জিকির জোরে জোরে করা জায়েয কী না???
প্রশ্নকর্তা-সৈয়দ শাহ নুরুল আমীন,গাজীপুর,ঢাকা৷
আসসালামু আলাইকুম৷
মুহতারাম মুফতি শাইখ মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম মুজাদ্দেদী সাহেব৷
আপনার সমীপে নিবেদিত আমার একটি প্রশ্ন,আশা করি ইসলামী শরীয়তের আলোকে তা জানিয়ে আমায় বাধিত করবেন৷
বিষয়ঃজোরে জোরে মহান আল্লাহ পাকের জিকির করা যাবে কী না?
কেউ কেউ বলে যে, জিকির জোরে করা জায়েজ নেই বরং তা বেদআত।
আসলে কি তাই? কুরআন ও হাদীস এবং ফিক্বাহের দলীলসহ জানতে চাই।
ﻭﻋﻠﻴﻜﻢ ﺍﻟﺴﻼﻡ ﻭﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺑﺮﻛﺎﺗﻪ .
জবাব:
ﺑﺴﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺍﻟﺮﺣﻴﻢ
নামায, কুরআন তিলাওয়াত বা কারো ঘুমের ক্ষতি না হলে জিকির জোরে করা জায়েজ। বরং ক্ষেত্র বিশেষে অধিক ফলপ্রসু।
মনের গোনাহের আস্তরণ তোলার জন্য জিকির জোরে করলেই প্রভাব বেশি হয়।
আস্তে নয়।
আর জোরে জিকির করা সবক দেওয়া হয় মনের রোগের চিকিৎসা হিসেবেই।
জোরে জিকিরকে আবশ্যকীয় মনে করাটা যেমন সঠিক নহে।
তেমনি কারণ ছাড়া অহেতুক এটাকে বেদআত বলাটাও জাহালত বা মূর্খতার পরিচয়। তবে সর্বাবস্থায়ই জিকির আস্তে করাই উত্তম।
সহীহ হাদীস শরীফে এসেছে এভাবে-
ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﺳﻌﻴﺪ ﺍﻟﺨﺪﺭﻱ ﻋﻦ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ : ﺃﻛﺜﺮﻭﺍ ﺫﻛﺮ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﺰ ﻭ ﺟﻞ ﺣﺘﻰ ﻳﻘﺎﻝ ﺇﻧﻪ ﻣﺠﻨﻮﻥ ( ﻣﺴﻨﺪ ﻋﺒﺪ ﺑﻦ ﺣﻤﻴﺪ، ﻣﻦ ﻣﺴﻨﺪ ﺃﺑﻲ ﺳﻌﻴﺪ ﺍﻟﺨﺪﺭﻱ، ﺭﻗﻢ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ 925- )
অনুবাদ-হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-তোমরা অধিক পরিমাণ আল্লাহর জিকির কর যেন লোকেরা তোমাদের পাগল বলে। (মুসনাদে আব্দ বিন হুমাইদ, হাদীস নং-৯২৫, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৮১৭, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১১৬৫৩, শুয়াবুল ঈমান,হাদীস নং-৫২৩}
এ হাদীসে লক্ষ্য করুন-জিকির এমনভাবে করতে বলা হয়েছে যে, লোকেরা যেন পাগল বলতে শুরু করে দেয়, আর কোন ব্যক্তি যদি মনে মনে জিকির করে তাহলে কোন ব্যক্তি তাকে কোনদিন পাগল বলবে? মনের খবর কে রাখে? তাহলে পাগল বলবে কিভাবে? পাগল বলবে তাকেই যে জোরে জোরে পাগলের মত সর্বদা জিকির করতেই থাকে। এ হাদীস দ্বারা একথাই স্পষ্ট প্রমাণ করছে যে, জিকির জোরে করতে হবে ক্ষেত্র বিশেষে। সব সময় চুপ চাপ নয়।
ফরয নামাযের পর উচ্চ আওয়াজে দোয়া ও জিকির পাঠ সম্পর্কে বুখারি শরীফের ১ম জিলদের ১১৬ পৃষ্ঠায় রয়েছে এভাবে-
ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻤﺎ ﺍﻥ ﺭﻓﻊ ﺍﻟﺼﻮﺕ ﺑﺎﻟﺬﻛﺮ ﺣﻴﻦ ﻳﻨﺼﺮﻑ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻋﻦ ﺍﻟﻤﻜﺘﻮﺑﺔ ﻛﺎﻥ ﻋﻠﻰ ﻋﻬﺪ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻭﻗﺎﻝ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﻛﻨﺖ ﺍﻋﻠﻢ ﺍﺫﺍ ﺍﻧﺼﺮﻓﻮﺍ ﺑﺬﺍﻟﻚ ﺍﺫﺍ ﺳﻤﻌﺘﻪ -
ভাবার্থ:হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে সাহাবায়ে কেরামগণ ফরয নামাযান্তে (নামায শেষ করে) উচ্চ আওয়াজে জিকির পড়তেন। এরূপ উচ্চস্বরে জিকিরের প্রচলন আল্লাহর নবীর যুগে ছিল।
হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি যখন শুনতাম মুসলমানগণ জিকির করে ফিরছেন, তখন আমি বুঝে নিতাম নামায শেষ হয়ে গেছে।অর্থাৎ হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বয়োপ্রাপ্ত (বালেগ) ছিলেন না। এজন্য মাঝে-মাঝে ঘরে নামায আদায় করে নিতেন এবং জিকিরের আওয়াজ শুনে নামাযের জামাত শেষ হয়েছে বুঝে নিতেন।
মোদ্দাকথা হলো,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পবিত্র যুগে সাহাবায়ে কেরাম আজমাঈন ফরজ এবং নফল নামাজের পরে জোরে বা উচ্চ স্বরে দোআ ও জিকির করতেন যা সহীহ হাদীছ দ্বারাই প্রমানিত।
সুতরাং ফরয নামাযের পর উচ্চ আওয়াজে জিকির বা দোয়া পাঠ করা সুন্নতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সুন্নতে সাহাবা।
পবিত্র কোরআন-সুন্নাহর আলোকে ফরজ নামাজের পর দোআ ও মুনাজাতের বৈধতা আছে কী না???
মুনাজাতের স্বপক্ষে কুরআন ও হাদীসের দলীলসমূহ
নামাযের পর মুনাজাত সম্পর্কে আল্লাহ তাআলার নির্দেশঃ
ﻋﻦ ﺍﻟﻀﺤﺎﮎ ﻓﺈﺫﺍ ﻓﺮﻏﺖ ﻗﺎﻝ ﻣﻦ ﺍﻟﺼﻼۃ ﺍﻟﻤﮑﺘﻮﺑۃ، ﻭﺇﻟﯽ ﺭﺑﮏ ﻓﺎﺭﻏﺐ، ﻗﺎﻝ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺴﺌﻠۃ ﻭﺍﻟﺪﻋﺎﺀ۰ ( ﺍﻟﺪﺭﺍﻝﻣﻨﺜﻮﺭ : ۶ / ۳۶۵ (
১। হযরত যাহ্হাক রা. সূরা ইনশিরাহ তথা আলাম নাশরাহ এর উক্ত আয়াতের তাফসীরে বলেন, যখন তুমি ফরজ নামায থেকে ফারেগ হবে তখন আল্লাহর দরবারে দু‘আতে মশগুল হবে।(তাফসীরে দূররে মানসূর : ৬/৩৬৫)
ﺇﺫﺍ ﻓﺮﻏﺖ ﻣﻦ ﺍﻟﺼﻼۃ ﺍﻟﻤﮑﺘﻮﺑۃ ﻓﺎﻧﺼﺐ ﻓﻲ ﺍﻟﺪﻋﺎﺀ۰ ( ﺗﻔﺴﯿﺮ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ : ۵۱۴ (
২। হযরত ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি উক্ত আয়াতের তাফসীরে বলেন, “যখন তুমি ফরজ নামায হতে ফারেগ হও, তখন দু‘আয় মশগুল হয়ে যাবে।” (তাফসীরে ইবনে আব্বাস রা., ৫১৪ পৃঃ)
ﻗﺎﻝ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﻭﻗﺘﺎﺩۃ ﻭﺍﻟﻀﺤﺎﮎ ﻭﻣﻘﺎﺗﻞ ﻭﺍﻟﮑﻠﺒﻲ : ﺇﺫﺍ ﻓﺮﻏﺖ ﻣﻦ ﺍﻟﺼﻼۃ ﺍﻟﻤﮑﺘﻮﺑۃ ﺃﻭ ﻣﻄﻠﻖ ﺍﻟﺼﻼۃ ﻓﺎﻧﺼﺐ ﺇﻟﯽ ﺭﺑﮏ ﻭﺍﻟﺪﻋﺎﺀ، ﻭﺍﺭ ﻏﺐ ﺇﻟﯿﮧ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺴﺌﻠۃ ) ﺗﻔﺴﯿﺮﻣﻈﮩﺮﻱ : ۱ / ۲۹۴ (
৩। হযরত কাতাদাহ, যাহহাক ও কালবী রা. হতে উক্ত আয়াতের তাফসীরে বর্ণিত আছে, তাঁরা বলেন-‘ফরজ নামায সম্পাদন করার পর দু‘আয় লিপ্ত হবে’। (তাফসীরে মাযহারী, ১০/২৯৪ পৃঃ)
ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﻋﻦ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﯽ ﺍﻟﻠﮧ ﻋﻠﯿﮧ ﻭﺳﻠﻢ ﺇﻥ ﺍﻟﻠﮧ ﺗﻌﺎﻟﯽ ﻗﺎﻝ : ﯾﺎ ﻣﺤﻤﺪ ! ﺇﺫﺍ ﺻﻠﯿﺖ ﻓﻘﻞ : ﺍﻟﻠﮩﻢ ﺇﻧﻲ ﺃﺳﺌﻠﮏ ﻓﻌﻞ ﺍﻟﺨﯿﺮﺍﺕ ﻭﺗﺮﮎ ﺍﻟﻤﻨﮑﺮﺍﺕ ﻭﺣﺐ ﺍﻟﻤﺴﺎﮐﯿﻦ۰ ) ﺭﻭﺍﮦ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ : ۲ / ۱۵۹ ﺍﻟﺤﺪﯾﺚ ۳۲۴۹ (
৪। হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, আল্লাহ তাআলা তাকীদ করে বলেছেন যে, হে মুহাম্মাদ! যখন আপনি নামায থেকে ফারিগ হবেন তখন এ দু‘আ করবেন, হে আল্লাহ আমি আপনার নিকট ভাল কাজের তৌফিক কামনা করছি এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে সাহায্য চাচ্ছি এবং আপনার দরবারের মিসকীন অর্থাৎ আল্লাহ ওয়ালাদের মুহাব্বত কামনা করছি। (তিরমিযী শরীফ:২/১৫৯ হাঃ নং ৩২৪৯)
আল্লাহ তা’আলার এ সমস্ত নির্দেশ দ্বারা বুঝা গেল যে, ফরজ নামাযের পর ইমাম ও মুসল্লীদের জন্য দু‘আ ও মুনাজাতে মশগুল হওয়া কর্তব্য, চাই তারা সম্মিলিতভাবে করেন বা প্রত্যেকে আলাদাভাবে করেন। তবে একই সময় আলাদাভাবে করলেও তা সম্মিলিত মুনাজাতের রূপ ধারণ করবে, যা অস্বীকার করা যায় না।
ﻭﺃﺟﻤﻊ ﺍﻟﻌﻠﻤﺎﺀ ﺳﻠﻔﺎ ﻭﺧﻠﻔﺎ ﻋﻠﻰ ﺍﺳﺘﺤﺒﺎﺏ ﺫﻛﺮ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﺟﻤﺎﻋﺔ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺴﺎﺟﺪ ﻭﻏﻴﺮﻫﺎ ﻣﻦ ﻏﻴﺮ ﻧﻜﻴﺮ ﺇﻻ ﺃﻥ ﻳﺸﻮﺷﺠﻬﺮﻫﻢ ﺑﺎﻟﺬﻛﺮ ﻋﻠﻰ ﻧﺎﺋﻢ ﺃﻭ ﻣﺼﻞ ﺃﻭ ﻗﺎﺭﻯﺀ ﻗﺮﺁﻥ ﻛﻤﺎ ﻫﻮ ﻣﻘﺮﺭ ﻓﻲ ﻛﺘﺐ ﺍﻟﻔﻘﻪ ( ﺣﺎﺷﻴﺔ ﺍﻟﻄﺤﻄﺎﻭﻯ ﻋﻠﻰ ﻣﺮﺍﻗﻰ ﺍﻟﻔﻼﺡ، ﺑﺎﺏ ﺍﻹﻣﺎﻣﺔ، ﻓﺼﻞ ﻓﻲ ﺻﻔﺔ ﺍﻷﺫﻛﺎﺭ 185- )
ﻭﻛﺬﺍ ﻓﻰ ﺭﺩ ﺍﻟﻤﺤﺘﺎﺭ - ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺤﻈﺮ ﻭﺍﻹﺑﺎﺣﺔ، ﻓﺼﻞ ﻓﻰ ﺍﻟﺒﻴﻊ - 9/570
ﻭﺍﻟﻠﻪ ﺍﻋﻠﻢ ﺑﺎﻟﺼﻮﺍﺏ
খাদিমুল ইফতাঃ
{মুফতি শাইখ মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম নকশবন্দী-মুজাদ্দেদী,সদরসিলেট}
প্রশ্নকর্তা-সৈয়দ শাহ নুরুল আমীন,গাজীপুর,ঢাকা৷
আসসালামু আলাইকুম৷
মুহতারাম মুফতি শাইখ মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম মুজাদ্দেদী সাহেব৷
আপনার সমীপে নিবেদিত আমার একটি প্রশ্ন,আশা করি ইসলামী শরীয়তের আলোকে তা জানিয়ে আমায় বাধিত করবেন৷
বিষয়ঃজোরে জোরে মহান আল্লাহ পাকের জিকির করা যাবে কী না?
কেউ কেউ বলে যে, জিকির জোরে করা জায়েজ নেই বরং তা বেদআত।
আসলে কি তাই? কুরআন ও হাদীস এবং ফিক্বাহের দলীলসহ জানতে চাই।
ﻭﻋﻠﻴﻜﻢ ﺍﻟﺴﻼﻡ ﻭﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺑﺮﻛﺎﺗﻪ .
জবাব:
ﺑﺴﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺍﻟﺮﺣﻴﻢ
নামায, কুরআন তিলাওয়াত বা কারো ঘুমের ক্ষতি না হলে জিকির জোরে করা জায়েজ। বরং ক্ষেত্র বিশেষে অধিক ফলপ্রসু।
মনের গোনাহের আস্তরণ তোলার জন্য জিকির জোরে করলেই প্রভাব বেশি হয়।
আস্তে নয়।
আর জোরে জিকির করা সবক দেওয়া হয় মনের রোগের চিকিৎসা হিসেবেই।
জোরে জিকিরকে আবশ্যকীয় মনে করাটা যেমন সঠিক নহে।
তেমনি কারণ ছাড়া অহেতুক এটাকে বেদআত বলাটাও জাহালত বা মূর্খতার পরিচয়। তবে সর্বাবস্থায়ই জিকির আস্তে করাই উত্তম।
সহীহ হাদীস শরীফে এসেছে এভাবে-
ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﺳﻌﻴﺪ ﺍﻟﺨﺪﺭﻱ ﻋﻦ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ : ﺃﻛﺜﺮﻭﺍ ﺫﻛﺮ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﺰ ﻭ ﺟﻞ ﺣﺘﻰ ﻳﻘﺎﻝ ﺇﻧﻪ ﻣﺠﻨﻮﻥ ( ﻣﺴﻨﺪ ﻋﺒﺪ ﺑﻦ ﺣﻤﻴﺪ، ﻣﻦ ﻣﺴﻨﺪ ﺃﺑﻲ ﺳﻌﻴﺪ ﺍﻟﺨﺪﺭﻱ، ﺭﻗﻢ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ 925- )
অনুবাদ-হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-তোমরা অধিক পরিমাণ আল্লাহর জিকির কর যেন লোকেরা তোমাদের পাগল বলে। (মুসনাদে আব্দ বিন হুমাইদ, হাদীস নং-৯২৫, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৮১৭, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১১৬৫৩, শুয়াবুল ঈমান,হাদীস নং-৫২৩}
এ হাদীসে লক্ষ্য করুন-জিকির এমনভাবে করতে বলা হয়েছে যে, লোকেরা যেন পাগল বলতে শুরু করে দেয়, আর কোন ব্যক্তি যদি মনে মনে জিকির করে তাহলে কোন ব্যক্তি তাকে কোনদিন পাগল বলবে? মনের খবর কে রাখে? তাহলে পাগল বলবে কিভাবে? পাগল বলবে তাকেই যে জোরে জোরে পাগলের মত সর্বদা জিকির করতেই থাকে। এ হাদীস দ্বারা একথাই স্পষ্ট প্রমাণ করছে যে, জিকির জোরে করতে হবে ক্ষেত্র বিশেষে। সব সময় চুপ চাপ নয়।
ফরয নামাযের পর উচ্চ আওয়াজে দোয়া ও জিকির পাঠ সম্পর্কে বুখারি শরীফের ১ম জিলদের ১১৬ পৃষ্ঠায় রয়েছে এভাবে-
ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻤﺎ ﺍﻥ ﺭﻓﻊ ﺍﻟﺼﻮﺕ ﺑﺎﻟﺬﻛﺮ ﺣﻴﻦ ﻳﻨﺼﺮﻑ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻋﻦ ﺍﻟﻤﻜﺘﻮﺑﺔ ﻛﺎﻥ ﻋﻠﻰ ﻋﻬﺪ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻭﻗﺎﻝ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﻛﻨﺖ ﺍﻋﻠﻢ ﺍﺫﺍ ﺍﻧﺼﺮﻓﻮﺍ ﺑﺬﺍﻟﻚ ﺍﺫﺍ ﺳﻤﻌﺘﻪ -
ভাবার্থ:হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে সাহাবায়ে কেরামগণ ফরয নামাযান্তে (নামায শেষ করে) উচ্চ আওয়াজে জিকির পড়তেন। এরূপ উচ্চস্বরে জিকিরের প্রচলন আল্লাহর নবীর যুগে ছিল।
হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি যখন শুনতাম মুসলমানগণ জিকির করে ফিরছেন, তখন আমি বুঝে নিতাম নামায শেষ হয়ে গেছে।অর্থাৎ হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বয়োপ্রাপ্ত (বালেগ) ছিলেন না। এজন্য মাঝে-মাঝে ঘরে নামায আদায় করে নিতেন এবং জিকিরের আওয়াজ শুনে নামাযের জামাত শেষ হয়েছে বুঝে নিতেন।
মোদ্দাকথা হলো,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পবিত্র যুগে সাহাবায়ে কেরাম আজমাঈন ফরজ এবং নফল নামাজের পরে জোরে বা উচ্চ স্বরে দোআ ও জিকির করতেন যা সহীহ হাদীছ দ্বারাই প্রমানিত।
সুতরাং ফরয নামাযের পর উচ্চ আওয়াজে জিকির বা দোয়া পাঠ করা সুন্নতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সুন্নতে সাহাবা।
পবিত্র কোরআন-সুন্নাহর আলোকে ফরজ নামাজের পর দোআ ও মুনাজাতের বৈধতা আছে কী না???
মুনাজাতের স্বপক্ষে কুরআন ও হাদীসের দলীলসমূহ
নামাযের পর মুনাজাত সম্পর্কে আল্লাহ তাআলার নির্দেশঃ
ﻋﻦ ﺍﻟﻀﺤﺎﮎ ﻓﺈﺫﺍ ﻓﺮﻏﺖ ﻗﺎﻝ ﻣﻦ ﺍﻟﺼﻼۃ ﺍﻟﻤﮑﺘﻮﺑۃ، ﻭﺇﻟﯽ ﺭﺑﮏ ﻓﺎﺭﻏﺐ، ﻗﺎﻝ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺴﺌﻠۃ ﻭﺍﻟﺪﻋﺎﺀ۰ ( ﺍﻟﺪﺭﺍﻝﻣﻨﺜﻮﺭ : ۶ / ۳۶۵ (
১। হযরত যাহ্হাক রা. সূরা ইনশিরাহ তথা আলাম নাশরাহ এর উক্ত আয়াতের তাফসীরে বলেন, যখন তুমি ফরজ নামায থেকে ফারেগ হবে তখন আল্লাহর দরবারে দু‘আতে মশগুল হবে।(তাফসীরে দূররে মানসূর : ৬/৩৬৫)
ﺇﺫﺍ ﻓﺮﻏﺖ ﻣﻦ ﺍﻟﺼﻼۃ ﺍﻟﻤﮑﺘﻮﺑۃ ﻓﺎﻧﺼﺐ ﻓﻲ ﺍﻟﺪﻋﺎﺀ۰ ( ﺗﻔﺴﯿﺮ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ : ۵۱۴ (
২। হযরত ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি উক্ত আয়াতের তাফসীরে বলেন, “যখন তুমি ফরজ নামায হতে ফারেগ হও, তখন দু‘আয় মশগুল হয়ে যাবে।” (তাফসীরে ইবনে আব্বাস রা., ৫১৪ পৃঃ)
ﻗﺎﻝ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﻭﻗﺘﺎﺩۃ ﻭﺍﻟﻀﺤﺎﮎ ﻭﻣﻘﺎﺗﻞ ﻭﺍﻟﮑﻠﺒﻲ : ﺇﺫﺍ ﻓﺮﻏﺖ ﻣﻦ ﺍﻟﺼﻼۃ ﺍﻟﻤﮑﺘﻮﺑۃ ﺃﻭ ﻣﻄﻠﻖ ﺍﻟﺼﻼۃ ﻓﺎﻧﺼﺐ ﺇﻟﯽ ﺭﺑﮏ ﻭﺍﻟﺪﻋﺎﺀ، ﻭﺍﺭ ﻏﺐ ﺇﻟﯿﮧ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺴﺌﻠۃ ) ﺗﻔﺴﯿﺮﻣﻈﮩﺮﻱ : ۱ / ۲۹۴ (
৩। হযরত কাতাদাহ, যাহহাক ও কালবী রা. হতে উক্ত আয়াতের তাফসীরে বর্ণিত আছে, তাঁরা বলেন-‘ফরজ নামায সম্পাদন করার পর দু‘আয় লিপ্ত হবে’। (তাফসীরে মাযহারী, ১০/২৯৪ পৃঃ)
ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﻋﻦ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﯽ ﺍﻟﻠﮧ ﻋﻠﯿﮧ ﻭﺳﻠﻢ ﺇﻥ ﺍﻟﻠﮧ ﺗﻌﺎﻟﯽ ﻗﺎﻝ : ﯾﺎ ﻣﺤﻤﺪ ! ﺇﺫﺍ ﺻﻠﯿﺖ ﻓﻘﻞ : ﺍﻟﻠﮩﻢ ﺇﻧﻲ ﺃﺳﺌﻠﮏ ﻓﻌﻞ ﺍﻟﺨﯿﺮﺍﺕ ﻭﺗﺮﮎ ﺍﻟﻤﻨﮑﺮﺍﺕ ﻭﺣﺐ ﺍﻟﻤﺴﺎﮐﯿﻦ۰ ) ﺭﻭﺍﮦ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ : ۲ / ۱۵۹ ﺍﻟﺤﺪﯾﺚ ۳۲۴۹ (
৪। হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, আল্লাহ তাআলা তাকীদ করে বলেছেন যে, হে মুহাম্মাদ! যখন আপনি নামায থেকে ফারিগ হবেন তখন এ দু‘আ করবেন, হে আল্লাহ আমি আপনার নিকট ভাল কাজের তৌফিক কামনা করছি এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে সাহায্য চাচ্ছি এবং আপনার দরবারের মিসকীন অর্থাৎ আল্লাহ ওয়ালাদের মুহাব্বত কামনা করছি। (তিরমিযী শরীফ:২/১৫৯ হাঃ নং ৩২৪৯)
আল্লাহ তা’আলার এ সমস্ত নির্দেশ দ্বারা বুঝা গেল যে, ফরজ নামাযের পর ইমাম ও মুসল্লীদের জন্য দু‘আ ও মুনাজাতে মশগুল হওয়া কর্তব্য, চাই তারা সম্মিলিতভাবে করেন বা প্রত্যেকে আলাদাভাবে করেন। তবে একই সময় আলাদাভাবে করলেও তা সম্মিলিত মুনাজাতের রূপ ধারণ করবে, যা অস্বীকার করা যায় না।
ﻭﺃﺟﻤﻊ ﺍﻟﻌﻠﻤﺎﺀ ﺳﻠﻔﺎ ﻭﺧﻠﻔﺎ ﻋﻠﻰ ﺍﺳﺘﺤﺒﺎﺏ ﺫﻛﺮ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﺟﻤﺎﻋﺔ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺴﺎﺟﺪ ﻭﻏﻴﺮﻫﺎ ﻣﻦ ﻏﻴﺮ ﻧﻜﻴﺮ ﺇﻻ ﺃﻥ ﻳﺸﻮﺷﺠﻬﺮﻫﻢ ﺑﺎﻟﺬﻛﺮ ﻋﻠﻰ ﻧﺎﺋﻢ ﺃﻭ ﻣﺼﻞ ﺃﻭ ﻗﺎﺭﻯﺀ ﻗﺮﺁﻥ ﻛﻤﺎ ﻫﻮ ﻣﻘﺮﺭ ﻓﻲ ﻛﺘﺐ ﺍﻟﻔﻘﻪ ( ﺣﺎﺷﻴﺔ ﺍﻟﻄﺤﻄﺎﻭﻯ ﻋﻠﻰ ﻣﺮﺍﻗﻰ ﺍﻟﻔﻼﺡ، ﺑﺎﺏ ﺍﻹﻣﺎﻣﺔ، ﻓﺼﻞ ﻓﻲ ﺻﻔﺔ ﺍﻷﺫﻛﺎﺭ 185- )
ﻭﻛﺬﺍ ﻓﻰ ﺭﺩ ﺍﻟﻤﺤﺘﺎﺭ - ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺤﻈﺮ ﻭﺍﻹﺑﺎﺣﺔ، ﻓﺼﻞ ﻓﻰ ﺍﻟﺒﻴﻊ - 9/570
ﻭﺍﻟﻠﻪ ﺍﻋﻠﻢ ﺑﺎﻟﺼﻮﺍﺏ
খাদিমুল ইফতাঃ
{মুফতি শাইখ মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম নকশবন্দী-মুজাদ্দেদী,সদরসিলেট}
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন