল্লিখিত ‘নবী ও রাসূল-ই-উম্মি’ শব্দের প্রকৃত অর্থ কী?
মুলতঃ النبى الامى এখানে امى অর্থ সাইয়্যিদ, মূল, অভিভাবক, প্রধান, শ্রেষ্ঠ ইত্যাদি।
অর্থাৎ যিঁনি সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের মূল বা যাঁকে ব্যতীত কোন নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণই সৃষ্টি হতেন না তিঁনিই النبى الامى (নাবিয়্যূল উম্মী) লক্ববে ভূষিত।
উপরোক্ত অর্থ ছাড়াও অভিধানে امى শব্দটি ভিন্ন অর্থেও ব্যবহৃত হয় কিন্তু তা আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এঁর শানে প্রযোজ্য নয়।

★স্মরণীয় যে,নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের ক্ষেত্রে কুরআন শরীফ এবং হাদীছ শরীফের এমন তাফসীর,অনুবাদ, ব্যাখ্যা করা যাবেনা যার কারণে তাঁদের শানের খিলাফ হয়।
তাদের শানে চু-চেরা, কিল-কাল করার অর্থই হচ্ছে তাঁদের বিরোধিতা করা;
আর তাদের বিরোধিতা করা হচ্ছে স্বয়ং আল্লাহ পাক-এর বিরোধিতা করা।
ফলে তাদের জাহান্নাম ছাড়া আর কোন পথ নেই।




আল্লাহ পাক যেন আমাদের সকলকে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে নাবিয়্যূল উম্মী তথা সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ছিলেন তিঁনি যে লিখতে জানতেন এ সম্পর্কে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের সঠিক আক্বীদা রাখার তাওফীক দান করেন এবং এর খিলাফ সমস্ত কুফরী আক্বীদা থেকে হিফাযত করেন। (আমীন)


সম্মানিত পাঠকগন আপনারাই বলুন আজকে যারা বিদেশে গিয়ে বড় বড় ডিগ্রী নিয়ে আসে কোন বিষয়ের উপর?
নিশ্চয় কোরআন,সুন্নাহ,তাফসীর,ফেকাহ ইত্যাদির উপর।
এখন আপনাদের কাছে প্রশ্ন তারা কেউ কি সাহাবাদের চেয়ে বড় হতে পেরেছে??
না তা কখনও সম্ভব নয়।
তাহলে এই সাহাবারা এত জ্ঞান অর্জন করলো কিভাবে?
সবাই এক বাক্যে বলবেন আল্লাহর রাসূলের কারনে।
আর তিঁনিই তাদের শিক্ষক।
তাহলে শিক্ষক কি করে নিরক্ষর হয়??
আফসোস! বড়ই আফসোস!




★এখন আল্লাহ নিঁজে বললেন আঁমি আঁমার হাবিবকে এলেম শিক্ষা দিয়েছি।
মোট কথা দুনিয়ার কেউ তিঁনার শিক্ষক নয়,স্বয়ং আল্লাহ তিঁনার শিক্ষক।
তাহলে তিঁনি নিরক্ষর কেমনে হন??

এ প্রসংগে আল্লাহ পাকের প্রিয় হাবিব ﷺ ইরশাদ করেন
ﺇﻧﻤﺎ . ﺑﻌﺜﺖ ﻣﻌﻠﻤﺎ ﺭﻭﺍﻩ ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﺔ 229
নিশ্চয়ই আঁমাকে শিক্ষক হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে।

[ইবনে মাজাহ,২২৯]

তাহলে আপনারাই বলুন স্বয়ং রাসূল ﷺ বললেন আমি তোমাদের শিক্ষকরুপে প্রেরিত হয়েছি।তাহলে এবার দেখুন এই বেয়াদবগুলো তো রাসূলের কথাই মানলো না।তাহলে তারা আবার কিসের মুসলমান দাবি করে।
কারন যিঁনি শিক্ষকরুপে আসলেন ধরায় তিঁনি আবার নিরক্ষর হন কিভাবে??
আর রাসূল ﷺ কখনও নিঁজের থেকে কথা বলেন না।
যেমনটি পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে।

★মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কোরআনে রাসূল ﷺ সম্পর্কে বলছেন, “সে (তিঁনি) কখনো নিঁজের থেকে কোনো কথা বলে না,বরং তা হচ্ছে ‘ওহী’ যা তাঁর কাছে পাঠানো হয়।”
[সূরা নাজম,আয়াত নং ৩-৪]

★মহান আল্লাহ্‌ তায়ালার কিতাবে এটাও উল্লেখ আছে যে,“রাসূল ﷺ কোনো ভূল করেনি,তাঁর দৃষ্টি বিভ্রম হয়না এবং তাঁর দৃষ্টি কোনোরকম সীমালংঘনও করেনি।”
[সূরা নাজম,আয়াত নং ২,১৩,১৭]
♠ লক্ষ্য করুন: স্বয়ং আল্লাহ পাক বলেছেন “আঁমার হাবিব কখনো নিঁজের থেকে কোনো কথা বলেন না, বরং তা হচ্ছে ‘ওহী’ যা তাঁর কাছে পাঠানো হয়।”তাহলে এখানেও স্পষ্ট হল নবিজির সকল কর্ম আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী।
★আরও বলা হয়েছে-“রাসূল ﷺ কোনো ভূল করেনি, তাঁর দৃষ্টি বিভ্রম হয়না এবং তাঁর দৃষ্টি কোনোরকম সীমালংঘনও করেনি।”
কাজেই রাসূলের দোষ-ত্রুটি বের করা বা খোঁজা সম্পূর্নরুপে ইসলামী শরী’য়াত বর্হিভূত।আর করলে সাথে সাথে বেঈমান হয়ে যাবে।

♦রাসূলুল্লাহ ﷺ কে নিরক্ষর বলে সম্বোধন করা কুফুরী ও উম্মী শব্দের সঠিক ব্যাখ্যা- ৩য় পর্ব

★৪. আল-কোরআনের ৩টি শব্দ (ইমানদার দ্বারা) নবীর শানে (এর মধ্যে ২টি শব্দ বেয়াদব দ্বারা) বেয়াদবীর জন্যও ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
রাইনা,উঞ্জুরনা,নবী-আল-উম্মী ৩টি শব্দের বিশ্লেষণ সংক্ষেপে জেনে নেয়া যাক:

★★★রাইনা শব্দের অর্থ-১★★

“কৃপাদৃষ্টি”/ দয়ার নজর



★★★রাইনা শব্দের অর্থ-২★★★
“রাখাল” সেই শব্দটির মর্যাদাহানিকর অর্থ হল ২য় টি যা,কাফেররা ব্যবহার করত।
রাসুলাল্লাহ ﷺ কে কুটুক্তি করে ব্যবহার করতো,অপরদিকে সাহাবীগন সম্মান করে ব্যবহার করতো।তবে কিন্তু আল্লাহ পাক কাফিরদের এ বেয়াদবীটা সহ্য করেন নি রাসুলাল্লাহ ﷺ এঁর শানে কুটুক্তির পথ বন্ধ করে দিয়ে স্বয়ং আয়াত নাজিল করেন।
আসুন বিষয়টা আরও সহজভাবে বুজার চেষ্টা করি।
মহান আল্লাহ পাক তাঁর প্রিয় হাবিবকে কেমনভাবে সম্বোধন করতে হবে তা আমাদের সাহাবাদের দ্বারা শিক্ষা দিয়েছেন।

★বেয়াদবিতো দূরে থাকুক!!
আল্লাহ পাক রাসূলে পাক ﷺ কে অত্যান্ত আদবের সাথে সম্বোধন করে ডাকার জন্য বলেছেন।রাসূল ﷺ এঁর ক্ষেত্রে এমন শব্দ ব্যবহার করা হারাম।
যার ভালো খারাপ, দুই রকম অর্থ হয়।
যেমন পবিত্র কোরআনে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন


يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ لاَ تَقُولُواْ رَاعِنَا وَقُولُواْ انظُرْنَا وَاسْمَعُوا ْوَلِلكَافِرِينَ عَذَابٌ أَلِيمٌ

[হে মুমিন গণ,তোমরা ‘রাঈনা’ বলো না-‘উনযুরনা’ বল এবং মনযোগ সহকারে আঁমার রাসূলের কথা শুনতে থাক।
আর কাফেরদের জন্যে রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি।]

[সুরা বাকারা,আয়াত নং ১০৪]


♠♠♠ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ♠♠♠

ইহুদীদের অভ্যাস ছিল শব্দ পরিবর্তন করা ও হুকুমকে ছলে বলে কৌশলে নিজের মনগড়া করে নেয়া।ইহুদীরা রাসূল ﷺ ও ইসলামের ব্যাপারে দ্বিঅর্থবোধক শব্দ বেশি ব্যবহার করত।
যদি গোলমাল লেগে যেতো তখন বলতঃ আমরা ভালো উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছি।
তারা এ নিয়ে মুসলমানদের সাথে ঠাট্টা করত।


★কিছু শব্দ আছে যে গুলো ভালো খারাপ,দ্বিঅর্থবোধক।
সহজ কর বলতে গেলে”যেগুলোর ভালো-খারাপ দুই রকম অর্থ হয়”।


যেমন আরবী ভাষায় راعنا ‘রাঈনা’ শব্দটির দুটি অর্থ:

(১) আমাদের সম্মানিত অভিভাবক।

(২) আমাদের রাখাল।




★কাফেররা রাসূল ﷺ কে দেখলে راعنا বলে ডাকত দিত,আর খুব হাসা হাসি করত।

★আবার কিছু সাধারন মুসলমান রাসূল ﷺ কে ঐ নামে ডাকত বা অার্জি পেশ করত।
কিন্তু মুসলমানদের উদ্দেশ্য ছিল ভাল।কাফেরা তা দেখে আরও সাহসী হল।
তখন আল্লাহ পাক মুমিন বা বিশ্বাসীগনের উদ্দেশ্য বলেন “তোমরা আমার রাসূলকে ‘রাঈনা’ বলো না, বরং ‘উনযুরনা’ বলো।
”‘রাঈনা’ শব্দের ভালো ও মন্দ উভয় অর্থ রয়েছে,তাই রাঈনা ব্যবহার নিষেধ করা হয়েছে।


★আর ‘উনযুরনা’ শুধুমাত্র ভালো অর্থ প্রদান করে (কৃপাদৃষ্টি বুজায়),তাই এরূপ শব্দ ব্যবহার করার জন্য আল্লাহ পাক নির্দেশ দিয়েছেন।

এখন আপনারা ভাবুন আল্লাহর হাবিবের শানে কেমন শব্দ ব্যবহার করবেন আর কেমন অর্থ করবেন??

★পবিত্র কোরআনে আরও ইরশাদ হয়েছে


ﻻ ﺗَﺠْﻌَﻠُﻮﺍ ﺩُﻋَﺎﺀَ ﺍﻟﺮَّﺳُﻮﻝِ ﺑَﻴْﻨَﻜُﻢْ ﻛَﺪُﻋَﺎﺀِ ﺑَﻌْﻀِﻜُﻢْ ﺑَﻌْﻀًﺎ ﻗَﺪْ ﻳَﻌْﻠَﻢُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳَﺘَﺴَﻠَّﻠُﻮﻥَ ﻣِﻨْﻜُﻢْ ﻟِﻮَﺍﺫًﺍ ﻓَﻠْﻴَﺤْﺬَﺭِ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳُﺨَﺎﻟِﻔُﻮﻥَ ﻋَﻦْ ﺃَﻣْﺮِﻩِ ﺃَﻥْ ﺗُﺼِﻴﺒَﻬُﻢْ ﻓِﺘْﻨَﺔٌ ﺃَﻭْ ﻳُﺼِﻴﺒَﻬُﻢْ ﻋَﺬَﺍﺏٌ ﺃَﻟِﻴﻢٌ


তোমরা পরস্পরকে যেভাবে ডাকো রাসূলকে সেভাবে ডেকো না; তোমাদের মধ্যে যারা চুপিসারে সরে পড়ে আল্লাহ তাদেরকে ভালভাবে জানেন; তারা তাঁর (রাসূলের) আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা যেন তাদের উপর বিপর্য্য় নেমে আসে অথবা যন্ত্রনাদায়ক আযাব পৌঁছার ভয় করে।

[সূরা আন-নুর,আয়াত নং ৬৩]

নবী আল উম্মী
উম্মী অর্থ অক্ষর জ্ঞানহীন,নিরক্ষর, লিখতে পড়তে না জানা এই কথা বললে কি ঈমান থাকবে কিনা? আপনারাই ভাবুন!
নাকি এর ভাল অর্থ বলবেন??




★মুনাফিক,মালাউন,ইয়াজিদের প্রেতাত্মারা সবসময় দেখবেন রাসুলের শানে বেয়াদবিমূলক কথা বলে।
আবার দেখবেন ওরা বেশি বেশি আমলও করে।
অথচ: গোড়ায় গলদ।
মনে রাখতে হবে রাসূলের শানে বেয়াদবি করে যতই আমলই করা হোক না কেন কাজে আসবে না।আসুন পবিত্র কোরআন থেকে আরও দলিল জেনে নিই রাসূলের সাথে বেয়াদবি করলে কি ক্ষতি হবে!!


*1. যারা আল্লাহও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে এবং জমীনে ফাছাদ সৃস্টি করতে সচেষ্ট হয়,তাদের একমাত্র শাস্তি কতল করা বা ফাঁসিতে চড়ানো।”
[সূরা মায়িদাহ,আয়াত নং ৩৩]


*2. “যারা আল্লাহ,তাঁর রাসূল ও মুমিনগন ব্যতীত অন্য কাউকে অন্তরংগ বন্ধু হিসেবে গ্রহন করা থেকে বিরত না রয়েছে “-(সেসব মুনাফিকদের এমনিতে ছেড়ে দেয়া হবে না)।

[সূরা তাওবা,আয়াত নং ১৬]




*3. (“যুদ্ধ করো তাদের বিরুদ্ধে)-যারা হারাম মনে করেনা ঐ জিনিসকে-যা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ﷺ হারাম ঘোষনা করেছেন।”
[সূরা তাওবা,আয়াত নং ২৯]

*4. মুনাফিকদের দান কবুল না হওয়ার একমাত্র কারন হলো তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অস্বীকার করেছে।
মুনাফিক যতই দান করুক,তা কোন কাজে আসবে না।
[সূরা আত তাওবা,আয়াত নং ৫৪]


*5. “যারা আল্লাহর রসূলকে কষ্ট দেয় তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে।”
[সূরা তাওবা,আয়াত নং ৬১]



*6. “তারা কি এ কথা অবগত নয় যে,যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে শত্রুতা করছে-তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন।”
[সূরা তাওবা,আয়াত নং ৬৩]
*7. যে রাসূলের অবমাননা করবে সে মুরতাদ বা ধর্মত্যাগি এবং কাফির হিসেবে বিবেচিত হবে। এ বিষয়ে কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে:

﴿ يَحۡذَرُ ٱلۡمُنَٰفِقُونَ أَن تُنَزَّلَ عَلَيۡهِمۡ سُورَةٞ تُنَبِّئُهُم بِمَا فِي قُلُوبِهِمۡۚ قُلِ ٱسۡتَهۡزِءُوٓاْ إِنَّ ٱللَّهَ مُخۡرِجٞ مَّا تَحۡذَرُونَ ٦٤ وَلَئِن سَأَلۡتَهُمۡ لَيَقُولُنَّ إِنَّمَا كُنَّا نَخُوضُ وَنَلۡعَبُۚ قُلۡ أَبِٱللَّهِ وَءَايَٰتِهِۦ وَرَسُولِهِۦ كُنتُمۡ تَسۡتَهۡزِءُونَ ٦٥ لَا تَعۡتَذِرُواْ قَدۡ كَفَرۡتُم بَعۡدَ إِيمَٰنِكُمۡۚ إِن نَّعۡفُ عَن طَآئِفَةٖ مِّنكُمۡ نُعَذِّبۡ طَآئِفَةَۢ بِأَنَّهُمۡ كَانُواْ مُجۡرِمِينَ ٦٦ ﴾ [التوبة: ٦٤، ٦٦]
“মুনাফিকরা ভয় করে যে, তাদের বিষয়ে এমন একটি সূরা অবতীর্ণ হবে,যা তাদের অন্তরের বিষয়গুলি জানিয়ে দেবে।বল, ‘তোমরা উপহাস করতে থাক।নিশ্চয় আল্লাহ বের করবেন,তোমরা যা ভয় করছ। আর যদি তুমি তাদেরকে প্রশ্ন কর,অবশ্যই তারা বলবে, ‘আমরা আলাপচারিতা ও খেল-তামাশা করছিলাম।
বল, ‘আল্লাহ, তাঁর আয়াতসমূহ ও তাঁর রাসূলের সাথে তোমরা বিদ্রূপ করছিলে?

তোমরা ওযর পেশ করো না। তোমরা তোমাদের ঈমানের পর অবশ্যই কুফরী করেছ। যদি আমি তোমাদের থেকে একটি দলকে ক্ষমা করে দেই, তবে অপর দলকে আযাব দেব। কারণ, তারা হচ্ছে অপরাধী।”

[সূরা আত-তাওবাহ,আয়াত নং ৬৫-৬৬]


*8. আল্লাহ ওয়াদা করেছেন,মুনাফিক পুরুষ ও মুনাফিক নারীদের এবং কাফেরদের জন্য রয়েছে দোজখের আগুন। তাতে তারা চিরদিন থাকবে। সেটাই তাদের জন্যে যথেষ্ট। আর আল্লাহ তাদের প্রতি অভিসম্পাত করেছেন এবং তাদের জন্যে রয়েছে স্থায়ী আজাব।

[সূরা তাওবাহ আয়াত ৬৮]

*9. “হে রাসূল! আঁপনি (আজ থেকে) মুনাফিকদের মৃত্যুর পর তাদের জানাজা পড়াবেন না এবং তাদের কবর পাশেও দাড়াবেন না। তাই এদের জন্য দোয়া করাও হারাম।”
[সূরা তাওবা,আয়াত নং ৮৪]


*10. “যদি তোমরা তোমাদের মতই একজন মানুষের আনুগত্য কর, তবে তোমরা নিশ্চিতরূপেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
[সুরা-মুমিনুন,আয়াত-৩৪]


*11. “হে ঈমানদারগন,তোমরা আল্লাহর রাসূলের সামনে আগবাড়ীয়ে কিছু করোনা।”
[সূরা হুজরাত,আয়াত নং ১]

*12. আল্লাহ বলেন”তোমাদের কর্মসমূহ নিস্ফল হয়ে যাবে আর তোমাদের খবরই থাকবে না”
[সূরা আল হুজরাত,আয়াত নং ২]


লক্ষ করুন: সাহাবায়ে কিরামগন রাসূলকে যথাযথ মর্যাদা দিয়ে প্রমাণ করে গেছেন।
যখন কুরআনের সূরা হুজুরাতের ২ নং আয়াত আবতীর্ণ হলোঃ


﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا تَرۡفَعُوٓاْ أَصۡوَٰتَكُمۡ فَوۡقَ صَوۡتِ ٱلنَّبِيِّ وَلَا تَجۡهَرُواْ لَهُۥ بِٱلۡقَوۡلِ كَجَهۡرِ بَعۡضِكُمۡ لِبَعۡضٍ أَن تَحۡبَطَ أَعۡمَٰلُكُمۡ وَأَنتُمۡ لَا تَشۡعُرُونَ ٢ ﴾ [الحجرات: ٢]


“হে ঈমানদারগণ,তোমরা নবীর আওয়াজের উপর তোমাদের আওয়াজ উঁচু করো না এবং তোমরা নিজেরা পরস্পর যেমন উচ্চস্বরে কথা বল, তাঁর সাথে সেরকম উচ্চস্বরে কথা বলো না।
এ আশঙ্কায় যে তোমাদের সকল আমল নিষ্ফল হয়ে যাবে অথচ তোমরা উপলব্ধিও করতে পারবে না।”


আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আল্লাহর কসম, আমি নিতান্তই আপনার সাথে ক্ষীণ আওয়াজ ব্যতীত কথা বলব না।


*13. “যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্য হবে-তারা স্পষ্ট গোমরাহীর মধ্যে পতীত হয়ে গিয়েছে। ”
[সূরা আহযাব,আয়াত নং ৩৬]

*14. “যারা আল্লাহ ও তাঁর প্রিয় রাসূলকে কষ্ট দেয়,আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়া ও পরকালে লা’নত করবেন বা অভিশপ্ত করবেন।”

[সূরা আহযাব,আয়াত নং ৫৭]

*15. “যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্য হয়,নিঃসন্দেহে (তাদের জন্য) আল্লাহর শাস্তি অতি কঠোর।”

[সূরা আনফাল,আয়াত নং ১৩]

*16. “হে ফেরেশতাগন,তোমরা বদরের যুদ্ধে কুরাইশ কাফিরদের গর্দানের শাহ্নগে এবং তাদের শরীরের জোড়ায় জোড়ায় আঘাত হানো। কেননা, তারা আল্লাহ ও রাসূলের অবাধ্য হয়ে গেছে।”

[সূরা আনফাল,আয়াত নং ১৩]


*17. “আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্য হবে,তাকে আল্লাহ জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন।”

[সূরা নিসা,আয়াত নং ১৪]


*18. যারা রাসূলের অবমাননা করে তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে।
এ বিষয়ে কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে:

“আর তিঁনি তো কিতাবে তোমাদের প্রতি নাযিল করেছেন যে, যখন তোমরা শুনবে আল্লাহর আয়াতসমূহ অস্বীকার করা হচ্ছে এবং সেগুলো নিয়ে উপহাস করা হচ্ছে, তাহলে তোমরা তাদের সাথে বসবে না, যতক্ষণ না তারা অন্য কথায় নিবিষ্ট হয়, তা না হলে তোমরাও তাদের মত হয়ে যাবে। নিশ্চয় আল্লাহ মুনাফিক ও কাফিরদের সকলকে জাহান্নামে একত্রকারী।”

[সূরা আন-নিসা,আয়াত নং ১৪০]


*20. “যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগনকে অস্বীকার করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগনের মধ্যে তারতম্য করতে ইচ্ছা করে এবং বলে -আমরা কিছু মানি-কিছু মানিনা এবং আল্লাহ ও রাসূলগনের মধ্যবর্তী তৃতীয় রাস্তা উদ্ভাবন করতে চায়-তারাই পাক্কা কাফের।”

[সূরা নিসা,আয়াত নং ১৫০]




*21. লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ তে শয়তান দোষত্রুটি ধরেনি যার কারনে বেহেশতে ছিল রাসুল ﷺ এঁর আলোতে দোষত্রুটি ধরায় বেহেশতে থেকে বের করে দেওয়া হল।

“তিঁনি বললেন,‘তুমি এখান হতে বের হয়ে যাও, কারণ নিশ্চয় তুমি বিতাড়িত।”
[সূরা ছোয়াদ,আয়াত নং ৭৭]

*22. সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে যাবে: যারা রাসুলের অবমাননার কাজে জড়িত থাকবে তাদের সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে যাবে।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “আর যে তোমাদের মধ্য থেকে তাঁর দ্বীন থেকে ফিরে যাবে, অতঃপর কাফির অবস্থায় মৃত্যু বরণ করবে, বস্তুত এদের আমলসমূহ দুনিয়া ও আখিরাতে বিনষ্ট হয়ে যাবে এবং তারাই আগুনের অধিবাসী।”

[সূরা বাকারাহ,আয়াত নং ২১৭]


♣♣♣♣♣♣♣♣♣♣♣♣♣

আবার মূল আলোচনাতে আসা যাক: ইমাম আবু জাফর মুহাম্মদ ইবনে ইমাম মুসা আল-রিদা (রা:) (নবীজী ﷺ এঁর আওলাদ আহলুল বাইয়াত এর বিখ্যাত ৯ম ইমাম) [১৪৮-২০৩] তিঁনি বলেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ কে উম্মী বলা হয় কারন তিঁনি (আবির্ভুত হয়েছিলেন) ছিলেন মক্কা (বাসীদের মধ্য) থেকে।
“” MOST GRANTED যা আহলুস সুন্নাহ এর মুফাসসিরগন তফসীর করতে ব্যবহার করেছেন।★

উম্মী শব্দের অন্যান্য ভাল অর্থ : =Gentile =Non-Israelite = A nation (the Arabs) that had never received a Scripture before. ‘Zaku’ or ‘Tazkiah’ = Growth = Purity from vice = Development of ‘self’ = Self-actualization. ‘Hikmah’ = wisdom = Judgment = Governance = Political Rule.
শিক্ষা :
কিন্তু আফসোস ইয়াজিদের দোসররা নবীজির শান কমাতে সবচেয়ে বাজে translation ই ব্যবহার করেছে।
আহলুস-সুন্নাহ (সুন্নীরা) নবীজির শানের দিকে খেয়াল রেখেই সর্বদা উত্তম শব্দ ব্যবহার করে থাকে।


কি আর বলব!! আল্লাহ তাআলা যে নবীকে “রাখাল” বলাটাও পছন্দ করেন নি সেই নবীকে কেমনে বেয়াদবগুলো “নিরক্ষর” বলল?? 
এদের উপর গজব কেন পড়বে না।
আর এজন্যই এদের বলা হয় গোস্তাখে রাসুল,তারা বেয়াদব না হলে কুরআনের আয়াতের এমন ব্যাখ্যা কেন করে?? 
তাই আবারও বলবো নবিজীর আদবের ক্ষেত্রে সাবধান হোন ও সংযত হোন, নতুবা লম্বা টুপি,আমল,পাগড়ী কোন কাজেই আসবে না।


♦রাসূলুল্লাহ ﷺ কে নিরক্ষর বলে সম্বোধন করা কুফুরী ও উম্মী শব্দের সঠিক ব্যাখ্যা- ৪র্থ পর্ব



উম্মি মানে অক্ষরজ্ঞানহীন নয়

★৫. রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মি মানে সমগ্র সৃষ্টিজগতের উৎস,সৃষ্টির মুল এবং সকলপ্রকার জ্ঞান-বিজ্ঞানের মূল ভিত্তি।এর অর্থ কখনো নিরক্ষর ও অক্ষরজ্ঞানহীন নয়।

কুরআনুল করিমে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’র কয়েকটি নাম বর্ণিত হয়েছে।তম্মধ্যে একটি হলো উম্মি। এ নাম তাঁর সৃষ্টির প্রথম উৎস হওয়া ও সমগ্রসৃষ্টিজগতের মুল হওয়ার দলিল।

কুরআনুল কারীম হুযুরের বিশেষ ও স্বাতন্ত্র বৈশিষ্টের কথা উল্লেখ করছে এভাবে:

*১. পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে

الَّذِيْنَ يَتَّبِعُوْنَ الرَّسُوْلَ النَّبِيِّ الْاُمَّيِّ

যারা তাঁর অনুসরণ করে যিঁনি উম্মি নবী (দুনিয়াতে যিনি কোনো লোক থেকে না পড়েও আল্লাহর পক্ষ থেকে সকল প্রকার জ্ঞান বিজ্ঞান,ইহকাল ও পরকালের সকল বিষয় ও অদৃশ্যের সংবাদ দেন)।
অর্থাৎ তিনি সে মহাজ্ঞানী ও সকল গায়বের সংবাদাতা নবী যিনি মায়ের পেট থেকেই জ্ঞানী হয়ে বের হয়েছেন।
এবং সকল অদৃশ্য সংবাদ তিনি সে সময় অর্জন করেছেন যখন তিঁনি মায়ের পেটে ছিলেন।
 [সূরা আল আরাফ,আয়াত নং ১৫৭]




প্রথমত:
 আয়াতে হুযুর পাক ﷺ কে উম্মী উপাধি দিয়ে আল্লাহ পাক সম্বোধন করেছেন।
উম্মী শব্দের একাধিক অর্থ হতে পারে- এটা ‘উম্মুন’ দ্বারা শব্দের সাথে সম্পৃক্ত শব্দ।আরবীতে (উম্মুন) বলে মাকে,আসল বা মূলকে।অর্থাৎ এর অর্থ হচ্ছে মা-বিশিষ্ট নবী।
দুনিয়ায় সব মানুষ মা-বিশিষ্টই হয়; কিন্তু যেমন ‘মা’ আল্লাহ্ তা‘আলা হুযূর-ই আকরামকে দান করেছেন,তেমন গোটা দুনিয়ায় কেউ পায়নি।হযরত মরিয়মও ‘মা’-ই ছিলেন।
কিন্তু ‘নবীকুল সরদার’ যেমন বে-মেসাল (উপমাহীন),তাঁর আম্মাজানও তুলানাহীন (বে-মেসাল)। কবির ভাষায়-

وه كنوپارى اك مريم وه نَفَخْتُ فِيْهِ كادم هے عجب نشان اعظم مر امنه كا جايا وه هے سب سے افضل ايا

অর্থ: তিঁনি ওই পবিত্র কুমারী মরিয়ম, তিঁনি আল্লাহর তা‘আলার বাণী-‘আঁমি তার মধ্যে রূহ ‘ফুৎকার করেছি’-এর প্রাণবায়ু বা সারতত্ব।তিঁনি এক বৃহত্তর নিদর্শনের আশ্চর্যজনক প্রকাশস্থল।
(এতে কোন সন্দেহ নেই।)
কিন্তু হযরত আমেনার মহান সন্তান (হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম) হলেন সবার সেরা,সবার চেয়ে শ্রেষষ্ঠ হিসেবে এ ধরা বুকে তাশরীফ এনেছেন।

যে ঝিনুক নিজের পেটে মূল্যবান মুক্তা ধারণ করে,ওই ঝিনুকও মূলবান হয়ে যায়।
যেই বরকতময়ী মা আপন পাক গর্ভাশয়ে ওই অদ্বিতীয় মুক্তাকে ধারণ করেন, তিনি কতই বরকত মণ্ডিত হবেন! (তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।)

দ্বিতীয়ত: আরেক বৈশিষ্ট্য ‘পড়াবিহীন’।
এর অর্থ হচ্ছে তিঁনি আপন মায়ের গর্ভাশয় থেকে সর্ববিষয়ে জ্ঞানবান হয়েই ভূমিষ্ঠ হয়েছেন,দুনিয়ার কারো নিকট পড়ালেখা করেন নি,করতে হয়নি।কবি বলেন-


خاك وبراوج عرش منزل – امى وكتاب خانه در دل امى ودقيقه دان عالم – بے سايه وسائبان عالم

অর্থ: তিঁনি মাটির পৃথিবীতে সদয় অবস্থায় করছেন,অথচ আরশের সর্বোচ্চ আসনে আসীন হয়েছেন।তিঁনি ‘উম্মী’ (দুনিয়ার কোন ওস্তাদের নিকট পড়ালেখা করেননি, কিন্তু তাঁর পবিত্র নূরানী হৃদয়ে রয়েছে বিশালতম কিতাবখানা- (গ্রন্থালয়)

তিঁনি ‘উম্মী’ উপাধিধারী,অথচ বিশ্বের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ণ বিষয়াদি সম্পর্কে অবগত।
তাঁর ছায়া ছিলো না,অথচ সেটা বিশ্বের জন্য বিশাল সামিয়ানা।
হুযূর আকরামের ছায়া ছিলো না,কিন্তু সমগ্র দুনিয়ার উপর তাঁর ছায়া রয়েছে।

তৃতীয়ত: ‘উম্মী’ শব্দের তৃতীয় অর্থ- ‘উম্মুল কোরা’ (মক্কা মুকাররামাহ্)’য় সদয় অবস্থানকারী।

চতুর্থত: তিঁনি সমগ্র বিশ্বের মূল।
হুজুর ﷺ কে “উম্মি “কেন বলা হয়?
হুজুর কি নিরক্ষর ছিলেন?উম্মির অর্থ কী আসুন আমরা এব্যাপারে একটু জ্ঞান লাভ করি।।

“উম”ام “যারمادہবা মুল হল الف এবংمیم আরবী ভাষায় উম শব্দটির অর্থ হল,”উৎপত্তি,উদ্ভব, মুল বা উৎস। আরবী ভাষায়”মা”কে উম এই জন্য বলা হয় যে মা হল ছেলের মুল বা উৎস।
আরবী ভাষায় “উম” এর সংজ্ঞা এভাবে করা হয়েছে”يقال لكل ما كان اصلا لوجود شئ او مبدأه”যে কোন বস্ত তার মুল বা উৎস,orginকে” উমام” বলা হয়।আর এই উম শব্দ থেকেই উম্মি এসছে।
কেননা হুজুর ﷺ গোটা মানব জাতীর উৎস বা মুল তাই হুজুর কে ও উম্মি বলা হয়।
উম এর আরো একটি অর্থ যে আল্লাহ তায়ালা মকা শরিফ কে “উম্মাল ক্বুরা ام القري”বলেছেন অর্থাৎ হল যে মক্কা শরিফ পৃথিবীরর মুল বা উৎস।
আর এ কথা সুর্যের কিরনের ন্যায় প্রকাশ যে সৃষ্টির পুর্বে সমগ্র পৃথিবী জল মগ্ন ছিল এবং পৃথিবীর যে স্থানটি সর্ব প্রথম সুষ্ক হয়েছিল সেটি হল মক্কা শরিফ।ইসলাম ও বিজ্ঞান দ্বারা এটি প্রমানিত।


(لاشك ان مكة المكرم اطهر الاماكن علي الارض فهي اول مكان دبت به الحيات علي الارض“)

যেমন মক্কা শরিফ কে পৃথিবীর মুল বা উৎস হওয়ার কারনে উম্মুল ক্বুরা বলা হয়,অনুরুপ হুজুর ﷺ কে সমগ্র জগতের মুল বা উৎস হওয়ার কারনে উম্মি বলা হয়।(والنجم اذا هوي) উম্মির আরো একটি অর্থ লাউহে মাহফুয কে উম্মুল কিতাব বলা হয় কেননা

“ذالك لكون العلم كلها متولدة منها

“সারা জগতের জ্ঞান লাউহে মাহফুয থেকে এসেছে এবং কোরআন ও লাউহে মাহফুয থেকে এসেছে।তাই লাউহে মাহফুয কে উম্মুল কিতাব বলা হয়।
 অনুরুপ হুজুর স্বাল্লাল্লাহো আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও পার্থিব সমস্ত জ্ঞানের মুল বা উৎস তাই হুজুরকে উম্মি বলা হয়।(আঁমি জ্ঞানের শহর এবং আলী তাহার দরজা) হাদিস।সুরা ফাতিহাকে ও উম্মুল কোরআন বলা হয়।
কারন কোরআন মজিদ সুরা ফাতেহা থেকে আরাম্ভ হয় তাই সুরা ফাতেহাকে উম্মুল কোরাআন বলা হয়। “উম্মত” শব্দটিও امة আলিফ মিম মাদ্দা উম থেকে বের হয়েছে। যার অর্থ মানুসের কোন এক বিষয়ে একত্রিত হওয়াকে উম্মত বলা হয় অর্থাৎ جمعیتবা একত্রিত হওয়া কে উম্মত বলে।
অনুরুপ হুজুরকে উম্মি এই জন্য বলা হয় যে হুজুরের মধ্যে আল্লাহ সমস্ত রকম দক্ষতা,জ্ঞান,শিক্ষা,আদর্শকে একত্রিত করে দিয়েছেন।
এমন কি আখেরি নবি এবং নবী গনের মহান নেতা। তাই হুজুর উম্মি।”ইমাম”امامশব্দটি ও উম শব্দ থেকে বের হয়েছে। কোন এক বিষয়ে যার অনুসরন করা হয় তাকে ইমাম বলে।আর সমস্ত রকম বিষয়ে যার অনুসরন করা হয় তিনিই হলেন নবীয়ে উম্মি নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ।আয়াতের ব্যাখ্যা:

هو الذي بعث في الأميين رسولا منهم يتلو عليهم آياته ويزكيهم ويعلمهم الكتاب

والحكمةوإن كانوا من قبل لفي ضلال مبين

অর্থাৎ তিঁনিই মহান সত্বা যিঁনি উম্মিদের
(অর্থাৎ উম্মুল ক্বুরা মক্কা ববাসিদের) মধ্যে একজন রাসুল প্রেরণ করেছেন,যিনি তাদের তার আয়াত সমুহ পড়ে শুনান, তাদের কে পরিশুদ্ধ করেন,এবং কেতাব ও হিকমত শিক্ষা দেন,অথচ ইতি পুর্বে তারা সুস্পষ্ট গোমরাহিতে নিমজ্জিত ছিল।যদি হুজুর নিরক্ষর হতেন তাহলে আয়াতে বলা হতনা যে তিঁনি অর্থাৎ হুজুর তাদের কে আয়াত পড়ে শুনান,তাদের পরিশুদ্ধ করেন হিকমত,এবং কিতাবের শিক্ষা দেন,আল্লাহ বলেনالرحمن علم القرآن : অশিক্ষিতদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য মুর্খ শিক্ষক নিয়োগ করা বোকামি।
আমার নবী শিক্ষক আর শিক্ষক কখনো মুর্খ হয়না।
যারা বলে হুজুর পড়ালেখা জানতেন না তাদের এসব ভাঁড়ামি,বোকামি ছাড়া কিছু না।




*২. পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে

فَاَمِنُوْا بِاللهِ وَ رَسُوْلِهِ النَّبِيِّ الاُمِّيِّ

সুতরাং তোমরা আল্লাহ ও তাঁর উম্মি [উপাধিকারী] নবীর উপর (যিঁনি আল্লাহ ছাড়া আর কারো থেকে কিছুই পড়েন নি, কিন্তু সৃষ্টিজগতের সকলের থেকে বেশি জ্ঞানী) ঈমান আনো।

[সূরা আল আরাফ,আয়াত নং ১৫৮]

উপরিউক্ত আয়াতদ্বয়ে যে নবীয়ে উম্মি শব্দের ব্যবহার হয়েছে।এর কয়েকটি অর্থ রয়েছে।এর একটি অর্থের আলোকে প্রমাণিত হয় যে,তিঁনি সমগ্র কায়েনাতের মুল ও সমস্ত দৃশ্য-অদৃশ্য জ্ঞানবিজ্ঞানের উৎস।

*৩. আরবি অভিধান মতে,উম্মি শব্দটি উম্ম থেকে নির্গত।
উম্ম আরবি ভাষায় মুলকে বলা হয়।
এ জন্য মাকেও উম্ম বলা হয় এ দৃষ্টিতে যে,সন্তান তার থেকে জন্মগ্রহণ করে।

*(ক.) ইমাম রাগেব ইস্পাহানি বলেন

ويقال لكل ما كان أصلا لوجود شيئ او تربيته أو اصلاحه أو متدءه ام-

প্রত্যেক ঐ বস্তকে উম্ম বলা হয় যা কোনো জিনিসের প্রতিপালন বা সংশোধনের অস্তিত্বের মূল বা উৎস হয়।

[রাগিব ইস্পেহানি,মুফরেদাত লিআলফাজিল কুরআন:৫৭।]


*(খ.) ইমাম মুরতাজা জুবেদি বলেন


وام كل شئ: اصله وعماده-

প্রত্যেক জিনিসের উম্ম হলো তার উৎস ও মুল ভিত্তি।

[জুবেদি,তাজুল আরূস, ১৬:২৭।]

এ অর্থের ভিত্তিতে নবীয়ে উম্মি অর্থ :
ঐ নবী যিঁনি সমগ্র কায়েরনাত তথা সৃষ্টিজগতের মূলভিত্তি ও উৎস।
সমগ্র কায়েনাতের অস্তিত্ব যে ভিত্তিমুল থেকে উৎসারিত তা মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম থেকে।
সমগ্র কায়েনাতের উৎপত্তি তাঁর থেকে,আরশ, কুরসি,লাওহ, কলম,…………. সবই তাঁর থেকে সৃষ্টি।
তাই তিনি সকল কিছুর মূল।
 সমগ্র কায়েনাতের অস্তিত্ব নূরে মুস্তাফা ﷺ থেকে বিস্তার লাভ করেছে।সুতরাং হুযুরের নূর কায়েনাত মুল ও কায়েনাত সূচনাকারী।এ কারণে তাঁকে উম্মি নবী তথা মৌলিক জ্ঞানের উৎস বলা হয়।
কুরআন করিমের এ আয়াতগুলো থেকে এ কথা প্রমাণিত হয়।




★আল্লাহ তায়ালা বলেন-

يمحوا الله ما يشاء ويثبت وعنده أم الكتاب-

আর আল্লাহ যাঁকে ইচ্ছা সুদৃঢ় রাখেন আর তাঁরই কাছে রয়েছে মুল কিতাব।

[সূরা রাদ,আয়াত নং ৩৯ ]


মহান আল্লাহ অন্যত্র ইরশাদ করেন-


وإنه في أم الكتاب لدينا لعلي حكيم-


আর নিশ্চয়ই এটা আঁমার নিকট লাওহে মাহফুজে (বিদ্যমান রয়েছে। এটা) উচ্চমর্যাশীল (বিগত সকল কিতাবের উপর বিজয়ি ও উচু মর্যাদাশীল) বিজ্ঞাময়।

[সূরা জুখরূপ,আয়াত নং ৪]


এখানে প্রশ্ন হতে পারে যে,কায়েনাতের সমগ্র জ্ঞানের ধারক লাওহে মাহফুজকে উম্ম বলা হলো কেন?

★ইমাম রাগেব ইস্পেহানি এর উত্তরে বলেন,এ কারণে যে,সকল জ্ঞান লাওহে মাহফুজের দিকে সম্পৃক্ত।আর তা সকল জ্ঞানবিজ্ঞানের মুলউৎস।


★ইমাম বুসিরি বলেন,দুনিয়া ও আখিরাত প্রিয় নবী এর বদান্যতার সামান্য অংশ। আর লাওহ ও কলমের জ্ঞান তাঁর জ্ঞান-বিজ্ঞানের কিয়দংশ মাত্র।

[কসিদায়ে বুরদাহ]

*৪. উম্ম শব্দের এ অর্থের কারণে মক্কা নগরিকে উম্মুল কুরা বলা হয়। কুরআনে করিমে মক্কা নগরিকে উম্মুল কুরা বলা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন,


وهذا كتاب أنزلناه مبارك مصدق الذي بين يديه ولتنذر أم القري ومن حولها-


আর এটা (ঐ) কিতাব যা আঁমি নাজিল করেছি (তা) বরকতময়,পূর্ববর্তী কিতাবের সত্যায়নকারী।আর তা এ কারণে (নাজিল করা হয়েছে) যে,আঁপনি [সকল মানব] বস্তির মুলকেন্দ্র [মক্কা]বাসীদের এবং এর পার্শ্ববতী লোকদের ভীতিপ্রদর্শন করবেন। [সূরা আনআম,আয়াত নং ৯২]

এ থেকে বুঝা গেলো যে, সকল গ্রাম ও শহরের মুলকেন্দ্র ও উৎস হলো মক্কা। যেমন হাদিস শরিফে আছে,যখন কায়েনাত সূচনা হলো তখন সর্বপ্রথম শুধু পানিই ছিলো,অন্য কিছু ছিলো না।
অতঃপর পানি শুষ্ক হতে শুরু করলো।
আর যেখানে যেখানে পানি শুকিয়ে গেলো সেখানে জমি সৃষ্টি হলো।
আর এভাবে জমি সৃষ্টি হলো।অর্থাৎ যতোটুকু অংশ শুষ্ক হয়ে গেলো তা জমিতে পরিণত হলো আর অবশিষ্ট সমুদ্র রয়ে গেলো।

সমগ্র জগতের ভূখন্ডের মধ্যে সর্বপ্রথম অংশ যা পানিতে শুষ্ক হয়েছে ও জমিনরূপে প্রকাশিত হয়েছে তা হলো মক্কা নগরি।

হযরত আবদুর রহমান বিন সাবিত থেকে বর্ণিত।রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

دحيت الأرض من مكة


জমিকে মক্কা থেকে প্রসারিত করা হয়েছে।

****দলিল******
*(ক.) তাবারি,জামেউল বয়ান ফি তাফসিরিল কুরআন, ১:১৯৯
*(খ.) সুয়ুতি,আদদুররুল মানসূর, ১:১১৩ *(গ.) ইবনে কাসির,তাফসিরূল কুরআনিল আজিম, ১:৭১
*(ঘ.) শাওকানি,ফতহুল কদির, ১:৬৩।


ইমাম কুরতবি এ হাদিস বর্ণনার পর বলেছেন,

ولذالك سميت ام القري

এ কারণে মক্কাকে উম্মূল কুরা বলা হয়। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে থেকে বর্ণিত।
রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,এ শহর সম্মানের দিক দিয়ে পৃথিবীর অপরাপর শহর থেকে শ্রেষ্ঠ ও মর্যাদাময়।যেহেতু এটাকে বিস্তৃত করে ভূমণ্ডল অস্তিত্ব লাভ করেছে। তাই এটাকে উম্মুল কুরা বলা হয়।

[তাফসীরে কুরতুবি, 1: 112]


★তাহলে নবীয়ে উম্মি অর্থ সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ও মর্যাদাময় নবী।★★★★

হযরত কাতাদাহ থেকে বর্ণিত। রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন

أن أم القري مكة منها دحيت الارض-

নিশ্চয় উম্মুল কুরা হলো মক্কা মুকররমা। এর থেকে ভূখন্ড বিস্তার করা হয়েছে।

[তাবারি,জামেউল বয়ান ফি তাফসিরিল কুরআন, ১৪:১৫, সুয়ুতি,আদদুররুল মানসূর, ৩:৩১৬।]

★ইমাম কুরতবি (রহ:) বলেন

سميت ملة ام القري لأنها أول الأرض ومنها دحيت ومنه سميت الأم أما لأنها أصل النسل والارض-

মক্কাকে উম্মুল কুরা বলা হয়েছে।কেননা, এটা সর্বপ্রথম জমি।আর এটা থেকে জমি প্রসারিত হয়েছে।আর একারণেই উম্মকে উম্ম বলা হয়।কেননা,কেননা,বংশ ও ভূখন্ডের মূল হয়ে থাকে।

[কুরতুবি, আলজামে লেআহকামিল কুরআন, ১:১১২।]

ইমাম বগভি (রহ:) বলেন,
وام الشيء اصله ويقال لمكة أم القري لأنها أصل البلاد دحيت الأرض من تحتها-

কোনো বস্তুর উম্ম হলো তার মূল।আর মক্কাকে উম্মুল কুরা বলা হয়। কেননা, এটা সকল নগরের মুল।এ থেকে ভূখন্ড ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

[বাগভি, মায়ালেমুত তানযিল, ১:৩৭]

ইবনে কাসির (রহ:) বলেন,
وسميت مكة أم القري لتقديمها وجمعها ما سواها وقيل لأن الأرض دحيت من تحتها-
সর্বপ্রথম ভূখন্ড হওয়ার কারণে মক্কাকে উম্মুল কুরা বলা হয়। আর এটা বলা হয় যে,এর নিচ দিয়ে জমি প্রসার লাভ করেছে।।
[ইবনে কাসির, তাফসিরূল কুরআনিল আজিম, ১:১০।]

এখানে লক্ষনীয় বিষয় এ যে,যেহেতু মক্কা জমিনের মধ্যে সর্বপ্রথম প্রকাশিত শুষ্ক জায়গা এ জন্য এটাকে উম্মুল কুরা বলা হয়েছে।সুতরাং যেভাবে জমিনে সর্বপ্রথম আত্মপ্রকাশের ভিত্তিতে মক্কা মুকাররমাকে উম্মুল কুরা হয়েছে, তেমনিভাবে যখন সৃষ্টিজগতে আল্লাহ তায়ালার পর কিছুই ছিলো না,তখন সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তায়ালার কুন নির্দেশ দ্বারা যে সুন্দর নকশা সর্বপ্রথম আত্মপ্রকাশ করেছে তাঁর নাম মুহাম্মদ মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম। এ জন্য বলা হয়েছে,ইনি রাসূলে উম্মি অর্থাৎ ইনি ঐ রাসূল যিনি সৃষ্টিজগতে সর্বপ্রথম সৃষ্টি হয়েছেন আর সমগ্র কায়েনাত তাঁর মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে। মক্কা শহরও যেহেতু উম্ম তাই তাকে সেদিকে সম্পৃক্ত করে উম্মি বলা হয়েছে।

*৫. সূরা ফাতিহাকে উম্মুল কিতাব ও উম্মুল কুরআন বলা হয়।কেননা,এ দ্বারা কুরআন মজিদের সূচনা হয়েছে।

*(ক.) হযরত আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত। রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

الحمد لله أم القران وأم الكتاب والسبع المثاني-
আলহামদু লিল্লাহ (সুরা ফাতিহা) উম্মুল কুরআন,উম্মুল কিতাব ও সাবয়ে মাসানি।

******দলিল*****
*(ক.) তিরমিযি,জামে সহিহ, ৫:২৯৭
*(খ.) আবু দাউদ, সুনান,২:৭১
*(গ.) বায়হাকি,সুনানুল কুবরা, ২:৪৫।
*(খ.) ইমাম রাগেব ইস্পাহানি বলেন,

وقيل لفاتحة الكتاب ام الكتاب لكونها مبدأ الكتاب-

সূরা ফাতিহাকে কুরআনের মূল হিসাবে উম্মুল কিতাব বলা হয়েছে।

[আল-মুফরেদাত ফি গরিবিল কুরআন: 20]

*(খ.) ইমাম জুবায়দি বলেন,

الام من القران الفاتحة لأنه يبدأ بها في كل صلاة ويقال لها ام الكتاب ايضا او ام الكتاب-
সুরা ফাতিহা উম্মুল কুরআন। কেননা, এর দ্বারা প্রত্যেক নামাজ শুরু করা হয়। তাকে উম্মুল কিতাব ও উম্মূল কুরআনও বলা হয়। [তাজুল আরূস, ১৬: ২৮]
*(খ.) ইমাম সুয়ুতি (রহ:) বলেন
قيل ام الشيء أصله وهي أصل القران لأنطوائها علي جميع أغراض القران وما فيه من العلوم والحكم-
উম্ম কোনো বস্তুর মূলকে বলা হয়। সুরা ফাতিহা কুরআনের উদ্দেশ্য লক্ষ্য ও জ্ঞান বিজ্ঞানের সমষ্টি হওয়ার কারণে এর মূল। [সূয়ুতি, আল-ইতকান, ১: ১৪৯।]

*(ঘ.) ইমাম কুরতবি (রহ:) বলেন,
وسميت ام الكتاب لأنه يتبدأ بكتابها في المصاحف ويبدأ بقراءتها بالصلاة-
সুরা ফাতিহাকে উম্মুল কিতাব নাম দেয়া হয়েছে। কেননা, কুরআনে করিম লেখা এর মাধ্যমে শুরু হয়েছে আর এটা পাঠের মাধ্যমে নামাজ শুরু হয়।তিনি আরো বলেন,
وأم القران: سورة الحمد وقيل: سميت ام القران لأنها أوله ومتضمنه لجميع علومه-
উম্মুল কুরআন হলো সুরা ফাতিহা। এটাকে উম্মুল কুরআন এ কারণে বলা হয় যে, এটা কুরআনের প্রথম আর এর মধ্যে সকল জ্ঞান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
[আল-জামে লেআহকামিল কুরআন, ১: ১১২]
উপরিউক্ত আলোচনার ভিত্তিতে পর্যালোচনা করলে বুঝা যায় যে, লাওহে মাহফুজ সকল জ্ঞানবিজ্ঞানের উৎস হওয়ার কারণে এটাকে উম্মুল কিতাব বলা হয়।
আর লাওহে মাহফুজের জ্ঞান হুযুরকে দেয়া দেয়া হয়েছে। মক্কার ভূখন্ডকে জমিনের মূল হওয়ার কারণে উম্মুল কুরা বলা হয়েছে।
আর সূরা ফাতিহা যার মাধ্যমে কুরআন করিমের সূচনা হয়েছে তাও উম্মুল কুরান হলো।
ঐগুলোর মধ্যে প্রত্যেক নিজ স্তর অনুযায়ি উম্মি হলো।
এরই উপর ভিত্তি করে যার মাধ্যম কায়েনাতের সূচনা হয়েছে, যার নূর সমগ্রসৃষ্টিজগতের উৎস সাব্যস্থ হলো, যার হাকিকত কায়েনাতের ভিত্তি হলো, যার মাধ্যমে সকল বস্তু অস্তিত্ব লাভ করলো, তিনি হলেন আমাদের প্রিয়নবী বিশ্বনবী মুস্তাফা ﷺ।তিঁনিই সকল রাসূল ও নবীগণের মধ্যে উম্ম বা মূল।আর তাঁকেই উম্মি উপাধি দেয়া হয়েছে।



উপরিউক্ত বণনা থেকে বুঝা গেল যে, উম্মি মানে নিরক্ষর ও অক্ষরজ্ঞানহীন নয়। বরং নবীয়ে উম্মিঅর্থ হলো সকল জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎস এবং সমগ্র কায়েনাত ও সৃষ্টিজগতের মূল।

★আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছে
كَمَآ أَرْسَلْنَا فِيكُمْ رَسُولًا مِّنكُمْ يَتْلُوا۟ عَلَيْكُمْ ءَايَٰتِنَا وَيُزَكِّيكُمْ وَيُعَلِّمُكُمُ ٱلْكِتَٰبَ وَٱلْحِكْمَةَ وَيُعَلِّمُكُم مَّا لَمْ تَكُونُوا۟ تَعْلَمُونَ

অর্থঃ যেমন,আমি পাঠিয়েছি তোমাদেরই মধ্য থেকে তোমাদের জন্যে একজন রসূল, যিনি তোমাদের নিকট আমার বাণীসমুহ পাঠ করবেন এবং তোমাদের পবিত্র করবেন; আর তোমাদের শিক্ষা দেবেন কিতাব ও তাঁর তত্ত্বজ্ঞান এবং শিক্ষা দেবেন এমন বিষয় যা কখনো তোমরা জানতে না

[সূরা আল বাকারা,আয়াত নং ১৫১]

নবী করিম ﷺ এঁর যতগুলি সিফতি নাম আছে তাতে উম্মি শব্দটিও আছে আর এর আভিধানিক অর্থ সাধারণত যিনি অশিক্ষীত, যার কোন পড়া লেখা নাই,ইংরেজিতে যাকে ইলিটারেট বলা হয়,
কিন্তু এখানে আমাদের নবীর শানে যে উম্মি শব্দ ব্যবহৃত হয় তার আসল অর্থ হবে কোন উস্তাদের সাহায্য ছাড়া যিঁনি পড়ালেখা করেছেন,অথ্যাৎ তিঁনি দুনিয়ার কারো কাছে পড়ালেখা করেননি ঠিকই কিন্তু তাঁর কাছে রয়েছে জ্ঞানের ভান্ডার।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কোরানে করীমকে মানুষের ষড়যন্ত্র ও অভিযোগ থেকে বাঁচানো জন্য আমাদের নবী করিম ﷺ কে কোন ধরনের দুনিয়াবি শিক্ষকের কাছে শিক্ষা নেয়া থেকে বিরত রেখেছেন। যাতে কাফেররা এ অভিযোগ করতে না পারে যে পবিত্র কোরআন নবী করিম ﷺ এঁর নিজস্ব বানানো কিতাব।তাছাড়া যদি নবী দুনিয়ার কোন শিক্ষকের নিকট পড়ালেখা শিখতেন তাহলে সে বলতে পারত যে তোমরা যে নবীর কালমা পাঠ কর সে আমার ছাত্র।
আল্লাহ তায়ালাই নবীকে শিখিয়েছেন সুরা রহমানে এরশাদ হচ্ছে (আর রাহমান আল্লামাল কুরআন) রহমান (আল্লাহ) তার হাবিবকে কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন।
আর কুরআন শিক্ষা করা মানে হল সবকিছু শিক্ষা করা কারন এ কুরআনকে আল্লাহ তায়ালা (ওয়ানাজ্জালনা আলাইকাল কিতাবা তিবিয়ানাল লিকুল্লি শাই) অথ্যাৎ হে হাবিব যে কোরআন আঁমি আঁপনার উপর নাযিল করেছি তাতে সব কিছুর বিস্তারিত বয়ান রয়েছে।
কুরআন এমন কিতাব যাতে ছোট বড় সবকিছুর বয়ানই রয়েছে।
সুতরাং মুল কথা হল আমাদের প্রিয় নবীকে আল্লাহ তায়ালা সরাসরি জ্ঞান দান করেছেন।
সুতরাং ‍নবী করিম ﷺ এঁর শানে উম্মি শব্দের অর্থ করতে গিয়ে অশিক্ষীত,ইলিটারেট শব্দ ব্যবহার করাটা মুলত মুর্খতার শামিল ও চরম বেয়াদবি, মুনাফিকি,মালাউনের কাজ ছাড়া আর কিছুই নয়।



সুতরাং নবীজি ﷺ দুনিয়ার কোন শিক্ষকের কাছে পড়ালেখা করেন নি ঠিক,
কিন্তু আমাদের নবী অশিক্ষীত নন, জ্ঞানহিন নন,ইলিটারেট নন বরং আমাদের নবী শিক্ষিত,জ্ঞানবানদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ,কারন আমাদের নবীজিকে শিক্ষা দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা,
আর আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক প্রদত্ত জ্ঞানে জ্ঞানী হয়ে নবী হলেন উম্মতের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক।
তাই কুরআনের শব্দ উম্মি এর বাহ্যিক অর্থ না নিয়ে এমন অর্থ নিতে হবে যাতে অন্যান্য আয়াত সমুহের সাথে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি না হয়।




আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সঠিক দ্বীন বুঝার তৌফিক দান করুন।
সেই সাথে মুনাফিক,মালাউন, ইয়াজিদের দোসর,নামধারী ভন্ড আলেমদের কাছ থেকে সবাইকে হেফাজত করুন।আমিন।

রবিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৯

আজ ১১ রবিউস সানী ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম


আজ ১১ রবিউস সানী ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম। ফাতেহার অর্থ মহান ওলী আউলিয়া তথা মনীষীগণের জন্য দোয়া। 
এদিন ওলীকুল শিরমণি তৎকালীন যুগের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস, মুফাসসির, ফকীহ, দার্শনিক, সর্বজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষক, সুবক্তা, কাদেরিয়া তরিকার প্রতিষ্ঠাত গাউসুল আজম হযরত শেখ মুহিউদ্দীন বড়পীর আবদুল কাদের জিলানীর (রহ.) ইন্তেকালবার্ষিকী। 
এ দিবসটি সমগ্র বিশ্বে, বিশেষ করে এ উপমহাদেশের মুসলিমদের কাছে অতীব তাৎপর্যপূর্ণ। 
আল্লাহর রাসূলের (সা.) পর্দা করার পর সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীনে ইমামদের সোনালী যুগে কোরআন-হাদিসের আলোকে দুনিয়া ছিল ঝলমল। 
পরবর্তীতে ভোগবাদী স্বার্থাম্বেষী ও বিজাতীয় ষড়যন্ত্রের ফলে উম্মতের ঐক্য নষ্ট হয়ে বিভিন্ন ফেরকার সৃষ্টি হয়। 
যার ফলে মুসলমানদের বিজয়ের ধারা মুখ থুবড়ে পড়ে।
 কিন্তু মহান ওলীগণ জিহাদের ময়দান থেকে সামান্য সময়ের জন্যও পিছু হটেননি। 
তাঁরা শরিয়ত, তরিকত, হাক্কিকত ও মারিফাতের ঝান্ডা নিয়ে বিশ্বের আনাচে-কানাচে ছুটে চলতে শুরু করেন। 
প্রতিষ্ঠা করেন লাখ লাখ দ্বীনি মারকাজ, মসজিদ-মাদ্রাসা ও খানকা। 
এরূপ প্রতিটি খানকাই ছিল তৎকালীন জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়। 
অপরদিকে ছিল শাসনকার্যের দফতর এবং ক্যান্টনমেন্ট স্বরূপ। এসব খানকা থেকেই এলমি রুহানি যোগ্যতা নিয়ে বের হয়েছিলেন হাজার হাজার মর্ধে মুজাহিদ। 
যারা ঘর ছেড়ে দুনিয়ার আনাচে-কানাচে দ্বীনের প্রচার প্রসারে বের হয়ে কাজ সম্পন্ন করে ইন্তেকাল করে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছেন। 
তাদের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ ছিলেন হযরত বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.)। 
বড়পীর আবদুল কাদের জিলানীর (রহ.) সাপ্তাহিক মাহফিলে তৎকালীন জামানায় ৬০-৭০ হাজার মানুষ হাজির থাকতেন। 
তার কণ্ঠের আওয়াজ এবং আহ্বান শুনে অনেকেই আর ঘরে ফেরেননি, ছড়িয়ে পড়েছেন বিশ্বের সর্বত্র। কোটি কোটি মানুষ তার নিকট ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে ধন্য হয়েছেন। 
পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশের ওলীগণের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, বেশির ভাগই কাদেরিয়া, চিশতিয়া তরিকার শায়খ বা পীর। 
এ মহান ব্যক্তির ৫৪ জন সন্তানের পরবর্তী বংশধরগণ এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রেখে গেছেন। এমতাবস্থায় ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম ১১ শরীফ অনুষ্ঠানের গুরুত্ব কত বেশি তা একজন বুঝদার ও বিবেকবান লোকের জন্য বোঝা কঠিন নয়।
 এরপরও যারা ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহমের গুরুত্ব দেবে না, বুঝবে না তারা গাফেল।

বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৯

লেবুর উপকারিতা ও পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া

লেবুর উপকারিতা ও পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া

লেবু, সকলেই কম বেশি খেয়ে থাকি। খিচুরি অথবা যেকোনো খাবারের সাথে এটি অনেকের অনেক প্রিয়। আবার আচার তৈরি করেও অনেকে খেয়ে থাকে।
ছোট একটা ফল কিন্ত এর উপকারিতা প্রচুর আর পুষ্টিগুণেও ভরপুর।
এতে রয়েছে ৬ ভাগ সাইট্রিক অ্যাসিড, প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি, ভিটামিন বি৫, বি৩, বি১, বি২, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, পটাসিয়াম, জিঙ্ক, কার্বোহাইড্রেট ফ্যাট এবং প্রোটিন। 
লেবুর একটা প্রধান উপকারিতা হলো ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ইত্যাদির তৈরি করা রোগ বালাই দূরীকরণ এবং শরীরের সার্বিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি। 
আর অন্যটা হচ্ছে হজম শক্তি বাড়ানো এবং যকৃৎ পরিষ্কারের মাধ্যমে ওজন কমানোর ক্ষমতা। সকালে খালি পেটে এক কাপ পাকা লেবুর রস মেশানো উষ্ণ জল খান, আর তারপর দেখুন না কি হয়। আর যদি যোগ হয় মধু, তাহলেতো জাদু। 
লেবুর কত গালভরা নাম কাগজি লেবু, পাতি লেবু, কমলা লেবু, মোসাম্বি লেবু, গন্ধরাজ, বাতাবি লেবু ও গোড়ালেবু।

লেবুর উপকারিতা নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো

লেবুতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি। আর ভিটামিন সি ঠাণ্ডা কাশি প্রতিরোধে খুবই উপকারী।

লেবুতে থাকে ইলেকট্রোলাইটস ( যেমন পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ইত্যাদি)। লেবু-জল আপনাকে হাইড্রেট করে, শরীরে যোগান দেয় এইসব প্রয়োজনীয় উপাদানের।

অন্য যে কোনো খাবারের থেকে লেবু-জল ব্যবহারে লিভার অনেক বেশী পরিমানে, দেহের প্রয়োজনীয় এনজাইম তৈরি করতে পারে।

লেবুতে বিদ্যমান ফ্ল্যাবোনয়েড যা শরীরে ভাইরাস প্রতিরোধ করে, এটি শরীরকে ফিট রাখে। 
শরীরের পিএইচ লেভেল উন্নত করে। পিএইচ লেভেল যত উন্নত, শরীর রোগের সাথে লড়াই করতে তত সক্ষম।

লেবুর রস ও গরম পানি একসাথে মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে পান করলে অন্ত্রের কার্যক্রম ঠিক রাখে এবং শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমিয়ে ফেলে।

এটি রুটিন অনুযায়ী খেলে চোখের অসুখ দূর হয়।

হাড় জয়েন্ট ও ম্যাসল এর ব্যথা দ্রুত কমায়।

লেবুতে আছে ক্যান্সার বিরোধী ২২ প্রকার যৌগ। 
যা ক্যান্সারের সাথে লড়াই করে ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

বুক-জ্বালা দূর করে।

লেবু অন্ত্রের কৃমি ধ্বংস করতে সাহায্য করে।

যাঁরা লিভারের সমস্যায় ভুগছেন দীর্ঘদিন, তাঁরা লেবু খাবেন নিয়ম করে। 
উষ্ণ কিংবা গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে সকালে খাবারের আধা ঘণ্টা আগে খেয়ে নিন, উপকৃত হবেন।

মুখের রুচি বাড়াতে লেবুর জুড়ি নেই।

লেবুতে থাকে সাইট্রিক এসিড।
যা, আপনার হজম-তন্ত্রকে উন্নত রাখে। এটা মেটাবলিজম বা হজমশক্তি বাড়ায়। 
ভূরিভোজের পর লেবু খেয়ে নিন। 
খাবারগুলো সহজে হজম হয়ে যাবে এবং পেট ফাঁপায় ওষুধের মতো কাজ করবে।

ওজন দ্রুত কমাতে সহায়তা করে। লেবুতে থাকে পেকটিন-ফাইবার যা খিদে নিয়ন্ত্রণ করে।

পেট পরিষ্কার ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হতে সহায়তা করে।

এটি শরীরের রক্তবাহী ধমনী ও শিরাগুলিকে পরিষ্কার এ শক্তিশালী করতে ভূমিকা রাখে।

লেবু ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।

লেবু-জল টক্সিক উপাদান দূর করে লিভারকে পরিষ্কার রাখে।

স্কার্ভি রোগ প্রতিরোধ করে। দাঁত ব্যথা কমায়।

৪/১ লেবুর রস, কিছু লবণ এবং লেবুর রসের অর্ধেক পরিমাণ বেকিং সোডা নিয়ে দাঁতে ঘষুন। 
এটি আপনার দাঁত আরও সাদা করবে।

মুখের দুর্গন্ধ দূর করে দীর্ঘক্ষণ সজীব রাখে।

শরীরের রিঙ্কেল কমাতে সাহায্য করে।

আপনার নার্ভাস-সিস্টেমে দারুণ কাজ করে। 
লেবু-জলের পটাশিয়াম আপনার বিষণ্ণতা ও উৎকণ্ঠা দূর করতে সহায়ক।

কিডনী ও পাকস্থলীর পাথর দূর করতে অসাধারণ কার্যকর।

লেবু ইউরিক অ্যাসিড সমস্যা দূর করতে সহায়ক।

গর্ভবতী নারীদের জন্য খুবই ভালো লেবু-জল । 
এটা শুধু গর্ভবতীর শরীরই ভালো রাখে না, বরং গর্ভের শিশুর অনেক বেশী উপকার করে। 
লেবুর ভিটামিন ‘সি’ ও পটাশিয়াম শিশুর হাড়, মস্তিষ্ক ও দেহের কোষ গঠনে সহায়তা করে।

যাঁদের হালকা শ্বাসকষ্ট আছে, তাঁরা নিয়ম করে খাবারের আগে এক চামচ লেবুর রস খেতে পারেন। যাঁরা মাইল্ড অ্যাজমায় ভুগছেন, লেবুর রস তাঁদের জন্য ওষুধের বিকল্প হিসেবেই কাজ করবে।

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় আপনার দেহের কোষ ও ত্বককে অকাল বার্ধক্যের হাত থেকে রক্ষা করে।

এটি ত্বকের সংকোচন সৃষ্টিকারী পদার্থকে নিয়ন্ত্রণে রাখে।

লেবুর রস চুলের দারুণ লাইটেনার হিসেবে করে। 
কোনো কিছু দেয়ার প্রয়োজন নেই। লেবুর রস চুলে দিয়ে নিন। 
এতে সূর্যের তাপ মাথাকে গরম করতে পারবে না।

জেল ম্যানিকিউর নখকে দুর্বল করে দেয়। 
এতে নখ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। লেবুর রস অলিভ অয়েলের সঙ্গে মিশিয়ে তাতে নখ ভিজিয়ে রাখুন। 
এতে ক্ষয়প্রাপ্ত নখ সুন্দর ও সুস্থ হয়ে উঠবে।

শীতের শুষ্ক ঠোঁটে যেমন চামড়া ওঠে, আপনার ঠোঁট তেমন হয়ে থাকলে লেবুই ভরসা। 
রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে লেবুর রস ঠোঁটে দিয়ে ঘুমিয়ে যান। এতে আপনার অধর হবে স্ফীত, কোমল ও মসৃণ।

চুলে তেল দিতে হয়। কিন্ত শ্যাম্পু করার পরও তাতে তেল চিটচিটে ভাব থাকতে পারে। 
এ ক্ষেত্রে লেবুর রস বিস্ময়কর কাজ দেয়।
 লেবুর রসে অ্যাসট্রিনজেন্ট রয়েছে, যা তেলতেলে অংশ শুষে নেয়। চুল হয় ঝরঝরে।

শুষ্ক চুলের কন্ডিশনারঃ 
লেবুর রস, ৩/৪ কাপ অলিভ অয়েল, ১/২ কাপ মধু, দিয়ে একটি প্যাক তৈরী করে চুলে লাগিয়ে ৩০ মিনিট পরে শ্যাম্পু করুন। এটি চুলকে ড্যামেজ ফ্রি করবে।

চুল পড়া বন্ধেঃ 
৩-৪ টেবিল চামচ নারিকেল তেল নিয়ে তাতে অর্ধেক পরিমাণ লেবুর রস মিক্স করে সপ্তাহে একদিন চুলে লাগান। ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে ফলাফল দেখুন।

নতুন চুল গজাতেঃ
কয়েক ফোঁটা লেবুর রস এবং আমলকীর রস মিক্স করে প্রতিদিন রাতে স্ক্যাল্পে লাগিয়ে নিন এবং সকালে ধুয়ে ফেলুন।

খুশকির সমস্যা সমাধানে কাগুজি লেবু ,মেথি বা পেঁয়াজের রস ব্যবহার করতে পারেন।

লেবুতে ভিটামিন সি এবং সাইট্রিক এসিড রয়েছে। 
এই রস শুধু ত্বকের তেলতেলে ভাবই দূর করে না, সেই সঙ্গে ত্বককে উজ্জ্বল করে দেয়।
 তবে এই ঔজ্জ্বল্য ধরে রাখতে এসপিএফ ক্রিম ব্যবহার করতে হবে।

বয়সের ছাপ পড়ে বলিরেখার মাধ্যমে। 
তা ছাড়া অনেকের এমনিতেই বলিরেখা পড়তে পারে। 
লেবুর রস এই বলিরেখা দূর করতে দারুণ কার্যকর। রেখাগুলোতে লেবুর রস দিয়ে ১৫ মিনিট রাখুন এবং ধুয়ে ফেলুন।

মানুষের কনুই এবং হাঁটুর অংশটি খসখসে হয়। 
এই অংশ দুটিকে মসৃণ এবং সুন্দর করে দেয় লেবুর রস। 
এক টেবিল চামচ লবণ, সামান্য অলিভ ওয়েল এবং কিছু লেবুর রস মিশিয়ে লাগান। 
দেখুন জাদুর মতো কাজ করবে।

যাদের ত্বকে ময়েশ্চারাইজারের অভাব রয়েছে তারা কয়েক ফোঁটা ডাবের পানিতে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে ত্বকে ঘষুন। 
দেখবেন, ত্বক সুন্দর কোমল হয়েছে। আবার লেবুর রসে তা উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।

ডিওডরেন্ট ব্যবহার না করলেও চলবে।
 লেবুর রসে সাইট্রিক অ্যাসিড থাকে যা বাজে গন্ধ হটিয়ে দেয়। 
তাই দুর্গন্ধের স্থানে লেবুর রস মেখে নিন। দুর্গন্ধ চলে যাবে।

নাকের ওপর বা ত্বকে ব্ল্যাক হেড সৌন্দর্য হানি ঘটায়। 
লেবুর রস এসব ব্ল্যাক হেডের গোড়া নরম করে তাদের তুলে আনে। 
লেবুর রসের সঙ্গে আর কিছু মেশানোর প্রয়োজন নেই। 
বেশ ভালো করে ত্বকে রস দিয়ে ঘষুন।

মুখের শ্রী বৃদ্ধি করার জন্য
এক টুকরো লেবুর রসের সঙ্গে দুই চামচ দুধ মিশিয়ে তুলার সাহায্যে মুখে প্রলেপ লাগান। 
১৫ – ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলু্ন।

যাদের মুখে ব্রণ আছে তারা একটি ছোট তুলার বলে লেবুর রস নিয়ে স্কিন পরিষ্কার করলে ব্রণ কমে যায়। এটি রাতে মুখ ধোয়ার পর ব্রণের দাগে লাগিয়ে রাখলে দাগ তাড়াতাড়ি সেরে যায়।

লেবুর রস রস একটি প্রাকৃতিক অ্যানটিসেপ্টিক, যদি এটি মুখে মাস্ক হিসেবে নেয়া হয় তবে এটি স্কিনের অতিরিক্ত তেল ময়লা দূর করবে এবং ব্যাক্টেরিয়া সংক্রমণ হতে দূরে রাখবে।

অন্যান্য ব্যবহারঃ 
মাইক্রোওভেন পরিষ্কার করতে লেবুর খোসা ব্যবহার করা হয়।

রান্নাঘর, খাবার টেবিল, ষ্টোভ, এর তেলের দাগ পরিষ্কার করতে অর্ধেক পরিমাণ লেবু এবং লবণ নিয়ে তৈলাক্ত স্থানে কিছুক্ষণ ঘষে নিন এরপর পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুছে ফেলুন।

চপিং বোর্ড পরিষ্কার করতে লেবু ব্যবহার করতে পারেন।

ঘরে যদি চিনি কাঁকুড়ে হয়ে যায় তবে লেবুর খোসা ব্যবহার করে দেখুন।

শুনতে আজব লাগলেও শা তাড়াতে বেশ কার্যকর লেবু। 
এজন্য লেবুকে দুইভাগ করে কেটে নিয়ে কাটা অংশে লবঙ্গ গেঁথে নিতে হবে। 
তারপর ঘরের একটি স্থানে রেখে দিন। মশার উপদ্রব থেকে দূরে থাকা যাবে।

পিঁপড়া দূর করতে কয়েক টুকরা লেবুর খোসা জানালার কোণে, দরজার কোণে বিশেষ করে যেখান দিয়ে পিঁপড়া এবং অন্যান্য পোকামাকড় আসে সেদিকে রেখে দিন। দেখবেন পিঁপড়া তেমন একটা আসছে না। 
কারণ পিঁপড়া এবং অন্যান্য পোকামাকড় লেবুর গন্ধ একদম সহ্য করতে পারে না।

ফ্রিজের দুর্গন্ধ দূর করতে একটি বা দুটি লেবুর খোসা রেখে দিলে দেখা যায়, ফ্রিজের ভেতরের দুর্গন্ধ দূর হয়ে গেছে।

লেবুর পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া :

যাদের অ্যাসিডিটির সমস্যা আছে তাদের অতিরিক্ত লেবু খেলে বুক জ্বালা করে।

লেবুর রস বা লেবুতে কারো কারো অ্যালার্জি হয়ে থাকে, তাই আগে থেকে জেনে নিয়ে লেবু চিকিৎসা শুরু করা উচিত৷ তা না হলে হিতে বিপরীত হতে পারে৷

ওজন কমানোর উদ্দেশ্যে খাদ্যাভ্যাসে লাগাম টানা হলে কার্বোহাইড্রেট এবং অন্যান্য পুষ্টিগুণের অভাব দেখা দিতে পারে।
 সেক্ষেত্রে লেবু পানি পানের পরিমাণ বাড়িয়ে দিলে শরীরে ক্লান্তি ভর করতে পারে।

অতিরিক্ত লেবু সেবনে গ্যাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে। 
এতে পেট ফাঁপাসহ নানান ধরনের সমস্যা ও অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে।

অতিরিক্ত লেবু ও লেবুর শরবত পানের ফলে পেটে ব্যথা এবং তল পেটে ব্যথা অনুভূত হতে পারে।

লেবুর শরবত বেশি পান করলে শরীর থেকে অনবরত বিষাক্ত পদার্থ বের করতে থাকে। 
এতে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশিবার বাথরুমে যেতে হতে পারে যা কিছু ক্ষেত্রে বেশ অস্বস্তিকর।

লেবুর শরবত বেশি পান করলে কিছুটা দুর্বলতা অনুভূত হতে পারে।

যে কোনো মানুষের পরিমিত লেবু খাওয়া স্বাস্থের জন্য ভালো কিন্ত অতিরিক্ত লেবু স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর।


শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১৯

কিশমিশের উপকারিতা

খাবারে স্বাদ কিংবা সুন্দরের জন্যে আমরা সাধারণত কিশমিশ ব্যবহার করে থাকি।
 কিন্ত আমরা জানি না যে কিশমিশে রয়েছে নানা ধরনের ভিটামিন ও মিনারেল। 
শুধু কিশমিশ না, কিশমিশ মেশানো পানি খেলেও তার রয়েছে নানা উপকারিতা। 
কিশমিশের পানি খেলে লিভারে জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়া শুরু হয় যার দরুন শরীরের অভ্যন্তরে দ্রুত রক্ত পরিশোধন হতে থাকে। 
এক সপ্তাহ কিশমিশের পানি পান করলে পেট একদম পরিষ্কার হয়ে যাবে, 
পেটের গন্ডগোল থাকবে না সেইসঙ্গে ভরপুর শক্তি পাবেন। 
এছাড়া কিশমিশ হার্টকে ভালো রাখে এবং ক্ষতিকারক যে কোলেস্টেরল রয়েছে তা দূর করে।

রক্ত পরিষ্কার করতে কিডনির পাশাপাশি লিভারকেও ভালোভাবে কাজ করতে হবে।
তাই লিভার ও কিডনির সমস্যা হলে, ক্ষতিকারক পদার্থ শরীরে জমতে শুরু করে আমাদের অসুস্থ করে তোলে। 
তাই লিভার ও কিডনিকে সবসময় চাঙ্গা রাখতে হবে।
 কিশমিশ ভেজানো পানি সেই কাজটাই ভালোভাবে করে।
 যার দরুণ হজমশক্তিও বাড়ে। 

এবার আসুন কিশমিশের কিছু উপকারী গুন সম্পর্কে জেনে নেই।

দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে
নিয়মিত কিশমিশ খেলে বৃদ্ধ বয়সে দৃষ্টিহীন হওয়ার সম্ভবনা কমে যায়। 
পাশাপাশি কিশমিশে থাকা পলিফেনল উপাদান ক্ষতিকারক ফ্রি-রেডিকেলস ধ্বংস করে চোখকে বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করে।

রক্তশূন্যতা রোধ করে
রক্তে লৌহের পরিমাণ কম হলে অবশাদ, দুর্বলতা, হতাশায় ভুগতে পারেন, ব্যহত হতে পারে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও।
কিশমিশে প্রচুর পরিমাণে লৌহ আছে যা রক্তশূণ্যতায় ভোগা রোগির খুবই উপকারি। 
এছাড়া রক্ত ও লোহিত কণিকা তৈরি জন্য দরকার ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ও কপার, যা কিশমিশে থাকে। 
এককাপ কিশমিশ ৬মি.গ্রা. লৌহের যোগান দেয়, যা প্রতিদিনের লৌহের চাহিদার ১৭ শতাংশ পূরণ করত পারে।

ভালো রাখে মুখের স্বাস্থ্য

ক্যান্ডির মতো দাঁতে লেগে থাকেনা কিশমিশ, ফলে থাকে না ক্যাভিটি তৈরির আশঙ্কা। 
বরং কিশমিশের পাইথোনিউট্রিয়েন্ট, অলিয়ানলিক এসিড নামে পরিচিতি যা ব্যাকটেরিয়া থেকে তৈরি দাঁতের ক্যাভিটি ধ্বংস করে মুখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।

হাড় সুস্থ রাখে

আজকাল অস্টিওপোরোসিস রোগে অনেকেই ভুগে থাকেন। 
হাড়ের এই রোগ প্রতিরোধ করতে বোরন নামের খনিজ পদার্থ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। 
আর কিশমিশ বোরনের অন্যতম উৎস। 
বোরনে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম— যা হাড় গঠনের পাশাপাশি শরীরে টেসটোসটেরন এবং ইস্ট্রোজেনের মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে।

অ্যাসিডিটি স্বাভাবিক করে

অতিরিক্ত অ্যাসিডিটি বা রক্ত দুষিত হওয়াকে বলে অ্যাসিডোসিস, যা থেকে আরথ্রাইটিস, 
চামড়া রোগ, হৃদরোগ এবং ক্যান্সার হতে পারে।
 অ্যান্টাসিডস হিসেবে পরিচিতি দুটি উপাদান ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাশিয়াম শরীরের ক্ষরীয়ভাব স্বাভাবিক করে অ্যাসিডোসিসের হাত থেকে বাঁচায়। 
আর এই উপাদানগুলো কিশমিশে রয়েছ।

আঁশে পূর্ণ
কোলোরেক্টাল ক্যান্সার থেকে মুক্ত থাকার জন্য যারা খ্যাদ্যাভ্যাসে আঁশযুক্ত খাদ্য রাখতে চান তাদের জন্য কিশমিশ হতে পারে আদর্শ খাবার। 
কারণ এক টেবিল-চামচ কিশমিশ আপনাকে দিতে পারে এক গ্রাম হজম সহায়ক আঁশ।

অ্যান্টি কোলেস্টের উপাদান
কিশমিশে কোলেস্টেরলের পরিমাণ শূন্য।
 শুধু তাই নয়, এতে আছে অ্যান্টি কোলেস্টেরল উপাদান যা শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল কমায়। এছাড়া কিশমিশে থাকা দ্রবণীয় ফাইবার যকৃত থেকে খারাপ কোলেস্টেরল দূর করতে সহায়তা করে। এককাপ কিশমিশ থেকে ৪ গ্রাম দ্রবণীয় ফাইবার পাওয়া যায়।
 তাছাড়া কিশমিশে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট পলিফেনল কোলেস্টেরলকে শরীর থেকে এনজাইম শোষণ করা থেকে বিরত রাখতে সাহায্য করে।

মস্তিষ্কের খাদ্য
কিশমিশে থাকা বোরন মস্তিষ্কের খাদ্য হিসেবে কাজ করে। 
তাছাড়া বোরন মনোযোগ বৃদ্ধি, চোখের সঙ্গে হাতের সামঞ্জস্য বাড়ানো স্মৃতিশক্তি তীক্ষ্ণ করতে সাহায্য করে। 
একশ গ্রাম কিশমিশ থেকে ২.২ মি.গ্রা. বোরন পাওয়া যায়।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
বিষাক্ত পদার্থ দূর করে রক্ত শুধু পরিষ্কারই করে না, পাশাপাশি রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে কিশমিশ। 
মূলত কিশমিশে থাকা পটাসিয়াম রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। 
সাধারণত উচ্চ মাত্রার সোডিয়াম শরীরে রক্তচাপ বাড়ায়। 
কিশমিশ শরীরে সোডিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

দাঁতের জন্য উপকারি

কিশমিশে থাকা অলিয়ানলিক অ্যাসিড দাঁতের ক্ষয় আটকায়, 
দাঁতে ফুটো হওয়া ও দাঁত ভেঙে যাওয়া বন্ধ করে, 
সেই সঙ্গে দাঁতকে দেয় সব রকমের সুরক্ষা। 
মেরে ফেলে স্ত্রেপ্টোকক্কাস মিউটানস ও পরফাইরমোনাস জিঞ্জিভালিস নামের দুটি দাঁত ও মাড়ির জীবাণুকে। 
আর এর ক্যালসিয়াম দাঁতের এনামেলের ক্ষয় রোধ করে দাঁতকে করে তোলে কঠিন। 
শুনতে আশ্চর্য লাগতে পারে। কিন্তু এটা প্রমাণিত যে কিশমিশ খাওয়ার সময় দাঁতে লেগে গেলে তা আসলে দাঁতের পক্ষে ভালো। 
এতে থাকা অলিয়ানলিক অ্যাসিড যতক্ষন দাঁতের সংস্পর্শে থাকে, 
ততক্ষণ প্রত্যক্ষ ভাবে রোধ করে জীবাণুর আক্রমণ। 
আর এই কাজে সাহায্য করে সঙ্গে উপস্থিত বোরনও।

যৌন অক্ষমতা দূর করে
প্রাচীন কাল থেকেই কামোত্তেজক হিসেবে কিশমিশ সুপরিচিত। 
এতে আরজিনিন নামের একটি অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে, যা ইরেক্টাইল ডিসফাংশনে দারুণ কাজ করে। 
এছাড়াও শুক্রাণুর সচলতা বাড়িয়ে গর্ভধারণের সম্ভাবনা বাড়ায় আরজিনিন। 
সঙ্গে বাড়ায় যৌন ক্ষমতাও।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে
খাবার পর আমাদের রক্তে শর্করার পরিমাণ খুব বেড়ে যায়।
 তাই প্রাকৃতিক নিয়মে এই সময় ইনসুলিনের ক্ষরণ বেড়ে যায় এবং সঙ্গে সঙ্গে রক্তে শর্করার পরিমাণ কমতে শুরু করে। 
কিন্ত ইনসুলিন ঠিক মতো কাজ করতে না পারলে দেহে সুগারের মাত্রা বাড়তেই শুরু করে। 
আর এমনটা হলেই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। 
সুগারের এই বাড়বাড়ন্ত রোধে কিশমিশ খুবই উপকারি। 
তাই তো সুগার রোগীদের কিশমিশ খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

ক্যান্সারের সম্ভাবনা কমায়
কিশমিশের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ক্যাটেচিন্স থাকে, যা এক ধরণের পলিফেনলিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এই অ্যান্টি-অক্সিডেন্টটি শরীরের বিভিন্ন প্রত্যঙ্গ এবং রক্তে উপস্থিত ক্ষতিসাধনকারী ফ্রি-র‍্যাডিকালদের নষ্ট করে দিতে সাহায্য করে। 
এই ধরণের ফ্রি-র‍্যাডিকাল ক্যান্সারের কোষ বেড়ে উঠতে সাহায্য করে। 
তাই তো প্রতিদিনের ডায়েটে নিয়ম করে কিশমিশ রাখা খুবই প্রয়োজনীয়।

হাইপারটেনশন কমায়
বহু বছর ধরেই এটা মানা হয় যে, কিশমিশ রক্তচাপ কমায় এবং হৃদরোগের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়। সম্প্রতি একটি গবেষণায় এই বিষয়ক আরও বেশ কিছু তথ্য উঠে এসেছে। 
জানা যাচ্ছে যে, কিশমিশ খেলে হাইপারটেনশন কমে যায়। 
যদিও কিভাবে এমনটা হয়, তা এখনও পরীক্ষা দ্বারা প্রমাণিত হয়নি বা এই বিষয়ে কোনও সঠিক সিদ্ধান্তে আশা যায়নি। 
কিশমিশে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকায় এটি হাইপারটেনশন সহ হৃদরোগের সম্ভাবনা কমাতে পারে। 
এছাড়াও কিশমিশের মধ্যে উপস্থিত ফাইবার ধমনীর যত্নে দারুণ উপকারি ভূমিকা পালন করে।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
কিশমিশ কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় দারুণ কাজ দেয়।
 কারণ কিশমিশের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে এবং এই কারণেই পানির সংস্পর্শে আসার সঙ্গে সঙ্গে কিশমিশ ফুলে ওঠে। 
এই ফাইবারই খাবার হজম করিয়ে তাকে বর্জ্যের আকারে শরীরের বাইরে বেরিয়ে যেতে সাহায্য করে। তবে শুধুমাত্র কোষ্ঠকাঠিন্যে নয়, 
ডাইরিয়া বা আমাশয় রোগে আক্রান্ত রোগীদেরও সেরে উঠতে সাহায্য করে কিশমিশ।

ওজন বাড়াতে সাহায্য করে
আপনি কি খুবই রোগা?
 ওজন বাড়াতে চাইছেন? 
তাহলে নিয়ম করে কিশমিশ খান। 
কারণ কিশমিশের মধ্যে ফ্রক্টোজ এবং শর্করা রয়েছে। এককথায় ক্যালরিতে ঠাসা। 
তাই তো এই খাবারটি খেলোয়াড় এবং বডি বিল্ডারদের মেনুতে প্রতিদিন রাখার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। 
কারণ এদের প্রচুর পরিমাণে এনার্জির দরকার হয়, যা পূরণ করতে কিশমিশ সাহায্য করে। 
কিশমিশের মধ্যে নেই খারাপ কোলেস্টেরল। 
উল্টে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, অ্যামাইনো অ্যাসিড এবং মিনারেল।

অনিদ্রা
অনেকের ঠিকমত ঘুম আসে না।
 তাদের জন্য কিসমিস অনেক উপকারি। 
কারন কিশমিসের মধ্যে রয়েছে প্রচুর আয়রন যা মানুষের অনিদ্রার চিকিৎসায় বিশেষভাবে উপকারী। তাই আজ থেকে কিসমিস খাওয়া শুরু করুন, 
দেখবেন অনেক উপকার পাবেন।

যেভাবে তৈরি করবেন কিশমিশের পানি

২ কাপ পানি (৪০০ এমএল) ও ১৫০ গ্রাম কিশমিশ লাগবে। 
কি ধরনের কিশমিশ কিনছেন, সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। 
খুব চকচক করছে, এমন কিশমিশ কিনবেন না। 
তাতে কেমিক্যাল মেশানো থাকে। 
চেষ্টা করুন গাঢ় রঙের কিশমিশ কিনতে। তাও এমন কিশমিশ নিতে হবে যা খুব শক্তও না আবার একদম নরম তুলতুলেও না। 
কিশমিশগুলোকে ভালো করে কয়েক বার ধুয়ে নিন। 
এরপর একটি পাত্রে দু-কাপ পানি দিয়ে রাতভর কিশমিশ ভিজিয়ে রাখুন। 
সকালে কিশমিশ ছেকে নিয়ে সেই পানিটা হালকা গরম করে সকালে খালি পেটে খেয়ে নিন। 
৩০ থেকে ৩৫ মিনিট অন্য কিছু খাবেন না।
কিসমিসের অপকারিতা
কিসমিসে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন বিদ্যমান আছে। 
এতে এমন কোন ক্ষতিকর উপাদান নেয়, যার ফলে দেহের কোন ক্ষতি হতে পারে। 
তাই আপনারা নিশ্চিন্তে কিসমিস খেতে পারেন।

বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৯

সরকারি আইনগত সহায়তায় টোল ফ্রি জাতীয় হেল্পলাইন ১৬৪৩০


গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রসার ও বিকাশের ওপর গুরত্ব  আরোপ করে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ : ভিশন-২০২১’ ঘোষণা করেছেন।
সরকারি সেবাসমূহ তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে দ্রুত জণগণের কাছে নিয়ে আশাই এর মূল উদ্দেশ্য। উন্নয়নের জন্য তথ্য প্রযুক্তি বা ডিজিটাল বাংলাদেশ মানে শুধু কম্পিউটার নয়,
এদেশের জনসংখ্যার এক বড় অংশের  হাতে মোবাইল ফোন আছে,
কাজেই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সরকারি সেবার বার্তা দ্রুততম সময়ে জনগণের হাতের মুঠোয় নিয়ে আসা সম্ভব।

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের অধীনে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা ‘সকল মানুষের বিচারে প্রবেশ অধিকার’ - এই সাংবিধানিক অধিকার রক্ষায় সরকারি অর্থায়নে আইনী পরামর্শ ও মামলা পরিচালনায় আইনগত সহায়তা দিয়ে আসছে। 
রাষ্ট্রের অসহায়, দরিদ্র ও সুবিধা-বঞ্চিত সকল মানুষদের এই সেবা প্রদান করার জন্য বাংলাদেশের ৬৪ টি জেলায় জেলা লিগ্যাল এইড অফিস স্থাপন করা হয়েছে।

বর্তমান সরকার অসহায়, দরিদ্র , নির্যাতিত সকল শ্রেণীর মানুষের আইনগত অধিকার প্রতিষ্ঠাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব আরোপ করে “আইনি সেবা” নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সম্পূর্ণ সরকারী অর্থায়নে “সরকারি আইনি সেবার মানোন্নয়নে সহায়তা প্রদান” প্রকল্পের আওতায়  জাতীয় পর্যায়ে সম্পূর্ণ টোল ফ্রি একটি নম্বরের মাধ্যমে হেল্পলাইন সার্ভিস কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছে। 
এই টোল ফ্রি নম্বরটি হলো :

১৬৪৩০

এই শর্টকোড নম্বরটি নিয়ে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে একটি কল সেন্টার নির্মাণ করা হয়েছে। 
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৮ এপ্রিল ২০১৬ খ্রিস্টাব্দ তারিখে সরকারি আইনগত সহায়তায় জাতীয় হেল্পলাইন কলসেন্টারটি উদ্বোধন করেছেন।

সোমবার, ১১ নভেম্বর, ২০১৯

কোমরব্যথার কারণ



কোমরব্যথা স্বল্পমেয়াদি, অর্থাৎ এক মাসের কম সময় থাকে এবং দীর্ঘমেয়াদি বা এক মাসের বেশি সময় থাকে। 
উপযুক্ত চিকিৎসা নিলে ৯০ শতাংশ রোগী দুই মাসের মধ্যে ভালো হয়ে যান।

কোমরব্যথার কারণ
পেশি, হাড়, জোড়া, লিগামেন্ট, জোড়ার আবরণ, ডিস্ক (দুই কশেরুকার মধ্যে থাকে) ও স্নায়ুর রোগ বা ইনজুরি।
বুক, পেট ও তলপেটের মধ্যকার বিভিন্ন অঙ্গের সমস্যার জন্য কোমরব্যথা হতে পারে।

১. যাঁরা অফিসে দীর্ঘক্ষণ বসে একই ভঙ্গিতে কাজ করেন। এতে দেখা যায়, কোমরে ব্যথা প্রচণ্ড হয়ে থাকে।

২. বসার চেয়ার টেবিল ঠিকমতো না হলে বা ঠিকমতো না বসলে বা সামনে-পেছনে ঝুঁকে বসলে কোমরে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হতে পারে।

৩. দীর্ঘক্ষণ ড্রাইভিং করলে বা বেশি সামনে ঝুঁকে গাড়ি চালালে কোমর ব্যথা হতে পারে। ড্রাইভিংয়ের সময় পেছনে কিছু সাপোর্ট নেওয়া উচিত।

৪. যাঁরা শুয়ে বা কাত হয়ে বই পড়েন বা অন্য কাজ করেন, তাঁদের মেরুদণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ব্যথা অনুভূত হয়।

৫. অনেকেই আছেন যাঁরা কোনো ভারী জিনিস সঠিক নিয়মে তোলেন না। ফলে মেরুদণ্ডে অস্বাভাবিক চাপ পড়ে এবং তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ব্যথা হয়।

কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন?
সব সময় ধরে বা জমে আছে—এ ধরনের ব্যথা। ভারী ওজন তোলা বা অতিরিক্ত কাজের পর তীক্ষ্ণ ব্যথা। কোমর থেকে নিতম্ব, ঊরু ও পায়ের আঙুল পর্যন্ত ব্যথা বিস্তৃত হলে। 
পায়ে দুর্বলতা বা অবশ ভাব হলে। হাঁচি, কাশি দিলে বা সামনে ঝুঁকলে ব্যথা বেড়ে যায়। প্রস্রাব বা পায়খানার নিয়ন্ত্রণ না থাকলে। শোয়া অবস্থায় বা শোয়া থেকে ওঠার সময় ব্যথা হলে।

চিকিৎসা
কোমরব্যথার চিকিৎসার মূল লক্ষ্য হলো ব্যথা নিরাময় করা এবং কোমরের নড়াচড়া স্বাভাবিক করা। পূর্ণ বিশ্রাম কিন্তু দীর্ঘদিন বিশ্রাম নিলে ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হয়ে যায়। তীব্র ব্যথা কমে গেলেও ওজন তোলা, মোচড়ানো পজিশন, অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম ও সামনে ঝুঁকে কাজ করা বন্ধ করতে হবে। সঠিক উপায়ে বসার অভ্যাস করতে হবে এবং প্রয়োজনে ব্যাক সাপোর্ট ব্যবহার করতে হবে। গরম সেঁক (গরম প্যাড, গরম পানির বোতল বা উষ্ণ পানিতে গোসল) নিতে হবে। পেশি নমনীয় ও শক্তিশালী হওয়ার ব্যায়াম করতে হবে। কিছু ব্যায়াম কোমরব্যথা প্রশমনে সাহায্য করে, এমনকি ওষুধের চেয়েও ভালো ফল দেয়। এই ব্যায়াম প্রতিদিন রাতে ও সকালে বিছানায় শুয়ে শুয়ে করতে পারেন। সময় লাগবে সর্বোচ্চ ৭ মিনিট।

১. সমতল হালকা নরম বিছানায় চিত হয়ে শুয়ে দুই হাত শরীরের দুই পাশে রেখে দুই পা সোজা করে শুতে হবে। হাঁটু ভাঁজ না করে এক পা ওপরের দিকে তুলুন যত দূর সম্ভব। ১০ সেকেন্ড পা তুলে রাখতে হবে। একইভাবে অপর পা ওপরে তুলুন এবং একই সময় নিন।

২. এবার একইভাবে হাঁটু ভাঁজ না করে একসঙ্গে দুই পা তুলুন এবং একই সময় নিন।

৩. এবার এক হাঁটু ভাঁজ করে দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে হাঁটুকে বুকে লাগানোর চেষ্টা করুন। ১০ সেকেন্ড থাকুন। একইভাবে অপর হাঁটু বুকে লাগাতে হবে।

৪. একসঙ্গে দুই হাঁটু ভাঁজ করে দুই হাতে জড়িয়ে বুকে লাগাতে হবে।

৫. সর্বশেষ দুই পা সোজা করে পায়ের পাতার দিকে সটান করে ১০ সেকেন্ড রাখতে হবে।

প্রতিটি ধাপ ১০ সেকেন্ড দীর্ঘায়িত হবে বা ১০ গোনা পর্যন্ত করতে হবে।

© স্বত্ব প্রথম আলো
ডা. কাজী শামীমুজ্জামান : সহযোগী অধ্যাপক, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান

রবিবার, ৩ নভেম্বর, ২০১৯

কিভাবে পাবেন অনলাইনে ভূমির আরএস খতিয়ান?

‘আরএস খতিয়ান’ 

অ্যাপ্লিকেশনটি মূলত ‘জমি’ নামক জাতীয় ভূমি-তথ্য ও সেবা অনলাইন প্ল্যাটফর্মের (www.land.gov.bd) একটি অংশ।

এছাড়া মোবাইল অ্যাপ, ‘rsk.land.gov.bd’ এবং ‘drroffice.land.gov.bd’ ওয়েবসাইটের মাধ্যমেও বাংলাদেশের যেকোনো নাগরিক ঘরে বসে অথবা নিকটস্থ যেকোনো ডিজিটাল সেন্টারে অথবা পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে নিজের জমি সংক্রান্ত তথ্য দেখার সুযোগ পাবেন।

অনলাইনে খতিয়ান সংগ্রহের জন্য নির্ধারিত বিভাগ, জেলা, উপজেলা ও মৌজা বাছাই করতে হবে। খতিয়ান নম্বর বা দাগ নম্বর বা মালিকানা নাম বা পিতা বা স্বামীর নাম দিয়ে খতিয়ান খোঁজা যাবে।

এছাড়া খতিয়ানের সার্টিফাইড কপির জন্য অনলাইনে আবেদন, আবেদন নিষ্পত্তি বিষয়ে ট্র্যাকিং ও কর্তৃপক্ষ কর্তৃক মনিটরিং করার সুবিধা রয়েছে এই অনলাইন ব্যবস্থায়।

অনলাইনে খতিয়ানের কপি পেতে অনলাইনে আবেদনের সময় নাগরিকের নাম, পরিচয় পরিচয়পত্র নম্বর (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) ও ফোন নম্বর ইত্যাদি তথ্য দিতে হবে।
 নির্ধারিত তথ্য দেওয়ার পর মোবাইল ব্যাংকিং বা অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে খতিয়ানের জন্য নির্ধারিত ফি দিতে হবে। ফি পরিশোধের পর অনলাইন কপি সংগ্রহ করতে চাইলে সরাসরি অনলাইন কপি প্রিন্ট করে নেওয়া যাবে।

সার্টিফাইড কপি পাওয়ার ক্ষেত্রে আবেদনের সময় নাগরিকের নাম, পরিচয়পত্র নম্বর, ফোন নম্বর দিতে হবে। তথ্য প্রদানের পর মোবাইল ব্যাংকিং বা অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে খতিয়ানের জন্য ফি দিতে হবে। ফি দেওয়ার পর সার্টিফাইড কপির জন্য নাম, জাতীয় পরিচয়পত্র, ই-মেইল, মোবাইল নম্বর, ট্রানজেকশন আইডি ও ডাকযোগে যোগাযোগের ঠিকানা দিয়ে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। এরপর সংশ্লিষ্ট জেলা অফিস থেকে বা আবেদনকারীর প্রত্যাশিত ঠিকানায় ডাকযোগে নির্দিষ্ট দিনের মধ্যে আরএস খতিয়ানের সার্টিফাইড কপি সরবরাহ করা হবে।

খতিয়ান কি

= ''খতিয়ান'' কি?
= ''সি এস খতিয়ান'' কি?
= ''এস এ খতিয়ান'' কি?
= ''আর এস খতিয়ান'' কি?
= ''বি এস খতিয়ান'' কি?
=“দলিল” কাকে বলে?
=“খানাপুরি” কাকে বলে?
= ''নামজারি'' কাকে বলে ?
=“তফসিল” কাকে বলে?
=“দাগ” নাম্বার/''কিত্তা'' কাকে বলে?
= “ছুটা দাগ” কাকে বলে?
= ''পর্চা'' কাকে বলে ?
= ''চিটা'' কাকে বলে ?
= ''দখলনামা'' কাকে বলে ?
= “খাজনা” ককে বলে?
= ''বয়নামা'' কাকে বলে ?
= ''জমাবন্দি'' কাকে বলে ?
= ''দাখিলা'' কাকে বলে ?
= ''DCR'' কাকে বলে ?
=“কবুলিয়ত” কাকে বলে ?
= “ফারায়েজ” কাকে বলে?
= “ওয়ারিশ” কাকে বলে?
= ''হুকুমনামা'' কাকে বলে ?
= ''জমা খারিজ'' কাকে বলে ?
= ''মৌজা'' কি/ কাকে বলে ?
= “আমিন” কাকে বলে?
= “কিস্তোয়ার” কাকে বলে?
= “সিকস্তি” কাকে বলে ?
= “পয়ন্তি” কাকে বলে?
''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
=খতিয়ানঃ
মৌজা ভিত্তিক এক বা একাধিক ভূমি মালিকের ভূ-সম্পত্তির বিবরণ সহ যে ভূমি রেকর্ড জরিপকালে প্রস্ত্তত করা হয় তাকে খতিয়ান বলে।
এতে ভূমধ্যাধিকারীর নাম ও প্রজার নাম, জমির দাগ নং, পরিমাণ, প্রকৃতি, খাজনার হার ইত্যাদি লিপিবদ্ধ থাকে।
আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের খতিয়ানের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
তন্মধ্যে সিএস, এসএ এবং আরএস উল্লেখযোগ্য।
ভূমি জরিপকালে ভূমি মালিকের মালিকানা নিয়ে যে বিবরণ প্রস্তুত করা হয় তাকে “খতিয়ান” বলে। খতিয়ান প্রস্তত করা হয় মৌজা ভিত্তিক।

= সি এস খতিয়ানঃ
১৯১০-২০ সনের মধ্যে সরকারি আমিনগণ প্রতিটি ভূমিখণ্ড পরিমাপ করে উহার আয়তন, অবস্থান ও ব্যবহারের প্রকৃতি নির্দেশক মৌজা নকশা এবং প্রতিটি ভূমিখন্ডের মালিক দখলকারের বিররণ সংবলিত যে খতিয়ান তৈরি করেন সিএস খতিয়ান নামে পরিচিত।
.
=এস এ খতিয়ানঃ
১৯৫০ সালের জমিদারি অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন পাসের পর সরকার জমিদারি অধিগ্রহণ করেন। তৎপর সরকারি জরিপ কর্মচারীরা সরেজমিনে মাঠে না গিয়ে সিএস খতিয়ান সংশোধন করে যে খতিয়ান প্রস্তূত করেন তা এসএ খতিয়ান নামে পরিচিত।
কোনো অঞ্চলে এ খতিয়ান আর এস খতিয়ান নামেও পরিচিত।
বাংলা ১৩৬২ সালে এই খতিয়ান প্রস্তূত হয় বলে বেশির ভাগ মানুষের কাছে এসএ খতিয়ান ৬২র
খতিয়ান নামেও পরিচিত।

= আর এস খতিয়ানঃ
একবার জরিপ হওয়ার পর তাতে উল্লেখিত ভুলত্রুটি সংশোধনের জন্য পরবর্তীতে যে জরিপ করা হয় তা আরএস খতিয়ান নামে পরিচিত।
দেখা যায় যে, এসএ জরিপের আলোকে প্রস্তুতকৃত খতিয়ান প্রস্তুতের সময় জরিপ কর্মচারীরা সরেজমিনে তদন্ত করেনি।
তাতে অনেক ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়ে গেছে। ওই ত্রূটি -বিচ্যুতি দূর করার জন্য সরকার দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরেজমিনে ভূমি মাপ-ঝোঁক করে পুনরায় খতিয়ান প্রস্তূত করার উদ্যোগ নিয়েছেন।
এই খতিয়ান আরএস খতিয়ান নামে পরিচিত।
সারাদেশে এখন পর্যন্ত তা সমাপ্ত না হলেও অনেক জেলাতেই আরএস খতিয়ান চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত হয়েছে।
সরকারি আমিনরা মাঠে গিয়ে সরেজমিনে জমি মাপামাপি করে এই খতিয়ান প্রস্তূত করেন বলে তাতে ভুল ত্রূটি কম লক্ষ্য করা যায়।
বাংলাদেশের অনেক এলাকায় এই খতিয়ান বি এস খতিয়ান নামেও পরিচিত।

= বি এস খতিয়ানঃ
সর্ব শেষ এই জরিপ ১৯৯০ সা পরিচালিত হয়। ঢাকা অঞ্চলে মহানগর জরিপ হিসাবেও পরিচিত।

= “দলিল” কাকে বলে?
যে কোন লিখিত বিবরণ আইনগত সাক্ষ্য হিসাবে গ্রহণযোগ্য তাকে দলিল বলা হয়।
তবে রেজিস্ট্রেশন আইনের বিধান মোতাবেক জমি ক্রেতা এবং বিক্রেতা সম্পত্তি হস্তান্তর করার জন্য যে চুক্তিপত্র সম্পাদন ও রেজিস্ট্রি করেন সাধারন ভাবেতাকে দলিল বলে।

= “খানাপুরি” কাকে বলে?
জরিপের সময় মৌজা নক্সা প্রস্তুত করার পর খতিয়ান প্রস্তুতকালে খতিয়ান ফর্মের প্রত্যেকটি কলাম জরিপ কর্মচারী কর্তৃক পূরন করার প্রক্রিয়াকে খানাপুরি বলে।

= নামজারি কাকে বলে ?
ক্রয়সূত্রে/উত্তরাধিকার সূত্রে অথবা যেকোন সূত্রে জমির নতুন মালিক হলে নতুন মালিকের নাম সরকারি খতিয়ানভুক্ত করার প্রক্রিয়াকে নামজারী বলা হয়।

= “তফসিল” কাকে বলে?
জমির পরিচয় বহন করে এমন বিস্তারিত বিবরণকে “তফসিল” বলে।
তফসিলে, মৌজার নাম, নাম্বার, খতিয়ার নাম্বার, দাগ নাম্বার, জমির চৌহদ্দি, জমির পরিমাণ সহ ইত্যাদি তথ্য সন্নিবেশ থাকে।

= “দাগ” নাম্বার কাকে বলে? / কিত্তা কি ?
দাগ শব্দের অর্থ ভূমিখ-।
ভূমির ভাগ বা অংশ বা পরিমাপ করা হয়েছে এবং যে সময়ে পরিমাপ করা হয়েছিল সেই সময়ে ক্রম অনুসারে প্রদত্ত ওই পরিমাপ সম্পর্কিত নম্বর বা চিহ্ন।
যখন জরিপ ম্যাপ প্রস্তুত করা হয় তখন মৌজা নক্সায় ভূমির সীমানা চিহ্নিত বা সনাক্ত করার লক্ষ্যে প্রত্যেকটি ভূমি খন্ডকে আলাদা আলাদ নাম্বার দেয়া হয়।
আর এই নাম্বারকে দাগ নাম্বার বলে।
 একেক দাগ নাম্বারে বিভিন্ন পরিমাণ ভূমি থাকতে পারে।
মূলত, দাগ নাম্বার অনুসারে একটি মৌজার অধীনে ভূমি মালিকের সীমানা খূটিঁ বা আইল দিয়ে সরেজমিন প্রর্দশন করা হয়। দাগকে কোথাও কিত্তা বলা হয়।

= “ছুটা দাগ” কাকে বলে?
ভূমি জরিপকালে প্রাথমিক অবস্থায় নকশা প্রস্তুত অথবা সংশোধনের সময় নকশার প্রতিটি ভূমি এককে যে নাম্বার দেওয়া হয় সে সময় যদি কোন নাম্বার ভুলে বাদ পড়ে তাবে ছুটা দাগ বলে।
আবার প্রাথমিক পর্যায়ে যদি দুটি দাগ একত্রিত করে নকশা পুন: সংশোধন করা হয় তখন যে দাগ নাম্বার বাদ যায় তাকেও ছুটা দাগ বলে।

= পর্চা কীঃ / “পর্চা” কাকে বলে?
ভূমি জরিপকালে চূড়ান্ত খতিয়ান প্রস্তত করার পূর্বে ভূমি মালিকদের নিকট খসড়া খতিয়ানের যে অনুলিপি ভুমি মালিকদের প্রদান করা করা হয় তাকে “মাঠ পর্চা” বলে।
এই মাঠ পর্চা রেভিনিউ/রাজস্ব অফিসার কর্তৃক তসদিব বা সত্যায়ন হওয়ার পর যদি কারো কোন আপত্তি থাকে তাহলে তা শোনানির পর খতিয়ান চুড়ান্তভাবে প্রকাশ করা হয়।
আর চুড়ান্ত খতিয়ানের অনুলিপিকে “পর্চা” বলে।

= চিটা কাকে বলে?
একটি ক্ষুদ্র ভূমির পরিমাণ, রকম ইত্যাদির পূর্ণ বিবরণ চিটা নামে পরিচিত।
বাটোয়ারা মামলায় প্রাথমিক ডিক্রি দেয়ার পর তাকে ফাইনাল ডিক্রিতে পরিণত করার আগে অ্যাডভোকেট কমিশনার সরেজমিন জমি পরিমাপ করে প্রাথমিক ডিক্রি মতে সম্পত্তি এমনি করে পক্ষদের বুঝায়ে দেন।
ওই সময় তিনি যে খসড়া ম্যাপ প্রস্তুত করেন তা চিটা বা চিটাদাগ নামে পরিচিত।

= দখলনামা কাকে বলে?
দখল হস্তান্তরের সনদপত্র। সার্টিফিকেট জারীর মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি কোনো সম্পত্তি নিলাম খরিদ করে নিলে সরকার পক্ষ সম্পত্তির ক্রেতাকে দখল বুঝিয়ে দেয়ার পর যে সনদপত্র প্রদান করেন তাকে দখলনামা বলে।
সরকারের লোক সরেজমিনে গিয়ে ঢোল পিটিয়ে, লাল নিশান উড়ায়ে বা বাঁশ গেড়ে দখল প্রদান করেন। কোনো ডিক্রিজারির ক্ষেত্রে কোনো সম্পত্তি নিলাম বিক্রয় হলে আদালত ওই সম্পত্তির ক্রেতাকে দখল বুঝিয়ে দিয়ে যে সার্টিফিকেট প্রদান করেন তাকেও দখলনামা বলা হয়। যিনি সরকার অথবা আদালতের নিকট থেকে কোনো সম্পত্তির দখলনামা প্রাপ্ত হন, ধরে নিতে হবে যে, দখলনামা প্রাপ্ত ব্যক্তির সংশ্লিষ্ট সম্পত্তিতে দখল আছে।

= “খাজনা” ককে বলে?
সরকার বার্ষিক ভিত্তিতে যে প্রজার নিকট থেকে ভূমি ব্যবহারের জন্য যে কর আদায় করে তাকে খাজনা বলে।.

= বয়নামা কাকে বলে?
১৯০৮ সালের দেওয়ানি কার্যবিধির ২১ আদেশের ৯৪ নিয়ম অনুসারে কোনো স্থাবর সম্পত্তির নিলাম বিক্রয় চূড়ান্ত হলে আদালত নিলাম ক্রেতাকে নিলামকৃত সম্পত্তির বিবরণ সংবলিত যে সনদ দেন তা বায়নামা নামে পরিচিত।
বায়নামায় নিলাম ক্রেতার নামসহ অন্যান্য তথ্যাবলি লিপিবদ্ধ থাকে। কোনো নিলাম বিক্রয় চূড়ান্ত হলে ক্রেতার অনুকূলে অবশ্যই বায়নামা দিতে হবে।
যে তারিখে নিলাম বিক্রয় চূড়ান্ত হয় বায়নামায় সে তারিখ উল্লেখ করতে হয়।

= জমাবন্দিঃ
জমিদারি আমলে জমিদার বা তালুকদারের সেরেস্তায় প্রজার নাম, জমি ও খাজনার বিবরণী লিপিবদ্ধ করার নিয়ম জমাবন্দি নামে পরিচিত। বর্তমানে তহশিল অফিসে অনুরূপ রেকর্ড রাখা হয় এবং তা জমাবন্দি নামে পরিচিত।

= দাখিলা কাকে বলে?
সরকার বা সম্পত্তির মালিককে খাজনা দিলে যে নির্দিষ্ট ফর্ম বা রশিদ ( ফর্ম নং১০৭৭) প্রদান করা হয় তা দাখিলা বা খাজনার রশিদ নামে পরিচিত।
দাখিলা কোনো স্বত্বের দলিল নয়, তবে তা দখল সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ বহন করে।

= DCR কাকে বলে?
ভূমি কর ব্যতিত আন্যান্য সরকারি পাওনা আদায় করার পর যে নির্ধারিত ফর্মে (ফর্ম নং ২২২) রশিদ দেওয়া হয় তাকে DCR বলে।

=“কবুলিয়ত” কাকে বলে?
সরকার কর্তৃক কৃষককে জমি বন্দোবস্ত দেওয়ার প্রস্তাব প্রজা কর্তৃক গ্রহণ করে খাজনা প্রদানের যে অঙ্গিকার পত্র দেওয়া হয় তাকে কবুলিয়ত বলে।

= “ফারায়েজ” কাকে বলে?
ইসলামি বিধান মোতাবেক মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বন্টন করার নিয়ম ও প্রক্রিয়াকে ফারায়েজ বলে।

= “ওয়ারিশ” কাকে বলে?
ওয়ারিশ অর্থ উত্তরাধিকারী । ধর্মীয় বিধানের অনুয়ায়ী কোন ব্যক্তি উইল না করে মৃত্যু বরন করলেতার স্ত্রী, সন্তান বা নিকট আত্মীয়দের মধ্যে যারা তার রেখে যাওয়া সম্পত্তিতে মালিক হওয়ার যোগ্যতাসম্পন্ন এমন ব্যক্তি বা ব্যক্তিগণকে ওয়ারিশ বলে।

= হুকুমনামা কাকে বলে?
আমলনামা বা হুকুমনামা বলতে জমিদারের কাছ থেকে জমি বন্দোবস্ত নেয়ার পর প্রজার স্বত্ব দখল প্রমাণের দলিলকে বুঝায়। সংক্ষেপে বলতে গেলে জমিদার কর্তৃক প্রজার বরাবরে দেয়া জমির বন্দোবস্ত সংক্রান্ত নির্দেশপত্রই আমলনামা।

= জমা খারিজ কিঃ
জমা খারিজ অর্থ যৌথ জমা বিভক্ত করে আলাদা করে নতুন খতিয়ান সৃষ্টি করা। প্রজার কোন জোতের কোন জমি হস্তান্তর বা বন্টনের কারনে মূল খতিয়ান থেকে কিছু জমি নিয়ে নুতন জোত বা খতিয়ান খোলাকে জমা খারিজ বলা হয়। অন্য কথায় মূল খতিয়ান থেকে কিছু জমির অংশ নিয়ে নতুন জোত বা খতিয়ান সৃষ্টি করাকে জমা খারিজ বলে।

= “মৌজা” কাকে বলে?
CS জরিপ / ক্যাডষ্টাল জরিপ করা হয় তখন থানা ভিত্তিক এক বা একাধিক গ্রাম, ইউনিয়ন, পাড়া, মহল্লা অালাদা করে বিভিন্ন এককে ভাগ করে ক্রমিক নাম্বার দিয়ে চিহ্তি করা হয়েছে। আর বিভক্তকৃত এই প্রত্যেকটি একককে মৌজা বলে।। এক বা একাদিক গ্রাম বা পাড়া নিয়ে একটি মৌজা ঘঠিত হয়।

= “আমিন” কাকে বলে?
ভূমি জরিপের মাধ্যমে নক্সা ও খতিয়ান প্রস্তত ও ভূমি জরিপ কাজে নিজুক্ত কর্মচারীকে আমিন বলে।

= “কিস্তোয়ার” কাকে বলে?
ভূমি জরিপ কালে চতুর্ভুজ ও মোরব্বা প্রস্তত করার পর সিকমি লাইনে চেইন চালিয়ে সঠিকভাবে খন্ড খন্ড ভুমির বাস্তব ভৌগলিক চিত্র অঙ্কনের মাধ্যমে নকশা প্রস্তুতের পদ্ধতিকে কিস্তোয়ার বলে।

= “সিকস্তি” কাকে বলে?
নদী ভাংঙ্গনের ফলে যে জমি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যায় তাকে সিকন্তি বলে। সিকন্তি জমি যদি ৩০ বছরের মধ্যে স্বস্থানে পয়ন্তি হয় তাহলে সিকন্তি হওয়ার প্রাক্কালে যিনি ভূমি মালিক ছিলেন তিনি বা তাহার উত্তরাধিকারগন উক্ত জমির মালিকানা শর্ত সাপেক্ষ্যে প্রাপ্য হবেন।

= “পয়ন্তি” কাকে বলে?
নদী গর্ভ থেকে পলি মাটির চর পড়ে জমির সৃষ্টি হওয়াকে পয়ন্তি বলে।
--------------------------
আপনার এবং আপনার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বসবাস উপযোগী বসতভিটা এবং চাষাবাদযোগ্য
জমিকে নির্ভেজাল রাখতে আপনি সচেতন হোন।
---------------------------
আপনি আপনার বন্ধুদের তথা আপনজনদেরকে উপরোক্ত আইনটি/ তথ্যটি জানাতে অগ্রহী হলে #শেয়ার করুন.
আইন জানুন, সচেতন হোন, সতর্ক থাকুন।


Popular Posts