খেজুরের কাঁচা রস পান করা বিপজ্জনক




চলছে শীতের মৌসুম। শীতকাল এলেই আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার ধুম পড়ে যায়।
শহর থেকে মানুষজন গ্রামের আত্মীয়ের বাড়ি আসেন শীতের আমেজ পরিপূর্ণভাবে উপভোগ করার জন্য।
এ সময় গাছিরা খেজুর গাছের ডাল-পালা পরিষ্কার করে গাছের কাণ্ড কাটেন।
তাতে বাঁশের চোঙা বসিয়ে দিয়ে তার সাথে মাটির হাঁড়ি, বড় বোতলের মুখ কেটে চোঙের সাথে লাগিয়ে রস সংগ্রহ করে থাকেন।
সন্ধ্যায় লাগালে সারা রাতে ফোঁটা ফোঁটা করে রস জমা হয়ে রাত শেষে প্রতি গাছ থেকে প্রায় ৬ থেকে ৭ লিটার রস পাওয়া যায়।


শীতের কুয়াশা জড়ানো ভোরে গাছিরা রস ভর্তি হাঁড়িগুলো গাছ থেকে নামায়।
এ সময় অনেকেই সরাসরি কাঁচা রস পান করে থাকে। 
কারণ কাঁচা অবস্থায় রসের আসল স্বাদ পাওয়া যায়।
 কিন্তু এই কাঁচা রস সরাসরি পান করা নিরাপদ নয়। কারণ হাঁড়িতে জমা হওয়া রসের প্রতি অন্যান্য পশু-পাখিরও আকর্ষণ থাকে। 
বিষাক্ত সাপ, বাদুড় এবং অন্যান্য কীট-পতঙ্গ কাঁচা রসের মিষ্টি গন্ধে আকৃষ্ট হয়ে হাঁড়ি থেকে রস খায়। এভাবে পুরো পাতিলের রস বিষাক্ত হয়ে যায় যা অনেক সময় মানুষের মৃত্যুর কারণও হতে পারে।



বাদুড়ের মুখে থাকা নিপাহ ভাইরাস এভাবেই ছড়ায়। 
১৯৯৮-৯৯ সালে নিপাহ ভাইরাসের প্রথম প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় মালয়েশিয়ার সুঙ্গাই নিপাহ নামক গ্রামে। ওই গ্রামের নামেই ভাইরাসটির নামকরণ করা হয়।
 মূলত ফলাহারি বাদুড় এই ভাইরাসের প্রধান বাহক। তবে ফলাহারি বাদুড় নিজে ওই ভাইরাসে আক্রান্ত হয় না। 
গাছে লাগানো হাঁড়ির মুখ সব সময় খোলা থাকে। 
আর বাদুড় খাবার খাওয়া এবং মলত্যাগ উভয়ই মুখ দিয়ে করে। 
ফলে জালি দিয়ে হাঁড়ির মুখ ডেকে দেওয়া হলেও অনিশ্চিত থেকে যায়। 
আমরা নিশ্চিত না থাকায় কাঁচা রস সব সময় ঝুঁকিপূর্ণ।


তবে কাঁচার পরিবর্তে জাল দিয়ে খেলে ঝুঁকি থাকে না বললেই চলে।
খেজুরের রস চুলায় জাল দিয়ে সিরা, পায়েস, ক্ষীর ইত্যাদি মিষ্টান্ন তৈরি করা হয়। 
এ ছাড়াও রস দীর্ঘ সময় ধরে জাল দিয়ে এর থেকে তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড় ইত্যাদি সারা বছর বাজারে পাওয়া যায়। বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ বা অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ করা হয়। 
তাই এ সময়টাতে নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়ানোর সম্ভাবনা খুবই বেশি।



গ্রামের দিকে বিশেষ করে তরুণ ও যুবকেরা মজার ছলে শীতের রাতে গাছ থেকে রস চুরি করে খেয়ে থাকে। পরে হাঁড়ি আবার আগের জায়গায় রাখলে সারা রাতে রসে পরিপূর্ণ হয়ে থাকে। 
কিন্তু এই মজার বশবর্তী হয়ে আমরা নিজেদের তো মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে ফেলছি তার সাথে পরিবার এবং আশপাশের লোকজনকেও বিপদের মুখে ঠেলছি৷ 
এ ব্যাপারে আমাদের যথেষ্ট সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে।
 নিপাহ ভাইরাস দমনের জন্য নির্ধারিত কোনো টিকা আবিষ্কার না হওয়ায় এখানে মৃত্যুঝুঁকি প্রায় ৭০ শতাংশ। তাই এই ঝুঁকি এড়াতে সতর্কতার বিকল্প নাই।
 সব সময় আমাদের কাঁচা রস পান করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
 নিজে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি সামাজিকভাবে অন্যদেরও সচেতন করতে হবে। 
মৃত্যুঝুঁকি এড়াতে কাঁচার পরিবর্তে জাল দিয়ে রস খাওয়াটাকেই উৎসাহিত করতে হবে।


মো. শাকিবুল হাসান
শিক্ষার্থী, বরেন্দ্র কলেজ, রাজশাহী

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

সিঙ্গাপুরে ওয়ার্ক পারমিটধারীদের জন্য নতুন নিয়ম: চাকরির মেয়াদ সীমা বাতিল, সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৬৩ বছর
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস
সিঙ্গাপুরে ট্রেইনিং রেকর্ড এবং সার্টিফিকেট চেক করার বিস্তারিত গাইড
some common interview questions and answers for a Safety Coordinator position in Singapore
Bangla date add in your website HTML tips.
Safe work procedure for ferrying workers by lorry in singapore
ধর্ষণবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল তিন বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষার্থীদের আল্টিমেটাম
Understanding the New Demerit Point System for Construction and Manufacturing Sectors
সিঙ্গাপুরে নতুন আইন: ১ জুলাই ২০২৫ থেকে ফুটপাথে বাইসাইকেল ও PMD চালানো নিষিদ্ধ, লঙ্ঘনে জরিমানা ও জেল
বসে থাকলেই কোমরে ব্যথা হওয়ার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে
Loading posts...