ফ্রিজ ছাড়া মাংস সংরক্ষণ করার কিছু নিয়ম



খুব সহজেই কিছু নিয়ম মেনে মাংস সংরক্ষণ করলে ৬ মাস পর্যন্ত মাংস ভালো রাখা যায়।
চলুন জেনে নেয়া যাক ফ্রিজ ছাড়া মাংস সংরক্ষণ করার কিছু নিয়ম।

চর্বিতে সংরক্ষণ: 

মাংস মাঝারি সাইজে কেটে ভালোমতো ধুয়ে সব পানি ঝরিয়ে নিন। এমন একটা পাত্র নিন যেন ওই পাত্রেই মাংস সংরক্ষণ করতে পারবেন। 
পাত্রে বেশি পরিমাণে চর্বি দিয়ে তাতে মাংস দিন। এবার পরিমাণ মতো লবণ এবং গরম মশলা ও তেজপাতা দিন। মাংসের অন্য সব মশলাও দিলে বেশি স্বাদ হয়।
তবে তা দিতে হবে পরিমাণে সামান্য। বেশি মসলা দিলে রান্না করা মাংসের মতো হয়ে যাবে।
 চুলায় আঁচ বাড়িয়ে জ্বাল দিন। সব চর্বি গলে গেলে খেয়াল করুন মাংসে পানি আছে কিনা। 
যদি পানি থাকে তা শুকিয়ে নামিয়ে ঠাণ্ডা করে ঢেকে রেখে দিন।

* পাত্রটি এমন জায়গায় রাখুন যেন চুলার তাপ বা গরম কম লাগে। নয়ত মাংস তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যাবে।
* প্রথম সপ্তাহে ২ বার এবং পরে সপ্তাহে অন্তত ১ বার মাংস জ্বাল দিয়ে রাখুন।
* চর্বি দেওয়ার সময় মনে রাখবেন মাংস যেন চর্বির অন্তত আধা ইঞ্চি নিচে ডুবে থাকে।
* এলোমনিয়ামের হাঁড়িতে রাখা ঠিক হবে না। ১ সপ্তাহের বেশি থাকলে লবণ থাকার কারণে এলোমনিয়ামের হাঁড়ি ছিদ্র হয়ে যায়।

রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ :

 রোদে শুকিয়েও মাংস সংরক্ষণ করতে পারেন। তবে সে ক্ষেত্রে প্রথমেই মাংস থেকে সব চর্বি কেটে বাদ দিয়ে দিন। মাংস একটু পাতলা ও লম্বা করে কেটে নিন। অল্প লবণ দিয়ে জ্বাল দিন। 
আপনি চাইলে হলুদও দিতে পারেন। বেশি সেদ্ধ করা যাবে না। 
ভালোমতো পানি শুকিয়ে ঠাণ্ডা করুন। তারপর জিআই তার (গুণা) ভেতরে লম্বা মালার মতো করে গেঁথে নিন। তারপর ৬-৭ দিন কড়া রোদে শুকিয়ে নিন।

* খেয়াল রাখবেন মাংস যেন ছায়াতে না থাকে। বেশিক্ষণ ছায়াতে থাকলে মাংসে ফাঙ্গাস ধরে যাবে।
* মাংস শুকানোর পর ভেজা পাত্রে রাখা যাবে না। কাঁচের জারে খবরের কাগজ অথবা ব্লাটিং পেপার রেখে তারপর মাংস রাখুন।
* মাঝে মাঝে জার থেকে বের করে মাংস শুকিয়ে রাখুন। এভাবে মাংস ৬ মাস পর্যন্ত ভালো থাকবে।
* মাংস শুকানোর সময় পাতলা কাপড় বা নেট দিয়ে ঢেকে রাখুন। এতে ধুলাবালি পরবে না। কাক-পাখি এসে নষ্ট করতে পারবে না।
* অনেক পাতলা করে মাংস শুকালে সরাসরি ভেঁজে বা রান্না করে খেতে পারবেন। আর একটু ভারি হলে মাংস রান্নার আগে ২-৩ ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে রান্না করুন। তাহলে মাংস নরম থাকবে।

রান্না করে সংরক্ষণ : 

স্বাভাবিক নিয়মে মাংস রাখতে চাইলে মশলা কম এবং তেল বেশি দিয়ে রান্না করেও মাংস ১ সপ্তাহের মতো রাখা যায়। তবে ঠাণ্ডা যায়গায় রাখতে হবে। 
ফ্যান ছেড়ে ফ্যানের নিচে রাখতে পারেন। চুলা বা রোদের তাপ পরে এমন জায়গায় থেকে দূরে রাখুন।
* দিনে অন্তত ১ বার ভালো করে জ্বাল দিতে হবে।
* জ্বাল দেয়ার সময় খুব বেশি নাড়াচাড়া করা যাবে না।
* জ্বাল দেয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে তলানিতে যেন না লেগে যায়।
* মাংসের টুকরা একটু বড় রাখুন নয়তো মাংস তাড়াতাড়ি গলে যাবে।
* মাংসে শুধু তেল থাকবে। পানি থাকা যাবে না। তাহলে মাংস গলে যাবে এবং গন্ধ হয়ে যাবে তাড়াতাড়ি।

লবণ ও লেবুর রস দিয়ে সংরক্ষণ : 

লবণ ও লেবু রস মাখিয়ে গরুর মাংস সংরক্ষণ করতে পারেন। মাংসের বড় বড় টুকরা ও কুচি মাংস কিমা করে আপনি তা সংরক্ষণ করতে পারেন।

মাংস ভেজে সংরক্ষণ : 

মাংস ভেজে সংরক্ষণ করা যেতে পারে। মাংসে লবণ আর হলুদ মিশিয়ে ডুবো তেলে ভেজে সংরক্ষণ করতে পারেন। এতে মাংস নষ্ট হবে না। অনেকেদিন ভাল থাকবে।
উল্লেখ্য, মাংস সংরক্ষণের প্রধান উদ্দেশ্য হলো তা জীবাণু মুক্ত রাখা, স্বাদ ও গুণগত মান যথাসম্ভব অক্ষুণ্ণ রাখা, পচন রোধ করা, খাদ্যবাহিত রোগ সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত থাকা।” এজন্য অবশ্যই কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

* মাংস বেশিক্ষণ বাইরে রাখলে ব্যাক্টেরিয়া সংক্রমণ হতে পারে। তাই মাংস বাড়িতে আসার পর দ্রুত সেটা ভালোভাবে ধুয়ে, রক্ত পরিষ্কার করে রান্না করতে হবে। অথবা ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে হবে।
* মাংস অবশ্যই প্লাস্টিকের ব্যাগে বা ‘অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল’য়ে মুড়ে রাখতে হবে। এতে মাংসে বাতাস ঢুকবে না। ফলে ব্যাক্টেরিয়া জন্মানোর আশঙ্কা কমবে।
* ফ্রিজে সংরক্ষণ করা সম্ভব না হলে মাংস সঠিকভাবে জ্বাল দিয়ে রাখতে হবে। আর ছয় ঘণ্টা পরপর সেটা পুনরায় জ্বাল দিতে হবে।
* প্রথমেই ফ্রিজ ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে। কারণ দীর্ঘদিন মাংস সংরক্ষণের জন্য ফ্রিজ পরিষ্কার থাকা খুবই জরুরি। ফ্রিজে আগের মাছ ও মাংসের কারণে গন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
* কোরবানির তিন থেকে চার ঘণ্টা পর্যন্ত মাংস শক্ত থাকে। এই সময় মাংস ফ্রিজে না রাখাই ভালো। পরে খানিকটা নরম হলে মাংস সংরক্ষণ করতে হবে।
* ফ্রিজে সংরক্ষণের জন্য মোটা ও ভালো মানের পলিথিন বেছে নেওয়া উচিত। একেকটি মাংসের প্যাকেট রাখার সময় মাঝে মোটা কাগজের টুকরা দিয়ে রাখা যেতে পারে। এতে একটি মাংসের প্যাকেটের সঙ্গে অন্য প্যাকেট আটকে যাওয়ার ঝুঁকি থাকবে না।
* মাংস সংরক্ষণের জন্য অবশ্যই নতুন ও পরিষ্কার প্যাকেট ব্যবহার করতে হবে। পুরানো বা আগের ব্যবহৃত পলিথিন ব্যবহার করলে মাংস গন্ধ হয়ে যেতে পারে।
* ফ্রিজে মাংস রাখার পর তাপমাত্রা কমিয়ে দিতে হবে। এতে মাংস তাড়াতাড়ি জমবে।
* এক বছর পর্যন্ত মাংস সংরক্ষণ করতে চাইলে ফ্রিজের তাপমাত্রা থাকতে হবে মাইনাস ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে বাসাবাড়িতে থাকা ফ্রিজগুলোতে সাধারণত এতটা ঠাণ্ডা করার সুবিধা থাকে না। সেক্ষেত্রে মাইনাস চার ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে মাইনাস পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় মাংস রাখলে পাঁচ থেকে ছয় মাস পর্যন্ত ভালো থাকবে। মাংস রাখার পর ফ্রিজ যতটা সম্ভব কম খোলার চেষ্টা করতে হবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

সিঙ্গাপুরে ওয়ার্ক পারমিটধারীদের জন্য নতুন নিয়ম: চাকরির মেয়াদ সীমা বাতিল, সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৬৩ বছর
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস
সিঙ্গাপুরে ট্রেইনিং রেকর্ড এবং সার্টিফিকেট চেক করার বিস্তারিত গাইড
Bangla date add in your website HTML tips.
some common interview questions and answers for a Safety Coordinator position in Singapore
ধর্ষণবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল তিন বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষার্থীদের আল্টিমেটাম
Understanding the New Demerit Point System for Construction and Manufacturing Sectors
Safe work procedure for ferrying workers by lorry in singapore
বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য সিঙ্গাপুরে কম খরচে দাঁতের চিকিৎসা
সিঙ্গাপুর কর্মস্থলের নিরাপত্তা আইন শক্তিশালী করছে এবং নতুন আইন প্রবর্তন করছে
Loading posts...