অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা কীভাবে দূর করবেন

কথায় আছে, চিন্তাবিহীন কার্য নাকি ডেকে আনে বিপদ। 
তাই সূক্ষ্ম ভাবনাচিন্তার গুরুত্ব আমরা সবাই বুঝি। 
কিন্তু এই চিন্তা যদি হয় বাড়াবাড়ি ধরনের, অর্থাৎ প্রয়োজন ছাড়াই চিন্তা, তাহলে? 
এই ‘অতিরিক্ত চিন্তা’য় অনেকে মানসিক সমস্যায়ও পড়েন।
 ‘বেশি চিন্তা’ মন আর শরীরের মধ্যে তৈরি করে ভারসাম্যহীনতা।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, অহেতুক দুশ্চিন্তা অনেকটা চক্রের মতো। 
যত দূর করতে চাইবেন, তত আপনাকে জেঁকে ধরবে। 
কথায় আছে, ‘অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা’ 
মস্তিষ্ক যত অলস বসে থাকে, তত মাথায় জমা হয় অহেতুক চিন্তা। 
করোনা মহামারির সময়ে বাসায় বসে থাকতে হচ্ছে কমবেশি সবাইকে। 
আর সে সময়েই মাথায় জমা হচ্ছে হাজারো দুশ্চিন্তা।


অহেতুক দুশ্চিন্তায় কী হয়

অহেতুক দুশ্চিন্তার সূচনা হতে পারে যেকোনো জায়গা থেকেই। আর তার প্রভাব পড়ে দৈনন্দিন জীবনে।
কাজের পরিমাণ কমে যায়:
অহেতুক দুশ্চিন্তা সবার আগে প্রভাব ফেলে তার দৈনন্দিন কাজের ওপরে। 
প্রথমে ফাঁকা সময়ে দুশ্চিন্তার উদ্রেক হলেও আস্তে আস্তে ব্যস্ত সময়েও প্রভাব ফেলা শুরু করে। কাজের উৎপাদনশীলতায়ও যার প্রভাব পড়ে।

অহেতুক দুশ্চিন্তার সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়ে ঘুমে

অহেতুক দুশ্চিন্তার সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়ে ঘুমে।
 ঘুমানোর জন্য প্রয়োজন হয় একটি শান্ত মন। আর সে সময়ে যদি দুশ্চিন্তা হানা দেয়, তবে কি আর ঘুম আসে? 
রাতের ঘুমে বড় প্রভাব ফেলে অহেতুক দুশ্চিন্তা।

অলসতা: 
দুশ্চিন্তা একবার শুরু হলে চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়ে। আর সে চিন্তা শেষ না করে কোনো কাজে মন দেওয়াও সম্ভব হয় না। ফলে হয়তো ভেবে রেখেছেন এক ঘণ্টা পর কোনো কাজে বসবেন, অহেতুক দুশ্চিন্তা সে কাজকে পিছিয়ে দেবে আরও কয়েক গুণ।

পরিত্রাণের উপায়
কোনো সমস্যা থেকে বের হওয়ার প্রথম ধাপ হলো সমস্যা চিহ্নিত করা। 
দুশ্চিন্তা করা একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, কিন্তু কখন এই দুশ্চিন্তা অহেতুক এবং অতিরিক্ত হয়ে যাচ্ছে, সেটা বুঝতে শিখুন। বারবার একই বিষয় নিয়ে চিন্তা করা, একই সিদ্ধান্তকে প্রশ্নবিদ্ধ করা—এগুলোই অহেতুক দুশ্চিন্তার লক্ষণ।
সমস্যার সমাধান খুঁজুন: বারবার একই সমস্যার কথা না চিন্তা করে সমাধানের পথ খুঁজুন। সমস্যার কথা ভেবে কখনো সমাধান আসে না। বরং যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে, ভেবে সমাধান নিয়ে ভাবলেই বরং চিন্তামুক্ত হওয়া সহজ।

নিজের জন্য সময় বরাদ্দ রাখুন: 

অহেতুক দুশ্চিন্তা নিজের স্বাভাবিক কাজ থেকেই দূরে সরিয়ে দেয় সবাইকে। 
নিজের কাজেই মনোযোগ দেওয়া সম্ভব হয় না। 
যে কারণে সবকিছু বাদ দিয়ে পুরোনো কিছুতে ফিরে যান। ছবি আঁকা, বই পড়া; যেসব শখ বহু বছর আগে আপনার ছিল, সেটিতে মনোযোগ দিন কিংবা নতুন করে শুরু করুন। নিজের প্রিয় কাজে ব্যস্ত থাকলে আস্তে আস্তে নিজের মধ্যে হারানো আত্মবিশ্বাসও ফেরত পাবেন।



আবেগ নিয়ন্ত্রণ করুন: অনেক সময়ই অহেতুক দুশ্চিন্তা মানসিক চাপের সৃষ্টি করে, যা থেকে খিটখিটে মেজাজ কিংবা রেগে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে। তখন সে রাগ গিয়ে পড়তে পারে নিরীহ কারও ওপর। সে কারণে এ সময়ে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে শিখুন। নইলে সামান্য রাগ হতে পারে আপনার অন্য কোনো সময়ের দুশ্চিন্তার কারণ।

কথা বলুন: 
বেশির ভাগ সময় মনে জমিয়ে রাখা কথাই সৃষ্টি করে দুশ্চিন্তা। তাই যখনই মনে হবে মনের মধ্যে দুশ্চিন্তা বাসা বাঁধছে, তখনই নিজের প্রিয় বন্ধু কিংবা কাছের মানুষ কাউকে সব খুলে বলুন। দেখবেন নিজেকে যথেষ্ট ভারমুক্ত মনে হবে।
অতীতকে অতীতের জায়গায় থাকতে দিন: যখনই মনে হবে অহেতুক চিন্তা নিজের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে, দীর্ঘ একটা শ্বাস নিয়ে ভাবুন, ‘যা হয়েছে ভালোর জন্যই হয়েছে।’ অতীতকে চাইলেও পরিবর্তন করা সম্ভব নয়, ফলে ওসব নিয়ে ভেবেও লাভ নেই। অতীতকে অতীতের জায়গায় থাকতে দিলেই বরং সবার জন্য ভালো। এই চিন্তা নিয়ে নতুন করে কাজ শুরু করুন, তবেই এই দুষ্টচক্র থেকে বের হওয়া যাবে।



মনে রাখবেন, দুশ্চিন্তা মানুষের স্বাভাবিক চিন্তাধারারই বহিঃপ্রকাশ। দুশ্চিন্তা করাও দোষের কিছু নয়, কিন্তু এই দুশ্চিন্তাকে নিয়ন্ত্রণে রাখার দায়িত্ব আপনারই। খেয়াল রাখবেন, দুশ্চিন্তাকে যেন আপনি নিয়ন্ত্রণে রাখেন, দুশ্চিন্তা যেন আপনার জীবন নিয়ন্ত্রণ না করে।




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

সিঙ্গাপুরে ওয়ার্ক পারমিটধারীদের জন্য নতুন নিয়ম: চাকরির মেয়াদ সীমা বাতিল, সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৬৩ বছর
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস
সিঙ্গাপুরে ট্রেইনিং রেকর্ড এবং সার্টিফিকেট চেক করার বিস্তারিত গাইড
some common interview questions and answers for a Safety Coordinator position in Singapore
Bangla date add in your website HTML tips.
Safe work procedure for ferrying workers by lorry in singapore
ধর্ষণবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল তিন বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষার্থীদের আল্টিমেটাম
Understanding the New Demerit Point System for Construction and Manufacturing Sectors
সিঙ্গাপুরে নতুন আইন: ১ জুলাই ২০২৫ থেকে ফুটপাথে বাইসাইকেল ও PMD চালানো নিষিদ্ধ, লঙ্ঘনে জরিমানা ও জেল
বসে থাকলেই কোমরে ব্যথা হওয়ার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে
Loading posts...