Recent post

রবিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৭

প্রধানমন্ত্রী বলেন, একদিন আমরা যুদ্ধজাহাজ রফতানি করবো ইনশাআল্লাহ।


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাঙ্গালি মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বিজয়ী জাতি। 
আমরা অন্যায়ের কাছে মাথা নত করবো না। 
যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পিছপা হবো না। 
নৌবাহিনীকে ধীরে ধীরে ‘বায়ার নেভী’ থেকে ‘বিল্ডার নেভী’তে পরিণত করা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে বাংলাদেশ যুদ্ধ জাহাজ রফতানি করতে সক্ষম হবে। 
নৌবাহিনীকে একটি অত্যাধুনিক ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে পরিণত করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। 
তিনি বলেন, বাংলাদেশকে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি ও উন্নয়নে নেতৃত্বের জন্য বহির্বিশ্বে এখন পথিকৃত ধরা হয়। 
প্রধানমন্ত্রী গতকাল (রোববার) চট্টগ্রামের বাংলাদেশ নেভাল একাডেমিতে প্রেসিডেন্ট কুচকাওয়াজ মিডশীপম্যান-২০১৫ পরিদর্শন এবং বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকারের সময়ে এসেই দেশে নৌবাহিনীর দক্ষ ব্যবস্থাপনায় খুলনা শিপইয়ার্ড এবং নারায়নগঞ্জ ডকইয়ার্ডে দেশীয় প্রযুক্তিতে আধুনিক যুদ্ধজাহাজ নির্মিত হচ্ছে। 
গত মাসে খুলনা শিপইয়ার্ডে নির্মিত দু’টি সাবমেরিন বিধ্বংসী লার্জ পেট্রোল ক্রাফট ‘দুর্গম’ ও ‘নিশান’ নৌবহরের কমিশন করা হয়েছে। 
চট্টগ্রাম ড্রাইডক লিমিটেডে আধুনিক ফ্রিগেট তৈরির প্রক্রিয়া চলছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, একদিন আমরা যুদ্ধজাহাজ রফতানি করবো ইনশাআল্লাহ। 
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মনোজ্ঞ এ কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন। 
এসময় তিনি নবীন কর্মকর্তাদের সমুদ্রসীমার স্বার্বভৌমত্ব রক্ষায় ত্রিমাত্রিক সক্ষমতাকে যথার্থভাবে কাজে লাগানোর আহ্বান জানান। পরে তিনি কর্ণফুলী নদীতে নোঙর করে রাখা বাংলাদেশে নির্মিত নৌবাহিনীর যুদ্ধ জাহাজসমূহের প্রদর্শনী অবলোকন করেন।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে তিন বছরে প্রশিক্ষণে সব বিষয়ে সর্ব্বোচ্চ মান অর্জনকারি ক্যাডেটকে সোর্ড অব অনার প্রদান করেন। 
২০১৫ ব্যাচের সোহানুর রহমান সকল বিষয়ে সর্ব্বোচ্চ মান অর্জন করে প্রধানমন্ত্রীর নিকট থেকে ‘সোর্ড অব অনার’লাভ করেন। এছাড়া অনুষ্ঠানে বিশেষ কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে মিডশিপম্যান সীমান্ত নন্দী আকাশ ‘নৌবাহিনী প্রধান স্বর্ণ পদক’ এবং ডাইরেক্ট এন্ট্রি অফিসার অ্যাক্টিং সাব লেফটেন্যান্ট এ জেড এম নাসিমুল ইসলাম ‘বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ রুহুল আমিন স্বর্ণ পদক’ গ্রহণ করেন। 
পরে প্যারেড কমান্ডার নবীন অফিসারদের শপথ গ্রহণ করান।
শীতকালিন এই কুচকাওয়াজের মধ্যদিয়ে ২১ জন মহিলা, একজন শ্রীলঙ্কান, একজন মালদ্বীপসহ ৯২ জন মিডশিপম্যান এবং ১২ জন ডাইরেক্ট এন্ট্রি অফিসারসহ মোট ১০৪ জন কমিশন লাভ করেছেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম নৌ ঘাঁটিতে এসে পৌঁছলে নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলের কমান্ডার রিয়ার এডমিরাল এম আবু আশরাফ তাকে স্বাগত জানান। অনুষ্ঠানে মন্ত্রী পরিষদ সদস্যবৃন্দ, জাতীয় সংসদের সদস্যবৃন্দ, তিন বাহিনী প্রধানগণ, সরকারের পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ, কূটনৈতিকবৃন্দ এবং আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশসমূহের অংশগ্রহণে গত মাসেই কক্সবাজারে আইওএনএস মাল্টিলেটারাল মেরিটাইম সার্চ এন্ড রেসকিউ এ´ারসাইজ-এর মতো বৃহৎ ও আন্তর্জাতিক সমুদ্র মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছে। 
এ মহড়ার সফল আয়োজন আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশের নতুন ভাবমূর্তি সৃষ্টি করেছে। 
তিনি বলেন, বাংলাদেশকে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি ও উন্নয়নে নেতৃত্ব প্রদানের জন্য বহির্বিশ্বে এখন পথিকৃত ধরা হয়। 
বর্তমান সরকার সমুদ্র সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার ও ভারতের সাথে সমুদ্রসীমা নিষ্পত্তির পর ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটারের বেশী টেরিটোরিয়াল সী, ২০০ নটিক্যাল মাইল অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানের তলদেশের সম্পদের অধিকার লাভ করেছি। বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে নৌবাহিনীর গুরুত্ব বৃদ্ধির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের বিশাল সমুদ্রসীমায় মৎস্য, খনিজ তেল ও অন্যান্য খনিজ পদার্থসহ মূল্যবান সম্পদ রয়েছে। জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ এই সম্পদ রক্ষায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কার্যপরিধি এখন অনেক বেড়ে গেছে।
পাসিং আউট ক্যাডেটদের অভিনন্দিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের এই কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তোমরা যারা কমিশন লাভ করতে যাচ্ছ, তোমাদের সকলের প্রতি রইল আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। তিনি বলেন, এবার ২১ জন মহিলা কর্মকর্তা কমিশন পেতে যাচ্ছে। যা নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের বহিঃপ্রকাশ। 
তার সরকারের সময়ে নৌবাহিনীকে একটি অত্যাধুনিক আধুনিক ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে পরিণত করার ক্ষেত্রে সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের জলসীমায় নজরদারী বাড়াতে আরও মেরিটাইম পেট্রোল এয়ারক্রাফট ও হেলিকপ্টার ক্রয় প্রক্রিয়াধীন। 
অবকাঠামোগত উন্নয়নের লক্ষ্যে পটুয়াখালীতে এভিয়েশন সুবিধা সম্বলিত নৌবাহিনীর সর্ববৃহৎ নৌঘাঁটি ও ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব নৌঘাঁটি নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়া সাবমেরিনের সুষ্ঠু পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ ও জেটি সুবিধা প্রদানের জন্য কুতুবদিয়ায় একটি সাবমেরিন ঘাঁটি নির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। 
চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে স›দ্বীপ চ্যানেলে জাহাজ বার্থিং সুবিধা সম্বলিত ফ্লিট সদর দপ্তরের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করে বলেন, এর ফলে সমুদ্র এলাকায় সার্বিক নিরাপত্তা আরও জোরদার হবে। শেখ হাসিনা বলেন, সমুদ্র অর্থনীতির উন্নয়নে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনগোষ্ঠী তৈরিতে নৌবাহিনী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করছে।
বাংলাদেশ নেভীর গোড়াপত্তন এবং অধুনিকায়নে জাতির পিতার ভূমিকা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান বিবেচনায় নৌবাহিনীর গুরুত্ব অনুধাবন করতে পেরেছিলেন, তাই তিনি ১৯৬৬’র ৬-দফায় পূর্ববঙ্গে নৌবাহিনীর সদর দপ্তর প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছিলেন। তিনি বলেন, দেশের প্রয়োজনে একটি আধুনিক ও শক্তিশালী নৌবাহিনী গড়ে তোলার প্রত্যয় থেকেই তিনি (বঙ্গবন্ধু) ১৯৭৪ সালে নৌবাহিনীর বৃহত্তম প্রশিক্ষণ ঘাঁটি বানৌজা ঈসা খাঁ কমিশন করেন। বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে নেভাল এনসাইন প্রদান করেন। 
একটি দক্ষ নৌবহর গঠনের লক্ষ্যে যুগোসøাভিয়া ও ভারত থেকে আধুনিক যুদ্ধজাহাজ সংগ্রহ করেন।
 একইসাথে তিনি দেশের সমুদ্রসীমা নির্ধারণের লক্ষ্যে ১৯৭৪ সালে ‘দ্য টেরিটোরিয়াল ওয়াটারস এন্ড মেরিটাইম জোনস অ্যাক্ট’ ও প্রণয়ন করেন।

কোন মন্তব্য নেই:

Popular Posts