Recent post

Search

রবিবার, ১৭ জানুয়ারী, ২০১৬

মেয়েদের সাদা স্রাব কেন হয় এবং প্রতিকার।


সাদা স্রাব কী?
লিউকোরিয়া বা সাদা স্রাব হচ্ছে সমস্ত মহিলাদের একটি সর্বজনীন সমস্যা।
অধিকাংশ স্রাব জীবন শৈলী ও শারীরবৃত্তীয় সংক্রান্ত যার কোন চিকিৎসা প্রয়োজন হয় না । ইহা প্রচুর পরিমানে, রক্তে দাগ, দুর্গন্ধ যুক্ত, স্বাভাবিক রংয়ের না হলে গুরুত্বের সাথে দেখতে হবে ।
 সাধারণত, স্বাভাবিক স্রাব পাতলা এবং সামান্য চটচটে হয় ।
 এটা অনেকটা নাসিকা স্রাব (সর্দি) এর মত । সাধারণত যোনি সাদা স্রাবের পরিমাণ ডিম্বস্ফোটন এবং যখন মানসিক চাপের বৃদ্ধি, মাসিক চক্রেতারতম্য হয় ।
মেয়েদের এমন অনেক কথাই আছে, যা অনেক সময় অনেক গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হলেও ডাক্তার কে দেখাতে হবে ভেবে লুকিয়েই রাখা হয়।
 সাদা স্রাব বা লিউকোরিয়া তেমনি একটি বিষয়। মেয়েদের জীবনের কোনো না কোনো সময় তাদের কে স্রাবের এই সমস্যায় পড়তেই হয়। তাই কিছুটা জেনে রাখুন এখনি। বলা যায় না কখন আপনার জীবনে, আপনার বোন, মেয়ে অথবা বান্ধবী কিংবা আত্মীয় স্বজনের কাজে লেগে যায়।

আগে জানতে হবে স্বাভাবিক সাদা স্রাব দেখতে কেমন হয়?
সাদা স্রাব – হলুদ , সাদা পিচ্ছিল ও আঠালো রঙের নিঃসরণ, যা শুকালে হালকা বাদামি-হলুদ রঙের বর্ণ ধারণ করে।
যে সব মেয়েরা বয়ঃসন্ধিকালের শুরুতে, তাদের জন্য বলছি নিজের অজান্তে যদি কাপড়ে এমন দাগ পড়ে তবে ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই। এটি স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার জন্য হতে পারে।
নারীর রিপ্রোডাক্টিভ এইজে (১৪-৫০) যোনি দেয়াল পুরু থাকে। যোনিতে এক ধরনের জীবাণু থাকে, যা যোনির জন্য স্বাভাবিক। সেটি যোনি থেকে নিয়মিত খসে পড়া কোষের গ্লাইকোজেন কে ল্যাকটিক এসিডে পরিণত করে। এটি যোনিতে পিচ্ছিল ভাব আনে। পাশাপাশি এর অম্লতাও ঠিক রাখে। ক্ষতিকারক জীবাণু থেকে প্রজনন অঙ্গকে নিরাপদ রাখে।
মহিলাদের সাদাস্রাব কেন হয়?
সাদা স্রাবের কারণগুলোঃ
০১. স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয়, বয়সন্ধিকালে রক্ত চলাচল বেড়ে যায় ফলে নিঃসরণ-ও বেশি হয়, যৌন মিলনকালে, যৌন আবেগে, গর্ভাবস্থায়, শরীরের রাসায়নিক সমতা বজায় রাখতে এবং যোনির কোষ গুলোকে সচল রাখতে oestrogen হরমোনের প্রভাবে সাদা স্রাবের নিঃসরণ হতে পারে, মেয়ে শিশুর জন্মের প্রথম ৭-১০ দিনের মধ্যেও সাদা স্রাবে চাপ দিতে পারে।মায়ের শরীরে যদি অত্যধিক হরমোন থাকে তবেও সাদাস্রাব হতে পারে।
সন্তান ডেলিভারির প্রথম কয়েকদিন-ও সাদা স্রাব বেশি হতে পারে, হস্তমৈথুন বা মাস্টারবেশন, অভুলেশন ( ডিম্বাণু নিঃসরণ কালে ) জন্ম বিরতিকরণ পিল ব্যবহার করলে।
কাজেই প্রথমে ভয় না পেয়ে দেখুন ও বুঝে নিন আপনার সাদা স্রাবে আধিক্য কি অত্যধিক নাকি স্বাভাবিক। তারপর সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিন।

০২. সাদা স্রাবের রোগ সম্বন্ধীয় কারণগুলো:
– মানসিক অশান্তি
– পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও পুষ্টির অভাব
– বিভিন্ন ধরনের ক্রিমির সংক্রমণ
– অপরিচ্ছন্নতা এবং কাপড় সঠিক ভাবে না শুকিয়ে স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে রাখলে
– ইনফেকশন – যক্ষা, ছত্রাক (candida)
– জন্ম বিরতিকরণ পিল খাওয়ার কারণেও সাদা স্রাবের সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্খা থাকে।
– ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ
– পেটের নিম্নভাগের প্রদাহ
– STD (sexually transmitted disease)
বয়ঃসন্ধির আগে এবং স্থায়ী ভাবে মাসিক বন্ধ হবার পরে নিঃসরণ বেড়ে যেতে পারে। কারণ এ সময় সংক্রমণের আশংকা-ও বেশি থাকে।
যদি স্রাবের সাথে রক্ত যায়, অথবা অতিরিক্ত নিঃসরণ হয় কিংবা অতি দুর্গন্ধ হয় তবে তা আশংকাজনক। বাচ্চা হওয়ার পর দুর্গন্ধ যুক্ত নিঃসরণ ( lochia ) এটাই নির্দেশ করে যে , জরায়ু তার গর্ভ ধারণের পূর্বাবস্থায় ফিরে যেতে পারেনি।
ছত্রাকের সংক্রমণ হলে সাদা দুধের ছানার মত নিঃসরণ যেতে পারে। পাশাপাশি চুলকানো ভাব থাকলে এটি আরও বেশি ছত্রাকের প্রতি নির্দেশ করে।
মহিলাদের সাদা স্রাব বা লিউকোরিয়া
রোগ নির্ণয়ঃ
– ওয়েট স্মিয়ার, গ্রাম স্টেইন, কালচার, প্যাপ স্মিয়ার, বায়োপসি

সাদা স্রাবের চিকিৎসাঃ
– যোনি পথ এবং আশেপাশের পরিবেশ দুটোই পরিষ্কার রাখতে হবে যাতে সংক্রমণ না হয়।
– নিয়মিত শাক সবজি, ফল মূল ও পর্যাপ্ত পানি খেতে হবে। ( পানির কোনো বিকল্প নেই। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন)
– পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম এবং বিশ্রাম করতে হবে।
– জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ির কারণে হলে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বন্ধ রাখতে হবে।
– যৌনাঙ্গের অভ্যন্তরীণ টিউমার থাকলে তার চিকিৎসা করতে হবে।
– ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া জনিত হলে সে অনুযায়ী পথ্য সেবন করতে হবে এবং আক্রান্ত স্থানে লাগাতে হবে।
– কড়া রোদ অথবা ইস্ত্রির মাধ্যমে কাপড় শুকাতে হবে যাতে জীবাণু বংশবৃদ্ধি করতে না পারে।
– যদি যৌন বাহিত হয়ে থাকে তবে সুস্থ্য হওয়ার আগ পর্যন্ত মিলনে বিরত থাকতে হবে এবং যে কোনো ঔষধ-ই স্বামীকেও ব্যবহার করতে উৎসাহিত করতে হবে।
– রক্ত মিশ্রিত বা অতি দুর্গন্ধ যুক্ত হলে দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

কোন মন্তব্য নেই:

Popular Posts