Recent post

রবিবার, ১২ জুন, ২০১৬

জঙ্গি মাত্র ৩৭



পুলিশের জঙ্গিবিরোধী বিশেষ অভিযানে ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৩ হাজার ১৫৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এদের মধ্যে ৩৭ জন সন্দেহভাজন জঙ্গি। শুক্রবার সকাল থেকে গতকাল শনিবার সকাল পর্যন্ত অভিযানে এরা গ্রেপ্তার হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে।

তবে এটা জঙ্গিবিরোধী বিশেষ অভিযান হলেও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মী ও বিভিন্ন মামলার আসামিদের। ফলে এ অভিযান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গ্রেপ্তারকৃতদেরমধ্যে ২৭ জন নিষিদ্ধ জেএমবির সদস্য, ৭ জন জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশের (জেএমজেবি) সদস্য এবং বাকি তিনজন অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনের সদস্য। সন্দেহভাজন জঙ্গিদের কাছ থেকে একটি শুটারগান, গুলি, ৫০০ গ্রাম গানপাউডার, ১৫টি ককটেল উদ্ধার করা হয়েছে।




চলমান অভিযানে মূলত বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মী, মাদক ব্যবসায়ী ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামিসহ নাশকতার মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রথম আলোর বিভিন্ন জেলার প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে দেখা যায়, ২৪ জেলায় কমপক্ষে ২৫০ জন বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তার ও হয়রানির ভয়ে বিভিন্ন জেলায় বিএনপি-জামায়াতের কর্মীরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। কয়েকটি জেলায় বিরোধী নেতা-কর্মীদের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে টাকা না দিলে গ্রেপ্তারের হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, সাঁড়াশি অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে পরোয়ানাভুক্ত আসামি ১ হাজার ৮৬১ জন। এ ছাড়া নিয়মিত মামলায় ৯১৭ জন, মাদক মামলায় ৩৫৮ জন, অস্ত্র উদ্ধার মামলায় ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

মূলত জঙ্গিদের বিরুদ্ধে এই বিশেষ অভিযান চললেও গ্রেপ্তার হচ্ছেন অন্য মামলার আসামিরা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক

(এআইজি-গোপনীয়) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বেশিসংখ্যক সদস্য মিলে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করায় জঙ্গিদের পাশাপাশি ফৌজদারি অপরাধে জড়িত ব্যক্তিরা বেশি ধরা পড়ছেন।

ব্যাপক ধরপাকড় সম্পর্কে জানতে চাইলে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশে অব্যাহত হত্যাকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সরকারকে সর্বশক্তি নিয়োগ করতে হবে। কিন্তু ৪১ জন জঙ্গিকে গ্রেপ্তারের নামে ৩ হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করার মাধ্যমে আমরা আসলে ক্ষমতার অপব্যবহারই করছি।’

মিজানুর রহমান বলেন, চট্টগ্রামে পুলিশ সুপারের স্ত্রী খুন হওয়ার পরে পুলিশ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের একটা সহানুভূতি সৃষ্টি হয়েছে। মানুষ পুলিশের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল। এই গ্রেপ্তার সাধারণ মানুষের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছে, মানবাধিকার লঙ্ঘনেরও ঘটনা ঘটছে।

এভাবে গণগ্রেপ্তার হওয়ার ফলে গ্রেপ্তার-বাণিজ্যেরও আশঙ্কা রয়েছে।

এটা হলে জনগণের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব সৃষ্টি হবে।

সাঁড়াশি অভিযান আরও ছয় দিন চলবে। পুলিশ সদর দপ্তরের পরিকল্পনা ও গণমাধ্যম বিভাগের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) এ কে এম শহীদুর রহমান আশা প্রকাশ করেন, আরও জঙ্গি ধরা পড়বে।

ঢাকার বাইরে থেকে প্রথম আলোর প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, রাজশাহীর বাগমারায় জেএমবির সদস্য সন্দেহে সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা হলেন যাত্রাগাছি মাদ্রাসার শিক্ষক আবদুস সোবহান, হামিরকুৎসা গ্রামের আয়নাল হক, আবদুর রশিদ, ঝিকড়ার সাইদুর রহমান, আবদুল করিম, যাত্রাগাছির আবদুল জব্বার ও বালিয়ার আবদুর রশিদ।

গতকাল সকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর ও কানসাট থেকে জেএমবির সদস্য সন্দেহে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা হলেন শাহ অলিউল্লাহ, ইসারুল হক ও শহীদুল ইসলাম।

গাইবান্ধায় তালিকাভুক্ত জেএমবি সদস্য মেহেদী হাসানকে গাইবান্ধা সদর উপজেলার পূর্ব কোমরনই গ্রাম থেকে শনিবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে গ্রেপ্তার করা হয়। বগুড়ার ধুনটে সাত মামলার আসামি ও জেএমবির সদস্য একরাম হোসেনকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার রাধাকানাই বাজার থেকে জেএমবি সদস্য মোহাম্মদ টুয়েলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে শুক্রবার রাতে।

শেরপুরে নাজমুল হাসান রোমান নামের সন্দেহভাজন জেএমবি সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া রাজশাহী ও গাজীপুরে দুজনকে জঙ্গি সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এদিকে কয়েকটি জেলায় বিশেষ অভিযান চলাকালে গ্রেপ্তার, হয়রানি ও অর্থ আদায়ের চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বরিশালে অভিযানের নামে বিএনপির নেতা-কর্মীদের হয়রানির অভিযোগ করেছে দলটি। অভিযান শুরুর আগেই বিএনপি নেতা-কর্মীরা বাড়ি-ঘর ছেড়ে পালাতে শুরু করেছেন।

মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জিয়াউদ্দিন সিকদার বলেন, পুলিশ বিএনপির নেতা-কর্মীদের হয়রানি করছে। যাঁকে পাচ্ছে তাঁকে মিথ্যা মামলায় আটক করেছে। অনেকের বাড়িতে অভিযান চালানো হচ্ছে।

গাজীপুর সদর, কালিয়াকৈর ও শ্রীপুর উপজেলার বিএনপির নেতা-কর্মীরা অভিযোগ করেছেন, পুলিশ বিরোধী কর্মীদের বাড়ি গিয়ে টাকা চাইছে। না হলে গ্রেপ্তারের হুমকি দিচ্ছে।

খুলনা মহানগর বিএনপি বিবৃতি দিয়ে জঙ্গি দমনের নামে গণগ্রেপ্তার ও গ্রেপ্তার-বাণিজ্যের অভিযোগ করেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।

বিভিন্ন জেলায় গ্রেপ্তার: চট্টগ্রাম নগর ও জেলায় বিশেষ অভিযানের দ্বিতীয় দিন গতকাল শনিবার পর্যন্ত আটক হয়েছে আরও ৩৩৫ জন। এঁদের মধ্যে জামায়াত-শিবিরের ৩৬ জন রয়েছেন। তবে আটক ব্যক্তিদের মধ্যে কারও বিরুদ্ধে জঙ্গিসংশ্লিষ্টতার অভিযোগ নেই বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ।

নোয়াখালীতে বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের ১০ জন নেতা-কর্মী ও সমর্থককে আটক করা হয়েছে। গত শুক্রবার দিবাগত রাতে এ অভিযান পরিচালিত হয়। এঁদের মধ্যে জামায়াতের ছয়জন, শিবিরের তিনজন ও বিএনপির একজন রয়েছেন।

ফেনীতে বিএনপি-জামায়াতের সাতজনসহ ৩১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। লক্ষ্মীপুরে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৩৩ জনকে। এঁদের বেশির ভাগই মাদক ও নাশকতার মামলার পরোয়ানাভুক্ত আসামি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলা জামায়াতের আমির মো. মাজেদুল হককে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের একটি মামলায় শুক্রবার রাতে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

এ ছাড়া জেলার বাকি উপজেলাগুলোয় অভিযান চালিয়ে ৩৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদের মধ্যে রয়েছে ডাকাত, মাদকসেবী ও তালিকাভুক্ত আসামি।

কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে পুলিশ অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রসহ ১৬ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। এদের মধ্যে রয়েছেন দুজন বিএনপির কর্মী ও একজন শিবির কর্মী।

নারায়ণগঞ্জ নগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান আহমেদকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শনিবার দুপুরে নগরীর বাবুরাইল এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক গোলাম রাব্বানিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে গতকাল ভোরে।

সিলেটে ১০ জামায়াত কর্মীসহ ৪৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলায় নাশকতার মামলায় জামায়াত নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ময়মনসিংহের ত্রিশালে রামপুর ইউনিয়ন জামায়াতের আমির আনিছুর রহমানকে শুক্রবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার নওমালা ইউনিয়ন জামায়াতের আমির ইউনুচ মিয়াকে (৪৫) গ্রেপ্তার করা হয়েছে শুক্রবার।

যশোরের আট উপজেলা থেকে ১০১ জনকে আটক করা হয়েছে। এঁদের মধ্যে জামায়াতের ১৮ জন ও বিএনপির ৫ জন রয়েছেন। মানিকগঞ্জে শুক্রবার রাতে জামায়াতে স্থানীয় দুই নেতাসহ বিএনপি ও জামায়াতের সাত নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ঝিনাইদহের ছয় উপজেলা জামায়াত-শিবিরের ১৫ নেতা-কর্মীসহ ৪৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

কুষ্টিয়ায় ৭৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এঁদের বেশির ভাগ বিভিন্ন মামলার পরোয়ানাভুক্ত আসামি, বিএনপি ও জামায়াতের নেতা-কর্মী, মাদকসেবী বা বিভিন্ন নিয়মিত মামলার আসামি।

নীলফামারীতে জামায়াত-শিবিরের ১৩ কর্মীসহ ৩১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

এ ছাড়া রাজশাহীতে ২৬২ জন, পঞ্চগড়ে ৪১, বাগেরহাটে ১০০, নড়াইলে ৫৭, টাঙ্গাইলে ১৩৩, রংপুরে ১২০, নওগাঁয় ৮৪, গাজীপুরে ৭৯, ফরিদপুরে ৬১, জামালপুর, রাজবাড়ী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৪০, পাবনায় ২৭ এবং মুন্সিগঞ্জে ২৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই:

Popular Posts