বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের রেল ট্রানজিট সমঝোতা চুক্তি বাতিল চেয়ে সরকারের সংশ্লিষ্টদের আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে



বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের রেল ট্রানজিট সমঝোতা চুক্তি বাতিল চেয়ে সরকারের সংশ্লিষ্টদের আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। এতে রেল মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয়ের সচিবকে বিবাদী করা হয়েছে। 

নোটিশে সাত দিনের মধ্যে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ এবং ভবিষ্যতে চীনের সঙ্গে সামরিক সংঘাত সৃষ্টিকারী এ রেল ট্রানজিট সমঝোতা চুক্তি বাতিলের অনুরোধ জানানো হয়েছে। অন্যথায় এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হাইকোর্টে রিট আবেদন দায়ের করা হবে বলে জানানো হয়

বুধবার (২৬ জুন) রেজিস্ট্রি ডাকযোগে লিগ্যাল নোটিশ পাঠান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও বর্তমানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত মো. মাহমুদুল হাসান।


নোটিশে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রণীত ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে শত্রুতা নয়’ নীতি অনুসরণ করে আসছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সংঘাত ও সহিংসতা থেকে নিজেকে সুরক্ষার জন্য শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে ‘ব্যালেন্স অব পাওয়ার’ নীতি অনুসরণ করে আসছে। 

কিন্তু জুন মাসে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের রেল ট্রানজিটসংক্রান্ত সমঝোতা চুক্তি সইয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের ‘ব্যালেন্স অব পাওয়ার’ নীতি হুমকির মুখে পড়েছে। ফলশ্রুতিতে ভারতের অভ্যন্তরীণ সংঘাতে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন হওয়ার পাশাপাশি ভবিষ্যতে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সামরিক সংঘাতের ঝুঁকি দেখা দিয়েছে।


বিশ্বের বিভিন্ন বন্ধুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রের মধ্যে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা নতুন কিছু নয়। কিন্তু ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের রেল ট্রানজিট স্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়। ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর অবস্থা স্বাভাবিক নয়। ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠী রয়েছে, যারা ভারত থেকে স্বাধীনতা চায়। 

এ ছাড়া ভারতের অরুণাচল প্রদেশ নিয়ে চীনের সঙ্গে ব্যাপক বিবাদ রয়েছে। অরুণাচল প্রদেশ নিয়ে ভারত ও চীনের নিয়মিত সংঘাত লেগেই থাকে এবং এর আগে ভারত ও চীনের যুদ্ধ হয়েছে। এসব কারণে ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে দ্রুত সামরিক সরঞ্জাম পাঠানোর জন্য বাংলাদেশের রেল ট্রানজিট প্রয়োজন। এ ছাড়া বর্তমানে ভারতের শিলিগুড়ি দিয়ে ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে সড়ক ও রেল যোগাযোগ আছে, যা শিলিগুড়ি করিডোর যা চিকেন নেক বলে পরিচিত।

এ শিলিগুড়ি করিডোর চীনের কাছাকাছি হওয়ায় ভারত তার সামরিক সরঞ্জাম পাঠানোর নিরাপদ রাস্তা হিসেবে বাংলাদেশের রেল ট্রানজিট ব্যবহার করতে চাইছে। এসব কারণে ভারতকে রেল ট্রানজিট দেওয়া বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের ওপর ব্যাপক ঝুঁকি তৈরি করবে। কারণ, ভবিষ্যতে চীন ও ভারতের মধ্যে বড় ধরনের যুদ্ধ শুরু হলে চীনের সামরিক বাহিনী ভারতের সামরিক সরঞ্জামের জোগান বাধাগ্রস্ত করার জন্য বাংলাদেশের ভূখণ্ডে ভারতীয় রেলের ওপর মিসাইল হামলা চালাতে পারে। যুদ্ধে প্রতিপক্ষের সামরিক সরঞ্জামের জোগানে হামলা একটি পুরোনো রীতি। বর্তমানে চীনের কাছে ব্যাপক পরিমাণে ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালিস্টিক মিসাইল আছে, যার মাধ্যমে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে তারা অনায়াসে হামলা চালাতে পারে। এ ছাড়া বাংলাদেশের কাছে কোনো অ্যান্টি ব্যালিস্টিক মিসাইল যেমন এস-৪০০, প্যাট্রিয়ট মিসাইল সিস্টেম নেই। ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের মিসাইল হামলা ঠেকাতে পারবে না।

নোটিশে আরও বলা হয়, ভারতের শিলিগুড়ি করিডোর দিয়ে ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্যের রেলপথ ও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে। এই রুট দিয়ে ভারতের অসংখ্য দ্রুতগামী যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী রেল চলাচল করে থাকে। 

সুতরাং বাণিজ্যিক মালামাল প্রেরণের জন্য বাংলাদেশের রেল ট্রানজিট ভারতের কোনো প্রয়োজন নেই। মূলত সামরিক সরঞ্জাম প্রেরণের জন্য বাংলাদেশের রেল ট্রানজিট ভারতের প্রয়োজন। ভারতের শিলিগুড়ি করিডোরের খুব কাছেই চীন ও ভুটান সীমান্ত অবস্থিত। সেখানে ডোকলাম নামক অঞ্চলে চীন সামরিক ঘাঁটিসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করছে। এই কারণে এই ডোকলাম নিয়ে ২০১৭ সালে ভারতের সঙ্গে চীনের সংঘাত শুরু হয়। এসব কারণে ভারতের আশঙ্কা, ভবিষ্যতে ভারত ও চীন বড় ধরনের যুদ্ধে জড়ালে চীনের সামরিক বাহিনী ভারতের এই শিলিগুড়ি করিডোরে আক্রমণ করতে পারে এবং এ করিডোর বন্ধ করে দিতে পারে। যার ফলে ভারত তার উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে সামরিক সরঞ্জাম যথাযথভাবে পাঠাতে পারবে না।

এসব দিক বিবেচনা করে, ভারত সম্পূর্ণ সামরিক কারণে বাংলাদেশের রেল ট্রানজিট ব্যবহার করতে চাচ্ছে। যাতে ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর বিদ্রোহ দমনে এবং অরুণাচল প্রদেশে চীনের সঙ্গে সংঘাত মোকাবিলায় সহজেই সামরিক সরঞ্জাম পাঠানো যায়। তাই ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সঙ্গে সংযোগকারী বাংলাদেশের এ রেল ট্রানজিট সমঝোতা চুক্তির উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ সামরিক। 

এ চুক্তি বাস্তবায়ন হলে, ভবিষ্যতে ভারত ও চীন যুদ্ধে জড়ালে চীনের সামরিক বাহিনী ভারতের সামরিক সরঞ্জামের জোগান বাধাগ্রস্ত করার জন্য বাংলাদেশের ভূখণ্ডে হামলা চালাতে পারে। এর ফলে ভবিষ্যতে চীন ও ভারতের যুদ্ধে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন হবে এবং অগণিত নাগরিকদের জীবন দিতে হবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

সিঙ্গাপুরে ওয়ার্ক পারমিটধারীদের জন্য নতুন নিয়ম: চাকরির মেয়াদ সীমা বাতিল, সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৬৩ বছর
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস
সিঙ্গাপুরে ট্রেইনিং রেকর্ড এবং সার্টিফিকেট চেক করার বিস্তারিত গাইড
Bangla date add in your website HTML tips.
some common interview questions and answers for a Safety Coordinator position in Singapore
ধর্ষণবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল তিন বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষার্থীদের আল্টিমেটাম
Understanding the New Demerit Point System for Construction and Manufacturing Sectors
Safe work procedure for ferrying workers by lorry in singapore
বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য সিঙ্গাপুরে কম খরচে দাঁতের চিকিৎসা
সিঙ্গাপুর কর্মস্থলের নিরাপত্তা আইন শক্তিশালী করছে এবং নতুন আইন প্রবর্তন করছে
Loading posts...