জাতিসংঘ মহাসচিবের সন্তুষ্টি: বাংলাদেশের চলমান সংস্কার কার্যক্রম
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ঢাকা সফরে এসে বাংলাদেশের চলমান সংস্কার কার্যক্রমের প্রতি তার পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। শুক্রবার (১৫ মার্চ) তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এ সমর্থন জানান।
বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূস জানান, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে অথবা ২০২৫ সালের জুনে অনুষ্ঠিত হতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলো যদি ‘সংক্ষিপ্ত সংস্কার প্যাকেজ’ নিয়ে একমত হয়, তাহলে নির্বাচন ডিসেম্বরে হবে। তবে, ‘বৃহৎ সংস্কার প্যাকেজ’ গ্রহণ করা হলে, তা ২০২৫ সালের জুনে অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত ছয়টি সংস্কার কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে ইতোমধ্যে প্রায় ১০টি রাজনৈতিক দল তাদের মতামত জমা দিয়েছে। দলগুলো একমত হলে, তারা একটি ‘জুলাই সনদে’ স্বাক্ষর করবে, যা গণতান্ত্রিক উত্তরণ, নির্বাচন, বিচার বিভাগ, প্রশাসন, দুর্নীতি দমন ও আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার সংস্কারের রূপরেখা হিসেবে কাজ করবে।
জাতিসংঘ মহাসচিব বাংলাদেশের সংস্কার কার্যক্রমের প্রশংসা করে বলেন, "আমরা আপনাদের প্রচেষ্টাকে সমর্থন দিতে এখানে এসেছি। সংস্কার কর্মসূচির সফলতা কামনা করছি এবং যেকোনো সহযোগিতার প্রয়োজন হলে জানাতে বলছি।"
রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে গভীর উদ্বেগ
বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকট নিয়েও আলোচনা হয়। গুতেরেস বলেন, কক্সবাজারে আশ্রিত ১২ লাখ রোহিঙ্গার মানবিক সহায়তা কমে যাওয়ায় তিনি গভীর উদ্বিগ্ন। তিনি মন্তব্য করেন, "পৃথিবীতে এতটা বৈষম্যের শিকার জনগোষ্ঠী আমি আর দেখিনি।"
অধ্যাপক ইউনূস রোহিঙ্গাদের সম্মানের সঙ্গে নিজ দেশে প্রত্যাবর্তনের জন্য জাতিসংঘের সহযোগিতা চান। পাশাপাশি, যতদিন তারা বাংলাদেশে থাকছে, ততদিন যেন পর্যাপ্ত খাদ্য ও সহায়তা নিশ্চিত করা যায়, সে বিষয়েও গুরুত্বারোপ করেন।
অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক
অর্থনৈতিক বিষয়ে অধ্যাপক ইউনূস জানান, তার সরকার ভঙ্গুর ব্যাংকিং খাত, সংকুচিত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভসহ নানা আর্থিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। তবে, সাম্প্রতিক সময়ে রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে এবং অর্থনীতি স্থিতিশীলতার পথে রয়েছে।
এছাড়া, দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা জোট (সার্ক) পুনরুজ্জীবিত করার পাশাপাশি, বাংলাদেশকে আসিয়ানের সদস্য করার পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি।
জাতিসংঘ মহাসচিব বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনীর অবদানের প্রশংসা করেন এবং বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তায় তাদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন।
বৈঠকে জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল রাবাব ফাতিমা, বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গুইন লুইস এবং সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
– দ্যাডেইলি৭১
0 মন্তব্যসমূহ